আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২০ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


রক্তাক্ত তিতিরের যতটুকু শক্তি ছিল ততটুকু দিয়েই মাথা তুলে একটু দেখতে চাইলো, তার প্রিয় মানুষ ঠিক আছে কিনা! কিন্তু সেই সুযোগটাও আর পেলনা............

প্রাইভেট কার হতে একটি মেয়ে জানালা দিয়ে শুধু পিছন দিকে চাইলো  তারপর ঝরের গতিতে চলে গেলো গাড়িটি।

চারপাশে কিছু মানুষ ভিড় জমিয়েছে  তিতিরের সামনে। কিন্তু কেউ সহসায় এগিয়ে যাচ্ছেনা।


এদিকে মাহাদের কপালে খানিকটা চোট লেগেছে। সেখান হতে রক্ত পড়ছে। গাড়ীর সামনের দিকে শেষ।

 একটা আক্সিডেন্ট হলো তবুও কেউ গাড়ীর সামনে এলোনা! আচ্ছা পাবলিক তো! আর তিতির কই! ওর তো এতক্ষন চলে আসার কথা। আমার লাইফের  থেকে ওর রাগটাই বেশি হয়ে গেলো?


দুর থেকে দৌড়ে আসছে দিপু সহ আরও কয়েকটা ছেলে। কাছে এসে স্থির হয়ে গেলো দিপু। কিছুক্ষন আগেই মেয়েটা ভালো ছিল এর মধ্যই এতকিছু ঘটে গেলো! দিপুর দুই ফ্রেন্ড গাড়ি থামাতে ব্যস্ত। হসপিটালে নিয়ে যেতে হবেতো! তাছাড়া মেয়েটাকে বাঁচানো যাবেনা। 


সবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মাহাদ বের হয়ে আসলো গাড়ী থেকে। সামনে কিছু ঝটলা দেখে বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা শুরু করে দিলো। কয়েকজন ছেলে গাড়ী থামাতে ব্যস্ত। মাহাদ দৌড়ে রাস্তার ঐ পাশ থেকে এপাশে চলে আসলো। মনে হাজারো ভয় নিয়ে ভিড় ঠেলে গিয়ে তিতিরকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখলো। যে মাহাদ কোনদিনও তিতিরের চোখের জল পর্যন্ত সহ্য করেনা আর সে কিনা চোখের সামনে দেখছে ওকে রক্তাক্ত আবস্থায় পরে আছে। মাহাদ দিশেহারা হয়ে পড়লো। তিতিরকে কোলে তুলে নিয়েই রাস্তার এপাশে চলে এসে গাড়ীতে তুললো। সবাই শুধু চেয়েই আছে কিন্তু কেউ সাহার্য্য করছেনা। এমনকি দিপুর আর সাহস নেই ওখানে গিয়ে সাহার্য্য করার।

মাহাদ গাড়িতে স্টার্ট দিয়েই হসপিটালে চলে গেলো। মাহাদ খুব ভালো ড্রাইভিং পারে তারপরও অধিক টেনশনে একবার অন্য গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেতে খেতে আর খেলোনা। এক হাতে ড্রাইভ করছে আর অন্যহাতে ফোনটা বের করে ডাক্তার রফিক সাহেবকে কল দিলো। যাতে আগেই সব কিছু ঠিক করে রাখে। মাহাদ তিতিরের দিকে তাকাতে পারছেনা। তাকাতে গেলেই বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অনরবত পানি ঝরছে। 

হসপিটালের সামনে এসে গাড়ী থামাতেই ডাক্তার ছুটে এলো। মাহাদ তিতিরকে নামিয়ে ওদের হাতে তিতিরকে সপিয়ে দিয়ে তিতিরের পাশে যেতে লাগলো। একজন পুরুষ ডাক্তার তিতিরের হিজাব খুলতে ওর গায়ে হাত দিতেই মাহাদ জোড়ে একটা ধমক দিলো। নার্স থাকার সত্তেও আপনি কেনো ওর গায়ে হাত দিবেন! নার্সরা কি মরে গেছে! না এই হসপিটালে কোন নার্সই নেই!


মাহাদের ধমক খেয়ে ডাক্তার তিতিরের কাছ থেকে সরে গিয়ে নার্সকে ইশারা করতেই নার্স তিতিরকে সোজা এমারজেন্সি রুমে নিয়ে গেলো। 
মাহাদ বাহিরে দাড়িয়ে রয়েছে। মাহাদ আল্লাহর নাম ডাকা অবদি ভুলে গেছে। পাশের এক নার্স অন্য একটা পেসেন্টের গার্জিয়ান কে বলছে," আল্লাহ কে ডাকুন খালাম্মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। কথাটি শুনে মাহাদের হুস ফিরে আসলো। আল্লাহ্ আমার তিতিরটাকে সুস্থ করে দাও। মাহাদ ফোনটা বের করে ওর বড় ভাই ফুয়াদকে কল দিলো। ফুয়াদকে এখানে আসতে বলে কলটা কেটে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। 


ফুয়াদ সব কাজ ফেলে এসে মাহাদের কাছে আসলো। এসে দেখলো মাহাদ চুপ করে এক ধ্যানে ওটির দরজার দিকে তাকিয়ে রইছে। মাহাদের এমন চাহোনি দেখে ফুয়াদ প্রচন্ড কষ্ট হলো। এত বড় একটা আঘাত সহ্য করে মাহাদ চুপ করে বসে আছে স্থির ভাবে। কেউ তার পাশে নেই। 
ফুয়াদ দেরি না করে মাহাদের কাছে যেতেই মাহাদ ওর ভাইয়ের দিকে চাইলো অসহায়ের মত করে। মনে হচ্ছে মাহাদের সব স্বপ্নগুলো ধংস হওয়ার পথে।
মাহাদ চিন্তা করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে ভাই। এতবড় বড় দুর্ঘটনা কিভাবে হলো।


মাহাদ কথা বলতে পারছেনা। কথা গলায় আটকে গেছে। অনেকক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল," আমার কারনে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি যদি কাজটা না করতাম তাহলে ও রাস্তা পার হতে আসতো না। আর এমন কিছুই ঘটতোনা।


ফুয়াদ সব শুনে বলল," আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ঐ নির্জন রাস্তায় এতবড় একটা এক্সিডেন্ট হয় কিভাবে? নিশ্চয় এর ভিতর কিছু একটা ঘ্যাপলা আছে।"
বাসায় কল দিয়ে জানাইছিস?


প্রয়োজন বোধ করিনি। কারন তিতিরের জন্য আফসুস করার মত মানুষ ঐ বাসায় কেউ নেই। (মাহাদ)


তারপরও জানানো উচিত। আমি এদিকটাই দেখছি তুই বাসায় কল দে। একদম দুঃশ্চিন্তা করিসনা। ফুয়াদ ডাক্তারের কাছে গেলো আর মাহাদ ওর মাকে কল দিলো।

ঃ-" হ্যাঁ মাহাদ,  কই তুই বলতো! তোর দাদী কই গেলো এখনো পর্যন্ত আসলোনা। ডাইভার কে সাথে নিয়ে গেছে সেও আসেনি। আর শোন, তিতিরের তো এতক্ষনে বাসায় আসার কথা সেও আসেনি। সবাই যদি এমন করে তাহলে টেনশন হয়না! তুই একটু তিতিরের খোঁজ নিয়ে বলতো!

ঃ-" মা তিতিরের এক্সিডেন্ট হয়েছে। ও হসপিটালে আছে বলে হসপিটালের ঠিকানা দিয়ে কলটা কেটে দিলো।

মাহাদের কথা শুনে লাবীবা চমকে উঠলো। ভালো মেয়ে বাসা হতে বের হয়ে গেলো আর এখন শুনছে ওর এক্সিডেন্ট হইছে। লাবীবা চিৎকার দিয়ে বাসার সবাইকে ডাকলো। 

রুপালী এসে বললো," কি হইছে! এত চিৎকার দেস কেনো? 


আপা তিতিরের এক্সিডেন হয়েছে। ভালো মেয়েটা কলেজ গেল আর এখন শুনছি এসব কথা। পরের মেয়ে কি হতে কি হয়ে যায় আল্লাহ্ ভালো জানে। আপনি যাবেন কিনা জানিনা আমি যাচ্ছি এখুনি বলেই লাবীবা উপরে চলে গেলো।

 
কার কি হচ্ছে বুঝা যাচ্ছেনা কিন্তু মৌ কেঁদেই চলছে। হাজার হোক তিতির ওর ছোট বোনের মত। মৌ রাতিশাকে নিয়ে ঐ অবস্থায় বাসা হতে বের হলো। এবং সবার আগেই হসপিটালে এসে পৌছে গেলো। 


মাহাদ রক্তাক্ত শার্টটা পড়ে এখনো দাড়িয়ে আছে ওটির সামনে। মৌ ফুয়াদকে চিনে না। মাহাদের সামনে ফুয়াদ কে দেখে মনে মনে বলল উনি আবার কে?"
মৌ মাহাদের কাছে এসে বলল," ভাইয়া তিতির কই!"


ফুয়াদ সেখানে আর এক মুহুত্বও দেরী না করে চলে এলো হসপিটাল থেকে। 
মাহাদ শুধু আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো। 
মৌ রাতিশাকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখলো তিতির কেমন জানি স্থির হয়ে পড়ে আছে। মুখে অক্সিজেনের মার্ক্স দেওয়া রয়েছে। মৌ আর সহ্য করতে পারলোনা। ওখানেই কাঁদতে লাগলো। কি দুর্ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসছিস তুই। এতটুকু সুখও তোর কপালে সইলো না। 

কিছুক্ষনের ভিতর একে একে বাসার সবাই চলে আসলো। আসার সাথে সাথে ট্রাজেডি শুরু হলো। মাহাদ ডাইভারকে কল দিয়ে ওর গাড়িটা নিয়ে যেতে বললো।


তিতিরের ঙ্গান এখনো ফিরেনি। রাত দশটা বেজে গেছে তাই বাসার সবাই চলে গেলো। লাবীবা শুধু মাহাদকে বলল," এই অবস্থায় আর কতক্ষণ থাকবি। বাসায় চল। গোসল করে খেয়ে নিয়ে আবার না হয় আসিস।"
সবাই জানে মাহাদের গাড়ীর সাথে তিতিরের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই সবাই চাইছে বিষয়টা যত দ্রুত ধামাচাপা দেওয়া যায় ততোই ভালো।


মাহাদ রাগে মনে হয় ফেটে পরবে ওর মায়ের কথা শুনে। উচ্চ স্বরে বলল," একটা মেয়ে মরতে বসেছে আর তোমাদের মনে ফুর্তি জাগছে? তোমাদের যা করার করো। প্লিজ আমাকে নিয়ে ভাবতে এসোনা। আমি ঠিক আছি। তোমরা যাও এখান থেকে। তোমাদের আর দয়া দেখাতে হবেনা।"


লাবীবার নিজেরই খারাপ লাগলো। আসলেই তো! ওরা তিতিরকে নিয়ে ভাবছেনা কিন্তু ছেলেকে এখান থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। লাবীবা কিছু না বলে চলে গেলো।


রাত দুইটার পর তিতিরে সেন্স ফিরে আসলো। ঠিকমত তাকাতে পারছেনা মেয়েটা। শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে। আট ব্যাগের মত তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। শরীলটা প্রচন্ড দুর্বল। 
মাহাদকে জানানো হলো তিতিরের ঙ্গান ফিরেছে। ওকে একটা কেবিনে রাখা হয়েছে। মাহাদ আর দেরী করলোনা। তিতিরের কাছে চলে গেলো। এর মধ্য আবার ফুয়াদ নিসাকে নিয়ে হসপিটালে চলে এসেছে। সাথে নিধিও।

মাহাদ  চুপচাপ তিতিরের সামনে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। এক নজরে সে তার প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চোখমুখ কিছুটা ফোলা ফোলা রয়েছে। মাথায় ব্যান্ডেজ। মাহাদ তিতিরের মাঝে ওর ভালোলাগাটা খুঁজেই চলছে। কারন এই মেয়েটা মাহাদের সুখের গোডাউন।


চিয়ার টানার শব্দে তিতির চোখটা খুলতেই ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেলো। সামনে মাহাদকে দেখেই হন্তদন্ত হয়ে উঠার চেষ্টা করলো। ডান হাতটাও ব্যান্ডেজ করা। 

তিতির ভীত কন্ঠে বলল,"আপনি ঠিক আছেন! আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো। তিতির বাম হাত বাড়িয়ে মাহাদ কে ছোয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু মাহাদ খানিকটা দুরে থাকার কারনে আর ছুতে পারলোনা। ছোয়ার আগেই নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে হাতটা পড়ে গেলো। চিনচিনে ব্যাথায় মনে হচ্ছে তিতিরের প্রানটা বাহির হয়ে যাবে।


মাহাদ তিতিরের আরো কাছে গিয়ে বসতেই তিতির ওর দু'হাত দিয়ে মাহাদের কলারটা চেপে ধেরে একটু উঠেই জড়িয়ে ধরলো মাহাদকে। তিতির এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল," বিশ্বাস করেন আপনার গাড়ীটা যখন গাছের সাথে ধাক্কা খেলো, আমার প্রান পাখিটাই উড়ে গিয়েছিলো। আমি যখন গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়ে দুরে ছিটকে পড়লাম তখন ভাবলাম আপনার সাথে হয়ত আমার আর দেখা হবেনা। ওঠার জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম। শুধু আপনাকে একনজর দেখবো বলে। আমি আল্লাহকে বলেছিলাম আল্লাহ্ আমার বরটাকে একবার শুধু সুস্থ শরীরে দেখতে চাই। আল্লাহ্ আমার প্রার্থনা শুনেছে। আমি যতটুকু সময় বাঁচি শুধু আপনার কাছে কাছে থাকতে চাই। আমার ভুল হয়েছে গত রাতে আপনার সাথে রাগারাগি করা। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। তিতির কথাগুলো বলছিলো আর মাহাদের ঘাড়ে গলায় কিস♥ করছিলো।

এর মধ্য রুমে একটা নার্স এসে দেখে পেসেন্ট অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে তাই বাধ্য হয়ে চলে গেলো।


মাহাদ তিতিরের সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নেয়। এত কষ্টের মধ্য নিজেকে শান্ত রেখে সব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সব মানুষের ক্ষমতা থাকেনা। মাহাদ নিজের ব্যালেন্স ঠিক রেখে  তিতিরকে সুয়ে দিয়ে বলল, " তুমি একটু রেষ্ট নাও আমি তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি। "


মাহাদ উঠে যেতেই তিতির বলল, " আপনি আমাকে এখনো ক্ষমা করেননি তাইনা!"
আমি বলছি তো আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন কাজ করবোনা। আমাকে বলুন, আমায় কি করতে হবে। যা বলবেন তাই করবো। তবুও প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন।"


মাহাদ কঠিন মুখে চাইলো তিতিরের দিকে। তারপর বলল," অহেতুক কথাবার্তা কেন বলো তিতির! আমি কি তোমায় কিছু বলেছি? তুমি রেষ্ট নাও বলে মাহাদ চলে যায়।"


মাহাদের চোখ রাঙ্গানি দেখে তিতির ছোট্ট বাচ্চাদের মত চুপ হয়ে গেলো। এখন এই মানুষটাকে তিতির কিভাবে শান্ত করবে সেটাই ভাবতে পারছেনা। একটু পর নার্স এসে রুমে ঢুকলো। নার্স একটা ইনজেকশন রেডী করতেই তিতির বলল," আপু, আমাকে এখানে কে এনেছিলো!


নার্স তিতিরের শরীরে ইনজেকশন পুস করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল," একটু আগে যাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন সেই মহা পুরুষটি আপনাকে এখানে এনেছেন। মানুষ যে এতটা মনের দিক থেকে শক্ত হয় সেটা ওনাকে দেখে বুঝেছি। অসম্ভব শক্তিশালী হৃদয় ওনার।


তিতির এবার ব্যাপক লজ্জা পেয়ে গেলো। ইশ্ ইনি সব দেখে ফেলেছেন। উমহ্ দেখলেতো কি হইছে! আমি কি পরপুরুষকে জড়িয়ে ধরেছি নাকি! আমি তো আমার বরকে জড়িয়ে ধরেছি। তিতির নার্সকে আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে রইলো।

♦♦♦♦♦♦

ফুয়াদ মেয়েকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো আর নিশা মাহাদের জন্য অপেক্ষা করছে। মাহাদ কাছে আসতেই নিসা চোখ কপালে তুলে বলল,," মাহাদ, একি তোর হাল! রক্ত মাখা শার্টটা এখনো পড়ে আছিস!"


পরে কথা হবে এই বিষয়ে। তুই না তিতিরকে দেখতে চাইছিলি! যা ওর সাথে গিয়ে কথা বল। নিধি কই!

তোর বউ আমিকে চিনে নাকি! অচেনা হয়ে কেমনে যাই বলতো! তুই আয় এক সাথে যাবো আমরা। চল তোর সাথে ডাক্তারের কাছে যাই।
মাহাদ আর কোন কথা না বলে ডক্টরের কাছে চলে গেলো। 


ডাক্তর রফিক সাহেব মাহাদের অপেক্ষায় ছিলো। মাহাদ যেতেই রফিক সাহেব বললেন," পেসেন্টের বাঁচার কোন আসায় ছিলোনা। কিন্তু পেসেন্ট নিজে চাচ্ছিলো সে বেঁচে থাকুক। এমন দেখা যায় কোন মা যদি তার সন্তানকে রেখে এই অবস্থায় আসে তাহলে তারা নিজেরাই সেই সময়ের সাথে বাঁচার জন্য লড়াই করে। মনে হচ্ছে এই পেসেন্টও তার প্রিয় জিনিস রেখে অনিচ্ছায় এই পর্যায়ে এসেছে। যাই হোক সেদিকে আপাততো যাচ্ছিনা। মেন পয়েন্টে আসি। পেসেন্টের চোখে সহ মাথার ব্রেনে প্রচুর আঘাত পেয়েছে। আমার তো মনে হয় সে আবার সেন্স  হারিয়ে আমাদের বিপাকে না ফেলে দেয়। যদি এমন ভালো থাকে তাহলে সকালে নিয়ে যেতে পারবেন। আর যদি কিছু হয় তাহলে খুব খারাপ হবে বিষয়টা।

আর একটা কথা মাথায় রাখবেন পরের বার এমন কিছু হলে সে স্পটেই ডেড হবে। আসলে আমি ওভাবে বলতে চাচ্ছিনা কিন্তু এটা না বললে হয়ত পরে সমস্যা হতে পারে।


মাহাদ ছাড়া ফুয়াদ আর নিসা বের হয়ে গেলো। এবার মাহাদ বললো, "  আপনি প্লিজ সব খুলে বলুন আমাকে।"


মাহাদ, পেসেন্টের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আল্লাহ্ যদি চায় তাহলে সে এখান থেকে সুস্থ হতে পারে। তার বাচ্চা হওয়ার ব্যাপারে একটু কনফিউজড হচ্ছি। 
সে পেটে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।  তারপরও কি জানেন তো! আমাদের জানার বাহিরেও অনেক কিছু থাকে।  আমরা না চাইতেও অনেক কিছু হয়ে থাকে। আমি রির্পোট দেখে ডিসিশন দিতে পারছিনা। একটা অনিশ্চয়তার মধ্য রয়েছে পেসেন্ট। বাঁকি আল্লাহর ইচ্ছা। 


ওকে ডক্টর, আমার আর কিছু শোনার প্রয়োজন নেই। ও সুস্থ থাকলেই আমার চলবে। অন্য কিছুতে আমার এত আগ্রহ্য নেই। ওর বাচ্চা হয় হোক না হয় না হোক এতে আমার যায় আসেনা। ও ভালো থাকুক এটাই চাই। আমি তাহলে আসছি বলে মাহাদ মাথা থেকে সব কিছু ঝেড়ে ফেলে দিলো। তারপর বাহিরে এলো। 

নিধি জেগে উঠেছে। সে ভাবতেই পারেনি এখন তার চাচ্চুকে দেখতে পাবে। চাচ্চু বলেই বাবার কোল থেকে নেমে চাচ্চুর কোলে যাওয়ার জন্য ছটপট করতে লাগলো।
মাহাদ নিধির এমন কান্ড দেখে বললো, " মা, আমার শরীর এখন নোংরা, আজ না, পরে তোমায় নিবো।
ফুয়াদ নিধিকে জোড়ে একটা ধমক দিল আর তাতে নিধি চিৎকার দিয়ে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগলো। এত রাতে কান্নার শব্দ দ্বিগুন হয়ে গেলো। শেষে বাধ্য হয়ে মাহাদ নিধিকে কোলে নিলো। তারপর ওরা তিতিরের রুমে যেতেই নার্স চিৎকার দিয়ে বের হলো।

মাহাদ দৌড়ে তিতিরের কেবিনে গিয়ে দেখলো তিতিরের মাথার ব্যান্ডেজ রক্তে ভেঁসে যাচ্ছে। আর তিতির থর থর করে কেঁপেই চলছে। 

মাহাদ নিধিকে নিশার কোলে দিয়েই তিতিরের কাছে এসে চিৎকার দিয়ে বলল," এই তিতির তোমার কি সমস্যা হচ্ছে আমায় বলো। কোথায় কষ্ট হচ্ছে। তুমিতো ঠিক ছিলা তাহলে আবার এমন করছো কেন!


তিতির ওর অজান্তেই মাহাদের হাতটা ধরেই  স্থির হয়ে গেলো। ডাক্তার ততোক্ষনে চলে আসছে। ওকে ওখান থেকে আই সি ইউ রুমে শিফর্ট করা হলো। 
শেষে ডাক্তাররা ওকে বাধ্য হয়ে কারেন্টের শর্ক দিলো। প্রতিটা শর্কে তিতির নড়ে উঠছিলো। এভাবে কয়েকটা শর্ক দিতেই মাহাদ ওখান থেকে সরে আসলো। মাহাদের চোখে এবার পানি দেখা গেলো। 

আরো কয়েকবার শর্ক দিতেই তিতির লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বিছানায় পড়ে গেলো।
ডাক্তারেরা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কিন্তু রক্তের বন মানছেনা। এর মধ্য অনেক ব্লিডিং হয়ে গেছে। ডাক্তার ওখান থেকেই ইনর্ফম করলো রক্তের প্রয়োজন। শেষে মাহাদ আর ফুয়াদ দুজনেই রক্ত দিলো। 

কিন্তু একটু পর আবার তিতিরের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ঙ্গান ফিরার কোন নাম নেই।


মাহাদকে তিতিরের দিক হতে মন সরানোর জন্য ফুয়াদ এবার বোমা ফাটালো। যেটা শুনে মাহাদের মাথায় চড়চড় করে রক্ত উঠে গেলো।


ফুয়াদ বলল," তিতিরের সাথে রিপা নামের মেয়েটার  কথাকাটি হয়। কিন্তু কি কারনে ঝগড়া হয় সেটা কেউ বলতে পারেনি।  তিতির বাসায় ফিরার পথে রিপা ওর পিছু নেয় গাড়ী নিয়ে। তারপর সুযোগের সৎ ব্যবহার করে তিতিরকে চাপা দেয় মারার উদ্দেশ্য। আর বাঁকিটা তো তুই জানিস। আর রিপা কে জানিস! বাবার বন্ধু বকুল আঙ্কেলের মেয়ে। এখন কিছু বলতে গেলেতো সম্পর্কটাই নষ্ট হয়ে যাবে।


মাহাদ রেগে গিয়ে বলল," কিসের সম্পর্ক। তোমাদের সম্পর্ক নিয়ে মাথা ব্যাথা থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। আমার জিনিসে ও হাত দিবে আর ওকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো!  মাহাদ শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। সকাল হতেই থানায় গিয়ে রিপার নামে জিডি করলো। তারপর সোজা রিপাদের বাসায় গেলো। সাথে ফুয়াদও কিছু মহিলা ফোর্স নিয়ে গেলো।


রিপার মা দরজা খুলে দিতেই মহিলা পুলিশ বাসায় ঢুকে বলল," রিপা কোথায়!"

এই আপনারা কারা! এভাবে ভদ্রলোকের বাসায় এসে চিৎকার করছেন কেনো! রিপার মা রিপার বাবা আর ভাইকে চিৎকার দিয়ে ডাকলো।

রিপার ভাই রাশেদ আর বকুল সাহেব নিজেদের কক্ষ হতে বের হলো এলো। ততোক্ষণে ফুয়াদ আর মাহাদ দুজনেই বাসায় ঢুকে পড়ছে।

তিনটি মহিলা পুলিশ গিয়ে ঘুমন্ত রিপার হাত ধরে টেনে হিচড়ে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসলো। রিপা একটা মহিলা পুলিশকে ধাক্কা দিতেই আর একজন মহিলা পুলিশ ঠাস্ ঠাস্ করে রিপার গালে চড় বসালো। মাগী মানুষকে মার্ডার করার প্লান করিস আবার পুলিশের গায়ে হাতও তুলিস!


ফুয়াদ এসব কি হচ্ছে! তুমি রিপার সাথে এরকম ব্যাবহার কি জন্য করছো? রিপার অবস্থা তখন দেখার মত।

ঃ- " স্যরি আঙ্কেল, আপনার মেয়ের নামে চার্জশীট বের হইছে। রাস্তায় তিতির নামে একটা মেয়েকে হত্যা করার উদ্দেশ্যতে  গাড়ী চাপা দেয়। তাই আমি আমার  ডিউটি পালন করছি।"

ঃ-" বাবা, আমি কাউকে মারিনি। ওনারা মিথ্যা কথা বলছে। ভাইয়া আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। রিপা কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলল।

মাহাদ এবার রিপার সামনে আসতেই রিপা ভড়কে যায়। 

মাহাদ হুংকার দিয়ে বলল, "এই মেয়ে এই রক্তের দাগ দেখছো! এটা তিতিরের। তিতির মৃত্যুর সাথে লড়ছে আর তুমি এখানে আরামে ঘুমাও! তোমার ঘুম আমি হারাম ছাড়াবো। এখনো জেলে গিয়ে বাঁকিটা ঘুমিয়ে নিও। দেখি তোমায় কোন শালার ব্যাটা এসে জেল হতে ছাড়ায়।


 মাহাদ মুখ সামলে কথা বলো। তোমার বাবা এসব জানেন! তুমি আমার সাথে বিয়াদপী করছো? (বকুল সাহেব)


বিয়াদপীর দেখেছেন কি! এবার দেখবেন বিয়াদপী কাকে বলে। মেয়েকে শাসন করে মানুষ করতে পারেননি। মানুষ কিভাবে করতে হয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে। মেয়েকে মাস্তানি করার জন্য ভার্সিটিতে পাঠান! ওর মাস্তানি আমি জন্মের মত ছুটাবো। আগে মেয়েকে তারপর পিছনে বাপকেও লটকাবো। প্রয়োজন হলে ওর ১৪ গোষ্ঠীরে জেলের ভাত খাওয়াবো। 

 আপনারা কেন দাড়িয়ে আছেন। ঐ কুলাঙ্গার মেয়েকে নিয়ে যান এখান থেকে।
মাহাদ চলে আসতেই রাশেদ বলল," কাজটা ভালো করলিনা। এর খেসারত তোকে দিতে হবে মাহাদ।"


রাখ তোর খেসারত। তোর অসভ্য বোন কে কিভাবে জেলের ভাত খাওয়া থেকে বাঁচাবি সেটার চিন্তা আগে কর। ওর পুরো লাইফটা আমি হেল করে দিব। কেবল তো সামান্য দেখালাম। তোদের আরও কিছু দেখার বাঁকি আছে।  তিতিরের গায়ে হাত দেওয়ার আগে ওর জানা উচিত ছিলো ও কার গায়ে হাত দিতে যাচ্ছে। ফুয়াদ শেষে মাহাদ কে টেনে নিয়ে চলে যায়।

সকাল দশটা বাজার আগেই পুরো শহর সহ ভার্সিটি জানা জানি হয়ে গেল রিপার কথা। সব কিছু সত্য প্রমাণিত হওয়ার কারনে কলেজ হতে রিপাকে বহিষ্কার করা হলো। এমনকি দেশের কোনো কলেজ প্রতিষ্ঠানে ওর ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ রইলো না। রিপার শিক্ষা জিবন এখানেই সমাপ্তি ঘটে গেলো।

আর ওদিকে রিপার পিঠে  দু'ঘা  পড়তেই তার কুকর্ম মুখ দিয়ে ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বের হলো। এবার রিপার জেল বাঁচায় কিভাবে সেটাও মাহাদ দেখেই ছাড়বে।

রিপার পরিবার পাগলের মত হন্য হয়ে মেয়েকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যেতে লাগলো  কিন্তু কোন লাভই হয়না। এদিকে এখনো তিতিরের ঙ্গান ফিরেনি যে, ওকে বুঝিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করবে।

মাহাদ বাসায় এসে গোসল সেরে নিয়ে আবার রেডী হয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য উপর থেকে নিচে নামছে এই সময় দেখলো বকুল সাহেব আর তার ছেলে রাশেদ মাহাদের বাবা মো.কামরানের সাথে কথা বলছে। এমন সময় রাশেদ বেশ জোড় গলায় বলে উঠলো,"  আমার বোনের লাইফটাই শেষ করে দিয়েছে। আমাদের মান সম্মান সব মিশে দিয়েছে। আঙ্কেল, একটা রাস্তার মেয়ের জন্য মাহাদের এত বড় স্টেপ নেওয়া ঠিক হয়নি।"

রাশেদের মুখ থেকে কথা বলাটা শেষ না হতেই মাহাদ এসে রাশেদের শার্টের কলার ধরে টেনে তুললো।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।