" মাহাদের মুখে ওসমানের এমন কথা শুনে ড্যাপ ড্যাপ করে তিতির মাহাদের দিকে তাকালো।
আপনি মানুষ! তাই বলে ঐ বৃদ্ধ মানুষটাকে এরকম শাস্তি দিবেন?"
" বৃদ্ধের যদি এই বয়সে এসে আকাম-কুকাম করার ভিমরতি জাগে তাহলে কী তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব বলেই মাহাদ একদম তিতিরের কাছে গিয়ে গালের সাথে গালটা ঘেষেঁ দিতেই তিতির চোখ বন্ধ করল।"
" তিতির মাহাদকে জড়িয়ে ধরতেই মাহাদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল-" তিতির আজ তোমাকে একটা খুব গুরুত্ব পূর্ন গল্প শোনাবো। তুমি কি শুনবে আমার গল্প? অধৈর্য হওয়া কিন্তু চলবেনা।"
" মাহাদের বাধা দেয়া সত্বেও তিতির মাহাদের বুকের ভিতর আশ্রয় নিয়ে বলল-" শুনবো তবে একটা শর্তে।"
ঃ-" মাহাদ ভ্রু কুচকে বলল -" কি শর্ত!"
ঃ-" আপনি গল্প বলবেন আর আমি এভাবে আপনার বুকের মধ্য থাকবো বলেই তিতির সামনে একটু ঝুকতেই মাহাদ তিতিরকে নিয়েই বালিশের উপর ধপ করে পড়ে গেল। তিতির তবুও ওভাবেই মাহাদের বুক জড়িয়ে সুয়ে রইল।"
ঃ-" তিতির তোমার শরীরে তো দেখছি খুব জোর। এভাবে থাকলে গল্প বলবো কি করে। নামো......"
ঃ-" তিতির মনটা খারাপ করে মাহাদের উপর থেকে নেমে বেডে বসে রইলো।"
" তিতিরের অভিমান দেখে একটু মুচকি হাঁসি দিয়ে মাহাদ বেড থেকে উঠে সিগারেট আর লাইটার নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে গেলো এবং রকিং চেয়ারে বসে সিগারেট জ্বালিয়ে গভীর ভাবে টান দিয়েই ধোঁয়া ছাড়তে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।"
"তিতির সোজা ব্যালকুনিতে গিয়ে সিগারেটটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলো। তারপর মাহাদের কোলে বসে মাহাদের কাঁধে মাথা রেখে বলল -" মাহাদ আপনি হয়তো জানেন না সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে আপনার স্ত্রীর দম বন্ধ হয়ে আসে। নিঃস্বাস নিতে পারেনা। তাই দ্বিতীয় বার যেনো না দেখি আমার সামনে সিগারেট টানতে।"
মাহাদ একটু নড়েচড়ে বসে ওভাবেই তিতিরের গালে ছোট্ট একটা কিস♥ করেই বলল-" একদিন এক রাজপুত্র তার ৫ টা ফ্রেন্ডদের সাথে আর এক ফ্রেন্ডের বাসায় ঘুরতে যাচ্ছিল। রাজপুত্রটা নিজেই ড্রাইভ করছিল কিন্তু একটু অসর্তকতায় সামনের একটা রিক্সাকে সামান্যই ধাক্কা দেয় কিন্তু সাথে সাথে নিজেই কন্ট্রোল করে নেয়। কিন্তু ততক্ষনে মারাত্বক কিছু ঘটেছিল। গাড়ী থামিয়েই রিক্সার কাছে এসে দেখে রিক্সা চালক ইতিমধ্যই মারাত্বক জখম হয়েছে । লোকটাকে সাহায্য করতে গিয়েই লোকটা কেঁদে উঠে বলল,- " বাবারা একটু দুরে আর একটা মেয়ে পরে আছে পারলে তাকে গিয়ে বাঁচাও। আমার তেমন সমস্যা হয়নি, আমি ঠিক আছি।
রাজপুত্র আর তার বন্ধুরা অবাক হয়ে গেল। এ কেমন মানুষ যে, নিজের জন্য মোটেও চিন্তা করেনা কিন্তু প্যাসেঞ্জারেরর চিন্তা ঠিকি করছে।
তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে চারদিকে গাড় অন্ধকার নেমে গিয়েছিল। ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে রাজপুত্রটা দ্রুত মেয়েটার কাছে চলে গেলো। মেয়েটার মাথা দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। রাজপুত্রটা মেয়েটাকে কোলে নিয়েই দ্রুত গাড়ীতে উঠেই তার ফ্রেন্ডকে বলল,-
"কাছের কোথাও হসপিটালে দ্রুত নিয়ে চল। আর বাকিদের ঐ রিক্সাচালককে পরে হসপিটালে নিয়ে আসতে বলল।"
রাজপুত্রটা যতক্ষনে মেয়েটাকে হসপিটালে আনল ততক্ষনে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার প্রথমে তাকে নিতে চাচ্ছিলনা। রাজপুত্রটা যখন নিচের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা ডাক্তারের হাতে ধরে দিল সাথে সাথে ডাক্তার রাজি হলো আর মেয়েটার চিকিৎসা শুরু হলো। রাজপুত্র ও তার ফ্রেন্ড দু'জন মিলেই রক্ত দিল মেয়েটাকে। কিন্তু তার সেন্স ফির ছিলোনা। রাজপুত্রের চোখ দিয়ে অজান্তেই অঝোরে জল পড়তে লাগল। না জানি তার অসর্তকতায় কোনো নিষ্পাপ মেয়ের জীবন যায়।
মেয়েটাকেও তখনো তার ভালভাবে দেখা হয়নি। জাষ্ট শুধু তার স্পর্শ।
ঘটনাক্রমে যেই ফ্রেন্ডের বাসায় সবাই যাচ্ছিল সেই ফ্রেন্ডটার প্রতিবেশি ছিল মেয়েটা। ফ্রেন্ডটা মেয়েটাকে দেখেই আৎকে উঠেছিল। মেয়েটা জিবন-মরনের সাথে লড়ছে আর ফ্রেন্ডটা রাজপুত্রকে মেয়েটার অতীত আর বর্তমানের নিমর্ম কাহিনী শোনাচ্ছিল।
ওটির সামনে গিয়ে রাজপুত্র দাড়াল। মেয়েটা যখন অক্সিজেনের মার্স্ক মুখে নিয়েই জোড়ে জোড়ে কয়েটা শ্বাস নিল তখন রাজপুত্রের বুকের ভিতর প্রান ফিরে এল। সেদিনই রাজপুত্রটা সিদ্ধান্ত নিল যাই হয়ে যাকনা কেনো মেয়াটাকে তার বৈধ ভাবেই চাই।
রাজপুত্র ডাক্তারকে গিয়ে নিজের আর বংশর পরিচয় দিতেই ডাক্তার বুঝল ছেলেটা কোন সাধারন ঘরের কেউ না। তারপর রাজপুত্র সব বিল মিটিয়ে দিতেই বাঁকিরা ঐ রিক্সাচালককে নিয়ে আসল।
সব কিছু সমাধান করে সবাই মিলে তারা সেই ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলো। এমন দুর্ঘটনার জন্য রাজপুত্রের মনটা অস্থির হয়ে উঠেছিল। কোনমতে রাতটুকু পার করেই রাজপুত্র পরের দিন তার প্রাসাদে চলে এল।
তারপর থেকে রাজপুত্রের সেই ফ্রেন্ডের উপর দায়িত্ব পড়ল মেয়েটার সারাক্ষন খোঁজ খবর নেওয়া। তারপর টুকটাক চিঠিপত্র দেওয়া হত। এভাবেই দিন কাটছিল। ততদিনে রাজপুত্রের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট। ফ্রেন্ডকে বলল, -" এখানে থেকে আর মাস্টাস্ কমপ্লিট না করে নিজের শহরে থেকে বাঁকিটা পড়াশুনা করে নেয়; যাতে সে ওখান থেকে তার প্রিয়তমার খোঁজ দিতে পারে।
যেই কথা সেই কাজ। প্রিয় বন্ধুর কথা মেনে নিয়ে সেই বন্ধু তার বাসায় চলে আসলো আর সেখান থেকে রাজপুত্রকে মেয়েটা সম্পর্কে সব কিছুর খবর দেয়। তারপর রেগুলার তার মুখে প্রিয়তমার কথা শুনতে লাগল। প্রিয়তমার অজান্তে অনেক পিক সে কালেক্ট করে বন্ধুটি রাজপুত্রকে দেয়। এভাবে আরো বছর কেটে গেল। রাজপুত্রটা চাইছিল স্বাভাবিক ভাবে তার জিবনে মেয়েটা আসুক। যেহেতু মেয়েটা অনেক নির্যাতন সহ্য করে। সব কিছু গুছিয়ে নিয়েই মেয়েটার কাছে যেতে চায় রাজপুত্র। হয়ত মেয়েটাও ততদিনে রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে গেছে। যদিও তার আচরনে তেমন একটা প্রকাশ পাওয়া যেতনা।
কিন্তু রাজপুত্রের ফ্রেন্ডটাও তার সাথে বেইমানি করে। একদিন সরাসরিই বলে দেয় সেই এবার মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে এবং তার জিবনে সেই মেয়েটিকে চায়। এ নিয়ে কথাকাটি হয় অনেক তাদের মধ্য। শেষে ফ্রেন্ডটা রাজপুত্রকে বলল,-" তোর এলাকায় তোর রাজত্ব আর এখানে আমার রাজত্ব। তাই সাবধান এখানে আসার চেষ্টাও করবিনা। প্রেম ভালবাসায় আপন পর বলে কিছু নেই। সবকিছুই জায়েয ।"
নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ডের কাছে এমন খবর পেয়ে ভেঙ্গে পড়ে রাজপুত্র। কথাগুলো বলেই থামলো মাহাদ।
অহ্ একটা ঘটনা মিসটেক হয়ে গেছে তিতির বলেই, আবার মাহাদ শুরু করে তার কাহিনী।
এর মধ্য রাজপুত্রের পরিবারটায় কিছু সমস্যা হয়। যার জন্য পরিবার নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পরে রাজপুত্র। রাজপুত্রের বাসায় সব থেকে বড় শত্রু ছিল তারই আপন ফুফাতো ভাই। যেকিনা রাজপুত্রের বড় ভাইকে তার বাসা থেকে বের করতে বড় ধরনের চক্রান্ত করে এবং সফল্য পায়। তারপর রাজপুত্র ক্ষেপে গিয়ে সেই কাজিনের পিছে লাগে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং সেই রাস্তাও পেয়ে যায়। সেটা ছিল খুব বড় ধরনের রাস্তা যেটা কিনা, ঐ কাজিনটাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
কাজিনটার একটা মেয়ের সাথে রিলেশন এবং মেয়েটা প্রেগন্যান্ট ছিল। এটাই যথেষ্ট ছিল তাকে নিচে নামানোর জন্য। রাজপুত্র নিজে সেই পরিবারের সমস্ত খোঁজখবর নেয় আর সেখানেই সে ধরা খেয়ে যায়। কথায় কথায় সে জেনে যায় তাদের পূর্বের কাহিনী।আবার তার প্রিয়তমার বন্ধনে বেঁধে যায়। মেয়েটার মা ছিল রাজপুত্রের প্রিয়তমার বাবার বোন তাই আর আঘাত করতে পারেনা। অবশেষে রাজপুত্র আড়ালে থেকে বিবাহর ব্যবস্থা করে।
সব কিছু মিটিয়ে রাজপুত্র মেয়েটার শহরে যায় আর মেয়েটার চাচাতো ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে। কথাগুলো সব গোপন থাকে মেয়েটার কাছে। এভাবে আরও কিছুদিন চলে তারপর মেয়েটার উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্ট বের হয়। তার রেজাল্টে রাজপুত্র এতই খুঁশি হয়েছিল যে ১ হাজার এতিম বাচ্চাদের ১ বেলা খাবার খাইয়েছিল।
সবথেকে খারাপ খবর আসে সেইদিন যেদিন শুনতে পায় তার প্রিয়তমা আডমিশন পরীক্ষা দিতে পারেনি খুব খারাপ একটা দুর্ঘটনার জন্য। সেদিন ক্ষেপে যায় রাজপুত্রটি। সে নিজের ক্ষমতার কিঞ্চিত পরিমানে দাপট দেখায় কিন্তু সে জানতো না তার ফলাফল আরো ভয়ানক হবে।
অনেক নির্যাতন সইছে মেয়াটা রাজপুত্রের জন্য। রাজপুত্র বিকালে তার প্রিয় ভাতিজীর সাথে খেলা করছিল তখন ফোন আসে তার প্রিয়তমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। আবার ভয় পেয়ে যায় রাজপুত্রটি না জানি এবার তার প্রিয়তমাকে হারিয়ে ফেলে।
তারপর আর মেয়েটার কোন খোঁজ পাওয়া যায়না। অস্থির হয়ে যায় রাজপুত্রটি। এবার নিজেই সে মেয়েটার শহরে যায়। মেয়েটার কাজিন তার বাবার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয়। কারন তার কাজিনের বাবা জানত মেয়েটাকে কোথায় রাখা হয়েছে। মেয়েটার চাচা কোনক্রমেই বলবেনা মেয়েটিকে কোথায় রাখা হয়েছে। রাজপুত্রটি শান্তভাবে মিটমাট করতে চায় ব্যাপারটি। কারন ইতিমধ্যে অনেক কিছু হয়ে গেছে। রাজপুত্রটা এবার শান্তি চায়। তাই শেষে রাজপুত্রটি তার চাচার পা ধরে বসে পড়ে।
হয়ত এতে চাচার মন গলেছিল। তার এতিম ভাতিজী এমন একটা মানুষের কাছে গেলে হয়ত সুখ পাবে। তাই সে ঠিকানা দেয়। কাকতালীয় ভাবে রাজপুত্রের চেনা জায়গায় মেয়েটা পড়ে যায়। ৭ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মেয়েটির দেখা পায় রাজপুত্র।
প্রথমে বাসার দাড়োয়ান আর কাজের লোককে অনেক কষ্টে হাত করে তারপর মেয়েটার কাজিনের সাথে অনেকটা ছলা কৌশলে নেটের মাধ্যমে বন্ধুত্ব পাতায়।
সেখানেও তার প্রিয়তমা সুখে নেই তাই সিদ্ধান্ত নিল এবার প্রিয়তমাকে তার নিজের কাছে নিয়ে আসবে। সেটা যে ভাবেই হোকনা কেন?
সেই মোতাবেক কাজ শুরু হল। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় ঐ বাসার কাজের লোক ফোন দিয়ে বলল,-" মেয়েটার ফুফা কাজের লোকের হাতে ৫শত টাকা দিয়ে বলেছে বাসার ভিতরে যেন কেউ না আসে বা আসার আগে তাকে টের দেওয়া হয়। সেদিন বাসার বাহিরে পিকনিক ছিল সেই সুযোগটায় কাজে লাগিয়েছে বদমাইশ লোকটা।"
কথাগুলো শুনে রাজপুত্রের বুকের ভিতর তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। শেষে বুদ্ধি খাটিয়ে বদমাইশ লোকটার ছোট মেয়েকে কল দেয় এবং বাসার ভিতরে যেতে বলে কোন একটা বাহানা করে। মাহাদ আবার থেমে যায়। কারন কথাগুলো ওর গলায় আটকে গেছে। জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল।
কাজিনটা মেয়েকে সেভ করে এবং সেই রাতে রাজপুত্রকে তার বাবার কীর্তিকলাপ সব খুলে বলে। রাজপুত্রের কাছে সে সব কিছু আগেই শেয়ার করেছে তার ফ্যামিলির ব্যাপারে। এই সুযোগটার অপেক্ষায় ছিল রাজপুত্রটি। সাথে সাথে প্রস্তাব করে মেয়েটাকে যেন তার বড় বোনের বাসায় রাখে। আপাতত তার বাবার হাত থেকে বাঁচুক। কাজ হয়ে গেল আর এভাবেই রাজপুত্রটি তার প্রিয়তমাকে তার কাছে নিয়ে এল বলেই থেমে গেল মাহাদ।
মাহাদ শেষ পর্যন্ত তার তিতিরকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পেরেছে। আমি কখনো ভাবিনি এত সহসাই তোমার ভালবাসাই পূর্ন হবো।
তিতির অনুভব করছে মাহাদের চোখে বেয়ে পানি ঝড়ছে। তিতির জানে খুব বড় ধরনের কষ্ট না পেলে ছেলেরা কাঁদেনা।
তিতির মাহাদের কোল থেকে উঠেই দাড়িয়ে গেল। খুব কষ্ট হচ্ছে তিতিরের। সে শুধু একা প্রিয় মানুষটার জন্য অপেক্ষা আর কষ্ট করেনি, ভালবাসার মানুষটাও একি কাজ করেছে।
তিতির মাহাদের কাছে এসে রকিং চেয়ারের হাতল ধরে আরও মাহাদের কাছে গেল। মাহাদের চোখের পানি শুষে নিয়ে বলল,- " রবিন তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলেনি রাজপুত্র!"
ঃ-" রাজপুত্রের নিষেধ ছিল। কারন রাজপুত্রের আশা ছিল কষ্টের কথাগুলো কোন একদিন শুধু সে নিজেই বলবে এমন ভাবে তার প্রিয়তমাকে। মনে হয় আজ সেই আশা পুরুন হয়েই গেছে।"
ঃ-" আপনার সেই ফ্রেন্ডটা কি রেজা ভাইয়া ছিল? কারন উনি হঠাৎ করেই গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ঢাকা থেকে এসে আর যান নি। শুনেছি এ নিয়ে বাসায় অনেক অশান্তি হয়েছিল। আমাদের ওখান থেকেই বাঁকি পড়াশুনা কমপ্লিট করেছেন উনি।"
ঃ-" হুম....."
ঃ-" ওনার সাথে আপনার আর যোগাযোগ হয়নি? রেজা ভাইয়া কিন্তু আমাকে কোন ধরনের খারাপ ইঙ্গিত বা প্রপোজ করেনি। উনি আমার সাথে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টে করেছিল কিন্তু আমি ওনার কথার জবাব দিতাম না কারন আপনি চিঠিতে নিষেধ করতেন বার বার, অপ্রয়োজনে ছেলেদের সাথে কথা না বলতে। আপনার প্রতিটা উপদেশ আমি মানতাম।"
ঃ-" হুম....."
ঃ-" আপনি আমাকে এত ভালবাসেন এবং আমি আপনার বউ হওয়া সত্ত্বেও কেন আমায় আপনার কাছে আসতে দেন না!
ঃ-" তিতির তোমার বয়স এখন কম। আমি জানি তুমি আমাকে পাগলের মত ভালবাসো। আমি যা বলবো তুমি তাই করবা। কিন্তু আমি চাইনা তোমার এই সরলত্ত্বের সুযোগ নেই আমি। তুমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করো আরও বড় হও তারপর ভেব আমি তোমার যোগ্য কিনা! আমি সেই দিনের আশায় থাকবো যেদিন তুমি নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিতে শিখবা। "
ঃ-" কিন্তু আমি তো আপনাকে এখুনি চাই। আপনি আমাকে দাসী করে রাখলেও চলবে। তবুও আমি আপনাকেই চাই। "
ঃ-" তিতির আমি তোমার রাজ্যর ক্ষুদ্র প্রজা আর তুমি সেই রাজ্যর রানী। একটু মিষ্টি সুখের আশায় তুমি মাহাদকে সেদিনই খুঁজে নিবে যেদিন তুমি আমাকেও ছাড়িয়ে আরও উপরে উঠবে।"
ঃ-" রেজা ভাইয়ার সাথে আর আপনার কথা হয়নি?"
ঃ-" রেজা এখনো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। ও বেঈমানি করেছে তাই বলে আমি কেন করবো? রেজার বাবা রাজ্জাক আঙ্কেলের দুই কিডনিই ড্যামেজ হয়েছিল। ওনাকে ঢাকাতে আনা হয়। রেজা লজ্জা পাচ্ছিল আমার সাথে যোগাযোগ করতে। শেষে আমাদের আর এক ফ্রেন্ড আমাকে ফোন করে বলতেই আমি সোজা হসপিটালে যাই। তিতির জানো! রেজা সেদিন পুরো হসপিটালের লোকদের সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছিল। আমি কিছুই বলিনি তবে একটা কথায় বলেছি " কোন মানুষই হাজার বছর বাঁচেনা তাই ছোট্ট এই জিবনে রাগ অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না।
আঙ্কেলের সমস্ত চিকিৎসা আমাদের ক্লিনিকেই করা হয়। ওনার কিডনির ব্যবস্থাও আমি করে দিয়েছি তাই হয়ত রেজা আরও বেশি অনুতপ্ত। বার বার আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। ও আমাকে আর তোমাকে ওর বাসায় নিমন্ত্রন করেছে। আমিও বলেছি তুই আমার শশুর বাসার এলাকার মানুষ। তাই তোর ভাবীকে নিয়ে নিশ্চয় তোর বাসায় যাবো।"
ঃ-" তিতির ধপ করে মাহাদের পায়ের কাছে বসে পড়ল। তারপর পায়ের আঙ্গুল গুলোতে কয়েকটা কিস করতেই মাহাদ উঠে দাড়াল। কি করছো এসব? আমার এগুলো একদম পছন্দ না। যা করেছি নিজের জন্য করেছি। নিজের এই ছোট্ট জিবনকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য করেছি।"
ঃ-" আগে দাদীরে বলতাম দাদী আকাশে বুঝি নেটওর্য়াক নাই তাই মা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা। আমার কথা শুনে দাদী অনুতপ্ত হত আর কান্না করতো। কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাতালা গোপনে আমার খোঁজ রাখার জন্য এমন একটা মাহাদ নামক নিয়ামত তৈরি করে রেখেছেন যেটা আমার অতীতের কষ্টগুলোকে ধুলিসাৎ করতে ১ সেকেন্ডও সময় নেয়নি। কে বলেছে আমার ভাগ্য ভাল না! যারা আমাকে কথা শুনাতো আমার মন্দ কপাল যার জন্য আমি আমার মাকে খেয়েছি তাদের আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে তোমরা দেখে যাও আমি সবথেকে বড় সৌভাগ্যবতী মেয়ে যে না চাইতেও এতবড় নিয়ামত..... উপহার হিসেবে পেয়েছে তার প্রভুর কাছ থেকে।"
মাহাদ তিতিরকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভিতর চলে গেল। তিতির কে খাটে সুয়ে দিয়ে বলল, -" তিতির আমাকে ভুল বুঝে কখনো দুরে যেওনা।"
এমন সময় বাহিরে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ হয় যা তিতির আর মাহাদ দুজনেই শুনতে পায়। মাহাদ উঠে যেতেই তিতির হাত চেঁপে ধরে বলল -" না আপনি যাবেন না। "
ঃ-" আমার মনে হয় বাতাসি এসেছে। ওকে তুমি চিনোনা। লোকের রুম পাহারা দেওয়া ওর জন্মগত অভ্যাস। এর আগে ওকে অনেক বার হাতে নাতে ধরেছি। দাড়াও ওর আজ ব্যান্ড বাজিয়েই ছাড়বো।
ঃ-" বাতাসির কথা শুনে তিতির আৎকে উঠল। মহিলাটা আজ না জানি সবাইকে জানিয়েই ছাড়বে।"
মাহাদ খুব দ্রুতই দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। রুম থেকে এদিক ওদিক খুজতেই দেখে দুরে কর্নারে বাতাসি চুপ করে দাড়িয়ে আছে। তুমি জিবনেও শুধরাবানা বাতাসি বলেই মাহাদ দ্রুত গিয়ে পিছন থেকে বাতাসির হাতটা চেঁপে ধরল।"
ঃ-" বাতাসি চমকে উঠল। ভাবতেই পারেনি মাহাদ ওকে ধরে ফেলবে। তুই তুই করতেই মাহাদ চোখ গরম করে বলল-" বাসার সবাই ঘুমায় আর তুমি আমার রুমের সামনে ঘুট ঘুট করো?"
ঃ-" আমি ঘুট ঘুট করবো ক্যান! আমিতো এমনি এখানে আইছি।"
ঃ-" তুমি উপরে এমনি এমনি আসার মানুষ না। তোমার এই চোরট্টামি আজ ছাড়াবোই। কি দেখতে আসছো বলো?
ঃ-" মাহাদ এক দম মিথ্যা কথা বলবিনা। ঐ ছুড়ি তোর ঘরে আছে তাইনা? আই নিজে দেকছি ওরে তোর ঘরে ঢুকতে। এতক্ষন তোর ঘরে কি করে। আজ সগ্গলরে জানাইয়া ছাড়মু। লুচ্চামি করা! তুই যে কতবড় লুচ্চা ব্যাডা হেইডা এখন আমি চিল্লাই কমু।"
ঃ-" হুম তিতিরতো আমার রুমেই আছে। ও আমার রুমে আসবেনা তো তোমার রুমে যাবে! আর যদি লুচ্চামি করেও থাকি সেটা নিজের বউয়ের সাথে করছি অন্য কারো সাথে তো আর করিনি। তুমি বুঝি সতীসাধ্বী মহিলা! ইমতিয়াজ বুইড়া তোমায় এমনি এমনি ছাইড়া দিছে বলেই মাহাদ ওর রুমে চলে আসল। কারণ মাহাদ ভাল করেই জানে এখানে আর দুমিনিট থাকলেই বাতাসি চিল্লায় সবাইকে জানাবে তাই রুমে চলে এসেছে।"
ঃ-" মাহাদ রুমে ঢুকতেই তিতির মাহাদের কাছে এসে বলল -" কে ছিল?"
ঃ-" তিতির আজ তোমাকে আর বাতাসি দু'জনরেই সার্কাস দেখাবো। জাষ্ট ওয়েট এ্যান্ড সী বলে একটা শয়তানি হাঁসি দিয়ে দরজার দিকে তাকালো মাহাদ। এখন শুধু বাতাসি আসার অপেক্ষা..........।