সকালে তিতির ঘুম থেকে উঠে দেখে ওর শরীরে সুতার দর্সিও নেই। তিতির প্রচন্ড লজ্জা পেল। পাশে মাহাদ রিলাক্সে ঘুমাচ্ছে। মাহাদের নিষ্পাপ চেহারার মাঝে একটা আকর্ষন কাজ করে। গতকাল রাতে মাহাদের নতুন রুপ দেখেছে তিতির। পুরোটা রাত অত্যাচার করে তিতিরকে অতিষ্ট করে এখন শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে সে। কে বলবে এই নিষ্পাপ চেহারার মাঝে এত বিধ্বংসী জংলিপনা লুকিয়ে আছে।
তিতির বেড থেকে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেল। গোসল সেরে এসে দেখল, মাহাদ এখনো ঘুমে মগ্ন।
তিতিরের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চলে এল। ওর চুলের আগা দিয়ে মাহাদের পিঠে বুলিয়ে দিল। সাথে সাথে মাহাদ নড়ে উঠল। তিতির মুখে হাত চেঁপে হেঁসে উঠলো। এবার গালের উপর চুল ছোয়াতেই মাহাদ নড়েচড়ে কম্বোল ভালো করে গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
নাহ্ গভীর ঘুমে আছে তাই ওকে না জ্বালানোই উচিত। তিতির ওখান থেকে এসে একটা লাল রঙ্গের জামদানী শাড়ী পড়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল। মাহাদ বলে রাগে একটা চিৎকার দিল তিতির।
তিতিরের চিৎকারে মাহাদ ধরপড় করে উঠে বসল। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে তিতিরের দিকে চাইল। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে খানিকটা ঝাপসা দেখছে। তাই দু হাতে চোখ ঘুষে আবার তিতিরের দিকে চাইল। হ্যাঁ এবার সে ভালো দেখতে পারছে। সামনে আর কেউ নয় তার ধানি লঙ্কা বউ দাড়িয়ে আছে। লাল শাড়িতে তাকে কিউট কার্টুনের মত দেখাচ্ছে। কিন্তু সে চেচিয়ে উঠলো কেন?
তিতির মাহাদের কাছে এসে ওর গলার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল," এগুলো আমাকে কি করেছেন? আমি এখন রুম থেকে বাহিরে যাব কিভাবে? আপনি মানুষ, না রাক্ষস!"
"মাহাদ আর কিছু না বলে পাশ ফিরে সুয়ে পড়লো।"
" আমি কিছু বলছি আপনাকে শুনতে পান না?"
" আহ্ তিতির, ঘুমাতে দাও তো! আমি রাক্ষস হলে তুমি মহারাক্ষসী। আমার বুকের দিকে খেয়াল করে তারপর আমাকে এমন সব উদ্ভট নামের উপাধি দিও। টেনশন নিয়োনা। পরের বার আরও গভীর স্পট পড়তে চলছে তোমার শরীরে। কারন আমি এর শোধ না নিতেই তোমায় ছেড়ে দিব ভাবছো? কোন ছাড় নেই। এবার অগুনতি লাভ ব্রাইটের ছাপ পড়তে চলেছে তোমার গায়ে।
দেখ আমার ঘুমের প্রয়োজন তাই দুপুর ১২টার আগে যেন আমায় ডাকতে না দেখি।"
তিতির রেগে গিয়ে মাহাদের শরীর থেকে একটানে কম্বোল কেড়ে নিল। কম্বোল কেড়ে নিয়েও একপ্রকার বেক্কেল হয়ে গেল তিতির। সাথে সাথে কম্বোল মাহাদের দিকে ছুড়ে মারল। মাহাদও তিতিরের দিকে বড়বড় চোখ করে বলল," এটা কি হল?"
ওমন ভাবে চেয়ে রইছেন কেন? মনে হচ্ছে চোখ, নাক, মুখ দিয়ে আমায় গিলে খাবেন! কাঁদো কাঁদো সুরে তিতির বলল," এভাবে কেউ কাউকে নির্যাতন করে?"
কেউ করে কিনা জানিনা কিন্তু আমি আমার বৌকে করি,করব এবং ভবিষ্যতেও করবো। তোমার প্রতি কেন যে আমি এত ফিদা! তার জন্য নিজেই নিজের ভালোবাসার উপর রাগ উঠে যায়। আমাকে তুমি পুরোই শেষ করে দিয়েছ তিতির বলেই মাহাদ চট করে তিতির হাত ধরে টান দিতেই তিতির মাহাদের উপর পড়ে গেল। সাথে সাথে মাহাদ তিতিরকে ওর বাহুডোরে বেঁধে ফেলল। স্যরি সোনা, আমাকে বিরক্ত করার জন্য তার শাস্তিতো তোমায় পেতে হবে।
তিতির বিষ্ফরিত চোখে মাহাদের দিকে চাইল।
তুমি আমার সামনে এলেই আমার হার্ডবিট বেড়ে যায়। এটা তোমার ভুল না কিন্তু তোমার নজরের দোষ এটা। যেটার জন্য তুমি ভয় পাচ্ছো সেই কাজটায় এখন করে দেখাবো তোমায়। এমন করে আমার দিকে তাকিয়েওনা সোনা! মনে হচ্ছে তোমায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে তোমার কাছ থেকে তোমায় চুরি করে বুকের খাঁচায় আবদ্ধ করে ফেলি। আমাকে চেতানোর মাসুল তো তোমায় দিতেই হবে সোনা?
মা..হা..দ বলে চোখ বড় করতেই মাহাদ তিতিরের ঠোটে ঠোট ছুয়ে বলল," তুমি এত মাখনের মত নরম যে আমি দাঁতের ছোয়া না দিয়ে থাকতেই পারিনি। স্যরি এবার আমি এই বিষয়টা পুরো খেয়ালে নিব।"
মাহাদ ডুবে গেল তিতিরের ভালোবাসার ভিতর।
♦♦♦♦
তিতির বসে আছে বড় টুলের উপর আর মাহাদ রান্না করতে ব্যাস্ত। সকালে গিয়ে রাশেদা আন্টিকে বলে এসেছে দুপুরের খাবারের জন্য। গোলাব মাহাদকে জ্বালিয়েই যাচ্ছে। গোলাব, তোরে এখন কোলে নিতে পারবোনা। খাবারে গায়ের লোম পড়বে বাবা। মায়ের কাছে যা।
কিন্তু নাহ্ সে আজ কিছুতেই তিতিরের কাছে যাবেনা। তার এখন মাহাদকে চাই চাই। শেষে মাহাদ তিতিরকে ইশারা করে গোলাবকে কোলে নিয়ে বাহিরে চলে গেল। আর তিতির রান্নার দিকে এল। প্রায় দু'ঘন্টা পর রান্না শেষ করে তিতির কিচেন থেকে বের হয়ে এসে দেখল, মাহাদ গোলাবকে গোসল করে দিচ্ছে। তিতির সেখান থেকে চলে এসে সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে গোসল করতে গিয়ে দেখে মাহাদ গোসল করছে। তিতির সেখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই এমন সময় মাহাদ তিতিরকে টাওয়াল দিয়ে যেতে বললো।
তিতির টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে যেতেই মাহাদ তিতিরকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে দু'জনেই একসাথে ভিজতে লাগল। তিতির মাহাদের উল্টা-পাল্টা স্পর্শে বার বার কেপে উঠছে।
মাহাদ বিরক্ত হয়ে তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে বলল," কি ব্যাপার, তুমি এত কাঁপছো কেন! তোমার কি কাঁপুনি রোগ আছে? চল আজই তোমায় ডাক্তার দেখাবো।"
কথাটা শুনে তিতির মন খারাপ করে বলল, " আমার কোন কাঁপুনি রোগ নেই। আপনি একটু বাড়াবাড়ি বলছেন।"
" সমস্যা যখন নেই তাহলে অযথা এত কাঁপছ কেন?"
"আমার ভিষন লজ্জা করছে।"
মাহাদ তিতিরকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে আলিঙ্গন করতে করতে বলল," আর কতটা ঘনিষ্ট হলে তোমার এই লজ্জাগুলো কমবে শুনি? আমার কাছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করো।"
তিতির আর কিছু না বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল।
মাহাদ তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে গোসল সেরে বের হয়ে এল। তিতিরও কিছুক্ষন পর বের হয়ে চেঞ্জ করে মাহাদকে নিয়ে একসাথে সালাত আদায় করল। তারপর সবাই মিলে একসাথে খাবার খেয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দিল। মাহাদ ততক্ষনে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আসমা আজ খুব খুঁশি। প্রথমে মাহাদকে দেখে তো চমকে উঠেছিল। কতদিন পর ভাইজানরে দেখলো সে। আল্লাহ্ চাইলে আবার সেই আগের মত ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
♦♦♦♦
সন্ধ্যার একটু আগে মাহাদ ওর গাড়ীটা ওয়াশ করতে নিয়ে গেল। গতকাল রাতে বৃষ্টির জন্য পুরো গাড়ী কাদায় মেখে গেছে।
তিতির মাগরিবের সালাত আদায় করে মাহাদের জন্য নাস্তা বানাতে শুরু করতেই মাহাদ চলে আসল।
"তিতির এখানে আসো তো?"
তিতির সব কাজ ফেলে হাতটা ধুয়ে মাহাদের কাছে এসে দেখল, মাহাদ ল্যাগেজ গোছাচ্ছে। তিতির অবাক হয়ে বলল," আপনি কোথায় যাচ্ছেন?"
"চিটাগাং যাব। এই জন্যই তোমায় ডাকলাম।"
চিটাগাং যাবেন বলে তিতিরের মনের আকাশে একরাশ কালো মেঘ জমে গেল। তাই বলে এইটুকু আমায় সময় দিবে! আর কিছুদিন সময় দিলে কি হত? কাজই আমার থেকে বড় হয়ে গেল? তিতিরের চোখ ছলছল করে উঠলো।
মাহাদ সম্পূন্ন পাকিং করে তিতিরে দিকে চেয়ে দেখল এই এখুনি বুঝি সে কেঁদে ফেলবে। এই কি হয়েছে তোমার বলে আর একটা ল্যাগেজ গোছাতে শুরু করলো মাহাদ।
কিছু না বলে তিতির চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মাহাদ বলল," নাস্তা বানানো বাদ দিয়ে রেডি হয়ে নাও। ন'টায় আমাদের ফ্লাইট আছে।"
"কই যাচ্ছি আমরা?"
"চল গেলেই বুঝতে পারবে। ঝটপট রেডী হয়ে নাও।"
" আসমা, গোলাব ওরাও যাবে?"
মাহাদ সব কাজ বন্ধ করে তিতিরের দিকে চেয়ে বলল," আমরা কাজে যাচ্ছি ওকে? তাই ওরা কেউ আমাদের সাথে যাচ্ছেনা। আল্লাহ্ যদি চায় তাহলে ইনশাল্লাহ্ পরের বার ওদের নিয়ে যাব।"
অহ্ বলে তিতির ঝটপট আসমাকে ডেকে নিয়ে এসে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে রেডী হয়ে নিল। মাহাদ আগেই দুটো ল্যাগেজ গাড়ীতে রেখে আসল তারপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে গোলাবকে অনেক আদর করে তিতিরকে নিয়ে এয়ারপোর্টে রওনা দিল। এয়ারপোর্টে এসে মাহাদ গাড়ী পার্কিং করে তিতিরকে নিয়ে বিমানে চিটাগাং এর পথে আকাশপথে পাড়ি জমাল।
♦♦♦♦
মাহাদ আর তিতির ৪৫ মিনিটের মধ্য চিটাগাং এ এসে পৌছিয়েছে। খুব ক্লান্ত থাকার কারনে তিতির ফ্রেস হয়ে নামায পড়ে কিছু না খেয়ে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মাহাদ আর কিছু না বলে ওর ল্যাপটপটা বের করে কাজে বসে পড়ল। মাহাদ ওর সমস্ত ফোন নাম্বার অফ করে রাখছে। শুধু বাবার সাথে এখানে আসার আগে কল করে জানিয়েছে। মাহাদ চায়না এই কটাদিন তাদের কেউ বিরক্ত করুক।
পরেরদিন ভোর বেলায় তিতিরের ঘুম ভেঙ্গে গেল। মাহাদকে ডেকে তুলে একসাথে সালাত আদায় করে ব্যালকুনিতে এসে দাড়াতেই ওর চোখ জুড়িয়ে গেল। ততক্ষনে ভোরের আলো ফুটে গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চারপাশটা।
সকালের নাস্তা সেরে মাহাদ তিতিরকে নিয়ে রওনা দিল সীতাকুণ্ডতে। সেখানে অনেক জায়গা ঘুরে শেষে জাতীয় মহাতীর্থ, চন্দ্রনাথ ধাম মন্দিরের সিড়ির কাছে এসে দাড়াল।
মাহাদ, এতগুলো সিড়ি বেয়ে আমাদের উপড়ে উঠতে হবে?
" হুম, বলে মাহাদ উপরের দিকে চাইল। সাথে একজন গাইডও আছে।"
ম্যাডাম উপরে চলেন, পুরো শহরটা দেখা যাবে। উপরে খুব সুন্দর একটা মন্দির আছে। দেখলে প্রান জুড়িয়ে যাবে বলে তিতির আর মাহাদকে সুন্দর ডিজাইনের দুটো লাঠি দিল।
আমি কোন মন্দিরে যাবনা। মাহাদ আপনি চলেন এখান থেকে।
আরে থামো, এতদুর এসেছি আর এটা দেখবা না? অনেক সুন্দর জায়গা। এখানে উঠতেও ধৈর্য্যর দরকার। তোমাকে মন্দিরের ভিতরে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। চলতো বলে মাহাদ তিতিরের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।
খানিকটা উপরে উঠতেই তিতির হাঁপিয়ে উঠলো। সিড়ির একপাশে বসে বলল," আমি আর যেতে পারবোনা। আমার অনেক কিছু দেখা হয়ে গেছে আর দেখবোনা।"
এতটুকুতেই হাঁপিয়ে গেলে! চল তোমাকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যাই বলে মাহাদ কাছে আসতেই তিতির না না বলে সিড়ি থেকে উঠেই দু'সিড়ি নিচে নেমে গেল। আমি আর কিছু দেখবনা আমি ফিরে যাব বলেই তিতির জেদ ধরল। মাহাদ বাধ্য হয়ে ওকে নিয়ে নিচে নেমে এল। তারপর সীতাকুণ্ডের "সুপ্তধারা" ঝর্নাতে গিয়ে কিছুক্ষন কাটিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে হোটেলে ফিরে আসল। দু'জনেই খুব ক্লান্ত। ফ্রেস হয়ে মাহাদ বিছানায় গা এলিয়ে দিল। বাহির থেকে খাবার খেয়ে এসেছে তাই খাবারের ঝামেলাটা অন্তত শেষ। আসার সময় হোটেল ম্যানেজার কে খাবার দিতে নিষেধ করেছে মাহাদ।
তিতির জানালার দিকে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। মাহাদও চুপটি করে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে আছে। মাহাদ চায় তিতির ওকে নিজে থেকেই কিছু বলুক তাই সে চুপচাপ।
"মাহাদ, আপনি ঘুমিয়ে গেছেন?"
.........................?
মাহাদের কোন রেসপন্স না পেয়ে তিতির জোড়েই বলল," দেখ, এসেই সে ঘুমিয়ে পড়েছে। কোথায় বউকে একটু আদর যত্ন করবে তা না করে উনি হানিমুনটাই মাটি করে দিচ্ছেন। আরে বাবা হানিমুন কি এমনি এমনি মাটি করতে হয়! এই সুযোগেরও তো একটু ফায়দা নিতে হয়।"
"তিতির কিছু বললে?"
" মাহাদের কথায় তিতির চমকে উঠল। এতো ঘুমাইনি। তিতির গলা ঝেড়ে বলল," নাহ্, আমি তো কিছু বলিনি। আজকের আবহাওয়াটা খুব সুন্দর তাইনা?"
আজকের আবহাওয়া তো ঠিকিই আছে। রোজতো এমনিই আবহাও হয়। তুমি ঘুমিয়ে পড় আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।
মাহাদের কথা শুনে তিতিরের প্রচন্ড রাগ ধরে গেল। আপনি সুন্দর আবহাওয়ার কি বোঝেন? আনরুমান্টিক কোথাকার।
উমহ্ এত কথা বলছো কেন? ঘুমাতে বললাম না?
তিতির চট করে উঠে মাহাদকে টেনে ওর দিকে করে বলল," আপনার ঘুমাতে হয় আপনি ঘুমান, আমাকে নিয়ে টানাটানি করছেন কেন? ঘুমাননা ঘুমান।"
আমিতো ঘুমাতেই চাচ্ছি, তুমি তো আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছোনা।
তিতির চট করে মাহাদের ঠোটে কিস করে বলল," আমি আপনাকে ঘুমাতে দিবনা। দেখি আপনি কি করে ঘুমান!"
কি চাই তোমার বলতো! এরকম রনচন্ডীর মত আমার উপর চড়াও হইছো কেন? এগুলো করে কোন লাভ হবেনা। আমি প্রচন্ড ক্লান্ত আছি। তাছাড়া আমার সেলভ্ কনফিডেন্স বলেও তো কিছু আছে নাকি! এখন আমার সামনে বিশ্ব সুন্দরীরা যদি রাম্পেও হাটেনা! তাহলেও আমার নজর সেদিকে যাবেনা। তাই চুপচাপ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
উমহ্ সেলভ্ কনফিডেন্সের গোডাউন এসেছেন উনি। থাকবোনা আপনার সাথে। আপনি আপনার কনফিডেন্সের গোডাউনরেই নিয়ে থাকেন বলে তিতির উঠে যেতেই মাহাদ ওর হাত চেঁপে ধরে আবার বেডে বসাল। তোমার কি চাই তিতির? আমাকে মুখে ব..ল!
" কই, আমি আবার কি চাইবো! আমারতো কিছুই চাইনা! তিতির মাহাদকে কথাগুলো বলে চুপ করে রইল। খানিকপর আবার বিড়বিড় করে বলল," আমি কি চাই আপনি তা বোঝেন না!"
মাহাদ তিতিরের একদম কাছে গিয়ে বলল," নাহ্ আমিতো কিছুই বুঝিনা। তুমি কি চাও সেটা মুখে বলতে হবে।"
"আমিতো আপনাকে চাই।"
তিতিরের ড্রেস খুলে দিয়ে মাহাদ তিতিরের চুলে মুখ ডুবিয়ে বলল," এভাবে না আরও গভীর কিছু বল। তাছাড়া আমাকে আজ পাবানা।"
" মাহাদ তিতিরের চুলে মুখ ডুবাতেই তিতিরের শিরদাঁড় বেয়ে কাঁপুনি উঠে গেল। সাথে সাথে তিতির চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঘনঘন শ্বাস পড়তে লাগল।"
তিতিরকে গভীর ভাবে কয়েকটা কিস করেই মাহাদ বলল," বল তিতির, আজ তোমার কি চাই আমার কাছ থেকে?"
তিতির মাহাদের বুকে মুখ ঘসিয়ে অস্পষ্ট আর কাঁপা স্বরে বলেই দিল কি চায় সে মাহাদের কাছ থেকে। মাহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তিতির। আর ওর ভালোবাসার আলিঙ্গন করতে লাগল মাহাদকে। এ এক অন্যরকম অনূভুতি। যেটা শুধু ভালবাসা দিতে চায় আর ভালোবাসা পেতে চায়।"
মাহাদ তিতিরের মাথায় একটা কিস করে বলল,"এভাবে লজ্জা না পেয়ে স্বাভাবিক হও আমার সাথে। জানি আমাদের সম্পর্কের মধ্য বিশাল একটা গ্যাভ গেছে তাই তুমি আর আগের মত আমার সাথে স্বাভাবিক হতে পারছোনা। কিন্তু জলদিই তোমার সব সমস্যাগুলো কাটিয়ে ফেলব আমি। "
তিতির মাহাদের কথায় প্রচন্ড খুশি হল। অনেক অনেক অনেক চাই আপনাকে বলতেই মাহাদ তিতিরের মুখে আঙ্গুল পুরে বলল," চুপ, নো কথা। আমি কোন টু শব্দও শুনতে চাইনা। আমাকে একদম বিরক্ত করবানা।"
মাহাদ নিজেও পাগল হলো তিতিরেকেও পাগল করে ছাড়ল। মাহাদের ইন্দ্রিয়র অনূভুতি গুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছে। ইন্দ্রিয়গুলো তার সব কাজ করা বন্ধ করে দিল। স্থান, কাল, পাত্র সব কিছু ভুলে নিজের মধ্য তিতিরকে মাতিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে গেল মাহাদ। ওর এখন কিছু চাইনা এমনকি তিতিরে কন্ঠও শুনতে চায়না। শুধু তিতিরকে চাই তার। শুধুই তিতির........
তিতিরও কোন ছাড় দিচ্ছেনা তার মাহাদকে। নিজেকে মাহাদের ভালোবাসা দিয়ে কানায় কানায় পূর্ন করে নিচ্ছে। মাহাদের কাছ থেকে এতদিনের পাওনা ভালোবাসা আদায় করে নিতে কোন কমতি রাখছেনা সে।
আজ তারা খুশি মনে দ'জন দু'জনকে আলিঙ্গন করেই চলছে। পূর্ন হল তাদের হানিমুন নামক শব্দটা।
মাধ্যরাত,
মাহাদ ক্লান্ত শরীরে তিতিরকে বুকে নিয়ে সুয়ে আছে। তিতির মাহাদের বুকে কিস করে বলল," মাহাদ, আমার বেবি না হলে কি আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন?"
আবার সেই একই প্রশ্ন! মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল," আমি তোমার কাছ থেকে চলে গেলে কি তুমি খুব খুশি হবে?"
আমি আপনাকে ছাড়া আর থাকতে পারবোনা মাহাদ। হিনু আপু বলেছিল, সবার চাপে হয়ত আপনার ইচ্ছা বদলাতে পারে। তখন যদি আপনি আমাকে ছেড়ে যান! আপনি আমার লাইফে না থাকলে আল্লাহ্ সুবহানাতালা যেন আমার দৃষ্টি শক্তিই কেড়ে নেয়। যে চোখ মাহাদকে দেখতে পাবেনা সেই চোখ আমি চাইনা।
বাড়তি কথা একদম বলবানা। এত বছর ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেছি তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য! এমন কথা আর দ্বিতীয় বার তোমার মুখে যেন না শুনি।
তিতির মাহাদের হাত ওর পেটের উপর রেখে বলল," আমি আপনাকে কোনদিনও সেরা জিনিসটা যে উপহার দিতে পারবোনা মাহাদ। আপনি আমাকে এত কিছু দিয়েছেন আর আমি শুধু নিয়েই গেলাম আপনাকে শূন্য করে দিয়ে।
মাহাদ উঠে তিতিরের পেটে অনেকগুলো কিস করে বলল," যার উপর আমার কোনদিন মায়ায় জন্মেনি সে, না যার সাথে আমার জিবন বেঁধে গেছে, যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তার মায়া আমার কাছে বেশি মূল্য! আমার এই পেটের মালিকই সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তাকে ছাড়া আমার জিবনই অন্ধকারে ঢেকে যাবে।"
তিতির আর কিছু না বলে মাহাদের বুকের মধ্য জায়গা করে নিল। মাহাদ তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। একসময় তিতির ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর মাহাদও ঘুমে মগ্ন হয়ে গেল।
♦♦♦♦
রাত তিনটা বাজে, ফোনের অ্যালার্ম বাজতেই তিতির চোখ মেলালো। মাহাদ পাশে ঘুমিয়ে আছে বলে দ্রুত অ্যালার্ম বন্ধ করে বেড থেকে উঠে পড়ল। শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছেনা। তিতির গোসল সেরে এসে মাহাদের দিকে চাইলো। তারপর জায়নামায টা নিয়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে থাইটা লাগিয়ে দিয়ে তাহাজ্জুদের সালাতে দারিয়ে গেল।
সালাতে দাড়াতেই দু'চোখে পানি চলে আসল। খুব যত্ন সহকারে সালাত আদায় করতে মনযোগ দিল তিতির। সালাত শেষ করে দু'হাত তুলে মোনাজাত ধরল তিতির।
হে আমার প্রভূ, আপনি আমাকে এমন সন্তান দান করুন যাতে, তাকে দেখে আমার চক্ষু জুড়িয়ে যায়। আমার হৃদয় শীতল হয়ে যায়। আল্লাহ্ সবাই আমায় বাজা বলে। আমি যে ঐ কথাটা সহ্যই করতে পারিনা আল্লাহ্। খুব কষ্ট হয় আমার প্রভূ।
হে আমার রব! আপনি পিতা-মাতা ছাড়া হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন, আপনি বার্ধক্য বয়সে হযরত ইব্রাহীম(আঃ) কে হযরত ঈসমাইল ও ইসহাক(আঃ) দান করেছেন, আপনি হযরত যাকারিয়া(আঃ) কেও বৃদ্ধ বয়সে ইয়াহইয়া (আঃ) দান করেছেন, আপনি পিতা ছাড়া হয়রত ঈসা(আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন, আপনি আমাকেও আমার গর্ভে মাহাদের সন্তান দান করুন প্রভু, আমাকে নেক্কার সন্তান দান করুন, আমাকে এমন সন্তান দান করুন, সে যেন মুত্তাকীদের নেতা হয় বলে তিতির মোনাজাতেই ফুঁফিয়ে কাদতে লাগল। আজ যেন সে মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ্কে রাজি করিয়েই ছাড়বে। আল্লাহ্ সবাইকে তুমি সন্তান দিয়ে খুশি করলে আমাকে কেন করবেনা! আমারও সন্তান চাই আল্লাহ্। তিতির শব্দ করে কাঁদতে লাগল। আল্লাহ্ আমায় একটা সন্তান দাও। তিতির আর কথা বলতে পারছেনা। নাক-মুখ যেন বন্ধ হয়ে আসছে। শুধু ফিকরে যাচ্ছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
এমন সময় কারো হাতের ছোয়ায় তিতিরের পুরো শরীর ঝিকে উঠলো। বেখেয়ালে হাতটা পড়ে যেতেই মাহাদ তিতিরকে পিছন দিক থেকে শক্ত করে ওর বুক দিয়ে আবদ্ধ করে ওর দুই হাত তিতিরের হাতের নিচে দিয়ে তিতিরকে একটা কিস করে একবারে চারহাত তুলে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত ধরল ।
হে আমার মেহেরবান প্রভু, আমাদের উপর আপনার রহমত বর্ষিত করুন। আপনার থেকে উত্তম উপহার দাতা আর কে আছে!
হে আমার রব! আপনাকে ডেকে কখনও আমি ব্যার্থ হইনি। আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন উত্তম সন্তানের সুসংবাদ দিন। সুসংবাদ দাতা হিসেবে আপনিই সবথেকে উত্তম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।
♥আমিন♥ বলে মাহাদ মোনাজাত শেষ করল।