প্রিয়তা (পর্ব ০৯)


"ভালোবাসা কাউকে পৃথিবীর সব সুখ এনে দেয়, কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। মানসিকভাবে যন্ত্রণায় ভুগায় আবার সেই ভালোবাসা-ই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফোটায়।তবে ভালোবাসায় সুখ তখনি হৃদয়ে বয়ে যায় যখন ভালোবাসার মানুষটা সঠিক হয়।যখন তার ভালোবাসা হয় কোনোরকম সার্থ বিহীন।হে,,সার্থপর হওয়া যায় তবে ভালোবাসার মানুষটা কে সারাজীবন নিজের কাছে আগলে রাখার জন্য। কিন্তু মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয়,,চাহিদা একটা মানুষের জীবন শেষ করতে যথেষ্ট। মানুষ টা কে মেরে ফেলতে মিথ্যে ভালোবাসার বিষ হলেই চলবে।"

কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আয়াজ।নদীর ধারে পানিতে পা ডুবিয়ে পাশাপাশি বসে আছে দুজন।এক হাতে ঐদিনের আরশির দেখা ছবিটা তুলে ধরল সামনে
।এটাই গাড়িতে দেখিয়েছিল আরশি।ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল আয়াজ।আরশির হাতের উপর রাখা নিজের হাতটা আরো চেপে ধরল সে।ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আরশি আয়াজের দিকে।ছবিটা হাত থেকে নামিয়ে আরশির দিকে তাকাল আয়াজ।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল

--খারাপ লাগছে?

মাথা দু-পাশে নাড়ালো আরশি।অর্থাৎ খারাপ লাগছে না তার তবে চোখে মুখে কৌতূহল অধিক।তাই আবারও জিজ্ঞেস করল---ছবিতে আপনার মাথার  চুল ধরে টানা মেয়েটা কে নায়ক সাহেব?

আবারও হাসল আয়াজ। কোমল কন্ঠে বলল--আরোহী।
কখনও কোনো খুব বেশি কাছের ফ্রেন্ড ছিল তোমার?

--না।ওনি কি আপনার ফ্রেন্ড? 
--হুম।ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে।ও আমার বোন।
--মানে?
--ও আমার রক্তের কেউ ছিল না।তবে আত্মার ছিল।আনহার মতো ও আমার বোন ছিল।
---ছিল মমমানে?
চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল আয়াজ।আরশিকে জরিয়ে নিল নিজের বাহুতে।

ক্লাস সিক্সে যখন ভর্তি হয় তখন ফ্রেন্ডশিপ হয় আমার একটা মেয়ের সাথে।মেয়েটা ছিল খুব মিশুক। মেয়েদের সাথে মেলামেশা ততটা ভালো লাগত না আমার।কিন্তু সেই মেয়েটা ছিল একটু জেদি টাইপের।আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে বলে৷ জেদ ধরে রইল।মেয়েটার জেদ জিতে গেলো এক সময়।ভালো ফ্রেন্ডশিপ গড়ে উঠল আমাদের মাঝে।মেয়েটা আমাকে ভাই বলে ডাকত।তার উক্তি ছিল এমন--"আমার তো কোনো ভাই নেই তাই তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আবার তুই-ই আমার ভাই। ভাই কেনো বানিয়েছি জানিস?যেনো তুই আমায় বোন ভেবে আগলে রাখতে পারিস।প্রটেক্ট করতে পারিস।""মেয়েটার কথায় হেসে উঠলাম আমি।যখন বাবা-মা মারা যায় তখন সেই ছোট্ট মেয়েটাই পাশে ছিল আমার।আমার পড়ালেখা জীবনের প্রতিটা ধাপে তখনও আমার পাশে ছিল সে। বাড়িয়ে দিয়েছিল নিজের সাহায্যের হাতটা।শিখিয়েছিল হতাশা থেকে আবারও জীবনে উঠে দাঁড়াতে।জীবনসঙ্গীনী হয়ে নয় বোন হয়ে।সময়ের সাথে সত্যিই মেয়েটা আনহার মতোই প্রিয় হয়ে উঠল আমার কাছে।আনহার মতোই প্রটেক্ট করতে লাগলাম তাকে।কারণ ভাইয়ের কাজই তো বোনকে আগলে রাখা।পৃথিবীর সব কলুষিত জিনিস থেকে বাচিয়ে রাখা।আমিও আগলে রাখতাম আমার বোনটাকে।প্রথমে সবাই ভাবত হয়তো আমাদের মাঝে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক আছে।কিন্তু সময়ের সাথে বদলে গেলো সবার ধারণা। যেই মানুষ গুলো আমাদের প্রেমিকযুগল ভাবত তাদের মুখেই শুনতে পেতাম রক্তের সম্পর্ক না হয়েও কি এমন আপন হয় মানুষ? গড়ে ওঠে কি ভাই- বোনের এতো মধুর সম্পর্ক?আনহাও নিজের বড় বোন মানত তাকে।সেই  মেয়েটির নাম ছিল আরোহী।

অবাক হলো আরশি।পর একটা মেয়ে কি অনাসয়ে দখল করে নিল বোনের জায়গা।কি অনাসয়ে দায়িত্ব দিয়ে দিল একটা অচেনা ছেলেকে নিজেকে আগলে রাখার ? আরশির এখন ভীষণ ইচ্ছে করছে আরোহী নামক মেয়েটাকে সরাসরি দেখতে।যার কথা এতো মিষ্টি, যে এতো সহজেই কাউকে আপন করে নিতে পারে সে বাস্তবে কেমন হতে পারে? ছবির আরোহী এতো সুন্দর না জানি বাস্তবে কতো সুন্দর মানুষ টা আর কতো সুন্দর তার মনটা।নিজের ইচ্ছা আর দমিয়ে রাখতে পারছে না আরশি।খামচে ধরল আয়াজের হাত।উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলে উঠল-

 "আমাকে আরোহী আপুর কাছে নিয়ে চলুন না নায়ক সাহেব।এতো সুন্দর মনের মানুষ টা কে দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগেছে মনে।চলুন না।নিয়ে যাবেন তো নায়ক সাহেব আপনার সেই বোনের কাছে?"

মনটা খারাপ হয়ে গেলো আয়াজের।কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। কারণ সে তার প্রিয়তার এই ইচ্ছে কখনও পূরণ করতে পারবে না।গম্ভীর মুখে বলে উঠল- 

--এইটা সম্ভব না প্রিয়তা।

আয়াজের কথায় হাসি মুখ টা নিমিষেই মলিন হয়ে এলো আরশির।আয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল-

--কেন সম্ভব নয় নায়ক সাহেব?ওনি কি বাংলাদেশে থাকেন না?অন্য দেশে থাকে? তবে আপু যেখানে থাকে সেখানেই নিয়ে চলুন আমায়।আচ্ছা আপুর কি বিয়ে হয়ে গেছে?

----জানিনা।(গম্ভীর ভাবে)

---জানেন না মানে?আপু কোথায়? আমার ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে।আচ্ছা আপনাদের কি ঝগড়া হয়েছে?কিছু বলছেন  না কেনো নায়ক সাহেব?(আয়াজের হাত দুটো ঝাঁকিয়ে)

মেজাজ খারাপ হয়ে এলো আয়াজের।আরশির এতো অনুরোধ নিতে পারছে না সে।পারছে না সে তার প্রিয়তার অনুরোধ রাখতে।আরশি আবারো হাত ধরে ঝাঁকাতেই চেচিয়ে উঠলো আয়াজ।

---জানিনা মানে জানিনা। কি সমস্যা তোমার?ছবিতে মেয়েটা কে জানতে চেয়েছ বলেছি।এখন আবার এমন ন্যাকামো কেন করছো?সবসময়  শুধু আবদার করো।আর কোনো কাজ নেই তোমার?জালানো -ই কি তোমার স্বভাব? ফারদার যদি আবদার করো তো খুব খারাপ হবে।(চিল্লিয়ে) 

কথা গুলো বলে আয়াজ হনহনিয়ে চলে গেলো।যেভাবে ছিল সেভাবেই বসে রইল আরশি।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল   পানি।এমন কি বলেছিল সে?আসলেই কি আমি আবদার করি বেশি?নায়ক সাহেব কে জালায় বেশি?আমি তো শুধু আরোহী আপুকে দেখতে চেয়েছি।আমি কি অন্যায় করে ফেলেছি?যাবো না নায়ক সাহেব আর জালাতে যাবো না আপনার কাছে।কথা গুলো বলে হাউমাউ করে কেঁদে দিল আরশি।গাড়িতে বসে সিটের সাথে মাথা এলিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল আয়াজ।গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। কাঁদছে সে।রাগের মাথায় নিজের প্রিয়তাকে কষ্ট দিয়ে এখন মনে হচ্ছে তার বুকের মাঝে কেউ ছুরি আঘাত করছে বার বার।

কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেলো আরশির।কোনো ভাবেই চোখের জল বাঁধ মানছে না।প্রিয় মানুষের দেওয়া কষ্ট কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার ছোট্ট হৃদয়টা।হঠাৎ -ই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে উঠল সে।

—————

যদি কখনও জানতে পারো তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষটা যাকে তুমি খুব বেশি ভালোবাসো সে মানুষ টা একজন পশুর সমতুল্য তাহলে কেমন অনুভব করবে তুমি প্রিয়তা?

কথাটা বলতে বলতে আরশির পাশে বসে পড়ল আয়াজ।চমকে উঠল আরশি।আয়াজের কথায় কোনো কর্ণপাত না করে অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিল সে।কষ্ট হচ্ছে তার।আয়াজের হাতের স্পর্শ  নিজের কোমরে পেতেই হাতটা জোর করে ছিটকে সরিয়ে দিল।কিছুটা সরে বসল।আরশির অভিমান বুঝতে পারল আয়াজ।আরেকটু কাছে ঘেঁষে বসল আরশির। 

সরি প্রিয়তা।ক্ষমা করে দাও আমাকে বউ।
আরশির হাতটা ধরে বলল আয়াজ।অভিমানে চুপ করে রইল আরশি।একদম ভালো লাগছে না তার।

আমি তো আপনাকে জালায় অনেক।চলে যান আপনি।
কথাটা বলে কেঁদে দিল আরশি।মুচকি হেসে আরশির মুখটা নিজের দিকে তুলে ধরল আয়াজ।পরম যত্নে মুছে দিল প্রিয়তার চোখের জল। কপালে একেঁ দিল ভালোবাসার পরশ।আরশির মাথা টা চেপে ধরল নিজের বুকে।অবাক হল আরশি।কোথায় গেলো তার অভিমান?এই মানুষটার ভালোবাসার কাছে হার মেনে নিল অভিমানও। বুকে  বাচ্চাদের মতো চুপ করে মাথা রেখে আয়াজের হৃদয়ের হৃৎস্পন্দন শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আরশি।আবেশে ছুঁয়ে দিল আয়াজের বুকে নিজের ঠোঁট দুটো।বাকা হাসল আয়াজ।সে জানতো তার ভালোবাসার কাছে এই মেয়ের রাগ অভিমান ও হার মানতে রাজি।যেমনটা ঠিক হয় আয়াজের ক্ষেত্রে।আরশিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে পাশে বসাল আয়াজ।শান্ত কন্ঠে বলল--
"আমি যা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনবে ওকে?আশা করি আরোহী কোথায় সেটার জবাব ও পেয়ে যাবে।"

লক্ষী মেয়েদের মতো মাথা দোলাল আরশি।পুরোনো কষ্ট গুলো আবারও জেগে উঠল আয়াজের।কষ্ট গুলো চেপে থাকলেও থাকে নি  জানোয়ার গুলোকে শেষ করে দেওয়ার লক্ষ্য।হতাশ কন্ঠে বলতে শুরু করল আয়াজ।

কেটে গেল অনেক গুলো বছর।স্কুল, কলেজ জীবন  পার করে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম আমি আরোহী।সময়ের সাথে আমাদের ভাই-বোনের, বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে উঠল আরো গভীর।আনহার মতোই মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতাম আমি।নিজের জীবনের মনের সব কথাই আমার কাছে শেয়ার করত আরোহী।ভার্সিটিতে আমাদের কাছের বন্ধু হয়ে উঠল আরো একটা মানুষ।এতো বছর আরোহী আর আমার বন্ধুত্বের মাঝে কাউকে আসতে দেয় নি আমরা।কিন্তু আরোহীর জন্য আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে শামিল করে নিয়েছিলাম আরো একজন কে।কারণ আমার বান্ধবী টা প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিল ছেলেটা কে।ছেলেটার আচার আচরণ খারাপ ছিল না।দেখতে ও বেশ সে।প্রথম প্রথম মনে হতো ছেলেটা খারাপ। তার নজরে কেমন যেনো হিংস্রতা আছে মনে হতো।কিন্তু আরোহীর জন্য শেষ পর্যন্ত মানতে আমিও বাধ্য হলাম ভুল কাউকে ভালোবাসে নি সে।শুরু হয় তাদের মাঝে এক নতুন সম্পর্ক।বেশ হাসি খুশি থাকত আরোহী।তাকে খুশি দেখে মনের মধ্যে শান্তি অনুভব হতো আমার।মনে হতো এই বুঝি আমার আগলে রাখার দিন শেষ।পেয়ে গেলো আরোহী নিজেকে প্রটেক্ট করার এক নতুন মানুষ।তার ভালোবাসার মানুষ। সময়ের ব্যবধানে ছেলেটা ও আমার কাছের মানুষ হয়ে উঠল।বিশ্বাস করতে শুরু করলাম তাকে।নিজের বোনকে যে মানুষ এতো হাসি খুশি রাখছে আগলে রাখছে আমার মতো করেই প্রটেক্ট করছে তাকে কি বিশ্বাস না করে থাকা যায় প্রিয়তা?

মাথা নাড়াল আরশি।সত্যিই তো যেকোনো ভাই হোক নিজের বোনের জন্য এমনই তো একটা মানুষ খোঁজে।আর এমন একটা মানুষ পেয়ে গেলে বিশ্বাস তো এমনি এমনি চলে আসে।

কিন্তু ভুল ছিলাম আমি।মানুষ চিনতে খুব ভুল করে ফেলেছিলাম আমি প্রিয়তা।নিজের হাতে নিজের প্রিয় বান্ধবী কে নিজের বোনকে তুলে দিয়েছিলাম এক নরপশুর হাতে।
আায়জের কথায় আঁতকে উঠল আরশি।আতংক কন্ঠে বলে উঠল- কেনো কি হয়েছিল নায়ক সাহেব?আর আরোহী আপু কোথায়? 

সেদিন ছিল আরোহীর ভালোবাসার মানুষটার জন্মদিন। সন্ধ্যার দিকে ফোন দিল আরোহী তার সাথে যাওয়ার জন্য। আনহার জ্বর থাকায় কারো কাছে রেখে যাওয়ার সাহস হচ্ছিল না আমার।আর রেখেই বা যেতাম কার কাছে?কেউ ই তো ছিল না আমাদের।আরোহীর ভালোবাসার মানুষটা তো আমার মতো করেই আগলে রাখে তাকে।তাই সেই মানুষ টার উপর বিশ্বাস রেখেই ছেড়ে দিলাম তার সাথে।কিন্তু কখনও ভাবি নি এতো ভয়ংকর ফল হবে আমার বিশ্বাসের।

আনহাকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলাম আমি।তখনই শব্দ করে বেজে উঠল ফোনটা।কানে দিতেই ভেসে এলো আরোহীর মার চিন্তিত কন্ঠ। 

---আয়াজ রাত এগারোটা বাজে আরোহী তো এখনও ফিরল না।
---ফোন দিয়েছিলেন আন্টি? 
--হ্যা, বাবা।কিন্তু ফোন বন্ধ। 
 
আন্টির কথায় চিন্তিত হয়ে পড়লাম আমি।পরক্ষণেই ভাবলাম চিন্তিত হওয়ার তো কিছুই নেই। আমার মতো আমার বোনকে আগলে রাখার মানুষ তো আছেই। তাই বলে উঠলাম--আন্টি আপনি টেনশন করবেন না আরোহী হয়ত রাস্তায়-ই আছে।
---হয়তো কিন্তু আজকাল কার ছেলেদের ভরসা করা যায় না আয়াজ।আমার মেয়েটাকে তোমার মতো করে কেউই আগলে রাখতে পারবে না।আরোহী হয়তো আসছে।আসলে ফোন করে জানাব আমি তোমায়।

--ওকে আন্টি।
 এগারোটা পেরিয়ে বারোটা বেজে গেল। কিন্তু আরোহী ফিরে আসার নাম নেই। পাগলের মতো ফোন করে যাচ্ছিলাম তার নাম্বারে কিন্তু ফোন বন্ধ। সেই ছেলেটার ও ফোন বন্ধ।ভয়ে আঁতকে উঠল আমার মনটা।মনে হচ্ছিল খারাপ কিছু হয়েছে। আর না পেরে আনহা কে অসুস্থ অবস্থায় ফেলেই ছুটে গেলাম আরোহীদের বাড়িতে।আংকেল আন্টি প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন প্রাণ প্রিয় মেয়ের জন্য। তাদের ভরসা দিয়ে ছুটে গেলাম ঐ ছেলের বাড়িতে। কিন্তু কি আশ্চর্য কেউ নেই বাড়িতে তালা।কেমন যেনো লাগছিল সবকিছু। বাবা মাকে হারিয়ে মনে হচ্ছিল আবারও প্রিয় কাউকে হারাতে যাচ্ছি আমি।সত্যিই হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।হারিয়ে ফেলেছিলাম আরোহী কে।ভোরের দিকে তাকে পেয়েছিলাম জঙ্গলের পাশে।জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত মনে হচ্ছিল সেদিন।নিজের চোখ দুটো মেলে তাকাতে পারছিলাম না আমি।চিতকার করে কেঁদেছিলাম সেদিন।

সকালে আরোহীর জ্ঞান ফিরতেই ডক্টর ডেকে পাঠাল আমাকে।আরোহীর অবস্থা  খুব খারাপ।বাঁচার চান্স  একদম কম।ডাক্তার এই কথাটা বলতেই কেঁদে দিল আংকেল আন্টি।দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই আরোহী কে দেখে ভিতরটা কেঁপে উঠল আমার।এতো সুন্দর মেয়েটার আজ কি অবস্থা!মনের দিক থেকে সাহসী আর স্ট্রং হওয়া মেয়েটার অবস্থা দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করছিল আমার।যেই মেয়েটা আমার জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতেও পাশে ছিল সেই মেয়েটা আজ ভেঙে পড়েছে। পাশে বসতেই ফিরে তাকালো আরোহী।

---জানোয়ার দের শাস্তি দিবি তো আয়াজ?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল)

কথাটা বলেই কেঁদে দিল আরোহী।নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছিল আমার।নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারি নি আমি।পারি নি আমি আমাকে নিজের ভাই বলে ডাকা মেয়েটাকে রক্ষা করতে।

---কিছু বলছিস না যে?দেখেছিস ঐ জানোয়ার গুলো তোর বোনের কি অবস্থা করেছে?ভালোবাসার প্রতিদান পেয়েছি আমি আয়াজ।
কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে আরোহীর। তবুও বলে উঠল---
ভালোবাসার মানুষটা ও তার বন্ধুগুলো আমাকে মেরে ফেলেছে আয়াজ।মেরররে ফেলেছে। 

এটাই ছিল আরোহীর বলা শেষ কথা।সেই স্ট্রং মেয়েটা আর কথা বলে নি।ভাই বলেও ডাকে নি আমায়।নিজের চোখের সামনে মরতে দেখেছি তাকে।অথচ এক ফোটা অশ্রু ও গড়ায় নি চোখ থেকে তবে হিংস্র হয়ে উঠেছে আমার মনটা।শেষ বাক্যটা মনে মনেই বলল আয়াজ।সেদিন না কাঁদলে ও তার গাল বেয়ে আজ গড়িয়ে পড়ছে জল।বুকের মাঝে মাথা দিয়ে চুপটি করে কাদছে আরশি।আরোহীর এমন পরিণতি কল্পনাতেও ভাবতে পারছে না আরশি।অথচ তাই সত্য। কঠিন এক সত্য।কি নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষ গুলো!!ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে কিভাবে পারল ঐ জানোয়ার আরোহীর মতো মিষ্টি একটা মেয়েকে মেরে ফেলতে?কে ঐ নিকৃষ্ট মানুষটা?জানোয়ার গুলোর কি শাস্তি হয়েছিল?আরশির ইচ্ছে করছে খুন করে ফেলতে।তার নায়ক সাহেব জীবনে কতো কিছু সয়েছে।প্রিয় মানুষ গুলোর এতো ভয়াবহ পরিণতি কিভাবে সয়ে যাচ্ছে  ভাবতেই আরশির বুক ফেটে কান্না আসছে। কখনও তার প্রিয় মানুষ গুলো কাছের মানুষগুলো যেনো এমন না হয়।আয়াজ মেনে নিতে পারলেও পারবে না সে।পিঠে হাত দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরল আয়াজ কে।কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল- 

"আমি অনেক ভাগ্যবতী নায়ক সাহেব। অনেক ভাগ্যবতী। আমি আপনাকে পেয়েছি।সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছি। কখনও হারাতে চাই না আপনাকে।সারাজীবন আপনার প্রিয়তা হয়েই থাকতে চাই আপনার কাছে।ভালোবাসি নায়ক সাহেব!"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন