আমার একটাই যে তুই - পর্ব ০৭ - সিজন ২ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


চারিদিকের কোলাহলেও মাঝে মাঝে শান্তির আবাস থাকে। আজ বুঝতে পেড়েছে কুহু। ইউসুফের সাথে সে এসেছে এক পার্টি এটেন্ড করতে। প্রথম প্রথম মহা বিরক্তিতে কঁপাল কুঁচকে ছিল কুহুর। কিন্তু কিছু মুহূর্ত আগের ঘটনায় সব পালটে দিলো। কুহু কাপল ডান্স করতে যানে না। পার্টিতে আসা প্রতিটি কাপেল যখন ডান্স ফ্লোরে যাচ্ছে! কুহু তখন অস্থির আর বিরক্তি নিয়ে এদিক-ওদিক চোখ বুলাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বলছে, কেন এলি? এই হাই সোসাইটির মানুষ গুলো তোর জন্য নয়! একদম না!  উহু। 

কুহুর বিরক্তি যখন হুরহুর করে বাড়চ্ছে।  ঠিক তখনি তাতে গরম তেল ঢালতে উপস্থিত হলো পৃধা।কুহুকে তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়ে দেখে মুখ বাকিয়ে নাক উঁচিয়ে বলল,,

---" শাড়ি? তোমার রুচির সাথেই যায়! একবার চারপাশ দেখে নিজের দিক একটু চোখ বুলালেও তো পার্থক্যটা চোখে পড়ে। উপস্ তোমার তো আবার সেই চোখ-ও নেই? তবে বলতে হবে! লাইফে সব থেকে বড় জিনিস জিতে নিয়েছো তুমি! ইন্টেলিজেন্ট গার্ল!"

পৃধার তিক্ত কথায়। মনটা খুব ক্ষুন্ন হলেও। নিজেকে সামলে নিলো কুহু। যেখানে সেখানে সে রাগ দেখায় না। আবার সব জায়গায় রাগ করে লাভের বদলে ক্ষতিটা বেশি। এর এখানে নিজের বাক্য ব্যয় মানে উলুবনে মুক্ত ছড়ানোর মত। কুহু এবার পৃধার দিক তাকালো। অর্ধ নগ্ন বুক খোলা একটি ব্ল্যাক  ড্রেস পড়ে আছে। মাথার চুল গুলো পাখির বাসার মতো করে উপরের দিক তুলে রেখেছে। আচ্ছা? এটাকে কি রুচিসম্মত গেটাপ বলে? তাহলে কুহু খুব খুশি এমন রুচি তার নেই। কুহু এবার পৃথার দিক পুরো দৃষ্টি মেললো। মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,,

---" আপু! কেউ দামি দামি বেশভুশার কারণে কেউ কাউকে জাজ করে না আপু। সকলেই তার কর্মে পরিচিত হয়।  আর আপু আপনি নিজেকে একবার দেখুন তো! নির্লজ্জের মতো নিজের গোপন অঙ্গ বের করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন? এটা কি খুব রুচি সম্মতো? তার থেকে আমার শাড়িই ভালো! আমার রুচিসম্মত হতে হবে না।"

কুহুর কথায় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলো পৃথা। মাথায় তখন ধপ ধপ করে চলছে "নির্লজ্জ" শব্দটি। কতবড় সাহস এই মেয়ে পৃথাকে কথা শোনায়? পৃথা কিড়মিড় করে তাকালো। মুখটা নাটকীয় ভাবে কুচঁকে কিড়মিড় করে বলল,,

---" হাউ ডেয়ার ইউ? আমায় তুমি নির্লজ্জ বললে? আমি দেখে নিবো তোমায়! ওয়েট এন্ড ওয়াচ!"

কুহু হাওয়ায় মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে তুলে বলল,,

---" অপেক্ষায় থাকবো আপু।"

পৃথা তার চোখ জোড়া দিয়ে গিলে ফেলবে এমন ভাব করলো কিছুক্ষণ।  নিজে নিজেই বিড়বিড় করে ধপাধপ পায়ে চলে গেলো কুহুর সামনে থেকে। কুহুর সেই বিরক্তিটা এখন বিস্বাদ লাগচ্ছে। এই হল রুমের হওয়াটুকু যেন বিষাক্ত মনে হচ্ছে। কুহু অস্থির হয়ে চোখ বুলালো। তখনি কানের কাছে ভেসে এলো গিটারের টুংটাং শব্দ। খানিকটা অবাক হয়ে কুহু তাকালো তখন হলের মধ্য বিন্দুতে। ইউসুফ গিটার কাঁধে ঝুলিয়ে টুং টাং সুর তুলে তাকিয়ে আছে কুহুর দিক। কুহুর এবার বিস্ময়ে চোখ বেড়িয়ে আসতে চাইলো। ইউসুফ যেন তাকে সেই সময়টুকু-ও দিলো না। গম্ভীর ভরাট আর চমৎকার স্বরে গেয়ে উঠল

Hamein tum se pyar kitna ye hum nahin jaante
Magar jee nahin sakte tumhaare bina

ইউসুফ মাদক চাহনিতে এগিয়ে এলো কুহু কাছে খুব কাছে। কুহুকে আজ লাল খয়েরী শাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত  সুন্দর লাগচ্ছে। মাঝে শিঁথি করে খোপা করে লাল গোলাপ গুঁজেছে। সামনের কাঁটা চুল গুলো অযত্নেই বের হয়ে এসেছে। কুহুর কাঁধের কালো কুচকুচে তিলটি আরো জলজল করছে। ইউসুফ কুহু মুখোমুখি দাঁড়ালো। কুহুর চোখে চোখ রেখে ফু দিলো কুহু মুখে। আবেশে বিস্মিত চোখ জোড়া বুঝে নিলো। কুহুর এমন ভাবে চোখ বুঝায় ইউসুফের ঠোঁটা বাঁকা হাসি ফুটলো। কুজুর দিক ঝুঁকেই গানের পড়ের অন্তর গুলো শুরু করলো...

suna gham judaai ka uthaate hain log
jaane Zindagi kaise bitaate hain log
Din bhi yahaan to lage baras ke samaan
hume intezaar kitna yeh hum nahin jaante
Magar jee nahi sakte tumhaare bina

কুহু চোখ মেলে চাইলো। তার চোখে, মুখে, ঠোঁটে কেমন কেমন হাসি। ইউসুফের মাথা খারাপ করার মতো হাসি। এ হাসিতে কতশবার ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলতে রাজি। ইউসুফ এবার গিটার রেখে কুহুকে টেনে নিলো বুকের মাঝে। হলে মধ্যবিন্দু হয়ে কুহু নিয়ে নাচতে লাগলো। তাদের সাথে জোগ দিলো আরো কিছু যুগল। ইউসুফ তখন কুহুকে ঘুড়িয়ে তার বুকের সথে কুহু পিঠ ঠেকালো। কোমোরের মাঝে হাত দুটো বেঁধে সুন্দর কুহুর কানের কাছে মুখ নিয়ে আবার গাইলো,,

tumhein koi aur dekhe to jaltaa hai dil
baDi mushkilon se phir sambhalta hai dil
kya kya jatan karte hain tumhein kya pataa
ye dil beqaraar kitna ye hum nahin jaante
Magar jee nahi sakte tumhaare bina

গান আর সুন্দর ডান্স  প্রদর্শনের শেষ হতেই চারিদিকে সকলের প্রশংসার কলরব পড়লেও।  সেদিকে পাত্তা দিলো না ইউসুফ কুহু হাত জোড়া নিজের হাতে পুরে বের হয়ে গেলো পার্টি থেকে। কুহু ইউসুফের দিক বিরতিহীন ভাবেই তাকিয়ে আছে সেই কখন থেকে। ইউসুফ আজ ব্ল্যাক কালার সুটের সাথে ড্রার্ক রেড শার্ট পড়েছে। শরীরে শুভ্র রং যেন ঝিলিক দিচ্ছে। কুহু কাতর চোখে তাকিয়ে আছে ইউসুফের প্রতিটি কাজে। মনের মাঝে ঘন্টার মতো বেজে চলছে "ইউসুফ তোর অর্ধাঙ্গ"।  যতবার কানের মাঝে বাজে ততবার শরীরে কেঁপে কেঁপে উঠে। লোম দাঁড়িয়ে যায়। মন তখন খুব কাছে পেতে চায় ইউসুফকে।  এতটাই কাছে যদটা কাছে এলে শ্বাসরুদ্ধ হয়। অসহ্য ভালো লাগা লেগে থাকে ঠোঁটের কোনে।
মাঝে মাঝে ইউসুফকে বড্ড অবুঝ মনে হয় কুহুর কাছে। যার জন্য মনের কোনে একটু একটু করে ঘর বানচ্ছে! সে কি যানে না, সে কি বুঝে না?  তার বাবুইপাখি চায় তাকে। খুব করে চায়। একান্ত নিজের করে পেতে। কিন্তু আফসোস সে ব্যর্থ হয় গলায় দলাপাকিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে কথা গুলো তার। আচ্ছা কুহু কি কখনোই তাকে বলতে পারবে? বুঝাতে পাড়বে? সে বলতে পাড়বে তার ভালবাসার কথা??

—————

হুট করেই আকাশে ছেয়ে গেলো কালো মেঘের ছায়ায়। প্রকৃতির তাণ্ডব লীলা শুরু হতেও যেন বেশি সময় নিলো না। গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর উপরে ফেলার মতো ঝড়ো হাওয়া বইতে লাগলো। তার সাথে তাল মিলালো ভয়ংকর বজ্রপাত। শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরা কাপানোর মতো। চারিদিকে আলোকিত করে মুহূর্তেই ভস্ম করে চলে যাচ্ছে এ বজ্রপাত। ইউসুফ তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর এ ভয়ংকর তান্ডব দেখতে ব্যস্ত। তার সুন্দর চোখ জোড়া আজ অস্থির।  বাহিরের তান্ডব লীলাতে থেকেও হিংস্র ইউসুফে বুকের মাঝে উঠা ঝড়। ইউসুফ চোখ বুঝলো।চোখ বোঝার সাথে সাথেই বজ্রপাতের শব্দে তার মুখখানা আলোকিত হলো।

সব-ই তো ঠিক ছিলো। কিছু মুহূর্ত আগেও ইউসুফ সুখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। কুহুর ভালবাসার মাঝে হারিয়ে যেতে চাইছিলো ইউসুফ।  

পার্টি থেকে ফিরে বাসায় আসা পর্যন্ত ইউসুফের মুখখানিতে কুহুর চোখ জোড়া বিচরণ করে গেছে। কুহু যেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইউসুফের চেহারা দেখে মুখস্থ করছে। ইউসুফের  অস্থি লাগার কথা হলেও সে প্রতিটি সময় মিটিমিটি হেসে গেছে। সেই হাসিতে কুহুর ঠোঁটের কোনেও হাসি ফুটেছে।  মাঝে মাঝে লজ্জায় নিজেই মুখ ফিরিয়ে লাল-নীল হয়েছে। তারপরও বেহায়া হয়ে চেয়ে দেখেছে ইউসুফের মুখখানা। ইউসুফ মাঝে অবশ্য জিজ্ঞেস করেছে,,

---" আমি তো কোনো খাবার নই। এভাবে তাকিয়ে গিলছিস কেন?"

কুহু লজ্জায় লাল। এভাবে কেউ বলে?  কুহু দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। চোখ দুটো দ্রুত সরিয়ে নিলো। অন্যদিকে ফিরে চোখ বুঝে মাথা এদিক ওদিক করে না করলো। ইউসুফ কুহুর লজ্জা পাওয়া দেখে হেসে ফেললো। কিন্তু কুহু চোখ হোড়া ফিরিয়ে রাখতে পাড়লো কই? বেশরম চোখ দুটি যেন লাজের পানি খেয়ে উধাও। ফিরে ফিরে সেদিকেই ছুটে গেলো।

কিন্তু এসব স্বাভাবিক ছিলো। কুহুর একটি কথায় ইউসুফ দ্রুত ব্রেক কসলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কুহুর কথাটি বুঝতে চাইলো। চারিদিকে তখন পিনপতন নিরবতা।  জনমানবহীন রাস্তা ঘাট। দূর থেকে মাঝে মাঝে শেয়ালের হাক শোনা যাচ্ছে। 

কুহু ইউসুফের হাত চেপে ধরলো। চোখে যেন ধারালো নেশা। ঠোঁটে এক আবেদনময়ী হাসি।কন্ঠে যেন মাদক ছড়াচ্ছে। কুহুর চোখ এবার ইউসুফের লাল ঠোঁট জোড়ায়। ইউসুফের দিক ঝুকে মৃদুমন্দ স্বরে বলল,,

---" আমাকে একটু চুমু খাবেন নেতা সাহেব?"

ইস্টিলের থালাবাসন পড়ার পর যেমন ঝনঝন করে শব্দ বেজে উঠে? ইউসুফের কানেও ঠিক তেমন ঝনঝন করে বাজতে লাগলো।  ইউসুফ বিস্ময় কাঁটে উঠার আগেই কুহু অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কাজ করে বসলো অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কাজ করে বসলো। ইউসুফে শার্টের দুটি বোতাম খোলা ছিলো। লোমোশ বুকের খাঁজ দৃশ্যমান।  কুহু টুপ করে চুম খেয়ে ইউসুফের বুকেই মুখ লুকালো। ইউসুফের সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ কয়েকশো গুন বেড়ে গেলো। ইউসুফের ফাকা হয়ে যাওয়া মাথায় হুট করে প্রশ্ন জেগে বসলো। কুহুকে আজ তাকে কাছে পেতে চাইছে? ইউসুফ মুকনো ঢুক গিললো। এমন একটি প্রহরের জন্য কত দিন আর কত রাত কেঁটে গেলো। কাঙ্ক্ষিত রাতটি বুঝি আজই?

ইউসুফ কুহুকে এক হাতে আকড়ে ধরে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। কুহুর করা কাজে এখনো হতভম্ব সে। আচ্ছা? কুহুকি কিছু খেয়েছে? সে কি হুঁশে আছে? এমন তো নয়? সে কোনো নেশার ঘোরে এমন করছে??

ইউসুফের মাথায় প্রশ্নের বাহার নিয়ে গাড়ি থামায় তাদের বাসার সামনেই। নিজে বের হয়ে কুহুকে বের হওয়ার জন্য বলতেই কুহু বলল,,

---" আমাকে কোলে নিন না নেতা সাহেব! "

ইউসুফ খানিকটা ভ্রু কুচকালো। মেয়েটির আজ হয়েছেটা কি? সবসময় দূরে থাকা এ মেয়েটি এমন কেন করছে? ইউসুফের ভাবার মাঝেই কুহু তার দু হাত তুলে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,,

---" কি হলো নেতা সাহেব নিচ্ছেন না কেন কোলে?  "

ইউসুফ সুপ্ত শ্বাস ছাড়লো। নির্ঘাত মেয়েটি এলকোহল টাইপ কিছু খেয়েছে? ইউসুফ কুহুকে কোলে তোলে নিলো। কুুহু এখনো চেয়ে আছে ইউসুফের দিক। ইউসুফের এবার অস্থি লাগচ্ছে। কুহুকে খাটে শুইয়ে দিয়ে যেই যেতে নিবে।  কুহু তখন অভাবনীয় এক কাজ করে বসলো। ইউসুফ কলার ধরে টেনে ধরতেই ইউসুফ কুহুর উপরে গিয়ে পড়লো। ইউসুফ অবাকে ফেঁটে পড়লো তখন। আবার উঠতে চাইলে কুহু ইউসুফ কানে ফিসফিস করে বলে,,

---" আমি নেশা করিনি নেতা সাহেব। আমার নেশা ধরেছে আপনার নেশা। একটু আদর করুন না!"

ইউসুফ কুহুর দিক তখন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। সন্ধিহান কন্ঠে বলল,,

---" আর ইউ ওকে? এমন উদ্ভট কথাতো কুহু কখনো বলে না! তুই সত্যি কুহু? নাকি কুহুর চেহারার মাস্ক পরিহিত অন্য কেও??"

ইউসুফ কথা কুহু বিরক্ত হয়। মুখ দিয়ে "চ" শব্দ করে বলে,,
---" আজাইরা কথা রাখুনতো! আসুনতো আমাকে একটু গাড়ো করে চুমু খান তো। আপনার এই লাল টুকটুকে ঠোঁট আমাকে কতটা যে কাতর করে তুলে জানেন কি? "

ইউসুফ কিছু বললো না। কুহু খানিকটা চুপ থেকে বলে উঠলো হুট করেই,,

---"নাকি আপনি ইম্পোটেন্ট??"

কুহুর কথায় ইউসুফের মেজাজ এবার চান্দে। মেয়েটা উস্কানিমূলক কথায় মাথা এবার ধপ ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো ইউসুফের। মেয়েটা এবার পৌরুষত্বের উপর সন্দেহ করছে? কি সাংঘাতিক? পরক্ষণেই মাথাটা ঠান্ডা  করে ফেললো। কুহুর মুখের দিক ঝুকে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে  বলল,,

---" আমাকে উস্কে তোর খুব একটা ভাল হবে না কিন্তু কুহু! নিজেকে সংযোগ রাখছি রাখতে দে নয় তো...! "

কুহু ঠোঁট কামড়ে ধরলো নিজের।  ঝিম ধরনো এক হাসি দিয়ে বলল,,

---" রাখতে কে বলেছে?"

ইউসুফ বাঁকা হাসলো। সুযোগটা লুফে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো কুহুর দিক। কুহু চোখ বুঝে ফেললো ভয়ে। ইউসুফ তখন কুহু গলায় নাক ডুবিয়ে নেশাতুর কন্ঠে বলল,,

---" আজ তুই শেষ কুহু!"

কুহু লজ্জায় মুখ গুঁজে ফেললো ইউসুফের বুকে। ইউসুফ ফিসফিস করে বলল তখন,,

---"তুই কি ছোটো থেকে তুলো খেয়ে বড় হয়েছিস? এত তুলতুলে কেন?"

কুহুর তখন আর সাড়া নেই। ইউসুফ তাকালো কুহুর দিক। কুহু ঘুম। ভাড়ী নিশ্বাস বলে দিচ্ছে তার। স্বপ্নের দুনিয়ায় ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে। ইউসুফ আহত সুরে বলল,,

---" এটা কোনো কথারে বাবুইপাখি?  আমাকে ভালোবাসার অতল গহবরের ডুবিয়ে তুই ঘুম দিলি? প্রতিশোধ নিলি তো? আমিও নিবো!"

ইউসুফ হা করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কুহুর ঘুমার্থ মুখটিতে হাত বুলিয়ে কঁপালে চুমু দিলো। কুহু গায়ে কাথা জড়িয়ে উঠতেই ইউসুফের ফোনের মেসেজ টিউন বেঁজে উঠলো। ইউসুফ কঁপাল কুঁচকে ফোন স্ত্রোল করতেই কঁপালে দুটি ভাজ পড়ে। সে আবার চোখ বুলায়,,

---" আই এম ব্যাক!"

ইউসুফ লিখলো,,

---" গো টু হেল।"

ওপর প্রান্ত থেকে তখন উত্তর এলো,,

---" তোমার সাথেই যাবো যেখানেই যাই!"

ইউসুফের রাগ বাড়লো।  আবার নতুন কোনে ঝড়ের আবাস নয় তো? ইউসুফ টাইপ করলো,,

---" কি চাই আর!"

---" তোমাকে!"

---"আমি চাই না আর! আমি বিবাহিত! "

ওপাশ থেকে আর কিছু রিপ্লাই না।  ইউসুফ বেলকনিতে গেলো। চারিদিকে ঝড় উঠেছে। গাছগাছালী উপরে ফেলছে যেন। ঠিক তেমনটি অনুভব হচ্ছে ইউসুফের বুকে। ইউসুফ রেলিং এর উপর দু হাত রেখে দাঁড়ালো। বৃষ্টি তার তেজে ইউসুফকেও ভিজিয়ে দিলো যেন। ইউসুফ চোখ বুজে সেই বৃষ্টি উপভোগ করছে নাকি নিজের চোখে পানি লুকাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। ইউসুফ চোখ খুললো মেসেজ টিউনের আওয়াজে। রক্তিম হয়ে উঠা চোখ জোড়া মেললো ইউসুফ। 

---" আম প্রেগন্যান্ট। তোমার বেবি আমার গর্বে বড় হচ্ছে ইউসুফ।  আই নিড ইউ। প্লীজ কাম ব্যাক।"

বজ্রাপাতের ওয়াজটা সেই মুহূর্তে ভয়ংকর ভাবে বেড়ে গেলো। ইউসুফের মনে হলো।  তার উপরি পড়েছে। কি হবে এখন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন