আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২২ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদ কোন কিছু না ভেবেই প্রান পনে অতিথীর কবরের মাটি খুড়তে লাগলো।
এমন দৃশ্য দেখে কাজের মানুষগুলো দৌড়ে এলেও ওর গায়ে কেউ হাত দেওয়ার সাহস পেলোনা। শেষে ফুয়াদ প্রানপনে দৌড়ে এসে মাহাদকে পিছন দিক থেকে জাপটে ধরে টেনে আনার চেষ্টা করলো। অনেক কষ্টে মাহাদকে ওখান থেকে একদুরে টেনে আনলো। মাহাদ ফুয়াদের শরীরে সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আমি কি করে থাকবো তাকে ছাড়া। আল্লাহ্ এতবড় কষ্টের ভার তুমি আমায় কেন দিলে! তুমি জানোনা! পৃথীবীতে সবচেয়ে ভারী যদি কিছু থাকে সেটা হল সন্তানের লাশ বহন করা! মাহাদ পাগলের মত প্রলাপ বকেই চলছে।

 ফুয়াদও মাহাদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। এতোটা ভেঙ্গে পড়া ফুয়াদ মাহাদকে কোন দিনই দেখেনি। কিছুক্ষন ওভাবে থাকার পর ফুয়াদ মাহদকে ছেড়ে দিতেই মাহাদ অতিথীর কবরের সামনে এসে বসে পড়লো। ওর ব্লেজার, প্যান্ট, জুতা সব কিছু মাটিতে মাখামাখি হয়ে গেছে। ও কবরের মাটি নিয়ে ওর গলা, বুক, মুখে পরম আদরে মাখিয়ে নিচ্ছে। এখন আর শব্দ করে কাঁদছেনা কিন্তু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়েই চলছে। অতি আদরে কবরে হাতের পরশ বুলিয়ে দিয়ে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। মা, তোমাকে তো আমি ভালো রেখে গেলাম। এর ভিতর এত কিছু হয়ে গেল যে তোমাকে শেষ আদরটুকুও করতে পারলামনা। তোমার মা পৃথিবীর সব বাবাকে ঘৃনা করে। তার ধারনা সব মেয়ের বাবা খারাপ হয়। আমি যে তার ধারনাগুলো তোমাকে দিয়ে ভেঙ্গে দিতে চাইছিলাম, সেই সুযোগও আল্লাহ্ আমাকে দিলোনা। এমন সময় ফুয়াদ পিছন থেকে বলে উঠলো-

~" মাহাদ এমন করে কাঁদিসনা। তিতিরের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ। ওকে দেখলে আর তুই চিনতে পারবিনা। এমনই হয়ে গেছে তিতির।"

মাহাদের কানে কোন কথায় গেলোনা। ও ঐ ভাবেই কবরের পাশে বসে রইলো। তার আদরে মেয়ে এই জায়গায় ঘুমিয়ে আছে। তাকে ছাড়া ও কিভাবে এখান থেকে যাবে! তাই চুপচাপ ওখানেই বসে আছে।

মাহাদের আসার খবর পেয়ে প্রথমে সাদ বাবা বলে কাঁদতে কাঁদতে কাছে এলো। সাদের এই প্রথম মনে হলো তার সবথেকে আপন জন তার কাছে এসেছে। পিছন দিক থেকে মাহাদে গলা জড়িয়ে ধরে ফিকরে উঠে বলল-

~" বাবা, অথিকে সবাই এখানে রেখেছে। বলেন, আমাদের ঘরে কি ঘুমানোর জায়গা কম আছে! আমি কতবার বললাম এখানে রাখোনা তবুও কেউ আমার কথা শুনলোনা।"

সাদের এমন আবেগমাখা কথার স্পর্শে মাহাদের হুস ফিরে এলো। গলা থেকে ছেলের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সাদের দিকে ফিরে তাকিয়ে ওর বুকটা আরো বেশি হুহু করে উঠলো। শরীরের একি হাল হয়েছে। সাদকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে উঠলো-

~" অতিথী আল্লাহর কাছে গেছে বাবা। আমরা সবাই যখন আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাবো তখন আমাদের সবাইকে এমন করেই আল্লাহর কাছে যেতে হবে। দুঃখ করোনা, কষ্ট পেওনা, ও অতি আদরে আল্লাহর কাছে অবস্থান করছে।"

মাহাদ আর একমুহুত্ত্বও সেখানে রইলোনা। সাদকে কোলে করে বাসার ভিতর নিয়ে আসলো। লাবীবা বেগম তিতিরের কাছে সবসময় থাকে। বাসার সবাই নিরবে দাড়িয়ে রয়েছে। সবাইকে সালামম দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের রুমে এসে ছেলেকে গোসল দিয়ে নিজেও গোসল করলো। জহরের আযান অনেকক্ষন অাগেই দিয়েছে। সাদকে নিয়ে নামায পড়ে  নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে সাদকে খাওয়াতে লাগলো। ছেলেটা এই কদিন ধরে তেমন কিছুই খায়নি। বাতাসি সাদের খাওয়া দেখে চোখ বড় বড় করে বলল-

~" মাহাদ তোর পোলা দেহি খাওয়া শিখে গেছে তোরে দেইখা। এ্যাতদিন কত জোড়াজুড়িতেও ঠিকমত খায়নি। অ্যাহ্ তোরে আরও আগে আওনের উচিত ছিল।"

মাহাদ করার কোন জবাব না দিয়ে সাদকে খাইয়ে রুমে নিয়ে এসে ওর সামনে ড্রয়িং বই আর রং পেন্সিল রেখে বলল-

~" সাদ আমি তোমার মায়ের কাছে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ্ আজই তাকে নিয়ে আসবো। ঘুম থেকে উঠে তুমি ততক্ষনে এগুলো শেষ করো।"

জি বাবা বলতেই মাহাদ সাদের কপালে একটা কিস করে ওকে নিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়লো। তারপর কিছুক্ষন মাথায় হাত বুলাতেই সাদ ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমন্ত ছেলেকে বেডে রেখে মাহাদ দ্রুত রেডী হয়ে তিতিরের কাছে ছুটলো।


বাতাসি বিবি রুমের ভিতর পান ছেচছে। তার প্রতিটা ঢুকনির বারিতে রুমের ভিতর টং টং শব্দ হচ্ছে। পান পিষার সাথে সাথে গুন গুন করে গান গাওয়ার সখ আছে তার। ঢুকনির তালে তালে বাতাসির মুখও চলতে লাগলো।

" মোয়া বনের ফুলের নেশায় নিদু দখিন হাওয়ায় গো-
চাঁদের আলো ঝলমলিয়ে যায়।
জল আনতে গিয়ে দেখি কৃষ্ণচূড়া মুঞ্জরী দেখে এলাম ঘাটের কিনারায়,, চাঁদের আলো ঝলমলিয়ে যায়।"

সামনে কুসুম বসে থেকে বেশ মনযোগ সহকারে গানটি শুনছে। কিন্তু গান ওর ভালো লাগলোনা। সাথে বলে উঠলো-

~" দাদী আপনার বাইস্কোপ থামান তো! বেশুরা গলা গান শুনে মনে হচ্ছে আপনি গলা দিয়ে গান বের হচ্ছেনা। গলা দিয়ে মনে হয় ভ্যাড়া সংগীতের মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ আওয়াজ ব্যাড় হইতাছে। থামেন একটু...... থামেন।"

বাতাসি অপমানিত হয়ে খসখসে গলায় বলল-

~" তোর এত্তবড় সাহস, আরে কইস আই ভ্যাড়া সংগীত গাই! ভ্যাড়ার নানী তুই! হের লায় তুই ওগো বিষয়ে এত্ত খবর রাখিস। সর অ্যার চোক্কের সামনে থাইকা। দু'দিনের মাইয়া কয় কি! আই নাকী ভ্যাড়া সংগীত গাই। কত্ত সাহস তার চোপার। ঢুকনির বাড়ী দিয়েই তোর চোপা ভাঙ্গমু।"

~" রতনে রতন চিনে। আমি যেমন আপনারে চিনি। বাড়িতে এত শোক চলে তার মধ্য আপনার গলা দিয়ে কুত্তা সংগীত বের হয় ক্যামনে!"

~" ওর ওডা হওয়নের দরকার ছিল। জল-জান্ত মাইয়া সাবিনা মইরা গেল তার বেলায় ওগো চোকে পানি দেকচু! এবার বোঝ, মানুষ মরলে ক্যামন হয়। সাবিনা মরনের দায়ী একমাত্র তিতির। ওর জন্য মাইয়াটা মরিচে। কান্দোস ক্যান এহন! শোকে পাগল হইছোস ক্যান! এহন কলজায় লাগে! এই বাড়ীর সগ্গলের পাপ লাগছে। তাই ওর মাইয়া মইরা গেছে। ক্যান সগ্গলে ক্যান। আই বাতাসি এহন ঢোল পিটামু। কে কত ক্যানতে পারোস হেইডা দেখনের লায়।"

~" আপনি মানুষ! আপনার নাম বাতাসি না হয়ে কাউয়া তাসি হওয়ার দরকার ছিল। কাউয়ার মত হাঁক ডাক ছাড়া আপনার মধ্য আমি অন্য কিছু খুঁজে পাইনি। আমার বাপজানের মত মরদের পাল্লায় পড়লে আপনার মত কাউয়াতাসির কব্বরে এতদিন ঘাস উইঠা যেত।"

ঐ তোর থোপনা ভাঙ্গমু! অ্যারে কাউয়াতাসি কস! থুরি নিজের নাম নিজে কই বলে কুসুমের দিকে পিটপিট করে চাইলো বাতাসি। গোটা বাড়ির মানুষ সাবিনার জন্য আফসোস করতে দেহি নাই। হেইদিন যদি ঐ গলাদড়ার জাত সাবিনার গালে চড় না মারতো তয় সাবিনা এতদিন বাইচা থাকতো। এহন, এহন কি করবি! যা আজরাঈলের গালত চড় মার! তোর মাইয়ার জিবন তো হেই লইছে। মাহাদ তো খুব দাপট দেহায়। এহন ডুকরা কান্দোস ক্যান! তোর দাপট মাইয়াটারে বাচাইতে পারলোনা! ক্যান ক্যান আরও কান্দোন লাগবো তোগো। কত ক্যানতে পারোস হেইডা আইও দেইখা ছাড়ুম। সাবিনার লায় কেউ না থাকলে তো কি হইছে! আই বাতাসি আছি। এতিম মাইয়ার জন্য আই আছি।

উমম আপনার সাবিনা মনে হয় ধোয়া তুলসি পাতা! বিয়ার আগে যেই মাইয়া অন্যর সাথে অবৈধ মেলামেশা করে আবার নিজের মালিকের নাম নেই নিজেরই স্বার্থে তারে মানুষ কয়! ঐ তো বললামনা! রতনে রতন চেনে। আপনিও ঐ দরেরই মানুষ। সেইদিন শুনলাম, দাদা নাকি অন্য মাইয়ার কাছে গিয়েছিল। এমন কথা শুনে আপনার একমাত্র পোলাটারে পুকুরের মধ্য চুবাইছেন। হায়াত ছিলো বলে সেদিন নাকি খালুজান বাঁচছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সবার সামনে খালুরে নিচু দেখানোর জন্য কামু কামু কইরা ডাকেন। আপনি যদি নিজের ছেলের সাথে এত কঠিন ব্যবহার করেন তাহলে তিতির ভাবী তো সাবিনার গালে কয়েকটা মাত্র চড়ই মারছে। আমি হলে তো ওরে পুঁতেই ফেলতাম। কোন মেয়ে মানুষ আছে তারে দেখান আমায়! এমন সৎ নিষ্ঠাবান স্বামীর বিরুদ্ধে এমন কথা শুনে চুপ থেকেছে! আপনার সাবিনা যখন ফাঁন্দে পড়ছে তখন ভাইজানের উপকারের কথা মনে পড়ছে। যার ভালো তাই বোঝে। আপনার এই খামোকা মার্কা প্যাঁচাল শুনলেও আমার বমি আসে বলে কুসুম উঠে চলে যেতেই বাতাসি কঠোর ভাষায় বলল-

~" ক'দিন আগে তুই রটাইছোস আই মরছি কইয়া তাই লয়!"

কুসুম পিছন ফিরে মুখে হাঁসির রেখা টেনে বলল-

~" এতদিন পরে ধরতে পারছেন! সেদিন আমারে থাপ্পড় মাইরা খালাম্মার সামনে অপমান করছেন তার শাস্তির একটা নমুনা ওটা।"

~" খাড়া আজই তোরে বাড়ীত থাইকা বাইড় করুম। তোর মত বাইনঞ্চুত মাইয়ার অ্যার দরকার নাই। আর পুত খালি আসুক।"

~" মুখ সামলে কথা কইবেন কিন্তু কাউয়া দাদী। এক পা কব্বরে গেছে তাও ভাষা ঠিক হইলোনা! আমারে বাসা থেকে বের করে দেখান। অতিথী সম্পর্কে এত কিছু বললেন সেটা যদি একবার ভাইজানের কানে দেই তাহলে আপনার উপর কি টান্ডব হবে বুঝতে পারছেন! এমনি মাহাদ ভাইজানের ক্ষেপা বাঘ হয়ে আছে। আপনার এই কথাগুলো ওনাকে বলি তাহলে! আপনার পুতও আপনারে আর বাচাইতে পারবেনা বুঝলেন! তাই চুপচাপ থাকাই আপনার জন্য ভালো।"

কথাগুলো বলে কুসুম চলে গেল আর বাতাসি রুমের ভিতর ফুসতে লাগলো।


সেই কখন থেকে তীর্থের কাকের মত বসে আছে তিতির, মাহাদ আজ আসবে বলে। লাবীবা বেগম নিজেও পস্তাচ্ছেন এখন। কেন যে বলতে গেলেন আজ মাহাদ আসবে! এখন একে সামলো দায়। 

তিতির ছলছল চোখে লাবীবার দিকে চেয়ে আবার বলল-

~" মা মাহাদ, মাহাদ...?"

আসবেতো মা! একটু পড়ই চলে আসবে। বলে চোখ মুছলেন লাবীবা। অনেকক্ষন থেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুই খাওয়ানো যায়নি তিতিরকে। এই ক দিনে একটা কথাও বলেনি। আজ শুধু মাহাদের নাম উচ্চারন করলো তিতির।
মাহাদ যখন হসপিটালে পৌছে তিতিরের কেবিনের দরজার কাছে এসে দাড়াল তখন তিতিরে মাহাদকে দেখেই দু'হাত বাড়িয়ে দিল ছোট বাচ্চাদের মত। মাহদ ভিতরে গিয়ে তিতিরের একদম কাছে গিয়ে বসে সালাম দিল। তিতির সালাম নিল কি না নিলোনা সেটা বোঝা গেলোনা। কিন্তু কাউরে পরোয়া না করে মাহাদকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো। মাহাদ কোন কথা বলতে পারছেনা। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তিতির ওর মুখটা সরিয়ে মাহাদের ঘাড়ে আলতো ছোয়া দিতেই লাবীবা বেগম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

মা চলে যেতেই মাহাদ তিতিরকে উন্মাদের কিস করতে লাগলো। এতক্ষন মনে হয় ওর দম বন্ধ হয়ে ছিলো। তুমি আমার শুধু স্ত্রী নও। বরং তুমি আমার জিবন বলে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিতিরকে। 

তিতিরের মুখ থেকে শুধু অতিথীর নাম উচ্চারন হলো তারপর সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। মাইল্ড অ্যাটাক যাকে বলে। 

বউ,,,, এই বউ বলে মাহাদ তিতিরকে ঝাঁকাতেই তিতির বিছানায় ঠাস্ করে পড়ে গেল। আল্লাহ্ আর পরীক্ষা নিওনা বলে মাহাদ তিতিরকে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা করতে লাগলো। এমন সময় নার্স দৌড়ে এসে বলল-

~" স্যার সরেন সরেন, আমি দেখছি। আপনি বাহিরে যান। আর আপনি এভাবে পেসেন্টের সাথে কি করছেন! ছাড়ুন তাকে!"

তিতিরকে ছাড়ার কথা শুনে মাহাদ রেগে জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলল-

~" আপনি আমাকে ট্রিটমেন্ট শিখাতে আসছেন? পেসেন্টের অভিবাবকদের সাথে এই ব্যবহার! আপনার বিষয়ে কমপ্লিন দিতে হবে?  যান এক্ষুনি ডক্টরকে ডাকুন। আর আপনাকে যেন ২য় বার আমার চোখের সামনে না দেখি।"

নার্সটি মাহাদের রাগচটা রাগ দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল। স্যার আপনি ভুল বুঝছেন বলতেই মাহাদ চোখ গরম করে এমন ভাবে তাকালো যা দেখে নার্সের গলা শুকিয়ে গেল। নার্স আর কিছু না বলে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেল।

তিতিরের অবস্থার অবনতি দেখে কামরান সাহেব সহ বাসার অনেকে হসপিটালে এল। আজ আর তিতিরকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলোনা। কাল যদি ভালো রির্পোট আসে তাহলে নিয়ে যেতে পারবে। মাহাদ সবাইকে বাসায় চলে যেতে বলল। তারপর বাসায় ফোন দিয়ে সাদের সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা বলল। তারপর কলটা কেটে দিয়ে তিতিরের পাশে চুপ করে বসে রইলো। তিতির ঘুমাচ্ছে আর মাহাদ ওর দিকে অপলক ভাবে চেয়ে রয়েছে।


বাবার সাথে কথা বলে আসরের সালাত আদায় করে স্কুল ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল সাদ। নিচে এসে দেখলো, বাসায় তেমন কেউ নেই। বাবা যেগুলো ড্রয়িং করতে দিয়েছিল সব করা শেষ। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো, কুসুম আর নান্নুর মা কাজ করছে। ছাদে নিধি আর ফিহা খেলাধুলা করছে। রাতিশা ওর রুমে স্ট্যাডি করছে। আল্লাহও যেন ওকে বার বার সুযোগ করে দেয় বোনের কাছে যেতে।

বাসা থেকে বের হয়ে বাগানের কাছে এসে দাড়াল সাদ। একটু দুরেই সেই বকুল তলা। বোন ওখানেই ঘুমিয়ে আছে। এদিক ওদিক চেয়ে একদম অতিথীর কবরের সামনে গিয়ে বসে পড়লো স্কুল ব্যাগ নিয়ে। 

অথি, বাবাতো আজ অনেক কাঁদলো, তবুও তোমার ঘুম ভাঙ্গলোনা! জানো অথি! মায়ের বড্ড শরীর খারাপ। বাবা বললো, তুমি নাকি আল্লাহর কাছে গেছ। আল্লাহকে একটু বলোনা, মাকে যেন ভালো করে দেয়। কতদিন মাকে কাছে পাইনা। বাসায় কত্ত মানুষ কিন্তু আমার খোঁজ কেউ রাখেনা। তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে একদিনও পেট ভরে খাবার খেতে পাইনি। কেউ জানেইনা আমি কি খেতে চাই।  আজ বাবা আমাকে পেট ভরে খাওয়াইছে। কিন্তু বাবাও চলে গেল আমাকে ফেলে। আজও মা আসবেনা। তুমি জানো, আমার সাথে কেউ খেলেনা। বড়বাবা সেদিন আমায় কোলে নিয়েছিল বলে বড় মা খুব বকেছে তাকে। কারন আমি সেদিন তোমাকে কোলে নিয়ে ছিলাম বলে। আর আমি তার কাছে যাইনি। আচ্ছা তোমাকে কোলে নিয়েছি বলে আমি অপবিত্র হয়ে গেছি!
বাতাসি মা তো আমাদের মাকে সবসময় বকা দেয়। আমার খুব কষ্ট হয়। এখন আমি দাদীর কাছে থাকি। কিন্তু দাদীর কোলে মা মা গন্ধ পাইনা। তুমি জানো! সেদিন ফিহা আপু আমায় খুব মেরেছে তার খাতা ধরেছি বলে। আমি কাকে বলব বলো! মা আসলে মাকে নিয়ে আমাদের আগের বাসায় চলে যাব। এখানে আর থাকবোনা। কিন্তু তুমি তো এখানে আছো। তোমায় কিভাবে নিয়ে যাব।

কথাগুলো একমনে বলে গেল সাদ। ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে। দু'হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে ব্যাগ থেকে খাতা বের করে আবার বলল-

~" আজ আমার রেজাল্ট দিয়েছে। ৫ম স্থান পেয়েছি। আরও ভালো হত। বাংলা পরীক্ষাটা ঠিকমত দিতে পারিনি। তুমিতো সেদিন আমাকে ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছিলে। আমি প্রতিদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করি। বাবা ফিরেছে, কাল মাও ফিরবে। সবাই ঘরে ফিরে শুধু তুমিই ফিরোনা.......।"
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।