অচেনা অতিথি - পর্ব ৩৭ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


দু'হাতে তিতিরকে জড়িয়ে ধরেই মাহাদ বলল, " তিতির, আল্লাহ্ আমাকে দ্বিতীয় বার জিবন দিল। তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো যেওনা। আমি পাগল হয়ে যাবো। তুমি তো আমায় প্রায় মেরেই ফেলে দিয়েছিলে।"

মাহাদ তিতিরকে নিচে নামিয়ে দিয়ে আবার বলে উঠলো, " গায়ে এর মধ্যই জ্বর বেঁধিয়ে ফেলছো?"

" আপনি আসছেন না!  এখন সব ঠিক হয়ে যাবে।"

রবিন শান্তাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। শান্তার হাতে তিতিরের জুতো জোড়া।  কাছে এসে জুতো মাটিতে রেখে তিতিরকে পড়তে বলে শান্তা মাহাদকে সালাম দিতেই রবিন বলল, " ভাইয়া বাসায় আসেন।"

না রবিন আজ যেতে পারবোনা। আল্লাহ্ চাইলে ইনশাল্লাহ্ আমি আর তিতির তোমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে আসবো। যদি সম্ভব হয় তাহলে দুইদিন থেকেও যাবো। সেদিন ইনভাইট না করলেও আসবো।

নাহ্ ভাইয়া কোন কথা শুনবোনা। আপনি প্রথম আমাদের বাসায় আসলেন আর না কিছু মুখে দিয়েই চলে যাবেন! তা হবেনা। আপনাকে যেতেই হবে।

দু'ঘন্টা আগে দেশে ফিরেছি। অনেক ক্লান্ত ভাই। কথা দিলাম অন্য কোন দিন আসবো। যেকোন দরকারে আমাকে একবার স্মরন করবে। ইনশাল্লাহ্ আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো তোমার সমস্যা সমাধান করতে বলে তিতিরকে নিয়ে মাহাদ গাড়ীতে উঠল।
মাহাদ সিটে বসতেই গোলাব অদ্ভুদ একটা সুরে শব্দ করে ওর মুখ দিয়ে মাহাদের গালের সাথে নিজের গাল ঘষিয়ে মাহাদকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলো।

মাহাদ গোলাবকে আদর করতেই গোলাব আনন্দে গড় গড় করতে লাগল। মাহাদ হেসে একটা বিস্কিটের প্যাকেট খুলে গোলাবের সামনে ধরতেই গোলাব সেটা মুখে নিয়ে পিছনের ছিটে চলে গেল। আর সিটে বসে বিস্কিট খেতে শুরু করলো।

মাহাদ গাড়ী স্টার্ট দিতেই তিতির এসে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতেই মাহাদের হাতের দিকে ওর নজর পড়ল। হাতে রক্ত জমাট  বেঁধে গেছে। তাও ডান হাতে।

তিতির চট করে মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে দুরে এসে চোখ বন্ধ করে বলল," আপনি বাসায় কি করেছেন? আপনি আমার কথা কি শুনবেন না! কেন সবসময় মাথা গরম করেন আর নিজেকে এমন করে আঘাত করেন। তিতিরের ঠোট দু'টি কাঁপছে। "

মাহাদ শুধু একবার আহ্ বলে শব্দ করতেই তিতির চোখ দুটি খুলেই মাহাদকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেই কাদতে লাগল। কেন আপনি নিজেকে এমন শাস্তি দেন! আমার প্রচন্ড কষ্ট হয় তো?

" তোমাকে চোখের সামনে না দেখলে আমারও এমন কষ্ট হয়।"

গাড়ী চলছে তার গন্তব্য স্থলে। মাহাদ এক স্থানে এসে গাড়ী থামিয়ে তিতিরকে বলল," জাষ্ট পাঁচ মিনিট ওয়েট করো আমি আসছি।"

তিতির অপেক্ষা করছে। মাহাদ পাঁচ মিনিটের কথা বলে চলে গেল কিন্তু আসার কোন নামই নেই। তিতিরের অধৈর্য ধরে গেল। এতক্ষন সময় লাগে!  কোন সমস্যা হলো না তো? গোলাব তুই একটু গিয়ে দেখবি, বাবা কেন এত দেরি করছে?

প্রায় ২০ মিনিট পর মাহাদ ফিরে এল। হাতটা ড্রেসিং করেছে আর হাতে কয়েকটা সপিং ব্যাগ। স্যরি একটু দেরি হয়ে গেল।

মাহাদ গাড়ী স্টার্ট করলো। অনেক খানি পথ চলার পর তিতির নিজের সিট বেল্ট খুলে মাহাদের কাছে এগিয়ে এসে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। 
মাহাদ তিতিরকে বাম হাতে আরো কাছে টেনে আনলো তারপর একটা কিস করতেই তিতির বলল, " আমরা কই যাচ্ছি মাহাদ?

" আজ ভেবেছি তোমাকে নিয়ে গাছতলায় থাকবো। কি থাকবে তো?"

" তিতির মাহাদের বুকে ঐ অবস্থায় ঠোট ছুয়ে বলল," তিতিরটা তো শুধু আপনার। এখন তাকে আপনি যেমন ব্যবহার করবেন সে তেমনই খুশি মনে ব্যবহার হবে।"

মাহাদ  এক বিলাশবহুল হোটলে এসে গাড়ী থামালো। তিতির গোলাবকে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো আর মাহাদ গাড়ী পার্কিং করে এসে তিতিরকে নিয়ে হোটেলে চলে গেল। 

মাহাদ খাবারের অর্ডার দিয়েই তিতিরকে নিয়ে একটা রুমে ঢুকলো। মাহাদ রুমে ঢুকেই শাওয়ারে ঢুকলো। শাওয়ার নিয়ে এসে দেখলো তিতির আর গোলাব অন্ধকার ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে পুরো শহর দেখছে। দরজায় নক করা শব্দ হতেই মাহাদ দ্রুত টাউজার পরে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে দরজাটা খুলে দিল।

হোটেল বয় এসে খাবার দিয়ে গেল। মাহাদ তিতিরকে ডাক দিতেই গোলাব দৌড়ে এল তিতিরের আগে। তিতির আসতেই মাহাদ বলল," আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে। গতকাল রাতে কিছু স্নাক খেয়েছিলাম। আর খাওয়া হয়নি। গোলাবকে খাবার দিয়ে আমাকে দাও।"

তিতির গোলাবকে খাবার দিয়ে বলল," আমার সামনে আপনি সবসময় শরীরে কাপড় জড়িয়ে রাখেন কেন! আমাকে কি লজ্জা পান?

" খালি শরীরে আমাকে দেখলে তুমি নিজেকে কন্টোল করতে পারবেনা। তাই এমন থাকি বলে মাহাদ শরীরে টাওয়ালটা ভালো করে জড়িয়ে নিল।"

মাহাদের এই স্পষ্টবাদী কথাগুলো তিতিরের খুব ভালো লাগে। তিতির কথা না বাড়িয়ে প্লেটে খাবার বাড়তেই মাহাদ তিতিরের সামনে বসল। তিতির মাহাদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলল," বাসার সবাই ভালো আছে?"

""""""""""""""""""""?

" আসমাকে বকা দেননি তো! আমি ওকে আমার কথা আপনাকে বলতে নিষেধ করেছিলাম।"

" তিতির আমি খুব ক্লান্ত। সব কথা পরেও তো বলা যায়!"

" আপনি খুব সুন্দর হয়ে গেছেন মাহাদ। মনে হচ্ছে আপনার পাশে  আমি একদম বেমানান।"

কথাটা শুনেই মাহাদ ওর হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে লাগল বাম হাত দিয়ে।

" তিতির জলদি প্লেট রেখেই একহাত দিয়ে মাহাদের হাতটা ধরে বলল," স্যরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। এমন কথা আমি কোনদিনও বলবোনা। আমি কথার কথা বলেছি। মিঃ মাহাদের চেয়ে মিসেস মাহাদ তো হাজার গুন সুন্দর।"

" ফার্দার যেন এমন কথা বার্তা না শুনি।"

 তিতির, মাহাদ, গোলাব খাবার কমপ্লিট করে মাহাদ হোটেল ম্যানেজার কে টেলিফোন করতেই হোটেল বয় এসে সব কিছু নিয়ে গেল। তিতিরকে জ্বরের মেডিসিন দিতেই গোলাব সোফায় গিয়ে লম্বা একটা হাই তুলে ঘুমিয়ে পড়লো। 

রাত তখন ন'টা বাজে। তিতির এশার সালাতে দাড়িয়েছে এমন সময় মাহাদের ফোনে একটা কল আসলো।  মাহাদ ফোন হাতে নিয়েই দেখলো ওর বাবার কল।

" সালাম দিয়ে মাহাদ বলল," বাবা কিছু বলবেন?"

" মাহাদ কই তুই! বাসায় কখন আসবি?"

" বাবা, আজ একটা কাজে আটকে গেছি। ইনশাল্লাহ্ আগামীকাল যাব।"

" কই আছিস?"

" বাবা বললাম তো কাল আমি যাবো। কেন কথা বাড়াচ্ছেন? ল্যাগেজের উপর ৩ নাম্বার মার্ক করা আছে। ওটা শুধু আপনার। আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আমি খুব ক্লান্ত বাবা। আমার ঘুমের প্রয়োজন।"

কামরান সাহেব কল কেটে দিল। মাহাদ ফোনটা রেখে তিতিরের পাশে দাড়িয়ে সালাত আদায় করলো। তারপর তিতিরকে নিয়ে ঘুমাতে গেল। 
তিতিরকে বুকে নিয়ে সুয়ে মাহাদ বলল, " কথা বলবানা, চুপচাপ করে ঘুমিয়ে পড়বা।"

" আমি আপনার শরীরটা ম্যাসাজ করে দেই! তাহলে জলদি ঘুম আসবে।"

" নাহ্, একদিন করে নিলে পরের দিন বদ-অভ্যাসে পরিনিত হবে। তুমি ঘুমাও।"

মাহাদ, গোলাবকে ইব্রাহিম স্যারের কাছ থেকে কিভাবে নিয়ে এসেছেন? না মানে, রাস্তায় একটা মহিলা ডাইভার  ওর সম্পর্কে সব কিছু বললো তো তাই আর কি!"

" মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল," গোলাব আমার সন্তানের মত। ওকে আমি ওনার কাছে দিয়ে এসেছি ও যখন ১ মাস বয়েসের ছিল। ইব্রাহিম আঙ্কেল আমাদের বাসায় আগে প্রচুর আসতেন। ওনি কুকুর লালন-পালন করতে খুব ভালোবাসতেন। ওনাকে গিফট করেছিলাম গোলাবকে। প্রায় ওনাদের বাসায় গিয়ে গোলাবের সাথে সময় কেটে আসতাম। 
ওনার কোন সন্তান ছিলেন না। আন্টি দু'বছর আগে মারা গেছেন। আর আঙ্কেল মারা গেছে গোলবকে যেদিন এনেছি তার এক সপ্তাহ আগে। উনি গ্রামের বাসায় ছিলেন। ওনাদের কেয়ারটেকার আমাকে কল দিলে আমি ওকে আমাদের কাছে নিয়ে আসি। 
আঙ্কেল মারা গেছেন বাবা জানেনা। বাবা পেসারের রোগী তাই জানানো হয়নি।

জানো তিতির, আমি যখন ওকে নিতে গিয়েছিলাম ও আমার কাছে  দৌড়ে এসে আমাকে  আঙ্কেলের কবরের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে আন্টি -আঙ্কেলের করব। দু'টি কবরই লাল ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল। আমি সেদিন গোলাবের কান্না দেখেছি। এরা অত্যান্ত প্রভূভক্ত প্রানী। সেদিন আমি ওকে ঠিক তোমার মত এভাবেই বুকে তুলে নিয়েছিলাম। আমি যতটা পাড়ি ততটা ওকে আদর করি আর নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করি। আমার অনুপস্থিতিতে তুমি ওকে নিশ্চয় দেখেছ, আমার জন্য ওর প্রতিক্ষা করা।

মাহাদ কথাগুলো বলে থামলো। তিতির সাথে সাথে গোলাবের দিকে তাকালো। সত্যি আজ গোলাব নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে।

তিতির আর কথা না বাড়িয়ে মাহাদের বুকে মুখ গুজিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রচন্ড ক্লান্ত থাকার কারনে আজ মাহাদ দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়লো।

♦♦♦♦

পরের দিন সকালের নাস্তা সেরে তিতিরকে নিয়ে মাহাদ হোটেল থেকে চলে আসলো। তারপর একটা বাসায় নিয়ে গেল তিতিরকে। দরজায় কলিংবেল চাপাতেই মাহাদের বান্ধবী হিনু এসে খুলে দিল।

এই মাহাদ, তুই এত জলদি আসবি জানতামই না বলেই মাহাদকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে মাহাদ সরিয়ে এল। 

"হিনু, এখন আমি বিবাহিত তাই বৌ নিশ্চয় এত বেহাপনা মেনে নিবেনা।"

" অহ্ স্যরি, এটাই কি তোর বৌ?"

" তিতির হিনুকে সালাম দিয়ে বলল," আপু কেমন আছেন? বাসার সবাই কেমন আছে?"

তিতিরের ব্যবহার অত্যান্ত ভালো লাগল হিনুর। মাহাদ ভিতরে আয় বলে তিতিরকে নিয়ে পাশের ফ্লাটে চলে গেল হিনু। দুইটা রুম, দুটাই এটেস্ট বাথরুম, দুই রুমের মাঝখানে একটা মিডিয়াম ডাইনিংরুম, আর সুন্দর পরিপাটি একটা কিচেন। পুরো বাসা আগে থেকেই সাজানো গোছানো। একটা ঝাড়ুও বাহির থেকে কিনে আনার প্রয়োজন নেই।

হিনু সব কিছু দেখিয়ে দিয়ে বলল," তুই তো আমার ফ্রেন্ড হস তাই তোর থেকে একটু কম ভাড়া নিব। কিন্তু এতেও যেন কিপ্টামি করবিনা।"

হিনু, আমার বৌকে চালানোর মত যথেষ্ট সাধ্য আমার আছে। তাই তোকে ওটা নিয়ে ভাবতে হবেনা। আন্টির সাথে দেখা করি চল।

আরে আমিতো তোর সাথে মজা করছিলাম। প্লিজ মাকে বলে যেন আবার সেই আগের মত বকা খাওয়ায় নিস না। আমি কিন্তু তোর সাথে সত্যিই মজা করেছি।

মজা করার আগে হাজার বার ভাবা উচিত ছিল তোর। তুই আমার বৌয়ের সামনে এভাবে প্রেস্টিজ নষ্ট করবি আর আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব? 
মাহাদ হিনুর মায়ের সাথে কথা বলে তিতিরকে নিয়ে আবার ওদের ফ্লাটে ফিরে এল।

তিতির, আজ থেকে তোমাকে এখানেই থাকতে হবে। আর হ্যাঁ আমি সন্ধ্যায় আসবো। দুপুরে হিনুদের বাসায় তোমার দাওয়াত আর রাতের জন্য তুমি রান্না করবা। আমরা একসাথে খাবো। গোলাব এসে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। মাহাদের লেট হয়ে যাচ্ছে তবুও মাহাদ গোলাবের ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় আছে।

শেষে মাহাদের দেরি হওয়াতে গোলাবের গা স্পর্শ করতেই গোলাব চোখ মেলে মাহাদের দিকে চেয়ে রইলো। মাহাদ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল," মাকে রেখে যাচ্ছি, ওর খেয়াল রাখার দায়িত্ব কিন্তু তোর?"

"ওর ঘুম ভাঙ্গার জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করছিলেন?"

ও ঘুম থেকে ওঠার পর  ইব্রাহীম আঙ্কেলকে আর কোনদিন দেখেনি যেটা ওর জন্য খুব কষ্টকর ছিল। ও খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়েছিল। 
ঘুম থেকে উঠে যদি আমায় না দেখতে পেত তাহলে তোমাকে পুরোদিন খুব জ্বালাতো। মাহাদ আর দেরি না করে বাসায় রওনা দিল।

♦♦♦♦

মাহাদ বাসায় চলে এসেছে। রুমে ঢুকে ফ্রেস হতেই বাতাসি রুমে এসে বলল," বিয়া কইরা দেহি তোর অনেক উন্নতি হইছে। মনে হইতাছে তোর পাঙ্খা গজাইছে। তা বৌকে খুঁইজা পাইলি?"

" শুধু খুঁজে পাইনি। তারসাথে রাত্রি যাপনও করে এসেছি।"

" কই আছে ও?"

" সেটা তোমার না জানলেও চলবে। ওর ব্যাপারে তোমার মুখ থেকে কিছু শুনতে চাইনা। তুমি আমার গোলাবরে মারতে চাইছো তাইনা? তোমার লাঠিরই ব্যবস্থা করবো আজ।"

" খবরদার অ্যার লাডিতে হাত দিবিনা কইলাম।"

" সেটা দেখা যাবে।"

সাবিনা আর আসমা দু'জনেই মাহাদের রুমে এসে দাড়িয়ে রইল। আসমার কথা বলার আর সাহস নেই তাই সাবিনা তিতিরের কথা জিঙ্গাসা করলো।

ও ঠিক আছে। আসমা, তোমার বেডিং পত্র গোছাও। এই বাসায় থাকা তোমার দিন শেষ।

" ও কোনহানে যাইবো!"(বাতাসি)

মাহাদ কোন কথা না বলে ওর বাবার রুমে চলে গেল। কামরান সাহেব তখন বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছিল। মাহাদ আলমারি থেকে টাই আর ব্লেজার বের করে ওর বাবার কাছে গিয়ে বলল," বাবা, আপনি ল্যাগেজ কেন খোলেননি?"

কামরান সাহেব ভেবেছিল লাবীবা আলমারি খুলছিল কিন্তু মাহাদের কথা শুনে চমকে উঠে পিছন ফিরলেন তিনি। মাহাদ, তুই কখন আসলি?

মাহাদ ওর বাবাকে টাই বেঁধে দিতে দিতে বলল," আপনি ল্যাগেজ কেন খোলেননি!"

"তোকে নিয়ে খুলতে চাচ্ছিলাম। এই তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেন! কি হয়েছে তোর?"

বাবাকে ব্লেজার টা পড়িয়ে দিয়ে মাহাদ বলল," কিছু হয়নি। একটু কেটে গেছে।  যান ওটা খুলে দেখেন।"

কামরান সাহেব ল্যাগেজটা নিয়ে এসে বেডে রেখে খুলে দেখল, ল্যাগেজের ভিতর একটা ফাইল। কামরান সাহেব মাহাদের দিকে চাইতেই মাহাদ সেটা খুলে দেখতে বললো।

কামরান সাহেব ফাইল মেলে প্রতিটা পেজ নিখুত ভাবে দেখতে লাগল। মাহাদকে অবাক করে দিয়ে কামরান সাহেব এসে সোজা জড়িয়ে ধরেই মাহাদকে উঁচুতে উঠিয়েই লাবীবা লাবীবা বলে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো।

" বাবা বলেছিলাম না! একটাতেই বাজিমাত করবো?"

লাবীবা দৌড়ে এসে দেখলো, কামরান খুঁশিতে মাহাদকে উচুতে জাগিয়ে তুলে ধরেছে। এর মধ্য রুমে অনেকে চলে এসেছে। কামরান মাহাদকে নিচে নেমে দিয়ে বলল," মাহাদ তুই বড্ড ভারি হয়ে গেছিস বাবা। কত কোলে নিছি তোকে কিন্তু আজ তোকে একটু নিতেই হাঁপিয়ে উঠেছি।"

"তোর পোলা কি দুধের ছাওয়াল আছে তাই ওরে নিতে পারবি? লাবীবা লাবীবা কইয়া চিক্কুর দেস কিয়ের লায়?"

আম্মাজান, আমার ছেলে ১০৬ টা দেশকে পিছনে ফেলে ওদের পক্ষ থেকে অফার পেয়েছে। এটা যে কতবড় পাওয়া সেটা আমি বোঝাতে পারবোনা। আমার ছেলে সেটা করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোন ব্যাক্তির মাধ্যমে এমন অফার এল। যেখান থেকে সরকারেরও খুব মোটা অংকের রাজস্ব আয় হতে চলেছে। আমি আজ খুব খুব খুব খুশি। লাবিবা আজ কোন রেস্টুরেন্টে তুমি খাবা বল। পুরো দিনটাই তোমার জন্য বলে কামরান সাহেব তার মা বাতাসির সামনেই এই প্রথম লাবিবাকে অফার করলো।

রেজওয়ান আবারও বিস্ফোরিত চোখে মাহাদের দিকে চেয়ে আছে। সত্যিই এর ভিতর নাজানি আর কত ট্যালেন্ট লুকিয়ে আছে আল্লাহ্ জানে।

মাহাদ বাতাসির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল," সবই তিতিরকে বিয়ে করার জন্য সম্ভব হয়েছে। বিয়ে জিনিসটাই আল্লাহর রহমত। তার মাধ্যমেই আল্লাহ্ সুবহানাতালা আমাকে এমন একটা বরকতময় অফার দিয়েছেন। এখন ভাবো সন্তান হলে আমার জন্য কত রহমত অপেক্ষা করছে।"

" বাতাসি ফিক করে হেঁসে কইলো," এত খুশিতে লাফাসনা। তোর বৌ কোনদিনও তোরে সেই সুখ দিতে পারবোনা। তাই রহমতের আশা ছাইড়া দে।"

" আই ডোন্ট কেয়ার। তার চিন্তা তোমায় করতে হবেনা। তার ব্যবস্থাও আমি নিজে করবো।"

সেদিন বাসায় এক প্রকার উৎসব চলল। মাহাদ তিতিরের রুমে গিয়ে ওর সব জিনিসপত্র গুছিয়ে ল্যাগেজটা লোড করলো।

দুপুরে খাবার টেবিলে লাবিবা বলল," আসমাকে না নিয়ে গেলে হতোনা? মেয়েটা খুব ভালো।"

এখানে ভালো মেয়েদের কোন দাম নেই। কবে যেন ওকেও তিতিরের মত করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করা হবে সেটা কে জানে? তাই ওর জায়গায় ওকে রাখা উচিত।

লাবীবা কিছুটা রেগে গেলেও চুপ করে রইলো কিন্তু রুমকির মনে ঝড় বইলো তিতিরের নাম শুনেই। বাসার কেউ কনফার্ম নয় মাহাদের সাথে তিতিরের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তবুও তিতিরের নাম মাহাদের মুখে শুনেই তার কান্না চলে আসলো। রুমকি পুরো খাবার শেষ না করেই উঠে চলে গেল। রুমকি রুমে এসে সোজা সৌরভকে কল দিয়ে বললো, তাকে যেন এখান থেকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হোক। সে সৌরভকে প্রচন্ড মিস করছে।

♦♦

বিকেলে মাহাদ বসে আছে আর আসমা ওর সামনে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ নিরবতা ভেঙ্গে বলল," আসমা তুমি যানো, আমি তোমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছি?"

" জানিনা ভাইজান।"

তোমাকে যা বলছি মনযোগ দিয়ে শোন। তোমাকে আমি তিতিরের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। আমার গতকালের ব্যবহারের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। মাহাদ ওর দু'হাত জোড় করে বলল," আসমা, যদি আমি জিবনেও তোমার এতটুকু উপকার করে থাকি তার বিনিময়ে হলেও তুমি তিতিরের সাথে সব সময় ছায়ার মত থাকবে। আমি এমন প্রফেশনে আছি যেখানে প্রতিটা মুহুত্ব বিপদের হাতছানি দেয়। কেউ যদি ভুলেও যানে ও আমার স্ত্রী তাহলে ওর আগে বড় ধরনের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। আমি ওকে আর আমার কাছে রাখতে পারলাম না। কিন্তু তুমি সবসময় ওর পাশে থেক। গোলাব আছে কিন্তু একজন পশুর চেয়ে একজন মানুষের মেধা শক্তি অনেক তুখোড়। তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি?"

আসমা ফ্লোরে বসে কেঁদে ফেলল। ভাইজান, আপনি আমাকে যে নতুন জিবনের পথ চলা শুরু করিয়েছেন তার প্রতিদান আমি কোনদিনও দিতে পারবোনা। আমি নিজের জিবন দিব কিন্তু বেঁচে থাকতে আপার শরীরে কাউকে টার্চ করতে দিব না।

ঐ বিকেলেই আসমাকে নিয়ে মাহাদ বের হয়ে গেল। সাবিনা অনেক কাঁদল আসমার জন্য। সগ্গলে তারে ছেড়ে যায়। 

♦♦♦♦

সন্ধ্যার একটু আগে মাহাদ তিতিরের কাছে আসলো। কলিং বেল বাজাতেই হিনু এসে দরজা খুলে দিল। তিতির তখন টাইটানিক মুভি দেখতে ব্যস্ত। শেষ সীনে তিতিরের চোখে জল ছলছল করছে। এটা দিয়ে মোট ১৭ বার এই মুভিটা দেখেছে কিন্তু প্রতিবারই শেষে একটা কষ্টের ছাপ রেখে যায় ওর মনে।

মাহাদ তিতিরের এমন কান্ড দেখে না হেঁসে আর পারলোনা। তিতির, এতটুকুতে কেউ কাঁদে! কিন্তু দেখ, আমাদের বাস্তব জিবন কিন্তু আরো কঠিন। যেখানে আমাদের প্রতিদিনই লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়।

আসমাকে দেখে তিতির জড়িয়ে ধরে বলল," আসমা কেমন আছো?"

" আপা আপনার কথায় ঠিক। আমাদের আবার দেখা হল।"

মাহাদ রাত ন'টা পর্যন্ত সেখানে কাটালো। তিতিরের রান্না সে এই প্রথম খেল। হিনুদেরও দাওয়াত করা হয়েছিল। স্ত্রীর হাতে এমন খাবার আর ঘুমানোর জন্য ছাদ থাকলে বিবাহিত জিবনে আর কি চাই।

মাহাদ চলে যাওয়ার আগে তিতিরকে অনেক উপদেশ দিয়ে গেল। গোলাবকে যেন নিজ হাতে খাবার দেয়। আসমার সাথে যেন সব সময় ভালো ব্যবহার করে। কারন কাউকে ভালোবাসলে তার কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার আশা করা যায়। অন্যথায় ভালোকিছু আসা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সবার সাথে সদ ব্যবহার করার কথাও বলল। আর ঠিকমত পড়ালেখার যেন করে। রেজাল্ট দু-একদিনেই বের হবে।

♦♦♦♦

দু'দিন পরে,

তিতির ক্লাসরুম থেকে বের হতেই পিয়ন মামা এসে বলল," তিতির, প্রিন্সিপ্যাল স্যার তোমায় ওনার কক্ষে একবার যেতে বলেছেন।

তিতির প্রিন্সিপ্যালের রুমে যেতেই চমকে উঠলো। প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাবীবা, রূপসা আর বাতাসি তিতিরকে সেখান থেকে নিয়ে সোজা গাড়ীতে উঠলো। তারপর তাদের খেল শুরু করলো।

লাবীবা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগল। রূপসা ওর মামীকে থামতে বলে তিতিরকে বলল," তুই এত গভীর পানির মাছ সেটা যদি আগে জানতাম তাহলে ঐ রুমকির বিয়ের দিনেই তোর খেলা ফিনিস করে দিতাম। তোর কি এমন যোগ্যতা আছে যার জন্য মাহাদরের মত মানুষকে তুই ফাসিয়েছিস?  রক্ষীতা হিসেবেও তো ওর বেডে যাওয়ার মত তোর যোগ্যতা নেই।"
 কথাগুলো বলেই রূপসা একটা থাপ্পড় তুলতেই বাতাসি রূপসাকে থামিয়ে বলল," মাহাদের কেন! ওর কোন মরদের বিছানাতে শোয়ার মত যোগ্যতা নেই। যে কোনদিন ছাওয়ালের জন্ম দিতে পারবোনা সেইহানে কোন লজ্জায় এতসব আসা করে। বাজা মাইয়া কোনহার কার। তোর মুখ দেখেও শাইত পাওয়া যাইবোনা। গাড়ীর চাপা পইড়া আল্লাহ্ হেইডাও কাইড়া নিছে। পাপীষ্ঠদের এই রহমই শাস্তি হয়। যেমনটা ওর হইছে। লজ্জা যদি থাহে তাইলে মাহাদের সাথে কথা কইবি না। গাড়ীর ধাক্কা খাইয়া হেইদিন মরলেই ল্যাটা চুকে যাইত।"
কথাগুলো বলে তিতিরকে গাড়ী থেকে নেমে দিয়ে ওরা চলে গেল।

তিতিরের পুরো পৃথিবী বিদ্ধস্ত হয়ে গেল। চোখের সামনে সমস্ত আলো নিভে গেল।

কতটা বুকের আঁচল খসালে......
প্রেমিকা হওয়া যায়???
কতটা পরিমান সম্পত্তি ব্যাংকে থাকলে
সহধর্মিণী হওয়া যায়?
কতটা বিছানায় কামুক হলে......
জিবন সাথী হওয়া যায়
কতটা লাস্য আবেদনময়ী নারী হলে
পারফেক্ট নারী হওয়া যায়
কতটা রুপ যৌবন থাকলে.....
বিবাহ যোগ্য হয়ে ওঠা যায়।
এর কি কোনো সঠিক জবাব আছে কারো কাছে?
                                           
                       - রাই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন