অচেনা অতিথি - পর্ব ১৫ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


রূপসার ফোনে কল বেজেই চলেছে। হাতের কাজ সেরে তাড়াহুড়া করে এসে কলটা রিসিভ করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে অট্টটোহাসিতে ফেটে পড়লো যেন রেজওয়ান। রেজওয়ানের হাসি শুনে রূপসা ক্ষেপে উঠলো। প্রায় আধা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো-

~" এই তুমি আবার কল দিয়েছ! শুধু তোমার জন্য আজ আমার সংসার ভাঙ্গতে চলেছে। সেদিন তোমার কথা যদি না শুনতাম তাহলে এমন দিন আমাকে কখনো দেখতে হতোনা।"

~" আরে ডিয়ার বোন, এত রেগে যাচ্ছিস কেন? তোর জন্য তো ধামাকাদার খবর রয়েছে। মনে কর আজ তোর জন্য ঈদের দিন।"

রূপসা এবার শান্ত গলায় বলল-

~" কেন, কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে তার জন্য আজ আমার ঈদের দিন হতে চলেছে!"

~" এত উত্তেজিত হলে চলে! আমি কি কখনো তোর খারাপ চেয়েছি! বরং আমি সব থেকে তোর বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।"

~" হেয়ালী না বলে মেন পয়েন্টে আসো।"

~" হুম ঠিক বলেছিস। তুই জানিস, আমাদের কাজের মেয়ে সাবিনার পেটে মাহাদের বাচ্চা!"

~" হোয়াট!"

~" হুম সত্যি বলছি। ওর তো সংসার ভাঙ্গতে বসেছে। এখন মনে হচ্ছে তুই কেন বিয়ে করলি! আমি নিঃশ্চিত, এই সময়টা তুই লুফে নিতি। বোকা মেয়ে কোথাকার।"

~" এই ওয়েট, ওয়েট। তুমি বলছো, সাবিনার পেটে মাহাদের বাচ্চা! আর সেটাও মেনে নিতে হবে এই আমাকে? কক্ষনো না। আমাকে পাগলা কুত্তাই কামড়াছে নাকি যে তোমার কথা বিশ্বাস করবো!"

~" আরে পাগলি শোন সব কথা, তারপর না হয় তোর মন্তব্য করিস। মাহাদ নিজে স্বীকার করেছে, এই বাচ্চাটা নাকি ওর নিজের।"

রূপসা গ্যাসের চুলাটা বন্ধ করে দিয়ে কিচেন থেকে বের হতে হতে বলল-

~" যে এমন নোংরা কাজ করে সে কোনদিনও নিজের মুখে সেই সত্যটা স্বীকার করবেনা। আর তুমি বলছো মাহাদ করেছে! এতে তো স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে মাহাদ ১০০% নির্দোষ। ওকে ফাসানো হয়েছে। আর এতে যদি তিতির মাহাদকে ভুল বোঝে তাহলে ওর মত বেকুব মেয়ে আর ২য়টি নেই। তোমার কথা শুনে এটাই প্রমানিত হয় মাহাদ নির্দোষ। আমাকে অন্তত তোমার এই ফালতু মার্কা লজিক শুনাতে এসোনা। আর মাহাদ এমন কাজ কোনদিনও করবেনা। সেই বিশ্বাসটা আমার রয়েছে ওর উপর।"

~" তোকে কল দিয়ে কথাটা বলাই আমার উচিত হয়নি। তোর মত আনকালচার মেয়ে জিবনেও দেখিনি আমি।"

~" তোমার মত ক্ষাৎ ছেলে প্লাস মেয়াদ উর্ত্তীন গাঞ্জাখোরকে আমিও জিবনে দেখিনি। এবার মাহাদের পাল্লায় পড়লে আপনার কপালে দুঃখ আছে। মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে চোখে মুখে চুলকানি মাখা টুকুই আপনার জন্য বাঁকি রয়েছে। ওটাও শ্রীঘ্রই হয়ে যাবে।  একদম সেটা নিয়ে চিন্তা করবেননা। ফালতু কোথাকার......।"

কথাগুলো বলেই রূপসা কল কেটে দিল। অনেক কষ্টে ওর সংসার আবার ঠিক করেছে। আর কোন ঝামেলাতে সে পড়তে চায়না। কিন্তু ওদিকে রেজওয়ান ক্ষেপে লাল হয়ে গেল। হারামজাদির তেজ দেখছি বেড়ে গেছে। আমাকে বলে নাকি আমি মেয়াদ উত্তীর্ন গাঞ্জা সেবন করি। যেদিন ধরবো সেদিন সব ধুলিসাৎ করে ছাড়বো।


মাহাদের পায়ে প্রচন্ড লেগেছে তাই ধীরে ধীরে পা নাড়ছে। তিতির এসে পায়ে হাত দিতেই মাহাদ নিষেধ করলো। তিতিরের দিকে ভয়ে ভয়ে একবার চাইলো সাবিনা। তিতির ভিতরে ভিতরে মনে হয় মরে যাচ্ছে মাহাদের এমন আচরনে। মনে হচ্ছে তার জায়গাটা সাবিনা নিয়ে নিছে। ছিহ্ঃ আমি কি সব ভাবছি বলেই তিতির চুপ করে রইলো।

লাবীবা সাবিনার হাত শক্ত করে ধরে কঠোর গলায় বললেন-

~" তুই এতদিন কোথায় ছিলিরে! সেদিন কই গিয়েছিলি! আর মাহাদ যে আজ আসবে সেটা তুই জানলি কি করে?"

সাবিনা ভয়ে চুপসে যায়। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। অসহায়ের মত মাহাদের দিকে চাইতেই মাহাদ বলল-

~" মা, রাস্তায় কি সব জেরা করতে শুরু করছো! বাসায় গিয়ে এসব জিঙ্গাসা করলে হতো না?"

বাসায় গিয়ে জিঙ্গাসা মানে! ওকে এখন আমাদের সাথে বাসায় নিয়ে যেতে হবে! না কখনো না। যে মেয়ে নিজের স্বার্থে তোর নাম ব্যবহার করে তার জায়গা আমার বাড়ীতে হবেনা। যেখানে ছিলো সেখানেই ও চলে যাক। 

তাহলে তো আমাকেও সেখানে যাইতে হবে মা। আমার জন্য ওর এত ক্ষতি হয়ে গেল সেখানে আমি রাজার হালে কি করে থাকি বল! কথাগুলো বলে মাহাদ তিতিরের দিকে চাইলো।

তিতিরের চোখ দু'টো ছলছল করে উঠলো। হাত শক্ত করে সাথে সাথে মুঠো করে ফেললো। মাহাদ শুধু তিতিরের রিয়াক্ট দেখলো কিন্তু কিছু বললো না। মা বলো, আমি কি বাসায় যাবো না সাবিনার সাথে চলে যাব!

~" মাহাদ পাগল হয়ে গেছিস! তিতিরের কথা একবারও ভাববিনা! ওর কি দোষ! আর দুটো সন্তানের কথাতো ভাববি!"

~" আমার স্ত্রী সন্তানের জন্য আমার পুরো পরিবার আছে। কিন্তু সাবিনার আমি ছাড়া কেউ নেই। তাই এখুনি ডিসিশন নাও। আমি বাসায় যাব কি যাবোনা!"

তিতির চোখ মুছে সাবিনার হাত ধরে বলল-

~" আমার আগে থেকে তুমি সেই বাসায় থাকতে। আমার থেকে তোমার অধিকার বেশি। আমাদের সাথেই তুমি চলো। কথা দিচ্ছি তোমায় কেউ টু শব্দও  করবেনা।"

নিজ স্ত্রীর এমন ব্যবহারে মাহাদ ভিতরে ভিতরে খুব খুশি হলো। মাহাদ এমনটাই ব্যবহার তিতিরের কাছ থেকে আশা করেছিল। কিন্তু আজ ফুয়াদ কোন কথা বললোনা। বরং সাবিনাকে গাড়ীতে উঠতে বলে মাহাদকে গাড়ীতে তুলল। মাহাদ বসতেই তিতির মাহাদের পাশের সিটে বসতে যাবে এমন সময় মাহাদ বলে উঠলো-

~" মার সাথে তুমি যাও। আজ সাবিনাকে বসতে দাও। আর অতিথীকে আমার কোলে দাও।"

টপটপ করে মাহাদের হাতে তিতিরের চোখের জল ঝড়ে পড়লো। কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করলোনা। অতিথীকে মাহাদের কোলে দিয়ে মাহাদের কপালের গভীর একটা কিস করে গাড়ী থেকে নেমে সাবিনাকে মাহাদের কাছে বসতে বলে শাশুড়ীর কাছে গিয়ে বসলো। পুরো রাস্তায় তিতিরের চোখের জল পড়া একদম থামেনি। তিতিরের কান্না দেখে লাবীবা পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে বলল-

~" আমার ছেলে কখনোই এমন কাজ করতে পারেনা, আমার মন এখনো মানছেনা। কি এমন হলো যে ওমন ব্যবহার করছে!"

তিতির আর কথা বলতে পারলোনা। শাশুড়ীর কাঁধে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। মাহাদের প্রতিটা আচরন ওর বুকে এসে ছুড়ি বসিয়ে দিচ্ছে। 

বাসায় এসে যখন মাহাদকে নামানো হল তখন সাবিনা ওকে ধরতে যেতেই তিতির দ্রুত এসে সাবিনাকে সরিয়ে দিয়ে বলল-

~" আমার জিনিস আমাকে সামলাতে দাও। তুমি নিজের খেয়াল রেখ।"

তিতির মাহাদকে ধরে নিচে নামাতে সাহার্য্য করলো। এই সময় মাহাদ এমন একটা কথা বলল, যেটা তিতিরের ধৈর্য্যর বাঁধ সম্পূর্ন ভাবে ভেঙ্গে গেল। মাহাদ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল-

~" তিতির তুমি কি জানো! সাবিনা তোমার থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসে।"

মাহাদের এই একটা কথায় যথেষ্ঠ ছিলো তিতিরকে পুরোপুরি ভেঙ্গে তছনছ করে দেওয়াতে। সজিব আর মিল্টন যখন মাহাদকে এসে ধরলো তখন তিতির মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে সোজা রুমে চলে গেল।

মাহাদ সেদিকে খেয়াল না দিয়ে সাবিনাকে বলল-

~" এই তুই আমার সব সময় কাছে কাছে থাকবি। কোথাও যেন তোকে না যেতে দেখি।"

ওরা যখন মাহাদকে ডাইনিং রুমে আনলো তখন মাহাদ বাতাসিকে দেখে সালাম দিয়ে বলল-

~" কেমন আছো গিন্নী।"

~" তোরে ছাড়া আই ভালা থাকি কি করে?"

মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-

~" দাদী সাবিনার একটু খেয়াল রেখ। আমি কারো উপর ভরসা করিনা ওর ব্যাপারে। এতদিন ও তোমাকে দেখে এসেছে। এবার তোমার পালা। কিছুটা ঋন শোধ করো দাদী। আজ থেকে ওর সাথে ঘুমাইও। কাল থেকে ওর দেখাশোনার জন্য একটা মেয়ে আসবে। আজ শুধু দেখে নিও।"

বাতাসি কথার কোন জবাব না দিয়ে সাবিনাকে দেখতে লাগলো। মেয়েটার চোখের নিচে কালি জমে গেছে। কি ছিলো আর কি চেহারা হয়ে গেছে। বাতাসি কেমন জানি খুব খুশি হল এমন দায়িত্ব পেয়ে। সে নিজের সাথে সাবিনাকে নিয়ে গেল তার রুমে। 


তিতির ল্যাগেজ গুছিয়ে নিচ্ছে। বার বার চোখের জল মুছেই চলছে। সব কিছু গোছাতেই মাহাদকে রুমে দিয়ে গেল ওরা। মাহাদ তিতিরের ল্যাগেজ গোছানো দেখে ভ্রু কুচকে বলল-

~" তিতির, তুমি কি কোথায়ও যাচ্ছো!"

এবার তিতির রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো-

~" আপনার আর সাবিনার জন্য রুম রেডী করতে হবেনা! আমিতো এখানে আর থাকতে পারবোনা। তাই চলে যাচ্ছি।"

তিতির ল্যাগেজ নিয়ে দরজার কাছে যেতেই মাহাদ শান্ত গলায় বলল-

~" খোদার কসম করে বলছি, আজ যদি তুমি ঐ দরজার চৌকাট পেরিয়েছ তো সারা জিবনের জন্য আমাকে হারাবে। আমি তোমাকে ২য় বার কখনোই সুযোগ দিবোনা আমার জিবনে আসার। এখন ডিসিশন নাও.......।"

মাহাদের কথা শুনে তিতির ওখানেই স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ওখানেই বসে ঝুপ ঝুপ করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। আপনি কেন আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছেন? আমার অপরাধ কি!

~" আমি তোমাকে ভালো করে বলেছি, সাবিনার খেয়াল রাখতে। আর তুমি কি করেছ! ঐ টুকু ছোট মেয়েকে বাসা থেকে যে বের করে দিল তাতে তোমার আপসুস টুকু ছিলোনা। এটা তো কেবল শুরু। বলিনি, আমি দেশের মাটিতে পা দিলে তোমার প্রতিটা সময় হারাম করে দিব! এখন আমাকে সহ্য করলে করো না করলে সামনের দরজা খোলা আছে।  যা ইচ্ছা তাই করো। আই ডোন্ট কেয়ার.....।"

কথাগুলো বলে মাহাদ ওর মাকে কল দিয়ে রুমে আসতে বলল। লাবীবা রুমে আসতেই মাহাদ বলল-

~" মা, একটু গরম পানি করে দাও তো! গোসল তো করতে পারবোনা তাই শরীরটা মুছে নিতে হবে।"

মাহাদের এমন কথায় তিতির এত অপমানিত হলো যে বলার বাহিরে। সোজা শাশুড়ীর কাছে গিয়ে বলল-

~" মা আমি করে দিচ্ছি।"

~" তিতির কিছু মনে করোনা বাবা। গাড়ীতে তোমার যা আক্রোশ দেখেছি তাতে তোমার হাতে আমার অসুস্থ ছেলেকে দিতে আমি পারছিনা। তুমি কিছু হয়ত বলবেনা কিন্তু আমার ছেলে রেগে গিয়ে না জানি নিজেই নিজের ক্ষতি করে ফেলে।"

তিতির আর কিছু বলতে পারেনি। চুপ করে সেখানেই দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। বেচারা ভয়ে আর রুম থেকেই বের হচ্ছেনা। চৌকাট সে কখনোই পেরুবেনা অন্তত আজকের দিনে। লাবীবা খুব যত্ন করে মাহাদের শরীর মুছে দিয়ে একটা পাতলা ফতুয়া পড়ে দিল। তারপর সব কিছু নিয়ে বের হয়ে গেল। সেদিন আর তিতিরের সাথে মাহাদের তেমন কোন কথা হলোনা। 


কামরান সাহেব বাসায় নেই। কয়েকদিনের সফরে দেশের বাহিরে গেছেন। বাসার পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। বাতাসি সাবিনাকে নিয়ে মাহাদের রুমে আসলো। বাতাসি তিতিরকে বাহিরে যেতে বলতেই তিতির বলল -

~" থাকিনা দাদী!"

~" নাহ্ তুই যা। তোর থাকোনের দরকার নাই।"

তিতির মন খারাপ করে চলে যেতেই বাতাসিও চলে গেল ওর পিছু পিছু। এবার মাহাদ সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করলো সাবিনাকে। সাবিনা আমার নাম নিয়েছিস কেন? তুইতো আমার মান-সম্মান তুলোধোনা করে ছাড়ছিস। পরিবার, স্ত্রী সবার কাছে কালার হয়ে গেছি। সমস্যায় পড়েছিস বুঝলাম কিন্তু তাই বলে আমার নাম নিবি পাগলের মত! সব জিনিস নিয়ে মজা করা ঠিক না সেটা তুই জানিসনা!

সাবিনা ডুকরে কেঁদে উঠলো মাহাদের কথায়। ভাইজান, আন্নের নাম না নিলে তারা অ্যারে বাসা থাইকা বাইর কইরা দিত। আন্নেতো অারে মাফ করবেন কিন্তু তারা তো করবে না। অ্যারে মাফ কইরা দেন। আপা আন্নের সাথে রাগ করছে। শুধু শুধু অ্যার জন্য এতকিছু হইলো।

~" স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এমন মনোমালিন্য হয়েই থাকে। পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তোর এই অবস্থা কি করে হইলো! কারো সাথে প্রেমঘটিত কারনে এমন করেছিস! জানিসনা, এগুলো করা হারাম?"

মাহাদ কিছুটা চোখ-মুখ শক্ত করেই কথাগুলো বলল সাবিনাকে। সাবিনা ভয়ে চুপসে গেল। আর কিছু বলতে পারলোনা। বসে থেকে মাথা নিচু করে কেদেই চলল। 

কিরে বল কার সাথে কি করেছিস! সে কি আর মানতে চাচ্ছেনা তোকে! আমাকে বল, তোর বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব তার সাথে। আচ্ছা বাচ্চা নিয়ে সমস্যা তো তোর! তোর বাচ্চার দায়িত্ব আমি নিলাম। তোকে কেউ কিছু বলবেনা আমি বেঁচে থাকা অবস্থায়। এবার তো বল, তোর সাথে কি কি হয়েছে! কথাগুলো বলে সাবিনার দিকে চেয়ে রইলো মাহাদ।

আরে মাফ কইরা দেন ভাইজান বলে সাবিনা উঠে রুম  থেকে বের হয়ে গেল।
মাহাদও আর কিছু না বলে ওকে সময় দিল। কিন্তু কিছুক্ষন পর মাহাদের ফোনে একটা মাসেজ আসলো। যেটা দেখে মাহাদের মাথা ঘুরে গেল। এটা কি করে সম্ভব! শেষে সাবিনাকে টোপ করলো আমার বিরুদ্ধে! মাহাদ আর স্থির থাকতে পারলোনা। খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলছে। আল্লাহ্ সহায় হও আমাদের উপর। এমন কিছু ঘটাইওনা যাতে আমি নিজেকে কোনদিনও ক্ষমা করে পারি। এভাবেই মনমরা অবস্থায় প্রায় দিনটা কেটে গেল মাহাদের। কোন কিছুতেই ওর মনটা বসছেনা।

রাতের দিকে নিসার উল্টাপাল্টা কথায় তিতির সাবিনার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলো। এমনকি সাবিনার গালে দুটা থাপ্পড়ও মারলো তিতির। সবার সামনে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল-

~" তুমি আমার সংসার ভাঙ্গার জন্য উঠে পড়ে লেগেছ। দয়া করে আর আমার সংসারে নাক গলাতে এসোনা। সমস্যা হয়েছে সবাইকে তা বলো। আমরা সবাই মিলে তার সমাধান করবো। কিন্তু এভাবে চুপ থেকে আমাকে মেরে ফেলে দিওনা। তোমার ভাইজান পরোপকারী মানুষ। তাই তোমার সমস্যার জন্য আমাদের কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে সেখানে ঝাপিয়ে পড়বে। আমারও তো দুটা সন্তান আছে। তাদের কথা ভেবে হলেও দয়া করে কিছুতো বল!"

সাবিনা সেদিন কোন কথা বলেনি। শুধু চোখের জল ফেলেছে। বাতাসি সবার সামনে কেঁদে বলল-

~" তিতির, সব কিছু না জাইনা কিছু কইবিনা মাইয়াটারে। আজ খুব খারাপ কাজ করছোস তুই। তোর মাফ নাই।"

বাসায় এত কিছু হয়ে গেল কিন্তু মাহাদের কানে কিছুই গেলোনা। রাত ২টা বাজে। মাহাদের চোখ কেবল লেগেছে এমন সময় ওর ফোনটা ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠলো। পাশে তিতির ঘুমিয়ে আছে। তিতিরকে না ডেকে অনেক কষ্টে ফোনটা কাছে এনে অন করে দেখলো এটা মাসেজ এসেছে আননোন নাম্বার থেকে। তাতে লেখা আছে কানে হেডফোন দিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান দেখ। মাহাদ বিশ্মিত হয়ে কানে ইয়ারফোন গুজতেই ভিডিও কল এল। বুকের ভিতর ইতিমধ্য ধড়পড় করতে শুরু করেছে মাহাদের। সাবিনা ঠিক আছে! না না ও তো বাসাতেই থাকবে। কল রিসিভ করতেই যা দেখলো তাতে মাহাদের হৃদপিন্ড টা কেঁপে উঠলো। বিছানায় বিবস্ত্র অবস্থায় সাবিনা পড়ে আছে। সাথে সাথে মাহাদ চোখ বন্ধ করে ফেলল। 

~" এই মাহাদ চোখ বন্ধ করলি কেন! এখুনি চোখ খোল বলছি, না হলে ও তো আজ শেষ।"

মাহাদ চোখ খুলতেই ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে গেল। মুখ দিয়ে শব্দ বের করতেই অপর পাশের লোকটি মুখে হাত পুরে বলল-

~" চুপ, একদম চুপ। কথা যদি মুখ দিয়ে বের করেছিস তাহলে তো বুঝতেই পারছিস।"

মাহাদ আর কথা বলতে পারেনা। স্থির চোখে চেয়ে থাকে। সাবিনাকে এত নির্যাতন করা হয়েছে যে ও উঠে দাড়াতে পারছেনা। লোকটি সাবিনার চুলের মুঠি ধরে বলল-

~" দেখ, তোর সখের ভাইজান তোরে এই অবস্থায় দেখছে।"

সাবিনা আধা অচেতন অবস্থায় ওর শরীর হাত দিয়ে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে গেল মাহাদের নাম শুনেই। লোকটি একজগ পানি এনে সাবিনার চোখে মুখে ঝাপটা দিতেই ও পুরোপুরি সজাগ হয়েই জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলো। মাহাদ তুইতো অসহায়,  নিজে তো চলতে পারিসনা। আয়, আয়না ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে যা। বুঝলি, তোর কাজের মেয়েটা অত্যান্ত চালাক। ওকে কয়েকবার ধর্ষন করেছি তবুও ওর এতে কোন আফসুস নেই। ওর দুর্বলতা বলতেই কিছু নেই। আমিতো হয়রান হয়ে গিয়েছিলাম। একে কি করে বস করি। শেষে যখন তোর উপর হামলা করার কথা বললাম তখন ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখলাম। এত ভয় পেল যে, ভয়ে কেঁদে উঠলো। তারমানে পৃথিবীতে তুই ওর সব থেকে দুর্বল জায়গা। লোকটি চোখমুখ শক্ত করে সাবিনার কোমড়ের একটু উপরের পরপর  ৫বার ছুড়িটা বসিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলল-

~" তোকে আমি এভাবেই ঠিক এভাবেই মারবো। কি করবো, তোকে তো পাচ্ছিনা তাই একে দিয়েই আমার মনের জ্বালা মেটাই।"

মাহাদ ফুপিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো। হাত দুটো জোড় করে অনুরোধ করে ইশারা করলো।  কিন্তু লোকটির এতটুকু দয়া হলোনা। বরং ছুড়ি মারা জায়গায় জোড়ে একটা লাথি বসিয়ে দিল। সাবিনার পুরো শরীর মোচড় দিয়ে ওঠে। কিন্তু কি আজব, ওর মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের হলোনা।

মাহাদ কষ্ট হচ্ছে তোর! আরও কষ্ট পাবি ওয়েট। এমন কষ্ট আমি প্রতিদিন পাই। তুই যদি সেদিন মারা যেতি তাহলে আজ এই মেয়েটাকে মরতে হতোনা। কি করবো বল! তোকে দেখলেই আমার পুরো শরীরে আগুন জ্বলে ওঠে। মন চায় তোকে কিমা করে ফেলি। লোকটি সাবিনাকে টেনে হিচড়ে তুলেই বলল-

~" আমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছিলো সে। তোর নাম ওর ভিতর জাদুর মত কাজ করতো। সেটার পুরো ফায়দা নিছি আমি। আমাকে এখন মারতে ইচ্ছা করছে তোর তাইনা! আহ্ তুইতো পঙ্গু মানুষ। তুই আর কি করতে পারবি। কিন্তু সাবিনা তোর জন্য অনেক কিছু করতে পারবে।  দেখবি সেটা?"

সাবিনা বেবি আমার, মাহাদকে তোমার কারিশমা দেখাওতো! তুমি না দেখালে সেটা মাহাদকে দেখাতে হবে বলতেই সাবিনার সামনে থাকা ছুড়িটা হাতে নিয়েই লোকটি ওর গলায় ফোচ মেরে দেয়। সাবিনা ধপ করে খাটের উপর পড়ে যায়। কয়েকবার শরীর থরথর করে কেঁপে উঠে ও শেষ নিঃশ্বাসটা ত্যাগ করে।

মাহাদ আর দৃশ্যটা নিতে পারেনা। ঐ অবস্থায় বিছানায় টলে পরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন