অচেনা অতিথি - পর্ব ১১ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


"এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্তটাই পরিপূর্ন সত্য। মিথ্যার অস্তিত্ব যদি কোথাও থাকে তবে তাহা মানুষের মনে ছাড়া আর কোথাও নাই।"
                               ___শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়

উক্তিটি মাহাদ গড়গড় করে বলে উঠলো। তা নিসা, এই কথাটা তোর সাথে একদম যায় তাইনা?

মাহাদের কন্ঠ শুনে নিসা খানিকটা হচকিয়ে উঠে কাছে এগিয়ে আসতেই মাহাদকে দেখলো। মাহাদকে দেখে গলা শুকিয়ে গেল। মাহাদ যে এভাবে লাইনে ছিল সেটা নিসা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। নিসা তিতিরের দিকে একবার চেয়ে আবার মাহাদের দিকে চেয়ে শঙ্কিত হয়ে নিচু গলায় বলল-

~" তু..ত.. তুই?"

~" হুম আমিই তো! কেন অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছিস নাকি?"

~" না মানে আসলে আমি তোকে দেখতে পাইনি। তা ভালো আছিস.....!"

~" ভালো তো ছিলাম এতক্ষন। কিন্তু তুই আর ভালো থাকতে দিলি কই?"

মানে, আমি কি করলাম আবার! আমি তো কিছুই বলিনি বলতেই গোলাব ঘেউ ঘেউ করে উঠে নিসার কথার প্রতিবাদ করলো সাথে সাথে। নিসা ভয়ে কেঁপে উঠলো। গোলাব নিসাকে শাসন করা যেন থামাতেই চায়না। মাহাদ অনেক কষ্টে থামিয়ে বলল-

~" চুপপপ, আর একটা আওয়াজও যেন না শুনি। শব্দ শুনলেই রুম থেকে বের করে দিব বুঝলি! আমাকে কথা বলতে দে।"

মাহাদের ধমক শুনে গোলাব লেজ গুটিয়ে বসে পড়ে চোখ তিক্ষ্ণ করে নিসার দিকে চেয়ে রইলো। ওর চাহোনি দেখে মনে হচ্ছে নিসাকে এখন পেলে আর আস্ত রাখবেনা সে। মাহাদ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল-

~" তা তুই এই সময় আমাদের রুমে কেন এসেছিস? কারো রুমে ঢুকতে যে নক দিতে হয় সেটা তোর বাবা-মা তোকে শিক্ষা দেয়নি? মানুষের প্রাইভেসি বলেও তো কিছু থাকে। কেন এসেছিস?"

তোর বউকে গন ধোলাই দিতে। সোজাসাপ্টা জবাব দিল নিসা।

মাহাদ কিছুক্ষন নিসার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর নিজেই নিরবতা ভেঙ্গে বলল-

~" আমার বউয়ের অপরাধ!"

পিছনে তিতির এদের কথা না শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেল। এদের সমস্যা এরা মিটাক। বরং এখানে তিতিরকে দেখে নিসা আরও ক্ষেপে যাবে।
মাহাদ দেখলো তিতির বের হয়ে গেল। ওর বের হয়ে যাওয়াটাই বেটার। কারন এখন নিসাকে মাহাদ যেগুলো বলতে যাচ্ছে তা কারো কাছে প্রকাশ করার মত কথা না। 

বাবাকে নিয়ে এই রাতে কোথায় যেতে চায় তোর বউ! বাবা সাথে কোন সির্কোরিটির গার্ড পর্যন্ত নিবেনা। তোর বউ  এমন কোন লাট সাহেবা এসেছে, যার জন্য ওর সব কথা শুনতে হবে এই বাসার মানুষদের? আর ওর রেজওয়ানের সাথে এত সম্পর্ক কেন! তুই জানিসনা, রেজওয়ান কি জিনিস? ও কি কি করতে পারে আর আজ অবদি করেছে?

বাহ্ তুই এত কিছু জানিস! কিন্তু দেখ, আমার বউতো আমাকে কিছুই জানায়নি। তা তুই এত কথা জানলি কি করে? গোয়েন্দা হয়েছিস?

মাহাদের নরম কন্ঠ শুনে নিসা যেন একটু সাহস পেয়ে বলল-

~" গোয়েন্দা হতে হবে কেন! চোখের সামনে যা ঘটছে তাই বলছি। ওর রেজওয়ানের সাথে এত্ত মেলামেশা কেন! 
হ্যারে মাহাদ, শেষে তোকে ছেড়ে তোর বউ রেজওয়ানের পিছে লাগেনি তো! নাহ্ কথাটা এমনি বলতে চাইনি, কিন্তু "ল.সা.গু/গ.সা.গু" করে তো এটাই মিলছে যে, তোর এখন যা অবস্থা তাতে তোর বউয়ের তোকে ভালো নাও লাগতে পারে। তার জন্য ধর, ও.......
মানে পরকীয়ায় মেতে উঠেছে।"

মাহাদ এবার কৌতুক করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল-

~" তিতির কি সত্যই রেজওয়ানের সাথে কথা বলে না কি! তাকে আমি বার বার  নিষেধ করা সত্ত্বেও তার সাথে কথা বলেছে! ব্যাপারটা তো ভারী অন্যায়। দুই বাচ্চার মা হয়ে তিতির অন্য পুরুষের সাথে এভাবে কথা বলে কিভাবে? তাইতো বলি সে আমার কাছে আসেনা কেন? কেন দুরে দুরে থাকে। বর ছাড়া অন্য কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে তাদের কি বলা হয় নিসা?"

নিসা ব্যাপক খুশি হয়ে হাতে তালি মেরে  মাহাদের সামনা-সামনি বসে পড়লো বেডে। দোস্ত তুই লাইনে আইছোস। কে বলে তুই পরিবর্তন হইছোস! এতদিনের বন্ধুত্ব ভুলে যেতে পারে কেউ? যাক সে কথা, ঐ সম্পর্ককে পরকীয়া বলে পরকীয়া হুঁম....। আর আরও একটা কথা শুনলে তো তুই টাষ্কি খেয়ে যাবি.....

মাহাদ নিসার দিকে ঝুকে ফিসফিসিয়ে বলল-

~" আমিতো টাষ্কিই খেতে চাই। বল বল জলদি বল। তর আর সইছেনা আমার। চিন্তা ভাবনা করে শেষ ডিসিশন নিয়েই ফেলেছি। আমি সত্যই মনে হয়, এত দিন ধরে টিনের চশমা  ব্যবহার করতাম। তুই না বললে তো আমি চিনতেই পারতামনা আমার বউকে। দেখছিস, পেটে পেটে কত বড় ষড়যন্ত্র!  ভাবা যায় এগুলো?"

ধ্যুর আবার আদর করে বউ ডাকা হচ্ছে! বাসার সব পুরুষদের সে হাত করেছে। শোন, ও যদি ফুয়াদের পিছনে লাগে তাহলে কিন্তু তোর বউকে খুন করবো বুঝলি! চিন্তা করিসনা, তোকে আবার একটা সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে দিব। তিতিরের থেকেও সুন্দর মেয়ে দিব তোকে। আর বাঁকি রইলো সাদ আর অতিথী তো! চিন্তুা করিসনা, তোর ২য় বউ ওদের না দেখলে আমি মানুষ করে দিবোনি। প্লানটা কেমন বলতো বলে ভ্রুজোড়া নাচিয়ে মুখে ১মাইল সমান হাসি টেনে মাহাদকে ওর গুনগুলো দেখাতে লাগলো।

মাহাদও সাথে সাথে হাতে তালি দিয়ে নিসাকে উৎসাহিত করে বলল-

~" আরে দোস্ত তোর এত বুদ্ধি কই থেকে আসে বলতো! তোর দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল। অন্য দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক খুব ভালো রাখতে পারতি।
 যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট "জো বাইডেন" এর পররাষ্ট্র মন্ত্রী "অ্যান্টনি ব্লিনকেন" থেকেও তুই জব্বর পারফর্ম করতি। আহা বাইডেন তোকে চিনলে এতদিনে  তোকে নিয়ে টানাহিচড়া পড়ে যেত রে নিসা! ভাগ্গিস চেনেনা, না হলে আমরা আমাদের নিসাকে হারিয়ে ফেলতাম।"

মাহাদের এমন কথা শুনে নিসা ভ্রু কুচকে বলল-

~" হারামি, তুই আমার সাথে মস্করা করোস?"

~" না.....হ্ মস্করা করবো কেন! এতো সুন্দর করে তুই গোপন তথ্যগুলো আমাকে বলে দিলি সেটা কেউ বলতো বল! তিতির পরপুরুষের সাথে চলে গেলেও কেউ আমাকে জানাবেনা সেটা তুই ভালো করেই জানিস। আমিতো জানি, তুই আমার কত ভালো চাস। আমার এখন তোকে কি বলতে মন চাচ্ছে জানিস?"

কি... কি.. কি বলতে মন চাচ্ছে রে! জলদি বল জলদি বলেই নিসা খুশিতে ডগমগ হয়ে গেল।

~" এভাবে না, আর একটু সামনে এসে বস। তোকে ভালোমত দেখতে পাচ্ছিনা। গোপন কথা বুঝলি! দেওয়ালেরও তো কান আছে।"

উম তা ঠিক,  দেওয়ালেরও কান থাকে। নিসা একটু এগিয়ে গিয়ে বলল-

~" এবার বল কেউ শুনবেনা।"

~" সত্যিই বলবো!"

~" তোর কানে থাবড়াইবো, বল জলদি।"

মাহাদ নিসার উৎসাহিত দেখে মুখটা গম্ভীর করে নিসার মনযোগ নিয়ে গড় গড় করে বলতে শুরু করলো,

~" তোর মত এমন বজ্জাত, ছোচনা, ছুচনি, জল্লাদ, ডাকিনী, চোখলখুড়ি, আজাইরা ফালতু মার্কা মহিলা আমি বাপের জন্মেও দেখিনি। বিশ্বাস কর বাপের জন্মেও দেখিনি। আমারতো মনে হয়, তুই যা যা করিস সেটার রের্কড তোর বংশের কেউ ভাঙ্গতে পারবেনা।
বাতাসির ডায়লগ হলে আরও কিছু বলা যেত। যেটার কারিশমা শুধু সেই দেখাতে পারে।
মন চাচ্ছে তোরে থাবড়াইয়া আফ্রিকাতে পাঠিয়ে দেই। যদি আর কখনো এমন চিন্তা ভাবনা ভুলেও মনে এনেছিস তাহলে তোকে সেদিন কি যে করবো সেটা আমি নিজেও জানিনা। তুই শুধু যদি আমার বান্ধবী হইতিস তাহলে এতক্ষনে তোর ব্যান্ড বাজিয়ে ফেলতাম। বড় ভাইয়ের বউ হয়ে বেঁচে যাস বার বার। ফট্ এখান থেকে, আর ভাইয়ার শুকরিয়া আদায় কর। তুই আমার ভাবী হয়ে বেঁচে গেলি বলে।"

মাহাদের এমন কথা শুনে নিসা লাফ দিয়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর ছলছল চোখে অভিযোগের স্বরে বলে উঠলো-

~" তুই আমাকে এত,,, এতবড় কথা বলতে পারলি মাহাদ? তোর মুখে একবারও কথাটি আটকালোনা!"

~" কেন আটকাবে! তুই কোথাকার রানী এলিজাবেথ হে, যা জন্য তোকে এসব কথা বলা যাবেনা! এটা বলার জন্য আমাকে জরিমানা গুনতে হবে নাকি! তার জন্য হুংকার ছেড়ে কথা বলছিস?
শোন ভালো করে বলছি, নিজেকে শোধরা.....। কথার পাল্লা তোর বড্ড ভারী হয়ে যায়। শেষে এমন গর্তে পরবি সেখান থেকে উঠতে পারবিনা কখনো। আমার ভাইয়া যদি ভুলেও কখনো বলে তোকে আর তার ভালো লাগছেনা। তাহলে আমি নিজে তাকে অন্য জায়গায় আবার নতুন করে বিয়ে দিব। আমাকে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন তোর জন্মের মত ঘোচাবো, বুঝলি! কথাটা মাথায় রেখে দে।"

নিসা এবার কেঁদেই ফেলল মাহাদের সামনে। কিন্তু কিছু না বলে রুম থেকে যেতেই মাহাদ বলল-

~" ঐ ঐ কই যাস! আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। সব কথা আগে শোন?"

নিসা মাহাদের কথার জবাব না দিয়ে দরজার কাছে যেতেই মাহাদ পাপ্পু বলে সামান্য চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিন্তু ততক্ষনে নিসা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেছে। কিন্তু মাহাদ এখনো অপেক্ষা করে আছে নিসার জন্য। হুম অপেক্ষা বেশিক্ষণ করতে হলোনা, নিসা দ্রুত বেগে মাহাদের রুমে আবার ঢুকে পড়লো। রুমে এসেই মাহাদকে এলোপাথারি গালি দিতে লাগলো। ঐ তুই কি পাইছোস হুঁ! এত কথা বলে আমাকে অপমান করবি আর আমি তোকে ছেড়ে দিব!

~" ছেড়ে দিতে কে বলেছে, ধরেই রাখনা! আমি কি সেটা নিষেধ করেছি? বরং নিষেধ করেছি এবং আবারও করছি আমার বউয়ের পিছনে লাগা বাদ দে। আমি যেন তোকে ওর আশেপাশেও না দেখি। যে ওর পিছে লেগেছে তাকেই যন্ত্রনাময় শাস্তি দিয়েছি। তুই বান্ধবী প্লাস ভাবী বলে কিছু বলিনা। তবে পরিমানটা বেশি হয়ে গেলে কিন্তু ভাবী বলে আর রেহাই দিবোনা। বরং নিধি আর ফিহাকে যাতে তিতিরের উপর মানুষ করার দায়িত্ব পরে সেটার ব্যবস্থা করবো। একদম পাল্টাপাল্টি চ্যাল যাকে বলে। তোর প্লানে তোকেই কুপোকাত করবো। বুজলি এবার, জানিস তো আমি কি জিনিস? পারিনা এমন কোন কাজ নেই।"

~" আর যদি না ছাড়ি তোর বউয়ের পিছু! তাহলে......?"

নিসার কথা শুনে মাহাদ সোজা হয়ে বসতেই গোলাব আবার ওর বুকের ভিতরে জায়গা করে নিল। তারপর হাত দুটো টান টান করে বড় একটা হাউ তুলে মাহাদ বলল-

~" কি আর হবে! তোর যে পাপ্পু নামের একটা বয়ফ্রেন্ড ছিলো সেটা ভাইয়াকে বলে দিব। আহ্ কি গভীর প্রেম.....। আমি নিজেইতো সাক্ষী। প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হইয়া আমার ভাইয়ার পিছ ধরছিলি। আমিও এক বোকা, তোরে সহজ সরল ভেবে আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে এখন পস্তাচ্ছি। আগে যদি জানতাম তাহলে রিয়া আপুকেই ভাবী বানাতাম।"

নিসা চোখমুখ কঠিন করে বলল-

~" আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস?"

~" ধ্যুরর,,, ভয় দেখানোর মানুষ আমি না সেটা তুই ভাল করেই জানিস। ভয় না, থ্রেড দিচ্ছি থ্রেড। লাষ্ট বার ওর্য়ানিং দিলাম। আমার সংসার থেকে ৫শ হাত দুরে থাকবি। ভেবে দেখ, ভাইয়া যদি জানে কখনো তোর সাথে কারো রিলেশন ছিল। আর তার জন্যই তোর হাতে কাটা দাগ রয়েছে। তাহলে ভেবে দেখ সে তোর কি হাল করবে! লাথি মেরে খাট থেকে একদম মাটিতে ফেলে দিবে। বরের উপর তো ভালোই পোদ্দারি করিস। তোর সব অপরাধ সে মাফ করে দেয়। কিন্তু আমি যদি একবার কথাটি লিক করি তার কাছে তাহলে তোর অবস্থান কোথায় যাবে বুঝেছিস? তাই আমাকে অন্তত আর চটাস না।"

~" উমহ্.... তোর দুর্বলতার কথা কি তিতির জানে! সেই কথাগুলো না জানলে এবার থেকে আমাকেই তুই ভয় কর। কথাগুলো ওর কাছে লিক করতে আমি নিসা দু'সেকেন্ডও ভাববোনা বুঝলি!"

~" ট্রাই করে দেখিস। দেখ কিছু করতে পারিস কি নাহ্! তা নিসা, ভাইয়াকে নিশ্চয় বলেছিস হাতের ঐ কাটা দাগ শুধু তার জন্যই কেটেছিলি? আর ভাইয়া সেটা কানা বাবার মত বিশ্বাস করে তোকে আরও ভালোবাসে তাই না! পারিসও বটে তুই, কোমড়ও লেগে যায়না তোর! পাইছিস আমার ভাইয়ের মত একটা স্বামী। গুড জব চালিয়ে যা। সময়টা তো শুধু তোরই। কিন্তু স্মরনে রাখিস, সময়টা আমার দিকে ঘুরাতে একদন্ড সময় নিবোনা আমি।"

নিসা আর কোন কথা না বলে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। 


লাইন কেটে দিয়ে মাহাদ গোলাবকে নিয়ে মজে গেল। এখানে ও ছাড়া আর কেউ নাই। তাই গোলাবকে আগের মত সময় দিতে পারছে সে। বাবা, তোকে আমি কত ভালোবাসি তুই কি জানিস বলেই মাহাদ গোলাবকে আদর করতে লাগলো। এমন সময় রুমে একটা মহিলা ডক্টর আসলো। 

~" হ্যালো মি. মাহাদ, হাউ আর ইউ?"

~" বাঙ্গালি হয়ে ইংলিশে কথা বলছেন তাও আবার অন্য বাঙ্গালির সাথে? বাংলাতে বলুন। আপাতত ইংলিশে কথা বলার মোড আমার নেই।"

মাহাদের এমন কথা শুনে "ড. পিউলি" খানিকটা বিশ্মিত হলেন। মাহাদ কি করে জানলো সে বাঙ্গালি! চেহারা দেখেও বোঝার উপায় নেই বা অন্যকিছুতেও না। এমন সময় একটা নার্স ট্রেতে করে মাহাদ আর গোলাবের জন্য খাবার নিয়ে এল। 

গোলাব মাহাদের দিকে চাইতেই মাহাদ মুচকি হাসি দিল। সাথে সাথে গোলাব লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে 
খাবারে মুখ ডুবালো। নার্স মাহাদকে খাবার দিতেই ড.পিউলি দিতে নিষেধ করে তাকে বাহিরে যেতে বললো। নার্স চলে যেতেই পিউলি একটা চেয়ারে বসে বলল-

~" মি. মাহাদ, কুকুরটি বুঝি আপনার খুব প্রিয়!"

মাহাদ মুচকি হেঁসে বলল-

~" শুধু প্রিয় না, এর উপর যদি কিছু থাকে সেটাকেও সে ছেড়ে যাবে। সে আমার ছেলের মত।"

~" হাউ ফ্যানি, শেষ পর্যন্ত ছেলে.....!"

মাহাদ কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলো। কিন্তু পিউলি যা বলল তাতে অন্য কেউ হলে পাগলের মত ছটপট করতে লাগতো। কিন্তু মাহাদ শুনে আবারও মুচকি হাসি দিয়ে বুঝালো, এতে তার কিছু যায় আসেনা।

~" আপনার প্রিয় কুকুর মরতে বসেছে আর আপনি হাসছেন! কেমন ভালোবাসেন আপনার কুকুরটিকে? সে তো কিছুক্ষন পরেই দুনিয়ার মায়া কেটে পরপারে পাড়ি জমাবে। তবুও ভয় হচ্ছেনা আপনার?"

~" গোলাবকে আপনি বাচাতে পারেন কোন এক শর্তে। তাই আপনাদের দেওয়া খাবারে গোলাব ছটপট করছে। দ্যান কিছুক্ষনরে মধ্য সে মারাও যেতে পারে। আপনি চাইলে সে বেচে যাবে। তা এর জন্য আমার কি অফার রয়েছে মিসেস. পিউলি!"

পিউলি খানিকটা অবাক হয়ে গেল মাহাদের এমন প্রশ্ন শুনে। সাংঘাতিক মানুষ একজন মি.মাহাদ। গলা ঝেড়ে পিউলি বলে উঠলো-

~" ঠিকি ধরে নিয়েছেন। অবশ্যই আপনার জন্য অফার রয়েছে। সেটা হলো, গোলাবের জিবন মূলতঃ আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। আমার ভাই আকন্দ মির্জাকে আপনার ভাই ধরেছে। দ্যান আপনার উপর হামলার জন্য তার বড় ধরনের সাজাও হবে। এখন আমার কথা হলো, আপনাকে কেসটা তুলে নিতে হবে। যাতে তারা আমার ভাইকে ছেড়ে দেয়।এখন বলেন, গোলাব বাঁচবে না মরবে!"

~" অহ্ সেই কুলাঙ্গারটা তাহলে আপনার মত নামকরা ডাক্তারের ভাই। রক্ত কখনো রক্তের সাথে বেঈমানী করেনা সেটা আপনাকে দেখে আবার প্রমানিত হইলো। ভাইয়েরও যা স্বভাব, বোনেরও তেমন।"

~" এই একদম বাজে কথা বলবেন না। কেস তুলে নিবেন কি নিবেননা সেটা বলেন।"

পিউলির কথা শুনে মাহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল-

~" চিন্তা করবেননা, দেশের মাটিতে পা দিয়ে আগে আপনার ভাইয়ের চামড়া খুলে লবন লাগিয়ে দিব এবং সেই চামড়া দিয়ে এক জোড়া জুতা বানিয়ে আপনাকে উপহার হিসেবে এখানে পাঠিয়ে দিব।"

~" হেই তোমার কি একটুও ভয় নেই যে এর ফলাফল এই কুকুরটি মারা যাবে! ও বিষ খেয়েছে। আমি ছাড়া ও কিছুতেই বাঁচবেনা।"

অহ্ তাই বলে মাহাদ গোলাবকে ডাকতেই গোলাব লাফ দিয়ে মাহাদের কাছে আসলো। মাহাদ কেমন জানি করে ইশারা দিতেই গোলাব মুখের সমস্ত খাবার বের করে দিতেই ড.পিউলির মাথা ঘুরে এল। এটা কি করে সম্ভব!

সম্ভব, সবই সম্ভব। একটা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরের জন্য এটা বাম হাতের খেলা ছিল। আমি দেশে ফিরি একবার, তারপর এমন খেলা আরও দেখবেন বলে মাহাদ হাসতে লাগলো।

ড.পিউলির কাছে মনে হচ্ছে সে একটা অত্যন্ত ভয়ংকর মানুষের সাথে বাজি ধরেছে। তাই সেখানে সে এক মুহুত্বের জন্যও না দাড়িয়ে ঝড়ের বেগে রুম থেকে বের হয়ে গেল। উনি চলে যেতেই মাহাদ মিল্টনকে ডেকে গোলাবকে নিয়ে যেতে বলল এবং ওকে একটা মেডিসিন দিতে বললো। মাহাদ গোলাবের গলায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-

~" আঙ্কেল যা বলবে তাই শুনবি। যদি তোর বিরুদ্ধে রির্পোট আসে তাহলে তোকে এখানেই রেখে যাব বুঝেছিস!"

গোলাব আর কথা না বাড়িয়ে মিল্টনের পিছে চলে যেতে লাগলো।


নিসা রুমের ভিতর কেঁদেই চলছে। লাবীবা বেগম এত করে বলছে কি হয়েছে, কিন্তু কোন কথার জবাব না দিয়ে নিসা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। শেষে লাবীবা বেগম নিসার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে এলো। 

তিতির আর সাবিনা রাতের খাবার ডাইনিং টেবিলে সাজাচ্ছিল। ভাবী আন্নের কিটা হইছে বলেই সাবিনা চিক্কুর দিলো।

বাতাসি বিবি ড্যাপ ড্যাপ চোখে নিসার দিকে চেয়েই বলল-

~" সার্কাসনী সার্কাস দেখাবা আইছে। লে সাবিনা, বিছনা পাটি লইয়া বইয়া পর। কি কি রঙ্গ দেহাইবে হেই ভালা জানে।"

আম্মা এই মহিলার সাথে একই বাসায় আমার থাকা দায়। সে আমাকে সহ্যই করতে পারেনা। আমি আর এই বাসায় থাকতে পারবোনা বলে নিসা কান্না বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বলে উঠলো। এমন সময় ফুয়াদ বাসায় এসে কেবল সদর দরজায় দাড়ালো। সে খানিকটা অবাক হয়ে গেল নিসা কেন কাঁদছে।

লে ঠেলা সামলান এহন! দাদী বনাম নিসা ভাবীর রেসলিং শুরু হইয়া গেল। হেতিগো খাইয়া দাইয়া কোন কাম নাই কা। সময় অসময় বলে কিচ্ছু কান্ডজ্ঞান নাই। হুম আবার একখান সার্কাস দেখন লাগবো।

সাবিনার এমন কথায় তিতির ওকে চোখের ইশারা করতেই সাবিনা মুখে কুলুপ এটে চুপ করে তেনাদের সার্কাস দেখতে লাগলো।

ফুয়াদকে দেখেই বাতাসি ঘোর চোখে চেয়ে বলল-

~" হ্যারে ফুয়াদ, তোর বউ মহিলা মানষের সাথে থাকবোনা তে পরপুরুষের লগে থাকবো! তুই তোর বইয়ের সাথে খাটে কম গোল্লাছুট খেলোস নাকি! না একদমই খেলবার পারোসনা তার লায় হেই অন্য পুরুষের লগে থাকতে চায়! তুই তো দেকচি মান সম্মান কিচ্চু রাখবুনা.....।"

বাতাসির এমন কথায় ফুয়াদ এত লজ্জা পেল যে মনে হচ্ছে এখুনি যদি সাড়ে ৩শ হাত মাটির নিচে গিয়ে লুকাতে পারতো তাহলে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি হতে সে অন্তত বেঁচে যেত।

আম্মা আজ আপনার এই বিয়াদ্দপ শাশুড়ীকে খুন করেই তবে দম নিব বলে নিসা তেড়ে গেল বাতাসীর দিকে..........।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন