ঘড়িতে ঠিক....১২ঃ০০।
রুমে খাবার ভর্তি ট্রলি নিয়ে হাজির হয়ে গেল ইউসুফ। কুহুর চোখে তখনও রাজ্যের ঘুম।তা দেখে হাসলো ইউসুফ। তার জানা কিভাবে তুলতে হবে কুহুকে। সে আলতো করে কুহুর কঁপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। কুহু ঘুমের মাঝেই হালকা কেঁপে উঠলো।তারপর বিপরীত পাশে ফিরে আবারো কাঁধা মুড়ি দিল ভালভাবে।তা দেখে আবার হাসলো ইউসুফ। বউটা যে বাচ্চা।ইউসুফ এবার কানের কাছের কাঁথা শরীয়ে সেখানেও আলতো ঠোঁট ছোঁয়া দিলো সাথে সাথে কুহু ইউসুফকে সরিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,,
---"ইউসুফ! এমন কেন করচ্ছেন? ঘুমুতে দিন না? আমার আরামের ঘুম! প্লীজ!
ইউসুফ এবার কুহুকে জাপটে ধরে গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলে উঠে,,
---উঠনা বাবুইপাখি? সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল, নাস্তা করবে। দেখ তোমার সব পছন্দের জিনিস আমি নিজ হাতে করে এনেছি? কাল রাতেও তুমি তেমন খাওনি! ওঠনা বাবুইপাখি! খেয়ে আবার ঘুম যাও?
নাহ্ কুহুর পাত্তা নেই সে বেঘোর ঘুম।ইউসুফ তা দেখে হাসলো। আর কুহুকে ঘুমের মাঝেই খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো।কুহুও খাচ্ছে আর ঘুমুচ্ছে।কি ঘুম কাতুর বউ পেয়েছে সে। ভেবেই হাসলো।কুহুর খাবার শেষ হতেই খাবার গুছিয়ে রাখচ্ছে সে। নিজে এখনও একটি দানাও মুখে পুড়ে নি।কারণ কুহু তাকে খাইয়ে দেয়নি তাই।যখন খাবার ঘুছিয়ে সে উঠতে নিতেই কুহু তার টি শার্টে আলতো হাত টান দেয়। ইউসুফ তাকাতেই চোখ পিটপিট করে বলে উঠে কুহু,,
---আপনি খাবেন না?
ইউসুফ টিশার্ট থেকে হাতটি তার কাছে নিয়ে চুমু খায়।আবার কেঁপে উঠে কুহু। সে বুঝতেই পারেনা? এই লোকটি তাকে স্পর্শ করলে এমন কেঁপে কেন উঠে সে!আচ্ছা লোকটির শরীরে কারেন্ট অতিবাহিত হয় না তো? কুহুর এসব ভাবান্তর ফোড়ন কাঁঁটে ইউসুফের কথায়,
---"বাবুইপাখি আমিকি তোমার হাত ছাড়া কখনো খেয়েছি? তুমি না খাইয়ে দিলে কিভাবে খাবো? বল?"
---আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি দাড়ান।বলে হাত ধুয়ে খাবার মুখে পুড়ে দিতে লাগলো।ইউসুফ ও তৃপ্তির সাথে খেল..!
খাওয়া শেষে হাত ধুতে ধুতে কুহু বলল,,
---আমার জন্য ওয়েট কেন করেন আপনি সবসময়? খেয়ে নিবেন? বুঝলেন শরীরকে কষ্ট দিতে নেই?যখন আমি মরে যাবো? তখন কি করবেন? শুনি...
কথাটি শেষ করতে না দিয়ে কুহুকে জোরে জড়িয়ে ধরলো।আর বিচলিত গলায় বলে উঠলো,
---"কিছু হবে না তোমার বাবুইপাখি! এসব কেন বলো তুমি? এসব বলো না? মনে হয় যেন কেউ বুকে ছুড়ি চালিয়ে আমার হৃদপিণ্ড কুচি কুচি করে কেঁটে দিচ্ছে!"
কুহু হেসে ইউসুফের চুলে হাত চালিয়ে বলল,,
---আচ্ছা শান্ত হোন! আর বলবো না কখনো না? পিংকি প্রমিস।
বলে দুজনেই হাসতে লাগলো।
ইউসুফের এমন বিহেভিয়ারের সাথে এ কমাসে খুব পরিচিত কুহু। যতবার মরার কথা বলে তার রিয়েক্ট এমনি হয়।কি আশ্চর্য আজ থেকে তিনমাস আগে এই লোকটিকে সে বর হিসেবে মানতেই নারাজ ছিল।মনেই করতেই পারচ্ছিল না যে তার বর? তাদের বিয়েও হয়েছে। আর আজ? লোকটিকে ভালবাসে। হে ভালবাসে। প্রতিটি মেয়েই এমন লাভিং, কেয়ারিং হাসবেন্ড বরটাই চায়। আর কুহুতো না চাইতেই পেয়ে গেছে। এতে হাজার বার নামাজে বসে শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহ কে।
সেদিন যখন চোখ খুলে নিজেকে অপরিচিত জায়গায় পায়, অপরিচিত মানুষের ভিড়ে তখন শুধু ভয়ে থাকতো কুহু। কিন্তু ইউসুফ একটি বারের জন্য তাকে একা ছাড়ে নি। ওর ছোট ছোট আবদার যেমন কুহুর কোলে মাথা দিয়ে ঘুমানো, কুহুকে ঘুড়তে নিয়ে যাওয়া, কুহু কি খাবে? তা নিজ হাতে তৈরি করা, কুহু ব্যথা পেলে পাগল পাগল হওয়া। মূলত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইউসুফের সব কিছু যেন কুহুকে ঘিরে।এইতো সেদিন, কুহু যখন মানতে শুরু করে ইউসুফকে তার বর আর আয়োজন করে বসে ইউসুপের মন মতো খাবারে তাউ আবার নিজ হাতে। সেদিন ইউসুফ ঘরে এসে এসব দেখে কুহুকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়, আর কুহুর মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বলতে লাগে,
--বাবুইপাখি আমি আজ খুব খুশি। খুব খুব খুব। বুঝাতে পারবো না ঠিক কতটা খুশি। তুমি আজ আমাকে মেনে নিয়েছো। আমার যে খুশি লাগচ্ছে।(কুহুকে কোলে তুলে ঘুড়াতে ঘুড়াতে) আজ আমার মনে হচ্ছে আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ।(নিচে নামিয়ে কুহুর কঁপালের সাথে কঁপাল ঠেঁকিয়ে) আজ আমি খুব খুশি বাবুইপাখি খুব।
সেদিন বুঝে গেছিল কুহু। এ ব্যক্তিটি তাকে খুব ভালবাসে। তাইতো হেড়ে গেছে সে।মানতে রাজি হয়েছে এ যে তার বর, সুইট বর, কিউক বর, সব থেকে সুন্দর বর তার।এসব ভেবে নিজেই মুচকি হাসলো কুহু। বিড়বিড় করে বললো,
---আমার বর! আমার বর! কিউটনেস ওয়ালা বর।
এসব বলতেই আবার নিজে নিজেই হাসলো কুহু।তখনি ইউসুফের কথায় ভাবনায় ভাঙ্গ ধরে তার,
-- কি ভাবচ্ছো? তোমার বরটাতো এখানেই? তাকে ছাড়া আর কি ভাবো তুমি হুম??
কুহু ইউসুফের বুকে আলতো ভাবে মাথা ঠেকিয়ে বলল,,
---" শুনুন না! আমি বাবা-মার সাথে কথা বলব ইউসুফ! আমি জানতে চাই তাদের? তারা দোখতে কেমন কিছুই মনে নেই আমার।প্লীজ ইউসুফ।
এসব শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে ইউসুফের।সে বুঝতেই পারে না। থেকে থেকে তার কুহুর কি হয়? কেনই বা তাদের কথা তুলে কুহু।রাগ লাগে যে তার সে কি বুঝে না? ইউসুফ নিজের রাগটাকে দমিয়ে খানিকটা হাসির রেখা ঠোঁটে টেনে প্রসঙ্গ পালটে বলে উঠে,,
---বাবুইপাখি আমিতো বলতে ভুলেই গেছি!
কুহু ভ্রু কুচকে জিগাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠে,,
---তোমার জন্য সারপ্রাইজ এনেছি।তাড়াতাড়ি প্রেশ হয়ে নিচে আসো কেমন।বলে কঁপালে ঠোঁট ছুঁয়ে নিচে চলে যায়।
আর কুহু চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ।যতবার কুহু তার বাবা-মার কথা জিগ্যেস করে ইউসুফ প্রসঙ্গ পালটে এই কথাটি খুব সুন্দর করে এড়িয়ে যায়।প্রতিবার এই কথাটি উঠলেই, এক প্রকার পালিয়ে যায় ইউসুফ। কিন্তু কেন? কি স্বার্থ তার? সেই তো বলেছিল, কুহুর বাবা মা বেঁচে তাহলে কই তার বাবা মা??এসব ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে কুহু আর ওয়াশরুমের দিক পা বাড়ায়।
🍁
----ওয়াও!
---পছন্দ হয়েছে?
---খুব! আমার খরগোশ খুব ভাল লাগে।লাভ ইউ ইউসুফ(জড়িয়ে ধরে)
কুহুর মাথায় চুমু দিয়ে বলল,,
---লাভ ইউ টু।বাবুইপাখি।
কুহু খরগোশের সাথে খেলতে লাগলো। কি সুন্দর সাদা সাদা তুলতুলে দুটো খরগোশ। কুহু তার সারপ্রাইজ পেয়ে যেন সব ভুলে মুখে হাসির রেখা ঝুলে উঠলো।তা দেখে শান্তির শ্বাস ফেললো ইউসুফ। আর বিড়বিড় করে বলল,,
--আপাতত আর প্রশ্ন করবে না কুহু। কিন্তু আবার এই প্রশ্ন যেন না করে তার জন্য প্লেনিং করতেই হবে। যেন তাদের কথা আর জিগ্যেস করতে না পারে কুহু।
ইউসুফকে বিড়বিড় করতে দেখে কঁপাল কুঁচকে জিগ্যেস করে কুহু,,
---কি ভাবচ্ছেন?
কুহুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গে ইউসুফের চাপা কুহুর পাশে বসে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,
---ভাবচ্ছি আমার বাবুইপাখি পাখিকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যাবো।
কুহু সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে।খুশিতে গদ গদ হয় গলা জড়িয়ে ধরে ইউসুফের। আর বলতে লাগে,,
---সত্যি!!!!
ইউসুফ কুহুর কোমড় দুহাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,,
---তিন সত্যি।কিন্তু একটি শর্ত আচ্ছে?
---কি? শর্ত?..
---আইসক্রিমের পর আমার মিষ্টি লাগবে!
---দিবো তো। নিজ হাতে বানিয়ে দেব। চলেন এখন? আমার জিহ্বা জল হেসে গেছে।
ইউসুফ দুষ্ট হেসে বলল,,
---- নো নো নো বাবুইপাখি! এই মিষ্ট সেই বানানো মিষ্টি না।
কুহু বুঝতে পেরে লজ্জায় ঠোঁট কামরে মাথা নত করে ফেলল, তা দেখে মুখ টিপে হাসলো ইউসুফ। তার বাবুইপাখি লজ্জা পেয়েছে। মারাত্মক লজ্জা।তাই এমন করচ্ছে। ইউসুফ কুহু মুখটি তুলে বলল,,
---রাজি তো? (চোখ টিপে)
কুহু লজ্জা নিয়ে বলল,
---যাহ্।
🍁
নামাজে বসে জবেদা কান্না করে চলছে। আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে চলচ্ছে কুহুকে ফিরে দেয়ার জন্য।মেয়েটি তার কই গেল? এক রাতেই হাওয়া।ভেবেই বুক ভাসান তিনি।
তখনি ঘরে ঢুকে তারেক সাহেব।বউয়ের চাঁপা আর্তনাদে বুকটা চিড়ে যাচ্ছে তার।তারো তো কষ্ট হয় মেয়ে হারানোর কষ্ট। কিন্তু সে তো কাউকে দেখাতে পারে না। বুক ভাসিয়ে কাঁদতেও পারে না।বাবা হয়ে মেয়েকে খুঁজার তো কম চেষ্ট করেনি আজ তিন মাসের উপর হতে চলল।কই হারিয়ে গেল তার মেয়ে।
জবেদার আর্তনাদ এখনে চিৎকার করে কান্নার রূপ নিয়েছে। তারেক না পেরে জবেদাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে,,
---জবেদা কেঁদ না। কুহুকে পেয়ে যাবো খুব তাড়াতাড়ি। কান্না থামাও তুমি অসুস্থ হয়ে গেল কুহু তো আরো কষ্ট পাবে বল!
জবেদা চোখ মুছে ভাঙ্গা গলায় বলল,,
---কিছু খবর পেলে?
তারেক সাহবের মুখে গুমরো করে বললেন,,
---এখনো পাইনি খোঁজ চলচ্ছে।
জবেদা চিন্তিত সুরে বলল,,
---আচ্ছা? ইউসুফ? ইউসুফ তো নিয়ো যাইনি ওকে? ইউসুফকে যে দেখতে পাচ্ছি না!
তারেক সাহেব ছোট শ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
---না জবেদা সে করে নি। ইনফ্যাক্ট ওতো জানেই না কুহু তিন মাস ধরে গায়েব। ও তো সেই যে ফয়সাল ভাই বিদেশে পাঠালো আর ফিরেনি।
এসব শুনে আবার আঁচল মুখ দিয়ে ডুকরে উঠে জবেদা আর জড়ানো কন্ঠে বলতে লাগে,,
---তাহলে গেল কই আমার মেয়েটা? বল? কমতো খুঁজিনি আমরা!এমন তো কোনো জায়গা নেই যে খুঁজি নি।হাসপাতালের লাশ ঘরটাও বাদ রাখিনি আমরা। ওই দিনটা যে কত কষ্ট কর ছিল! প্রতিটা লাশের মুখ থেকে কাপড় শরীয়ে দেখতে বুকটা চিড়ে যাচ্ছিল আমার।এখনো কোথাও লাশ পাওয়া গেলও ছুঁটে যাই আমরা সে কি বেঁচে আছে না মরে গেছে? কুহুই জানা নেই আমাদের।
জবেদার কথায় মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠচ্ছিল কান্না করতে করতে।তারেক সাহেব অসহায়ের মতো শুনচ্ছেন।আর ভাবচ্ছেন কতটা অভাগা সে সব বাবা-মা! যারা তার সন্তানকে খুঁজতে মর্গ পর্যন্ত চলে যায়। মেয়েটা জীবিত আছে না মরে গেছে জানার ভাগ্যও হয় না তাদের।এটা যে কি পরিমাণ কষ্টের তা যেন কোনো বাবা মার সহ্য করতে না হয়। এসব ভাবতেই দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো তার।আর জবেদাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগে,
---কেঁদ না জবেদা। দেখ আমাদের কুহু খুব শীগ্রই আমাদের কাছে চলে আসবে। কেঁদো জবেদা প্লীজ কান্না থামাও।
কান্না থামেনা জবেদার। তারেক সাহেব তাউ চেষ্ট কর চলেছেন।কিন্তু মা কি তার সন্তানকে ছাড়া শান্ত হতে পারবে।তা তো কখনোই সম্ভব না।কখনোই না।
—————
সাঁঝের বেলায় বেলকনিতে দাড়িয়ে দূর আকাশ দেখতে ব্যস্ত কুহু।তখনি পিছন থেকে তাদের বাসার কাজের মেয়ে রুমি এসে কফি নিয়ে হাজির।কুহু তখন দৃষ্টি দূরের সেই লাল হলুদ আকাশ দেখতে ব্যস্ত।তখনি রুমি বলে,
--মেম আপনার কফি!
রুমির ডাকে ভাবনার ফোঁড়ন কাঁটে। চাপা হেসে বলে উঠে,
--ধন্যবাদ রুমি।এটা এখন খুব প্রয়োজন ছিল আমার। মাথাটা অনেক ধরেছে।
রুমি হেসে চলে গেল।কুহু কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর দূর আকাশ দেখচ্ছে সাথে।আর কিছু চিন্তায় বিভোর। তার প্রথম চিন্তা--সে কে? তার দ্বিতীয় চিন্তা--তার বাবা-মা, পরিজন কি আদ আছে? তার তৃতীয় প্রশ্ন--ইউসুফের সম্পর্কেও সে তেমন কিছু জানে না!না ইউসুফ তাকে কিছু বলে! কে সে? চতুর্থ প্রশ্ন--তাদের বিয়ে হলে, ইউসুফ কেন তার সাথে গভীর সম্পর্কে জড়ায় না??তার উপর মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তাকে। ইউসুফ তো তাকে অনেক কেয়ার করে তাহলে কোথায় খটকা আছে এমন কেন লাগে তার কাছে? একটি কয়েনের যেমন, দুটা পিঠ আছে! ঠিক তেমনি আছে, মানুষের দিকেও। কিন্তু ইউসুফ? ওকে দেখলে মনে হয় স্বচ্ছ কাচেঁর মতো।যার এ পিঠ থেতে ও পিঠ দেখা যায়। তার পরেও একটি কিন্তু থাকে! তাহলে সেই কিন্তুটি কি??
আর ভাবতে পারছে না কুহু। কেন জানি সে বেশী ভাবতে পারে না।ভাবলেই মাথায় চিন চিন ব্যথা অনুভব করে তার।কুহু ছোট একটা শ্বাস ফেললো।তখনি নিজের পেটের উপর কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেল।আর ঘারে কারো নিশ্বাস।কুহুর তাতে ভাবান্তর হলো না। পিছনের ব্যক্তি তার চেনা।বড় চেনা।
--কি হয়েছে বাবুইপাখি! মন খারাপ? না শরীর?
কুহু ইউসুফের উপর নিজের গাটা এলিয়ে দিয়ে বলল,,
--কিছু ভাল লাগচ্ছে না আমার।
ইউসুফ কুহুকে তার দিক ঘুড়িয়ে দাড় করালো।কুহুর চোখে পানি টলটল করচ্ছে।তা দেখে বুকে ধক করে উঠলো ইউসুফের বুক।সে যে তার বাবুইপাখির চোখের পানি সহ্য করতে পারে না একদমি না। দুহাত কুহুর গালে আলতো হাতে ধরে নরম সুরে বলল,,
--কি হয়েছে বাবুইপাখি? আমায় বলো?
কুহু তার টলমল চোখে ইউসুফের দিকে তাকিয়ে বলল,,
---ইউসুফ কে আমি? আমার কি পরিচয়? বলেন না। আমি জানতে চাই। আমার.....আমার এমন জীবন যে আর ভালগাচ্ছে না। যেখানে আমার আমিকেই আমি চিনি না!আমি জানতে চাই ইউসুফ সব কিছু জানতে চাই। আমার ছোট বেলা কেমন ছিল? আমার দেশ, শহর সব কিছু... সব জানতে চাই আমি....(কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পড়লো কুহু)
--বাবুইপাখি কেন হাইপার হচ্ছে ডাক্তার বলেছে তুমি খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। প্লীজ বাবুইপাখি কান্না করে না।(কুহুর সামনে বসে গালে দিয়ে কুহুর)
---আমি আর পারচ্ছি না ইউসুফ। আর পারচ্ছিনা এই অনির্দিষ্ট জীবনে থাকতে। যেখানে আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আমার। আমি সব জানতে চাই সব।
--হে বাবুইপাখি তুমি সব জানবেতো। এখন চলো ঘরে চলো। বাহিরে অনেক ঠান্ডা পড়েছে চলে ঘরে চল।
কুহু উঠলো না। তাই ইউসুফ কুহকে কোলে তুলে নিল।
___________
--আমার কেন মনে হচ্ছে! কুহু তোমার কাছে?
--বাপি কে বলেছে তোমাকে এসব? আজাইরা কথা( বিরক্তির সুরে)
--তাহলে কুহুকে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তুমি এত শান্ত কিভাবে?আমি রীতিমত অবাক হচ্ছি তোমার কান্ডে।
--অবাক হওয়ার কিছু নেই বাপি! আমি বুঝে গেছি কুহু আমার হবে না। তাই আমার পাগলামো বন্ধ করে দিয়েছি।
--ইউসুফ তুমি সত্যি বলচ্ছো তো?(সন্দিহান হয়ে)
--উফ বাপি! আমি মিথ্যে কেন বলবো? হোয়াই?
ছোট শ্বাস ছেড়ে বললেন ফয়সাল,,
--তাই যেন হয় ইউসুফ। আমি।এই বয়সে এসে নতুন পেড়া যাই না আর।
--হুম।
বলে ফোন কেঁটে দিল ইউসুফ। আর ছোট নিশ্বাস ফললো যেন জানে বেঁচেছে সে।আর এদিকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পাড়চ্ছে না ফয়সাল। কুহুকে ছাড়া সে এত শান্ত কিভাবে সম্ভব? তাইতো ইউ এস এ যেখানে ইউসুফের বর্তমান ঠিকানা সেখানে খোঁজ করেছে কিন্তু পায়নি কুহুকে। তাহলে কুহু কই? সত্যি কি ইউসুফ জানে না কুহু কই?
________
ঘুমের মাঝে হাতরে খুঁজতে চেষ্টা করছে ইউসুফকে।
কিন্তু নেই কোথাও নেই। উঠে বসলো কুহু। ঘুমন্ত চোখে এদিক সেদিক তাকালো না নাই রুমে সে। গেল কই? ঘড়ির দিকে তাকালো একবার কাঁটায় কাঁটায় রাত.....৩ঃ০০।এতরাতে গেল কই সে? মাথা চুল গুলো হাত খোঁপা করে বেড থেকে নিচে নেমে এলো কুহু। পাশে থাকা চাদরটা গায় জড়িয়ে নিচে নেমে এলো সে। হলে এসে দেখলো ইউসুফ লেপটপে কি যেন করছে গভীর মনোযোগ নিয়ে। তা দেখে ভ্রু কুঁচকালো কুহু।তারপর এগিয়ে গিয়ে জিগাসা করলো,
--এত রাতে এখানে কি করছন ইউসুফ? আমি আপনাকে সারা ঘরে খুঁজে বেড়াচ্ছি?
ইউসুফ কুহুর দিক না তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,
--কাজ করছি। তুমি যাও শুয়ে পর। আমার দেড়ি হবে।
কুহু বলল,,
---এখন কাজ করতে হবে না রাত হয়েছে অনেক ভিতরে চলুন ঘুমাবেন।
ইউসুফ উত্তর দিল না কুহুেকে। তা দেখে কুহু এবার বিরক্তি নিয়ে ইউসুফের লেপটপ নিয়ে বন্ধ করতে করতে বলল,,
--নো কাজ, ফাজ চলেন ঘুমুবেন।উঠুনতো।
তখনি ইউসুফ কুহুর হাত ধরে জোরে কুহু" আহ্" করে উঠে আর ইউসুফের দিক তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়। চোখ মুখ লাল করে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাত চেঁপে বলল,,
---বললাম না কাজ আছে। শুতে যাও তুমি? কথা কানে যায় না তোমার? গো....। (গো কথাটা ধমকের সুরে বলতেই কেঁপে উঠে কুহু।)
দৌড়ে রুমে চলে আসে কুহু।বিছানায় হাটু দুটো ভাজ করে মুখ গুজে ফুপিয়ে উঠে সে।ইউসুফে এমন ভয়ানক রূপ দেখে হতবাক সে। বার বার চোখে ভাসচ্ছে তার সেই চেহারা। এমন কিছু ইউসুফের কাছে আসা করেনি সে।
_____________
ছাদের কোনা ঘেষে বসে আছে কুহু। মনে সেই হাজারো চিন্তা। তার মাঝে নতুন চিন্তা ভর করছে ইউসুফের ব্যবহার নিয়ে। দিন দিন মানুষটি কেমন পাল্টে যাচ্ছে। একদিকে যেমন কেয়ার করছে অন্য দিকে হুট হাট রেগে যাচ্ছে।আজ কালতো মাঝ রাতেও চোখ খুলে পাশে পায় না তার। কি হয়েছে ইউসুফের? সে কি কুহুকে ইগনোর করছে? কুহুর প্রতি কি তার অনিহা কাজ করছে? নাকি কুহুর বদলে তার লাইফে আরো কেউ চলে এসেছে? যে কুহুর থেকেও তার কাছে প্রিয় হয় উঠেছে?? মনের মাঝে প্রশ্ন গুলো থাকলেও মুখ ফুঁটে বলেতে পারছে না সে। যেন কেউ সিলি করে দিয়েছে মুখ। এসব ভেবে ছোট শ্বাস নিলো ভিতরে সে।তখনি পাশ থেকে শুনতে পেল ইউসুফের কন্ঠ,
---এত রাতে এখানে কি করছো? রুমে চলো! রুমি বরল তুমি সারাদিন খাওনি? কেন? চলে এক সাথে খাবো।
কুহু ইউসুফের অগোচরে চোখের কোনে জমে থাকা পানি টুকু মুছে বলে উঠলো,
--হুম আপনি যান আমি আসচ্ছি।
ইউসুফ কুহুর কাছে এসে দু বাহুতে হা রেখে বলল,,
--বাবুইপাখি! তুমি কাঁদচ্ছো? কিন্তু কেন? কেউ তোমাকে কিছু বলেছে? বল?
কুহু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইউসুফের কথা গুলো শুনচ্ছে। কি মাসুম তার চেহারায়। কতটা চিন্তিত এই মুহুর্তে কুহুর জন্য বুঝতে পারছে কুহু। কিন্তু খনে খনে পাল্টে যাওয়া ইউসুফকে দেখে ভয় লাগতে শুরু করেছে তার।এসব ভাবতেই দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল কুহুর চোখ থেকে। কুহুর যেন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,"আপনি বদলে গেছবন ইউসুফ। খুব অপরিচিত লাগে আপনাকে! খুব?কিন্তু কুহু মুখে কিছু বলতে পারলো না।তার ভাবনার মাঝে আবার কথা পাড়লো ইউসুফ,
---কি হয়েছে বাবুইপাখি? বল না?
কুহু চোখ মুছে কিছুটা দম নিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,,
---কিছু না। কেন জানি কান্না পাচ্ছে খুব।