বাতাসিকে দেখে মাহাদ যতটা না জোড়ে চিৎকার দিল তার থেকে কয়েকগুন জোড়ে বাতাসি চিৎকার দিয়ে পুরো বাসা মাথায় তুলে ফেললো।
~" এই চুপপ, একদম চুপ! ইজ্জতের আর কিছু বাঁকি রাখেছো?"
মাহাদের ধমক খেয়ে বাতাসি বিবি থেমে গেল। তারপর আবার একটু দম নিয়েই বলল-
~" আই তোর ইজ্জত নিছি, না তুই অ্যার ইজ্জতের উপর হামলা করছোস? খাড়া তোর বাপের কাছে বিচার দিমু।"
বাতাসির চিৎকারে ভাত খাওয়া ছেড়ে ঐ অবস্থায় মাহাদের রুমে হাজির হয়েছে অনেকেই। তিতিরকে দেখে বাতাসি চোখ গরম করে বলল-
~" ঐ ছুড়ি সোয়ামীরে আদর সোহাগ করোস না নাকি! হের লায় অ্যার কাছে সোহাগ খুঁজতে আহে?"
লজ্জায় তিতিরের চোখ যেন অন্ধকার হয়ে এল। মাহাদ চট করে বাতাসির মুখ চেঁপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
~" তোমাকে কি আবার উত্তম মধ্যম দিতে হবে নাকি! তার জন্য এসব কথা বলছো!"
বাতাসি মাহাদের পেটে কনুয়ের একটা ঘুতা দিতেই মাহাদ তার মুখ ছেড়ে দিল। সেই সুযোগই বাতাসি গলা উচু করে বলল-
~" কামু তোর পোলার চরিত্র আর ভালা নাই। হেই যহন তহন অ্যার উপর হামলা করতাছে। আজ সে অ্যার কই হাত দিছে জানোস?"
বাতাসি বলে মাহাদ একটা চিৎকার দিতেই বাতাসি কেঁপে উঠলো। কিন্তু এবার মাহাদের মুখ চলল। তুমি আমার রুমে, আমার বেডে, আমারই চাদরের নিচে কি করছিলা! বল কি করছিলা?
কথার বেগতিক হতেই বাতাসি বিবি দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো-
~" আই তোর ঘরে! আই তো অ্যার ঘরেই ঘুমাইতে আইছি। ফাও ফাও কতা কিন্তু কবিনা মাহাদ।"
~" আম্মাজান, আপনি তো মাহাদের রুমেই আসছেন! আমি ভাবলাম আপনার কি হলো, তারজন্যই ছুটে এলাম।"
ছেলের কথা শুনে বাতাসি গলা নরম করে বলল-
~" তুই যহন কইতাছোস আই মাহাদের ঘরে, তাইলে তাই হবে। তয় তোর পোলা কিন্তু মহা বেদ্দপ। অ্যার যেহানে সেহানে হাত দায়। এই বয়সে আর পোয়াতি হইয়া ছাওয়াল-পাওয়াল মানুষ করতে কিন্তু পারুম না।"
~" আম্মাজান কি সব কথা বলছেন?"
~" না... তোর যদি এই বয়সে ভাইবোনের দরকার হয় তাইলে ঠিক আছে। আইও রাজি আছি......।
কথাগুলো শাড়ীর আচলে মুখ লুকিয়ে লজ্জায় গদগদ হয়ে বললো বাতাসি। এমন সোয়ামীরে হাত ছাড়োন যায় নাকি! আই বুড়া হইলে কি হইবো! মনডা এহনো ১৯ বছরের মাইয়ার মত ফকফকা আছে। আহ্ অ্যার সোয়ামীর যা চেহারা, দেখলেই পরাণ জুইরা যায়।
শাগুড়ীর এসব কথা শুনে লাবীবাই লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু রজনী আর থেমে থাকতে পারলোনা। আম্মাজান রোজ রোজ আপনার নাটক দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে গেছি। যাকে তাকে উল্টা পাল্টা কথা বলেন কেন! আপনার কি চক্ষু লজ্জা বলে কিছু নাই নাকি! আজ মাহাদকেও ছেড়ে দিলেন না!
~" ঐ চুপ কর! মাহাদ, মাহাদ করোস ক্যান! আব্বা বইলা ডাকতে পারোস না! আর একবার যদি মাহাদ মাহাদ করোস তয় তোর চোপা ভাইঙ্গা দিমু।"
এগুলো নাটক দেখতে দেখতে আমার জিবন গেল বলেই নিসা রুম থেকে বের হয়ে গেল। সাথে সবাই বের হয়ে গেল। তিতিরও কেবল বের হতে যাবে এমন সময় বাতাসি আগ বাড়িয়ে তিতিরকে বলল-
~" ঐ ছুড়ি, আজ থেকে অ্যার সোয়ামীরে আই দেখুম। তোর ছুডি। মাইয়াকে লইয়া দফা হইয়া যা।"
কথাগুলো বলে বাতাসি মাহাদের পায়ে হাত দিয়েই জোড়ে জোড়ে টিপতে লাগলো। ব্যাথায় মাহাদের চোখমুখ নীল হয়ে গেল। তিতির দৌড়ে এসে বাতাসির হাত ধরে বলল-
~" দাদী কি করছেন! ওনার কষ্ট হচ্ছে তো!"
এবার মাহাদ ক্ষেপে গিয়ে বলল-
~" অতিথীকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাওতো! আজ এর ভিমরতিই ছুটাইবো। বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিবা। শুধু লাগিয়ে দিবা না, একদম চাবি মেরে দিবা। বাতাসি যেন কিছুতেই রুম থেকে বের হয়ে যেতে না পারে।"
~" আই তোরে ভায় পাই নাকি!"
পাওনা তবে এখন পাইতে হবে বলেই মাহাদ বাতাসির হাত দু'টো শক্ত করে ধরে, অন্য হাতে বাতাসির শাড়ীর আচল ধরতেই বাতাসির পিলে চমকে উঠলো। এই তুই কি সত্যই অ্যার ইজ্জত মারবি নাকি বলেই মাহাদের সাথে ওর ধস্তাধস্তি শুরু হলো। বাতাসি যতই উঠে যেতে চায় মাহাদ ততই ওকে শক্ত করে ধরে। মাহাদ এবার কঠিন গলায় বলে উঠলো-
~" তিতির যাওতো! বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দাও। আজ মাহাদ আর বাতাসির বাসর হবে। সম্মান যখন চলেই গেছে তখন আর বাঁকিটুকু রাখার দরকারই নেই। চিল বাতাসি চিল।"
মহাদের কঠিন মুখের কথাগুলো শুনে তিতিরই ভয় পেল। দাদীকে আজ ছেড়ে কথা বলবেনা মাহাদ। সবার সামনে দাদী যেই কথাগুলো বলেছে তাতে মাহাদ রেগে ফায়ার হয়ে আছে। দাদীকে ছেড়ে দিননা মাহাদ! উনিতো আপনার সাথে এমনি এমনি মজা করেছেন।
এমনি এমনি! ওর এই এমনি এমনির খেলই আজ খতম করবো। কি বাতাসি মজা লাগছে! দাড়াওনা আরও মজা দিব। তাহলে শুরু হয়ে যাক বলতেই বাতাসি কান্না মুখ করে বলল-
~" অ্যার একলত্তি সোনা,ময়না,টিয়া,ঘুঘু ভাই। বুদুনের নাম আজ খাতা থাইকা কাইটা দিলাম। আজ থাইকা ওহানে তোর নাম বসানু। তাও অ্যারে ছাইড়া দে। আই আর এমন কাজ করুম না।"
~" এইতো লাইনে আসছো। আর কখনও সবার সামনে এমন কথা বলবানা তো!"
~" না...না... আর করুম না, ছাইড়া দে ভাই। করলে অ্যার গাল আর তোর পায়ের জুতা। তাও ছাইড়া দে অ্যারে।"
মাহাদ বাতাসিকে ছেড়ে দিয়ে বলল-
~" আজকের মত তোমায় দয়া করে ছেড়ে দিলাম। এরপর যদি এমন কথা আর কোনদিনও বলছো তো কি হবে.....!"
বাতাসি আর থাকে! আধা দৌড় দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে মুখ বেকিয়ে বলল-
~" করুম না মানে! একশ বার করুম, হাজার বার করুম। আয় এবার অ্যার কাছে!"
~" বিশ্বাস করো বাতাসি! আমার দাদা হয়ে তোমারে ভাত দিছে। আমার পাল্লায় পড়লে তোমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর ভিমরতি আমি ছাড়িয়ে দিতাম। কথা গুলো আমার সামনে যখন ছিলা তখন বললানা কেন! তখন বলতে শুধু! তারপর দেখতে কি কি তোমার সাথে করতাম।"
~" হুঁ ভাঙ্গা পাও লইয়া বড়াই দেহাস! এবার কাছে আয়!"
এই তিতির ধরো তো ওকে! দাড়াও তোমাকে দিয়েও হবেনা। কুসুম, কুসুম বলে গলা ছেড়ে ডাকতেই বাতাসি পগাড় পাড় হয়ে গেল। ততক্ষনে তিতির হাত ধুয়ে এসে মাহাদের পায়ে মলম মেখে দিতে লাগলো। মাহাদ পায়ে কি খুব লেগেছে?
~" নাহ্..., তুমি যাও খাবার খেয়ে নাও। আমি ঘুমাবো.....।"
তিতির মাহাদের কথা না শুনে আরও কিছুক্ষন পায়ে মাসেজ করতেই ফুয়াদ রুমে এসে মাহাদের কাছে বসে বলল-
~" দেখতো, সাদের জন্য এই মেডিসিন গুলো কিনা!"
মাহাদ হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে বলল-
~" হুম এটাই। তিতির যাওতো, সাদকে দ্রুত মেডিসিন দাও।"
আচ্ছা বলেই তিতির রুম থেকে বের হয়ে গেল মেডিসিন নিয়ে। তিতির চলে যেতেই লাবীবা এসে রুমে ঢুকে ফুয়াদের পাশে বসতেই ফুয়াদ উঠে পড়লো। লাবীবা সাথে সাথে ফুয়াদের হাত চেঁপে ধরে বলল-
~" আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা। তোকে সবার সামনে ওভাবে শাসন করা ঠিক হয়নি।"
ফুয়াদ কোন কথায় না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মাহাদের দিকে চেয়ে কেঁদে উঠলো লাবীবা বেগম। ও তো আমার সাথে কথায় বলছেনা।
~" তোমার উচিত হয়নি মা! ভাইয়াকে সবার সামনে ওভাবে চড় মারার। আর চিন্তা করোনা। রাগ কমে গেলে ভাইয়া এমনি তোমার সাথে কথা বলবে। ভাইয়া তো আর আমার মত না। যে রাগ পুষে রাখে।"
লাবীবা আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
♥
ঐ মেডিসিন খাওয়ানোর পর সাদ এখন প্রায় সুস্থ। তিতিরের এখন অনেক দায়িত্ব। মাহাদকে দেখাশোনা সহ দুই সন্তানের পরিচর্যা করতে হয়। সে বার বার আল্লাহর প্রসংসা করে নিজের কর্তব্য পালন করতে লাগলো। এভাবে আরও ছয়টা মাস কাটিয়ে গেল। মাহাদ বাসা থেকে অফিসের সমস্ত কাজ করে থাকে। যখন খুব প্রয়োজন হয় তখন সে অফিসে যায়।
একদিন বাসায় একটা ইনভাইট কার্ড এলো। তিতির উলট-পালট করে দেখলো কাডটি। কিন্তু সেটা না খুলে মাহাদের কাছে নিয়ে গিয়ে ওর হাতে কার্ডটি ধরিয়ে দিয়ে বলল-
~" আপনার নামে এটা এসেছে। খুলে দেখুন তো!"
মাহাদ কথা না বাড়িয়ে কার্ডটি খুলে দেখলো, জাতীয় এসএমই বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যক্তার পুরষ্কারের জন্য মাহাদকে মনোনীত করেছে। এই ক্যাটাগরিতে একজন পুরুষ আর একজন নারী উদ্যক্তাকে পুরষ্কৃত করা হয়। এটা নিয়ে ও তিনবার পুরষ্কৃত হয়েছে। তবে প্রতিবারই অনূভুতিগুলো অন্যরকম হয়। নিচে তারিখ দেওয়া আছে। মাহাদ এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। হুইল চেয়ারে বসে থেকেই সব কাজ করতে হয়। অনুষ্ঠানে স্ব-পরিবারে সেখানে উপস্থিত হওয়ার নিমন্ত্রন জানানো হয়েছে।
দেখতে দেখতে সেই কাংক্ষিত দিনটি চলেই আসলো। এক সন্ধ্যায় এর আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে মাহাদকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ফ্রেস করে এনে আসরের নামাযের জন্য প্রস্তুত করে দিয়ে সাদকে তুলে ওকেও প্রস্তুত করে দুই বাবা-ছেলেকে একসাথে সালাতের জায়গা করে দিয়ে তিতির নিজেও অযু করতে গেল। তিতির খানিকবাদে বের হয়ে অতিথী কে ফ্রেস করে দিয়ে পুরো পরিবারই মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে দাড়ালো। তারপর নামায শেষ করে দুই ছেলে-মেয়েকে রেডী করে দিয়ে কুসুমকে ডেকে তার কাছে দিয়ে বলল, ওদের নিচে নিয়ে যাও।
সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলে তিতির তার বর মসাইকে রেডী করতে লাগলো। খুব যত্ন সহকারে প্যান্ট, শার্ট, টাই, ব্লেজার পড়িয়ে দিল। তারপর বুকে ব্রোজ লাগিয়ে দিয়ে চিরুনী নিয়ে এসে চুলগুলো আঁচড়ে দিয়ে মাহাদকে রেডী করে বারবার দেখতে লাগলো তিতির।
মাহাদ হালকা একটু কাঁশি দিয়ে বলল-
~ " কি দেখছো?"
~" মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ। আপনাকে দেখতে অতি উত্তম লাগছে। কি ব্যাপার! দিন দিন এত সুন্দর হয়ে যাচ্ছেন কেন?"
তিতিরের কথা শুনে মাহাদ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। তারপর মুচকি হেঁসে বলল-
~ " কেন, তোমার বর কি আগে অসুন্দর ছিল! তাই এমন কথা বলছো?"
তিতির একদম মাহাদের কাছে গিয়ে মাহাদের কপালে একটা দীর্ঘ কিস করলো। কিন্তু এতে মাহাদের মন ভরলোনা। বরং তিতিরকে ওর কাছে নিচে বসতে বললো। মাহাদের কথা অনুযায়ী তিতির চুপটি করে ফ্লোরে বসতেই মাহাদ ওকে আরও কাছে টেনে এনে মন ভরে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে লাগলো। একসময় তৃপ্তি মিটে গেলে তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে বলল-
~" যাও রেডী হযে নাও।"
তিতির উঠে গিয়ে বোরখাটা পড়ে রেডী হয়ে মাহাদকে নিয়ে রুমের বাহিরে এসে দেখলো, সজিব আর মিল্টন দাড়িয়ে আছে।
সজিব এগিয়ে আসতেই তিতির মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে কুসুমকে ডাক দিল। সজিব আর মিল্টন এসে মাহাদকে হুইলচেয়ার থেকে তুলে বাহিরে নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে বসিয়ে দিতেই তিতির ওর দু'ই সন্তানকে নিয়ে মাহাদের পাশে গিয়ে বসলো। মাহাদ অতিথীকে বুকের সাথে জড়িয়ে সাদের এক হাত ধরে ডাইভার কে বলল-
~" মশিউর চল।"
মশিউর নির্দেশ পেয়ে দ্রুত গাড়ী স্টার্ট দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। সজিবও তাদের সাথে গেল। আর মিল্টন পরের গাড়ীতে আসল। কামরান সাহেব বিশেষ মিটিং এ ব্যস্ত থাকার জন্য যেতে পারলেন না। কিন্তু তিনি নিজের মনকে খুঁশি করার জন্য ঠিকিই আসোল সময়ে সেখানে উপস্থিত হবেন। নিজের কাজে তিনি আজ যতটা সাফল্য পেয়েছেন তার থেকে হাজারগুন তিনি দুই ছেলের পিতা হিসাবে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। তাই তিনি ছেলেদের এমন সাফল্যর কোন অনুষ্ঠান কখনো মিস করেন না।
যথারিতি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, আর্থিক নৈপূণ্য প্রদর্শন, পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে সে সকল এসএমই উদ্যোক্তার সাফল্য গাঁথার চিত্র তুলে ধরা হল এবং সার্বজনীন স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য তাদের মঞ্চে ডাকা হল।
ফুয়াদ, নিসা, লাবীবা বেগম সহ রেজওয়ান এবং তার মা রুপালী বেগম উপস্থিত ছিলো বিশাল হলরুমে। বাচ্চাদের রেখে তিতিরই মাহাদকে নিয়ে মঞ্চে এগিয়ে গেল। গত দুইবার মাহাদ হেঁটে গিয়ে পুরষ্কার নিয়েছিলো কিন্তু আজ ভাগ্যফেরে হুইলচেয়ারে বসে পুরষ্কার নিতে হচ্ছে। বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যক্তা পুরুষ- দে.মো. মাহাদ আহনাফ এবং মহিলা- তাসনিম জামান নাম প্রকাশ করা হল ততক্ষনে তিতির মাহাদকে মঞ্চে নিয়ে এসেছে। প্রধান অতিথীর কাছ থেকে পুরষ্কার নেওয়ার জন্য এবার তিতির ওর কারিশমা দেখালো। সে মাহাদকে হুইল চেয়ার থেকে ওঠানোর চেষ্টা করলো। স্ত্রীর এমন চেষ্টায় মাহাদ নিচু গলায় বলল-
~" তিতির, আমি কি পারবো?"
ইনশাল্লাহ্, আল্লাহ্ থাকতে ভয় কিসের বলে মাহাদকে পরপর দুইবার টেনে তোলার চেষ্টা করলো। মিল্টন দ্রুত এসে হুইল চেয়ার শক্ত করে ধরেই বলল-
~ " ম্যাম, এবার চেষ্টা করেন।"
চেষ্টা কিসের, ওনাকে পারতে হবে। আল্লাহ্ আকবার বলেই শরীরের সমস্ত জোড় দিয়ে মাহাদকে একটা হ্যাচকা টান দিয়েই দাড় করালো তিতির। মাহাদ বিসমিল্লাহির রাহমান রাহীম বলে তিতিরের সাথে পা মিলে অনেক কষ্টে সামনে এগিয়ে গেল। তিতিরের এমন চেষ্টায় লাবীবা বেগম সবার মাঝখান থেকে উঠেই দাড়ালেন। দু'চোখ দিয়ে তার অশ্রু ঝড়ছে। আর এমন সুখময় দৃশ্য কামরান সাহেব মেন দরজায় দাড়িয়ে থেকে উপভোগ করছেন। তার আসতে একটু লেট হয়ে গেলে কি হবে! আসল মূহুত্ত্বে তিনি উপস্থিত হতে পেরেছেন, সেটাই বা কম কিসের? তিনি তার পুত্রবধূর উপর প্রচন্ড আত্ত্ববিশ্বাসী। স্যার এসেছেন বলেই কামরান সাহেবকে কিছু লোক নিয়ে গিয়ে প্রথম সারিতে বসালেন।
হ্যা, ৩য় বারের মত মাহাদ আবার একটা প্রতিষ্ঠান থেকে পুরষ্কৃত হল। স্ত্রীর কাধে ভর দিয়ে পুরষ্কার গ্রহন করলো মাহাদ। মাহাদকে মাইক্রোফোন দেওয়া হল কিছু বলার জন্য। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মাহাদ প্রথমে আল্লাহ্ সুবহানাতালার প্রসংসা করে কিছু বক্তব্য দিল। শেষে পরিবারের সবার প্রসংসা করে মাইক্রোফোন দিয়ে দিল। এমন সময় তাসনিম জামান এসে মাহাদের দিকে হাত বাড়াতেই মাহাদ তাকে সালাম জানিয়ে অভিন্দন জানালো। তাসনিম জামান হাঁসিমুখে সালামের জবাব দিয়ে বললেন-
~ " আপনি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান এমন একটা স্ত্রী পেয়ে। যে স্ত্রী শুধু তার রব আল্লাহর উপরই ভরসা করেন, কোন মানুষের উপর না।"
এমন কথায় মাহাদ শুধু তিতিরের দিকে একবার তাকালো, তারপর আল্লাহর প্রসাংসা করে বলল-
~" আলহামদুলিল্লাহ্, সেটাতো আমাকে দেওয়া আল্লাহর শ্রেষ্ট নিয়ামত।"
আরও কিছু সময় সেখানে কাটিয়ে সেদিনের মত সবাই বাসায় ফিরে আসলো।
♥
রুমের সাথে লাগানো আর একটা সুন্দর ছোট্ট রুম বানানো হয়েছে। তিতির নিজ হাতে সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটি। এটা সাদের রুম। ছেলে বড় হয়ে যাচ্ছে তাই তাকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা আরকি। রাতের খাবার শেষ করে তিতির যখন সাদের কক্ষে গেল তখন সাদ নিজের ছোট্ট খাটে অন্যদিকে মুখ করে সুয়ে ছিল। তিতির ছেলের গায়ে হাত দিতেই সাদ কেঁপে উঠলো। তিতির সাদকে ডাকলো কিন্তু সাদ কোন কথা বললোনা। ছেলে তার নিঃশ্চুপে কাঁদছে। সে কেন কাঁদছে তিতির সেটাই বুঝতে পারছেনা। তিতির অনুয়ের স্বরে বলে উঠলো-
~" বাবা, আপনি কি আপনার এই মায়ের উপর রাগ করেছেন?"
সাদ লাফ দিয়ে উঠেই নিজের মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলো। ছেলের কান্নায় তিতিরের গলা ধরে এল। সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল-
~" আমি মনে হয় সত্যিই আপনাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা! আমাকে আমার দোষ ধরে দেন বাবা। আমাকে তো ভুলগুলো শুধরানোর সুযোগ দিতে হবে।"
সাদ এবার ফিকরে কেঁদে উঠে বলল-
~ " মা, ফিহা আপা আমায় খুব খারাপ ভাষায় বকা দিয়েছে। আমিতো তাকে কিছুই বলিনি। তার সাথে একটু খেলতে চেয়েছি।"
~" আহা আমার বাবা এতটুকুতেই ভেঙ্গে পড়েছে! এর থেকেও বড় ঝড় আসলে তো আপনি সামলাতে পারবেন না। কারো দেওয়া আঘাতের কষ্টগুলো ভিতরে জমা রাখতে নেই। একদিন সেই কষ্টগুলো জমা হতে হতে মারাত্বক হয়ে ওঠে। তখন তুমি সেই মানুষটির প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে যাবে আর তার ক্ষতির চেষ্টা করবে। আর সেটা হবে সব থেকে নিকৃষ্টতম কাজ। মনে রাখবে, আমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়ালু আর ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে অত্যন্ত পছন্দ করেন। আমাদের উচিত প্রভূকে সব সময় খুঁশি করার। যদি তুমি কারো দ্বারা আঘাত পাও তাহলে তাকে সুন্দর করে বুঝাও তার ভুলগুলো। সে না শুধরালে তার কাছ থেকে দুরে দুরে থাকো। তাই বলে তার ক্ষতি কামনা করা বা ক্ষতি করা এগুলো কখনোই করবেনা। তার জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে হেদায়াতের জন্য প্রার্থনা করবে। বুঝেছ বাবা!"
সাদ কোন কথা না বলে মায়ের কোলে চুপটি করে রইলো। একসময় ঘুমিয়ে পড়লো সে। তিতির বিছানাটি গুছিয়ে কেবল লাইট নিভাতে যাবে এমন সময় গোলাবের গা ঝিকিয়ে উঠলো। সে এতক্ষন ঘুমিয়ে ছিল। তিতির ব্যাপারটা লক্ষ্য করতেই গোলাব লাফ দিয়ে উঠেই মাহাদের রুমে দিকে দৌড় দিল। তিতির আর আলো না নিভিয়ে রুম থেকে বের হয়ে মাহাদের কাছে যেতেই দেখলো মাহাদ অবাক চোখে গোলাবের দিকে চেয়ে আছে। গোলাব অতিথীর কাছে বসে আলতো করে ওর গা ছুয়ে দিচ্ছে আর অতিথী খিলখিলিয়ে হাসছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, গোলাব নিঃশ্চুপে অঝরে কেঁদেই চলছে।