অচেনা অতিথি - পর্ব ৩০ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


সামনে রাখা লাউয়ে ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে কয়েকটা একইভাবে ছুড়ি বসিয়ে দিল তিতির। আর মুখে শুধু একটা কথায় শোনা গেল, পাপ বাপকেও ছাড়েনা।

কুসুম আর দাড়িয়ে থাকার সাহস পায়নি। সোজা রুমের ভিতর এসেই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে কাঁপতে থাকে। ভাবী রেজওয়ান ভাইকে এভাবে কোপাইছে? নাহ্ এটা কখনোই সম্ভব নয়। কারন ভাবী একবারের জন্যও বাসা থেকে বের হয়নি। তাহলে কেমনে কিভাবে সম্ভব?

লাবীবা আর রজনী খবরটি শোনার সাথে সাথে হসপিটালে চলে গেলে। এসে দেখে সত্যিই রেজওয়ানের অবস্থা খুব খারাপ। শুধু জিবন প্রদ্বীপটা নিভু নিভু করে জ্বলছে। রেজওয়ানের এমন অবস্থায় কামরান সাহেবের ভিতটাই যেন নড়ে গেছে। বড় কোন বিপদ আসছে। যেটা রেজওয়ানের মাধ্যমে শুধু মাত্র নমুনা দেখিয়েছে। আল্লাহ্ রক্ষা করো আমার বংশধরদের। তিনি নিজেও এসেছেন রেজওয়ান কে দেখতে। পায়ের অবস্থা শেষ করে ফেলেছে। জিবনে হাটতে পারবে কিনা সেটাও বলা মুশকিল। বাবাহীন ছেলেটাকে নিজের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন তিনি। আর আজ তার এই পরিনতি। মেনে নিতে পারছেন না কামরান সাহেব। চোখ দু'টো ভিজে গেল তার। সব রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তিনি বাড়ি ফিরলেন। বাসায় ফিরার সাথে সাথেই দুই ছেলেকে কল দিলেন। যে যেখানেই থাক না কেন দ্রুত বাসায় ফিরুক। জরুরি একটা কথা আছে।

মাহাদ আর ফুয়াদেরও আসতে বেশ সময় লাগলো না। বাসার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। তিতির আর নিসা বাদে বাসার সবাই রেজওয়ানের কাছে গেছে।

গম্ভীর মুখে কামরান সাহেব সোফায় বসে আছেন। কাজের লোকটা সামনের টেবিলে এক কাপ চা দিয়ে গেলেন। কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। মাহাদ আর ফুয়াদও চুপচাপ করে বসে আছে। নিঃস্তব্ধতার মোড়ক ভেঙ্গে কামরান সাহেবই প্রথমে মুখ খুললেন। আমি যা বলছি মনযোগ দিয়ে শোন। তোমাদের এমন কোন বিরোধী প্রতিপক্ষ আছে যারা তোমাদের উপর ভিষন রেগে আছে এবং এই পরিবারের ক্ষতি চায়?

ফুয়াদ অনেকক্ষন ভেবে বলল-

~" বাবা, আমি সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্কই রাখি। কিছু বছর আগের ঘটনা ঘটার পর থেকে খুব বেশি রিস্কের কাজ করিনা। আমার তেমন কাউকে মনে পড়ছেনা।"

কামরান সাহেব মনযোগ দিয়ে সব কথা শুনে বলল-

~" মাহাদ আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। তোর কি এমন কাউকে সন্দেহ হয় যে রেজওয়ানের এমন অবস্থা করেছে?"

মাহাদ নিজেও হতবাক হয়ে গেছে রেজওয়ানের এমন পরিনিতি দেখে। হঠাৎ মনে পড়লো সেই লোকের কথা যে কয়েকদিন ধরে মুঠোফোনে মাহাদ কে বার বার হুমকি দিয়ে চলছে। বাবাকে বিষয়টি কি জানাবো না জানাবোনা,সেটা ভেবেই চলছে মাহাদ। লোকটির পাওয়ার আছে বলতেই হয়। তাছাড়া এত দ্রুত এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো কিভাবে?

মাহাদ প্রথম থেকে শেষ অবদি সব কিছু ওর বাবা আর ফুয়াদকে খুলে বলল। সাথে আরও বলল-

~" পানি যেদিকে রেজওয়ান ছাতা ধরে সেদিকে। আমাদের শত্রুর সাথে ওর আগে থেকেই বন্ধুত্ব থাকে। গিয়ে দেখেন কোন সমস্যা হয়েছে যার জন্য রেজওয়ানকে ওদের পথ থেকে এভাবেই হটিয়েছে। ও তো কম ধন্দুর বাজ লোক না।"

মাহাদের কথা কামরান সাহেবের ভালো লাগলোনা। হাজার হোক আপন ভাগিনা সে। ছোট থেকে নিজের ছেলেদের সাথে মানুষ হয়েছে। বাবা নেই বলে নিজ ছেলেদের থেকে ওকেই বেশি আদর দিয়ে কাছে কাছে রাখতেন। এখন সে জিবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সেই মুহুত্বে এমন কথা না বললেই কি নয়?

কামরান সাহেব ফোন বের করে তার ব্যাক্তিগত পিএ কে কল দিয়ে বলল-

~" হালিম একটু খোঁজ নাওতো! দক্ষিনের টেন্ডারটা এর আগে কে কে পেয়েছিল।"

অপরদিক থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো-

~" স্যার পরপর ৩বার একই লোক এই টেন্ডার পেয়েছে বকুল বিশ্বাস নামে এক উচুমানের বিজনেস ম্যান।"

কামরান সাহেব কল কেটে দিয়ে সব জানাতেই মাহাদের টনক নড়লো এবার। সে ভেবেই দেখেনি বিষয়টি। সে দ্রুত কল করে একজনের কাছ থেকে বকুল বিশ্বাসের সমস্ত বিষয়ে খোঁজ নিলো। ডাইনিং রুমেই ঘন্টা দুয়েক নানা পর্যালোচনা করে ৩জনেই হয়রান হয়ে গেল। কিন্তু পিছনের ব্যাক্তিটিকে খুজে পেলোনা। কামরান সাহেব দুই ছেলেকে অনুরোধ সহকারে বলল-

~" সাবধানে থাকিস তোরা। বাঁকিটা আমি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।"

কথাগুলো বলে কামরান সাহেব উঠে গেলেন। মাহাদও নিজের রুমে এসে দেখলো তিতির নেই। পুরো রুম সহ সব কিছু খুঁজে দেখলো সে নেই। মাহাদ দ্রুত নিচে নেমে কুসুম কে ডাকতে লাগলো। কুসুম মাহাদের কন্ঠ শুনে দরজা খুলে মাহাদের সামনে এসে দাড়ালো। কুসুমের চোখে মুখে একরাশ ভীতি দেখে মাহাদ ভ্রু কুচকে বলল-

~" তিতির কোথায়?"

ভাইজান আমি এই বাসায় আর কাজ করতাম না। আমি এখানে থাকলে বেশি দিন লাগবেনা মারা যেতে। ভাবীই আমাকে মেরে ফেলবে। কথাগুলো বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো কুসুম।

~" ফালতু কথা বাদ দে। তোরে এখানে কেন রাখা হয়েছে? তিতিরের বিষয়ে সব কিছু লক্ষ্য রাখার জন্য তাইতো! সেটা পালন না করে এসব কি বলিস? আগে বল তিতির কোথায়!"

মাহাদের ধমক খেয়ে কুসুম বড়সড় ঢোক চিপে বলল-

~" ভাবীর ভাব সাব ভালো নয়। রুমের ভিতর দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কি যেন করেছে। আর ওনার যা চাহোনি! মরা মানুষ জিবিত হয়ে যাবে ঐ চাহোনি দেখে। কেমন করে যেন তাকায়। আমার খুব ভয় লাগে।"

কুসুমের কথায় মাহাদ অত্যান্ত বিরক্ত হয়ে বলল-

~" তোর সব কথা পড়ে শুনবো। আগে বল তিতির কোথায়?"

এমন সময় তিতির এসে পিছন দিক থেকে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে চুপ হয়ে রইলো। মাহাদের পুরো শরীরে যেন ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। তিতিরকে সে কোনদিনই ভয় পায়নি। কিন্তু আজ ওকে অন্যরকম লাগলো। অখুশিও না আবার খুঁশিও না এমন চেহারায় ভাব এনে তিতির দাড়িয়ে আছে মাহাদের সামনে। কিছু সেকেন্ড আগে মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে ওর সামনেই এসে দাড়িয়েছে। তিতিরের পিছনে সাদও দাড়িয়ে আছে।

সাদকে কোলে তুলে নিয়ে কুসুমকে ওখানে রেখেই মাহাদ ওর রুমে চলে এলো। পিছনে পিছনে তিতিরও এলো। মাহাদ ওর ব্লেজারটা খুলেই সাদকে জিঙ্গাসা করলো-

~" বাবা, মাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে?"

আমরা তো রজনী দিদার রুমে ছিলাম বাবা। কথাগুলো বলেই মায়ের দিকে তাকালো সাদ।
মাহাদ আর কিছু জিঙ্গাসা না করে সাদকে বলল-

~" কুসুম আন্টিকে গিয়ে বলো খাবার রেডী করতে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।"

সাদ চলে যেতেই মাহাদ দরজা বন্ধ করে দিয়ে তিতিরের দিকে চাইলো। তিতির সেই স্থিরভাবেই দাড়িয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছেনা। মাহাদ ওর পাশে এসে শান্ত গলায় বলল-

~" কিছু খেয়েছ বউ?"

তিতির শুধু মাথা নাড়িয়ে না বলল। মাহাদও আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে গেল। এর ফাঁকে তিতির রুম থেকে বের হয়ে কুসুমের কাছে গেল। কাজের কিছু লোক থাকায় কুসুম এবারের মত ভয় পাওয়া থেকে রক্ষা পেল।

এদিকে মাহাদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তিতিরকে দেখতে না পেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ডাক্তারের কাছে কল দিল। তিতিরের ব্যাপারে সব কিছু ডাক্তারকে খুলে বলতেই ডাক্তার বলল-

~" মাহাদ তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে। আমার মনে হয় তোমার স্ত্রীর কন্ডিশন আরো খারাপ হতে চলেছে। ওকে চোখে চোখে রেখ।"

মাহাদের চোখ দুটি উপচে পানির ধারা বয়ে গেল। কল কেটে দিয়ে নামাযে দাড়িয়ে পড়লো। আল্লাহর কাছে সাহার্য্য চাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। মাহাদ দু'হাত তুলে মোনাজাত ধরলো,

 হে আল্লাহ্ আমার রব, আমার স্ত্রীকে সুস্থতা দান করুন। আমার অনেক পরীক্ষা নিয়েছেন, আর কোন আঘাত দিয়েন না। আমি আমার স্ত্রী ছাড়া অসম্পূর্ন। আমার ছোট ছেলেটার মুখের দিকে চেয়েও না হয় তাকে ভালো করে দেন। আমি জানি আপনি পরীক্ষা ছাড়া কোন বান্দাকে মুত্তাকীদের অন্তভুক্ত করবেন না। আমার সকল কষ্ট আর দুঃখকে সহনশীল করে দেন।
অামীন


তিতির কোরাল মাছের ফ্রাই করে রেখেছিলো। সবগুলো পুরে গেছে। তবুও ঐগুলোই নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হওয়ার সময় নান্নুর মায়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত থেকে বাটিটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেল। 

নান্নুর মায়ের দিকে চোখ পাকিয়ে আবার রান্না ঘরে চলে গেল তিতির। এমন সময় বাসায় ফিরে সবাই। রুপালী আর মৌ রেজওয়ানের কাছে রয়ে গেছে। আগের তুলনায় রেজওয়ান একটু রেসপন্স করছে। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। কিন্তু সারা জিবন হুইল চেয়ারেই মনে হয় কেটে যাবে তার জিবন। 

সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নেমে এসে দেখলো তিতির ফ্লোর থেকে পোড়া মাছের ফ্রাইগুলো বাটিতে তুলছে। 
নিসা ভ্রু কুচকে বলল-

~" আল্লাহ্ জানে এই অখাদ্য খাবার গুলো ও কাকে খাওয়াতো। পড়ে গেছে বেশ হয়েছে।"

সবাই বসে পড়েছে খাবার টেবিলে। মাহাদের আসতে লেট হলো। মাহাদ নিচে নামতেই তিতির বাটি নিয়ে গিয়ে হাসি মুখে বলল-

~" বর আপনার জন্য মাছের পপকর্ন ভেজেছি, খাবেন?"

বাটিতে কালো কালো পুরে যাওয়া মাছের ফ্রাইগুলো দেখে মাহাদ কি বলবে ওকে সেটা ভেবেই পেলোনা। কামরান সাহেব সহ ফুয়াদ আর সম্রাট তিতিরের দিকে চেয়ে রইলো। সবাই আবারও নিশ্চিত হলো তিতিরের মাথার সমস্যা বেশ বড় ধরনেরই হয়েছে।

এতো ব্যস্ততার মধ্য দিন শেষে যে একটু শান্তিতে খাবার খাবো তারও উপায় নেই। এখানে এলেই তার নাটক দেখতে দেখতে হয়রান হয়ে যেতে হয়। কথাগুলো বলেই রুমকি ওর প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো।

এদিকে মাহাদ তিতিরকে বুঝানোর চেষ্টা করলো এসব খাবার খেতে নেই। খেলে পেট খারাপ হবে। কিন্তু তিতির শুনতে নারাজ। এটা মাহাদকে খেতেই হবে। তিতির কোনদিনও এমন জেদ ধরেনি। আজ ওর এমন জেদ ধরা দেখে মাহাদের চোখে পানি চলে এলো। সবার সামনে চোখের পানি মুছে তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কিছু বলতে গিয়েই ওর গলা ধরে এলো। তবুও নিজেকে সংযত করে বলল-

~" আমি খাচ্ছিতো। এই দেখ আমি খাচ্ছি। এবার তুমি খুশি তো!"

কথাগুলো বলেই ঐ অখাদ্যগুলো মাহাদ নিজের মুখে পুরে দিয়ে মুচকি হেঁসে আবার বলল-

~" বাহ্ আমার বউ তো খুব মজার পপকর্ন বানাইছে।"

আপনার ভালো লেগেছে বলেই তিতির ছোট বাচ্চাদের মত হেঁসে উঠলো। 
তিতিরের এমন আচরন দেখে ফুয়াদের চোখে জল এলো। ও চেয়ার ছেড়ে উঠতেই নিসা বলল-

~" এই একদম উঠবানা। তুমিও কি ফ্লোরে পড়া ওসব নোংরা খাবার খাবে নাকি!"

ফুয়াদ কোন কথা না শুনে ছোট ভাইয়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল-

~" আমাকে দিবা না তিতির? "

ফুয়াদের এমন কথা শুনে তিতির খুশি হয়ে বাটিটা ফুয়াদের দিকে এগিয়ে দিল। ফুয়াদও সেখান থেকে একটা ফ্রাই মুখে নিয়ে মুচকি হাসি দিলো। ফুয়াদের দেখা দেখি কামরান সাহেব নিজেও চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে খাবার মুখে পুরে দিয়ে বলল-

~" মা, আমিতো এত ভালো খাবার কোনদিনও খাইনি।"

সম্রাটও এসে একই কাজ করলো। ওরা চারজন মিলে সব খেয়ে ফেলল। মাহাদ বাটিটা হাতে নিয়ে তিতিরের হাত ধরে খাবার টেবিলের দিকে নিয়ে গেল। তারপর ওকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসলো। 
বাসার সবাই খুশি না হলেও এই চার পুরুষ খুশি মনে সব মেনে নিল। সামনে বাগদা চিংড়ির ফ্রাই করা আছে। সাদ এর মধ্য চিংড়ির একটা খোলস খুলে মায়ের প্লেটে রেখে দিয়েছে। যাতে মাকে কষ্ট করে সেটা খুলতে না হয়। মাহাদ ছেলেকে খাবার খেতে বলে নিজেই সব কিছু  রেডী করে তিতিরকে দিল খেতে।

তিতির হাসি মুখে খাচ্ছে। বাতাসি কিছু বলতে গিয়েও আর কিছু বললোনা। কিন্তু মাহাদকে লক্ষ্য করে কামরান সাহেব বলল-

~" মাহাদ তার পরিচয় পাওয়া গেছে। পার্থ রায় ছেলেটির নাম।"

মাহাদ ভ্রু কুচকে চাইলো বাবার দিকে। বাবাকে কিছু একটা ইশারা করতেই কামরান সাহেব থেমে গেল। মাহাদও দ্রুত খেয়ে তিতিরকে নিয়ে রুমে গেল। সাথে সাদও চলে গেল।


প্রায় ১ঘন্টা পর মাহাদের রুমে কামরান সাহেব আর ফুয়াদ ঢুকলো। তিতির ঘুমিয়ে পড়েছে। মাহাদ এখনো তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মায়ের পাশে নিজের জায়গা করে সাদও ঘুমিয়ে পড়েছে। গোলাবও সোফায় গিয়ে শুয়ে আছে। কামরান সাহেব মাহাদকে ইশারা করে বলল ব্যালকোনিতে যেতে। 

মাহাদ বাবার কথা শুনে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল-

~" বাবা যা বলবেন এখানে বলেন। আমি উঠে গেলেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে।"

ফুয়াদ দু'টো চেয়ার মাহাদের সামনে এনেই বাবাকে বসতে বলে নিজেও বসে পড়লো। কামরান সাহেব বসে গম্ভীর মুখে বলল-

~" তুই কি জানিস তোর পিছে কে লেগেছে?"

মাহাদ বিশ্মিত হয়ে বলল-

~" কে?"

পার্থ নামের একজন ইয়াং বিজনেসম্যান। ছেলেটি বাংলাদেশের ছেলে কিন্তু ইন্ডিয়াতে বসবাস করতো। কিছু মাস হলো এ দেশে এসেছে। পৃথিবীর প্রায় ৬৮ দেশের সাথে ওর বিজনেস চলে। একাধিক দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে। ইন্ডিয়ার বড় বড় নেতাদের সাথে ওর উঠা বসা। খুব ডেঞ্জারাস ছেলেটি। কেন ওর সাথে লাগতে গেছিস? আর তুইতো জানিস বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমার সমস্যার জন্য তাদের সাথে তো আর সম্পর্ক নষ্ট করবে না সরকার। তোর টেন্ডার নিয়ে ওর সাথে আর ঝামেলা করতে হবেনা। ওটা ছেড়ে দে। কত টাকা লাগবে আমাকে বল। সব ব্যবস্থা করে দিব আমি। 

বাবার এমন কথা শুনে মাহাদ ক্ষেপে গিয়ে বলল-

~" ভয় পাচ্ছেন বাবা! ও এখন বাংলাদেশে আছে না! সে এখন এই দেশ থেকে একবার বের হয়েই দেখাক না! থাবা মেরেই ওর কলিজা টেনে ছিড়ে বের করবো। আমার দেশে এসে আমারই সাথেই  লাগে! ও জানেনা, একটা বাঘও অচেনা জায়গায় এসে বিড়াল হয়ে চুপচাপ বসবাস করতে হয়!"

ছেলেকে বেশ জোড়েই একটা ধমক দিল কামরান সাহেব। তিনি চড়া গলায় বললেন-

~" সব জায়গায় রক্তের গরম দেখালে হয় না। তুই যে সব কাজে সাফল্য পাবি সেই গ্যারিন্টি কি আমাকে দিতে পারবি? আমার তো ভয় এখন ফুয়াদ কে নিয়ে। ঐ ছেলের যা অতীত রের্কড তাতে ওর হাত থেকে ছাড়া পাওয়া বেশ কঠিন। পারলে ওর সাথে কথা বলে মিটমাট করে নে।"

~" অসম্ভব! আমি কোন অন্যায় না করে তার কাছে কেন সমঝোতা করবো! আমি তো আর অবৈধ পথে কাজটা পাচ্ছিনা। তাহলে কেন তাকে কল করে আমার পথ থেকে সরে দাড়াবো! আমার দ্বারা এসব করা সম্ভব নয়।"

তিতিরকে আজ বড্ড মিস করছি। ও ভালো থাকলে কখনো তোকে এসব পথে যেতে দিতোনা। কেন এমন পাগলামি করছিস? ওটা অতিথীর নাম দিয়ে শুরু করেছিস বলে? একটা হয়নি অন্যটা দিয়ে হবে। তবুও এসব ঝামেলায় নিজেকে জড়াস না ভাই। বাবার মত মানুষ এর সমোঝতা চাচ্ছে তাহলে বোঝ তোর সিদ্ধান্তগুলো কতটা মারাত্বক। এমন করিস না ভাই কথাগুলো বলে মাহাদের হাত ধরলো ফুয়াদ। 

তবুও ভাইয়া বলতেই মাহাদকে থামিয়ে দিলো ফুয়াদ। দেখ, আজ যদি রেজওয়ানের জায়গায় তিতির, সাদ কিংবা আমি থাকতাম তাহলে তোর ভালো লাগতো! আর তিতির এখন অসুস্থ। আগে ওকে সুস্থ করে তোল। তারপর সব বিষয়ে চিন্তা করা যাবে।

ফুয়াদের কথা শুনে কামরান সাহেব এবং মাহাদ দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। কথাগুলো ফুয়াদ মিথ্যা বলেনি। তিতিরের যা অবস্থা তাতে ওকে যদি কেউ অতিথীর নাম বলে ডাকে তাহলে ও সহজেই তার কাছে যাবে। একবারও নিজের চিন্তা করবেনা। ভাববেওনা সেখানে তার জন্য কোন বিপদ রয়েছে কিনা?

এই ৩পুরুষ যখন তিতিরের সেভটি  নিয়ে চিন্তিত তখন তিতির ছোট বাচ্চাদের মত মাহাদের কোমড় জড়িয়ে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমে মগ্ন। কিন্তু এই তিনটি পুরুষ জানেনা সেই পার্থ রায়ের লাগাম এই ঘুমন্ত নারী তিতিরের হাতেই বাঁধা রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন