আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি।। এই নিয়ে পাঁচ, পাঁচ বার গলার সাইডের কাছ থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে ওরনা শরিয়ে দেখলাম।।নাহ্ তখনের ঘটনা টা সত্য ছিল।। কারণ গলার সেই সাইডে উপরে দুটো দাঁত আর নিচের দুটো দাঁত মোট চারটি দাঁতের চিন্হ।।বরাবর তা দেখছি আর ভয়ে ঘেমে একাকার হচ্ছি।।কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।। সারা শরীর থর থর করে কাপনী দিয়ে উঠে তখন কার কথা মনে হতেই।।দম বন্ধ হয়ে আসে।।এ কেমন অনুভুতি।। এবার ওরনাটা ফেলে দিলাম।।সাথে পরনের জামাটা খুলে ফেললাম।।আয়নায় নিজের প্রতিছবি দেখতে পাচ্ছি।।আমার ফর্সা দেহে শুধু সেই লাল দাগ টুকু ফুটে উঠেছে।।মুন্তানিছা আপির গলায় এমন দাগ অনেক বার দেখেছি।।শুনেছি একে নাকি লাভ বাইট বলে।।অথচ আমাকে যে অপ্রত্যাশিত ভাবে এই দাগটি দিয়ে গেল! তার কি নাম হওয়ার কথা?তাকে আর যাই হোক লাভ বাইট বলে না! তাহলে কি বলব? হেইট বাইট??হুহ ভাবতে পারছি না।।বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলাম আমি।।
পরেদিন খুব ভোরে উঠে গেলাম।।নামাজ পরে নিলাম।।কেবিনেট থেকে একটি লাইট পিংক কালার ড্রেস বের করে পরে নিলাম।।যেহেতু আজ অফিসের প্রথম দিন তাই নিজেকে পরিপাটি করতে ব্যস্ত আমি।।তার উপর আমার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব ১ ঘন্টা।। মাঝে জ্যাম পরলে আবার লেট হয়ে যেতে হবে।।যেই ভাবা সেই কাজ ৮.৩০ এ বের হয়ে গেলাম।। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখন মাঝ রাস্তায় আসতেই জ্যামে আটকা পরতে হলোই তখন ঘড়িতে বাজে ৯.১৫।। আর যাই হোক আর ১৫ মিনিটে কোনো ভাবেই পৌছানে সম্ভব না।।লেট হবে।।
অফিসে ঢুকতে ঢুকতে ঘড়িতে দেখে নেই। বাজে ১০.৫ মিনিট।।অফিসের যেতেই মেনেজারের কাছে ঝাড়ি ক্ষেতে হলো প্রথম দিন।।কখনো ভাবিনি এমনও দিন আমবে হুহু।।
মেনেজার বললেন,
-----আপনি এত লেট কেন মিস? জানেন স্যার একদমি পছন্দ করেন না কেউ অফিসে লেট করে আসা।।স্যার নিজেই ৫ মিনিট আগে চলে আসে অফিস আওয়ারের।।স্যারের মত পানচুয়ালিটি মানুষ পৃথিবীতে কমি আছেন।।
লোকটি প্রচুর বাড়তি কথা বলেন।।উনার কথা শুনে মনে হচ্ছেন তিনি বসে খুব ভক্ত যেভাবে তার গুনগান গাইছে তাতে মনে হচ্ছে, স্যার উনাকে টাকা দিয়ে রেখেছেন শুধু তার সুনাম করার জন্য হুহ।।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
---স্যার রাস্তায় জ্যাম ছিল।।
মেনেজার বললেন,
---জ্যাম তো থাকবেই।।ঢাকা শহরে যদি জ্যাম না থাকে তাহলে হবে বড়ই আশ্চর্য জনক ব্যাপার।। কথা হচ্ছে যেহেতু জানি আমরা জ্যাম পরে তো ১০ মিনিট আগে ভাগে বের হলে হতো না মিস!!
বুঝলাম বেটা কথা পেচায় বেশি তাই কিছু আর বললামি না।।
তিনি বললেন,,
----যান তাড়াতাড়ি স্যার ওয়েট করতে আপনার জন্য।।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলাম বসের কেবিনের দিক।। আর নক করলাম।।
সাথে সাথে ওপাশ থেকে ঝংকার ময় চমৎকার একটি কন্ঠ ভেসে আসলো।।
----কামিং।।
ভিতরে ঢুকে বললাম,,
----গুুুডডড মর্নিংংংং স্যার।।
স্যার তখন পিছনে ফিরে ছিলেন।।
আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকালেন।যাষ্ট তার চোখ দুটা দেখ থম মেরে গেলাম।। অজানতেই মুখ ফসকে বের হয়ে গেল,,
----ইউসুফ ভাইয়া!
এবার তিনি মুখের সামনে থেকে ফাইল সরিয়ে বললেন,,
----হোয়াট??
আমি তার চেহারা দেখে নিজেকে সামলে নিলাম কারণ ইনি ইউসুফ নন।। নিজের মাথায় চাপর মেরে বললাম,,
----কিছু না স্যার।।
স্যার বললেন,,
---লেট করা মানুষ গুলো আমার এক দমি পছন্দ না সো নেক্সট টাইল লেট হলে উল্টো পথে বাসায় চলে যাবেন।। আর অফিসে আসার দরকার নেই।।
আমি মিনমিন করে বললাম,,
----সরি স্যার।।
----প্রথম দিন যেহেতু তাই মাফ করে দিচ্ছি।।
তারপর কাকে জানি ফোন করলো,,
----কেবিনে আসুন।।
কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ের আগমন যার পরনে ফর্মাল ড্রেস।।
----উনাকে কাজ বুঝিয়ে দিন।।
মেয়েটি মাথা ঝাকিয়ে আমাকে নিয়ে চলে গেল।।আমি যেতে আবার পিছনে তাকালাম।।
না শুধু চোখ দুটোই উনার মতো।।
মেয়েটির না লিনা।।আমাকে বুঝিয়ে চলে গেলেন।আমি নিজের সিটে বসে কাজ করতেসি ম।কিন্তু সেই চোখ দুটো যেন আমার চোখের সামন্য থেকে সরছেই না।।কেন?? আর মানুষের চেহরা মিলে ঠিক আসে কিন্তু চোখ ও মিলে আজ দেখলাম।।সব ভাবান্তর বাদ দিয়ে কাজে লেগে গেলাম।।
সেদিন অফিস করে বাসায় চলে আসি।।আর কিছু না ভেবে নাক ডেকে ঘুম দেই।।মাঝরাতের দিকে মনে হলো কেউ আমাকে গভীরভাবে দেখছে, কিছুক্ষণ পর কারো গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়তে লাগে।।ঘুমের জন্য চোখ মেলতে ইচ্ছা করছিল না তখন।। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পরলাম কোনো নরম কিছু আমার গলায় স্পর্শ করছে।। সাথে সাথে শরীরে কেমন কাপনী দিয়ে উঠল।।না পেরে চোখ মেলে তাকালাম।। কি আশ্চর্য কেউ নেই।।মনের ভুল ভেবে কাঁথা টেনে আবার শুয়ে পরলাম।।
পরেরদিন সকালে উঠতেই লেট হেয়ে গেছে।। তাই তাড়াতাড়ি করে রেডি হচ্ছি।।নয়তো আজ আর অফিসে ঢুকতেই দিবেনা বস।।জলদি রেডি হয়ে অফিসে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ধাড়াম করে নিচে পরে গেলাম সামনে তাকিয়ে দেখি..!!
—————
-----এটা কি করলেন মিস?? দিলেন তো আমার শার্টের ১২রটা বাজিয়ে?
----সরি স্যার।।আমি খেয়াল করি নি!!
----সরি মাই ফুট।।সরি দিয়ে কি করবো ধুয়ে ধুয়ে পানি খাব??
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়েই রইলাম।।
তখন অফিসে ঢুকতেই স্যারের সাথে ধাক্কা লাগে।। স্যারের হাতে থাকা হট হট কফি স্যারের বুকে পরে যায়।।কি সাংঘাতিক ব্যাপার গরম কফির হালকা ছাট আমার হাতে লেগেছিল, কি গরম বাবা! আর উনি স্টীল দাড়িয়ে বকে যাচ্ছেন।।নিশ্চয়ই তার বুকে জ্বলে যাচ্ছে।।
স্যার আমাকে চুপ থাকতে দেখর নিজের কেবিনে চলে যান।।আমি এখনো দাড়িয়ে।।কি করে ফেলাম আল্লাহ মালুম।।
তখনি পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠে,,
----মিস কুহু!
----জ্বি।
---- বারিশ স্যার কেবিনে যেতে বলেছেন।।
-----এই বারিশ স্যারটা আবার কে??
আমার কথায় লিনা মুখটা কেমন হয়ে গেল।। যেন আমি এমন কিছু বলেছি যা দুনিয়াতে সবচাইতে অবিশ্বাস্য কথা ।।তখনি লিনা আমার দিক এক ভ্রু উচু করে বলল,
----আর ইউ কিডিং মি?
----নো আম নোট কিডিং ইউ?
----তুমি সত্যি জানো না? বারিশ স্যার কে?
----জানলে কি আপনাকে জিগেস করতাম নাকি?
----ওহো! আচ্ছা এই অফিসের বসের নাম কি?
আমি একটু ভাবার চিন্তা করে বললাম,,
----বলতে পারছি না?
লিনা অবাক হয়ে চেয়েই রইল।। তারপর বলল,,
----এই প্রথম কোনো এমপ্লয়কে দেখছি যে অফিসে জব করে সেই অফিসের বসের নাম জানে না।।হাউ? বাই দ্যা ওয়ে।।বারিশ স্যার এই অফিসের বস।।যার শরীরে কিছুক্ষণ আগে আপনি গরম গরম কফি ফেলে দিছিলেন।।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।।তখন লিনা আবার বলল,,
----অবাক হওয়ার কথা আমার তুমি হচ্ছো কেন? এই নেউ স্যাভলন ক্রিম আর স্যারের কেবিনে যাও কুইক।।আর কি দেখমু।। অফিসের বসের নাম জানে না?বিড়বিড় করতে করতে লিনা চলে গেল।।
আমার এখন লজ্জা লাগতেসে।।সত্যিই তো আমি বসের নাম জানতাম না।।
স্যারের কেবিনে নক করলাম।।কোনো সাড়া শব্দ নেই।।আবার নক করলাম নাহ নেই।।তাই ভিতরে ঢুকে গেলাম।।ওমা কেবিন খালি।।গেল কই স্যার? আচ্ছা স্যার আবার ভুত টুত বা জ্বিন টিন না তো? না হলে তো উধাও হওয়ার কথা না?
তখনি স্যারের কন্ঠ শুন্তে পেলাম।। কিন্তু কন্ঠের উৎস খুঁজে পাচ্ছিনা।।পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম।।নাহ কেউ নেই।।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ তাহলে হয় তিনি ভিতরে।।তাই বাহিরে দাড়ালাম।।
পর মুহূর্তে আবার তিনি ডাকলেন,,
----মিস কুহু ভিতরে আসুন?
স্যার কোন ভিতরে যাওয়ার কথা বলছেন? ওয়াশরুমের? ও মাই আল্লাহ্?
বারিশ আবার ডাকলো,
----কি হলো মিস? এত দেড়ি করছেন কেন? আমি কি সাড়া দিন থাকবো এখানে?
আমি আর কিছু না বলে কাঁপা কাঁপা হাতে ওয়াশরুমের দরজা খুলতে লাগলাম।।আর ভাবতে লাগলাম।।অফিসে এসেছি মাত্র ২ দিন হলো।।তার মাঝেই ওয়াশরুম এ যেতে বলছে? হাউ ইজ পসিবল? কোনো কু মতলব নয় তো?? শুকনো ঢুক গিললাম।।তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে আমি দরজা খুললাম।। খুলেই অবাক!! যেটা ওয়াশরুম ভাবচ্ছি! সেটা একটি বেড রুম? হায় আল্লাহ!! বেড রুমে কেন আন লেন?? আমি ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করলাম।।আর স্যারকে এভাবে দেখে বিষম খেলাম।। স্যার একটা প্যান্ট পড়ে বসে আছে।। শার্ট নেই গায়।।পিছন থেকে শুধু তার ফর্সা পিঠ দেখা যাচ্ছে।।আমি তার পিঠের উপর ক্রাশ খাইছি।।আমার কেমন জানি ভয় মিশ্রিত লজ্জা লাগচ্ছে।।আচ্ছা ছেলেদের এত ফর্সা হওয়ার কি প্রয়োজন? আমার মতে ছেলেদের হালকা ফর্সা বা বাদামী রঙ্গের হওয়া উচিত।।স্যারের গায়ের রং দেখে হিংসে হচ্ছে আমার।।খুব হিংসে হচ্ছে।।কারণ স্যার আমার থেকে ফর্সা।।হটাৎ করে মনে একটি খেয়াল এলে আচ্ছা স্যারের এই সাদা পিঠে একটা কামুড় দিলে কি হবে? স্যার কি রাগ করবে? আমার কেন জানি খুব লোভ হচ্ছে, আর ইচ্ছে করছে কুটুস করে কামুড় দিতে।।হায় আল্লাহ।।কি ভাবচ্ছি আমি?? লুচুগিরি করছি? ছিঃ ছিঃ।।আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।।
তখন স্যার বললেন,,
----মিস ওখানেই দাড়িয়ে থাকবেন না এখানেও আসবেন??
আমি মাথায় হালকা চাপর দিলাম কি হচ্ছে আমার সাথে কি ভাবচ্ছি উল্টা পাল্টা আমি..!!যেই আমি কি না এসব থেকে শত গুন দূরে থাকি সেই আমি স্যারের উপর না সরি! স্যারে পিঠের উপর ক্রাশড, যেখানে স্যার চোখ দুটো ছাড়া ভাল ভাবে তার মুখটাও দেখিনি।।এটা কি আদ সম্ভব...!! হুহ।।
আমি স্যার সামনে আসতেই স্যার তার শার্ট আমার দিকে দিয়ে বললেন,,
----ক্লিন ইট?
----মানে?
----আমি কি আরবি ভাষা বলেছি?
---- না মানে!
----আপনি আমার শার্ট নষ্ট করেছেন এখন আপনি ধুয়ে দিবেন।।ওয়াশরুম ওই দিকে। গো..!!
আমি স্যারের কথা শুনে অবাকরে শেষ চুড়ায়।।
আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে স্যার এগিয়ে এলেন।। এবং আমার কিছুটা কাছে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,,
----যে নষ্ট করেছে তাকেই তো পরিষ্কার করা উচিৎ মিস কুহু।।সো গো ফাষ্ট।।পরের কথাটি জোরেই বললেন।।
আমি কেঁপে উঠলাম।।কারণ তার এমন ফিসফিস ভাবে কথায় এক ঘোরে চলে গিয়েছিলাম।।আচ্ছা এই লোকে মাঝে কি আছে? আমাকে কেন আকৃষ্ট করছে? তার এভাবে কাছে আসাতে মনে হচ্ছিল আমার খুব আপন কেউ? তার সেই ফিসফিস করে কথা বলার সময় যে নিশ্বাসটা পরছিল আমার কানে, ঘারে, গলায়, মনে হচ্ছিল খুব চিনা সেই নিশ্বাস ।।আমি আর দাড়ালাম না ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।।মাথা ধরে আসচ্ছে খুব।।এই ব্যাক্তিটির সাথে ২ দিনের পরিচয় কিন্তু মনে হয় যেন বহু বছরের চিনা।।
আমি শার্ট ধুয়ে বের হয়ে আসলাম।।দেখি স্যার সেই ভাবেই জানালার পাশে ঘুড়ে দু পকেট দু হাত গুজে দাড়িয়ে আছেন দৃষ্টি তার বাহিরে।।আবার তার সেই পিঠের দিক আমার চোখ যাওয়া আগেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম।।
নিচের দিক তাকিয়ে বলে উঠি,,
-----স্যার শার্ট ধুয়ে দিয়েছি।।
স্যার আমার দিকে ঘুরে দাড়ালেন।।তারপর বললেন,,
----মিস কুহু! টেবিলের উপরে স্যাভলন ক্রিম রাখা আছে, নিয়ে এদিকে আসুন।।
আমি ক্রিম টা নিয়ে তার কাছে গেলাম।।
তিনি বললেন,,
-----লাগিয়ে দিন।।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম তারপর আবার চোখ নিচে নামিয়ে ফেললাম।।সেই চোখ কেমন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দিক।।
আমি বললাম,,
-----আমি??
-----জ্বি আপনি।।ব্যাথা তো যে দিয়েছে ঔষধ তো তাকেই লাগানো উচিত! লাগিয়ে দিন।।
স্যার আমার থেকে অনেক লম্বা প্রায় ৬ ফিঠ হবেন।।তার সাথে তার জিম করা বিশাল দেহী।। আমি তার বুক পর্যন্ত ছুই ছুই।।স্যারের এমন কথায় লজ্জা লাগচ্ছে।।ইউসুফ ভাইয়া ছাড়া লাইফে কখনো কোন ছেলের গায়ে স্পর্শ করিনি।। আর পাইও নি।।
আমি কিছুটা ক্রিম নিয়ে স্যারের বুকে গালাতে লাগলাম কিন্তু চোখ আতার নিচে।।বুকের কই লাগচ্ছি জানা নেই আমার।। আমি ল্জ্জায় তাকাতে পারছি না তার দিক।।তা হয়তো উনি বুঝতে পেরেছেন।।
তাই বললেন,,
-----মিস আপনি কোথায় লাগচ্ছেন ব্যাথা তো এখানে পেয়েছি! বলে আমার হাত ধরে স্যারের ব্যাথায় মলন লাগলেন।।
তার এহেন কাজে চোখ বড় বড় করে দিকে তাকালাম।।এই প্রথম তার চেহারা এত সামনে থেকে দেখছি।।কত মায়া তার মুখে,,মুচকি হাসচ্ছেন আর এক দৃষ্টি মেলে তাকিয়েই রইলেন।।আমি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।।আমার হাত পা কাঁপছে।।উনার এভাবে ধরাতে আমার হাত।। আমি কোনো রকম তাকে মলম লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেলাম।।নিশ্বাস আটকে আসচ্ছে আমার।।আর কিছুক্ষণ হলে তো মরেই যেতাম।।তার উষ্ণ লোমহীন বুকে দেখে, হাত লাগাতেই কেমন জানি লাগচ্ছিল।।সাথে মনে পরে যাচ্ছিল সেই ইউসুফ ভাইয়ার কথা।। এ কেমন অনুভুতি হচ্ছে আমার।।স্যারের প্রতিটা কাজে আমি কেন ইউসুফ ভাইয়াকে অনুভব করছি।।সে তো নেই..!! সে তো বিদেশে থাকাকালীন কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।। তাহলে কেন!! এখন খুব কষ্ট লাগচ্ছে।।নাহ এই লোকের ধারে কাছে যাওয়া যাবে না।।দূরে থাকে হবে।।
—————
ঘড়িতে ১২ বাজতে ১ মিনিট বাকি।।বারান্ধায় দাড়িয়ে আছি।।সামনের টেবিলে একটি ছোট কাপ কেক,তার উপর ছটো একটি মোম।।ঘড়িতে ১২ টা বাঁজতেই ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজতে লাগলো।।আমি আকাশের দিক তাকিয়ে বলে উঠলাম,,
-----হ্যাপি বার্থ ডে ইউসুফ ভাইয়া।।
আজ ইউসুফ ভাইয়ার বার্থ ডে।। সামনের মোমটি ফু দিয়ে নিভে দিলাম।।কেক ও কাট করলাম।।তারপর আমার সামনে থাকা ইউসুফ ভাইয়ার হাস্যজ্জল ছবিটির দিকে এক টুকরো কেক রেখে উঠে গেলাম।।আবার বারান্ধার কোনা ঘেষে দাড়িয়ে গেলাম।কি আশ্চর্য।।
১৪ টা বছরে একটি বারও আমার গিফ্ট মিস যায়নি তিনি পাঠিয়ে দিতেন।।আর এই সাত বছরে আপনার প্রতি বার্থ ডেতে এভাবেই সেলিব্রট করি, গিফ্ট ও রাখি।।কিন্তু কেন? তা জানা নেই..!!।
আপনি সেদিন চলে যাবার আগে যখন আপনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, যদি জানতাম সেটাই আপনার সাথে আমার শেষ দেখা, শেষ স্পর্শ, শেষ জড়িয়ে ধরা তাহলে কখনো ছাড়তাম না আপনাকে কখনো না শক্ত করে ধরে রাখতাম।। খুব শক্ত করে।।বুকের ভিতরে আগলে রাখতাম।।যেদিন জিগাসা করে ছিলেন মিস করবো কিনা??
সত্যি ভাইয়া খুব মিস করছি খুব প্লীজ ভাইয়া ফিরে আসেন।।মনের ভিতরটা যে হাহাকার করে আপনার জন্য খুব।।বলতে বলতে ডুকুরে উঠলাম,, কান্না করছি চিৎকার করে কাঁদচ্ছি।।আর বলেই যাচ্ছি,,
----প্লীজ কাম ব্যাক ভাইয়া।।প্লীজ!! একবার আসুন ভাইয়া আপনার বাবুইপাখির জন্য আসুন।।খুব ইচ্ছে আর একটি বার আপনার মুখ থেকে শুনার আমার বাবুইপাখি।।একটি বার আপনার বুকে মাথা গুজার।।প্লীজ।।
আমার কান্নার শব্দে টিনা দৌড়ে আসে।।
----কুহু কি হয়েছে?? কুহু এদিকে তাকা বোন? তুই কাঁদচ্ছিস কেন??বল আমাকে??
আমি এবার হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম, টিনাকে জড়িয়ে ধরে।।
টিনা কুহুকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলতে লাগে,,
---জান আমার বল কি হইছে??
আমি কান্না থামিয়ে চুপ করে রইলাম কিছুক্ষণ ।। তারপর বললাম,,
----আজ ইউসুফ ভাইয়ার বার্থ ডে।।
টিনা বলল,,
----সে তো ভাল কথা চল আমরা সেলিব্রেট করি।।তুই যদি কাঁদিস তাহলে ভাইয়া যেখানেই আছে তার ঠিকি কষ্ট হচ্ছে।।।তুই এভাবে কাঁদিস না আয় আমার সাথে।।
টিনা আমাকে ঘরে নিয়ে তার কোলে আমার মাথা রেখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো,,
----তুই জানিস ভাইয়া তোকে কত লাভ করতো? তুই তার জন্য এভাবে কাঁদিস তাহলে তার আত্মা যে কষ্ট পাবে।।
----আমি যে পারি না তার রেখে যাওয়া স্মৃতি ভুলতে।।এই দিনটিতে আমার বুকটা চিরে যায়।।বারবার মনে পরে যায় তার সেই হাসি মুখ।।সেই আহ্লাদের বাবুইপাখি ডাক।।যানিস খুব মনে চায় ভাইয়া আর একটি বার ডাকতো বাবুইপাখি বলে?আর একটা বার তার বুকে জড়িয়ে নিতো।।
টিনার কষ্ট লাগচ্ছে খুব।।চোখ দিয়ে যে তারো হল গড়িয়ে গেল,,সে বলল,
----কুহু এভাবে ভেঙ্গে পরিস না।।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।।একদিন এমন কেউ আসবে যে সত্যি তোর দুঃখ গুলো ভুলিয়ে তার রংয়ে রাঙ্গিয়ে দিবে।।
আমি কুহুর কথায় কিছু বললাম।। শুধু চোখ বুঝেই রইলাম।।কারণ মানুষ যতই শান্তনা দিক, বা বলুক আমাদের দুঃখনতারা উপলব্ধি করে? সেটা ভুল।।কারণ যারা এই পরিস্থিতিতে পরে তারাই বুঝে এটা কত যন্ত্রণা দায়ক।।যেখানে চাইলেও ভুলা যা না কিছু।।
মধ্যরাতে সেই একি রকম গরম নিশ্বাস অনুভব করছি।।এবার আর চোখ খিলতে ইচ্ছে করছে না আমার।।মনে হচ্ছে চোখ খুললেই সে যদি হাড়িয়ে যায়?? চোখ বুজেই সেই ছায়াটিকে জড়িয়ে ধরি।।মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে,
----ইউসুফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লীজ।
আমি সত্যি আপনাকে ছাড়া অচল হয়ে যাচ্ছি।।আমি যে আবার চাই আপনা মুখ থেকে বাবুইপাখি ডাক শুনতে আপনি কেন বুঝেন না?? কেন চোখ খুলার পর হাড়িয়ে যান...??
তখন বুঝতে পারলাম সেই ব্যাক্তিটি আমার মাথা চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।। আমি যেন সেইটি অনুভব করে হাড়িয়পে যাচ্ছি গভীর অতলে।।সেই ব্যাক্তিটি আমার চোখের জল মুছে দিল আর আদর করে চোখ জোড়ায় চুমু খেল।।আর কিছুক্ষণ পর হারিয়ে গেল সেই স্পর্শ , সেই অনুভুতি, সেই নিশ্বাস।।এক সময় সব শান্ত হয়ে গেল।।আমি হুড়মুড় করে উঠে বসি।।
খাট থেকে নেমে সারা ঘর খুঁজতে থাকি।। নাহ্ সে নেই।।খাট ঘেসে মাটিতে বসে দু হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগি।।এক পর্যায় চোখে পানি মুছে দেই।।বারান্ধায় দাড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ।। তখন ইউসুফ ভাইয়া আমার বার্থডে তে একটি গান গেয়েছিল যা আমি সেভ করে ছিলাম।।তা ফোনে প্লে করে,, ইয়ার ফোন কানে গুজে।। পাশের ডিভানে বসে চোখ বন্ধ করে তার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে করতে থাকি...!!
Tere Jaane Ka Gam
Aur Na Aane Ka Gam
Phir Zamaane Ka Gam
Kya Karein?
Raah Dekhe Nazar
Raat Bhar Jaag Kar
Par Teri To Khabar Na Mile
Bahot Aayi Gayi Yaadein
Magar Iss Baar Tum hi Aana
Iraade Fir Se Jaane Ke Nahi Laana
Tum Hi Aana
Meri Dehleez Se Hokar
Bahaarein Jab Gujarti Hai
Yahan Kya Dhup Kya Saawan
Hawayein Bhi Barashti Hai
Hume Puchhon Kya Hota Hai
Bina Dil Ke Jiye Jaana
Bahot Aayi Gayi Yaadein
Magar Iss Baar Tum Hi Aana
Oh Ooo..
Koyi To Raah Woh Hogi
Jo Mere Ghar Ko Aati Hai
Karo Peechha Sada Unn Ka
Suno Kya Kehna Chaahti Hai
Tum Aaoge Mujhe Milne
Khabar Ye Bhi Tum Hi Laana
Bahot Aayi Gayi Yaadein
Magar Is Baar Tum Hi Aana
Marjaavaan..