অচেনা অতিথি - পর্ব ১২ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


নিসার তেড়ে আসা দেখে বাতাসি কি আর সোফায় বসে থাকার পাত্রী নাকি! জিবনের মায়া দয়া বলেও তো কিছু আছে? তাই বাতাসি তার শাড়ীখানা উচু করে তুলেই ফুয়াদের দিকে ভোঁ দৌড় দিল। একদম ফুয়াদকে আড়াল করে বাতাসি দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল-

~" তোর বউ কি রে হ্যা! মানুষ না কালডাকনী, আজ যদি তোর বউয়ের হাতে আই ম্যার খাই তো ভাবমু অ্যার বৌমা লাবীবা এক মাইয়া পাড়ছে। যে বউরের আচলে তলায় বইয়া মিউ মিউ করে যায়।"

নিসা এবার থেমে গিয়ে চোখ পাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল-

~" ফুয়াদের আড়ালে গেছেন কেন? এতই যদি সাহস থাকে তাহলে আমার সামনে একবার এসেই দেখান না! ভয়ে ওর পিছনে লুকাচ্ছেন কেন! আজ আপনাকে কুরবানী দিব। সাবিনা কিচেন থেকে নাইফটা নিয়ে আয়তো! "

~" আই তোরে ভয় পাই নাকি? ফুয়াদই তো অ্যারে যাইতে দিতাছেনা তোর কাছে। তাই লয় ফুয়াদ! হেই অ্যারে খুব ভালোবাসে তার লায় তোর কাছে যাইতে দেয়না।"

কথাগুলো বলেই বাতাসি ফুয়াদকে মৃদু কুনাইয়ের গুতা দিয়ে আবার বলল-

~" কতা কসনা ক্যান! ছোড কালে প্যান ভইড়া মুতে ব্যান দিতিস হেই কতা কি তোর বউ ছলদের কইতে হব! ইজ্জতের মায়া থাকলে অ্যারে বাঁচা। নইলে আজ তোর ইজ্জতের মিলাদ পড়ামু হু....!"

দাদীর কথা শুনে ফুয়াদ লজ্জা এবং ভয় দুটোই পেল। এই কথা যদি সাবিনার কানে যায় তাহলে দিনে রাতে তাকে ফালুদা বানাইয়া সবার মাঝে বিলাইবে। তাই নিজের ইজ্জত নিজেকেই সামাল দিতে হবে। ফুয়াদ ধমকের স্বরে বলে উঠলো-

~" এই নিসা কি করছো সব! ছোট বাচ্চাদের মত কেন এমন করছো? তুমি দাদীর গায়ে হাত তুলবা নাকি! যাও রুমে যাও। তোমাকে যেন এখানে না দেখি।"

ফুয়াদের এমন কথা শুনে বাতাসি ফুয়াদের ঘাড়ে একটা চাপড় মেরে খুশিতে বলল-

~" এই না হল তুই অ্যার নাতী! ঠিক সময়ে নিজের রং দেখাতে একদম পিছোপা হসনা। দোয়া করি, তোর ঐ খাট্টাস্ মার্কা বউকে দিনে রাতে বালিশ পিটার মত শক্তি তোর গায়ে আল্লাহ্ দিক।"

বাতাসীর এমন দোয়া শুনে ফুয়াদ আক্কেলগুডুম হয়ে গেল। নাহ্ দাদী যদি আজ না জিতে নিসার সাথে তাহলে মান সম্মানের যতটুকু অবশিষ্টাংশ ছিল সেটাও খোয়াতে হবে। তাই গলা ঝেড়ে দাদীকে বাঁচাতে ফুয়াদ নিসার বিরুদ্ধে মাঠে নামলো। বউ কে একটা কিস আর আদর করলে বউ এমনিই শান্ত হবে কিন্তু দাদীকে শান্ত করার মত মেডিসিন তার জানা নেই। মাহাদ হলে হয়ত পারতো কিন্তু  আমি পারবোনা। ফুয়াদ গলা ঝেড়ে নিসাকে আবার একটা ধমক দিয়ে বলল-

~" নিসা, আমি যেন একটা কথাও না শুনি! মুরব্বিদের সম্মান দিতে শিখো।"

ফুয়াদের এমন শাসন দেখে নিসা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। নিজের দাদী যে এমন কুখ্যাত কথা বলছে, কই তাকে তো  থামতে বলছোনা! তাকে না থামিয়ে উল্টা আমাকেই ধমক দিচ্ছো?

এদের এমন ঝগড়া দেখে সাবিনা কোথা হতে একটা মোবাইল এনে সোফায় বসে ভিডিও অন করে চিক্কুর দিয়ে বলল-

~" দাদী জব্বর হইতাছে। আরো জোড়ে, ভিডিও করতাছি। আন্নের সোয়ামীর কাছে পাঠামু। ভাইজান আন্নের এই কেলমা দেহেনাই। বহুত খুঁশি হইবো এমন কেলমা দেইখা। আহ্ আন্নে পারেনও বটে।
আন্নে যদি চান তাইলে নেটেও ছাইড়া দিয়ে আন্নেরে ভাইরাল বানামু। অ্যাই নিঃশ্চিত হিরো আলমের থাইকাও আন্নে বেশি জনপ্রিয় হবেন। কাম বাতাসি বেবি, চালিয়ে  যান....।"

সাবিনার কথা শুনে বাতাসির চোপার শক্তি যেন আরও দ্বিগুন হইয়া গেল। সে তার মুখের বাহার দেখানোর জন্য ফুয়াদের পিছন থেকে মুখটা বের করে ছড়া কাটতে লাগলো......

~" ভাইরে ভাই বলে যাই আজবের ঘটনা....
সাপ খেলেতে সাপুড়ে কন্যা নামেতে সার্কাসনী নিসা!
ও নিসার বয়স হলো, বয়স হলো হাতে ছিল লাল লাটিমের ডোরা.....
মধ্যে ছিল কলার গাছে নিসার বাবা ধবধবিয়ে বুড়া।"

আমি সাপুড়ে কন্যা! ফুয়াদ লাষ্ট বার বলছি, তোমার দাদীরে থামাবা! যদি না থামে তাহলে কিন্তু এবার তোমার কপালে দুঃখ আছে। এখুনি যদি না থামে 
তাহলে কিন্তু আজই মানে এক্ষুনি বাসা ছেড়ে আমি চলে যাব। কথাগুলো বলে ফুয়াদকে হুমকি দিল নিসা।

ঐ বেডি কারে ধমকাস!" কুত্তা পিঠা ছাড়বে কিন্তু তুই নিসা এই বাড়ী ছাড়বিনা।" তোরে অাই ভালা কইরা চিনি। ছুচনী মাইয়া একটা। যা যা দরজাতো খোলায় আছে। শুধু শুধু মিছামিছি ধমকাস ক্যান! চলে গেলে জুম্মাতে জগাত দিমু তোর নামে। বাড়ীত থাইকা ইবলিসের সখী নাইমা গেল। 
কথা গুলো বলে ফুয়াদের আড়াল থেকে বের হল বাতাসি। আয় সামনা সামনি লড়মু। অ্যার গায়ে ম্যালা শক্তি আছে। তোরে পিঠের নিচে ফেলাইতে অ্যার দুই দন্ডও লাগবেনা হুঁ।

নিসা আর বাতাসির মধ্য যেন সাপ নেউলের যুদ্ধ বেঁধে গেছে। এমন সময় রেজওয়ান দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বের হতেই তিতিরও ওকে ফলো করে বাসা থেকে বের হলো। হ্যাঁ তিতির যা ধারনা করেছে তাই সঠিক হয়েছে। রেজওয়ান ফোনে কথা বলছে জোড়ে জোড়ে। এই তোমাদের এত নিখুত তথ্য দিলাম তবুও তোমরা কাজ করতে পারলেনা! লাষ্ট বার তোমাদের সুযোগ দিলাম। এবার যদি তোমরা ব্যার্থ হইছো তাহলে কোনদিনও নিজের স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখতে পাবেনা। কথাগুলো কিছুটা চিৎকার দিয়েই বলল রেজওয়ান।

কলটা কেটে দিয়ে নিজেকে শান্ত করে রেজওয়ান পিছন ফিরতেই ওর পুরো শরীর ফ্রীজ হয়ে গেল। কারন ওর সামনে তিতির দাড়িয়ে আছে। রেজওয়ান গুছিয়ে আর কথা বলতে পারলোনা। থতমত করে বলল-

~" তিতির, তুমি এখানে?"

তিতির আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে রেজওয়ানের চোখে চোখ রেখে কঠোর ভাষায় বলল-

~" এবার যদি সামান্য পরিমান কোন ক্রুটি আপনার মধ্য দেখেছি তাহলে সোজা ঘাড় ধরে বাসা থেকে বের করে দিবো। আপনার আর আপনার মায়ের করা নোংরামি আমি তিতির একদমই ভুলি নাই। তাই সাবধান.......!"

এই একদম মুখ সামলে কথা বলবা! আমার মাধ্যমে তুমি এই বাসায় ঢুকেছ আর আমাকেই চোখ দেখাও! একদম আগাছা ছাটিয়ে দিব। তোমাকে শিক্ষা দিতে আমার এক সেকেন্ডের ব্যাপার। তাই তুমি সাবধান হও আমার থেকে। রেজওয়ান কথা শেষ করতেই গোটা দুয়েক স্বশব্দে চড় পড়লো ওর গালে। 

তিতির বলে রেজওয়ান চিৎকার দিতেই তিতির রেজওয়ানের শার্টের কলার ধরেই একটা হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে ফেলে দিয়ে ওর হাটুর উপর পা তুলে বলল-

~" আপনি পুরনো খেলোয়ার হয়ে গেছেন। আপনি ঠিক ঠিক কোন দিক দিয়ে আঘাত করতে চান তার সব সূত্র আমার জানা আছে। আর আমি যেহেতু নতুন তাই আমার প্লানগুলোর সম্পর্কে আপনার জানা তো দুরে থাক, সেটা সম্পর্কে আপনার ধারনাও মনে জাগবেনা। তাই সঠিক পথে আসুন। আমার স্বামী বা আমার পরিবারের এক ফোটা রক্তও ঝরে তাহলে আপনাকে একে বারে খেয়ে ফেলব।"

তিতিরের এমন রুপ দেখে রেজওয়ানের বিশ্ময় যেন চোখমুখ থেকে সরতেই চায়না। এটা কোন তিতির! স্বাভাবিক হতে রেজওয়ানের কিছুটা সময় লাগে। তিতির ততক্ষনে একটু দুরে সরে এসেছে। রেজওয়ান নিমিষেই উঠে দাড়িয়ে স্বশব্দে কয়েকটা জোড়ে জোড়ে তালি দিয়ে বলল-

~" ওহ্ মাই গড! বিড়াল দেখছি বাঘ সাজতে এসেছে। তা মিউ মিউ করার বদলে হুংকার দিতে কবে থেকে শিখলে তিতির!
শোন তিতির, বিড়াল কখনো বাঘ হতে পারেনা। আমি মেয়ে মানুষের সাথে ঝামেলায় লাগিনা। তাই আমার সামনে পরে প্রান হারাতে এসোনা। তোমার এই থাপ্পড়ের জবাব দেওয়া আমার পক্ষে কোন ব্যাপারই নয়। যাও এবারের মত মাফ করে দিলাম। কিন্তু বার বার মাফ করে দিবোনা।"

তিতির এবার রেজওয়ানের চোখে চোখ রেখে মৃদু হেঁসে বলল-

~" বাঘের বউ কখনো বেড়াল হয়না। বাঘের বউ বাঘিনীই হয়ে থাকে। আপনি হয়ত জানেননা, এই বাঘিনী আপনার মত লেজ বাঁকা কুকুরকে দুইবার কেন! একবারও ছাড়তে নারাজ। আপনার টার্গেট কি তা আমি জানতে চাইনা কিন্তু আমার টার্গেট কি জানেন! আপনার মেয়ে রাতিশা। আমি বলতেই যে পাগল। আমিও নোংরা চাল চালতে দুইবার ভাববোনা। তাই সাবধান।"

কথাগুলো বলতেই কামরান সাহেবের গাড়ী বাসায় এসে ঢুকলো। তিতির ওর মাথায় হাত দিয়ে ইশারা করে রেজওয়ান কে বলল-

~" দুইবার ভাববোনা রাতিশার কিছু করতে। কাটা দিয়েই কাটা তুলতে হয়। আপনি জানেননা! বিষে বিষক্ষয় হয়!"

তিতির রেজওয়ানের উত্তরের জন্য আর অপেক্ষা না করে কামরান সাহেবের গাড়ীর দিকে চলে গেল। ডাইভার কে গাড়ী থেকে নামতে বলে নিজেই গাড়ীতে উঠে ড্রাইভ করতে লাগলো। কামরান সাহেবতো অবাক হয়ে গেল তিতিরের এমন কান্ড দেখে। তিতির তার শশুরকে নিয়ে অজানা পথে রওনা দিল..........
কামরান সাহেব জানেনা তার পুত্রবধু তাকে ঠিক কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন