আমার একটাই যে তুই - পর্ব ১৯ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


কুহু আজকে নিজ হাতে রাধছে। বেগুন ভরা,কাঁচা কলা  দিয়ে  ইলিশ মাছ, মাসকলাই ডাল,  মুরগীর  তান্দুরি। তিন পদের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষা ভর্তা, আলু ভর্তা। এ সবই ইউসুফে প্রিয় খাবার।  ইউসুফের মা তখন বলল,,

--" জানিস কুহু। ছোট বেলায় ইউসুফ এগুলো কত স্বাদ করে খেত। হাত একদম চেটে পুটে খেত আর তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলতো,, আম্মু তোমার হাতের রান্না অনেক সুস্বাদু। অতি সুস্বাদু। বড় হয়ে তোমাকে একটি রেস্টুরেন্ট খুলে দিবো আম্মু।  যেখানের মালিকও তুমি শেফ তুমি। "

বলে হাসলো ইউসুফের মা। সাথে কুহু ও।কুহুর সাথে ইউসুফের মার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কুহু এক এক করে খাবার বক্সে ভরছে। দুপুরে ইউসুফের অফিসে নিয়ে যাবে! ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলল কুহু। কুহু একটি ক্রিম কালারের শাড়ি পড়ে টিফিন বক্স নিয়ে হেলতে দুলতে গাড়িতে উঠল। সাথে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো।

গাড়ি এসে থামলো ইউসুফের অফিসের সামনে।কুহু আগের মতোই গুন গুন করতে করতে উপরে উঠে গেল।

ইউসুফ কনফারেন্স রুমে।  মিটিং চলছে। সকলেই খুব সিরিয়াস হয়ে ইউসুফের কথা শুনচ্ছে। মনে হচ্ছে রাজা তার প্রজাদের সাথে কথা বলছে। এদিক সেদিক হলেই গর্দান যাবে।  এ ভেবেই কুহু ফিক করে হেসে দিল। কনফারেন্স রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে। স্বচ্ছ কাঁচের ভিতরে কি হচ্ছে সব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কথাই বাহিরে আসচ্ছে না।

ইউসুফ দু হাত নাড়িয়ে কিছু বুঝাচ্ছে। তখনি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা কুহুর দিক তার নযর যায়। অবাক হয়ে কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকায়! সে! কুহু এখানে কেন ভাবতে লাগে। কথার মাঝে আরেক পলক তাকাতেই কুহু ২৮ পাটি দাঁত বের করে হাসচ্ছে সে! ইউসুফ সেদিকে না তাকিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তা দেখে কুহুর মুখ খানি ছোট হয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলে,,

--" লম্বু খাসি!  হু!"

ইউসুফের মিটিং প্রায় শেষের দিকে। সে আড় চোখ আবার তাকালো বাহিরে। কুহু হাত দিয়ে ইশরায়  হাই বললো। ইউসুফ ইগনোর করলো। কুহু নাছড় বান্দা। সে ইশরা করেই যাচ্ছে। ইউসুফ কথার মাঝে আবার তাকালো। কুহু সুযোগ বুঝে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেয়ার ইশরা করলো। ইউসুফ হকচকিয়ে গেল। তা দেখে কুহু ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বেচারা ইউসুফের সব কথা গুলিয়ে গেল। এলো মেলো কথা বলতে লাগলো। মেইন টপিক যেন ভুলেই গেছে সে। রাগ লাগলো কুহুর উপর তার। চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করলো। এসব দেখে কুহুর চোখ-মুখ শুকিয়ে গেল। এদিকে ইউসুফ  মিটিং সেখানেই শেষ করে হন হন করে বেড়িয়ে আসলো।কুহুর হাত টেনে নিজের কেবিনে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।রাগে কঁপালের রগ দাঁড়িয়ে। কুহু ভয়ে ভয় তাকিয়ে রইলো। ইউসুফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

--" এসব কি ধরণের অসভ্যতা!  লাজ শরম কি গেছে? নাকি বেঁচে খেয়েছিস?  এখানে কি করছিস তুই?"

কুহুর এতক্ষণ ভয় লাগচ্ছিল। সে ভয় গিলে রোমান্টিক মুডে চলে গেল। সে হাসি দিলে সেই ঝিম ধরনো হাসি।ইউসুফের শরীর ঝিম ঝিম করে উঠলো।ইউসুফ হতবুদ্ধি। কুহু তার এক আঙ্গুল দিয়ে ইউসুফের কঁপালের চুল সরিয়ে কানের কাছে এসে স্লো ভয়েসে বলল,,

--"কি করেছি!"

ইউসুফ কিছু বললো না। বিব্রত বোধ করলো। কুহুর এ রূপ হজম হচ্ছে না। কুহু ইউসুফের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,,

--" বলো না কি করেছি!"

ইউসুফ ঘামতে লাগলো।কুহু কি করছে এসব।  কুহু তাকে তুমি বলে সমর্থন করছে। তাকে এ জন্য খুশি হওয়া উচিত কিন্তু সে পারছে না কেন পারছে না? এনিথিং রং??  ইউসুফ কুহুর থেকে দূরে গিয়ে পিছন ফিড়ে দাঁড়ালো। কুহু আবার তার কাছে গেল। কুহুকে আজ সুন্দর লাগচ্ছে। শরীর থেকে পারফিউম মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে লাগচ্ছে। সাথে তার দুষ্টু মিষ্টি কাজ গুলোতে অবাক হয়ে যাচ্ছে। তাকে এ মুহূর্তে কি করা উচিত?কুহুকে ঝাঁপটে ধরে বলা উচিত? চল বিয়ে করে ফেলি। কুহু চমকে যাবে কি? কিন্তু ইউসুফের কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না ম এখন নিজেকে ভাব শূন্যহীন মানুষ মনে হচ্ছে।

কুহু তার শাড়ির আচঁল দিয়ে ইউসুফের ঘাম মুছে দিল। বলল,,

--" কি হয়েছে? এভাবে ঘামচ্ছো কেন?"

ইউসুফ ডানে- বামে মাথা নাড়িয়ে বলল,,

--" কিছু না!

বলে আবার পিছ মুড়ে তার চেয়ারে বসে পড়লো। এ সি ছেড়ে দিলো। টেবিলের উপর গ্লাসে পানি রাখা। ডক ডক করে সব টুকু খেয়ে নিল। তা দেখে মুখ টিপে হাসলো কুহু।
_______________________

বাসায় বড়সড় জটলা বসেছে। ধীরে ধীরে মেহমান আসা শুরু হয়েছে।মেয়রের মেয়ের অদ্রির জম্মদিন বলে কথা। তখন অদ্রির নানু বললেন,,

--" কই সব?  গান ধর? আমার নাতনী জম্মদিন কলে কথা! গান,  বাজবে,  শানাই বাজবে? কি হলো বাজাও?"

তখন ভাবি বলল,,

--" আম্মা কি শুরু করলা? অদ্রির কি বিয়ে নাকি? এসব কেন? আপনারা বন্ধ করিন এসব?সব বন্ধ?"

অদ্রির নানু মুখ চুপসে গেল। তখনি রাহুল ভাই বলল,,

--" কেন বন্ধ করবে? কোনো বন্ধ টন্ধ নাই! আরো জোরে বাজাও? আনন্দ করো? কাল আমার জম্মদিন। দশ টা না, পাঁচটা না,  এক মাত্র মেয়ে আমার! আনন্দ উল্লাস হবে না? এটা কোনো কথা? কি হলো বাজাও। নয়তো সব কটার গর্দান যাবে!"

ভাইয়ার কথায় আবার শানাই ঢোল বেঁজে উঠলো। নুশরা- বুশরা, ছোট অদ্রি নাচতে লাগলো? অদ্রির নানুও তাল দিল। নুশরা এসে কুহুকে টেনে নিয়ে গেল। সে যোগ দিল। 

রাত বারটা বাজতেই ফট ফট করে বাজি ফুটাতে লাগলো। পুড়ো ময়মনসিংহে খুশির আমেজ। শুধু খুশি নেই কুহুর চোখে-মুখে। আর দু দিন সময় বাকি তার কাছে! কি করবে সে? ইউসুফ সেই আগের মতোই ঘাড় ত্যাড়া করে আছে। মাঝে মাঝে তার ব্যাপক ইচ্ছে জাগে ঘাড় ত্যাড়া লোকের ঘাড় হাতুড়িয়ে দিয়ে পিটিয়ে সোজা করতে! কিন্তু আফসোস।  হুহ! দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো কুহু। তখনি পিছনে এসে দাঁড়ালো জয়ীতা। বলল,,

--" কুহু সময়ের উপর সব ছেড়ে দাও দেখবে সব ঠিক হবে!"

কুহু বিষন্নতা নিয়ে বলল,,

--" সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছি কমতো ট্রাই করলাম না। দেখি এবার কি থাকে কঁপালে!"

জয়ীতা কুহুর কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলল,,

--" যা হবে ভালোর জন্যই হবে!"

কুহুও মাথা নাড়ালো।
_______________________

ইউসুফের রুম থেকে মৃদু আওয়াজের গান ভেষে আসচ্ছে। কুহু পানি নিতে এসে এতো রাতে গানের শব্দে ইউসুফের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। বাহির থেকে আসা চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত করেছে। ইউসুফ এক হাটু তুলে খাটের সাথে ঘেঁষে  বসে আছে। কোলে তার গিটার। যা দেকে টুং টাং শব্দ ভেসে আসচ্ছে। কুহু ভিতরে আসলো। কানে ভেসে আসলো ইউসুফের সেই চিড়চেনা কন্ঠের গান। অনেক দিন পর আবার শুনে চোখে দিয়ে পানি উপচে পড়তে শুরু করেছে। ইউসুফেরো চোখ বন্ধ। হয়তো সেও কাঁদচ্ছে।কন্ঠ ভার হয়ে আসচ্ছে মাঝে মাঝে। ইউসুফ গাইছে,,

--"মনের কোনে গহীন ঘরে থাকবি রে শুধু তুই
কল্পনাতে ভেলায় ভেসে ঘুরবো আমি তুই
সে যেনো...মন থেকে সরে না
সে যেনো...তাকে ভোলা যায় না

দূরে দুরে,বহু দূরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে
দূরে দুরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে
স্বল্পক্ষন ব্যবধান সহেনা হৃদয় আমার,

তারে ছাড়া দিন কাটে না,
তারে ছাড়া মন হাসে না রে
সে যেনো...মন থেকে সরে না
সে যেনো...তাকে ভোলা যায় না

দূরে দুরে,বহু দূরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে
দূরে দুরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে"

—————

রাত বাড়চ্ছে। ফিনফিনে কুয়াশায় ঢাকা চারিপাশ।স্টেডিয়াম লাইটের আলোতেও কুয়াশা ছাড়া কিছু দেখা মিলছে না। দেখতে দেখতে যাবার দিনগুলো ঘনিয়ে এলো। নভেম্বর মাস। চারিদিক হু হু করে ঠান্ডা বাতাস  বিইছে। তা এসে জানালা দিয়ে প্রবেশ করে আমার শরীরে লাগতেই কাঁটা দিয়ে উঠছে।ফটফট করে পর্দাও উড়চ্ছে। কি তাজ্জব বিষয়। এ বাড়িটিতেই আমার প্রেমের কাহিনী শুরু হয়েছে প্রেমের কাহিনী শুরু হয়েছিল। এখানেই শেষ হতে চলেছে আজ। ইউসুফ ভাইকে এ কদিনেও নিজের করতে পারিনি আমি। আজ লাষ্ট দিন। কাল সকাল হতেই ব্যাগপত্র নিয়ে চলে যেতে হবে নিজের গন্তব্যে! সে কি আমায় আটকাবে না? হবে না কোনো মেজিক? আমাকে আচানক চমকে দিয়ে ইউসুফ ভাই বলবে,,

--" কুহু  প্লীজ ডোন্ট গো? "

ছোট শ্বাস ছাড়লো কুহু। ডায়রিতে এটুকু লিখে বড় বড় শ্বাস ফেলে কান্না আটকাতে লাগলো সে। কষ্ট বুক ফেটে যাচ্ছে কাঁদতে পাড়লে হয়তো কষ্ট কম লাগতো কিন্তু কাঁদতে চায় না আর। কেঁদে নিজেকে দূর্বল করে কি লাভ? ইউসুফ তো গলবে না তার চোখে পানি দেখে!  উল্টো ধমকে বলল,,

--" এসব ফালতু ড্রামা বন্ধ কর! আই ডোন্ট লাইক দিস! তোর এসব ন্যাকা কান্নায় মন গলবে না আমার! সো গেট লষ্ট!"

কুহুর তখন খুব কষ্ট লাগবে। তখন হয়তো সে আরো কাঁদবে।  হাউ মাউ করে কাঁদবে। গলা ছেড়ে চিল্লিয়ে কাঁদবে। এক সময় কাঁদতে কাঁদতে ইউসুফের পা জড়িয়ে ধরবে বলবে,,

--"ইউসুফ ভাই এমন করবেন না? আমি বাঁচবো না আপনাকে ছাঁড়া!"

ইউসুফ তখন হাসবে। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলবে,,

--" কারো জন্য কখনো কেউ মরে না। বরং ভাল ভাবেই বেঁচে থাকে। এই যে পাঁচটি বছর দূরে থেকে ছিলি। মরিস নি তো? বরং বেঁচে ছিলি। হেপি ছিলি। খেয়ে দেয়ে মোটাও হয়েছিস! হোস নি? তাহলে এসব আজাইরা কথা বাদ!"

কুহু তখন নিরবে চেয়ে থাকবে। ড্যাব ড্যাব করে ইউসুফকে দেখবে। ইউসুফ তখন বিরক্তি হয়ে বলবে,,

--"ডো নট লুক লাইক দিস! যা বলেছি সত্যি বলেছি। এবার বিদেয় হো।"

কুহু এবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে। তার ইউসুফ ভাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে? কি করবে সে? তার এখন এ মুহূর্তে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে ঠুকে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ইউসুফকে দেখাতে ইচ্ছে করছে। যে, " দেখো ইউসুফ তোমাকে ছাড়া আমি মরে গেলাম।  বাই!" এসব ভেবে সে তাই করবে।। দেয়ালে বাড়ি দিতেই ইউসুফ তাই  কুহু বলে চেঁচাবে। কুহুর সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবেই না। সে তার কথা রাখবেই।  সে আবার বাড়ি দিতে যাবে ইউসুফ কুহুকে তার দিক ঘুড়িয়ে  প্রকান্ড আওয়াজ 
 থাপর কসাবে। কুহু ছিটকে মাটিতে পড়ে যাবে।

কুহুর ঘুম ছুটে গেল। সে মাটিতে পরে আছে। চারিদিকে শীতের সকালের মিষ্টি রোদ খা খা করছে। মাথার উপর ফেনটি খেচর খেচর করছে। শরীরে ঘামে ভিজে গেছে। নিজের কঁপালে আর গালে হাত দিলো না বেঁচে আছে সে। স্বপ্ন দেখছিল এতক্ষণ সে! ভেবেই স্বস্তির নিশ্বাস না ফেললো সে।

তখনি কফি হাত ঘরে ঢুকলো তিথি। কুহুকে নিচে  বসে থাকতে দেখে জিগ্যেস করলো,,

--" কি করে? এত ঠান্ডার মাঝে নিচে কি করিস তুই?"

কুহু  চকিতে তাকলো। তার ভাব এমন চুরি করে ধরা খাওয়ার মতো। সে উঠে মাটি থেকে চাদর তুলতে তুলতে আমতা আমতা করে বলল,,

--" গ-র-ম লাগচ্ছিল তাই!"

তিথি অবিশ্বাসের চোখে বললো,,

--" তোর কথা বিশ্বাস করতে কষ্টে হচ্ছে!এত শীতে গরম কিভাবে লাগে তোর? এমনতো না ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে খাট থেকে পড়ে গেছিস?"

কুুহু হকচকিয়ে গেল। দিগুন জোড়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,,

--" না না তেমন কিছু না সত্যি!"

তিথি কিছু বললো না। হেসে দিলো।  সে জানে কুহু নির্ঘাত ঘুমের ঘরে বেড থেকে পড়ে গেছে। আগেও কতবার এমন দেখেছে সে। প্রতিবার বাহানা দিয়ে কেঁটে পড়েছে। তিথি বলল,,

--" নিজে চল! কাজ অনেক"

কুহু চুলে হাত খোঁপা করতে করতে বললো,,

--"হুম চল!"

খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে ইউসুফ। আরেক হাতে ফোন। ঢুকে গেছে যেন ফোনে। প্লেটে রুটি শেষ খেয়ালি নেই যেন সেদিকে তার। তা দেখে ছোট শ্বাস ছেড়ে ইউসুফের মা কুহুকে বলল,,

--" মা যাতো  প্লেটে রুটি নেই সেদিকে তার খেয়ালি নেই!রুটি দিয়ে সেখানে বসে থাকবি ।  কাবার শেসে উঠে আসবি। যা।"

কুহু তখন হলে বসে আলপনা করছিল। অদ্রির নাকি খুব পছন্দ সে নেট থেকে একটি আলপনা বের করে কুহুকে বলল,,

--" এটা কববা। সুলদর না?"

কুহু অদ্রির গালে চুমু খেয়ে বলল,,

--" ওকে আম্মু!"

কুহু সেই ডিজাইন করছিল।বড় মামির কথায় সে বলল,,

--" আচ্ছা বড় মামি!"

কুহু টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে দেখলো ইউসুফ কিছু একটা ফোনে পড়চ্ছে খুব গভীর মনে। সে কি খাচ্ছে সে দিকে খেয়াল নেই তার। কুহুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। সে পা টিপে রান্না গরে গিয়ে কাঁচা মরিচের বাটি নিয়ে হাজির হয় আবার। কুহু একটি  কাঁচা মরিচ রাখলো ইউসুফের প্লেটে। ইউসুফ খেয়ে নিলো কোনো রিয়েক্ট করলো না। কুহু হা হয়ে রইরো। সঙ্গে সঙ্গে দু চারটে আরো দিলো।  তা খেলো ইউসুফ। কুহু এবার অবাকের শেষ চূড়ায়। এমন ভাবে ঢুকে আছে মনে হচ্ছে ৭ তলা থেকে ফেলে দিলেও তার খবর থাকবে না। এবার কুহু বোম্বাই মরিচ এনে রেখে দিলো।  তা কামড় দিতেই। ইউসুফের কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। সে পানি পানি করতে লাগলো। কুহু হেসে জগ থেকে পানি ঢেলে ইউসুফের সামনে ধরলো। ইউসুফ নিতে গেলেই সরিয়ে নিল। রসিকতার সুরে বলল,,

--" হুশ ফিরলো তাহালে এমপি সাহেবের? আমিতো ভেবেছি আপনার আজ হুশই আসবে না। "

ইউসুফ ঝালে হাসফাস করতে লাগলো। চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে সে হাপাতে হাপাতে বলল,,

--" পানি,  পানি, কুহু পানি দে! প্লীজ!  আহ্ মুখ জ্বলে যাচ্ছে! প্লীজ ফাজলো করিস না! দে"

কুহু দিলো না দুষ্ট বুদ্ধি বাড়লো। সে পানি ফেলে দিল
 ইউসুফ চেঁচালো,

--" কি করলি এটা!  উফ! ঝালে মরে যাচ্ছি! অসভ্য মেয়ে।  ঝালে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে!"

ইউসুফ চিল্লাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। সে ইউসুফের ঠোঁটে দিকে তাকিয়ে আছে।ঝালে লাল ঠোঁট জোড়া আরো লাল হয়ে ফুলে গেছে। কুহুর কাছে ইউসুফের ঠোঁট জোড়া টানচ্ছে। খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কুহু তার ইচ্ছা দমালো না। ইউসুফের কোলার টেনে ধরে ইউসুফের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ইউসুফ নিজেও আঁকড়ে ধরলো। এ মুহূর্তে ঝালে ইউসুফের কোনো হুশ নেই। সে আবেশে কামড়ে ধরলো কুহুর ঠোঁট জোড়া। দুজনেই যেন ভেসে যেতে লাগলো অন্য জগতে..!

এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর ইউসুফ কুহুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কুহু নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে রয়। ইউসুফ রাগে ফুসচ্ছে। কুহুর দিক চোখ গরম করে হনহন করে উপরে চলে যায়।

ইউসুফ যেতেই হেসে দেয়। ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসি। কিছুক্ষণ আগেই এই ঠোঁট জোড়া ছিল ইউসুফের ঠোঁটে ভেবেই শরীরে আলাদা শিহরণ খেলে যায়।

পরক্ষনেই  আজ তার শেষ দিন এ ভেবেই মুড ওফ করে হলে চলে আসে আলপোনা করতে শুরু করে।

সন্ধ্যা হয়ে এলো। মেহমানদের সোমাগোম শুরু। জায়গায় জায়গায় দেখা যাচ্ছে সম বয়সীদের জটলা। কোথাও আন্টিদের, কোথাও নানু-দাদুদের, কোথাও আঙ্কেলদের।আবার ইউসুফ আর রাহুল ভাইয়াদের মতো পাঞ্জাবি পড়েছে হোয়াইট কালারের। বেশ রমরমা পরিবেশ।  এক সাইডে ফুড জোন। তো অন্য সাইডে ড্রিংক্সিং জোন!তখনি...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন