মায়াবতী (পর্ব ১৭)


৩৩!! 

ভোরের দিকে মায়ার ঘুম ভাঙলো নাকে চুলের সুড়সুড়ি লাগায়। হাত দিয়ে নাক ঘষে দেয়ার চেষ্টা করায় গরম একটা শরীরে হাত ঠেকলো। মায়া আঁতকে উঠে চোখ মেলে তাকাতেই রাহাতকে দেখে আরেকবার থতমত খেয়ে গেল। রাহাত মায়ার সাথে একই কাঁথা গায়ে পেঁচিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তাও আবার খালি গায়ে! এক মূহুর্তের জন্য মায়ার মনে হল আসলে ব্যাপারটা সত্যি না। ও নিজেই হ্যালুসিনেশন করছে। যার উপরে রাগ করে এতোদূরে পালিয়ে এলো সেই মানুষটা কি করে এক রাতের মধ্যে ওকে খুঁজে পাবে!! একই শহরে থাকতেও খুঁজে পেতে দশটা দিন সময় লেগেছিল তার। আর ঢাকা থেকে এতো দূরে এই পাড়াগাঁয়ে মাত্র কয়েকটা ঘন্টায় খুঁজে বের করে ফেলবে! অসম্ভব। 

মায়া ধরেই নিয়েছে রাহাত আসে নি। যাকে পাশে বেঘোরে পড়ে পড়ে ঘুমাতে দেখছে সেটা ওর কল্পনা। একটু আলতো করে ছুঁয়ে দিলেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে মানুষটা। মায়া রাহাতের দিকে মুখ করে বালিশে মাথা রেখে রাহাতকে দেখছে এক মনে। ওর খুব করে ইচ্ছে করছে একবার মানুষটাকে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু ধরলেই আর মানুষটাকে দেখতে পাবে না ভেবে আর সাহস করে এগুচ্ছে না মায়া।

-কেন এসে এসে জ্বালাচ্ছ? সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে তো চলে আসতেই চাইছি একেবারে৷ তবু কেন বার বার পথ আটকাচ্ছো? তোমাকে সত্যি আর কারো সাথে নিতে পারবো না আমি। ---- সেদিন যখন বলেছিলে আমার জন্য আগের সব ভুল শোধরাতে চাও--সেদিনও বিশ্বাস করেছিলাম জানো? কিন্তু তুমি কি করলে? আরেকবার আমার বিশ্বাসটা ভাঙলে। কেন বলো তো? আমি তো ভুলেই গেছিলাম। যে মেয়েটাকে অফিসে পি.এ রাখতে তোমার প্রেসটিজে বাঁধে, যাকে গেঁয়ো দাদিআম্মা মনে হয়, তাকে কেনইবা নিজের জীবনসঙ্গী করে রাখবে?

কথাগুলো বলতে বলতে মায়া একটু অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ কারো হাতের টানে একেবারে বুকের ভিতরে জাপটে ধরা অনুভব করলো মায়া। আরেকবার অবাক হয়ে মায়া রাহাতের দিকে তাকালো। না তো। মানুষটা তো ঠিকই পাশে আছে৷ ভ্যানিশ হয়ে যায় নি। ব্যাপারটা খেয়াল হতেই মায়ার বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো। রাহাত সত্যি সত্যি এসেছে! কি করে? শরীর মোচড়ামুচড়ি করে রাহাতের হাতের বাঁধন থেকে ছোটার বহু চেষ্টা করেও ছুটতে পারছে না মায়া। হাত দুটো যেন ইচ্ছে করে আরো বুকের ভেতরে চেপে ধরছে মায়াকে। মায়া খুব বিরক্ত হয়ে চুপ করে গেল। এই লোকটা এমন কেন? একটু হারিয়ে গিয়েও শান্তি নেই এর জন্য। কোথাও একটু হাওয়া হয়ে যেতে দিবে না নাকি?

-উহু---। দিবো না হাওয়া হতে--। এতো অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকো না তো। ঘুমুতে দাও-। এভাবে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলে ঘুম ঘুম ক্লান্ত শরীর নিয়েও তোমার মাঝে ডুব দিবো কিন্তু।

মায়া তাড়াতাড়ি রাহাতের বুকে মুখ লুকিয়ে নিল। এই লোকের আসলেই বিশ্বাস নেই। আর কখন কি বলে তার হুঁশটুকুও নেই। রাহাত আরো নিবিড় করে মায়াকে বুকে চেপে ধরলো।

-কি আছে কি নেই সেটা সকালে ঘুম ভাঙলে বুঝাবো দাঁড়াও---। 

মায়া একবার শিউরে উঠে রাহাতের বুকে আরেকটু আড়ষ্ট হয়ে চুপ করে রইলো। রাহাত চোখ বুজেই আলতো করে মায়ার চুলে চুমো খেল। এক সময় দুজনেই গভীর ঘুমে হারিয়ে গেল। ঘুমের ঘোরেও মায়ার বারবার মনে হচ্ছে রাহাত আসলেই আসে নি। স্বপ্নই দেখছে সে। ঘুম ভাঙলেই দেখবে মানুষটা নেই। অথচ তবুও মানুষটার স্পর্শ, উষ্ণ শরীর, নিঃশ্বাস, বুকের ঢিপঢিপ সবই বেশ ভালো করেই অনুভব করতে পারছে। 

সকালে মায়ার ঘুম ভাঙলো ঠোঁটে কারো ঠোঁটের স্পর্শে। চমকে আথালিপাথালি সরে যাওয়ার আগেই রাহাত ওকে টেনে বুকে শুইয়ে দিলো।

-আরে আরে? গুড মর্নিং মায়াবতী? আমি তো?

-তুমি? মানে! তুমি কখন এলে?

-সেই কখন এলাম! রাতে এলাম। আর তুমি তো কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছ----।

-কেন এসেছ?

-মিহান ভাইয়া আর দিয়া ভাবি হানিমুনে এখানে এসেছে---। তোমার আমার হানিমুনটাও তো বাকি ছিল না? তাই আর কি? মাকে বলো নি আমি আসবো?

-তুমি! অসহ্য লোক একটা! এক্ষুণি ঢাকা ফিরে যাবা অসভ্য লোক---।

-আরে আরে--? আচ্ছা? তুমি বললেই চলে যাবো নাকি? উহু-- মোটেও না----। তোমার সাথে বহু হিসাব বাকি আমার---। সেগুলোর ফয়সালা না করে এক পা ও নড়ছি না আমি--।

-কিসের হিসাব শুনি?

-তোমার সব রাগ, অভিমান, অভিযোগ মেনে নিয়েছি আমি৷ কিন্তু তোমার আমার সম্পর্কটা শুধু শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য ছিল এটা কেন বললে? 

-বলবো না কেন? আর এসেছই বা কেন? যাও না তোমার পি.এ র কাছে? আমার কাছে কি?

-আরে? পি.এ র বিয়েতে তোমাকে সহ দাওয়াত দিয়েছে তো--। তোমাকে নিতে এসেছি--।

-মানে?

-সেদিন দিহানের সাথে কথা বললে না? ওর আর লিজার বিয়ে---।

-তো আমি কি করবো?

-আরে? কি মুশকিল! ওরা দুজন না থাকলে তোমাকে খুঁজে পেতাম কিনা কখনো জানিও না। তাই ওদের বিয়েতে তোমাকে নিয়ে যাবো--। ওরা আমার পাগলামি দেখে তোমাকে দেখতে চায় জানো?

-বাহ! ওই মেয়েকে তুমি পার নাইট ৫০০০০ করে টাকা দিচ্ছ আবার বিয়েতে বউ নিয়ে যেতেও চাচ্ছো! কি ব্যাপার কি বলো তো?

-আরে শোনো না---? তোমাকে যে অডিওটা পাঠিয়েছে সেটা আরো আগেই--। ওই যে তুমি বাড়ি থেকে চলে এসেছিলে? সেদিনের---। জুলি ইচ্ছে করেই-----।

-আবার জুলি!

-না রে বাবা--। শোনো না? ওই বদমাইশ মেয়েটা তোমাকে ইচ্ছে করে ভুল বুঝাচ্ছে মায়াবতী--। আমি সত্যি-----।

-এসব করো নি বলছো? এটা তোমার গলা নয় সেটা বলতে চাইছ তুমি আমাকে?

-না তো----। করেছিলাম তবে এখন সব ছেড়ে দিয়েছি---। সরি তো মায়াপরী--। ওটা আগে করে ফেলেছিলাম--। আমি সত্যি সব শুধরে নিয়েছি বিশ্বাস করো?

-আবার?

-উ---হ--। তুমি দিহানকেই জিজ্ঞেস করো না হয়? ও সবটা জানে---। সরি তো? এই? মায়াবতী? তাকাও না প্লিজ?

-ছাড়ো---। এটা তোমার শহর নয় যে ১০ টা ১১ টা পর্যন্ত বিছানায় পড়ে থাকবে--। এখানে একটা ২ বছরের বাচ্চাও ৬ টার সময় উঠে যায় বিছানা থেকে---।

-তাই? আমাদের পিচ্চিগুলোকে তাহলে এখানে নিয়ে আসবো কেমন? ওরা ভোর ভোর উঠে সারা উঠানময় খেলা করবে। আর আমি তোমাকে বিছানায় ফেলে তোমার মাঝে ডুব দিবো---।

-অসভ্য লোক একটা! সরো---। আজেবাজে কথা সব সময়---।

রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে নিজে বিছানা থেকে উঠে গেল মায়া। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ব্রাশ করতে করতে বাইরে বেরিয়ে গেল। আর রাহাত ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে মায়ার কাজ দেখছে। মায়া হাত মুখ ধুয়ে রুমে এসে ব্রাশটা রাখতে যাবে এমন সময় রাহাত মায়ার হাত থেকে ব্রাশটা নিয়ে একটু পেস্ট লাগিয়ে ব্রাশ করতে শুরু করলো।

-এই? কি করছ কি? এটা আমার ব্রাশ----।

-যা তোমার তাই আমার--। তাই না মায়াবতী?

কথাটা বলে রাহাত হেলেদুলে ব্রাশ করতে করতে পুকুরের দিকে রওনা দিল। আর পিছনে মায়া হা করে রাহাতকে দেখতে লাগলো। কি হলো তার কিছুই বুঝলো না বেচারি।

৩৪!! 

রাহাত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মায়া মা আর দিয়ার সাথে বসে পিঠা বানাচ্ছে। মিহানও ফ্রেশ হয়ে আসায় দুজনে মিলে আড্ডা দিতে দিতে রান্নাঘরের কাজ দেখতে লাগলো রাহাত। রান্নাঘরটা বাড়ির ভিতরে না দিয়ে উঠানের অপর পাশে বানানো। প্রত্যন্ত এই গ্রামে না আছে কারেন্ট, আর না আছে গ্যাসের সুবিধা। তাই রান্না হচ্ছে মাটির চুলোয়। চুলোর ধোঁয়ায় সমস্যা না হওয়ার জন্যই সম্ভবত এই আলাদা ব্যবস্থা। রান্নাঘরে মায়ার ব্যস্ততা দেখতে দেখতেই রাহাত মিহানকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। অফিস কোথায়, কাজ কেমন হয়, বস কেমন -এসব নিয়েই মিহানকে প্রশ্ন করছে রাহাত। 

নাস্তা করতে বসে রাহাত দেখলো পুলি, ভাঁপা, চিতুই-এরকম কয়েকটা পিঠে করা হয়েছে। আর শীত শীত সকালে পিঠাগুলো খেতেও বেশ লাগছে রাহাতের। খাওয়া শেষ করে গাড়ি থেকে শপিং ব্যাগগুলো আনলো রাহাত৷ মিহানও হেল্প করলো অবশ্য। অনেকগুলো শপিং করেছিল রাহাত। শাশুড়ীকে, মিহানকে আর দিয়াকে কয়েকটা করে শপিং ব্যাগ দিয়ে বাকিগুলো মায়াকে ধরিয়ে দিলো। মায়াও ভ্রু কুঁচকে রাহাতকে দেখছে। 

-আরে? এসবের কি দরকার ছিল বাবা?

-মা? আমি কি দিতে পারি না? মাকেই তো দিয়েছি---।

-রাহাত ভাই--। আর আমাদের গুলো? এতো কাপড় চোপড়ের কি দরকার ছিল?

-আরে মিহান ভাই---। নতুন বিয়ে করেছেন--। একটু ঘুরবেন ফিরবেন ভাবিকে নিয়ে---। তাই আর কি--। হা হা-। তা আজকে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

-সবাই মিলে খালার বাড়ি যাই আজকে?

রাহাত কিছু বলার আগেই মায়া নিজের হাতের শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

-ভাইয়া--। আমি যাচ্ছি না--। এমনিতেই খারাপ লাগছে একটু। জার্নি করলে শরীর খারাপ করবে আরো---। তোমরা যাও--।

-তাহলে কাল পরশু যাই?

-আরে না না---। আপনারা যান--। মায়া আর আমি বাড়িতে থাকি--। আমিও কাল ড্রাইভ করে এসে টায়ার্ড অনেক----।

মায়া রাহাতের দিকে রাগী লুক দিয়ে রুমে চলে এলো। এই লোকটা না গেলে সারাদিন জ্বালিয়ে মারবে। মায়া ভেবেছিল রাহাতও মিহানদের সাথে যাবে। আর মায়া একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। তা আর হলো কই? মিহানও বুঝতে পেরেছে মায়া কোন কারণে রাহাতের উপরে রেগে আছে। তাই ওদের দুজনকে একা ছাড়ার ব্যবস্থা করে দিল। যাওয়ার আগে রাহাতকে ইশারায় ডাকলো। 

-জি ভাইয়া?

-মায়া বোধ হয় আপনার উপরে অনেক খেপেছে। আমরা তো আজ রাতে ফিরবো না-। দেখুন রাগ ভাঙাতে পারেন কিনা--। এই মেয়ের রাগ কিন্তু সাংঘাতিক--।

-থ্যাংক ইউ ভাইয়া----।

রাহাত লাজুক হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুমে এলো। এসেই হা হয়ে গেল। মায়া শপিংব্যাগগুলো বিছানায় ছড়িয়ে রেখে জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে৷ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা কতোটা রেগে আছে রাহাতের উপরে। রাহাত হেসে মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবালো। মায়া চমকে উঠে রাহাতের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

-ছাড়ো---।

-উহু----।

-বলছি না ছাড়ো? সরো?

-একটা গান শুনবে মায়াবতী?

-না------।

-শুনো না? একটু----।

-না না না---। না বলছি না?

-আরে বাবা একটু শুনো? জাস্ট কয়েকটা লাইন?

এবার মায়া চুপ করে যাওয়ার রাহাত মায়ার কানে ঠোঁট বুলিয়ে দিতে দিতে গান ধরলো৷ 

-"আমার পরান যাহা চায়, 
      তুমি তাই, তুমি তাই গো! 
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
      মোর কেহ নাই কিছু নাই গো !
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,
      আর কিছু নাহি চাই গো ।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, 
      তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস ।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও,
      আমি যত দুখ পাই গো ।"

রাহাতের কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীতটা শুনেই মায়া চুপ হয়ে গেছে। রাহাতও তাই সুযোগ বুঝে মায়ার ঘাড়ে, গলায় আলতো করে ঠোঁট ডুবিয়ে দিচ্ছে একবার। আবার কখনো মায়ার কানে ছোট্ট করে কামড় বসাচ্ছে। মায়া কেঁপে উঠে রাহাতের সামনে থেকে আচমকা উঠে বিছানা থেকে নেমে গেল। রাহাত খাটের সাথে হেলান দিয়ে মায়ার কাজ দেখছে। 

-এই? কই যাও?

-খবরদার ছোঁবে না একদম--। একবার একটা করে আমাকে জব্দ করা না? তোমাকে আমি আর কক্খনো মাফ করব না--। সে তুমি যত কিছুই করো না কেন---। 

-আচ্ছা মায়াবতী--। মাফ করো না--। এখন কাছে আসো?

-আসবো না কাছে। থাকবোও না তোমার সাথে।

-ও? তাই? কই যাবা? আমি তো তোমার পিছে পিছে এসে হাজির হবো----। 

-তুমি ঘুমাও---। আমি মা আর ভাইয়াদের সাথেই খালার বাড়ি চলে যাবো---। থাকো তুমি একা একা--।

-আরে?

মায়া রুম থেকে বেরুনোর আগেই রাহাত মায়ার হাত টেনে টিনের দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। মায়া রাগী চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে হাত ছোটানোর জন্য লাফালাফি করছে৷ কিন্তু কিছুতেই রাহাতের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না বেচারি।শেষে বিরক্ত হয়ে মায়া রাহাতের হাতেই কামড় বসালো। প্রথমে একটু আস্তে কামড় বসালেও পরে রাগ করে রাহাতের হাতে বেশ জোরেই কামড় বসালো মায়া। রাহাত হেসে মেয়েটার পাগলামিগুলো সহ্য করছে। মায়া হয়রান হয়ে রাহাতের হাত ছেড়ে দিতেই রাহাত মায়ার মুখটা এক হাতে তুলে ধরে চোখের দিকে তাকালো। মায়াও রাহাতের দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে। 

-মা, ভাইয়া, ভাবি এখনো বাড়িতেই আছে মায়াবতী--। এখনই এতো কাছে ডাকছো কেন? উনারা যাক তারপর কতো কামড়াতে পারো আমিও দেখবো-----।

-অসভ্য লোক---। ছাড়ো---। নইলে এখান থেকেই মা কে ডাকবো বলে দিলাম----।

-হুম হুম--। অবশ্যই ম্যাডাম--। ডাকুন--। দেখুন চেষ্টা করে ---।

মায়া মাকে ডাকার জন্য মুখ খোলার আগেই রাহাত মায়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। নিচের ঠোঁটটা আলতো করে কামড়ে ধরে বেশ খানিকটা সময় চুপ করে মায়ার ভারি নিঃশ্বাসগুলো অনুভব করলো রাহাত। একটু পরে মায়ার মুখটা তুলে ধরে দেখলো মায়া চোখ বুজে আছে। রাহাত মায়ার কান আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। 

-আবার ডাকবে মাকে? চেষ্টা করে দেখতে পারো। তবে এবার কিন্তু ডিউরেশনটা আরেকটু বেশি হবে--। সেটা মাথায় রেখো--কেমন মায়াবতী?

-সরো------।

-উহু---। কথা ছিল তুমি রাগ করলে আমার উষ্ণ স্পর্শে তোমার রাগ ভাঙাবো--। অভিমান করলে তোমার নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে---। ছাড়াছাড়ি হচ্ছে না মিসেস মায়াবতী---।

-তোমার দোহাই লাগে। প্লিজ চুপ করো?

-কেন গো? শুনলে বুকের ভিতরে ধুকপুক করে ওঠে? আরো আদর খেতে মন চায়? তুমি চাইলে করতেই পারি। তবে মা আর ভাইয়া ভাবি যাওয়ার পর----।

-আমার বয়েই গেছে----। সরো তো?

-আচ্ছা যাও---। সবাই রেডি হলো কিনা দেখো গিয়ে---। তোমাকে বশে আনার জন্য সারাটা দিন তো পড়েই আছে---? কি বলো?

মায়া রাগী চোখে রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাতও মায়ার দিকে ইশারায় একটু চুমো দেখালো। তারপর হাতের বাঁধনটা ছেড়ে দিতেই মায়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রাহাতও হেসে মায়ার পিছন পিছন ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো। মেয়েটা সোজা পথে মাফও করবে না। আর ওর কোন কথাও শুনবে না৷ তাই এভাবে বিরক্ত করে, আরো রাগিয়ে দিয়েই মায়াবতীর মান- অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে রাহাত৷ কতটুকু কি করতে পারবে কে জানে! তবে সে হাল ছাড়বে না। রাহাতও যেন পণ করেছে। তার মায়াবতীর রাগ সে যেমন করেই হোক ভাঙাবেই ভাঙাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন