মায়াবতী (পর্ব ১৩)


২৫!! 

-মিস মায়া? আপনারা কি এই ভদ্রলোকটিকে খুঁজছেন নাকি? 

কারো ভারি আওয়াজ পিছন থেকে ভেসে আসতেই রাহাত, মায়া, শওকত, আর আহমাদ খান চারজনই পিছনে ফিরে তাকালো। আর তাকাতেই নিরবকে শক্ত হাতে ধরে রাখা সিনিয়র অফিসারের দিকে চোখ পড়লো সবার। উনি নিরবকে ধাক্কা দিয়ে একটা চেয়ারের উপরে ছুঁড়ে ফেলতেই রাহাত নিরবের কোটের কলার চেপে ধরলো। শওকত রাহাতকে সামলানোর চেষ্টা করলো। এদিকে নিরব! সে যেন এই দুনিয়াতেই নেই। কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে রাহাতের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। মায়াও এবারে এগিয়ে এসে রাহাতকে একটু টেনে সরানোর চেষ্টা করতে করতে অফিসারের দিকে তাকালো।

-আপনি উনাকে কোথায় পেলেন স্যার? উনার জন্যই আপনাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। একটু দেরি করিয়ে দিলাম আপনার। সরি স্যার।

-আরে ব্যাপার না। লোকটাকে দেখলাম টলমল পায়ে টলতে টলতে পালানোর চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো এই আমাদের আরেক জেন্টেলম্যান ক্রিমিনাল। কিন্তু কি করেছে সেটা তো জানি না। তাই নিয়ে এলাম ধরে--। হা হা।

-থ্যাংকস স্যার---। আরে রাহাত! কি করছেন আপনি? মেরে ফেলবেন নাকি আপনি লোকটাকে? ছাড়ুন--।

রাহাত এমনভাবে নিরবের গলা চেপে ধরেছে যে লোকটার প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। অফিসারের সাথে কথা বলতে বলতে ব্যাপারটা খেয়াল করে মায়া আঁতকে উঠে রাহাতকে টেনে সরিয়ে আনার চেষ্টা করলো। শওকত সাহেব নিজেও বহুক্ষণ ধরে রাহাতকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু রাহাতের শক্তিশালী হাতের বাঁধন থেকে নিরবকে ছাড়াতে পারেন নি। মায়াও রাহাতের হাত থেকে নিরবকে ছাড়াতে পারার প্রশ্নই উঠে না। তাই রাহাতকেই টেনে সরানোর চেষ্টা করছিল মেয়েটা। কিন্তু রাহাত যেন দুনিয়াতেই নেই। মায়ার কথাটা শুনে আরো রাগ চড়ে গেল রাহাতের মাথায়। হাতের ঝটকায় মায়াকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেই মায়া ছিটকে পড়ে গেল। অবশ্য মায়া পড়ে যাওয়ার আগেই পুলিশ অফিসার ওকে ধরে ফেললো। অফিসার মায়াকে ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়ার সময়ও মায়া হতবাক হয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা এতোটা রেগে আছে যে কি করছে নিজেও বুঝতে পারছে না যেন। মায়া আবার এগিয়ে এসে রাহাতকে ঠেলে নিরবকে ছাড়িয়ে নিল। নিরব ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে শ্বাসকষ্টের রোগীর মতো বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো। রাহাত সেদিকে তাকিয়ে আবার এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেই মায়া এবারে নিরবের সামনে এসে দাঁড়ালো। মায়া সামনে দাঁড়ানোয় রাহাত এগোলো না ঠিক কিন্তু নিরবের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন এখনই ওকে মেরে পুঁতে ফেলতে পারলে ওর রাগটা কমতো।

-আপনি পাগল হয়ে গেছেন? লোকটাকে মেরে ফেলবেন নাকি? 

-হ্যাঁ আমি ওকে মেরেই ফেলবো। ও কি করেছে আমার স্মৃতির সাথে! ও তো সেদিন স্মৃতির সাথেই ছিল। তাহলে ও মেয়েটাকে বাঁচাতে পারে নি কেন? বিয়ে করতে চেয়েছিল তো ওকে? তাহলে মেয়েটার দায়িত্ব কেন নিতে পারে নি? ওর চোখের সামনে দিয়ে কি করে কেউ আমার স্মৃতিকে মেরে ফেললো! যখন স্মৃতিকে রক্ষাই করতে পারে নি তাহলে ওর নিজেরও বাঁচার অধিকার নেই। খুন করে ফেলবো ওকে আমি।

-মাঝেমাঝে আপনি হাস্যকর সব যুক্তি দেখান রাহাত। আপনি ভাবছেন নিরব স্মৃতির সাথে থেকেও ওকে বাঁচালো না কেন। একবারও এটা ভাবছেন না স্মৃতির দেশে ফিরার পিছনে নিরবের হাত থাকতে পারে বা নিরবই হয়তো ওকে চিরজীবনের জন্য সবার থেকে দূর করে দিয়েছে?

-হোয়াট!

রাহাত আর কিছু বলার আগেই নিরব বহু কষ্টে নিজের মাথা চেপে ধরে চেয়ারে বসার চেষ্টা করলো। রাহাত আবার ধাক্কা দিয়ে মায়াকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে নিরবের কলার চেপে ধরলো।

-তুই আমার স্মৃতিকে খুন করেছিস? কেন কেন কেন? ও তোর কি ক্ষতি করেছিল? ও তো আমার সাথে নিজের জীবনটা শুরু করতেই চেয়েছিল? তাহলে? কেন আমার স্মৃতিকে তুই কেড়ে নিলি? ও তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি বলে? এতো অমানুষের মতো কাজটা করতে পারলি? তুই তো ওকে চিনতি, জানতি-ওর কাজিন ছিলি! তবুও?! কি করে----?

-দেখ ভাই। এই মেয়েটা মিথ্যে বলছে। আমি মৌনিকে মারি নি। ওকে আমি খুব ভালোবাসতাম। ও তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল বলে কষ্ট পেয়েছিলাম খুব। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম আমি। আমি মৌনির খুশিতে খুশি হতে চেয়েছিলাম। তাই ওকে আয়ারল্যান্ডে তোমার কাছে রেখেই চলে এসেছিলাম। এর পর কি ঘটেছে আমি জানি না--। বিশ্বাস করো--।

রাহাত কিছু বলার আগেই মায়া এসে নিরবের গালে কষিয়ে একটা চড় মারলো। রাহাতের হাতে ধরা ছিল বলেই নিরব পড়ে যায় নি। বাকি সবাই মায়ার এমন কাজে কিছুটা অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকালো। মায়া নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু একটা করে পুলিশ অফিসারের দিকে এগিয়ে দিলো। পুলিশ অফিসার মায়ার মোবাইলটা হাতে নিয়ে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এবারে মায়া রাহাতকে সরিয়ে দিয়ে নিরবের পাশে এসে দাঁড়ালো। 

-কি ভাবেন কি আপনি? আমি কোনো প্রমাণ ছাড়া আপনাকে এখানে আনিয়েছি? আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আমার কাছে ছিল আগে থেকেই যা এখন অফিসারের হাতে আছে। আপনি এসব ন্যাঁকা নাটক করে আঙ্কেলকে, রাহাতকে, আন্টিকে, দিয়াপুকে বোকা বানাতে পারবেন। কিন্তু মৌনি আপুকে যেমন বোকা বানাতে পারেন নি, আমাকেও পারবেন না। বুঝতে পেরেছেন আপনি?

-আমি কিচ্ছু করি নি। কিচ্ছু না। মিথ্যে অপবাদ দিয়ে আমাকে ফাঁসাতে পারবে না তুমি মেয়ে। এসব প্রমাণ মিথ্যে বানোয়াট। আমি কিছু করি নি---।

-ওহ! তাই নাকি? ওকে। আপনি স্বীকার না করলে আমার কি! ভেবেছিলাম আপনি সব সত্যিটা নিজের মুখে স্বীকার করে নিলে আপনাকে এন্ডিডোটটা দিয়ে দিব--। বাট আপনি তো নিজের মিথ্যে নিয়েই মরতে চান। আমি আর কি করবো!

-এন্টিডোট! কি-কি-কিসের এন্টিডোট!

-আরে! এখনো বুঝতে পারছেন না? ওকে। বুঝিয়ে বলছি। আপনি কিছুক্ষণ আগে যে পানিটা ঢকঢক করে গিলে ফেলেছেন---। তাতে একটা স্লো পয়জন মিক্স ছিল। বেশি না। এইটুকু।

-হোয়াট!

-এই পয়জনটার কি গুণ জানেন? রক্তে একটু একটু করে মিশে যায় পয়জনটা। তারপর রক্তের অক্সিজেনটাকে নষ্ট করে দেয়। আরো মজার ব্যাপার কি জানেন? পয়জনটা নিজের কাজ শুরু করতে এই মিনিট পনেরো বিশ মতো সময় লাগে। আপনার অলরেডি সাড়ে বারো মিনিট ওভার হয়ে গেছে। এতোক্ষণে ব্লাডের ৬০% অক্সিজেন তো নষ্ট হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার কথা। সাথে চোখে ঝাপসা দেখা, মাখা চক্কর দেয়া, মাথা ঘোরা এসবও তো হওয়ার কথা। 

-কি-কি সব বলছেন আপনি? আমার কিচ্ছু হচ্ছে না।

-তাই নাকি? ইশ! ডোজটা বোধ হয় একটু কম হয়ে গেছে। ব্যাপার না। কম হলেও আধ ঘন্টার মতো সময় লাগবে রক্তে পয়জন সম্পূর্ণ ছড়িয়ে পড়তে। 

-তুমি একজন পুলিশ অফিসারের সামনে আমাকে খুন করবে! উনি তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে না ভেবেছ? এক্ষুণি আমাকে হসপিটালে যেতে দাও---। 

নিরব এবারে টলমলে পায়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই ঢলে পড়লো। এই মূহুর্তে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুই যেন নেই ওর শরীরে। নিরবের এভাবে ঢলে পড়া দেখে মায়া খিলখিল করে হেসে ফেললো। আর বাকিরা চোখ বড় বড় করে একবার মায়াকে আর একবার নিরবকে দেখছে। মায়াকে দেখে বোঝার উপায় নেই মেয়েটা সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে। আর মায়ার হাসির শব্দে নিরবেরও বুকের ভিতরে ভয় ঢুকে গেল নিমিষেই। কোনোমতে ভারি হয়ে আসা হাত জোড়া একত্র করার চেষ্টা করলো।

-দেখো মায়া। প্লিজ? আমি হাত জোড় করছি তোমার কাছে। আমাকে মেরো না। এন্টি-এন্টিডোটটা দাও আমাকে দাও প্লিজ?

-হা হা। হাত জোড় করলেন কোথায় স্যার? উঁহু। আর নিজের কুকর্ম তো আপনি স্বীকার করবেন না। আর স্বীকার করলে না হয় আইনের হাতে সোপর্দ করে দিতাম আপনাকে। কিন্তু আপনিও নিজের দোষ স্বীকার করবেন না, তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে আমি নিজের মতো করে শাস্তি দিবো। 

-আমাকে মেরে তুমি নিজে বাঁচবে ভেবেছ?

-আমাকে কে ধরবে? আর কেনইবা ধরবে? আপনার কাছ থেকে একটা শিক্ষা নিয়েছি মিস্টার নিরব। কোনো কাজ করলে সেটা এতোটা সাফাইয়ের সাথে করতে হয় যেন কোনো প্রমাণ না থাকে। তাই এই যে আপনাকে বিষটা পানিতে মিক্স করে খাওয়ালাম? সেটাও সাফাইয়ের সাথে আপনাকে দুনিয়া থেকে কবরে পৌঁছে দিবে। আমাকে নিয়ে এতো টেনশন করবেন না প্লিজ। আপনি মারা যাওয়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা আবার আগের মতো হয়ে যাবে, রক্তে যে পয়জনটুকু ছিল সেটার অস্তিত্ব কেমিকেল টেস্টেও কেউ বুঝতে পারবে না। আর নিজের সেইফটির জন্য আপনার পোস্টমর্টেমটা মিনিমাম বারো ঘন্টার জন্য নাহয় আটকে দিতেই পারি। দ্যাটস নট এ বিগ ডিল ইউ নো?

-প্লিজ প্লিজ প্লিজ মায়া। আমি সব স্বীকার করছি। আমাকে এন্টিডোটটা দিয়ে দাও প্লিজ?

-আগে সবার সামনে সবটা বলুন। সত্যি বললো তারপর ভেবে দেখবো।

-কিন্তু ততক্ষণে তো দেরি হয়ে যাবে--।

-এখনও তো দেরি হচ্ছে মিস্টার নিরব? তাই না? সময় তো বয়ে যাচ্ছে? দেখুন এর বেশি দেরি করলে আমি কিন্তু আপনাকে এখানে রেখেই চলে যাবো। ১০ মিনিটের মধ্যে আশেপাশের কোনো হসপিটালেও তো পৌঁছাতে পারবেন না। আর ধরুন পৌঁছেও গেলেন--। কিন্তু তারা আপনার পয়জনটা খুঁজতে খুঁজতে তো----।

-ওয়েট ওয়েট প্লিজ? আমি--। আমি বলছি---।

-ইয়াপ। গুড ডিসিশান। নাউ ক্যারি অন---।

নিরব আরেকবার কষ্ট করে দম টেনে মাথা নিচু করে নিজের কাহিনী শোনানোর চেষ্টা করলো। বাকি সবাই এবারে মায়ার থেকে চোখ সরিয়ে নিরবের দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছে। আর অফিসার মায়ার মোবাইলটা ধরে এখনো কেমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই পুরোনো গলির গায়ে হলুদের জন্য সাজানোর প্যান্ডেলের মধ্যে ঘটে যাওয়া পর পর নাটকগুলো যেন তার মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। আর রাহাত? মায়াকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই সংশয়ের দেয়ালটা সে যেন কিছুতেই ভেদ করতে পারছে না। স্মৃতি না মায়া- এই দ্বন্দ্বের চেয়েও মায়ার এই নতুন রূপের দ্বন্দ্বটা যেন এই কয়েক ঘন্টায় আরো বেশি করে ভোগাচ্ছে তাঁকে। 

-মৌনি মানে আপনার স্মৃতি। অপার কৌতূহল নিয়ে জন্মানো সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র মেয়ে যে কিনা নিজের পড়াটাও কমপ্লিট করে নি। কেন? কারণ কিভাবে কিভাবে জানি ও আমার গোপন কাজগুলো সম্পর্কে জেনে গেল একদিন। গোপন কাজ বলতে আঙ্কেলের বোনের ছেলে হওয়ার যে সুবিধাটা আমি নিচ্ছিলাম সেটা আর কি। মৌনি আর দিয়ার কোনো ভাই নেই। আর আঙ্কেলও বিদেশের ব্যবসাগুলো তেমন সামালাতেন না। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী অথচ ঘরকুনো অন্ধকারবাসী একটা লোক--। অথচ আমাকে দেখুন? আমি সারা দুনিয়াটা জয় করতে চাই, অথচ বাপের কানাকড়িও নেই। মরার আগে মাথায় উপরে আমাদের জন্য ছাদটুকু পর্যন্ত রেখে যেতে পারে নি আমার অকর্মা বাবা। সরি। নিজের বাবাকে নিয়ে এসব বলছি। তবে কথাগুলো এক বিন্দুও মিথ্যে নয়।

-আপনাকে বা আপনার বাবাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমাদের কারো। আসল ঘটনায় আসুন।

-আমমম। আসল ঘটনা! মৌনিকে আঙ্কেল এতো ভালোবাসতেন যে ওর জন্য নিজের সমস্ত সম্পত্তি এক নিমিষে বিলিয়ে দিবেন এটা আমি জানতাম। বহুবার মেয়েটাকে পটানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওই মেয়ে--আমাকে দুই পয়সার দাম দেয় নি কখনো। তাই হতাশ হয়ে ওদের আয়ারল্যান্ডের বিজনেসটা সামলানোয় মন দিলাম। ব্যবসায় ঘাপলা করে সবে কিছু টাকা কামাতে শুরু করেছি হঠাৎ শুনি মৌনি সব ছেড়ে ছুঁড়ে আয়ারল্যান্ডে যাবে ব্যবসা সামলাতে। এটা কেমন ধরনের কথা! তবু সবটা হজম করলাম যখন ও আমার সাথে বিয়েতে রাজি হলো। রাজকন্যা নিজেই ধরা দিচ্ছে এর চেয়ে আনন্দের কি হতে পারে! কিন্তু এই মেয়ে সবার সাথে আমাকেও বোকা বানালো। সাথে ওর বাবাও---। ধোঁকা দিলো ওরা দুজনেই আমাকে। 

-মানে! ধোঁকা দিলো কি করে?

-ধোঁকা নয়? আঙ্কেল ওর জন্য আগেই হোটেলে রুম বুকড করে রাখলো। আর মৌনিও সোজা সেখানে গিয়ে উঠলো। কোন হোটেল, কি করতে চায় মেয়েটা সবটা থেকে আমাকে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখলো। হাহ। ও অফিসে আসে, আমার উপরে হুকুম চালায়, আর আমাকে ওর কাছে জবাবদিহিও করতে হয়! একদিন সুযোগ বুঝে ওকে ধরলাম আমাদের এঙ্গেজমেন্টের জন্য একটা পার্টি করবো এসবের জন্য। কি করেছে ও জানেন আপনি? শি জাস্ট সেইড, শি কান্ট ম্যারি মি। আমাকে রিজেক্ট করলো ও। নিরব রাইয়ান আহমেদকে। তাও কার জন্য? এই লোকটার জন্য। মিস্টার আর. মাহবুব চৌধুরী! কয়জনে চিনতো এইলোকটাকে তখন? তবু এই লোকটার জন্যই মৌনি আমাকে ইগনোর করলো, রিজেক্ট করলো। আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না। 

নিরবের কথা শুনে সবাই এতোটা অবাক হলো যে কিছু জিজ্ঞেস করবে এমন অবস্থাই নেই কারো। একমাত্র মায়ার মাথাতেই কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মৌনি আগে থেকেই রাহাতকে চিনত! কিন্তু কিভাবে? আর চিনলেও সবার কাছে ব্যাপারটা গোপনইবা করেছিল কেন? এমন কি নিজের বাবাকেও রাহাতের কথা বলেছে আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার মাস তিনেক পরে। কেন! কি চলছিল মৌনির মনে! আর কেনইবা এতো লুকোচুরি?

২৬!! 

-স্মৃতি আমাকে আগে থেকে চিনত! কি করে? দেশে থাকতে ওর সাথে পরিচয় হয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না আমার। 

রাহাতের প্রশ্নটা শুনে নিরব বেশ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। রাহাতের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার আছে বলে মনে হলো না। একে একে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের মতো করে বলা শুরু করে দিলো। রাহাত আবার হতভম্ব হয়ে নিরবের কাহিনীর রেশ ধরে যেন অতীতে ফিরে গেল। 

-একে তো মৌনি আমার সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিয়েছে, তার উপরে ওর নতুন আরেকটা কাজ নজরে পড়লো আমার। আমার পিছনে আমার অফিসে এসে ও আমার বিরুদ্ধেই প্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা করছে। ভেবেছিলাম ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে বলে অল্প কিছু টাকা আঙ্কেলকে ধরিয়ে দিয়ে বলবো ব্যবসাটা বিক্রি করে দিয়েছি। কিন্তু এই মেয়ে তার সেটাও করতে দিলো না। আমিও সেইফ খেলোয়াড়। তাই কোনো প্রমাণ জোগাড় করতে পারে নি মৌনি। কিন্তু জোঁকের মতো অফিসেই পড়ে রইলো। অবশ্য অফিস থেকে ওকে সরাতে বেশি সময়ও লাগলো না। সু্যোগটাও মৌনি নিজেই করে দিলো। আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ না খুঁজতে এতোটা মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছে ততদিনে। আর সেটাকেই আমি ওয়ার্কলোড বলে চালিয়ে দিয়ে ওকে অফিস থেকে কিছুদিনের জন্য দূরে রাখলাম। ভাবলাম মাসখানেক একটা লম্বা ব্রেক নিয়ে ফিরলেই ওকে নিয়ে দেশে ব্যাক করবো। আমাকে বিয়ে করার শর্ত মানতে বাধ্য হবে তখন। কিন্তু শালার আমার কপালে সেই সুখও সইলো না। 

-কেন! এর মাঝে আমি চলে এসেছিলাম বলে?

-তো আর কি! মেয়েটা ট্যুরের নাম করে অফিসের চারপাশে ঘুরঘুর করতো। জানতেও পারি নি আমি। সেই সময়ে ডাবলিনে কোথাও আবার তোমার দেখা পেয়ে গেল। একেবারে রাবনে বানাদি জোড়ি টাইপের কিসমত তোমাদের বলতেই হবে। মাঝখান থেকে শালার আমাকেই ভিলেন হতে হলো।

-তোমার এই আজাইরা আফসোস করার বহু সময় পাবে জেলে। পরে কি হলো সেটা বলো---।

-কি আর হবে? ওই অসভ্য মেয়ে প্রথমে তোমার সব খোঁজ খবর বের করলো। পরে নাচতে নাচতে তোমার ওই ভূতুড়ে বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করলো। এতোটুকু লজ্জা শরম নেই! একেবারে লিভ ইন! প্রেম ভালোবাসা হতেই পারে। তাই বলে একেবারে একজন অচেনা লোকের সাথে এক ছাদের নিচে-এক রুমে- এক বিছানায়! ছি ছি! কী কী করেছ দুজনে---। ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে আমার---।

-শাট আপ ইউ রাস্কেল। তোর মতো রাস্তার কুকুরের পক্ষেই এসব আকাশ কুসুম ভাবা সম্ভব। দুজন মানুষ এক বাড়িতে থাকলেই যে তাদের এক রুমে এক বিছানায় থাকতে হবে সেটা তোকে কে বলেছে? মেয়ে দেখলেই তাকে বিছানায় নেয়ার কথা ভাবতে শুরু করিস বলেই এতো জঘন্য একটা কথা বলতে পারলি তুই আমার স্মৃতিকে নিয়ে। হারামজাদা আর একটা বাজে কথা বলবি তোর জিভটা আমি টেনেই ছিঁড়ে ফেলবো বলে দিলাম---।

-হা হা। তার মানে বলতে চাইছ তোমাদের দুজনের মধ্যে কিছুই হয়নি তিন মাসে। আর এমনি এমনি তোমার মৌনি-- না সরি স্মৃতি রাইট? স্মৃতি তোমাকে বিয়ে করার জন্য এমন পাগল হয়ে গেল! হা হা হা। হোয়াট এ জোক ম্যান! রিয়েলি নাইস ওয়ান।

রাহাত এবারে রাগ নিরবের নাক বরাবর দুই তিনটা ঘুষি বসিয়ে দিলো। শওকত আর মায়া আবার রাহাতকে টেনে সরিয়ে আনলো। রাগে, ঘৃণায় এখনো হাত পা কাঁপছে রাহাতের। একটা মানুষের চিন্তাধারা এতোটা নোংরা কি করে হতে পারে? অবশ্য এই লোকটাকে না মানুষের কাতারে ফেলা যাচ্ছে, না অবলা জানোয়ারের। পশুর চেয়েও অধম লোকটা। রাহাতের টকটকে রক্ত লাল চোখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে নিজের নাকের রক্তটুকু মুছে নিলো নিরব। পুলিশ অফিসারের দিকে চোখ পড়তেই কিছুটা ভ্রু কুঁচকে গেল নিরবের। কয়েক সেকেন্ড পরেই একটা ধূর্ত হাসি খেলা করে গেল তার ঠোঁটের কোণে। বাকি সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে নিরব এবারে নিজেই বলা শুরু করলো।

-ও কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিল সেটা জানতে বেশিদিন সময় আমার লাগে নি। বুদ্ধিতে চ্যাম্পিয়ান ছিল মেয়েটা। একদিকে তোমাকে নিজের জালে আটকে রেখেছিল, অন্যদিকে আমাকেও সমান তালে পজিটিভ ফিডব্যাক দিচ্ছিলো। তুমি যখন ক্লাস নিয়ে বিজি থাকো, সেই সময়টা আমার জন্য বরাদ্দ ছিল মৌনির। আর আমি যখন অফিসে বিজি থাকতাম তখন তোমাকে সময় দিত। একেবারে পাক্কা খিলাড়ী মেয়ে---।

-স্মৃতির নামে আর একটা মিথ্যে বললে তোকে আমি এখানেই পুঁতে ফেলবো। সাহস হয় কি করে তোর ওর নামে এসব বলার?

-আমি বানিয়ে বলছি? বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার? কি আর করা! আমি যখন জানতে পারলাম সেদিন আমারও এরকমই রিএ্যাকশন হয়েছিল। আমার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেড করে তোমার সাথে বিয়ে করে সেটেল্ড হতে চায়। কি ক্যারেক্টারলেস মেয়ে----।

রাহাত আবার নিরবের কলার চেপে ধরলো। নিরব রাহাতের রাগের তোয়াক্কা না করেই হেসে চলেছে। যেন রাহাতের সাথে মজার কোনো কৌতুক করে ভিষণ মজা পেয়েছে সে। 

-স্মৃতির নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না ইউ বাস্টার্ড। 

-ওহ আচ্ছা!  আমি বাজে কথা বলছি? তোমার স্মৃতি যে নিজে থেকে সেদিন আমার কাছে চলে এসেছিল? সেটার ব্যাখ্যা আছে তোমার কাছে? ও যে তোমাকে বিয়ে করবে বলেও আমার সাথে দেশে ফিরে এসেছিল তার কোনো লজিক আছে তোমার কাছে? ও স্বেচ্ছায় আমার সাথে দেশে ফিরে গেছিল সেটা কি তুমি জানো? আমারই কপালটা খারাপ। কোথা থেকে কারা আমাদের উপরে এ্যাটাক করে বসে সেদিনই। আর সেই হামলায় আমার চোখের সামনে মৌনি---। হাজার চেষ্টা করেও সেদিন নিজের ভালোবাসাকে বাঁচাতে পারি নি আমি। সেই এ্যাটাকের পরে নিজে কেন বেঁচে গেছি সেটা নিয়ে কতোটা ডিপ্রেশনে ছিলাম আমি জানো তুমি? কয়বার সুইসাইড করার ট্রাই করেছি আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করে দেখো---। 

-আমার স্মৃতি এমন কিছু করতেই পারে না। কিছুতেই না।

নিরবের কথাগুলো রাহাত শেষ পর্যন্ত শুনলো কি না কে জানে। তার আগেই নিরবের কলারে থাকা রাহাতের হাতটা কেমন অবশ হয়ে আসতে শুরু করলো। রাহাতও যেন সমস্ত শক্তি হারিয়ে রাস্তাতেই ধপ করে বসে পড়লো। আর সেটা দেখে নিরব আবার বাঁকা হাসি হাসলো। এবারে মায়া কিছু না বলে নিজের পার্স থেকে একটা ছোট ইনজেকশন বের করলো। নিরব সেদিকে তাকিয়ে বিজয়ীর মতো কিছুটা গর্বিত, কিছুটা কুচক্রী চোখে রাহাতের পরাজিত মুখটার দিকে তাকালো। রাহাতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে সামনে তাকানোর সুযোগটুকুও পেল না নিরব। মায়ার দিকে ফেরার আগেই ছোট্ট ইনজেকশনটা নিরবের কাঁধের কাছটায় গেঁথে দিলো মায়া। তীক্ষ্ম ইনজেকশনের ফলাটা কাঁধে গেঁথে দিতেই ব্যথায় ককিয়ে উঠলো নিরব। সেটা দেখে ইনজেকশনটা আরো চেপে ধরলো মায়া।

-পয়জনের ডোজটা আসলেই খুব কম হয়ে গেছে। তাই কতটুকু বিপদে পড়েছ সেটা অনুভব করতে পারো নি মিস্টার নিরব। যেই ঘোরটা কমতে শুরু করেছে ওমনি নিজের মতো করে গল্প শোনাতে শুরু করে দিয়ে তাই না? সত্যিটা যখন বলবেই না তাহলে মরো তুমি---। 

-আমি মিথ্যে বলছি না মায়া। বিলিভ মি। আমি মিথ্যে বলি নি---।

-আর একটা মিথ্যে বললে পরের ইনজেকশনটা একেবারে গলায় গেঁথে দিবো বলে দিলাম। তুমি মিথ্যে বলছ না? নিজেকে খুব চালাক মনে করো? নাকি বাকিদের ভিষণ বোকা মনে হয় তোমার?

-কেন বিলিভ করছ না আমাকে? আমি সত্যি বলছি মৌনি সত্যি নিজের ইচ্ছেয় আমার সাথে এসেছিল---।

-ও আচ্ছা? তাই নাকি? তাহলে ডাবলিন এয়ারপোর্টে চেক ইন না করে চোরের মতো আয়ারল্যান্ড থেকে পালিয়ে আসলে কেন তোমরা? আর তোমাদের উপরে যে এ্যাটাক হয়েছিল সেটার তুমি ছাড়া আর কোনো আই উইটনেস ছিল না কেন? যারা তোমাদের হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল তারা কেন বললো গাড়ি ব্রেক ফেইল করে এক্সিডেন্ট করেছে? ওহ! আরেকটা মজার ইনফরমেশন তো তোমাকে জানানোই হয়নি। হসপিটালে নেয়ার সময়ও মৌনি আপু বেঁচে ছিলেন। মরার আগে নিজের খুনির নামটা বলে গেছে সে ডাক্তারদেরকে। শুনবে নামটা?

-ইম্পসিবল। আমি আগেই চেক করেছিলাম। শি ওয়াজ ডেড। হসপিটালে নেয়ার আগেই আমার গুলিটা ওর হার্টটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল---। শি ওয়াজ স্পট ডেড---। 

-এইতো। কথা বেরিয়েছে মুখ থেকে। এবার বলো কেন খুন করেছ মৌনি আপুকে?

-না---। মানে আমি--। আমি কিছু করি নি। আমি----।

-আরেকটা ইনজেকশন দেয়ার সময় হয়েছে মিস্টার নিরব। 

-নো নো নো। প্লিজ? আমাকে মেরো না প্লিজ। আমি সব বলছি--। সব বলবো--। আমাকে এন্টিডোটটা দাও প্লিজ।

-মৃত্যু সামনে থাকলে তার সাথে দামাদামি করতে হয় না মিস্টার নিরব। পুরোটা বলবেন? নাকি এখানেই কুকুর বেড়ালের জন্য আপনাকে ছেড়ে যাবো?

নিরব আবার বহু কষ্টে শ্বাস টেনে হাঁপাতে হাঁপাতে কথা বলা শুরু করলো। এতোক্ষণ রাহাত ফ্যালফ্যাল করে মায়া আর নিরবের দিকে তাকিয়ে ছিল। শওকত আহমাদ খানকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তার এতো কাছের, এতো আদরের ছিল নিরব। সেই কিনা এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে তার কলিজার টুকরো মৌনিকে মেরে ফেললো! কথাটা কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। 

-মৌনি আমার প্ল্যানিংটা কি করে যেন ধরে ফেলেছিল। অফিস থেকে ওকে বের করতে পারলেও ও কিন্তু থেমে থাকে নি। প্রতিদিন একেকরকম ছদ্মবেশে ও আমার উপরে নজর রাখতে শুরু করেছিল। তখনও ব্যাপারটা বুঝতে পারি নি। অফিসে বিভিন্ন ক্লাইন্ট সেজে এসে বিভিন্ন খবরাখবর নিচ্ছিলো ও। যতবার সবকিছু বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করেছি ততবারই মেয়েটা কোনো না কোনোভাবে বাগড়া দিয়েছে। নিজে মজা লুটছে অথচ আমাকে এক দন্ড শান্তিতে বাঁচতে দিচ্ছিলো না। একদিন ওকে ছদ্মবেশে হাতে নাতে ধরে ফেললাম। ও নাকি আমার ব্যাপারে সব প্রমাণও জোগাড় করে ফেলেছে। মিস্টার রাহাতকে বিয়ে করেই নাকি দেশে ফিরে আমাকে সবার সামনে এক্সপোজ করবে। হা হা হা। 

-তাহলে বিয়ে না করে দেশে ফিরে গেল কেন ও?

-ফিরবে না? ওকে তো বলেছিলাম আঙ্কেল ওর জন্য হার্ট অ্যাটাক করেছে। অবস্থা গুরুতর। আইসিইউ তে এডমিট করা হয়েছে। এই মূহুর্তে না গেলে হয়তো শেষ দেখাও দেখতে পাবে না। বাবার ভালোবাসার কাছে নিজের ভালোবাসাটা নিমিষেই হেরে গেল। হা হা হা।

-জানোয়ার। বাবার জন্য সন্তানের ভালোবাসাটা কেমন হয় সেটা তোর মতো জানোয়ার কখনো বুঝতেও পারবে না।

-বোঝার তো দরকার নেই। আমার কাজটা হয়ে গেছিল। কিন্তু দেশের মাটিতে পা রাখতেই পড়লাম বিপদে। শালার ড্রাইভারটা সব জানতো আগে থেকেই। শেষ মূহুর্তে তার লোভ এক লাফে আকাশ ছুঁয়ে উঠলো। বলে কিনা যা পাবো তার অর্ধেক ওকে দিয়ে দিতে হবে। ব্লাডি বাস্টার্ড। এদিকে ড্রাইভার চিটিং করলো, তার উপরে উপরিপাওনা হলো মৌনিও সবটা শুনে ফেললো। আঙ্কেলের কিছু হয়নি সেটা জানার পর পালানোর চেষ্টা করলো। হা হা। কিন্তু সেটা করার সুযোগ পায় নি। ড্রাইভার আর আমি ওকে ধরে এনে গাড়িতে বসাই। মোটামুটি শান্ত একটা জায়গায় এনে ওকে গুলি করি। হা হা। স্পড ডেড। এরপর ড্রাইভারকেও একটা গুলি করি। অতি লোভ ভালো না। লোভ করে বেচারাকেও মরতে হলো। 

-যেমন এবারে তুমি মরবে নিরব।

-লাস্টের অংশটুকু আরো দারুণ। সেটা শোনো? গুলির আওয়াজে কোথা থেকে কয়েকজনকে ছুটে আসতে দেখলাম। শালার এইসব অজন্মা কুজন্মাগুলো কোথায় কোথায় যে ঘাঁটি বানিয়ে বসে থাকে বোঝাই যায় না। ওরা এসে পৌঁছানোর আগেই নিজেই গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা লাগালাম। সবাই এক্সিডেন্ট কেইস ভেবে হসপিটালে এডমিট করলো। অবশ্য মৌনির ডেথ সার্টিফিকেটে এক্সিডেন্টাল ডেথ দেখানোর জন্য অনেকগুলো টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে। এর চেয়ে মেরে লাশটা গুম করে দিলেই লাভ হতো। হাহ।

এতোক্ষণে আহমাদ খান উঠে নিরবের গালে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। নিজের সন্তানের খুনের এমন নির্মম বর্ণনা শুনবেন সেটা উনি কল্পনাও করতে পারেন নি হয়তো। 

-নিজের ছেলে হিসেবে সবকিছুর দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলাম তোর হাতে। আর তুই কিনা সামান্য এই সম্পত্তির লোভে আমার মেয়েটাকে মেরে ফেললি? এতোটা নিচ তুই নিরব?

-এতো বছর ধরে একটু একটু করে তোমাকেও তো শেষ করে দিচ্ছি আঙ্কেল। সেটা তো কখনো টেরও পাও নি। আর কিছুদিন ধরা না পড়লে তুমিও সোজা মেয়ের কাছে পৌঁছে যেতে। কিন্তু আজকাল আবার দেখি সুস্থ হয়ে উঠছ। কি করে এই মিরাকেলটা হলো বলো তো?

আহমাদ খান অবাক চোখে নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই সেই ছোট্ট নিরব যার হাত ধরে উনার বোন বাড়ি ফিরেছিল স্বামীর মৃত্যুর পর। এই সেই নিরব যাকে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন মৌনি আর দিয়ার সাথে। এই সেই নিরব যাকে নিজের চেয়ারে বসিয়ে হাঁফ ছেড়েছিলেন। চোখের সামনে অতীতের প্রত্যেকটা পাতা যেন ঘুরপাক খাচ্ছে আহমাদ খানের সাথে। সেদিনের সেই ছোট্ট নিরবের সাথে আজকের এই খুনী ছেলেটার কোনো মিলই যেন পাচ্ছেন না উনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন