১৫!!
সুপ্তি কিশোর আর তামান্না কাউকেই খেয়াল করেনি। দীপ্তিকে দেখেই ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় ভরিয়ে দেয়ায় ব্যস্ত সুপ্তি। আর সুপ্তিকে এভাবে আদর করতে দেখে কিশোর পুরো থ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তামান্না কি করবে ভেবে না পেয়ে একবার সুপ্তি আর দীপ্তিকে দেখছে আর একবার কিশোরকে। একটু পরেই তামান্না দীপ্তির ব্যাগটা কিশোরের হাতে ধুপ করে ধরিয়ে দিয়ে সুপ্তির কাছ থেকে দীপ্তিকে এক প্রকার টেনে ছুটিয়ে নিলো। তামান্নাকে দেখে সুপ্তি এক প্রকার থতমতই খেয়ে গেল। আর দীপ্তিও ভয় পেয়ে তামান্নার পিছনে গিয়ে লুকালো।
-দীপ্তি? মা মামনির কাছে একবার এসো? প্লিজ? একবার?
-এই যে ম্যাডাম? কে আপনি? দীপুকে এভাবে বিরক্ত করছেন কেন? কালও নাকি এসেছেন। চকলেট দিয়ে গেছেন। কি চাই আপনার?
-ও আমার দীপ্তি। আপনাকে কে বলেছে আমাদের মা মেয়ের মাঝখানে আসতে? সরুন---।
সুপ্তি তামান্নার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই তামান্না দীপ্তিকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে পিছিয়ে গেল একটু।
-খবরদার ওর কাছে আসবেন না। মা? হাহ!! আর একবার দীপ্তির দিকে এগোবার চেষ্টা করলে পুলিশে দিব আপনাকে আমি--। কথাটা মনে রাখবেন---।
কিশোরের হুঁশ হলো তামান্না ওভাবে ব্যাগটা ওর হাতে ধরিয়ে দেয়ায়। তারপরই খেয়াল করলো সুপ্তি রেগে গিয়ে তামান্নার সাথে আরো চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। দীপ্তির স্কুলের গেইটের সামনে ছোটখাটো একটা জটলা পাকিয়ে গেছে ওদেরকে ঘিরে। কিশোর কিছু একটা ভেবে হালকা হাতে তামান্নাকে টেনে নিজের দিকে ফেরালো। কিশোর এভাবে তামান্নার পাশে এসে দাঁড়ানোয় সুপ্তি আর তামান্না দুজনেই কয়েক সেকেন্ড থ হয়ে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিশোরও তামান্নাকে দীপ্তির ব্যাগটা ধরিয়ে দিলো।
-তামান্না দীপুর ক্লাসের লেইট হয়ে যাচ্ছে। তুমি ওকে নিয়ে যাও। আর প্রিন্সিপালের সাথেও কথা বলে নিও। যাতে আমরা ফ্যামেলির লোকজন ছাড়া বাইরের কেউ দীপুকে আর স্কুলে এসে বিরক্ত করতে না পারে। আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি--।
-ওকে--। চলো দীপু সোনা? ক্লাসের দেরি হলে মিস বকবে--। চলো চলো??
তামান্না দীপ্তিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি স্কুল গেইটের ভিতরে চলে গেল। আর সুপ্তি রেগে গিয়ে কিশোরের সামনে এসে দাঁড়ালো।
-এই তামান্নাটা কে কিশোর?
কিশোর কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেই সুপ্তি কিশোরের কলার চেপে ধরলো। কিশোর হাত ঝাড়া দিয়ে সুপ্তির হাতটা ছাড়িয়ে নিলো৷ সুপ্তি কিছুটা দূরে ছিটকে পড়তে পড়তে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে কিশোরের সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ায়।
-তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি কিশোর।
-আমি আপনাকে কোন উত্তর দিতে বাধ্য নই। এন্ড হু দা হেল আর ইউ? কে আপনি যে আপনাকে আমার আনসার করতে হবে?
-আমি তোমার ওয়াইফ কিশোর। দীপ্তির মা। আমাকে আনসার করতে তুমি বাধ্য---।
-হা হা হা। নাইস জোক--। আমার ওয়াইফ? দীপুর মা? তা কোথায় ছিলেন আপনি লাস্ট পাঁচ ছয়টা বছর? এখন এসেছেন অধিকার দেখাতে? হাহ---।
-অধিকারের কি দেখেছ তুমি কিশোর? তুমি যদি ভেবে থাকো আমি নেই বলে তুমি অন্য একটা মেয়েকে আমার সংসার আমার সন্তান দিয়ে দিবে---।
-হা হা হা। হোয়াট? আপনার সংসার সন্তান? কোথায় সেগুলো?? হারিয়ে ফেলেছেন বুঝি? খুঁজে পাচ্ছেন না?
-কিশোর তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের মাঝে কিন্তু ডিভোর্স হয়নি কখনো--। আর আমার অনুমতি ছাড়া তুমি কাউকে বিয়ে করতে পারো না। ওই তামান্নাকেও না---।
-ডিভোর্স হয়নি কজ তুমি নিজের নিউবর্নবেবিটাকে হসপিটালে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলে। তোমার ফিগার মেনটেইন করতে হবে৷ বাচ্চা নিয়ে জীবন নষ্ট করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়--।
-দেখো--। মানছি আমি একটা ভুল করেছি---। কিন্তু এই ছোট্ট একটা ভুলের জন্য তুমি আমার কাছ থেকে আমার মেয়েকে দূরে রাখতে পারতে পারবে না। আর লিগ্যালি---।
-ওয়াও! তুমি আমাকে রুলস রেগুলেশন শিখাচ্ছো? পৃথিবীতে এমন কোন মায়ের উদাহরণ দিতে পারবে নিজের সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ফেলে চলে গিয়ে আবার সন্তান দাবি করতে এসেছে-?
-তুমি সোজা পথে আমার পরিবার আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে না দিলে আমাকে অন্য পথ খুঁজে নিতে হবে কিশোর। যা তোমার জন্য মোটেও সুখের হবে না---।
-সুখটা কি জিনিস সেটা গত ছয়বছরে ভুলে গেছিলাম৷ তাই সুখ কেড়ে নিবে সে ভয় আর করি না--। তোমার যা ইচ্ছে করে দেখতে পারো সুপ্তি---। আমার মেয়েকে আমি তোমাকে মরে গেলেও দিবো না। কোনভাবেই না---।
-এই ভুলটার জন্য তোমাকে সারাজীবন পস্তাতে হবে কিশোর। আমার মেয়েকে তো আমি যে করেই হোক নিজের কাছে আনবোই। সেটা তোমার ইচ্ছেয় হোক বা অন্য বাঁকা পথে---।
-বোকার মতো তোমার মতো একজনকে ভালোবেসে, বিয়ে করে এমনিতেই পস্তাচ্ছি--। একটা জীবনে এর বেশি আর কি পস্তাবো বলো? আর বললাম তো। তোমার যা ইচ্ছে হয় করে নাও---। আমার মেয়েকে কি করে আগলে রাখতে হয় আমার জানা আছে---।
-হা হা৷ তাই নাকি? তা এই নতুনটার কাছে দেখছি অনেক কথাই শিখেছ। কথার খই ফুটছে মুখে। ওকেও দেখে নিবো আমি। আমার কাছ থেকে আমার মেয়েকে আলাদা করার শখ জন্মের মতো ঘুচিয়ে দিবো ওর। আর একটা কথা মনে রেখো। আমার মেয়ে আমার কোলেই ফিরবে। তোমার পেয়ারের ওই তামান্নার কাছে তো ভুলেও নয়----। সৎ মা কেমন হয় সেটা আর আমাকে কষ্ট করে---।
কিশোর কিছু না বলে সুপ্তিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গাড়িতে এসে বসলো। তামান্না দীপ্তিকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে ফিরলে ওকে নিয়েই ফিরবে৷ তাই গাড়িতে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো। সুপ্তিও খানিক দূরে একটা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রাগে কটমট করতে করতে কিশোরের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরেই তামান্নাকে গেইটের সামনে দেখতে পেয়ে কিশোর নেমে তামান্নার কাছে চলে এলো। তামান্নার পিছন দিয়ে দীপ্তি উঁকি দিচ্ছে দেখে কিশোর দীপ্তিকে টেনে কোলে তুলে গালে চুমো খেল।
-কি হয়েছে মামনি? চলে এলে কেন? মিস বকবে তো---।
-আসলে ওর ভালো লাগছে না। তাই প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ওকে আজকের দিনটা ছুটি দিয়ে দিয়েছেন---।
-ওহো! আমার চ্যাম্প মামনিটার কি হয়েছে? তামান্না গাড়িতে বসো--। বাসায় যাই। এখানে আর মিনিটও নয়---।
-আচ্ছা----।
-ব্যাগ পিছনে রাখো। আর সামনে বসো---।
-কিন্তু---।
-কোন কথা না---। দীপুও সামনে বসবে---। কি দীপু??
-ইয়েএএএএ----। আমরা সবাই সামনে বসবো---।
দীপ্তি খুশি হয়ে কিশোরের গলা জড়িয়ে ধরে দু গালে দুটো চুমো খেল। তামান্না একবার কিছুটা দূরে সুপ্তির গাড়িটার দিকে তাকিয়ে দীপ্তির ব্যাগ রেখে গাড়িতে গিয়ে বসলো। কিশোর দীপ্তিকে নিজের পাশে বসাতেই দীপ্তি একলাফে তামান্নার কোলে এসে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের এভাবে লাফালাফি দেখে হেসে ফেললো কিশোর৷ সোজা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি টানলো বাড়ির পথে। আর দীপ্তি তামান্নার সাথে বকবক করে চলেছে পুরোটা সময়।
-জানো মিস? আমি কি ভয় পেয়ে গেছিলাম? তুমি সত্যি বলেছিলে পচা আন্টিটা বোধ হয় ছেলেধরা। আমাকে তোমার আর বাবাইয়ের কা থেকে নিয়ে যেতে এসেছে--। আমহ কি ভয় পেয়েছি---।
-মিস কখনো তোমাকে কাউকে নিতে দিবে না। তাই না দীপুসোনা? ভয় কি? মিস আছি না?
-হুম---। আমার তমা মিস--।
দীপ্তি তামান্নার বুকে মাথা রেখে আবার নিজের মতো করে বকবক চালিয়ে যাচ্ছে। আট কিশোর ড্রাইভ করছে আর ভাবছে। সুপ্তিকে উল্টোপাল্টা যা বুঝিয়েছে সুপ্তি সেটাই বিশ্বাস করেছে৷ কিন্তু এবার সুপ্তি কি করবে দীপুকে নিজের কাছে নেয়ার জন্য? কি বাঁকা পথ বাছবে ও এবার? আর কতোটা নিচে নামবে ও? আর কিশোরইবা কি করবে?
১৬!!
পরের একটা সপ্তাহ সুপ্তিকে আর একবারও জন্যও দেখেনি কিশোর বা তামান্না বা দীপ্তি কেউই। সুপ্তি কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে নয় কথাটা বেশ ভালো করেই জানে কিশোর। তাই একটা চাপা ভয় কাজ করছে ওর মনে। না কাউকে বলতে পারছে না নিজে কোন স্টেপ নিতে পারছে। তাই বেশিরভাগ সময়ই টেনশনে থাকে বেচারা। তবে নিজের জীবনটা অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে এখন কিশোর। আগের মতো প্রতি রাতে মদ খায় না। বলতে গেলে সেসব একেবারেই ছেড়ে দিয়ে নিজের মেয়ে দীপ্তি আর অফিসে সময় দিচ্ছে এখন কিশোর। ঢাকায় না গেলেও নিয়মিত অফিসের ম্যানেজারের কাছ থেকে সব খবরা-খবর নিচ্ছে। সব মিলিয়ে চিন্তায় থাকলেও বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সবার জীবন।
বিকেলে বাগানে চা খেতে খেতে কিশোর এসবই ভাবছিল এমন সময় দারোয়ান একটা রেজিস্ট্রার চিঠি দিয়ে গেল। কিশোর চিঠির খামটা খুলেই পুরো শকড হয়ে গেল। তামান্না দীপ্তিকে নিয়ে বাগানে হাঁটছিল। দারোয়ানের দেয়া চিঠি দেখে কিশোর পুরো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তামান্না কিশোরের দিকে এগিয়ে গেল। তামান্না কিশোরকে কিছু বলবে তার আগেই কিশোরের মোবাইলটা বেজে উঠলো। কিশোর কলটা রিসিভ না করে চুপচাপ থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে দীপ্তি কিশোরের হাত ধরে ঝাড়া দিলো।
-ও বাবাই? কলটা রিসিভ করো না কেন?
-হুম?? হ্যাঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ---।
কিশোর মোবাইলটা রিসিভ করে।
-হ্যালো---।
-হ্যালো মিস্টার কিশোর? তা কেমন আছেন?
-কে বলছেন---?
-এখন আর কণ্ঠটা চিনতেও পারো না? আগে তো আমার নিঃশ্বাসের শব্দটা শুনেও তুমি বলে দিতে পারতে---।
-কি চাই?
-বাহ! আচ্ছা একটা কথার জবাব দাও তো? কি এমন আছে ওই মেয়েটার মধ্যে?
-এটা জিজ্ঞেস করার জন্য আমাকে কল করেছ তুমি?
-আচ্ছা। আমাকে বলতে হবে না। কোর্টেই বলো না হয়। তা কোর্টের নোটিশটা এতোক্ষণে নিশ্চয়ই তোমার হাতে এসে পৌঁছে গেছে?
-----------------------
-কাল হেয়ারিং। আশা করি কাল কোর্টেই দেখা হবে--। অনেক অনুরোধ করেছিলাম তোমাকে--। তুমি তো আর আমার কোন কথাই শুনবে না আর। অন্য কারো রঙে রাঙিয়েছ নিজেকে। আমাকে আর তোমার কি দরকার?
-মুখ সামলে কথা বলো সুপ্তি----।
-তোমার কাছে আমার সামলানোর কিছু কখনোই ছিল না। জানোই তো? আমি যেমন তেমনটাই তোমার সামনে দেখাই। মুখোশ পড়ে চলি না তোমার মতো ভালোমানুষির---।
-ইয়াপ। তাই তো নিজের নবজাতক বাচ্চাটাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে রেখে চলে গিয়েছিলে---।
-আহ!! এক কথা বারবার কেন বলো? তখন তো আরো ছোট ছিলাম। এতোটাও ম্যাচিউর ছিলাম না। তুমি তো বুঝতে আমাকে তখন। এখন----।
-এখন ম্যাচিউর তুমি? তাই নাকি? হাস্যকর!
-হাসো। আমার কি। আমি বুঝতে পেরেছি তোমাদের ছাড়া আমার চলবেই না----।
-বাহ!! মাত্র ছয়বছর পরে বুঝলে যে নিজের ছেড়ে আসা মেয়ে আর সংসার চাও---? ইমপ্রেসিভ!
-খোঁচা দিও না তো। আমি অনেক ভেবেছি তোমার কাছে ফিরবো। আবার চিন্তা করলাম এতো তাড়া কিসের? তুমি তো আছোই আমার জন্য সবসময়---।
-বাহ!! আর??
-কিন্তু তুমি তো----। তুমি নিজের আখের গুছিয়ে নিলে! বাহ! আমার আর আমার মেয়ের কথাটা ভাবলেও না একবারও----।
-ওয়াও!! আমি তোমার কথা ভাবি নি। আচ্ছা তোমার কথা ভাবা উচিত ছিল বুঝি? কি ভাবতাম?
-জানি না। কিন্তু তুমি ওই মেয়েটাকে এনে একদম ঠিক করো নি। আমার জায়গা তুমি অন্য কাউকে দিতে পারো না। কিছুতেই না।
-ওহ! রিয়েলি!? আচ্ছা৷ আপনার জায়গা আমি অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছি? আর ইউ সিরিয়াস?
-আচ্ছা। তুমি দাও নি। আমার কারণেই হয়েছে এসব---। আমি জানি তুমি ওকে বিয়ে করো নি এখনো---৷ তবু কেন খেপাচ্ছ আমাকে এভাবে?
-----------------------
-কিন্তু ও আমার রান্নাঘরে ঢুকে আমার মেয়ের জন্য কেন রান্না করবে? কেন তোমাদের সবার দেখাশোনা করবে ও? কেন তুমি, মা, দীপ্তি সবাই ওর সব কথা চুপচাপ মেনে নিবে? কেন কেন কেন? কে ওই মেয়েটা? সামান্য মাইনে করে রাখা কোন একটা গর্ভনেস---।
-মুখ সামলে কথা বলো সুপ্তি---।
-খুব গায়ে লাগছে না ওই মেয়ের নামে কটু কথা শুনতে? কে হয় ও তোমাদের? উহু--কে হয় ও তোমার?
-কে বা কি সেটা তোমার কাছে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই--।
-একশো বার বাধ্য। হাজার বার বাধ্য। মনে রেখো আমি এখনো তোমার ওয়াইফ। আমার অনুমতি না দিয়ে তুমি অন্য কাউকে তোমার জীবনে আনতে পারো না। কাউকে না কাউকে না----।
-চিৎকার করবে না সুপ্তি।
-১০০ বার করবো চিৎকার। আমি----।
-তুমি আর কিছু কি বলবে? তোমার সাথে অযথা কথা বলে নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই--।
-হুম--। জানি। এখন আমার জন্য সময় থাকবে কেন তোমার? এর জন্যও তোমাকে পস্তাতে হবে কিশোর। ভেবো না এমনি এমনি তোমাকে ছেড়ে দিব----। একবার বাড়ি ফিরতে দাও---।
-দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই৷ তোমার কি মনে হয় আমি আর কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো? অসম্ভব।
-ভেবে বলছো তুমি? আমাকে রিজেক্ট করার ফল কিন্তু ভালো হবে না কিশোর---।
-একবার যে ভুল করে শাস্তিটা ছয় বছর আমি আর আমার পুরো পরিবার পাচ্ছি সে ভুল আবার করবো? পাগল ভাবো আমাকে?
-কিশোর?
-আর কিছু বলবে? আমি উকিলের সাথে কথা বলতে হবে তো?
-হুহ---। বলো কথা৷ কাল হিয়ারিং। কে রাজি হয় দেখো--।
-ইচ্ছে করে কাগজটা লাস্ট মূহুর্তে পাঠিয়েছ তুমি?
-নিজের পরিবারের জন্য যতটা নিচে নামতে হয় আমি নামবো---।
-যত নিচেই নামো না কেন দীপ্তিকেও পাবে না তুমি কখনো। আমাকেও না৷
-সেটা দেখা যাবে--। তবে না পেলেও কি করতে হবে সেটাও আমার ভাবা আছে। ব্যাপার না।
-কি ভাবা আছে-----? কি করবে তুমি?
-ভাবতে থাকো মিস্টার কিশোর? হা হা হা---।
সু্প্তি কলটা কেটে দিতেই কিশোর ধপ করে ওখানেই বসে পড়লো। দীপ্তি আর তামান্না দুজনেই থতমত খেয়ে কিশোরকে ডাকছে। কিন্তু কিশোরের সেদিকে খেয়াল নেই। সুপ্তি দীপ্তির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজে নেয়ার জন্য কাস্ট্রাডি কেইস ফাইল করেছে। আর সেই কেইসের শুনানি আগামীকাল সকালে। কিশোর পাগলের মতো ওদের ফ্যামেলি উকিলকে কল করলো। উনি আউট অফ টাউন হওয়ার পরিচিত আরো ভালো কয়েকজন উকিলের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করলো। কেউ নিজের কেইস নিয়ে ব্যস্ত, আর কেউ লাস্ট মূহুর্তে এমন কেইস নিতে চাচ্ছে না দেখে কিশোর এবার হতাশ হয়ে পড়লো। কি করে নিজের মেয়েটাকে সুপ্তির কাছে চলপ যাওয়া থেকে আটকাবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না কিশোরের।