সবুজ কাজলের কৌটো - পর্ব ০১ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০১!! 

-আরে মামা রাখেন-রাখেন।। বাম পাশে রাখেন-বাম পাশে রাখেন।ওই যে শপিংমলটার পাশে যে গলিটা??ওটার সামনে----।

  তড়িঘড়ি করে রিকশার ভাড়াটা মিটিয়েই মায়রা নামল রিকশা থেকে।খুচরো টাকাটা নেওয়ার সময় নেই এখন ওর।গলিটা দিয়ে বেশ অনেকটা পথ হাঁটতে হবে ওকে এখন। সময়ও নেই বেশি।সন্ধ্যা হলেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যে ওকে কাজটা শেষ করতে হবে। বাসায় ফিরতে হবে। এবং সবশেষে রেডি হতে হবে। কি জ্বালাতন!!

মায়রা নিজেই মাঝেমাঝে নিজেই বুঝে পায় না ও সব এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে কেন করে!সব কাজই ওর করতে হয় দৌঁড়ের উপরে। এই যে আজকের কথাটাই ধরা যাক।আজকে সন্ধ্যায় তাথৈ এর গায়ে হলুদ। তাথৈ--ওর একমাত্র বড় বোন।।গলায় গলায় ভাব দু বোনের। অথচ নিজের বোনের গায়ে হলুদের দিনে সে নিজে বাইরে। তাও কিনা এক কৌটো কাজলের জন্য!! ধুম করে কাল খেয়াল হলো কাজলটা তো ফুরিয়েছে বেশ অনেকদিন হলো।আনবো আনবো করে আর মনেই ছিল না ওর। ততো বেশি সাজে না মায়রা। তবে আজকে সাজটা জরুরী। সাথে সবুজ কাজলটাও। জরুরী কারণ আয়ান ও আসবে গায়ে হলুদে। আর আয়ান মায়রার বড় বড় চোখ জোড়ায় সবুজ কাজলটা খুব বেশিই পছন্দ করে। যতবার ও এই সবুজ কৌটোর কাজলটা চোখে পড়ে আয়ানের সামনে দাঁড়িয়েছে ততবারই আয়ানের চোখে অবাক বিস্ময় দেখেছে মায়রা। সাথে হয়তো অনেকখানি ভালোবাসাও।
 
তাই এতো তড়িঘড়ি ছুট।শপিংমলের পাশের গলিটা ধরে পনেরো-বিশ মিনিট হাঁটার পর ছোট্ট খুপরি মতো একটা দোকান ঘর পড়ে। "নয়ন কাজল ঘর"। একমাত্র সেই দোকানেই পাওয়া যায় এই স্পেশাল সবুজ কাজল। এক কৌটো কাজল মাত্র ১০ টাকা। অথচ এই ১০ টাকার কাজলের জন্য মায়রাকে ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়। আরও ২০ মিনিট হাঁটতে।।আরও কতো যে হ্যাঁপা পোহাতো হয় সে কেবল মায়রাই জানে।

আজকে কপাল ভালো মায়রার। দোকান খোলা আছে। বেশ কয়েকবার এতোদূর এসেও খালি হাতেই ফিরেছে মায়রা।তবে আজকের আসাটা স্বার্থক হলো ওর। ১০ টাকার এক কৌটো সবুজ কাজল কিনল। এই দোকানদারের এই এক জ্বালা- একবারে এক কৌটোর বেশি কাজল সে কিছুতেই বেঁচবে না। ১০০ থেকে ১০০০ পর্যন্ত টাকা দিয়েও এক কৌটোর বেশি বেচার লোভে ফেলতে পারেনি দোকানিকে।।সে এমনই ঢিট।। আজব!!!

বাসায় ফিরছে এখন মায়রা।
হাতের মুঠোয় একটা সবুজ কাজলের কৌটো। মায়রা এমনভাবে কৌটোটা চেপে ধরেছে মুঠোর মধ্যে মনে হচ্ছে এই বুঝি কেউ কৌটাটা নিয়ে ছুট লাগাবে। হাতের মুঠোয় কৌটো-আর মায়রা ভাবছে-বাসায় ফিরতে দেরি হলে আজকে কি কি হতে পারে। কিভাবে দেরি হলেও তাথৈয়ের হাত থেকে বেঁচে ফিরা যায়। এই মেয়ে মায়রাকে পইপই করে বলে দিয়েছে আজকের দিনে একদম দেরি করা চলবে না।।আর তাথৈ সময়ের ব্যাপারে ঠিক কতোটা পানচুয়াল তা আর কেউ জানুক- না জানুক মায়রা আর রিহান খুব ভালো করেই জানে। রিহান--তাথৈয়ের হবু বর।সে বেচারাও বড্ড ভয়ে আছে। বিয়ের দিন দেরি করলে তাথৈ হয়তো বিয়েটাও করবে না-এই ভেবে।

 মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো মায়রা। মনে মনে ভাবলোঃ-

'মায়রা,আজকে তো তুই শেষ---।'

ঘড়িতে ৫টা বেজে ৪০ মিনিট।আর বিশ মিনিটের মধ্যে সন্ধ্যা নামবে। সেটা সমস্যা না। সমস্যা হলো সন্ধ্যার পরপরই তাথৈয়ের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।আর তাথৈয়ের কড়া নির্দেশ মায়রা নিজে একেবারে রেডি হয়ে যেন তাথৈকে আনতে যায়। প্রতিটা মিনিট পার হচ্ছে আর মায়রার হার্ট দ্বিগুণ গতিতে বিট করছে।। মনে হচ্ছে এই বুঝি হৃৎপিন্ড ব্লাস্ট করবে।আর মায়রাও টুপ করে মরে যাবে৷বেচারি ভাবছে-এতো টেনশনের চাইতে হার্ট এ্যাটাক করে মরে গেলেই বোধ হয় ভালো হতো।।

বারবার মনে হচ্ছে পৃথিবী থেমে গেছে।সবাই স্ট্যাচু হয়ে গেছে। কি যেন বলে!? হ্যাঁ হ্যাঁ-পাথরের মূর্তি লাগছে এক একজনকে মায়রার।।কেউ বুজি বরফ পানি খেলায় সবাইকে একসাথে বরফ করে আটকে দিয়েছে।এমনই স্থবির যেন সময়!!

বাসার সামনে নেমে এদিক ওদিক তাকাল মায়রা।হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। যাক।১০ মিনিট আগে পৌঁছেছে বাসায়। ৬টা বেজেছে। রিকশাওয়ালা বোধ হয় পুরোটা রাস্তা রকেট গতিতে চালিয়ে এসেছে। এই খুশিতেই কিনা কে জানে মায়রা ৫০ টাকার বদলে ১০০ টাকার নোট ধরিয়ে "রাখেন-মামা"বলেই বাড়ির ভেতরে ছুটল।। 

৬টা বেজে ৩ মিনিট। 

মায়রা হন্তদন্ত করে রুমে ঢুকেই ড্রেসটা বদলে বাসন্তী রঙা একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে পাথরের ঝুল কানের দুল, গলায় চেইন, দু হাতে বাসন্তী রঙা চুড়ি। আয়নার সামনে বসে বসে অনেক যত্ন করে পেন্সিল দিয়ে সবুজ রঙা কাজলটা পড়ছে। তারপর কয়েকবার ভালো করে দেখে নিলো কাজলটা আবার কোথাও লেপ্টে গেলো কিনা।। আয়নায় নিজের দিকে তাকাল। কিছু একটা বাদ পড়েছে। কি সেটা বুঝতে পারছে না মায়রা।

ওড়না ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ালো মায়রা। মুখটা তুলতেই আবার আয়নায় চোখ পড়ল ওর। আয়ানের প্রতিচ্ছবি ফুটেছে আয়নায়।।আয়ানকে আয়নায় দেখেই হেসে আবার কাজে মন দিলো মায়রা। এটা ওর দৈনন্দিন একটা রুটিন হয়ে গেছে।।  সারাদিনই এখানে ওখানে আয়ানকে কল্পনা করা।।ড্রেসিং টেবিলের সবকিছু গোছগোছ করে ওপাশে ফিরতেই আয়ানের সাথে ধাক্কা খেলো মায়রা। 

-আরে--!! স্বপ্নে এসে ধাক্কাধাক্কি করছেন কেন??---।। উফ আমিও না--কি যে বলছি!!???

আয়ান মায়রার হাতটা টেনে নিজের সামনে আনলো।

-তোমাকে দেখছি না?? চুপচাপ দাঁড়াও-।। আমি দেখি---। 

-স্বপ্নে এসে এতো দেখার কি আছে!!! আর আপনাকে এই প্রথম পাজামা পাঞ্জাবিতে দেখছি---।।কি সুন্দর----
স্বপ্ন----!!!

-কি!!! আমি তোমার স্বপ্নে এসেছি??!!

-নয়তো কি!!! প্রতিদিনই তো আসেন।। আজ এতো কথা কেন বলছেন?? সরুন আমি যাই---।।

-স্বপ্ন না?? দেখাচ্ছি----।।।

আয়ান মায়রার হাত চেপে ধরে বুকে টেনে নিলো।। মায়রার মাথাটা নিজের বুকের উপরে রাখলো আলতো করে৷ 

-শুনতে পাও কিছু??

মায়রা চোখ বুজে আয়ানের বুকের ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ শব্দটা শুনতে লাগলো।। হার্টবিটটা একটু একটু যেন বাড়ছে আয়ানের।।আয়ান আবার আলতো করে মায়রার মুখটা তুলে ধরলো।।

-পাগলীটা!!!চোখ খুলে দেখো--আমি সত্যিই এসেছি---।। স্বপ্ন না।।

মায়রা চোখ খুলে ড্যাবড্যাব করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। স্বপ্ন না সত্যি কিছুই বুঝতে পারছে না বেচারি।।

০২!! 

-মায়রানিইইইইই---। হলুদের অনুষ্ঠানে কেউ বাসন্তী কালার পড়ে?  তোর আজকে-----।

তাথৈ এসে মায়রাকে বাসন্তী রঙা লেহেঙ্গা পড়া দেখে বেশ জোরেই বললো কথাটা।। আয়ানকে ও খেয়াল করে নি।। আয়ান দেয়ালে হেলান দিয়ে মায়রাকে দেখছিল। আর মায়রা বেচারি এতোক্ষণ ধরে এটাই চিন্তা করছে আয়ান এসেছে-এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন।। 

তাথৈয়ের চিল্লানিতে হুঁশ ফিরলো আয়ানের।তাথৈকে জ্বালাবে বলে একটু আগেই চলে এসেছিল আয়ান। অবশ্য শুধু তাথৈকে জ্বালাতে এসেছিল তাও কিন্তু না। মায়রা নামের মায়াবী পরীটার আজকে সুন্দর করে সাজার কথা।। সেই সাজটা সবার আগেই দেখতে এসেছিল আয়ান। মায়রার দরজা ক্রস করার সময় দেখলো মায়রা ড্রেসিং টেবিলে আয়নার সামনে বসে একমনে চোখে সবুজ রঙা কাজল পড়ছে।৷ এই কাজলটায় কি আছে কে জানে- আয়ান হা করে চেয়ে থাকে প্রতিবার। কখন আয়ান রুমে ঢুকে অবাক চোখে আয়নায় মায়রার মুখের দিকে চেয়েছিল আয়ান নিজেও জানে না।। মায়রার সাথে ধাক্কা লাগার পরে খেয়াল হলো মায়রাকে বাসন্তী রঙা পরীর মতো লাগছে।।

এর মধ্যেই আবার তাথৈয়ের চিল্লানি শুরু হলো।

-মায়রানি----। কথা বলিস না কেন??

তাথৈ তখনো আয়ানকে দেখে নি৷ আয়ানের দিকে পিঠ করে কথা বলছিল তাথৈ।। রুমে ঢুকেই মায়রার দিকে খেয়াল করে কথা বলছিল।। অবশ্য কথা না ঠিক। বকাবকি করছিল।।

-ওই মেয়ে? তুই আমার বউকে ধমকাস কেন রে?

তাথৈ আর মায়রা দুজনেই চোখ বড় বড় করে আয়ানের দিকে তাকাল।। 

-আয়ান তুই কখন এলি? আর বউ মানে? মায়রা তোর কোন জন্মের বউ লাগে?

-এই মেয়ে? বলো না কেন কিছু? তোমার বোন কি বলে শুনছো না? তুমি আমার কোন জন্মের বউ লাগো? বলো না গো?

-না মানে--। ইয়ে---। আমি কি বলবো?

তাথৈ হা করে একবার আয়ানের দিকে আর একবার মায়রার দিকে তাকাল।।

-আয়ান---। কি বলিস এসব?

-আরে অবাক হচ্ছিস কেন? তাড়াতাড়ি বিদায় হ তো--। পিচ্চি বউটারে বিয়ে করে নিয়ে যাই--।

-হারামি তোরা তলে তলে--। এইজন্যই বান্ধবীর বাসায় খালি আসা যাওয়া না? বাবাকে বলছি দাঁড়া।

মায়রা ভয়ে ঢোক গিললো। তাথৈয়ের ভরসা নেই। রেগে গেলে কি করে তার ঠিক নেই। বাবাকে বললে কি হবে কে জানে! আয়ান মায়রার চোখে মুখে ভয় দেখে হেসে ফেলল।

-তাথৈ-আমার পিচ্চি বউটাকে ভয় দেখাচ্ছিস কেন? আর বাসায় বলবি না? বেশি পাকনামি করলে তোর রিহানকে মাঝ রাস্তায় ১ ঘন্টা আটকে রাখবো কালকে। সে আর ভয়েই বিয়ে করতে আসবে না--। সো পাঙ্গা নিবি না আমার সাথে বুঝলি---?

-মানে কি!

-আরে হুররর--। রিহানরে কল দে তো যা--। হবু জামাই কালকে হালাল হবে--। একটু সাহস টাইস দে যা কল করে।। তুই বিয়েতে রাজি হয়েছিস সেটা ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।। যা যা--।। আমি পিচ্চিটাকে দেখি একটু মন ভরে-।

-হারামিগুলা এক একটা---।।

-যা যা-- তোদের দুজনরে বিয়ের জন্য রাজি করাতে করাতে শেষ আমি।। নিজের পথ ক্লিয়ার করতে আর যে কতো কিছু করতে হয় আল্লা ই জানে---।

-করবো না বিয়ে--। তোর প্ল্যানে যদি আমি পানি না ঢালসি দেখিস--। হুহ--।

-আরে? করিস না বিয়ে। আমার কি--? তোর দেবদাসই পাগল হয়ে পাবনা যাবে তাইলে। আমরা তো বিয়েটা করবোই---। কি বলো পিচ্চি?

মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আয়ানের মুখে কি কিছুই আটকায় না? হতেই পারে সে তাথৈয়ের খুব ভালো ফ্রেন্ড। তাই বলে এভাবে মায়রাকে তাথৈয়ের সামনে লজ্জায় ফেলবে কেন? আর পিচ্চি পিচ্চি ই বা করার কি আছে! মায়রা কি ছোট বাচ্চা নাকি?

তাথৈ মৃদু হেসে জুতোয় ঠকঠক আওয়াজ তুলেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ব্যাপারটা আয়ান খেয়াল করলেও মায়রা খেয়াল করে নি। সে বেচারি এখনো লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান হেসে মায়রার মুখটা তুলে ধরলো।

-এই পাগলি? এতো লজ্জা পাওয়ার কি হলো? তোমার অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে------।

-চুপ-। কিসব বলেন আপনি----।।

আয়ান এবার শব্দ করেই হাসল। মায়রার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিল।

-পাগলী তোমায় বাসন্তী রঙে অনেক সুন্দর লাগছে---। এখন হলুদ পরী সেজে এসো তো যাও--। আজ তো তাথৈয়ের গায়ে হলুদ বলো? ও রাগ করবে না?

মায়রা কি বলবে বুঝতে পারছে না। হলুদ রঙটা আয়ানের একদমই নাকি পছন্দ না। তাই তো তাথৈয়ের হলুদে পড়ার জন্য মায়রা হলুদ লেহেঙ্গা না বানিয়ে বাসন্তী রঙা লেহেঙ্গা বানিয়েছে। এখন সেই কথাটা তো আর আয়ানকে বলা যাবে না। সে হয়তো মন খারাপ করবে। আয়ান আবার মায়রার মুখটা দুহাতে তুলে ধরলো।

-তাথৈয়ের জন্য শপিং করতে গিয়ে তোমার জন্যও হলুদ লেহেঙ্গা কিনা হয়েছে পাগলী। -জানতাম তো আমার হলুদ রঙটা ভালো লাগে না বলে তুমিও হলুদ পড়ো না---। তবে জানো? লেহেঙ্গাটা দেখেই তোমার মুখটা ভেসে উঠেছে চোখের সামনে--। আমার হলুদ পরীটা--। যাও বদলে আসো। আর টিপ পড়বা ছোট্ট করে। লিপস্টিক পড়বা--। বাকি সাজ তো কমপ্লিট--।

মায়রার এতোক্ষণে মনে পড়লো সে টিপটাই পড়ে নি। ধুর---। ভালো লাগে না। আর কত কি যে ভুলে সে কে জানে!

-এই পাগলী--? কি ভাবো? ১৫ মিনিট টাইম। তাড়াতাড়ি রেডি হও। আমি তাথৈয়ের সাথে কথা বলে আসছি--। বহু কাজ আজকে আমার।তোমাকে দেখেই ছুটবো। রিহানের ওখানে যেতে হবে তো?

-হুম----।

-যাও যাও---। আর হ্যাঁ? দরজাটা লক করো। কখন টুক করে চোর ঠুকে হা করে তাকিয়ে থাকবে তোমার দিকে বলা যায় না-----।

মায়রা রাগ করে আয়ানকে মুখ ভেংচালো।

-আপনি একটা খারাপ-----।

আয়ান হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো। আর মায়রা শপিং ব্যাগটা খুলে সুন্দর সরিষা হলুদ রঙা একটা লেহেঙ্গা পেল। কি মনে করে কে জানে-লেহেঙ্গাটাকেই শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল। পরে আবার লজ্জা পেয়ে ছেড়েও দিল।।

আয়ান তাথৈয়ের দরজায় নক করলো আলতো করে। 

-তাথৈ? আসবো?

-হুম-হুম? আয় আয়----।

-কি রে? দুনিয়ার সব জিনিস এভাবে ছড়িয়ে রেখেছিস? দোকান খুলছিস নাকি?

-ওই ছেলে? কি সমস্যা তোর? কি বলবি তাড়াতাড়ি বলে বিদায় হ---।

-ওমা! জামাই মানুষ আমি। এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছিস? লজ্জা লাগে না তোর?

তাথৈ রাগী রাগী চোখে পিটপিট করে তাকাল আয়ানের দিকে।

-নাক ফাটিয়ে দিবো বলে রাখলাম--। আয়ান। তোদের একটারেও মাফ করবো না আমি---।হুহ---।

-হায় হায়--। কি বলেন আপা? আপনি মাফ না করলে আমার লাইনটা ক্লিয়ার করবে কে?

-নিজেই নিজের লাইন ঠিক কর হতচ্ছাড়া। রিহানকে কল দিচ্ছি--। ও কই?

-ও আচ্ছা--। হা হা৷ এই ব্যাপার? আগে বল আমার আর মায়রার ব্যাপারটা নিয়ে তুই রেগে নেই--। তাহলে ব্যবস্থা করছি---।

-পাগল নাকি! মায়রা আমার বোন--। আর তুই? তুই তো আমার কলিজা- আমার বেস্ট বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড। রাগ করি নি। তবে আগে বললে কি আমি তোদেরকে খেয়ে ফেলতাম?

-বলা তো যায় না। তুই তো জ্বলজ্যান্ত রাক্ষসী। হা হা।

-আয়ানাইয়্যা------।

-আচ্ছা এখন ওয়েট। রিহানরে কল দিই। দুই মিনিট কথা বলে নে---।

-হুম।

আয়ান রিহানের নাম্বারটা কল লগে তুলে কল দিতে ব্যস্ত৷ তাথৈ ওর দিকে চেয়ে আছে। হাসিখুশি একটা ছেলে আয়ান। সবসময়ই নিজের যোগ্যতায় সবার কাছেই প্রশংসা কুড়োয় ছেলেটা। মায়রার সাথে মানাবেও বেশ।

-আয়ান---?

-হুম?

-আমার বোনটা অনেক শান্ত-চুপচাপ একটা মেয়ে--। মুখ ফুটে নিজের প্রয়োজনটা কখনো কাউকে বলে না। ওকে সবসময় আগলে রাখিস প্লিজ--।

আয়ান হেসে তাথৈয়ের কানে মোবাইলটা লাগিয়ে দিল। ওপাশ থেকে রিহান 'হ্যালো হ্যালো' করছে। মুখের হাসিটা আরো বিস্তৃত হলো আয়ানের। হাতের ইশারায় ৫ মিনিট ইশারা করে তাথৈয়ের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। মায়রাকে একবার দেখবে মন ভরে। তারপর রিহানের বাসায় ব্যাক করবে। দরজার সামনে আসতেই দরজাটা খুলে গেল। আর আয়ানও তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন