নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই বিস্মিত হলাম! এতো দেখছি....লিয়া সাতচুন্নি।এরে দেখেই রাগে গা রি রি করতে লাগলো আমার। সাথে সাথে উল্টো পথে হাটা ধরলাম আমি! এখনে আর এক মুহূর্তে না! মোটেও না!তখনি দৌড়ে এসে তিথি আমাকে থামাতে থামতে বলে,,
--" ওই কই যাস তুই!"
আমি এক পলক তাদের দিক তাকিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। তারপর ছোট শ্বাস ফেলে তিথিকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,
--" আমি থাকমু না এইনে! আর এক মুহূর্ত!যামু গা। "
--" কেন তুই কেন থাকবি না এখানে! থাকবি ১০০ বার থাকবি! যার যাওয়ার সে যাবে! তুই কেন ফালতু মানুষের জন্য নিজেদের মজা কিরকিরা করবি! ডাফার!"
--" আমি..."
আমি কিছু বলার আগেই ইউসুফের ঝাঁজালো কণ্ঠ শুনা গেল। সবার দৃষ্টি এখন সেদিকেই!ইউসুফ এক ঝাটকা মেরে লিয়াকে দূরে সরিয়ে দেয়। লিয়া টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়। তখনি লিয়ার বোন রিয়া ওকে আগলে নেয়। তখন ইউসুফ ভাই তেজের সাথে বলল,,
--" ডোন্ট টাচ মি! হাউ ডেয়ার ইউ? আমি লাইফে বহুত মাইয়ার সাথে ডেট করছি! তুমার মতো বেহায়া আর ছেচরা মাইয়া আমার লাইয়া আর একটাও দেখি না!
তখন লিয়া কাঁদ কাঁদ মুখ করে হাতটা উঁচু করে ইউসুফের গালে হাত রাতে যাবে তখন ইউসুফ আবার বলতে লাগে,,
--" বললাম না! ছুঁবে না আমায়! ডোন্ট!কথা কানে যায় না! আর এখানে কেন এসেছো? তোমাকে না বলেছি, আমার সামনে আর না আসতে? তাহলে কেন? কেন আসচ্ছো? হোয়াই?"
তখন লিয়া ন্যাকা কান্না করে বলল,,
--" আমি শুধু তোমার জন্য আসচ্ছি! খালামনিকে কল দিছিলাম! তখন বললো তুমি এনে বেড়াতে আসছো! তাই ছুটে আসলাম তোমার জন্য! তোর সাথে একা টাইম স্পেন্ড করার জন্য! আর তুমি আমাকে বকা দিচ্ছো!"
ইউসুফ ভাইয়া তখন রাগে নিজের চুল টেনে বলল,,
--" দেখ লিয়া! আমাদের মাঝে কিছু নেই! উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড। নাথিং এলস! আমি তোমাকে লাইক করি না লিয়া।তোমার সাথে টাইম স্পেন্ট করব তো দূরের কথা। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। "
লিয়া এবার হেচকি তুলে কেঁদে দিলো। আর কান্নায় উপস্থিত সবাই একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করছে। ওকে এখানে দেকে কেউ মোটেও খুশি হয় নি। সবার ফেইস দেখেই বুঝা যাচ্ছে। লিয়া এবার কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো। আশে পাশের সবাই বার বার তাকাচ্ছে এদিকে। কেমন ওড ফিল হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে বান্দর খেলা হচ্ছে কোনো! লিয়া এবার মাটিতে বসে পড়ে কান্না করতে করতে আর বার বার বলতে লাগে,,
--" অঅআমাকে তাড়াই দিচ্ছো তততুমি! এতো কককষ্ট করে এখানে অঅাসচ্ছি। আর তুমি!
লিয়ার এহেন কাজে ভিড় জমা হতে লাগলো।পরিবেশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মুহূর্তে। ইউসুফ ভাই তখন পরিবেশ স্বাভাবিক করতে লিয়াকে টেনে তুলে বলে,,
--" ওকে! ফাইন থাকো তুমি! যা ইচ্ছে করো! বাট আমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবা। "
লিয়া চোখের জল মুছে খুশিতে গদ গদ হয়ে বলল,,
--" আচ্ছা! তুমি কত ভাল ইসু!"
ইউসুফ ভাই তখন বিরক্তি চোখে তাকালো লিয়ার দিক! তারপর বিড়বিড় করে সামনে হাটা ধরলো।তখন পিছন থেকে লিয়ার বোন রিয়া বলল,,
--"আপি তোমার কি একটু কো লজ্জা নাই! কেমন সেইললেস তুমি! আমাকে কেউ এভাবে অপমান করলে কলাগাছের সাথে ফাঁশি লেগে মরে যেতাম! তোমার জন্য আমার নিজেকেই ছোট লাগছে এখানে!"
লিয়া তখন ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল,,
--" ইউসুফের জন্য আমি সব করতে পাড়ি! সব বলতে সব! নিজে মরতেও পাড়ি কাউকে মারতেও পাড়ি!"
কথা গুলো লিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে!আমি তো ওর দু রকম চেহারায় ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। একটা মেয়ে এতটক বেহায়াপনা কেমনে করতে পারে! আল্লাহ্! এদের মতো মেয়েদের হেদায়াত দিক।
ইউসুফ ভাই কিছু দূর হেটে গিয়ে পিছনে ফিরলেন! আমি এখনো সেখানে দাড়িয়ে! তিনি আমার দিক তাকালেন! আমি সাথে সাথে মুখ ভেংচিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।মাঝে একবার আড় চোখে তাকাতেই তিনি বাঁকা হাসলেন।তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।অামি এখনো অন্য দিকে তাকিয়ে! তখনি তিনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,,
--" পোড়া পোড়া গন্ধ করছে! মনে হচ্ছে কেউ জ্বলছে?"
আমি তার দিক কটমট করে তাকালাম। তিনি হাসচ্ছেন! তার এই হাসিতে হাজার বার মরতে রাজি আমি! নিজেকে সামলে দাঁত কেলিয়ে বললাম,,
--" হে জ্বলছে তো! ওই যে আপনার পিছনের বান্দরনী! "
ইউসুফ ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালেন। আমি তাকালাম। লিয়া তাকিয়ে আমাদের দিক তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। এই বুঝি গিলা ফেলবে টুপ করে আমায় পানি ছাড়া। ইউসুফ ভাইয়া তা দেখে আমার দিক তাকিয়ে হেসে দিলেন। সেই হাসি বহাল রেখে গান ধরলেন। আর সবাইকে ইশরা করলেন সামনে এগুতে।
--"পরাণ যায় জ্বলিয়া রে
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে "
________________________
সবাই হোটেলে এসে যে যার যার রুমে চলে গেল। দুপুর ১২ টা ছুঁই ছুঁই। তাই ঠিক হলো আজ কোথাও ঘুড়তে বের হবে না। যেহেতু লং জার্নি করে এসেছো তাই ঘুমুবে সবাই ঘুম। এখানে সব সোলারে চলে। যার জন্য একটু কষ্ট করতে হচ্ছে! তিথি আর আমি এক রুমে। ও এখন ফ্রেস হচ্ছে। তাই বারান্দায় চলে আসলাম। রুমের বারান্দা থেকে বাহিরের দৃশ্যটি খুব সুন্দর লাগচ্ছে। পাহারের এতো উঁচুতে থাকাতে নিজের সব দিক ছোট ছোট লাগচ্ছে। এ সুন্দর সৌন্দর্য দেখে চোখে জল চিকচিক করতে লাগলো আমার। এখানে এসে সব থেকে বেশী ইন্টারেস্টিং লাগেছে যে বিষয় টা তা হচ্ছে! এখানে যতো হোটেল আছে সব গুলোর নাম মেঘের নামের সাথে রাখা। তাদের ভাষ্যমতে এটা মেঘের রাজ্য তাই, হোটেল গুলো মেঘের নামের সাথে রাখা হয়েছে মিলিয়ে।খুব ইচ্ছে করছিল আশপাশটা ঘুরে দেখতে। বাট চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু আমি। তাই তিথি বের হতেই ফ্রেস হয়ে এসে ধুম করে বেডে শুয়ে পড়লাম।
যখন চোখ খুললাম তখন বাহিরে গোধূলি লগন। জালানে জানালার পর্দাগুলো উঠছে বাহির থেকে আসা মৃদু বাতাসে! চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসতেই পাশে তিথিকে পেলাম না। সাথে সাথে হাত মুখ ধুয়ে ওরনাটা নিয়ে বের হয়ে আসতেই দেখি বাহিরে সবাই চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছে! তাদের থেকে কিছুটা দূরে জায়েদ আর তিথি হেসে হেসে কথা বলছে আর হাটচ্ছে।আমি ভাল করে চোখে বুলাতেই পিছন থেকে কেউ "ভু" করে ভয়ে পেয়ে যাই। নাথে সাথে বুকে থুতু দিতে দিতে পিছনে ফিরে দেখি ইউসুফ ভাই দাঁত কেলিয়ে আছে! আমি তার দিক ভ্রু কুঁচকাতেই তিনি আমার দু পাশের বর্ডারে হাত রাখলেন। যার ফলে কিছুটা পিছনে ঝুঁকে আসলাম আমি।তার নিশ্বাস পড়চ্ছে ঠিক আমার মুখের উপর। যাতে বিমোহিত হচ্ছি আমি। তিনি তখন হেনে হেসে বললেন,,
--" আমাকে খুঁজচ্ছিস তাই না!"
তার এভাবে কাছে আসাতে দম আটকে আসচ্ছে আমার। মনের মাঝে আলাদা শিহরন। শরীর যেন কাপচ্ছে আমার। তাই কম্পনজনিত কন্ঠে বলে উঠি আমি,,
--" কককই নননা তো! অঅঅআর দূরে দাঁড়ান! মারবার প্লেন নাকি! উফ্ দূরে দাঁড়ান প্লীজ।
উনি হাসলেন। আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু তার হাসি ঠোঁটের কোনে থামচ্ছেই না আজ। আমি তার দিকে ভ্রু উঁচু করে জিগ্যেস করলাম,,
--" হঠাৎ এত খুশি কেন? কাহিনী কি? হুম!"
ইউসুফ মুচকি হেসে বলল,,
--" কাছের মানুষ গুলো যখন খুব খাছে থাকে! তখন কি খুশি না হয়ে পাড়া যায়..!"
তার কাছের মানুষটা আবার কে? লিয়া? লিয়া আসার পর থেকেই তো হাসচ্ছেন তিনি! কষ্ট কষ্ট অনুভব হচ্ছে আমার। তলে তলে টম্পু চালছে! বাহ্ কি সুন্দর? আবার আমার সাথে ভাব দেখায়। লাগবে না তোর এই আদিখ্যেতা দেখা।তাই আমি গাল ফুলিয়ে চলে আসতে নিতেই উনি হাত ধরে বলে উঠেন,,
--" ওই দিকে কই যাস? তোর ওখানে কোনো কাজ নেই! আমার সাথে চল।"
আমি তার কথায় কিছু বললাম না। না নিজ যায় গা থেকে নড়লাম চুল পরিমাণ! যাবো না তার সাথে আমি? কখনো না! কি হই আমি তার যে যাবো? বা তার কথা শুনবো না! মোটেও না। একদম না। আমি পণ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু ওই যে বলে না খাটাশ,ঘাড়তেড়া মানুষ! আমাকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যেতে লাগলো। লাষ্ট পর্যন্ত না পেরে কোলে তুলে নিলো। নিচ থেকে সকলেই হাত তালি, শিশ বাজাতে লাগলো!আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম আমি। কিন্তু লিয়া শাঁকচুন্নি অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলো!আমি তো লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে ফেললাম সাথে সাথে। লোকটা আমাকে লজ্জা ফেলার চুল পরিমাণ সুযোগ ছাড়ে না।
কিছু দূর এসে তিনি নামিয়ে দিলেন আমায়। আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি। তখন তিনি আমার মাথায় টোকে দিয়ে বললেন তাকাতে। আমি তখন ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকাতেই। তিনি হেসে দু কাঁধ ধরে পিছনে ঘুড়াতেই আমি শক্ড।
তিনি আমাকে সাজেকের বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দাঁড় করিয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প ।তারপর তার হাতের মাঝে আমার হাত পুরে নিয়ে হাটা ধরলেন সামনে এখানে হেলিপ্যাড আছে । সেখানেই নিয়ে আসলেন আমায়। এখানে দাড়িয়ে আমি বিস্মিত, অবাক। কি সুন্দর মেঘ গুলো পাহরে জমা হচ্ছে। একে একে সব পাহাড় ঢেকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল মেঘের সাগর। তখন ইউসুফ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ডান পাশে তাকাতে বললেন। সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে।চারিদিকে লাল আভা ফুঁটে উঠেছে। ধীরে ধীরে পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে সন্ধ্যা নামিয়ে আনলো মুহূর্তেই। এমন এক দৃশ্য আমি দেখতে পাড়বে কখনো ভাবিনি। এসব দেখে আমি এতটা উত্তেজিত হয়েছি যে ইউসুফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে ফেলছি আমি। তিনিও তার বাহুডোরে আকঁড়ে ধরলেন আদরের সহিত। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর যখন বুঝতে পাড়ি আমি কি করে ফেলেছি! সাথে সাথে ছিটকে সরে আসি। আর দুহাতে ওড়নার কোনা ঘুড়াতে ঘুড়াতে অপরাধীর সুরে বলি,,
--" সরি!"
কিন্তু উনি কিছু বলেন না। তাই আড় চোখে তাকাতেই দেখলাম তিনি হাসচ্ছেন। তার এই হাসিতে আটকে গেলো আমার চোখ। আমার মন। বেহায়ার মতোন চেয়ে রইলাম আমি।
—————
সময়টা সন্ধ্যার পর পর। যাকে বলে কালি অন্ধকার!
ইউসুফ ভাইয়া পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন পাহাড়ের এক কোনে।সাথে আমাকেও বসালেন জোড় করে!আমি তার হাত চেপে তার গা ঘেসে বসে।চোখ দুটো বন্ধ করে আছি। ভয়ে আমার আত্মা যায় যায়। তিনি তখন আমায় নির্ভয় দিয়ে বললেন,,
--" বাবুইপাখি!আমি আছি তোর সাথে ভয় পাচ্ছিস কেন? চোখ খোল দেখ সামনের দৃশ্য গ্যারান্টি দিচ্ছি! ভয়-টয় সব ছু মন্তর হয়ে যাবে । প্লীজ বাবুইপাখি ভয় পেয়ে এই মোমেন্টটা নষ্ট করিস না।।"
আমি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতেই চমকে গেলাম। আমার পায়ের নিচ থেকে শুরু হয়েছে মেঘের ভেলা। রাশি রাশি তুলতুলে হাজারো মেঘ জমা হয়েছে পাহারের আনাচে কানাচে। মনে হচ্ছে মেঘের সমুদ্র।
কালি সন্ধ্যার এ অপার দৃশ্য আমি বিমোহিত। কালোর মাঝে মেঘরাশির শুভ্র রং আলোকিত হয়েছে চারিদিক। মনে হচ্ছি ডুবে যাই এই মেঘমালার ভিড়ে।হারিয়ে যাই অপার সৌন্দর্যের মাঝে।
আমি এসব কিছু এতটাই মুগ্ধ হয়ে দেখছি যে পাশের মানুষটির হাত আরো চেপে ধরে আছি আমি সে দিকে কোনো খেয়াল ছিল না।আর উনি যে আমার দিক তাকিয়ে আমার হাসি উজ্জ্বল মুখটির দিক গোড় লাগা দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছেন সেদিকে আমার কোনো খেয়ালি নেই।যখন তার দিক খেয়াল করি! তিনি তাকিয়ে আমার দিক এক দৃষ্টিতে চেয়ে। তার চোখের উপর আমার দৃষ্টিও এটে । কতটা গভীর এই চোখ দুটো। কি আছে তার দৃষ্টিতে যা আজ ধরতে পারচ্ছিনা আমি। কিন্তু কেন?
এভাবে চলতে থাকে কিছুক্ষণ দৃষ্টি বিনিময়। এই দৃষ্টিতে যেন হারিয়ে যাচ্ছি আমি। তখনি উনি আমার খুব কাছে চলে আসেন।এতটা কাছে যে তার নিশ্বাস আছড়ে পড়চ্ছে আমার মুখে।আমার কি হলো আমি জানি না। বুকের মাঝে ধুকপুক ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে আমার।সরে আসবো তার শক্তিটুকু নেই আমার। মনে হচ্ছিল স্ট্যাচু হয়ে গেছি।যখনি নিজেকে সামলে সরে আসতে নেই তখনি ইউসুফ ভাই আমার কোমরে চেপে তার আরো কাছে নিয়ে গেলেন। অন্য হাতে গাল ঘেসে কানের পিছনে নিয়ে গেলেন আর শক্ত করে তার মুখে কাছে নিয়ে আসলেন। আমাদের দু জোড়া ঠোঁট তখন ছুঁই ছুঁই। আমার ঠোঁটের দিক উনার দৃষ্টি। আমি তার দিক চোখ বড় করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছি তার মতি গতি। যখন বুঝতে পাড়ি সে কি করতে যাচ্ছে! তখন আর বাধা দিতে ইচ্ছে হলো না আমার। আবেশে বন্ধ করে ফেলি আমার নয়ন গুলো। মনে চাইছে ছুঁয়ে দিক তার ঠোঁট আমার ঠোঁট। মিলে যাক তারা। হারিয়ে যাই তার স্পর্শের গভীরতায়। হারিয়ে যেতে চাই তার মাঝে।কিন্তু যখন অপেক্ষার প্রহর কাটচ্ছিল না আর সময় তার গতি ধরে বয়ে চলছিল।তখন বিরক্তি হলাম আমি! তার কিসের এত দেড়ি? কেন করছেন এমন? কেন দিচ্ছে না সাড়া? আমি তো তৈরি তাতে হারাতে! সে বুঝতে ব্যর্থ?
এসব ভাবতে ভাবতেই পিট পিট করে তাকালাম আমি! কিন্তু একি উনি হাসছে! মিট মিট করে হাসচ্ছে? কেন?
তখনি তিনি বলে উঠলেন ভ্রু নাচিয়ে হেসে হেসে,,,
--" বাবুইপাকি কি ভাবচ্ছিলি? কিস করবো তাই না?
বলে হো হো করে হেসে দিলেন তিনি।তার এই হাসিতে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আমার?মন যাইচ্ছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই তাকে।তার সাথে লজ্জা লাগচ্ছে খুব! কি ভাবলেন তিনি এখন আমায়।রাগে, দুঃখে অভিমান জমা হয়ে গেল একারাশ। সেই রাগকেই প্রাধান্য দিয়ে উঠে যেতে নেই আমি! সাথে সাথে হাত চেপে গম্ভীর ভাবে বলে উঠলেন উনি,,
--" আমি এখনো যাওয়া অনুমতি দি নাই সো সিট ডাউন!"
কিন্তু আমিতো আমি এ লোকের সাথে আর না। তাই হাত ছাড়াতে চাইতেই দিলেন ধমক। তার ধমকে পিলে চমকে উঠলো আমার আগত বসত হলই তার সাথে।
___________________
হেটে হেটে হোটেলের দিক যাচ্ছি আমরা। ইউসুফ ভাইয়াও পকেটে হাত গুজে আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন।তার দিক লজ্জায় তাকাতে পাচ্ছি না আমি তাই চোখ বুলাচ্ছি আশেপাশে। রাতের সাজেকে লাল-নীল আলোতে সাজায়িত দোকান পাঠ। রোডের ধারে আছে আদিবাসীদের হাতে তৈরি করা আসবাব পত্র। নানা রকমের খাবারের আইটমে নিয়েও আছে কিছু স্টল। আমার ধেয়ান পুরোপুরি তাদের দিক। জায়েদ ভাইয়া ঠিকি বলেছে সাজেক খুব সুন্দর। দিনে এক, রাতে আরেক এযেন এক সুন্দরের গোলোক ধাঁধা। হাত টান পড়ায় ভাবনা ভাঙ্গে আমার। ইউসুফ ভাইয়া আমাকে টেনে নিয়ে হাটা ধরলেন সামনে। বিজিবি কেম্পের সামনে এসে থেমে গেলেন তিনি। তার দিক জিগাসা দৃস্টিতে তাকাতেই তিনি মিষ্ট করে হাসলেন। আর বললেন,,
--" সামনে দেখ!"
আমিও সামনে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম। এত উঁচু থেকে পাহারের নিচের ঘড় বাড়ি আলো দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল মরিচ বাতি জালিয়েছে কেউ? এত উপর থেকে এমন একটি দৃশ্য দেখা ভাগ্যের বিষয়।
তখনি ইউসুফ ভাইয়া নিচের দিক তাকিয়ে বললেন,,
--"জানিস কুহু! সাজককে রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয়।"
আমি ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলাম,,
--"কেন?"
--"কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সাজেক। তাই সাজেক ভলিকে বলা হয় ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’।
--" ওহো! "
ইউসুফ ভাই আবার হাটা ধরলেন। তার এভাবে বার বার আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়াতে এক প্রকার দৌঁড়াতে হচ্ছে। এত লম্বা মানুষের সাথে কি আমি হেটে পাড়বো?? উনিকি বুঝেন না??তাই বললাম,,
--" উফ! একটু অাস্তে হাটেন এভাবে হাটাতে হাফিয়ে উঠচ্ছি আমি।একটু থামেন?"
--"উম হুম কোনো থামা থামি নাই ব্যাম্বু চিকেন খাবো এখন! সো কথা কম হাট তাড়াতাড়ি! "
আমি রাগে গাল ফুলিয়ে ফেললাম সাথে সাথে। বেটা খবিশ একটা, নির্ঘাত শয়তানের নানা।
______________________
"ব্যাম্বু চিকেন" ডিস টা সেই ছিল। এটি বাশের মাঝে রান্না হয়। পাহাড়ি এলাকার বন্য মুরগী কেঁটে সব উপকরণ দিয়ে বাশেঁর ভিতর ঢুকিয়ে সেটা ঢেকে দেয়া হয়।তারপর জলন্ত আগুনে বাশ রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর এনে সার্ভ করে রুটি বা ভাতের সাথে।টেষ্ট ১০০ তে ১০০। আমরা সবাই চেটে পুটে খেয়েছি। হাসান ভাই আর ফুয়াদ ভাই খাবার শেষে রীতিমত ঢেকুর তুলেছে। যা দেখে ইউসুফ বলে উঠে,,
--" শালা মান সম্মান আর রাখলি না।"
তার কথায় হাসতে লাগে সবাই।খাবার শেষে হোটেলের পিছনে কেম্প ফায়ারের আয়োজন করা হয়। সেখেনে বসে আড্ডার আসর। চারিদিকে সবাই গোল করে বসে আছে। ইউসুফ ভাইয়া এসে বসতেই তার পাশে এসে হুড়মুড় করে বসে গেল লিয়া। মনটা খারাপ লাগলো আমার। তখনি তিনি লিযাকে দিলেন ধমক। লিয়া তখন কাঁদ কাঁদ মুখে উঠে গেল। লিয়ার এমন মুখ দেখে হেসে উঠলাম আমরা। সে রাগে বিড় বিড় করতে করতে তার রুমে চলে গেল।আমি চোখ বুলালাম সবার দিক তিথি জায়েদ ভাইয়ার সাথে বসে হাসাহাসি করছে কিছু বিষয় নিয়ে।রিয়ার সাথে ফুয়াদ ভাইয়ার ভাল ভাব হয়েছে। হাসান ভাইয়পা গিটারের তার ঠিক করছেন। নুশরা, বুশরা আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে। আমি আড় চোখে তাকালাম ইউসুফ ভাইয়ার দিক। তিনি আমার দিক তাকিয়ে আছেন। তখনি হাসান ভাই বললেন....!