আয়াজের বুকে খামচে ধরল আরশি।তার একদম ভালো লাগছে না সেদিনের কথা মনে করতে।মনে পড়লেই বুকটা কেঁপে উঠে তার।মন বলে কেনো তুই ও ওইদিন মরে গেলি না আরশি?
সেদিন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখল আরশিদের বাড়িতে।কারো হইচই কানে আসছিলো না আয়াজের।আয়াজের মন বার বার ইশারা করছিল তোর প্রিয়তা তোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে আয়াজ আটকা তাকে।কোনো কিছু না ভেবেই আয়াজ ঝাপিয়ে পড়ছিল বাড়ির ভেতরে।আনহা ও এসেছিল তার পেছনে।ভাইয়া বলে আঁতকে উঠে সে।কিছু গার্ড আর আনহা মিলে আটকালো আয়াজ কে।কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সে।
আরশিকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল--আআআমি ভেবেছিলাম তুমিও তোমার পরিবারের সাথে,,,কথাটা আর শেষ করল না আয়াজ।তার চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ল।প্রতি মুহূর্তে আমি মরেছি প্রিয়তা।তোমায় ছাড়া নিজের জীবনটা কে পাথর মনে হচ্ছিল।কিন্তু আনহার যে আমার ছাড়া কেউ ছিল না।
শব্দ করে কেঁদে দিল আরশি।আস্তে আস্তে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।আয়াজ ও বসল তার পাশে।
--আমার বাবাটা কেনো আমাকে এতো ভালোবাসত নায়ক সাহেব?কেনো আমায় বাঁচানোর জন্য সেদিন মিথ্যা বলে খালা মণির বাসায় পাঠিয়ে দিল?আমার জীবন সিকিউর করে নিজের জীবন দিয়ে দিলো।(কাঁদতে কাঁদতে বলল আরশি)
আলতো করে আয়াজের বুকে মাথা রাখল।হঠাৎ কিছু একটা সন্দেহ হতেই আয়াজের বুক থেকে মাথা তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল--
"তার মানে আমাদের বাড়িতে আগুন লাগাটা কোনো দুর্ঘটনা না?বাবা কিছু নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।আবার আমার লাইফ সিকিউর করার কথা বলছিলেন সেদিন রাতেই দুর্ঘটনা হওয়া আমায় মিথ্যা বলে পাঠিয়ে দেওয়া সবকিছুই একটাই জিনিস ইশারা করছে।আমার ববববাবা মাাা খুননন খুন হয়েছেন নায়ক সাহেব।(কথাটা বলেই কেঁদে উঠল আরশি।)
আয়াজ শান্ত স্বরে বলল -হুুম।সেদিন আংকেলের চোখে মুখে চিন্তা আর এতো তাড়াহুড়ো বিয়ের জন্য এইসবে আমারও একটু খটকা লাগে।নিজের গোপন লোক লাগাই আংকেলের কেইস রিলেটেড সব ইনফরমেশন বের করার জন্য। কিন্তু কিছু ঘন্টার ব্যাবধানে সব শেষ হয়ে গেলো।আ'ম সরি জান।আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারি নি।আ'ম সরি।
সব অপরাধী দের শাস্তি দিবো আমি।আয়াজ বিন সাদ কখনও অপরাধীদের ছাড় দেয় না।(কথাটা বলার সময় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আয়াজের।চোখে মুখে ফুটে উঠল রক্তিম আভা।)
কী ভাগ্য আরশির আজই ভালোবাসা পেলো আর আজই জানতে পারল খুন হয়েছিল তার বাবা মার।তার কাছে মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজা টা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ সইতে না পেরে সে ঢলে পড়ল আয়াজের কাঁধে। আতকে উঠল আয়াজ।কোলে তুলে নিলো আরশি কে।
-প্রিয়তা!!
এই প্রিয়তা,,,, জান উঠো।কি হয়েছে তোমার?(অনেকক্ষণ ধরে ডাকল আয়াজ কিন্তু আরশির কোনো হুশ নেই। ডাক্তার এসে দেখে গেলো।পুরোনো ক্ষত আবার নতুন ভাবে জখম হয়েছে আরশি সইতে পারে নি সেটা)।
মাঝে কেটে গেলো পাঁচ দিন।
এই পাঁচদিন আরশি কে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করেছে আয়াজ।তার প্রিয়তাকে কাঁদতে দেখলে তারও যে কষ্ট অনুভব হয়।জাফলং, চা বাগান,বিছানা কান্দি সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছে আরশিকে।আজ ঢাকা ব্যাক করছে তারা।এখন আরশির কিছুটা ভালো লাগছে।বেলকনিতে বসে আছে দুজন।আরশির মাথা আয়াজের কাঁধে। আয়াজের হাতে মুঠোবন্দি তার এক হাত।
--নায়ক সাহেব আমরা কিন্তু আবার আসব।
-হুম হানিমুনে!! (আরশিকে লজ্জায় ফেলার জন্য দুষ্টমি স্বরে বলল আয়াজ)
লজ্জা পেলো আরশি। উঠে যেতে নিলে আয়াজ হাতটা টেনে নিজের কোলে বসাল।আলতো করে আরশির পেটে হাত রেখে ঘাড়ে থুতুনি ঠেকালো।
-তো মিসেস সাদ ধর্মীয় ভাবে বিয়েটা করে ফেলা উচিত কি বলেন?
-হুম।(লজ্জা পেয়ে বলল আরশি)
-তো ঢাকা ফিরেই কিন্তু বিয়ে করছি আমরা।(কথাটা শেষ করে হালকা করে আরশির ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়াল।)
------------
রাত দশটায় ফিরল আরশি আয়াজ।ড্রইং রুমে বসেই ভাই আর ভাবীর জন্য অপেক্ষা করছে আনহা।তার মন কতো উসখুস করেছে আরশিকে ভাবি বলে ডাকার জন্য কিন্তু ভাইয়ের নিষেধে পারে নি।আরশি কে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখেই দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরল আনহা।আরশিও জরিয়ে ধরল।
---কেমন আছো ভাবি?উফফ ভাবি তুমি জানো তোমায় ভাবি ডাকার জন্য কতো রাত জেগে জেগে নিজের ঘুম হারাম করেছি আমি?
হেসে দিলো আরশি।আয়াজ আনহার মাথায় একটা হালকা করে থাপ্পড় দিল।
--উফফপ ভাইয়া।ব্যাথা পেয়েছি তো।ভাবি দেখো ভাইয়া আমার উপর কেমন অত্যাচার করছে।
--হয়েছে ছাড় ওকে।ওর শরীর ভালো না।রেষ্ট নিতে হবে।
দরজার দিকে চোখ বুলালো আনহা।
কিছু একটা ভেবে বলল--আচ্ছা ভাইয়া তোমার পিএ আই মিন নিশাদ সাহেব আসে নি?
হেসে উঠল আয়াজ।
-এসেছিলো তো।বাসায় কি জরুরি কাজ আছে বলে চলে গেলো।মন খারাপ করিস না তোর বিয়েটা দিয়েই দিবো নিশাদ সাহেবের সাথে।(চোখ টিপ দিয়ে বলল আয়াজ)
আরশির মনে হলো তার চোখ দুটো কপালে উঠে গেছে।বড় ভাই হয়ে কেমন ছোট বোনকে প্রেমে সাহায্য করছে।এখন তো তার মনে হচ্ছে ভাই -বোন দুটোই বেশরম।
-দেখ ভাইয়া তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে তোর কাছে শেয়ার করেছি।তুই ঢোল পিটাস না প্লিজ। বেচারা নিশাদ তোকে যমের মতো ভয় পায়।সে যদি জানে তুই শুরু থেকেই সব জানিস তবে আমার মনে হয় বেচারা সেই মুহূর্তেই হার্ট অ্যাটাক করবে।
কথাটা বলে ফিক করে হেসে দিলো আনহা।
রাত দুটো বাজে। দু ঘন্টা এপাশ ওপাশ করে ও ঘুম আসছে না আরশির।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে। গুটি গুটি পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো যেনো হাঁটার শব্দে আয়াজের ঘুম না ভেঙে যায়।সোফাতে ঘুমিয়ে আছে আয়াজ।ধর্মীয় ভাবে বিয়ে হওয়ার আগে তারা এক সাথে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।নতুন করে আবার সব সাজাতে চাই আরশি।কিন্তু আয়াজ নাছোড়বান্দা সে কিছুতেই আরশিকে একা থাকতে দিবে না।
এতো বড় সেলিব্রিটি হয়েও এই লোকটা আমার মতো সাধারণ একটা মেয়েকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। বাড়িতে এতো রুম থাকা স্বত্তেও আমাকে চোখের সামনে রাখার জন্য সোফায় কষ্ট করে ঘুমোচ্ছে। এই মুহূর্তে নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আমার।(মনে মনে বলল আরশি)
দুই হাত গুজে দাড়িয়ে রাতের শহর দেখতে ব্যাস্ত আরশি।মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে তার।তবুও ঘুম আসার নাম নেই। আস্তে করে দুটো হাত আরশির কোমর জরিয়ে ধরল।আরশির আর বুঝতে বাকি রইল না মানুষটা কে।
--ঘুমোন নি?
--উহু!!চোখ বুজে ছিলাম।তুমি এখানে কি করছো?
--ঘুম আসছিল না তাই এখানে এসে দাঁড়ালাম। মাথাটাও ভীষণ ব্যাথা করছে।
--কী বলছো?আমায় কেনো ডাকো নি তুমি?
--আপনি ঘুমুচ্ছিলেন।সারাদিন জার্নি করেছি তো তাই খারাপ লাগছে।আপনিনন,,,,
আরশি নিজের কথা শেষ করার আগেই আয়াজ তাকে কোলে তুলে নিল।আয়াজের বুকের কাছের টি-শার্ট টা খামচে ধরে আয়াজের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকি রইল আরশি।রুমে এনে আরশিকে বিছানায় বসিয়ে ড্রয়ার থেকে মলম বের করে আনল আয়াজ। আরশি কে শুয়ে পড়তে ইশারা করল।কি করতে চাইছে মানুষ টা?(মনে মনে বলল আরশি)
কোনো প্রশ্ন না করে আরশি শুয়ে পড়ল।আয়াজ আরশির মাথার কাছে বসল।কপালে আয়াজের স্পর্শ পেতেই আরশি আতঁকে উঠল।
--কি করছেন?
--কোনো শব্দ নয়। চুপ করে চোখ বুঝে শুয়ে থাকো।(চোখ রাঙিয়ে বলল আয়াজ)
আরশিও ভালো মেয়ের মতো চোখ বুঝে শুয়ে রইল।আয়াজ আলতো করে কপালে মলম লাগিয়ে মালিশ করে দিতে লাগল।আরাম অনুভব করল আরশি।তার মন বলে উঠল-
---"এতো ভালোবাসা যেনো কখনও কোনো মেয়ে না পায় আরশি।এই অবিরাম ভালোবাসা টা শুধু তোর হোক সারাজীবন। "
আর জেগে থাকতে পারল না সে।আয়াজের হাতের মালিশে ঘুম তাকে ঘিরে ধরল।
সকালে আগে ঘুম ভাঙল আরশির।মাথা ব্যাথাটা ও আর নেই। প্রিয়তমের এমন কেয়ারে কোনো ব্যাথা কি আর থাকতে পারে?কথাটা বিড় বিড় করে বলে হেসে দিল আরশি।
সোফায় ঘুমিয়ে আছে আয়াজ।সারারাত জেগে ছিল।ভোরের দিকে চোখ লেগেছে তার।আরশি আয়াজের পাশে হাঁটু গেড়ে বসল।মুচকি হেসে আলতো করে আয়াজের কপালে কিস করল।ঠোঁট দুটি প্রসারিত করে ফেলল আয়াজ।কিন্তু তা আরশির চোখে পড়ে নি।আয়াজ জেগে থাকলে সে কখনও লজ্জায় কিস করার সাহস পেতো না।
এক প্রকার দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আরশি।লজ্জায় পড়তে চাই না সে।আয়াজ যদি জানে সে ঘুমের সুযোগ নিয়ে তাকে কিস করেছে তবে লজ্জা দিতে দিতে মৃত্যু ঘটাবে লজ্জাবতী আরশির।
ফ্রেশ হয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিচে নেমে গেলো আরশি।
সে যেতেই ফোন শব্দ করে বেজে উঠল আয়াজের।ঘুমানোর একটু চেষ্টা করছিল সে।তা আর হলো কই।বিরক্তির শব্দ করে পাশের ছোট টেবিল থেকে হাতরিয়ে ফোনটা টেনে নিলো সে।
--হুম নিশাদ বলো।
---স্যার আপনি কি ঘুমোচ্ছিলেন?আমি কি ডিস্টার্ব করলাম?
--না চোর পাহাড়া দিচ্ছিলাম।(বিরক্ত কন্ঠে বলল আয়াজ)
স্যার আজকাল চোর পাহাড়া দেওয়া ও শুরু করেছেন?আর কত কিছু যে করবেন ওনি।বাহ্ বাহ্!!একটা মানুষের কতো রুপ,, কতো গুণ।
---কি হলো কথা বলছো না কেনো?
আয়াজের কথার আওয়াজে তার অদ্ভুত ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরল নিশাদ।
---আসলে স্যার,,,,
---আসলে নকলে না করে কি বলবা বলো?(আবারও বিরক্তি সুরে বলল আয়াজ)।
---স্যার ওনি জিজ্ঞেস করছিলেন ম্যাম এর কথা।সিলেটে কাজে বিজি ছিলেন তখন আর বলা হয়নি।আজ যখন আপনার কথায় দেখতে গেলাম আজো জিজ্ঞেস করলেন।আপনি ম্যাম কে খুঁজে পেয়েছেন কিনা?আমি এখনও কিছু বলি নি স্যার।
উঠে বসল আয়াজ।একটু চিন্তিত স্বরে জবাব দিল--
"বলে দিও ফিরে পেয়েছি প্রিয়তাকে।"
"জ্বি স্যার"
আর ঘুম হবে না।তাই ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো আয়াজ।আনহা আর আরশি দুজন মিলে হাসাহাসি করছে।আরশিকে হাসি খুশি দেখলে নিজেকে সুখী মনে হয়ে আয়াজের।এখনও এমন মনে হচ্ছে। আরশির পাশে গিয়ে বসল আয়াজ।নিজের হাত আরশির কোমড়ের একসাইডে রেখে একদম কাছে টেনে এনে বসালো সে।আনহার সামনে এমন বিব্রত অবস্থায় পড়তে হবে এই বেহায়া মানুষের জন্য কখনো ভাবে নি সে।লজ্জা সারা মুখে ছেয়ে গেলো।মনে মনে বলে উঠল---
"অসভ্য আপনি নায়ক সাহেব"।
-------------------
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ল আরশি।তার হাত থেকে কিছু ফ্লোরে পড়ে গেলো শব্দ করে।সেই সকালে আয়াজ কিছু কাজে বেরিয়ে গিয়েছিল।দুপুরে অনেক বার ফোন দিল কিন্তু আরশি রিসিভ করল না।চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সে।আনহাকে ফোন দেওয়াতে বলল সে মেডিকেলে। চিন্তা নিয়ে আর কাজে মন বসাতে পারল না সে।আরশির কিছু হলে এবার আর নিশ্বাস চলবে না তার।তড়িঘড়ি করে ফিরে এলো বাড়িতে।নিচে আরশিকে না পেয়ে মেইড কে জিজ্ঞেস করাতে সে জানালো আরশি আজ সারাদিন ও নিচে আসে নি।তাই রুমের দিকে পা বাড়ালো।দরজায় দাঁড়াতেই আরশির ভয়ার্ত মুখটা দেখে বুকটা ধুক করে উঠলো।আরশির নজর বরাবর তাকাতেই নিজের মনেও ভয় জেগে উঠল আয়াজের।কীভাবে বুঝাবে সে তার প্রিয়তা কে?
—————
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো আয়াজ আরশির দিকে।আরশি এখনো ফ্লোরে পরা বন্দুক টার দিকে তাকিয়ে আছে।ছোটবেলা থেকেই এসব জিনিস ভয় পায় সে।তার মাথায় শুধু ঘুরছে তার নায়ক সাহেবের কাছে বন্দুক কেনো?
নিজেকে সামলে আয়াজ আরশির পাশে বসল। আরশির হাতটা ধরল আলতো করে।ভয়ার্ত অশ্রুভেজা চোখে আরশি আয়াজের দিকে তাকালো।নিজের হাত দিয়ে ইশারা করে ফ্লোরে পড়ে থাকা বন্দুক টা দেখালো।আয়াজ হালকা একটু হেসে আরশিকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিল।
---রিলাক্স জান!!এইটা দেখে ভয় পাচ্ছো কেনো? বন্দুক তো আমি আমার সেইফটির জন্য রেখেছি।তোমার নায়ক সাহেব কে তো আর সবাই ভালোবাসে না কেউ কেউ তো মারার জন্য ও হয়তো ওতপেতে আছে।তোমার নায়ক সাহেব কি কখনও খারাপ কাজ করতে পারে বলো?
আরশি মাথা দোলিয়ে না করল।
--গুড।তোমার বিশ্বাস টা আমার প্রতি সবসময় রেখো জান।তোমার বিশ্বাস আমার খুব প্রয়োজন।
---আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করি।আমি শুধু হঠাৎ এটা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভুল বুঝি নি আপনাকে।আমার বিশ্বাস আপনি কখনও কোনো অপরাধ করতেই পারেন না।
---ভালোবাসি জান।প্লিজ যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক নিজের বিশ্বাস টা ধরে রেখো আমার প্রতি।
---আমিও ভালোবাসি মিষ্টার নায়ক।একটু না খুব খুব খুব বেশি।(লাজুক হেসে বলল আরশি)
----------------------
ভর দুপুর। চারদিকে রোদে মাখামাখি। রোদের তাপে ঘেমে একাকার আনহা।মেডিকেল কলেজের গেটে দাড়িয়ে এই কাঠ ফাটা রোদে অপেক্ষার প্রহর গুণছে ভালোবাসার মানুষটার জন্য। সেই যে আসবে বলে দাড় করিয়ে রেখেছে এখনো আসার নাম নেই তার।মাঝে মাঝে ভেবে পায় না আনহা নিশাদ নামের মানুষটা এতো চালাক,,প্রখর বুদ্ধিমান তবে তার ভাইকে কেনো এতো ভয় পায়। কই সে তো ভয় পায় না তার ভাইকে।
আনহার অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে নিশাদ গাড়ি থেকে নেমে এক প্রকার দৌড়ে উপস্থিত হলো তার সামনে ।দুটো বছর ধরেই এমন করছে সে।সবসময় শুধু তাড়াহুড়ো ।হাতে আবার ছাতা ও দেখা যাচ্ছে। নিশাদ আনহার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে ছাতাটা মেলে ধরল তার মাথার উপর। ফুঁসে উঠল আনহা।একঘন্টা যাবত এই বেহায়া তেজী রোদের মধ্যে অপেক্ষা করিয়ে এখন আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে। কথাটা বলে নিশাদের দিকে চোখ রাঙালো আনহা।
--বাহ!!আয়াজ স্যারের বোনও দেখছি স্যারের গুণে গুণান্বিত হচ্ছেন।(কথাটা কিছুটা দুষ্টুমির স্বরে বলল নিশাদ)
---কি বললা?(আরও ফুঁসে উঠল আনহা)
--অপরাধ মাফ করবেন ম্যাম।আয়াজ বিন সাদ কে কিছু বলার সাধ্য এখনও আমার হয় নি।তাহার গুণাগুণ রূপ অতুলনীয়। (একটু ঝুঁকে মুচকি হেসে বলল নিশাদ)
জোরে হেসে উঠল আনহা।নিশাদ এর একপাশে দাঁড়িয়ে বাহুতে জরিয়ে ধরে বলল---চলুন নিশাদ সাহেব।
এক মিনিট।নিশাদের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো আনহা।পকেট থেকে রুমাল বের করে আনহার ঘামার্ত মুখ টা মুছে দিলো খুব যত্ন করে।ভালো লাগায় চোখ দুটো বুজে ফেলল আনহা।এই মানুষটা যতই তাড়াহুড়োতে থাকুক না কেনো আনহার যত্ন নিতে একটু ও ভুলে না।প্রেমের প্রস্তাব টা ও প্রথম এই মানুষটাই দিয়েছিল।অবিশ্বাস্য হলেও এইটাই চরম সত্যি।
----------------
কেটে গেলো দুদিন,,,,
মুগ্ধ দৃষ্টিতে কাঠগোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি।চারদিকে শীতল বাতাস বয়ছে।বাতাসে আরশির চুলগুলো উড়ছে এলোমেলোভাবে।আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব।এমন আবহাওয়ায় তার ভীষণ ইচ্ছে করছে বাহিরে গিয়ে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে মেলে ধরতে।একা নয় ভালোবাসার মানুষটার সাথে।দ্রুত পা চালিয়ে আয়াজের রুমের দরজায় এসে দাঁড়াল সে।আয়াজ ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। পিছন ফিরে থাকায় আরশি কে দেখতে পায় নি সে।কিন্তু আরশির উপস্থিতি ভালোই অনুভব করতে পেরেছে সে।ফোনটা কান থেকে নামিয়ে পিছন না ফিরেই আসার জন্য ইশারা করল।
----চলে এসো জান।
খুব বেশি অবাক হলো না আরশি।এই কয়েকদিনে সে বেশ বুঝতে পেরেছে লোকটার অস্তিত্বে মিশে আছে সে।
----দরজায় দাড়িয়ে ছিলে কেনো জান?এই বাড়ি এই রুম এই আমিটা তোমার।তাই কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই।
ভীষণ সুখ অনুভব করল আরশি।সত্যিই তো এই মানুষটা শুধুই তার।আয়াজের কিছুটা কাছে এগিয়ে গেলো সে।ছোট বাচ্চাদের মতো বায়না করার ভঙ্গিতে আয়াজের হাত আলতো করে ধরল।তার এহেন কান্ডে ঠোঁট কামড়ে হাসল আয়াজ।সে বেশ বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে কিছু না কিছু বায়না করবে।
-------তো ম্যাম কি চাই আপনার?
বিনা দ্বিধায় জবাব দিলো আরশি----
------ঘুরতে যেতে চাই নায়ক সাহেব।রিমঝিম এই বৃষ্টিতে আপনাকে সঙ্গী করে ভালোবাসা বিলীন করতে চাই।আর একগুচ্ছ কদম হাতে ভিজতে চাই আপনার সাথে।
আরশির এমন প্রেমময় বায়না শুনে হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হলো আয়াজের।নিজের ঠোঁট দুটো প্রসারিত করল সে।
----যথাআজ্ঞা ম্যাম।রেডি হয়ে নিন।
আরশি মাথা দুলিয়ে চলে যেতে নিলে আবার দৌড়ে ফিরে এলো।
---কী হলো?
---আমার আরও একটা বায়না আছে নায়ক সাহেব।(মাথা নিচু করে বলল আরশি)
----বলো প্রিয়তা,,,
---আপনি প্লিজ গার্ড নিবেন না সাথে।মুহূর্তটা শুধু আপনার আর আমার চাই যেখানে আপনার ঐসব বস্তা বস্তা বডিগার্ড থাকবে না।
আরশির এমন অদ্ভুত কথায় খুব হাসি পেলো আয়াজের। বলে কি এই মেয়ে?বস্তা বস্তা গার্ড?ইশশ!! গার্ডরা শুনলে তাদের কেমন অনুভূত হতো?
--যাবেন তো নায়ক সাহেব?
--অবশ্যই মাই লাভ।
----------
হোয়াইট টি-শার্ট এর উপর কালো জ্যাকেট গায়ে জরিয়ে নিলো আয়াজ।মুখে মাস্ক লাগিয়ে মাথায় ক্যাপ পড়ে নিল।নিজেকে যদি কিছুটা লুকিয়ে না নেয় তবে তার প্রিয়তার ইচ্ছাগুলো আজ অপূর্ণই থেকে যাবে।কেউ যদি তাকে চিনতে পারে তবে জেঁকে বসবে ।একে তো গার্ড যাবে না তার উপর মাফিয়া জগতের কোনো শত্রু যদি জানতে পারে তবে মারতে একটু ও সময় নিবে না।চিন্তা তার আরশি কে নিয়ে।কেউ কেউ বুঝে গেছে তার দুর্বলতা তার প্রিয়তা।প্রিয়তমার ইচ্ছে পুরণের জন্য আজ নাহয় নিজেই বডিগার্ড হয়ে যাবে সে।
----তোর প্রিয়তার জন্য তুই-ই যথেষ্ট আয়াজ"।(কথাটা বলে মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়ল)
বাহিরে এসে গাড়ির কাছে দাড়িয়ে আছে সে আরশির অপেক্ষায়।পাশেই মাথায় ছাতা ধরে আছেন একজন গার্ড।কারণ ইতিমধ্যেই বর্ষণের আগমন ঘটেছে।এক দৃষ্টিতেই প্রিয়তার অপেক্ষায় চেয়ে আছে চোখ দুটো সামনের দিকে।সদর দরজা দিয়ে আরশিকে বের হতে দেখে হৃদপিন্ড যেনো থমকে গেলো তার।চোখ দুটোতে ফুটে উঠলো মুগ্ধতা।