২৯!!
এভাবে পাগলামি আর ছেলেমানুষি ভালোবাসায় একটা সপ্তাহ কেটে গেছে। মায়া এক প্রকার জোর করেই রাহাতকে অফিসে পাঠাচ্ছে। কাজ সেরে বাসায় ফিরেই রাহাত মায়ার সাথে দুষ্টুমিতে মাতে। কখনো তাড়াতাড়ি ফিরলে মায়া, রাহাত, মিহান, দিয়া চারজনে মিলে লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ে। আবার কখনো রাত বিরেতে মায়াকে নিয়েই একা বেরিয়ে যায় রাহাত। ব্রিজের ওপরে মায়াকে বুকে চেপে ধরে অশান্ত নদীটার ঢেউ উপভোগ করে। সব মিলিয়ে রাহাতের দিনগুলো বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে।
আর মায়ার দিনগুলো কাটছে চিন্তায়। মিহান ভাইয়ার বিয়ের কথা বলে না হয় এতোদিন বাড়িতে ছিল। এখন কি করবে? রাহাত ফিরিয়ে নিতে চাইলে যাবে? নাকি আরো কয়টা দিন দেখবে? মা খালা জিজ্ঞেস করলে কি জবাব দিবে? সব মিলিয়ে মায়ার চিন্তা হচ্ছে প্রচন্ড। দিয়া আর মিহানের হানিমুনের জন্যও কোথাও যাওয়ার প্ল্যানিং করা দরকার। এসব ভাবতে ভাবতেই মোবাইল নিয়ে গুতাগুতি করছিল মায়া। এমন সময় টুং করে একটা মেসেজ এলো মায়ার মোবাইলে। আর একটু পরেই একটা ভয়েস রেকর্ড। মায়া মেসেজটা পড়েই থমকে গেল।
"মিসেস মায়া রাহাত মাহবুব চৌধুরী,
কেমন আছেন? আমাকে চিনতে পারলেন ম্যাডাম? আমার সাজানো গোছানো প্ল্যানটায় জল ঢেলে আপনি রাহাত স্যারকে তো বিয়ে করলেন। কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন কি? এক বছর আগের কথা মনে আছে? তখন নাহয় আমি উনার ড্রিংকসে ওষুধ মিশিয়ে এনেছিলাম আর আপনিও সেটার খোঁজ বের করে আমাকে থাপ্পড় মেরে তাকে নিয়ে চলে গেলেন--। তবু বেঁধে রাখতে পেরেছেন? আর এবার? এবার তো স্যার নিজেই মোটা টাকা দিয়ে কাউকে বেড পার্টনার করছেন। বিশ্বাস হলো না তো? বাঙালি নারী তো? স্বামীকে তো ফেরেশতা মনে করে বিশ্বাস করেন। তাই অডিও টাও দিলাম৷ শুনে দেখবেন। আর ভালো থাকবেন ম্যাডাম।
জুলি।"
মেসেজটা পড়ে মায়ার দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। কোনমতে ঢোক গিলে অডিওটা প্লে করলো। ফাইলের কাগজের খসখসানির পর কথাগুলো শুরু হলো।
"-Hae? Liza? Are you free tonight? I can pay you for the night----.
-কত দিবেন? স্যার?
-উউউউউউ। মে বি 50k per night.
-ওকে, স্যার। কোথায় আসতে হবে ম্যাসেজ করে দিবেন---। চলে আসবো।"
গা কাঁপানি দিতেই মায়ার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। মায়াও মোবাইলের পাশেই ফ্লোরে বসে পড়লো। চোখের পানিগুলো বাঁধা মানছে না। বছর খানেক আগেও রাহাতকে জুলির ফ্ল্যাটের বিছানায় অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে এভাবেই দম বন্ধ আসছিলো মায়ার। তবু সেদিন মায়া রাহাতকে বিশ্বাস করেছিল। ওর অচেতন মুখটা দেখেই মায়া বুঝতে পেরেছিল জুলিই কিছু করেছে যাতে মায়া রাহাতকে ভুল বুঝে। ড্রাইভার আর মায়া মিলে রাহাতকে সেদিন নিয়ে এসেছিল বাসায়। দিনটার কথা মনে হতেই মায়ার আরো কান্না পেল।
নিজের হাত কামড়ে কান্নার শব্দগুলো আটকানোর চেষ্টা করছে মায়া। আজ রাহাতকে কি করে বিশ্বাস করবে? বিশ্বাসের জায়গাটা কি আজ আর অবশিষ্ট আছে? আর কে এই জুলি? রাহাতের অফিসের কেউ? ভাবতেই আবার কান্না এসে সব ঝাপসা করে দিলো মায়ার৷ শরীরের চাহিদাটা কি এতোই বেশি? ওদের ভালোবাসার চেয়েও? আসলেই কি রাহাত নামের মানুষটাকে ভালোবেসে ভুল করেছে মায়া? ওর ভালোবাসাটা একটুও মানুষটাকে বদলাতে পারে নি? একটা মেয়ে তো সব মানতে পারে। কিন্তু প্রিয় মানুষটার ভাগ কখনোই কাউকে দিতে পারে না। আর প্রিয় মানুষটা যদি তার স্বামী হয় তবে তাকে নিজের করে পেতে একটা মেয়ে নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে৷ তবে যে মানুষটা থাকবেই না তাকে কি করে কিসের লোভ দেখিয়ে আটকাবে মায়া? শরীরের? ছিহ!
এসব ভাবতে ভাবতে আর কাঁদতে কাঁদতেই কখন মায়া ঘুমিয়ে গেছে নিজেই টের পায় নি। ঘুম ছুটতেই টের পেল এক জোড়া হাত মায়াকে জাপটে ধরে আছে৷ কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়ে মায়া রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। রাহাত আঙুল দিয়ে মায়ার চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো।
-মায়া? কি হয়েছে?
-হুম?
-নিচে শুয়ে ছিলে কেন? আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম---। শরীর খারাপ লাগছে পরী?
-আরে নাহ---। এমনি বসে ছিলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারি নি--।
-মায়াবতী? কি হয়েছে? চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? কান্না করেছ কেন? এই?
-হুম? কিছু নাহ?
-পরী? বলো না কি হয়েছে?
-তুমি এই সন্ধ্যা বেলায় কি করে এলে?
রাহাত মায়াকে বুকে টেনে নিলো।
-কথা ঘুরাচ্ছে কেন মায়াবতীটা?
-বলো না?
-প্রজেক্টের কাজ বাকি আছে অনেকটা। আর কালকে মেইল করতে হবে এন. আর. পি. ইনড্রাস্ট্রিতে--। উনারা প্রজেক্টের কাজের কতোটুকু হলো সেটা দেখতে চাইছে--।
-ওহ---। তো কাজ না করে এখানে কি?
-বাড়ি চলো না মায়াবতী?
-হুম? কি?
-অনেকদিন তো হলো--। তোমার কোলে মাথা রেখে কাজ করবো-। তুমি আদর করে চুলে হাত বুলিয়ে দিবে--। ঘুমিয়ে পড়লে বকা দিয়ে তুলে দিবে---।
------------------------------
-রাগ করলে? আচ্ছা যাও। টেইক ইউর টাইম-। প্রজেক্টের ঝামেলা শেষ হবে কালই--। তারপর আমিও দেখি আমার মায়াবতী আমার থেকে কি করে দূরে থাকে---।
-তোমার অনেক কাজ বাকি?
-রাতে কমপ্লিট করে নিবো--। আজ রাতে বাড়ি যাবো--। কাজ কমপ্লিট হলেই কাল সোজা বউয়ের বুকে মুখ ডুবাতে চলে আসবো----।
-হুম----।
-মায়াবতী? কি ভাবছ?
-হুম? কিছু না। আচ্ছা? রাহাত? লিজা কে?
-আরে? আমার কারেন্ট পি.এ।
-ওহ------।
-ওর কথা কেন-------?
-তোমার অনেক কাজ বাকি না? বাসায় যাও--।
-বারে! তাড়িয়ে দিচ্ছ কেন? যাবো তো--। বউকে আদর দিয়ে করে নিই মন ভরে---।
-হুম-----।
রাহাত মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আলতো আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো। মায়ার মনটা খারাপ বুঝতে পারছে। তাই আরো বেশি করে দুষ্টুমি করছে রাহাত। মেয়েটার মন ভালো হচ্ছে না কেন কিছুই বুঝতে পারছে না।
-মায়াবতী? একটা গান শোনাও--। তোমার মিষ্টি কণ্ঠে একটা গান শুনি--। তাহলে মন দিয়ে কাজ করতে পারবো----।
-হুম।
মায়া উঠে বসতেই রাহাত মায়ার কোলে মাথা রেখে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজলো। মায়াও রাহাতের চুলে হাত বুলিয়ে হালকা গলায় গান ধরলো।
-"Lag Ja Gale Ki Phir Ye Hasin Raat Ho Na Ho
Shaayad Phir Is Janam Men Mulaaqaat Ho Na Ho
Lag Jaa Gale …
Ham Ko Mili Hain Aaj, Ye Ghadiyaan Nasib Se
Ji Bhar Ke Dekh Lijiye Ham Ko Karib Se
Phir Aap Ke Nasib Men Ye Baat Ho Na Ho
Shaayad Phir Is Janam Men Mulaaqaat Ho Na Ho
Lag Jaa Gale …
Paas Aaiye Ki Ham Nahin Aaenge Baar-Baar
Baahen Gale Men Daal Ke Ham Ro Le Zaar-Zaar
Aankhon Se Phir Ye Pyaar Ki Barasaat Ho Na Ho
Shaayad Phir Is Janam Men Mulaaqaat Ho Na Ho
Lag Ja Gale Ki Phir Ye Hassin Raat Ho Na Ho
Shaayad Phir Is Janam Men Mulaaqaat Ho Na Ho
Lag Jaa Gale …"
মায়ার গান শেষ হতেই রাহাত বিছানায় শুয়ে মায়াকে বুকে টেনে নিলো।
-মায়াবতী? কি হয়েছে তোমার?
-কো-কোথায়?
-তাহলে এভাবে কাছে ডাকছো কেন? আমি তো কাজটা করতেও যেতে পারবো না এখন তোমাকে রেখে---।
-যাও তো---। ঢং করো না--।
-ঢং না কি সেটা কাল এসেই বোঝাবো ম্যাডাম। আর কি হয়েছে সেই রহস্যের পর্দা কালই নাহয় উদঘাটন হবে----।
মায়া মুচকি একটু হাসলো। মনে মনে ভাবলো- শুধু কালেরই অপেক্ষা রাহাত। নতুন একটা ভোর সব কিছুই বদলে দিবে কাল।
৩০!!
রাতে প্রজেক্টের কাজ শেষ করতে করতেই ঘুমিয়ে গেছে রাহাত। সকালে উঠতে উঠতেও দেরি হয়ে গেছে ওর। ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে বাকি কাজটা কমপ্লিট করে মেইল করেই অফিসে ছুটলো রাহাত। অফিস থেকে নাকি বাসার নাম্বারে কল করেছে লিজা। তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। রাহাত অনেক্ক্ষণ খুঁজেও নিজের মোবাইলটা পেল না। পরে মোবাইল ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। অফিসে নিজের রুমে ঢুকতেই দিহান আর লিজাকে পেল রাহাত।
-স্যার?
-কি ব্যাপার লিজা? বাসায় কল করছিলে নাকি?
-স্যার আপনার মোবাইলেও কম করে হলেও ১০০ বার কল করেছি।
-মোবাইলটা পাচ্ছি না। সম্ভবত মায়ার বাসায় ফেলে এসেছি কালকে----।
-স্যার----। ম্যাম কোথায়?
-কোথায় মানে! বাসায়--। আর তোমাদের দুজনের কি হয়েছে? দিহান? কোন সমস্যা হয়েছে?
-সরি স্যার---। লিজা তুমি স্যারের সাথে কথা বলো৷ আমি আসছি--। আসছি স্যার---।
দিহান বেরিয়ে যাওয়ার পর রাহাত চেয়ারে বসে লিজার দিকে তাকলো।
-হয়েছে টা কি বলবে লিজা প্লিজ? দিহানেরই বা কি হলো?
-স্যার গতকাল দুপুরে আপনি অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর দিহান অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করার সময় একটা লোককে আপনার রুমে ঢুকছে দেখতে পায়। ছুটে রুমে গিয়েও লোকটাকে ধরতে পারে নি--। দিহান এসেছে টের পেয়েই একটুর জন্য পালিয়ে যায় লোকটা--। কোন ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল বা তথ্য চুরি করলো কিনা সেটা খুঁজতে লাগলাম আমরা দুজনে---। তখন একটা মোবাইল পাই--। সম্ভবত যে লোকটা এসেছিল তার মোবাইল--। আর কিছু পাই নি--। তবে মোবাইলটা থেকে একটা অডিও সেন্ট হয়েছে একটা নাম্বারে---।
-কিসের অডিও? কি সব বলছ রে বাবা! কিছুই তো বুঝতে পারছি না-।
-স্যার অডিও টা ছিল আপনার আর আমার কথার--। আপনি যে প্রতি রাতের জন্য ৫০০০০ টাকা---।
-কি বলছো কি লিজা?
-দিহান তখন অনেক আপসেট হলেও পরে ও আমাকে বিলিভ করেছে---। ও নিজের ফ্রেন্ডের সোর্স ব্যবহার করে যে নাম্বারটায় মেসেজ করা হয়েছে সেটার খবর নিয়েছে--। নাম্বারটা জুলি নামের একজনের--।
-হোয়াট!
-জি স্যার--। জুলি মেয়েটার নাম্বার ট্রাক করে জানা গেছে মেয়েটা একটা নাম্বারে অডিওটা আর একটা মেসেজ পাঠিয়েছে----।
-ওহ শিট---! লিজা? আমি মায়াকে কল করি। তুমি একটু কনফার্ম করো এই নাম্বারটাই কিনা?
-জি স্যার----।
অফিসের ফোনে মায়ার নাম্বারটা ডায়াল করতেই লিজা ইশারায় জানালো এই নাম্বারটাই ছিল। রাহাত কল করছে বারবার। ফোনটা বন্ধ আসছে প্রতিবারই। রাহাত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আজই মায়াকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল! মেয়েটা কি ভাবছে কি করছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে মায়ার বাসায় যাওয়ার জন্য ছুটলো রাহাত।
-স্যার?
-সরি লিজা--। আমার জন্য তোমাদের সম্পর্কে কোন ভুল বুঝাবুঝি হোক তা চাই না--। প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দিও--। আর মায়াবতীটাও যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয় সেটার জন্য একটু প্রে করো প্লিজ--।
যাওয়ার সময় দিহানকে আরেকবার সরি বলে ফুল স্পিডে গাড়ি ছুটিয়ে মায়াদের বাসার দিকে ছুটলো রাহাত। পিছনে দিহানের হাত শক্ত করে ধরে লিজা রাহাতের ছুটে যাওয়ার দিকে ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে৷ দিহানও আলতো করে লিজার হাতটা চেপে ধরে আশ্বাস দিলো। যেন বলছে যা হবে সব ভালোই হবে। মায়ার বাসার সামনে গাড়ি থামিয়েই ঢিপঢিপে বুকে কলিং বেল বাজালো রাহাত। কি বলে মেয়েটার রাগ ভাঙাবে সেটা ভেবেই মাথা ঘুরছে রাহাতের। দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলেই রহিমা খালাকে দেখতে পেল রাহাত।
-খালা?
-আরে জামাই বাবা--। আপনে চইলা আইসেন? এই নেন আপনের ফোন---।। মায়া মায় দিয়া গেসে--।
-দিয়ে গেছে মানে? কোথায় গেছে?
-তারা সবাই তো গেরাম গেসে গিয়া। নতুন বউয়ের নাকি গেরাম দেখনের শখ লাগসে--।
-কখন গেছে?
-আইজ্জা সক্কাল সক্কাল---।
-কোথায় গেছে একটু বলুন না প্লিজ রহিমা খালা?
-আমি তো জানি না জামাই বাবাজি--।
-প্লিজ প্লিজ প্লিজ? খালা আপনি আমার মায়ের বয়সী--। হাত জোড় করছি প্লিজ?
-আপনে এমন করতেসেন কেন বাবা? আমি সত্যই জানি না হেরা কই গেছে---।
------------------------------
-রাহাত বাবা? হেরা চইলা আসবে তো--। বেশি দিন থাকবো না--।
রাহাত কোনমতে টলতে টলতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। মায়াকে এবার সে কোথায় খুঁজবে? কার কাছে জানতে চাইবে তার মায়াটা কোথায় গেছে? নিজের মোবাইলটা হাতে নিতেই অনেকগুলো কল দেখল রাহাত। সবগুলোই লিজার। রাতে মেয়েটা আসলেই কয়েকশো কল করেছিল। আরেকটা মেসেজও সো করছে স্ক্রিনে। কাঁপা হাতে মেসেজটা ওপেন করলো রাহাত।
"রাহাত,
কেন করলে এমনটা? সব ভুলে তোমাকে তো আবার ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম--। তবুও কেন করলে এমনটা? একটা কথা বলো তো? আমাকে সত্যি ভালোবেসেছিলে তুমি? নাকি শুধুই শরীরের চাহিদাটাই---? আর ভাবতে পারছি না। জানো? তোমাকে বিশ্বাস করতে মন চায় অনেক। বিশ্বাস করতেও পারি না। এতো অবিশ্বাস নিয়ে কিভাবে তোমার সামনে থাকি বলো? অবিশ্বাস থেকেই তো ঘৃণা জন্মায়। কিন্তু তোমাকে ঘৃণা করে তো বেঁচে থাকা সম্ভবও না আমার। তাই চলে গেলাম। এবার খুঁজতে এসো না প্লিজ। তুমি তোমার মতোই না হয় ভালো থাকো। শুধু আমার নামের সাথে তোমার নামটা না হয় এভাবে জড়িয়েই থাক আজীবন। প্লিজ?
আর হ্যাঁ, পারলে নতুন করে জীবনটা শুরু করো। আমি অধিকার ফলাতে আসবো না সত্যি।
তোমার। "
মোবাইলটা পাশের সিটে ফেলে রাহাত সেখানেই কেঁদে ফেললো। মেয়েটা এবার ভুলই বুঝলো রাহাতকে। অবশ্য তার অপরাধগুলোর শাস্তি তো তাকে পেতে হবেই। আর মেয়েটাকে বিশ্বাস করতে বলবেই বা সে কোন মুখে? রাগে, দুঃখে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে রাহাতের। নিজের মাথাটা স্টিয়ারিংয়ের উপরে বার কয়েক আঘাত করলো রাহাত। এবারে সে তার মায়াবতীকে হারিয়ে ফেলেছে৷ চিরজীবনের মতোই হারিয়ে ফেলেছে। এবার সে কি নিয়ে বাঁচবে?
ক্লান্ত হয়ে স্টিয়ারিংয়ের উপরে মাথা রেখে বসে আছে রাহাত। এই সময় রাহাতের মোবাইলটা শব্দ করে বেজে উঠলো। হাতে নিতেই দিহানের নামটা ভেসে উঠলো। মোবাইল হাতে নিয়ে রাহাত ভাবতে বসলো দিহানকে কি বলবে? ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি ঝরছে রাহাতের।