২৫!!
মায়রা অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আয়ানের অপেক্ষা করছে। লোকটা আসছে না কেন সেটাও বুঝতে পারছে না বেচারি। এদিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও কেমন একটা লাগছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ টের পেল ওর ঠিক পিছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা খেয়াল হতেই মায়রার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো। ভয়ে ভয়েই চট করে পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। আয়ান ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো। মায়রার মুখ একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আয়ানকে দেখে এতোক্ষণে ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে পেল মেয়েটা।
-মায়রা? কি হয়েছে? এমন দেখাচ্ছে কেন? ভয় পেয়েছিলে নাকি?
-আপনি এতোক্ষণে ফিরলেন! আমি কি ভয় পাচ্ছিলাম---।
-ভয় কেন পাচ্ছিলেন ম্যাডাম? আমি কি আপনাকে একা ফেলে চলে যেতাম?
-নাহ---। তবুও--। আমি এর আগে এতো বড় শপিংমলে তো আসিনি৷ কিছু চিনিও না।
-আচ্ছা ম্যাম। সরি। আর হবে না। এখন চলুন?
-শাড়ি প্যাকিং?
-ম্যাডাম সবগুলো ব্যাগ গাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে এতোক্ষণে--।
-ওহ----।
-চলো চলো? বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবার অফিসে যাবো। কয়দিন পর তো আবার বিয়ের কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে যাবো। তখন আবার অফিসে যাওয়ার সময় পাবো না।
-আচ্ছা----।
-হুম-----।
আয়ান মায়রার হাত ধরে আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো। তারপর কি মনে হতেই একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সুইচ টিপলো। দরজাটা আপনাআপনি খুলে যেতেই মায়রা হা করে তাকিয়ে রইল। আয়ান হেসে মায়রার হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো। তারপর রুমটার দেয়ালের গায়ে থাকা কয়েকটা বোতাম টিপে মায়রার দিকে তাকালো। মায়রা হা হয়ে আয়ানের কাজকর্ম দেখছিলো। এই বদ্ধ রুমটায় কি করতে এসেছে সেটাই বুঝতে পারছে না। আয়ান মায়রার মুখের অবস্থা দেখে আলতো করে কাছে টেনে নিলো। মায়রা চমকে আয়ানের মুখের দিকে তাকালো।
-আমরা--আমরা এখানে কেন এসেছি?
-আমরা এখন একটু শূন্যে ভাসবো ম্যাডাম। তাই---।
-মানে! ওই সিঁড়িগুলো দিয়ে নামবো না?
-উহু--। আমরা এখন উপরে যাচ্ছি---।
-কই!
-টের পাচ্ছো না উপরে যাচ্ছি যে? এই যে বাইরে দেখো? তাহলে বুঝতে পারবে---।
কাঁচে ঘেরা দেয়ালটা পার করে এবার মায়রার নজর পড়লো বাইরে রাস্তার দিকে। এতোক্ষণে টের পেল সবকিছু আস্তে আস্তে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। দেখেই মায়রার মাথাটা একটু ঘুরে উঠলো। আয়ান মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে রেখেছিলো আলতো করে। এবার আরেকটু শক্ত করে ধরলো।
-সব নিচে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। মাথার মধ্যে কেমন একটা লাগছে---।
-ওটা কিছু নয় ম্যাডাম--।
-কিন্তু এসব কি জিনিস! অদ্ভুত অদ্ভুত সব কান্ড এখানে!
-অদ্ভুত কিছু না পাগলি--। এটা হলো বক্স লিফ্ট। এলিভেটরও বলে এটাকে। আর তখন যে সিঁড়িগুলোয় আসলাম ওটাও লিফট। বুঝলা?
-হুম---। জানেন আমি এর আগে কখনো এসব দেখি নি। এতো অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস থাকতে পারে, আমি জানতামই না----।
-কোন ব্যাপার না। তোমাকে নতুন নতুন সবকিছুর সাথে আমিই পরিচয় করিয়ে দিবো। শুধু এভাবে আজীবন আমার পাশে থেকো----।
মায়রা মুখ নামিয়ে লাজুক হাসলো। আয়ান মায়রার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।
-এই লিফ্টটা আমার একটুও পছন্দ হয়নি। উহু-।
-কেন?
-দেখছো না মাথার উপরে সিসিটিভি ক্যামেরা ঝুলানো। কোথায় একটু তোমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরবো। তা না-। ব্যাটারা এখানেও নজর দিতে হাজির---।
মায়রা হেসে ফেললো আয়ানের কথা শুনে। একটু সরে এসে আয়ানের পাশে দাঁড়ালো একটু দূরত্ব দেখে। একটু পরেই লিফ্টের দরজাটা খুলে গেল। মায়রা একেবারে অবাক হয়ে গেল। দুজন মিলে বাইরে বেরিয়ে আসতেই মায়রা দেখতে পেল এই ফ্লোরে সব খাবার দোকান। খাবারের সুন্দর ঘ্রাণে পুরো জায়গাটা ভরে আছে। মায়রা আয়ানের দিকে তাকালো।
-আমরা এখানে কি করতে এসেছি?
-ওমা! কয়টা বাজে খেয়াল আছে? প্রচন্ড খিদে পেয়েছে আমার। তোমারও নিশ্চয়ই খিদে লেগেছে? তাই ভাবলাম লাঞ্চ সেরে তারপর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।
-ওহ আচ্ছা।
এতোক্ষণে মায়রার খেয়াল হল ওর নিজেরও ভিষণ খিদে লেগেছে। আয়ান মায়রার হাত ধরে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।।
-আসো?
-হুম।
আয়ান মায়রার সাথে একটা দোকানে ঢুকে চেয়ার টেনে মায়রাকে বসতে বললো। মায়রা বসার পর ওর সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসলো আয়ান। টেবিলে রাখা মেন্যুটা মায়রার দিকে এগিয়ে দিলো।
-কি খাবা বলো?
-আমি! আমি কি বলবো? আপনিই দেখুন---।
-হায় রে! তুমি যে আমাদের পিচ্চিগুলোর কি হাল করবা কে জানে?
মায়রা লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিলো। আয়ানও সেটা দেখে একটু মুচকি হেসে খাবার অর্ডারে মন দিলো। বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে খাবার দিয়ে যেতে তাই দুজনে চুপ করে বসে রইলো। একটু পর পর দুজনের চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। আয়ান চোখ সরিয়ে না নিলেও মায়রা চোখাচোখি হওয়ার সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
-ম্যাডাম কি কিছু বলবেন?
-আচ্ছা? আপনি ভাইয়ার সাথে কেন তিথিকে পাঠালেন? তিথিকে বাসায় পৌঁছে দিয়েও তো আমরা আসতে পারতাম---।
-হুম। পারতাম। কিন্তু ওদের দুজনকেও তো একটু আলাদা করে কথা বলার সময় দেয়া উচিত। তাই না?
-কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
-কেন? ওরা দুজনেই দুজনকে ভিষণ পছন্দ করে। আপাতত কিছুদিন নিজেদেরকে বুঝার সময় দেয়া উচিত না ওদেরকে? যাতে করে ওরাও বুঝতে পারে ভবিষ্যতটা ওরা একসাথে কাটাতে চায় কিনা। বা একে অন্যের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা----।
------------------------------
-আমার বোন বলে বলছি না। আশা করি তুমিও মানবে যে তিথি-----।
-কথাটা তিথিকে নিয়ে না। কথাটা অন্য জায়গায়।
-যতটুকু বুঝেছি তোমার ভাইয়াও ভিষণ ভালো একটা ছেলে। বাজে কোন স্বভাব নেই। অফিস সামলাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা ওরা একসাথে ভালো থাকবে---।
-আপনি বুঝতে পারছেন না। ব্যাপারটা ভাইয়া বা তিথি কাউকে নিয়ে না---।
আয়ান আলতো করে মায়রার হাতে একটা হাত রেখে অন্য হাতে মায়রার মুখটা তুলে ধরলো।
-তাহলে সমস্যাটা কোথায় ম্যাডাম?
-আমি আপনাকে বোঝাতে পারছি না। তিথি যে পরিবেশে বড় হয়েছে আমাদের বাসাটা একদমই তেমন না। ওখানে গিয়ে ও কি করে---।
- রিল্যাক্স মায়রা। তুমি কি বোঝাতে চাইছো আমি জানি না। তবে পরিবেশ যেমনই হোক সবাইকে মানিয়ে নিতেই হবে। তাছাড়া তিথিকে তো চিনোই। ও ওর মতো করে সবটা গুছিয়ে নিবে----।
-কিন্তু মা বাবা! উনারা তো---।
-আরে এতো চিন্তা করো না। ভালোবাসা দুটো মানুষকে সব কিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখিয়ে দেয়। আর তোমার বাবা মাও ওকে ভালোবেসেই আগলে রাখবে।
মায়রা মুখ নামিয়ে চিন্তা করছে। যেখানে উনারা নিজের মেয়েকেই আগলে রাখার প্রয়োজন মনে করেন না সেখানে তাদের কাছে ছেলের বউ হয়ে এসে তিথি কতটা ভালোবাসা পাবে! মেয়েটা তো একেবারে ছেলেমানুষ! কিছু না বুঝে ভুল কিছু করে বসলে তখন ওর উপরও যদি মায়রার মতোই----?
-মায়রা?
-হুম?
-এতো ভেবো না। জাস্ট একটা কথা মনে রেখো। তিয়াশ ভাইয়া যদি ভালোবেসে ওর হাতটা ধরে তবে ওকে ভালো রাখার দায়িত্বটাও উনি নিবে। ওর সাথে কোন অন্যায় কখনোই হতে দিবে না। এটা নিয়ে এতো টেনশনের কিছু নেই। ওরা যেন একসাথে সুখে থাকে সেটাই দোয়া করো।
-হুম।
মায়রা আর কথা বাড়ালো না। কি বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না ও। ও নিজে তো বাবা মায়ের কাছে বোঝা ছিল। তাদের প্রিয় ছেলের বউ নিশ্চয়ই তাদের কাছে বোঝা হবে না। ওর সাথে তাই খারাপ ব্যবহার নাও করতে পারে। আর অন্যায় কিছু করলে অবশ্যই তিয়াশ প্রতিবাদ করবে। নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করবে। মায়রা এসব ভাবতে ভাবতেই ওয়েটার খাবার আনতে শুরু করলো। মায়রা সব ভাবনা ভুলে সেটাই অবাক হয়ে দেখছে। নানান ধরনের খাবারে ভর্তি হয়ে গেছে টেবিলটা। মায়রা একবার খাবারের প্লেটগুলোর দিকে তাকাচ্ছে আর একবার আয়ানের দিকে।
২৬!!
মায়রা তাজ্জব হয়ে টেবিলে রাখা খাবারগুলো দেখছে। দুটো প্লেটে বিরিয়ানি দেয়া হয়েছে। সাথে ঝাল করা মুরগির মাংস, চিকেন ফ্রাই, সুন্দর ঘ্রাণ ছড়ানো গরুর মাংস, কালো কালো করে ভুনা মাংস, সবজি, সাদা রঙের একটা সালাদ, আর সফট ড্রিংকসে কোকাকোলা।
-এই যে ম্যাডাম? খাওয়া শুরু করুন। এভাবে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সব শেষ করতে হবে। বুঝলেন?
-এসব কি!
-আচ্ছা দেখো? এটা স্পাইসি চিকেন, এটা মেজবানি গরুর মাংস, এটা গরুর মাংসের কালা ভুনা, এটা মিক্সড ভেজিটেবল, এটা হোয়াইট সসেড সালাড---।
-এতো খাবার----?
-এই শপিংমলে এসে এখানে না খেলে আসাটাই মিস হবে---। এখন খেয়ে নাও---। আর এতো এতো কি করো! আমাদের বাসায় গেলে না খেলে তো আম্মু আব্বুর হাতে মাইর খাবা---। সো হয় খাওয়ার প্রেকটিস করো, নয়তো মাইর খাওয়ার জন্য রেডি হও মনে মনে--।
মায়রা কি বলবে বুঝে উঠছে না।
-ওই? আবার কোন রাজ্যের চিন্তায় বসলে? খাও না?
-হুম? হুম-। কিন্তু এতো খেতে পারবো না---।
-আরে খাওয়া শুরু করো। পরে দেখা যাবে পারো কিনা--।
মায়রা আর কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলো। আয়ান খেতে খেতে কোথায় কোন খাবার একবার হলেও টেস্ট করা দরকার-এসব নিয়েই বলে যাচ্ছে। আর মায়রাকে খাবার প্লেটে বেড়ে দিচ্ছে। মেয়েটা খেতে না চাইলেই চোখ গরম করে তাকাচ্ছে। মায়রা তাই কিছু বলতেও পারছে না। কোনমতে খেয়ে উঠলো বেচারি। আর চিন্তা করতে লাগলো। খেতে খেতে যে মানুষ হয়রান হয়ে যায় এটা ওর ধারণাও ছিল না। মায়রা আসলেই হয়রান হয়ে গেছে। আর খাবারগুলোও এতো টেস্টি ছিলো যে ও তৃপ্তি করেই খেয়েছে। আয়ান আবার মেনু কার্ড হাতে নিয়েছে দেখে মায়রা ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকালো।
-আবার কি দেখছেন?
-ওমা! ডেজার্টে কি খাওয়া যায় সেটাই খুঁজছি। চকলেট! নাকি আইসক্রিম! পুডিং! ফালুদা! পায়েস! পেস্ট্রি!
-মাত্র না আমরা লাঞ্চ করলাম?
-খাওয়ার পরে মিষ্টি কিছু না খেলে আমার শান্তি লাগে না। বহুদিনের বদঅভ্যেস-। কি খাবা বলো?
-আমি আর কিছু খেতে পারবো না।
-আচ্ছা--। একটু করে? কেমন? কি খাবা বলো।
-উমমম---। আইসক্রিম?
-ওকে-। চকলেট? ভ্যানিলা? স্টেবেরি? ম্যাংগো? কোন ফ্লেভার?
মায়রা থতমত খেয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কোন ফ্লেভারের আইসক্রিমের টেস্ট কি রকম ও তো জানেই না।
-নাকি কোন নিবো?
-হুম? নিন যা ভালো লাগে।
-উমমমম---। চলো কোন খাই যেতে যেতে--।
-আচ্ছা---।
আয়ান দুটো কোন নিয়ে বিল পে করে মায়রার সাথে এলিভেটর দিয়ে নিচে নামলো। গাড়ির পিছনের সিটে শপিংব্যাগগুলো রাখা দেখে মায়রা অবাক হলো।
-এগুলো গাড়িতে কখন রাখলো?
-ওই যে বিল দিতে গেলাম না? তখনই গাড়িতে রেখে গেছি ব্যাগগুলো। তাই আরকি দেরি হলো।
-ওহ----।
-এই এই? কোন গলে যাবে-। খাও ধরো---।
-আপনি খাবেন না?
-হুম----।
দুজনেই কোন খাওয়া শুরু করলো। আয়ান খাচ্ছে আর ড্রাইভ করছে। আয়ানের খাওয়া শেষ হলে মায়রা দিকে চোখ পড়লো আয়ানের। আয়ান মুচকি হেসে ড্রাইভিংয়ে মন দিলো। মায়রা আয়ানের হাসি দেখে একটু অবাক হলো।
-হাসছেন কেন?
-উহু--। কিছু না। আইসক্রিমটা তো গলে যাচ্ছে ম্যাডাম--। তাড়াতাড়ি খান---।
-হুম---।
মায়রার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। লোকটা কেন হেসেছে বলছেও না। একটু বললে কি হতো! মায়রা কোনটা খাওয়া শেষ করে কাগজটা কোথায় ফেলবে খুঁজছে।
-বাইরে ফেলো না। সামনের এই বক্সটায় রাখো। আমি পরে ফেলো দিবো---।
-আচ্ছা---।
মায়রা কোনের প্যাকেটটা বক্সে রেখে চুপ করে বসে রইলো। হাতে আইসক্রিম লেগে একটু আঠাআঠা লাগছে। কেমন চ্যাঁটচ্যাঁটে হয়ে আছে। হাত মুখ না ধুতে পারলে কেমন কেমন লাগছে মায়রার। আয়ান মায়রার উশখুশ করা দেখে গাড়িটা ব্রেক করলো।
-কি হয়েছে মায়রা?
-একটু পানি হবে গাড়িতে? হাত মুখ ধুয়ে নিলে ভালো হতো মনে হয়--। আঠা আঠা হয়ে আছে মুখ হাত---।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি--। এমন সুন্দর করে আইসক্রিমের লিপস্টিক পড়েছো যে---। কিন্তু পানি তো নেই--। কি করা যায় বলো তো?
-কি করবো তাহলে?
-অন্য একটা উপায় আছে---।
-কি বলুন না প্লিজ? ঠোঁটে মুখে মনে হচ্ছে আঠা লাগিয়ে দিয়েছে। বিরক্ত লাগছে---।
-পরিষ্কার করে দেই?
-কি করে?
-ওয়েট এ সেকেন্ড----।
আয়ান আস্তে করে মায়রার সিটবেল্টটা খুলে দিলো। মায়রা বোঝার চেষ্টা করছে আয়ান কি করতে চাইছে। আয়ান হুট করে মায়রাকে একেবারে নিজের কাছে টেনে নিলো। মায়রা চমকে আয়ানের চোখের দিকে তাকালো। আয়ান এগিয়ে আসছে দেখে চোখ বুজে নিলো। আয়ান একটু মায়রার মুখটা দেখে মায়রার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে মায়রার ঠোঁটের স্বাদ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মায়রা শক্ত করে আয়ানের শার্টটা আঁকড়ে ধরলো। আয়ানও মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে আরো একটু কাছে টেনে নিলো। মায়রার ঠোঁটের সবটুকু আইসক্রিম লিক করা শেষ হলে আয়ান সরে এসে মায়রার মুখের দিকে তাকালো। মায়রা তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। আয়ান হেসে মায়রার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমো খেল।
-চোখ খোলো লজ্জাবতী?
------------------------------
-আমি কি ভুল কিছু করলাম গো লাজুক পরীটা?
মায়রার ঠোঁটে জোড়া তখনো কাঁপছে। কিছুই বলতে পারলো না এবারও। চোখের পাতাগুলো যেন জড়াজড়ি করে একে অন্যকে চেপে ধরে আছে লজ্জা পেয়ে। আয়ান বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। একটু এগিয়ে এসে মায়রার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আলতো করে।
-এই কথাটা ভেবেই হাসছিলাম তখন। তোমার ঠোঁটের শেষ বিন্দু আইসক্রিমটুকু চুষে নিলে তুমি ঠিক কতোটা লজ্জায় লাল হবে সেটা ভেবেই--। এখন দেখছি তুমি আরো বেশি লাল হয়ে গেছো।
আয়ানের কথা শুনে লজ্জায় আরো কুঁকড়ে গেল মায়রা। তার উপরে যখন আয়ানের উষ্ণ নিঃশ্বাসগুলো মায়রার কানে এসে ধাক্কা খাচ্ছিলো মায়রার মনে হচ্ছিল ওর বুকের ভিতরে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে। এতো লজ্জা পেয়েছে বেচারি যে তাকাতেই পারলো না। চোখ বন্ধ করেই বসে রইলো চুপ করে। আয়ান আর কিছু না বলে মায়রাকে এক হাতে বুকে টেনে নিয়ে গাড়ি চালানোয় মনযোগ দিলো। আর মায়রা আয়ানের বুকের ভিতরে থেকে ওর বুকের ঢিপঢিপ শব্দগুলো শুনছে। আয়ানের বুকের ছন্দবদ্ধ হৃৎস্পন্দনগুলো শুনতে বেশ লাগছে মায়রার। মনে হচ্ছে এমন করে যদি সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়া যেত তবে কতই না ভালো হতো। জীবনটা যে কেন এখানেই থেমে যায় না কে জানে!