অচেনা অতিথি - পর্ব ২৮ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদ ভিতরে ঢুকে গেটে চাবি  দিয়ে চোখ কটমট করে তিতিরের দিকে তাকালো। 
মাহাদের ওমন তাকানো দেখে তিতির একটু ভয় পেয়ে গেল। মিন মিন করে বলল," ওমন করে তাকাইয়া রইছেন কেন! আমিতো আপনাকে সার্কাস দেখাচ্ছি।"

" ওয়াল থেকেও কি নেমে আসতে বলতে হবে!"

তিতির আর কোন কথা না বাড়িয়ে নেমে আসলো। এসে মাহাদকে বলল," আমের ব্যাগটা আমায় দেন, আপনি অনেকক্ষন ধরে ওটা নিয়ে আছেন। আপনার হয়ত কষ্ট হচ্ছে।"

মাহাদ এবার আরো ক্ষেপে গেল। আমের ব্যাগ একহাতে আর অন্য হাতে তিতিরকে তুলে কাঁধে নিয়ে বাসার কাছে আসতেই থেমে গেল। তারপর কি জানি মনে করে সুইমিং পুলের দিকে চলে গেল।

"আরে কি করছেন নামান আমায়। বললাম তো আর কখনো আপনাকে এমন ভয় দেখাবোনা। আমি কি জানতাম! আপনার পিছন থেকে চলে গেলে আপনি ভয় পেয়ে যাবেন।"

মাহাদ সুইমিং পুলে এসে তিতিরকে নামিয়ে দিয়ে ব্যাগটা রেখে পুলের পাড়ে বসে পা পানিতে নামিয়ে দিল। তিতিরকেও পাশে বসতে ইশারা করলো।

কেবল তিতির মাহাদের পাশে বসেছে এমন সময় বাসার দাড়োয়ান চাচা এদিকে লাইট জ্বালিয়ে আসতে লাগলো। ধুর শান্তি নাই বলে তিতির ঝট করে উঠে মাহাদের পিছনে গুটিসুটি হয়ে বসে মাহাদের পিঠে নিজের পিঠ এলিয়ে দিল। আহ্ কি শান্তি। 

"এই কে ওখানে বসে আছে!"

" চাচা,,,, আমি মাহাদ।"

" এতরাতে এখানে কেন বসে আছ বাবা!"

" আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বাহিরে চলে এসেছি। আপনি চলে যান চাচা, আমি একটুপর ভিতরে চলে যাবো। "

" আচ্ছা বাবা, একটু সাবধানে থেকো। বর্ষাকালের সময়। কোথায় না কোথায় সাপ পোকামাকড় থাকে তা তো বলা যায়না।"

" আচ্ছা চাচা বলে মাহাদ চুপ করে রইলো।"

দাড়োয়ান চাচা চলে যেতেই মাহাদ খপ করে তিতিরের হাত ধরে পিছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে আসলো। কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে! 

নাহ্, কিসের ঘুম! ভয়ে বুকের ভিতর ৫৫/৫৬ শুরু হয়ে গিয়েছিল আর সেখানে ঘুম! হাতটা ছাড়েন বলে তিতির মাহাদের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ব্যাগের ভিতর থেকে ৩ টা গাছ পাকা আম খুজে বের করলো। তারপর পানিতে হাত আর আম ধুয়ে একটা আম ছিলে মাহাদের দিকে ধরে বলল," একদম ফরমানিল মুক্ত আম। খেয়ে দেখেন খুব মিষ্টি। আমি মোজাম্মেল বুড়োকে ভয় দেখানোর জন্য তখন একটা খেয়েছিলাম। একদম কাঁচামিঠা আমের মত মিষ্টি। এমনি বুড়ো দিনে রাতে আম পাহাড়া দেয়! অত্যাধিক সুস্বাধু আম।"

" তুমি এর ভিতর আমও খেয়েছো! আমার জানা ছিলনা তিতির! আমার বৌ সাক্ষাত একটা বান্দরনী। মাহাদ তিতিরের কাছ থেকে আমটা নিয়ে মুখে দিয়ে টেষ্ট করলো। আসলেই খুব মিষ্টি ছিল আমটি।"

" তিতির ৩৬ ড্রিগী আঙ্গেলে ওর চোখটা ঘুড়িয়ে বলল," বান্দরেরা কিন্তু খামচি আর কামড় দেয়। আমি তাহলে দেয় বলে ইশারা করে দু হাত তুলে খামচির ভাব দেখাল মাহাদ কে।"

" মাহাদ অর্ধেক আম খেয়ে তিতিরের মুখে বাঁকি অর্ধেক আম ঢুকিয়ে দিয়ে বলল," আহারে আমার বান্দরনী আমটা খাও। শুনেছি বান্দররা ফলমুল আর বাদাম খেতে খুব ভালোবাসে। আমার কাছে এখন বাদাম নাই  তাই এই ফল দিয়েই পেট ভরাও।"

" তিতির মুখ থেকে আমটা বের করে সেটা আস্তে আস্তে খেয়ে মাহাদ কে চমকে দিয়ে পুলের পানিতে সড় সড় করে নেমে গেল। বুক অবদি সুইমিং পুলের পানি। তিতির এবার মাহাদের পা টা সরিয়ে দিয়ে আরো মাহাদের কাছে গিয়ে আর একটা আম ছিলে মাহাদকে দিয়ে বলল," আপনার বিরুদ্ধে আমার অনেক অভিযোগ আছে....."

" মাহাদ পানির মধ্যই ওর দু'পা দিয়ে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে এনে বলল, " যেমন!"

" এক, আমার বর আমাকে আদর করেনা....."

" মাহাদ আমটা ফিনিস করে আঁঠিটা দুরে ছুড়ে মেরে বলল,"  আর.......!"

" তিতির তখন আর একটা আম ছিলতে ব্যস্ত ছিল  । সেটাও ছিলে বলল," তিন দিন ধরে আমার কোন খোঁজ নেন নি।"

" ওটা তুমি খাও তিতির। আর কি অভিযোগ! "

তিতির আমটা ইশারা করে মাহাদকে খেতে বললো কিন্তু মাহাদ না করে দিল। তাই তিতির বাধ্য হয়ে আমটি খেতে লাগলো। আমের অর্ধেক খাওয়া  হতেই মাহাদ আমটি কেড়ে নিয়ে খেতে লাগল।

তিতির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল," আমি বুঝতেই পারিনা সে আমাকে ভালবাসে কি বাসেনা! সব কিছু তার আধাছাড়া। যেমন আমটাও আধাছাড়া।"

এবার মাহাদ হাঁসি আর ধরে রাখতে পারলোনা। আম খাওয়া কমপ্লিট করেই ঝুপ করে তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে পানিতে নেমে পড়ল।

পানির শব্দ হতেই দাড়োয়ান চাচা বলে উঠলো, মাহাদ তুমি ঠিক আছো?

" পানির মধ্য মাহাদ তিতিরকে জড়িয়ে ধরে বলল," জ্বী চাচা আমি ঠিক আছি। আপনি আপনার কাজ করুন।"

" আচ্ছা বাবা, বাসায় জলদি যাও। আকাশে অনেক মেঘ জমেছে। কখন জানি বৃষ্টি নামে। কথাগুলো বলে দাড়োয়ান চাচা একদম বাহিরের গেটের দিকে চলে গেল।"

সব কিছু থেমে যেতেই মাহাদ তিতিরকে কয়েকটা কিস♥ করে বলল," আমিতো আমার বৌকে যথেষ্ঠ আদর করি। এতেও কি আমার বৌয়ের মন ভরেনা!"

" উমহু্,,,, এই আদর সেই আদর না। এটা অন্য আদরের কথা বলছি। এবার বুঝে নেন। অবুঝ হওয়ার  কথা আমার কিন্তু এখন দেখি আপনি আমার কাছে অবুঝ হয়ে থাকেন।"

"  মাহাদ ভারী একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, " আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি তিতির! তুমি এখনো অনেক ছোট। তোমার সরলতার সুযোগ আমি নিতে চাইনা। যখন তুমি অর্নাস কমপ্লিট করবে তখন সব কিছু বুঝতে শিখবে। তখন আমার কাছে এসো, এই মাহাদ তোমায় কখনো ফিরিয়ে দিবেনা। তুমি না চাইলেও আমি তোমার কাছে যাবো। কিন্তু এখন একদম না। স্ট্যাডিতে মনযোগ দাও। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আমি অনেক কিছু প্লান করে রেখেছি আমাদের জিবন নিয়ে।"

" তিতির খুব ভালো করে বুঝল মাহাদ তার সিদ্ধান্তেই অটল। তাই কথা ঘুরিয়ে বলল," আমার কোন জিনিসটা আপনার কাছে বেশি ভালো লাগে!"

" মাহাদ খানিকটা ভেবে তিতিরের চুলের খোপাটা খুলে দিয়ে বলল," তোমার চুল আমার খুব পছন্দ। এটা কখনো ছোট করে কাটবানা। আ,,,,র..... আর তেমন কিছুই তোমার ভালো নাই। কারন তোমার নাকটা বোঁচা, চোখটা টেরা, গালটা ভারী, শুধু গায়ের রং একটু উজ্জ্বল তবে এতটা উজ্জ্বল নয়। আর পড়াশুনা! সেটাও যথেষ্ট নয়। সব মিলিয়ে একটা গজামিল অবস্থা। খাপছাড়া খাপছাড়া আরকি!"

"মাহাদের কথা শুনে তিতির তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। আমার চোখ টেরা!"

"হুম.....!"

"আমার নাক বোঁচা! শোল মাছের মত!"

" আমি সেটার উপাধি দেইনি। কিন্তু তোমার  যদি পছন্দ হয় তাহলে সেই উপাধিও দিলাম।"

" আমার গাল ভারী......!"

" হুম....."

" ছাড়েন আমায় বলেই পানির মধ্যই এক প্রকার ধস্তাধস্তি করতে লাগল তিতির। এতগুলো কথা শুনিয়ে কোন সাহসে আবার আমাকেই জড়িয়ে ধরে থাকবেন! ছাড়েন আমায় ছাড়েন!"

" এরকম ছটফট করে তোমার কোন লাভ হচ্ছে! শুধু শুধু বাসার মানুষ জানবে। আমি না চাইলে তুমি উঠতে পারবেনা তো!"

" পারি কি পারিনা এবার সেটা দেখেন  বলেই তিতির স্বজোড়ে মাহাদের বুক বরাবর কামড় বসিয়ে দিল। মাহাদও সাথে সাথে বলে উঠলো," কি ভাবছো তুমি! এতেও তোমাকে ছেড়ে দিব! পাগলিকে লালন-পালন করছি আর তার কামড় সামলাতে পারবোনা!"
তুমি হাফ পাগল হলে আমি ফুল পাগল বলেই তিতিরকে সহই মাহাদ পরপর চারবার ডুব দিল সুইমিং পুলের পানিতে।

" তিতিরের অবস্থা তখন বেশ সোচনীয় হয়ে উঠলো।  পানির উপরে এবং নিচে হাঁসফাস করতে লাগলো। দক্ষ সাতারু হওয়ার পরও দম আটকে যাওয়ার মত অবস্থা। মাহাদ আর একটা ডুব দিয়েই তিতিরকে ছেড়ে দিল পানির মধ্যই। এবং হাত দিয়ে কিছুটা দুরে ধাক্কা দিল তিতিরকে।"

" তিতির পানির মধ্যই মাহাদকে আকড়ে ধরতেই মাহাদ তিতিরকে সহ পানির উপরে উঠে আসলো। তিতির মাহাদকে জড়িয়ে ধরেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল। "

" এরকম অসভ্যর মত কামড় দেওয়া কই থেকে শিখছো!  আমায় আর কামড়  মারবা কোনদিন!"

" তিতির হাঁপাতে হাঁপাতে বলল," আমার জন্য আপনার মনে একটুও দয়ামায়া নাই! এভাবে কেউ কাউকে শাস্তি দেয়!"

" দয়ামায়া নাই দেখেই মাত্র পাঁচটা ডুব দিয়েছি সোনা♥।  মাহাদ তিতিরের কপালে লম্বা একটা কিস♥ করে বলল," এবার মনে ভালোবাসা বেশি জেগেছে তাই ১৫টা ডুব দিয়ে তোমাকে নিয়ে বিশ্বরেকর্ড করবো তিতির। কি রেডী!"

" তিতির এবার কেঁদে ফেললো। আমি বলছি তো, আর কোনদিনও আপনাকে এভাবে কামড় দিবনা। আমার আর ভালোবাসার দরকার নেই। আমি বাসায় যাবো।"

" কেন,,,,, আমার  আদর কি আর চাওনা! তখনতো খুব করে অভিযোগ করলে আমি তোমায় আদর করিনা আর এখন দিতে চাচ্ছি তো আর নিবেনা! পানি থেকে তিতিরকে একটু উচু করে তুলে মাহাদ বলল, " এখন আদর করবো তার কিছুদিন পর বাবা হব। আহ্ খুব সুন্দর প্লান তাইনা তিতির!"

" আমার আদর চাইনা। আমি বাসায় যাবো। আমার কাল ক্লাস আছে। আমাকে ছেড়ে দিন বলে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো তিতির।"

" ফার্দার যদি দেখছি আদর আদর করে আমার মাথা পাগল করে দিছ আর এমন অসভ্যর মত কামড় দিয়েছ তাহলে সেদিন দেখ আমি কি করি। আজ অর্ধেক শ্যান্ডিং দিছি পরের বার ফুল শ্যান্ডিং দিব।"

" আমি বললাম তো আর কোনদিনও এমন আচরন করবোনা। আমি বাসায় যাব।"

মাহাদ তিতির কে নিয়ে পুল থেকে উঠে  আমের ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে আসলো। তিতির পারেনা যে দৌড়ে ওর রুমে যেতে। আজ যে ভয় পেয়েছে এমন ভয় কখনো মাহাদের কাছ থেকে পায়নি। তিতির ওর রুমে যেতেই মাহাদ আমের ব্যাগ কিচেনে রেখে ওর রুমে চলে গেল।

বাহিরে ততক্ষনে  মুষুল ধারে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেছে।

♦♦

তিতির ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বের হয়ে এসে দেখলো ওর রুমে মাহাদ দাড়িয়ে আছে। ভেজা চুল মাথায় লেপ্টে আছে। অন্য রকম এক সৌন্দর্যতায় ভরপুর দেখাচ্ছে মাহাদকে। এমন রুপে যে কোন মেয়েই হাফসুল খেতে বাধ্য। কিন্তু কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়ার কাহিনী এসে তিতিরকে সাবধান করে দিল। তিতির ভুলেও ঐ কাঁটাময় গোলাপের কাছে যাসনা। তাহলে একদম মাঝপথেই মারা পড়বি । 
তিতির নিজের ভাবনাগুলোকে চুটকি মেরে উধাও করে দিয়ে বলল," আপনি এখানে!"

" মাহাদ মুচকি একটা  হাসি দিয়ে তিতিরের কাছে এসে অচমকায় টাওয়ালটা টান মেরে খুলে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। দরজা বন্ধ করার আগে বলল," তিতির আলমারীর ২য় তাকে আমার একটা প্যান্ট আছে ওটা দিয়ে যাওতো!"

" তিতির রেগে হাজার ভোল্টে জ্বলে উঠলো। এ কেমন টর্চার! রাত-দুপুরেও দেখছি শান্তি নেই। আমি পারবোনা। আপনার জিনিস আপনি খুঁজে বের করেন। উমহ্,,,, তিতির প্যান্টটা দিয়ে যাও......"

" আমি যদি যাই তাহলে কপালে কিন্তু দুঃখ আছে তোমার। যা বলছি তাই করো। বরের কথা শুনতে হয়। তাছাড়া নামায পড়ে কোন লাভ হবেনা তোমার। বর সন্তুষ্ট তো সব সন্তুষ্ট।

" তিতির নিজে চেঞ্জ করে তারপর আলমারী থেকে প্যান্টটা খুঁজে বের করতেই মাহাদ ওয়াসরুম থেকে টাওয়াল পরে বের হয়ে এলো। তিতিরের এখন মন চাচ্ছে মাহাদেরও  টাওয়ালটা খুলে ফেলতে। তারপর মজা বুঝত এমন কাজ করলে অন্যর কেমন লাগে।"

" তিতির!  ওভাবে চেয়ে রইছো কেন? আমার টাওয়াল  খুলতে মন চাচ্ছে তোমার! ভুলেও সেই চেষ্টা করোনা। তাহলে আজই তোমায় ফুল ডোজ দিব ঐ সুইমিং পুলের পানির মধ্য  নিয়ে গিয়ে। এমন চোবান চুবাইবো জন্মের মত এমন কাজ করার সখ মিটে যাবে। তাই সাবধান......"

" মাহাদের কথা শুনে তিতির ভড়কে গেল। কি মানুষরে বাবা। ভাবনার ভিতরও এসে হানা দিয়ে শাসন করছে।  তিতির গলা ঝাড়ি দিয়ে বলল," আমার ঠেকা পড়েছে আপনার টাওয়াল ধরে টানাটানি করতে। এবার বলুনতো! এতরাতে আমার রুমে কেন হানা দিছেন! আর আমার রুমে আপনার প্যান্ট আসলো কোথা হতে!"

তিতিরের কথার কোন জবাব না দিয়ে মাহাদ চেঞ্জ করে টাওয়ালটা তিতিরের মুখে ছুড়ে মারল তারপর বলল," ওটা ব্যালকুনিতে মেলে দিয়ে আসো।"

মাহাদের এমন ব্যবহারে তিতির অত্যন্ত কষ্ট পেল। কাজের মেয়ের সাথেও মানুষ এভাবে কেউ ব্যবহার করেনা আর আমিতো.........
তিতির আর কোন কথা বলতে পারলোনা। টাওয়াল নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে গেল। ব্যালকুনিতে আসতেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। বাহিরে তখন তুমুল হারে বৃষ্টি ঝড়ছে।
এমন সময় মাহাদ তিতির বলে ডেকে উঠতেই তিতির তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে দ্রুত রুমে চলে গেল। 

মাহাদ পাঞ্জাবি পরে টুপি মাথায় দিয়ে  জায়নামাযে বসে আছে। তিতির চোখ বড় বড় করে মাহাদের দিকে চাইলো। 

মাহাদ একটু হেঁসে বলল," এতবড় দান মারলাম মানে চুরি করে আসলাম তার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবেনা! আসো একসাথে নামায পড়ব।"

চোরের মুখে ধর্মের কাহিনী। নিজেও চুরি করেছে সাথে আমাকেও চুরি করাইছে। বাহ্ তিতির......  একেই বলে চোরের বৌ মহা চুন্নী। শেষে তোকেও চোরের খাতায় নাম দিতে হল! কথা গুলো মনে মনে ভাবতেই মাহাদ ধমক দিয়ে বলল," কি হল কথা কানে যায়নি!"

তিতির মাথায় ওড়না দিয়ে পরিপাটী হয়ে মাহাদের পাশে নামায পড়তে দাড়িয়ে গেল। দু'জনে নামায শেষ করে উঠতেই তিতির ওয়াসরুমে গিয়ে মাহাদের ছাড়া কাপড় আর নিজের গুলো ধুতে যাবে এমন সময় দেখল মাহাদ আগেই সেগুলো ধুয়ে দিছে। 
তিতির ওয়াসরুমের দরজা দিয়ে একটু মাথা বের করে মাহাদকে দেখতেই মাহাদ ওকে সাথে সাথে ইশারা করলো।  এবার তিতির ব্যাপক লজ্জা পেল। মাহাদ কি আগে থেকেই জানতো নাকি যে তিতির চোরের মত তাকে চুপি চুপি দেখবে! 

" তিতির রুমে এসে বলল," আপনি সব কাপড় ধুয়ে দিছেন! আমিই তো ধুয়ে দিতাম।"

" তুমি কেমন ধুয়ে দিতা সেটা আমার জানা আছে। অন্য আর একটা টাওয়াল আলমারি থেকে বের করে সেটা  দিয়ে তিতিরের চুল গুলো মুছে দিতে দিতে কথাগুলো বললো মাহাদ। সেদিন তো সব কিছু রেখে ভার্সিটিতে চলে গিয়েছিলে। আর চুল ভালো করে কেন মুছনা! এভাবে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।"

" উমহ্,,,,,, দরদ দেখাচ্ছে! নিকুচি করেছি আপনার দরদের। একটু আগেই আমাকে হাফ মার্ডার করে ফেলেছিল আর এখন দরদ উতলে পড়ছে। ছাড়ুন আমায়, আমি নিজের কাজ নিজে করতে পারি।"

" তুমি খুব ঝগড়ুটে  বলে মাহাদ টাওয়াল ছুড়ে মারল ফ্লোরে। হাতের আঙ্গুল উচু করে বলল," আমার রুমে  যেন তোমাকে যাইতে না দেখি। আর যদি গেছ তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ আর হবেনা বলে মাহাদ বিছানায় সুয়ে পড়ল।"

" আপনি এখানে ঘুমাবেন!"

"হুম....!"

" বাসার যদি কেউ জানতে পারে,  তখন!"

" সারা জিবনের জন্য তোমার সাথে আমার বিচ্ছেদ ঘটবে।"

" কথাটা তিতিরের সোজা বুকে গিয়ে আঘাত করলো। তিতির সাথে সাথে মাহাদের কাছে এসে বলল," আপনি তাহলে চলে যান।"

" নাহ্, আর কতদিন এভাবে থাকবো। এবার সবাইকে জানতে দাও। ব্যাপারটা সবার জানা উচিত।"

" না আপনি চলে যান। ওঠুন বলে মাহাদকে টানতে লাগলো তিতির।"

" ওকে কথা দাও,  আগামী ১ সপ্তাহেও যেন আমার রুমের আসেপাশে তোমায় না দেখি।"

" আমি যাবোনা বললাম তো! আপনি তবুও যান এখান থেকে।"

ওকে বলে মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে গেল। এবার তিতির হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মনে হচ্ছে আজকে একটু বেশিই ঝগড়া করা হয়েছে। ঝগড়া করবোনাতে কি করবো! তিনদিন ধরে একটা কথাও বলেনি আমার সাথে। কিন্তু তিন দিন পর ঠিকি আমাকে নিয়ে চুরি করতে মাঠে নেমে পড়লো। তিতির দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমে পড়লো। 

♦♦

পরেরদিন খুব সকালে মোজাম্মেল বুড়ো তার দুই ছেলেকে নিয়ে মাহাদদের বাসায় হাজির হল। বাতাসি ভাবী বলেই চিক্কুর দিল মোজাম্মেল।

বাতাসি তখন কেবল চায়রে কাপে চুমুক দিয়েছে এমন সময় হাঁক-ডাক শুনে বিরক্তির ভাব নিয়ে কাপটা রেখে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো, মোজাম্মেল দাড়িয়ে আছে।

এইডারে আর বাড়িতে কে ঢুকতে দিল! মরার দাড়োয়ান তোরে পই পই করে নিষেধ করছি এই ঠ্যাটার জাত গুষ্টি যেন আর বাড়িত না ঢুকতে পারে হের পরও ক্যান ঢুকাইলো! আবার কড়া শাসন করতে হইবে।

বাতাসি খেঁকিয়ে উঠে বললো, " সাত সক্কালে আর বাড়িতে তুই!"

" আমি আপনারে আম দেয়নি বলে এক রাতেই সব আম আমার সাবাড় করে দিলেন! আপনার নামে থানায় মামলা করবো।"

" মুখ সামলে কথা "ক" মোজাম্মেলইল্লা! চোরে গোষ্ঠী চোর। আর গাছ দখল করে খাস আর এহন আরেই কস মামলা দিবু! বুইড়ার বাচ্চা বুড়া শয়তান । আর বাড়ীত থাইকা বাড়া কইছি। ক'দিন আগে ভালো করে ফোন দিয়ে কডা আম চাইছিলাম তার জন্য তুই ক্যামন গালিগালাজ করছোস! আই তোর নামে মামলা করুম। বৌমা ফুয়াদরে কল দাও তো, আগে এই বুইড়াডারে জেলের ভাত খাওয়ামু।"

" মুখ সামলে কথা বলেন ভাবী সাব। আমি বুড়া হলে আপনি বুঝি আঠারো বছরের ছুড়ি! মনে রাইখেন আপনি আমার থেকেও অনেক বড়। আর ক্ষমতার দাপট দেখান আমায়! আমি ভয় পাইনা আপনাকে?"

"ক্ষমতার দাপট দেখালে তোর নামে কবেই কেস ঠুকতুম। গাছ ডাকাতি হইছে বেশ হয়েছে। আই হইলে গাছের গোড়াই কাইটা ডাকাতি দিতাম। অত্যাচারের একটা শেষ আছে। তোর বাপ গাছ লাগাইছিল! "

ভাবী সাব বাপ তুইলা গালি দিবেন না বলে দিলাম বলতেই লাবীবা তিন কাপ কফি আর নাস্তা নিয়ে এসে বললো, চাচা কেমন আছেন! আমাদের বাসায় তো আর আসেনইনা! মাঝে মধ্য আসলে কি হয়?

" এবার মোজাম্মেল থেমে যায়। লাবীবার ব্যবহারে মোজাম্মেল খুব খুঁশি হয়ে গেল। সাথে সাথে সোফায় বসে বলল," বৌমা, তোমার শাশুড়ী এমন কেন! সবসময় আমাদের সাথে লাগে। সাথে দুই ছেলেকেও বসতে বলল।"

" চাচা বাদ দেনতো!  আম চুরি হওয়ার নামে হলেও তো বাসায় আসছেন এটাই অনেক।"

" মোজাম্মেল কফিতে চুমুক দিয়ে বলল," বুঝছো বৌমা, কাল আমি নিজের চোখে ভুত,,,, না না পেত্নী দেখেছি। এই ৭৫ বছর বয়সে আমি কোনদিনও ভুত দেখিনাই আর কাল কিনা সেই ভুতই দেখলাম! 
ছেলেরা বললো ভুত বলে কিছু হয়না তাই ভাবলাম তোমার শাশুড়ীর কাজ হবে।  কিন্তু মনে হচ্ছে সত্যই ওটা ভুত হবে।"

আরো কিছুক্ষন গল্প করে দুঃখ ভরা মনে মোজাম্মেল আর ওর দুই ছেলে চলে গেল।

ওরা চলে যেতেই তিতির বই খাতা নিয়ে এসে বললো খালাম্মা  আমি কিছু ম্যাথ করতে পারছিনা। আপনি যদি মাহাদ ভাইয়াকে বলতেন ম্যাথগুলো করে দিতে তাহলে আমার জন্য খুব ভালো হত।

তিতিরে এমন কথায় লাবীবা একটু সন্দেহের চোখে তিতিরের দিকে চাইলো। তারপর বুদ্ধি গুটিয়ে বলল, তুমি গিয়ে ওকে বল তাহলে ও করে দিবে।

না খালাম্মা আপনি চলেন বলে তিতির লাবীবার হাত ধরল। লাবীবা বাধ্য হয়েই তিতিরকে নিয়ে মাহাদের রুমে  যেতেই তিতির দরজার কাছে দাড়িয়ে পড়লো। তিতিরের আর লজ্জা হলোনা। কাল রাতে এতবার করে মাহাদের রুমে যেতে নিষেধ করেছে তবুও বুদ্ধি খাটিয়ে মাহাদের মাকে নিয়ে ঠিকিই ওর রুমে হাযির।

লাবিবা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলো মাহাদ উপর হয়ে ঘুমাচ্ছে। লাবীবা ছেলেকে কয়েকবার ডাক দিতেই ছেলে চোখ খুলে বলল," মা ডিসর্টাব করো কেন! আমাকে ঘুমাতে দাও।"

তিতির কিছু অংক পারছেনা ওকে একটু হেল্প করতো! মেয়েটা দরজায় দাড়িয়ে আছে তো! ওঠ.....

মাহাদকে এবার পায় কে! প্রচন্ড রেগে গিয়ে মাথার বালিশটা ছুড়ে মারলো তিতিরের দিকে........

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন