আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ১০ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


-" তিতির তোমার পাগলামো শেষ হলে সব কিছু গুছিয়ে রাখতে পারো। কথাগুলো মাহাদ বলতেই তিতির এসে মাহাদের পায়ের নিচে ফ্লোরে বসে পড়ল। মাহাদের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকে। ছোট্ট বাচ্চাদের মত চোখদিয়ে অঝোড়ে পানি পড়তে লাগল তিতিরের.......।

""""""""""""""""""""""""""""""

-" দুজনের মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছেনা কিন্তু তিতির অজান্তেই কেঁপে চলছে ঠক ঠক করে। "

""""""""""""""""""""""""""""""

- " এই তিতির ওভাবে কাঁপছো কেন? আমিই তো! এখানে তো আর অন্য কেউ নাই। অস্বস্তি হচ্ছে খুব! ওকে আমি চলে যাচ্ছি রুম থেকে তবুও মৃগীর রোগীর মত কাঁপাকাপি করো না প্লীজ।"

এত কথা বলেও যখন তিতির স্বাভাবিক হচ্ছেনা তখন মাহাদ বাধ্য হয়ে তিতিরের হাতে ওর তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতেই তিতির দু-হাত দুরে সরে গেল ক্যান্টের ঝটকা খাওয়ার মত।

হুম কাজ হয়েছে মাহাদ এবার চট করে শুয়ে পড়ে বলল-" তিতির তোমার বই আনতে গিয়ে আমার ১২ টা বাজছে এই বৃষ্টির মধ্য। শরীরটা একটু মাসেজ করে দিবা?"

""""""""""""""""""""""""""""""

-" তিতির অবাক হল না মাহাদের কথায়। ফ্লোর থেকে উঠে তিতির ফুফাতে ফুফাতে বলল -" বিয়ের আগে আমি আপনার শরীরে কখনোই টার্চও করবোনা তাই আশা বাদ দিন। মোটেও আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববেন না।"

""""""""""""""""""""""""""""""

-" সেটা দেখা যাবে কেমন টার্চ না করে কিভাবে থাকতে পারো। পুরো রুম গুছিয়ে তারপর রুম থেকে বের হয়ে যাও বলে মাহাদ চোখ বন্ধ করলো।"

""""""""""""""""""""""""""""""

- " তিতির মাহাদের দুই পা টেনে ধরে খাটের নিচে নামাতেই মাহাদ উঠে বসল। কি সমস্যা! আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করলা?"

""""""""""""""""""""""""""""""

-" আমি রুম গুছাবো আর আপনি আগের মতই বসে বসে দেখবেন বলে চোখের পানি মুছে তিতির কাজে লেগে গেল।"

""""""""""""""""""""""""""""""

-" মাহাদের গায়ে আস্তে আস্তে জ্বর চলে আসছে তাই ঠিকমত চোখ মেলাতে পারছেনা আর। তবুও অনেক কষ্টে প্রিয়তমাকে খুঁশি করতে ও ভাবে বসে আছে।"

♦♦♦♦♦♦♦♦

-" মাহাদ বলে বাতাসি বেওয়া দরজায় নক করলো। সাথে সাথে রুম গোছানো তিতির একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল। এখন কি করবে! দাদী যদি এসে যায় তাহলে সবটা শেষ। তিতির মাহাদের দিকে তাকালো।"


-" ওয়েট বলে মাহাদ বেড থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই তিতির আরো ভয় পেয়ে গেল। মাহাদ কি করতে চাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছেনা তিতির। মাহাদ পিছন ফিরে তিতিরকে ইশারা করে কর্নারে যেতে বলে দরজাটা খুলে দিল।"

বাতাসি বিবি তুমি এখানে!"


-" তোরে দেখতে আসলাম। কিছু খাবিনা? রুমের ভিরত উকি দিয়েই বলল -" এত বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছিস কেন?"


-" তোমার জন্য রাখছি। আসো জলদি সব গুছিয়ে দিয়ে যাও। আর এক বালতি পানি এনে ফ্লোরটা ওয়াস করে দাও।"


- " আমার ঠেকা পড়ছে তোর ফ্লোর পরিষ্কার করে দিতে। সাবিনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে বাতাসি দ্রুতই চলে গেল।"


-" কাজ চোর বাতাসি বিবি এবার যদি আর একবার আমার রুমে এসে মিছেমিছি দরদ দেখাতে আসো তাহলে সত্যি তোমায় আমার কাজের বুয়া বানিয়ে রাখবো। মাহাদ দরজাটা বন্ধ করে তিতিরের দিকে তাকালো। তিতির ঘেমে শেষ। গালের চিপ বেয়ে ঘাম পড়ছে যেটা মাহাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ একটা দৃশ্য মনে হচ্ছে। একটা হোম থিয়েটারের সামনে বসে প্রিয় সিনেমা দেখার চেয়ে কম নয়।"


-" তিতির ঝটপট করে ফ্লোর থেকে নোটবুক ও বই গুলো গোছাতে লাগল। মাহাদ অসাবধানতায় স্যুপের ভাঙ্গা বাটির উপর পা দেয়। ফলে যা হবার তা হয়ে গেল। কাচ পায়ে গেঁথে গেল। স্লিপ কেটে পড়তে পড়তে আর পড়ল না। মাহাদ নিজেকে সামলে নিল। মাহাদ সামনে সোফায় বসে পড়ল।"


-" তিতির বই তোলার জন্য ফ্লোরে তাকাতেই দেখে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। রক্তের দাগ অনুসরন করতেই মাহাদের দিকে চোখ পড়তেই তিতির আৎকে উঠল। এই আপনার কি হইছে বলে দৌড়েই চলে এল মাহাদের কাছে।"


-" এই কাছে আসবানা একদম। আর আমার গায়ে হাত দেওয়ার চিন্তা মোটেও করবানা।আমার কাছ থেকে ১০ হাত দুরে থাকো।"


-"মাহাদের কথা শুনে থমকে দাড়াল তিতির। এদিকে মাহাদের পায়ের তালু কেটে রক্ত বেয়ে পড়ছে ফ্লোরে টপটপ করে।

দেখেন পা কেটে গেছে তো! এমন করছেন কেন?"


-" কই নাতো আমি আবার কি করলাম বলে মাহাদ উঠে খোড়াতে খোড়াতে কেবিনেটটা খুলে তা থেকে মেডিসিনের বক্সটা বের করল। তারপর আবার ওভাবেই হেঁটে সোফায় এসে বসল। কাঁচের টুকরোটা পা থেকে টান দিয়ে বের করতেই রক্ত প্রবাহ বেরে গেল। তিতির এবার কাছে আসতেই মাহাদ জোরে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল-" নিষেধ করছিনা কাছে আসতে! কথা কি কানে যায়না তোমার?

তুমি নিজেই ডিসেশন নিয়েছ বিয়ের আগে শরীরে হাত দেওয়া যাবেনা। তাই ভুলেও শরীরে টার্চ করবেনা।"


-" এবার তিতির বুঝতে পারল মাহাদ কেন এমন ব্যবহার করছে। ঐ কথায় হয়ত কষ্ট পাইছে তাই এখন কাছে যেতে দিচ্ছেনা।

অচেনা অতিথীটা..... আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনো এমন করবো। তিতিরের চোখ ভরে জল চলে আসছে। প্রিয় মানুষের কষ্ট এই প্রথম তিতির দাড়িয়ে থেকে দেখছে। না পারছে কাছে যেতে না পারছে দুরে থাকতে।"


-" আমি কেমন স্বভাবের মানুষ সেটা তোমার জানা দরকার তিতির। প্রথমেই কারো চরিত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করা উচিত নয়। যাও রুম গুলো সম্পূর্ন পরিষ্কার করে বই গুলো নিয়ে রুম থেকে চলে যাও।"


-" তিতির সব বই বুকসেলফ্ এ গুছিয়ে রেখে কেবল ফ্লোরে হাত দিয়ে কাঁচের ভাঙ্গা অংশ তুলতে যাবে এমন সময় মাহাদ তুলতে নিষেধ করলো। তিতির যেতে বলছি কিন্তু.......!

তিতির আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে বইগুলো নিয়ে দরজা খুলে চলে গেল।

রুম থেকে বের হতেই লাবীবার চোখে পড়ল তিতির।"


-" তিতির দারাও। মাহাদ কি তোমার জন্যই বই নিয়ে আসছিল?"


-" আন্টি উনি বই দেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন। ওনার পা হয়ত কেটে গেছে। আপনি একটু গিয়ে দেখেন বলে তিতির জলদি ওর রুমে যায়।

তিতির রুমে এসেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে বই গুলো বুকে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা মুক্তর দানার মত জল ঝড়ে পড়ল। বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা করছে যেটা শুধু তিতিরই অনুভব করছে। রবিনকে কল দিয়ে চিৎকার করে বলতে মন চাচ্ছে,,,, রবিন আমি আমার ♥অচেনা অতিথী♥ কে আমার জিবনে পেয়েছি। এত বছর জিবনে আজকের থেকে আর কোনদিন এত বেশি খুঁশি হয়নি তিতির।"

♦♦♦♦♦♦♦♦♦

-" মাহাদ তুলোতে স্যাভলন নিয়ে ব্লাড গুলো মুছে ব্যান্ডেজ করতেই ওর মা রুমে চলে আসল।"


-" মাহাদ কি হয়েছে তোর পায়ে বলে কাছে আসতেই মাহাদ বলল-" মা সাবধানে আসো। কাঁচের টুকরো পড়ে আছে।"


-" লাবীবা ফ্লোরে কাঁচগুলো দেখেই সাবিনাকে ডাক দিয়ে রুম পরিষ্কার করতে বলল।

রাগ ঝেড়ে কি হলো শুধু নিজের ক্ষতি নিজেই করলি। লাবীবা মাহাদের পায়ে হাত দিতেই মাহাদ খপ করে মায়ের হাত ধরে বলল-" দরদ দেখাতে আসবানা। তুমি অবশ্যই রাগ করার কারনটা জানো মা!"


- " লাবীবা মাহাদকে টেনে তুলে ধরে ধরে বেডে নিয়ে এসে বসাল। যে সন্তান তার পরিবারের কথা না ভেবে পরিবারকে ছেড়ে চলে যায় তার কথা আর মুখে তুলবিনা। আমার খুব ভুল হয়েছে তোকে ঐ বেঈমানটার কথা বলে। আমাদের মান সম্মান কিছু রাখেনি। কারো কাছে মুখ দেখাতে পারিনা।"


-" মা আমি যেন আর কোনদিনও তোমার মুখে ভাইয়ার খবর জানার ইচ্ছা যেন শুনতে না পাই। দেখি ছেলেকে ছাড়া কতদিন থাকতে পারো। ওহ্ তোমাদেরতো ছেলের অভাব নাই। রেজওয়ান আছে না! তোমার হ্যাসব্যান্ড তো রেজওয়ান ছাড়া কিছুই বোঝেনা। আমরা তো তার কেউ নয়। মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছু ছেড়ে যেদিকে মন চায় সেদিকেই চলে যাই।"


-" ওর থেকে রেজওয়ান অনেক ভাল। মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেছে। আর যাই হোক বাসার সম্মান নিয়ে টানা হিঁচড়া করেনি তোদের মত। "


-" আমিও বাসা থেকে চলে যাই তখন আরো খুঁশি হবেন হয়ত আপনার স্বামী।

মাহাদ আস্তে কথা বল। রুপালি আপা সব কথা শুনতে পাবে বলে লাবীবা মাহাদকে চুপ করতে বলল। এর মধ্য সাবিনা এসে কাঁচগুলো উঠিয়ে ফ্লোরটা মুছে দিয়ে চলে গেল।"

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- " পরের দিন তিতিরের ব্যবহার অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেল। মাহাদ কে একপলক দেখার জন্য ছটপট করে। কাল রাতে পর থেকে আর একবারও মাহাদ কে দেখেনি। বই গুলো নাড়ছে আবার বন্ধ করে ফেলছে। সকালে নাস্তার টেবিলে মাহাদকে কখনো পাওয়া যায়না। শুধু সকাল কেন কোন বেলায় খাবার সময় তাকে পাওয়া বেশ মুশকিল।

ওর শরীরের অবস্থা কি ভাল আছে! বেশ টেনশনে আছে তিতির।

তিতির ব্রেড বিন থেকে দুইটা ব্রেড নিয়ে মাখন লাগাতেই মাহাদ এসে ওর পাশে বসে ওর মাকে নাস্তা দিতে বলল।


-" বাসার সবাই সহ তিতির অবাক হয়ে যায় মাহাদের আজকে নাস্তার টেবিলে বসা দেখে। সূর্য কি আজ পূবে উঠেছে না অন্য দিকে!

থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর ট্রী শার্ট পড়ে মজারছে বসে জুস গিলছে। তিতির আড়চোখে সেটা দেখছে। মাহাদের শরীর থেকে মন মাতানো মাতাল করার ঘ্রান বের হচ্ছে। যেটার ঘ্রান যেকোন মেয়েকে ঘায়েল করতে পারে।

তিতির বুকের ভিতর অনেক সাহস নিয়ে পা দিয়ে মাহাদের পা ছোয়াতেই মাহাদ তিতিরের দিকে কঠিন চোখে তাকাল যা দেখে তিতির একদম শেষ। ভিষন ভয় পেয়ে গেল তিতির। মাথা নিচু করে চট জলদি খাবার খেতে লাগল তিতির। মহাশয় এখনো রাগ করে আছেন।"


-" কি সোয়ামী♥ আজ আমাকে ছাড়া খাইতে মন চাচ্ছেনা!"


-" কাল কি বলেছি ভুলে গেছ বাতাসি ডারলিং! যদি ভুলে যাও তাহলে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে আবার বুঝাইয়া দিব। আমার রুমে শুধু একবার এসো তারপর বুঝাবো।"


-" তুই পারিসও মাহাদ। মা সবসময় মাহাদকে সোয়ামী♥ সোয়ামী♥ বল কেন! বাসায় নতুন একটা মানুষ আসছে তার সামনেও ফাজলামি করা ছাড়োনা! কবে যে তোমার এই বাচ্চামো যাইবে সেটা আল্লাহ্ ভাল জানে।"(রুপালী)


-" ঐ তুই চুপ থাক । তুই আমার মেয়ে না মাহাদের মেয়ে যে তার জন্য ওর পক্ষে নিছোস? তোরে দেখছি মানুষ করে বড় রকম পাপ করছি। আমার রশীদা মাইয়াই ভাল। ও আমারে কোনদিনও কটু কথা বলেনি।"


-" যাও রাশীদার বাসায় গিয়ে থাকতেই পারতা! এখানে কেন বলে রুপালী হেঁসে উঠল।

হাঁসি থামিয়ে রুপালি বলল-" তোমার অত্যাচার শুধু কামরানের উপরই। ওরে যা খুঁশি তাই বলতে পারো কোন প্রতিবাদ করবেনা। ছেলে একখান পাইছিলা আম্মা।"


-" দেওয়ান মো. কামরান আহনাফ শুধু চুপ করে ছেলের দিকে চেয়েছিল। ৪ টা বছর পার হয়ে গেছে ছেলে তার সাথে কথা বলেনা। যে ছেলে তার বাবাকে ছাড়া চলতে পারতো না সেই ছেলে কিনা চার টা বছর কথা না বলে পার করে দিল। কামরানের চোখে জল চিকচিক করছে। নিজেকে কন্টোল করে জুসের গ্লাস টা নিল।"


-" মাহাদ নিজেও লক্ষ্য করেছে তার বাবা তার দিকে চেয়ে ছিল। মাহাদ খাবার কমপ্লিট করে আস্তে আস্তে উঠে গেল। "


-" লাবীবা মাহাদের কি হয়েছে বলেই কামরান সবার দিকে তাকাল। কিছুটা লজ্জা পেল কামরান।

মাহাদের কি হয়েছে সেটা মাহাদকে জিঙ্গাসা করলেই পারতিস। শুধু শুধু লাবীবাকে কেন জিঙ্গাসা করিস কামরান?


-" রুপালীর কথা শুনে কামরান চুপ করে গেল। কথাটা নিজের রুমের ভিতর জিঙ্গাসা করা উচিত ছিল সেটা কামরান হারে হারে টের পাচ্ছে।"

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

-" পা কিছুটা ভাল হয়েছে। মাহাদ বাসায় থাকার মত মানুষ না। লেখাপড়া গত বছর সমাপ্তি করেছে। দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু কেন যায়নি সেটা ও নিজেই ভাল জানে।

মাহাদ চট করে রেডী হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেই লাবীবা বলল -" কই যাস মাহাদ?"


-" ভাইয়ার বাসায়।"


-" লাবীবা আর কিছু বলল না। মাহাদের সাথেই শুধু ফুয়াদের সম্পর্ক রয়েছে। ফুয়াদ যে ভাল আছে এটাই অনেক। ছেলেটাকে কত দিন দেখেনা। কিন্তু কামরানকে মানানো আর হিমালয় পর্বত জয় করা একই ব্যাপার।"

♦♦♦♦♦♦♦♦

-" প্রায় দুই ঘন্টা পর মাহাদ একটা বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই নিসা এসে খুলে দিল। মাহাদ বলেই চিৎকার দিল নিসা। দোস্ত তুই আসবি আজকেই সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। আয় আয় বলে মাহাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিসা।"


-" ভাইয়া কই বলে সোফায় বসতেই নিধি চাচ্চু বলে মাহাদের কোলে ঝাঁপ দিল। নিধির এই জিনিসটা মাহাদের খুব ভাল লাগে। মাহাদ নিধিকে সাথে সাথে ধরে ফেলে।

চাচ্চু আমার জন্য কি নিয়ে আসছো?


-" কিচ্ছুনা....... "


-" কেন কিছু না বলে মুখ ভার করে মাথা নিচু করে নিধি বসে আছে সোফায়। চোখে পানি টলমল করছে। এখুনি কিছু বললে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠবে।"


-" আম্মু চকলেট আনিনি বলে কথা বলবা না!"

"""""""""""""""""""""""""""""""?????

-" নিধি প্রচন্ড রাগ করেছে সেটা মাহাদ ভাল করেই বুঝতে পেরেছে। তাই তার ৩ বছরের ভাতিজি টা কথা বলছেনা।

আম্মু আমার সাথে কথা বলবা না!

""""""""""""""""""""""""""""""?????

-" কথা যখন বলবা না তাহলে চলেই যাই বলে মাহাদ উঠতে যাবে এমন সময় নিধি মাহাদের গলা জড়িয়ে আউমাউ করে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।

""""""""""""""""""""""""""""""?????

-" মা আমি কোথাও যাবোনা বলে নিধিকে থামানো চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু নিধিকে থামাতে পারছেনা মাহাদ। মাহাদ নিধিকে ওভাবেই নিয়ে দাড়িয়ে গেল। হাতে অনেকগুলো চকলেট দিয়ে বলল -" আম্মাজান এগুলো শুধু আপনার জন্যই।"


-" নিধি কেঁদেই চলছে। নিসা নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে এসে বলল -" ও কাঁদছে কেন! দেখ তোর ভাইয়া এখন এমনি তেই উঠবে। মেয়ের কান্না তার সহ্য হয়না।

সত্যই ফুয়াদ পিছনে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ তুই কখন এলি।"


-" মাহাদ সালাম দিয়ে বলল-" এইতো একটু আগে। নিধি ততক্ষনে মাহাদের বুকে চুপটি করে আছে। ও ভাল করে জানে এবার কান্না করলে ওর চাচ্চু চলে যাবে।"


- " বাসার সবাই কেমন আছে!


-" সবাই ভাল আছে ভাইয়া বলে নিধিকে কিস করতেই নিধি ওর চাচ্চুকে কয়েকটা কিস করল।"


-" আর বাবা!"


-" ফোন দিয়ে নিজেই জেনে নিও বলে নিধিকে নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে গেল। মাহাদের আজকের সময়টা শুধু নিধির জন্য। "

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

-" আজ নিসা খুব বিজি আছে। প্রানের দোস্ত মাহাদ এসেছে। মাহাদ বলে কথা। অনেক রান্না করছে। নিজেও বিজি আছে কাজের মেয়েটাকেও বিজি রাখছে।

দুপুরে খাবার বসে তো মাহাদের চোখ একদম উপরে উঠে গেল। নিসা তুই দেখছি এক দিনেই আমাকে আটার বস্তা বানাবি।"


-" মাহাদ বললিনা বাবা কেমন আছে?"(ফুয়াদ)


-" হয়ত ভাল আছে। বুকের ব্যাথাটা একটু বেড়েছে। চিন্তা করোনা সেরে যাবে। নিসা আলু ভর্তা খুব ভাল বানাইছিস!"


-" ঐ কি নিসা নিসা করিস ভাবী বলতে পারিস না? ভাবী ডাক শুনার জন্য কত অপেক্ষায় থাকি কিন্তু তুই ভাবী বলা তো দুরে থাক ভাবীর "ভ" ও উচ্চারন করিস না।"


-" তোকে ভাবী ডাকা এই জন্মে আর হচ্ছেনা বলে মাহাদ নিধির মুখে ভাত তুলে দিল। আজ ওর বাবার টাইম নাই ওর কাছে। চাচ্চুকে পেলে আর কিছু দরকার পরেনা নিধির। এই দিনটা চাচ্চুর সাথে একই প্লেটে ভাত খাবে সে।"


-" অফিসে একটু কাজ আছে আমার। তুই থাক সন্ধ্যায় চলে আসবো বলে ফুয়াদ অফিসে চলে গেল। মাহাদ খাবার কমপ্লিট করে নিধিকে নিয়ে বেডে শুয়ে পড়ল। এখন ও একটা লম্বা ঘুম দিবে সাথে নিধিও।"

বিকেলের দিকে নিধিকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গেল। যা যা খেতে মন চায় সব কিছু কিনে রাত ৮ টার দিকে বাসায় ফিরে এল।

দিনটা অনেক মজার কাটল মাহাদের।

বাসায় এসে ফুয়াদের সাথে অনেকক্ষন আড্ডা দিল।


-" মাহাদ বাবাকে একটু দেখিস। চোখে চোখে রাখিস ভাই। তুই আমার একমাত্র ভরসা। "


-" হুম....... নিধি ততক্ষনে মাহাদের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফুয়াদের কোলে নিধিকে দিতেই নিসা বলল-" আজ থেকে যা না মাহাদ। কাল মেয়েটা তোকে না দেখলে দু'দিন ধরে আবার কাঁদবে।"


-" চিন্তা করিসনা নিসা ওকে আমার কাছে রাখার ব্যাবস্থা এবার পাকাপাকি ভাবেই করবো। মাহাদ ওদের ওখান থেকে রাত ১২ টায় বাসায় এসে পৌছালো।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦

-" ডাইনিং রুমে এসে দেখল ওর মা আর সাবিনা বসে আছে। মা ঘুমাওনি! বাবার শরীর খারাপ তা জানা স্বত্তেও আমার জন্য অপেক্ষা করে আছো কেন?"


-" ফুয়াদ কেমন আছেরে! আর ওর মেয়েটা?"


-" তুমি যতটা ওদের জন্য চিন্তা করো ততটাই তোমাদের জন্য চিন্তা করে ওরা। ভাইয়া ভাল আছে। তোমার, বাবার সবার কথায় বলছিল। তোমার ছেলেটা পুলিশের এত বড় উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হয়েও নিজের পরিবারকে কন্টোল করতে পারছেনা। সে কিন্তু বাহিরে সবাই কে কন্টোল করে। জেদ জিনিসটা সব শেষ করে দেয় মা। নাজানি তোমাদের সংসোধন হওয়ার আগে বড় কোন বিপদ না ঘটে যায়।

সাবিনা আমার রুমে একটু আয় তো বলে মাহাদ উপরে চলে গেল।


-" ছেলের কথাগুলো শুনে লাবীবা গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। ফুয়াদকে দেখার জন্য বুক ফেঁটে গেলেও ওর করার কিছু নেই।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦

-" মাহাদ ফ্রেস হয়ে খাটে বসে ফোনের একটা বক্স বের করল। তিতিরের এখন একটা ফোনের দরকার তাই মাহাদ আসার সময় দামী একটা ফোন নিয়ে এসেছে।"


- " ভাইজান আসবো?"


-" হুম আয়। সাবিনা রুমে ঢুকতেই মাহাদ বলল-" তিতির কি জেগে আছে? জেগে থাকলে ওকে ডেকে নিয়ে আয় তো?"


-" ভাইজান একটা কথা বলি! কাউকে বলবেন না তো? আমার মনে হল কথাটা আপনাকে বলা খুব দরকার। আপনি একটু হলেও তিতির আপার ভাল চান। তাছাড়া তো কাউরে বলতে পারবোনা।"


-" এত বাড়তি কথা না বলে কি হয়েছে সেটা বল।"


-" ভাইজান আপাকে মনে হয় মৌ ভাবী খুব মারছে। পুরো চোখ-মুখ ফোলা। আপাকে আম্মা একবার জিঙ্গাসা করছিল কি হয়েছে আপা বলল ওয়াসরুমে নাকি পড়ে গিয়ে মুখে লাগছে। তাছাড়া চাদরের মত করে ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকেছিল। আজ রাতে খাবারও খায়নি। আমি একটু হলেও বুঝতে পারছি আপাকে খুব মারছে মৌ ভাবী। যা খারাপ ব্যবহার করে না ভাবী আপার সাথে বলার বাহিরে।"


-" আচ্ছা তুই যা বলেই মাহাদের চড়চড় করে রক্ত মাথায় উঠে গেল। মাহাদ ওয়াদা করেছিল ওর কাছে তিতির আসার পর যদি কেউ ওর চোখ দিয়ে একফোঁটা পানিও ঝড়ায় তাহলে তার পরিনিতি যে কি করবে সেটা ঐ ব্যাক্তি ভাল করে বুঝবে।

মাহাদের এতটাই রাগ উঠল যে মনে হয় রুমের সব কিছু তছনছ করে ফেলবে।

মৌয়ের সাহস কি করে হয় তিতিরের গায়ে হাত তোলা? ওর হাতেরই ব্যবস্থাই আমি আগে করবো। যার জন্য মৌ এই বাসায় আছে তাকেই ও আঘাত করছে!

মাহাদ ফোনের বক্সটি হাতে নিয়ে তিতিরের রুমে পা বাড়াল.........
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।