আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ৫০ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


গোলাব এক দৌড়ে এসে হিমেলের অন্ডকোষে কামড় বসিয়ে দিল। একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরকে বলতে হয়না শত্রুর কোন কোন জায়গায়তে তাকে আঘাত করতে হবে।

হিমেল সহ্য করতে না পেরে ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেল। গোলাব ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর গলায় কামড় বসিয়ে দিল গায়ের শক্তি দিয়ে। তারপর ঘাড় থেকে একটুকরো মাংসও তুলে নিল। হিমেলের চিৎকারে পুরো রুম কেপে উঠল। তিতির গিয়ে গোলাবকে হিমেলের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল," লজ্জা থাকলে এখুনি বাসা থেকে বের হয়ে যা। তাছাড়া তোর এমন হাল করে ছাড়ব তখন আর তোর করার মত কিছু থাকবেনা।"

হিমেল রাগে কোকড়াতে কোকড়াতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আর গোলাবতো রাগে গড়গড় করেই চলছে। তিতির জলদি গোলাবের রক্তাক্ত মুখ ভালো করে ধুয়ে দিল।
নাহ্ এখানে আর এক মুহুত্ত্বও না বলে তিতির দ্রুত ল্যাগেজ গোছাতে লাগল। কাকে যেন ফোন করল। তারপর আসমাকে কল দিয়ে দ্রুত বাসায় আসতে বলল।

সব গুছিয়ে তিতির হিনুর মায়ের কাছে যেতেই দেখল, হিমেলকে নিয়ে ওনি সহ সবাই টানাটানি শুরু করে দিছেন। ডাক্তার এসেছেন। হিমেলের চিকিৎসা চলছে। এমন অবস্থায় কিভাবে বলবে সেটাই ভাবছে তিতির। শেষে সব সংকোচ কাটিয়ে হিনুর মাকে কাছে ডেকে বলল," আন্টি আমি আমার এক আত্বীয়ের বাসায় যাব। আসমা আসলেই চলে যাব।"

তিতিরের এমন কথায় রাশেদা বেগম বেশ রেগে গেল। দেখ তিতির, মাহাদ ছাড়া আমি তোমাকে বাসা থেকে যেতে দিতে পারিনা। দেখছো তো হিমেলের কি হইছে। আমাকে আর বিরক্ত করোনা বলে চলে গেল রাশেদা বেগম।

না না এই বাসায় এক মুহুত্বও থাকতে পারবোনা। হিমেল সুস্থ হওয়ার আগেই কিছু একটা করতে হবে। তাছাড়া পরিস্থিতি অন্য দিকে যাবে। হিমেল একবার সুস্থ হলে আমাকে আর গোলাবকে আস্ত রাখবেনা।  আসমা তুমি কোথায় আছ, জলদি চলে আস। আমাদের এখানে আর থাকা চলবেনা। পালিয়ে হলেও এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে সবাই সব কিছু জানার আগে।

তিতির গোলাবকে কোলে নিয়ে আসমার অপেক্ষা করতে লাগলো। একবার শুধু আসমা এলেই হয়। খানিকবাদে আসমা এলে তিতির আর একমুহুত্বও দেরী করলোনা। সাথে সাথে আসমা আর গোলাবকে নিয়ে ফ্লাট  থেকে বের হল। গেটের কাছে এসে দাড়োয়ান ওদের আটকে দিল। অহ আল্লাহ্ সাহার্য্য করো আমাদের।

"এই তিতির আর আসমা, তোমরা কোথায় যাও?"

" চাচা আমরা আমাদের এক আত্বীয়র বাসায় যাচ্ছি। আমরা আন্টির অনুমতি নিয়েছি। আমাদের হাতে সময় নেই চাচা।"

" মাহাদ বার বার নিষেধ করে গেছে তোমাকে যেন এভাবে বাসা থেকে বের হতে না দেই। আগে মাহাদকে কল করে আমার সাথে কথা বলে দাও তারপর তোমাদের ছাড়ব। না হলে এখুনি বাসায় ফিরে যাও।"

" আপনি বুঝতে চেষ্টা করছেন না কেন? আমাদের এখানে থাকা সম্ভব নয় বলেই তিতির কেঁদে উঠল। তারপর আস্তে আস্তে সব খুলে বলল। এখন আপনি বলেন, এখানে আমি কিভাবে থাকবো! আমার নিরাপত্তা কি আপনি দিবেন? সবাই জানার আগে আমাকে দয়া করে যেতে দিন।"

তিতিরের কথা শুনে আসমা আর দাড়োয়ান দু'জনেই চমকে উঠল। তিতির মিথ্যা কথা বলার মেয়ে নয়। আজ যদি এই কুকুরটা না থাকত তাহলে কি হত! আল্লাহ্ মাফ করো। তা মা তুমি কই যাবা? মাহাদকে যে জানাওনি তা বেশ বুঝতে পারছি। কারন ও যদি জানত তাহলে এতক্ষনে  এসে ঝড় বইয়ে দিত।

তিতির ওনার হাতে ফ্লাটের চাবি দিয়ে বলল, "চাচা আগে বাসা থেকে বের হই তারপর সব জানাবো তাকে।"
আমাকে আর বাধা দিবেন না দয়া করে বলে আসমাকে নিয়ে বাসা থেকে চিরদিনের মত বের হল তিতির। আল্লাহ্ রহমতে সাথে সাথে রাস্তায় একটা টাক্সিও পেয়ে গেল। যত দ্রুত সম্ভব তিতির এই এলাকাটা ছেড়ে গেল। কতবছর ধরে এই বাসায় ছিল তারা। কত ভালো সময় কাটিয়েছে এখানে। তাই ছেড়ে যেতে বেশ কষ্টই হল তাদের।

♦♦♦♦

তিতির কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে বলে রাশেদা বেগম রেগে আগুন হয়ে গেল। রাশেদা বেগমের ধারনা গোলাবই হিমেলের এমন অবস্থার জন্য দায়ী। ওনি সাথে সাথে মাহাদকে কল করে সব কিছু জানাল। এদিকে মাহাদ তিতিরকে কল দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছে। তিতিরের নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে। মাহাদ সব কাজ ফেলে রেখে জলদি হিনুদের বাসায় চলে আসল।
মাহাদ হিনুদের বাসায় পৌছাতেই রাশেদা বেগম মাহাদকে নাস্তা দিল।

"না আন্টি এসবের প্রয়োজন নেই। আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই।"

" মাহাদ দেখ, ওকে কতদিন মেয়ের মত করে আগলে রাখলাম আর ও কাউকে না জানিয়েই চলে গেল! আমাকে একটা কথাতো বলে যাবে। এমন ব্যবহার তিতিরের কাছ থেকে আশা করি নাই। আমার মনেহয় গোলাবই হিমেলের সাথে এমন ব্যবহার করেছে। তিতির হয়ত ভয় পেয়েই গোলাবকে নিয়ে চলে গেছে।এদিকে আমার ছেলেটার কি হাল হয়েছে দেখছ! এতদিন পর ছেলেটা আমার বাসায় এল আর এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। আমি কোন দিকে সামলাবো বল?

মাহাদ শুধু  চুপচাপ শুনে গেল। তারপর বলল," আন্টি আমাদের ফ্লাটের চাবি দেনতো!"

হিনুর মা সারা বাসা খুঁজেও চাবি পেলনা। মাহাদ বুঝল কিছুতো একটা হয়েছে। মাহাদ তিতিরের ফ্লাটের কাছে গিয়ে দেখল দরজা সব খোলায় আছে। তার মানে তিতির দরজা বন্ধ করে যায়নি। রুমের ভিতর ঢুকেই ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখতে পেল। কি হয়েছিল বলে মাহাদ এদিক ওদিক সব কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ ওয়্যারড্রপের ফ্লাওয়ার ভাজটার মধ্য একটা ফোন দেখতে পেল। অটো রের্কড চলছিল। মাহাদ সাথে সাথে ওটা নিয়ে সব চেক করতে লাগল। তিতিরের উপর এ্যাটাক, গোলাবের প্রতিরোধ, তিতিরের ল্যাগেজ গোছানো সব কিছু দেখতে পেল। মাহাদ যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। হিমেল এটা রের্কড করার জন্য রেখেছিল। একবার ওর কাজে সফল হলে এই ভিডিও দিয়ে তিতিরকে আবার জব্দ করতো। তিতির এমনি এমনি বাসা হতে বের হয়ে যায়নি। এত কিছু হওয়ার পরও কেউ বাসায় থাকবে সেটা প্রশ্নই ওঠেনা।

মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে এসে হিনুর মাকে বলল," আন্টি হিমেল কোন রুমে আছে।"

বাবা ওকে একটু দেখতো! দিনে দুপুরে ছেলে আমার বাসার বাহিরে গেছে আর তাকে কুকুর কামড়িয়ে শেষ করে দিছে। কিছু বলছেওনা ছেলেটা বলে রাশেদা বেগম কেঁদে উঠলো। তারপর চোখের পানি মুছে বলল," তোমার মা আর দাদীও এসেছিল এ বাসায়। আমাকে ফোন দিয়ে এত অনুরোধ করলো, তাই বাধ্য হয়ে ঠিকানা দিয়েছি। তুমি কিছু মনে করোনি তো বাবা!"

সমস্যা নেই আন্টি। আমি বিষয়টা পরে ভেবে দেখছি  বলেই মাহাদ হিমেলের রুমে ঢুকল। মাহাদের রাগে পুরো শরীর হির হির করছে। হিমলকে দেখে সেটা চরম পর্যায়ে চলে গেল। ওর মন চাচ্ছে এই কুলাঙ্গার কে এখুনি শেষ করে দিতে।
 হিমেল তখন চোখ বন্ধ করে সুয়ে ছিল। মাহাদ রুমে ঢুকে সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিয়েই হিমেলের ঘাড়ের ক্ষত জায়গা শক্ত করে চেঁপে ধরল। 

হিমেল প্রচন্ড যন্ত্রনায় চিৎকার দিয়ে উঠতেই মাহাদ ওর মুখে কাপড় ঢুকে দিল। তারপর দুই হাত চেঁপে ধরেই বলল," কষ্ট হচ্ছে! জানোয়ার বাচ্চা, তুই আমার ওয়াইফের গায়ে হাত দিস কোন সাহসে? তোর হাতই আজ ভেঙ্গে ফেলব বলেই মাহাদ হিমেলের হাত মুচড়িয়ে ধরল। 

"যন্ত্রনায় হিমেলের চোখমুখ নীল হয়ে গেছে। ছটপট করতে লাগল হিমেল।"

হিমেলের ঘাড়ের ক্ষত জায়গা থেকে ব্লিডিং হয়ে মাহাদের হাত রক্তাক্ত হয়ে গেল। মাহাদ হিমেলকে ছেড়ে দিয়ে বলল," তিতির তোকে এত অনুরোধ করেছে তবুও তোর ছাড়তে মন চায়নি ওকে! একবারও মনে হয়নি ওর অভিবাবক আছে। সেই অভিবাবক তোর কি হাল করে ছাড়বে! তুই জানিসনা তুই কার জিনিসে হাত দিয়েছিস। সোজা জিন্দাই তোকে সাড়ে তিনহাত মাটিতে দাফন করবো। গোলাব তো তোর ঠিক জায়গায় কামড় দিয়েছে। আর আমি তখন থাকলে তোর ঐ জিনিসটাই রাখতাম না। যাতে কোন মেয়ের সামনে তুই দাড়াতে না পারিস।"

 মাহাদ টিসু বের করে ওর হাতের ব্লাড মুছে হিমেলের সব ব্লাড মুছে দিয়ে ওকে ফিটফাট করে দিল। শোন, তোর পরিবার শুধু এতদিনে আমার বৌকে আগলে রেখেছিল তাই তোকে আজ ছেড়ে দিলাম। তাছাড়া তোর ভবলিলা আজই শেষ করতাম বলে মাহাদ ওকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে রাশেদাকে পুরো ভিডিও ক্লিপটাই দেখালো। 
আমার স্ত্রী কেনো বাসা থেকে বের হয়ে গেছে এবার নিশ্চয় আপনি সেটা জেনে গেছেন?
 আপনার ছেলে মানুষ না হয়ে অমানুষ হয়ে এসেছে বলেই ফোনটা ফ্লোরে আছাড় মেরেই ভেঙ্গে ফেলল মাহাদ। ভালো থাকবেন বলে মাহাদ বাসা থেকে বের হয়ে এল।

মাহাদ ড্রাইভ করছে আর তিতিরের নাম্বার ডায়েল করছে। এই মেয়ে আমাকে কোনদিনই বুঝবেনা। এত অভিমান ওর আসে কোথা থেকে। ও জানেনা আমি বর্তমানে কোন পরিস্থিতে আছি! তারপরও আমাকে সে ভুল বুঝেই যাবে। ফোন কেন বন্ধ রাখতে হবে! আসমার নাম্বারও বন্ধ দেখাচ্ছে। আল্লাহ্ আমার বৌয়ের একটু ঙ্গান বুদ্ধি দান করো। যাতে ও আমাকে একটু বোঝে। নাহ্ কোন ভাবেই কল ঢুকানো সম্ভব হলনা। মাহাদ বাসায় ফিরে এল। টেনশনে টেনশনে মাহাদের মাথাটা ফেঁটে যাচ্ছে।

বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে আছে মাহাদ। এমন সময় লাবীবা রুমে ওর জন্য খাবার নিয়ে এল। মাহাদ তোর খাওয়া দাওয়া ঠিক মত হচ্ছেনা। তোর শরীরটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। খেয়ে নে বাবা.....

" মা, তুমি তিতিরের ওখানে গিয়েছিলে!"

মাহাদের কথা শুনে লাবীবা চমকে উঠল। তারমানে তিতির ওকে সব বলে দিয়েছে। লাবীবার সারা শরীরে রাগে জ্বলে গেল। হ্যাঁ গিয়েছিলাম। অত্যান্ত কঠোর ভাষায় লাবীবা কথাগুলো বলল।

মাহাদ আরো কঠোর ভাষায় বলল," কেন গিয়েছিলা?"

মাহাদের এমন ব্যবহার লাবীবার ভালো লাগলো না। তাই লাবীবা বলেই দিল, ওকে তোর জিবন থেকে চলে যেতে বলেছি। আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছি নিসার সাথে তোর বিয়ে দিব।

বিয়ে বিয়ে বিয়ে, এই বিয়েটা কি একটা মেডিসিন নাকি! যে বিয়ে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আর তুমি বড় হয়ে কেন তিতিরের পা ধরতে গেছ? তোমার এতটুকু সম্মানবোধ নেই!

আমার কপাল, আমি তো ওর পা পর্যন্ত ধরেছি তবুও ও আমার মুখের উপরই না বলে দিল। কতটা বেয়াদপ একটা মেয়ে ও দেখছিস। আমার মত মানুষ ওর পায়ে পড়েছে তাও ও সম্মান দেওয়ার প্রয়োজন বোধটুকু করেনি আমাকে।

ও তোমাকে সম্মান করবে কেন? একজন স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলছো তার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে তাহলে সে তোমার সাথে কত ভাল ব্যবহার করবে? তুমি কি ভাবছো সে তোমাকে পূজো করবে?

"স্বামী-স্ত্রী মানে? কি বলছিস তুই!"

যে মেয়ের চার বছর হয়ে গেল বিয়ে হয়েছে আর তুমি সেই মেয়েকেই গিয়ে বলছ তার স্বামীকে ছেড়ে দিতে! এতকিছু করেছ আর বাতাসি তোমাকে কিছুই বলেনি! তিতিরের সাথে আমার কি সম্পর্ক?

মা কি বলবে! মাহাদ আমাকে খুলে বল তিতিরের সাথে তোর কি সম্পর্ক!

সমস্ত সম্পর্কের উদ্ধে ওর সাথে আমার সম্পর্ক। তিতির আমার বিবাহিতা স্ত্রী। তাই আমাকে আবার বিয়ে নিয়ে কোন প্রশ্নই করবেনা।

ঐডা কিয়ের বিয়া। অ্যাই ঐ বিয়া মানুম না বলে বাতাসি দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে এল। তোরে যা কইচি তাই করবি। তোর পছন্দ কি হ্যাঁ! বাড়ির সগ্গলে মিলে যা ভাবছি ঐইডাই হইবো। 

মাহাদ সামনের সমস্ত খাবার ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল," তোমাদের এই যেদের জন্য একজনকে হারিয়েছ। আল্লাহ্ না করুক এবার আমিও না সেই পথে যাই। তারপর তোমরা সবাই উল্লাস করো।"

লাবীবা তোমার পোলারে বেহুদা কতা কইতে মানা করো। অ্যাই কিন্তু বাড়ি ছাইড়া চইলা যামু। তোমাগো মন যা করবার চায় তাই করো।

মাহাদ আমাদের সাথে মিথ্যা কথা বলিস না। নিসার কথা একটু ভাব বাবা। ওর মুখের দিকে চেয়ে না হয় রাজি হ বাবা। নিধির কথা ভাব বাবা।

কিসের বিয়ে কার বিয়ে! আমি বলছিনা আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এক মানুষ কয়বার বিয়ে করবে? মাথায় ঢুকে নাও, তিতির আমার বিবাহিত স্ত্রী। বিস্বাস না হলে তোমার শাশুড়ী কে জিঙ্গাসা কর। কারন তার উপস্থিতে সব কিছু হয়েছে। তোমাদের এত পাগলামি আর আমার সহ্য হচ্ছেনা। আমার পছন্দ, চাওয়া পাওয়ার মূল্য তোমাদের কাছে নেই। তোমরা শুধু সমস্যাই আমার উপর চেঁপে দিতে শিখেছ। ভাইয়া কেন গেল! আল্লাহ্ আমাকে নিয়ে গেলে আমি অন্তত সুখ পাইতাম বলে মাহাদ বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

মাহাদ কই যাচ্ছিস। পুরো দিনতো বাসায় আসিসনি আবার এখন চলে যাচ্ছিস! এভাবে না খেয়ে যাসনা বলে লাবীবা কেঁদে উঠলো কিন্তু মাহাদের কানে কোন কথাই পৌছালোনা। তার আগেই মাহাদ চলে গেছে।

বাসায় সেদিন বড়সড় ঝড় বেয়ে গেল। নিসার সামনে বিয়ের প্রস্তাব রাখতেই নিসা সাথে সাথে প্রতিবাদ জানাল। সে এই বিয়ে কখনোই করবেনা। তাদের যদি সমস্যা হয় তাহলে সে নিধিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবে। নিসা নিজেই স্বীকার করলো মাহাদের বিয়ে  হয়ে গেছে। আপনারা চাইলে তাকে নিয়ে আসতে পারেন। আমার কোন আপত্তি নেই।

সেদিন মাহাদ আর বাসায় ফিরেনি। ফোন বন্ধ করে কোথায় কাটিয়েছে কেউ যানেনা। কিন্তু পরের দিন মাহাদ ফোন খুলতেই ওর বাবার কল এসেছে। খুব কড়া ভাষায় বাসায় এক্ষুনি আসতে বলেছে।

মাহাদ বাসায় আসলে সর্বোপ্রথম নিসা ওকে রুমে ডেকে নিয়ে যায়। বিদ্ধস্ত মাহাদকে দেখে নিসার বুকের ভিতর হুহু করে ওঠে। যে মৃত তাকে নিয়ে মাহাদকে কষ্ট দেওয়ার কোন মানেই হয়না। 
মাহাদ বাসার সবাইকে রাজি করিয়েছি, তুই তিতিরকে বাসায় নিয়ে আয়। গত সপ্তাহে  মিলি বেবি জন্ম দিতে গিয়ে মারা গিয়েছে। আমি বিষয়টা জানতামনা। মিলির ছোট বোন খবর দিয়েছে। মিলির জায়গায় তিতিরকে আমি কখনো মেনে নিতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম মিলি সারাজিবন অবিবাহিত রয়েছিল শুধু তোর জন্য। কিন্তু আমার ধারনা ভূল। কেউ কারো জন্য অপেক্ষায় থাকেনা। জানিসতো মিলি আমার ছোটবেলার বান্ধবী। ও আমার সবথেকে কাছের বান্ধবী ছিল বলে নিসা চুপ করে রইল। তারপর আবার শুরু করলো, আমার পাপের শাস্তি আমি প্রতিদিন পেয়েই চলছি। তুই যদি চাস আমি তিতিরের কাছে ক্ষমা চাইবো এবিষয়ে। আমি ওকে বাসায় নিয়ে আসবো।

নিসার কথা শুনে মাহাদ কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে এল। তিতিরকে এত খুঁজেছে তবুও পায়নি। তাই কারো কথায় মাহাদের ভালো লাগছেনা।

♦♦♦♦

এখানে এসে তিতিরের পাঁচদিন হয়ে গেছে। তিতিরের নাম্বার মাহাদ ব্লক করে রেখেছে। সেই অভিমানে তিতির ওর নিজের ফোন আর আসমার ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তিতির ওদের অর্থনীতি ডির্পাটমেন্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বাসায় উঠেছে। এই স্যারটা তিতিরকে মেয়ের মত ভালোবাসে। 
তিতির স্কালারসীপে বাহিরে যাওয়ার কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিল কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে এখানে আর থাকা যায়না। সামনের শনিবারে কিছু কাগজপত্রের জন্য ভার্সিটিতে যেতে হবে। টাকার ব্যবস্থা হিনু আপু করতে চেয়েছিল কিন্তু যা অবস্থা, ওনার সাথে আর যোগাযোগ সম্ভব নয়। তাই তিতির ওর বাবার কাছে কল দিল। কিন্তু কল রিসিভ করল আদরী।
আদরী হ্যালো বলতেই তিতির ওকে সালাম দিয়েই বলল," মা, আমি তিতির।"

তুই, তুই এখানে কেন কল দিয়েছিস? তোর লজ্জা থাকলে তুই এখানে কল দেস? তোর অভিশাপ আমার নিঃস্পাপ মেয়েটাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তুই আমাদের জিবন শেষ করে দিয়েছিস। শোন তুই কোনদিনও স্বামীর ঘর করতে পারবিনা। তোর বাপ বলে নাকি আমার পাপের ফল এগুলো। তুইও শুনে রাখ, আজ আমি যেমন জ্বলছি তুইও তেমন ভাবেই জ্বলবি। শান্তি পাবিনা। আল্লাহ্ তোর শান্তি কেড়ে নিবে।

তিতির সাথে সাথে কলটা কেটে দিল। বাবা হয়ত মায়ের সাথে আমাকে নিয়ে কথা কাটাকাটি করেছে তাই এমন কথা বলছে। আমার আর নিজের জন্য ভয় নাই। যাই যা বলুক আমি আর কিছু বলবনা। আমার ভাগ্য আর কেউ বদলাতে পারবেনা। তিতির সেদিন আর কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। মনে হচ্ছে মাহাদের খুব বিপদ আসছে। তিতির বিছানা থেকে উঠে অযু করে এসে নামায পড়ে নিল তারপর বাঁকি রাত ওভাবেই কাটিয়ে দিল। 

 আর মাহাদের সাথে যোগাযোগ হয়নি তিতিরের। এর মধ্য একটা চিঠি লিখে কোথায় যেন কুরিয়া করে পাঠিয়ে দিল। আসমাকে কাছে ডেকে বলল," আসমা আমার মন বলছে তোমার ভাইজানের খুব বিপদ আসছে। আমার কিছু ভালো লাগছেনা।"

আপা কি বলেন! সপ্ন কখনো সত্য হয়না। আপনি এসব চিন্তা করেন না। 

তিতির তবুও মাঝে মাঝে ফোন খুলে মাহাদকে কল দেয়। কিন্তু বার বার নাম্বার বিজি দেখায়। অভিমানে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে আবার ফোন বন্ধ করে দেয়। 
কয়েকদিন পর সেই শনিবার এসেই গেল। হামিদ স্যারের সাথে তিতির ভার্সিটিতে চলে গেল। আজকের দিনে ভার্সিটিতে আসব সেটা মাহাদ আগে থেকেই জানতো। কাল আসলেও হত। কিন্তু আজ যদি মাহাদ সত্যি এখানে আসত তাহলে অন্তত তাকে একবার সামনাসামনি দেখা হত।

তিতির সম্পূর্ন কাজ শেষ করলো তারপর ফাইলে কাগজপত্র ঢুকিয়ে স্যারকে বলে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিল আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল। যদি মাহাদ আসে!
তিতির সিড়ি দিয়ে নেমে মাঠে আসতেই সামনে সত্যই মাহাদকে দেখতে পেল। মাহাদ ওর সামনেই দাড়িয়ে আছে। তিতিরের ক্ষুদার্থ মন মাহাদকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সত্যিই এটা মাহাদ! দাড়িগুলো একটু বড় হয়ে গেছে। মাহাদের চেহেরাটাও উসখুশুে হয়ে গেছে। 

" তুই আবার এসেছিস পেপারর্স গুলো নিতে! তোকেনা আসতে নিষেদ করেছিলাম বলেই তিতিরের হাত থেকে ফাইলটা কেড়ে নিয়ে সব পেপারর্সগুলো 
খুটে খুটে দেখতে লাগল।"

" আমি চলে যাচ্ছি। আপনি নিসা আপুকে বিয়ে করেন। আমি বাঁধা হয়ে দাড়াবোনা আর কোনদিন। আমার নাম্বারও আর ব্লকলিষ্টে রাখতে হবেনা আপনাকে।"

পুরো ক্যাম্পাসের সবার সামনে ঠাস করে একটা চড় মারল মাহাদ তিতিরকে। তোকে বলিনি! এবার ভুল করলে কিন্তু আমি মানুষজন দেখবোনা। সবার সামনে তোকে শাস্তি দিব। আরও একটা থাপ্পর মেরে বলল," সবার সামনে বলছি আমার যদি বিয়ে করতেই হয় তাহলে আগে তোরে খুন করব তারপর অন্য মেয়ের কাছে যাব।"

তিতিরের এত লজ্জা লাগলো যে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগল।

মাহাদ তিতিরের হাত ধরে টেনে সবার সামনে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে যেতে লাগল।

আমার হাত ছাড়ুন। আমি আপনার সাথে কোথায়ও যাবনা। আপনি একটা বাজে লোক। আমার নাম্বার ব্লকে রেখে দরদ দেখাতে আসছেন?

আমি তোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাত ধরিনি। আর তোর হাত ধরার অধিকার শুধু আমারই আছে। মাহাদ ওকে জোড় করে গাড়ীতে তুলেই গাড়ী স্টার্ট দিল।

গাড়ীর মধ্যই তিতির মাহাদের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ছাড়ুন আমায়, আপনার সাথে কোন কথা নাই আমার। আপনার কোন অধিকারই নেই আমার উপর।

আমার নাইতো কার আছে বলেই ড্রাইভ করতে করতেই মাহাদ বুকের মধ্য টেনে নিল তিতিরকে। তারপর বলল," আমার বৌ এত্ত জেদি হয়ে গেছে কেন! এমনতো ছিলনা আমার বৌ, তাহলে আমি কাকে টেনে নিয়ে আসলাম।"

উমহ্ আপনার বৌ বৌ বৌকে টেনে আনছেন বলেই তিতির মাহাদের বুকে কামড় বসিয়ে দিল। কিন্তু আজ মাহাদ কিছু বলল না। বরং আরও বুকটা পেতে দিল।
মাহাদের এমন ব্যবহারে তিতিরের মনে খটকা জাগলো। এই আপনি কিছু বলছেন না কেন? আগেতো ঠিকি কামড়ের জন্য শাস্তি দিতেন তাহলে আজ কেন দিলেন না? সত্যি করে বলেন আপনি এ ক দিনে কার সাথে কি করেছেন যে কামড় সহ্য করা শিখে ফেলেছেন।

মাহাদ বেশ জোড়েই ব্রেক কষে ফাইলটা নিয়ে সেখান থেকে কয়েকটা পেপারর্স তিতিরের সামনেই ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ডোর দিয়ে ফেলে দিল। তিতির ড্যাবড্যাব চোখে বলল," আমার পেপারর্স......?"

" তোমার পেপারর্স আমি, অন্য কিছু নয় বুঝেছ!"

তিতির ওর ফোনটা বের করে মাহাদের ফোনে কল দিয়ে মাহাদের হাতে দিল। হ্যাঁ নাম্বার বিজি দেখাচ্ছে। মাহাদ এবার ওর ফোনটা বের করে চেক করল। হুম সত্যি ওর ফোন থেকেই তিতিরের নাম্বার ব্লক করা হয়েছে। মাহাদ চিন্তা করতে লাগল কে করেছে এমন?

এমন সময় তিতির ওর বোরখাটা সম্পূর্ন খুলে ফেলে মাহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেলল। জানেন এই কটা দিন আমার উপর দিয়ে কত ঝড় বয়ে গেছে?

মাহাদ ওর সিটটা আরো একটু পিছন দিকে হেলিয়ে দিতেই তিতির আরও ভালো করে মাহাদকে জড়িয়ে ধরতে সুবিধা পেল। মাহাদ ঐ অবস্থায় ক্লিক ক্লিক করে ওর ইচ্ছা মত কিছু সেলফি তুলল এবং এই সুন্দর মুহুত্তকে ক্যামেরা বন্দী করে ফেলল। 

"সেলফি তুলছেন কেন? তাও এই অবস্থায়!"

দারকার আছে তাই তুলেছি। মাহাদ তিতিরের মাথায় একটা কিস করে বলল," স্যরি আমার কলিজা, আমার উচিত ছিল তোমাকে প্রটেক্ট করা কিন্তু আমি এত এত ব্যস্ত ছিলাম যে তোমার সম্পূর্ন দায়িত্ব আল্লাহর কাছে দিতে হয়েছে।"

তিতির হিমেলের কথা মনে করেই জোড়ে কেঁদে উঠল।  মাহাদ আপনি জানেন,  হিমেল.... 
মাহাদ আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিতিরের মুখ চেঁপে ধরে বলল," থাকনা তিতির, আমরা আমাদের খারাপ সময়ের কথা স্মরন করে এই ভালো সময়কে নষ্ট না করি। আল্লাহ হয়ত আমাদের পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটাতে চলছে। কাল রেডি থেক তিতির। বাবা তোমাকে নিতে আসবে। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি তোমার সাথেই আমার সুখ ও কষ্টের দিনগুলো কাটাতে চাই। আল্লাহ্ হয়ত সেই ব্যবস্থায় করতে চলেছেন।"

" বাসার সবাই মেনে নিয়েছে!"

" মেনে নেক আর না নেক, তবুও তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে। তোমাকে ছাড়া আমার আর চলছেনা বলে মাহাদ তিতিরের কপালে কিস করল।"

" আপনি আমার শেষ ভরষা বলেই তিতির বলল," বাসায় যাব চলেন। অনেক গোছগাছ করে রাখতে হবে। ইনশাল্লাহ্ এই সময়টা আগামীকাল আমরা একসাথে কাটাবো।"
তিতির খুঁশিতে মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে বোরখা আবার পড়তে লাগল।

তুমি খুব জেদি তবে তোমার রাগ খুব সহজে ভাঙ্গানো যায়। তোমার এই স্বভাবগুলো আমার খুব পছন্দ তিতির। তিতিরের বলা অনুযায়ী লোকেশনে মাহাদ তিতিরকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। এবং যাওয়ার সময় বলে দিল তিতির আমি তোমার স্যারের সাথে কথা বলে রাখব। তুমি রেডি থেক। আমি রাতে কল দিব।"

তিতির আজ ভিষন খুঁশি। কিন্তু উপরওয়ালার মর্জিই হয়ত অন্যকিছু ছিল। তিনি হয়ত আরো পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শেষ চ্যালটা দিয়েই ফেললেন।

রাত আটটা বাজে। শীতের রাত তাই চারদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। এমন সময় মাহাদের ফোন থেকে তিতিরের নাম্বারে কল এল। তিতির রিসিভ করতেই মাহাদের গম্ভীর কণ্ঠ ভেঁসে এল," তিতির নিচে নেমে এস।"

তিতির মাথায় ভালোকরে ওড়না দিয়ে বের হতেই গোলাব ওকে আটকালো। গোলাব কিছুতেই তিতিরকে এক পাও এগুতে দিচ্ছেনা। গোলাব, বাবা এসেছে তো। কেন এমন করছিস? কিন্তু না গোলাব ওর জায়গায় অটল। শেষে তিতির রেগে গিয়ে গোলবকে একটা রুমে আটকে স্যারকে বলে নিচে চলে গেল।

নিচে নেমে গেট পেরুতেই পিছন দিক থেকে কেউ ওর মুখ চিপে ধরেই ওকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে চলে গেল। তিতির আর চিৎকার করার সুযোগও পেলনা। ১০ মিনিটের হেঁটেই পথ সামনে শশ্মানঘাটে এসে গাড়ি থামালো। এই কুয়াশার রাতে এখানে কেউ আসবেনা তাই এই জায়গায় নির্বাচন করা হয়েছে। তিতিরের মুখ টেপ দিয়ে বাঁধা। তিতিরকে টেনে হিচড়ে বের করলো গাড়ী থেকে। এমন সময় হকিষ্টির একটা বাড়ি পড়ল  পিছন দিক থেকে তিতিরের মাথায়। তিতির আর সহ্য করতে না পেরে ওখানেই বসে পড়ল। কারের হেড লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওর ঘাড় বেয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে। এত রক্ত এক সাথে দেখে তিতির থরথর করে কাঁপতে লাগল। 
একজন মুখোশধারী এসে বলল," স্যরি ম্যাডাম এটা রাজনীতির খেলা। আপনার কোন অপরাধ নেই তবুও আপনাকে মরতে হচ্ছে। আপনি তো মরবেন তাই আপনাকে সত্যিটাই জানায়। আপনি জানেন এর পিছনে কে আছে? আপনার প্রিয় মানুষ মাহাদ বলেই দুরে একটা গাড়ীকে লক্ষ্য করে দেখে দিল কিন্তু তিতির সেদিকে তাকানোর আর সুযোগ পেলনা। তার আগেই আর একটা বাড়ি এসে পড়ল তিতিরের মাথা বরাবর। চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছেনা। তিতির মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তারপর কয়েকটা ঝাঁকুনি। সব শেষ.....

এদিকে গোলাব গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে ডেকে যাচ্ছে। তিতির বাহিরে গেছে অনেকক্ষন হয়ে গেল তাই হামিদ সাহেব ওদের রুমে এসে দেখলো আসমা গোলাবকে থামানোর চেষ্টা করছে। 
আসমা ও চিৎকার করছে কেন? যাওতো বাহিরে তিতির আছে। ওকে ডেকে নিয়ে আসো। দরজা খোলা পেয়েই গোলাব এক ছুটে বাহিরে চলে গেল। গোলাবের এমন ব্যবহারে আসমা আপা বলেই গোলাবের পিছে দৌড় দিল। হামিদ সাহেব আর কিছু না বুঝে ওনার রুমে চলে গেলেন। 

গোলাব বাহিরের গেটে এসে রাস্তা শুকেই প্রানপনে ছুটতে লাগল। পিছু পিছু আসমাও দৌড় দিল রাস্তা ভরা গাড়ীর তোয়াক্কা না করে। গোলাব রাস্তা থেকে নেমে অন্য দিকে দৌড় দিল। গোলাব দৌড়াই আর পিছন তাকায় আসমা আসছে কিনা। এভাবে আরো লেট হয়ে গেল। আসমাও ভয় ডর ভুলে প্রানপনে ছুটছে গোলবকে অনুসরন করে। শশ্মানে এসেই করুনসুরে কয়েকটা ডাক দিয়েই দাড়িয়ে গেল গোলাব। একটু পরও আসমা এসে ওর কাছে দাড়ালো। দুরে তিতিরের দেহ পরে আছে। গোলাবের চোখ দুটি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। দু'জনে তিতিরের কাছে যেতেই আসমার মাথায় কেউ গায়ের শক্তি দিয়ে বাড়ি বসাল। আসমা সাথে সাথে ধাম করে মাটিতে পড়ে গেল। মুখে শুধু অস্পষ্ট শব্দ ভেঁসে উঠলো আপা ডাকটা। সেদিন ৩টি প্রানেরই অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেল সেই কুয়াশার মধ্য।

♦♦♦♦

পরেরদিন সকালে এক কার্ভাডভ্যান সহ পুলিশ এসে নামল মাহাদের বাসায়। এত পুলিশ দেখে লাবীবা ভাবল, হয়ত ফুয়াদের ব্যাপারে এসেছে। পুলিশ অফিসার আসিফ ইকবাল লাবীবাকে সালাম দিতেই কামরান সাহেব উপস্থিত হয়ে বলল," আসিফ তোমাকে অনুরোধ করছি, মাহাদকে যে জন্য অ্যারেষ্ট করতে এসেছ সেই ঘটনা যেন মাহাদকে জানিওনা। আমার ছেলেটাকে তাহলে আর বাঁচানো যাবেনা। "

কামরান সাহেব চোখের পানি মুছে নিজেই আসিফকে মাহাদের রুমে নিয়ে গেল। মাহাদ তখন ঘুমিয়ে ছিল। ওর নিষ্পাপ চেহারা দেখে কামরান সাহেব হুহু করে কেঁদে উঠলো। বিপদ যেন তার পরিবারের পিছুই ছাড়ছেনা।

আসিফ কামরান সাহেবকে আসস্ত করল, আঙ্কেল আমি থাকতে মাহাদের গায়ে একটা আঁচও পড়তে দিবনা। আমার ডিউটি শুধু পালন করতে দেন। কামরান গিয়ে মাহাদকে কয়েকবার ডাকতেই মাহাদ চোখ খুলল। আসিফ সাথে সাথে মাহাদের হাতে হাতকড়া লাগিয়েই টেনে রুম থেকে বের করল।

আসিফ কি হয়েছে! আমাকে কই নিয়ে যাস এভাবে। আমার  সম্মান বলেও তো কিছু আছে নাকি! সমস্যা কি আমাকে বল।

" তোর নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। থানায় চল, গিয়ে কথা হবে।"

বাসার হট্টগলে নিসা রুম থেকে বের হয়েই চিৎকার দিয়ে উঠলো, এই আসিফ এই! মাহাদকে কৈ নিয়ে যাস? ফুয়াদকে খেয়েও তোদের ক্ষুদা মেটেনি! আবার মাহাদের পিছে লাগছিস?"

কারও কোন কথা শুনছেনা আসিফ। মাহাদ দরজার কাছে যেতেই পিছন ফিরে চিৎকার দিয়ে ওর বাবাকে বলল," বাবা টেনশন করেন না। আমাকে কেউ আটকে রাখতে পারবেনা। তিতিরকে সকাল দশটার দিকে আনতে যাবেন। ও আপনার জন্য ওয়েট করে আছে। আপনাকে তো রাতে ওর লোকেশন বলেছি, মনে আছে তো?"

আর কথা বলার সুযোগ পায়না মাহাদ। আসিফ ওকে অনেকটা জোড় করেই নিয়ে গেল বাসা থেকে।

কামরান সাহেব কাকে নিতে যাবে! যে মানুষটার কোন অস্তিত্ব নেই তাকে? মাহাদ চোখের আড়াল হতেই কামরান সাহেব বুকটা চেঁপে ধরে নিচে বসে পড়ল। চোখের সামনে দুটি ছেলেকেই হারাতে বসেছে কত চাপ সে সহ্য করবে। কামরান সাহেব ঙ্গান হারিয়ে সিড়ি থেকে পড়ে গেলেন।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।