সাইকো ইজ ব্যাক - পর্ব ০১ - সিজন ৩ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


বাড়ির উঠনে মাত্র গোসল করে এসে দাঁড়িয়ে আছে আরাধন। দু হাত বেধে সূর্যের দিক ফিরে এক পায়, বিড় বিড় করে বলছে "রাম রাম রাম"।তখনি উপর থেকে টুপ করে পাখির বিষ্ঠার মতো কিছু পরলো আরাধনের উদম পিঠে।সাথে সাথে দোতলার বারান্দা থেকে দাঁত কেলিয়ে চেঁচিয়ে বললো তিন্নি,,

--"ও গো আরাধন দা...! পাখি যে তোমার উপর হাগা মুতা করে দেল যে...!"

আরাধন চোখ খুলে নিজের কাঁধে সাদা সাদা কিছু দেখেই নাকছিটকিয়ে হায় হায় করে বলে উঠলো,,

--হায় ঠাকুর! শয়তান পাখি গুলো না তোমাগো কাজ। চিনি না ভাবিছ তোমাগো। দিল আমার ধর্ম নষ্ট করে...! ধ্যাত আবার গোসল করতে হবে। তোমাগো যন্ত্রনায় আমি ঠাকুরের নাম একদিনো নিতে পারি না।ঠাকুর সব দেখতাসে এই বলে দিলুম।বলে বড় বড় পা ফেলে গোসল ঘরে চলে গেলেন।

পিছন থেকে তিন্নি মুখ চেপে হেসে যাচ্ছে। তখন ছাঁদ ঘর থেকে ১২ বছরের পল্টু সিঁড়ি বয়ে নামতে নামতে পেষ্ট দেখিয়ে বলল,

--" কেমন দিলামরে ছোটপি?"

পল্টুর দিক বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিন্নি বলল,,
--"জোশ!  পুরোই খাপে খাপ।অসভ্য  বেটা প্রতিদিন ঘণ্টা  বাজিয়ে আমাদের ঘুমের ১২টা বাজিয়ে দেয়।"

তখনি শুনা গেল জবেদার ডাক..!
সাথে সাথে দু ভাই বোন দৌড়ে রুমে গিয়ে বই নিয়ে জোরে জোরে পরতে লাগলো।

জবেদা প্লেটে করে দু গ্লাস খাটি গরুর দুধ নিয়ে ঢুকলেন তাদের ঘরে..! পল্টু তার খাটে আর তিন্নি তার খাটের পাশে থাকা টেবিলে বইয়ে মুখ গুজে পরছে।এতো জোড়ে পরছে যে ঘরের বাহির থেকে পড়ার শব্দ বের হচ্ছে। জবেদা দুজনকে এত সুন্দর করে পড়তে দেখে তার প্রাণ টা যেন জুরে গেল। তিনি ভিতরে ঢুকে আহ্লাদী সুরে বলল,,

--"আমার আব্বা-আম্মারা পড়তেসে! খিদা পায় নি।"

পল্টু বই থেকে মুখ তুলে অসহায়ের ভঙ্গিতে বলল,,

----"হে আম্মু জানো সেই ভোর পাঁচটা থেকে পড়তেসি..। কি যে খুদা পাইছে?"

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল জবেদা,,

--"আহারে আমার বাবুটা। এখন দুধটুকু খেয়েনে,  আমি কুহুকে রানতে পাঠায়ছি। আজ কাজে বেটি ছুটি নিছে তাই দেড়ি হচ্ছে"।

তখন তিন্নি বলল,,

---"মা এই ফাজিল বেটিরে চেন্চ করা যায় না? সপ্তাহে তিন,  চার দিন তার সমস্যাই থাকে।"

জবেদা আফসোসের শুরে বলল,

--" কম কি ট্রাই করতেসি আম্মা।বল তো।  ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি যার অভাব তা হলো এই বুয়ার অভাব। টাকা দিয়ে বাঘের চোখ পাওয়া গেলেও এই বুয়া পাওয়া মুশকিল।"

জবেদার কথায় দুই ছেলে মেয়ে খিল খিল করে হাসতে লাগলো।

তখনি নিচ কুহুর কন্ঠ শুনা গেল।

----মা তাড়াতাড়ি নিচে আসো নাস্তা রেডি।

সবাই নাস্তার টেবিলে উপস্থিত। জবেদা খাবার বাড়ে দিচ্ছেন সবার পল্টে। তখন কুহু প্রশ্ন করলো,

--মা বাবা কই! তার কি মনে আছে? আমার আজ ভার্সিটি খোলা আছে? আমাকে যাওয়ার ভাড়া টা দিয়ে যায়নি।

জবেদা রুটি ছড়ে পল্টুর মুখে দিয়ে বলল,

---"তার ভালই মনে আছে, আজ নতুন বস আসবেন অফিসে তাই জলদি ছুটতে হয়েছে। টাকা আমায় দিয়ে গেছে।তুমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাস।"

ভার্সিটির সামনে এসে হাজির কুহু!গেটের বাহিরেই রাগর কটমট করে দাড়িয়ে আছে তানিয়া।কুহু হাত নাড়ায়।তানিয়া রাগে দু হাত কোমরে রেখে বলতে লাগে,,

---"এই তোর আসার সময়। সেই এক ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছি তোর জন্য"!

কুহু দুই হাত কানে গুজে বলল,,
--"সরি না বেবী।রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। "

--"জ্যাম তো তোর শ্বশুরবাড়ির মোয়া। দেরি হলে এক্সাম লাগে তোর। এক বাহানার কত দেশ মুখ ব্যথা করে না। এবার তো চেঞ্জ কর। "

কুহু জিভ কেটে বলতে লাগে,,

---"সরি বেবস"।আচ্ছা চল ভিতরে যাই। "

--"চল।"

গেট দিয়ে যখনি ঢুকতে নিবে তখনি একটি গাড়ি খুব গতিতে তাদের সামনে দিয়ে ক্রস করার সময় কুহু আর তানিয়ার সাদা কাপরে কাঁদা লাগিয়ে দেয়। রাতে ঝড় উঠেছিল খুব। যার ফলাফল স্বরূপ 
রাস্তার চার পাশে পানি জমে কাঁদা,কাঁদা।

তখনি কুহু রেগে বলল,

--"আরে আরে থাম। কোন শয়তানের নানারে। দিল দিল আমার ১০০০ টাকা দামের ড্রেসটার ১২ টা বাজিয়ে।জঘন্যতম লোক। "

তানিয়া বলল,

---"আজ আম্মা আর ঘরে ঢুকতে দিবে না। কান্না করে নতুন ড্রেসটা পরে এসেছিলাম।"

তানিয়া এবার বাচ্চাদের হে হে করে কান্না করে দিল।আর কুহুর উঠলো রাগ। সে কোনো কিছু না ভেবে পাশে থাকে একটি ইট নিয়ে ছুরে মারলো গাড়ির দিকে। এবং ঠাস করে মেরে দিল গাড়ির পেছনের গ্লাসটিতে।গাড়ির কাঁচগুলো ঝনঝন শব্দ করে ভেঙ্গে গেল।

তখনি তানিয়ে হাত টেনে ধরে বলল,,

---"কুহু বুদ্ধি লোপ পেয়েছে তোর? এটা কি করলি তুই। এখন এর ভরপাই না করতে চাইলে ভাগ কুহু।"

পালাতে নিল তারা। তখনি গাড়ি থেকে গাড়ির মালিক বের হয়ে বলল,,

-- "ইউ ডাফার?স্টপ? ডোন্ট মুভ? হাউ ডেয়ার ইউ?"  

 পিছন থেকে চংকারময় সুন্দর পুরুষালী কন্ঠ শোনা গেল। সে চেচিয়ে তাদের থামতে বলল। তারা থেকে ভয় ভয়ে পিছনে তাকালো তারা। তাকিয়ে থমকে গেল। ইস! কি সুদর্শন যুবক।হা করে তাকিয়ে রইল দুজন।তাদের ভাবনান্তরে ছেদ পরে সামনের অতি চমৎকার যুবকের চেচানোতে।

যুবকটি আবার চেচালো,

---"তোমার সাহস কি করে হয়? আমার ভাইটাকে আঘাত করার? ইউ কালপ্রিট গার্ল।"

কুহু আর তানিয়ে ভ্রু কুচকে একে অপরের দিক তাকায় বিস্ময় সুরে  বলতে লাগে,,

---"আমি তো এই গাড়ির কাঁচে আঘাত করছি। আপনার ভাই কই থেকে আসলো?"

যুবকটি বলল,,

--" আপনি আমার গাড়িতে কেন মারলেন? ভাইটা আমার কত কষ্ট পেয়েছে..!"

---" ভাল হয়েছে করেছি আপনি আমাদের ড্রেস দেখেন কি করেছেন? তাই আমি করেছি। হিসাব বরাবর!"

যুবকটি রেগে কুহুর হাত পিছনের দিক চেঁপে ধরলো।কুহু চিৎকার করলো,,

--"আমাকে ছাড়ুন! খবরদার! স্পর্শ করবেন না আমায়।"

তার সেদিকে যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।যুবটি কুহুকে কাছে এনে বলে,,

----"ইউ ব্লাডি মিডিল ক্লাস। তোমার ধারণা আছে?  আমার এই গাড়ি কতটা ব্যয়বহুল?  হুম।তোমাকে বেঁচলেও আমার গাড়ির ভরপাই হবে না ইডিয়ে গার্ল। সাধারণ জামার জন্য তুমি আমার গাড়ি, আমার ভাইকে আঘাত করবে।আর তোমাকে সাজিদ ইউসুফ ছেড়ে দিব? নো নেভার..!"

কুহু অবাক হলো। যুবকটির কথায়। গাড়ি তার ভাই।আর এর জন্য তাকে বেঁচে দিতে চাইছে। পাগল নাকি?আর এই সাজিদ ইউসুফটা আবার কে?

তখনি তানিয়া নামটি শুনে হন্তদন্ত হয়ে বিনতি সুরে বলল,,

---"সরি ভাইয়া ভুল করে ফেলেছি আমরা আমাদের ছেড়ে দিন"।

লোকটি কিহুর হাত ছেড়ে বলল,,

--"কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। তোমাদের আমি পুলিশে দিব। এখানেই দাড়াও। নরবে না একদম।আমার গাড়ির গ্লাস নষ্ট করেছেন, সুতরাং এর জন্য শাস্তি গ্রহন করতেই হবে।"

তখনি কলেজ গেট থেকে,  ইউসুফ, ইউসুফ বলে কতগুলো বড় ভাই আর আপু এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। সেই সুযোগে পালিয়ে গেল কুহু আর তানিয়া।

যুবকটি সেই ছেলে মেয়েদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে, পিছনে ঘুরে দেখে মেয়ে দুটো নেই।তা দেখে বাঁকা হাসলো ইউসুফ।
তখন আদিবের প্রশ্ন,,

---"একি হাল। সাজিদ ইউসুফের গাড়ির?"

ইউসুফ হেসে বলল,,

---"তোর ভাইয়ের সাথে জংলি বিল্লি দেখা মিল্ল।সে এ হাল করে গেছে।"

পাশে থাকা আজিম বলল,,

----ভাই তুই যেতে দিলি?

ইউসুফ ঠোঁটে রহস্যময় বাঁকা হাসি ফুটলো।মুখে বলল,,

----"যেতেই তো দিয়েছি ছেড়ে তো দেই নি।"

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।তখন পাশে থাকা জেনি বলল,,

---" তোমার উপর এই অ্যাটিটিউডের জন্যই ফিদা বেবী"

হাসলো ইউসুফ সানগ্লাস পড়ে হাটা ধরলো ভার্সিটির ভিতরে।তার পিছন পিছন সবাই।

এদিকে তানিয়ে আর কুহু দৌড়ে পালিয়ে পার্কের সাইডে এসে দাড়ায়। আর হাপাতে লাগে।তখন তানিয়া বলল,,

--" দোস্ত তুই জানিস,  তুই নিজের অজান্তে সাপের লেজে পা দিয়েছিস। "

কুহু কঁপাল কুচকে বলে উঠে,,

---"মানে? কি বলতে চাইছিস সাফ সাফ বলতো,  আমি এসব ধাঁধা বুঝি না।"

তানিয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলল,,

--"তুই শুনিসনি ভার্সিটির একটি বড় ভাই রয়েছে! যে তার উপর চোখ তুলে তাকালেো গর্দান কেঁটে নেয়?"

--" হে শুনেছি তো?"
--" আজ যার গাড়ির কাঁচ বা তার ভাইকে আঘত করে আসলি উনি সে।"

কুহু এবার কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল,,

---"লোকটি বলেছিল আমায় বেঁচে দিবে। সত্যিই যদি বেঁচে দেয়?"

তানিয়ে বলল,,

---"অসম্ভব কিছু নয়! "

এবার কুহুর ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছে। কি করবে এখন সে? সাজিদ ইউসুফ উরফ শয়তানের নানা যদি সত্যি তাকে বেঁচে দেয়? কে বাঁচাবে এই বেপরোয়া মানুষের থেকে?

—————

সেদিন বাসায় এসে....১০২ ডিগ্রি জ্বর এলো কুহুর। মুখে বার বার জ্বরের ঘরে বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছে,,

---"আমাকে বেঁচে দিবেন না। আমাকে  বেঁচে দিবেন না"!

পাশে বসে থাকা জবেদা চিন্তিত হয় জলপট্টি দিতে লাগলেন। কি বলছে তার মেয়ে, তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। কিন্তু এতোটুকু বুঝতে বাকি নাই যে, ওই খুব ভয় পেয়েছে। ভয় পেলেই জ্বড় এসে যায় গায়।  তিনি ভাবলেন জ্বড় কমলে জিগাসা করবেন।তাই সে চিন্তা বাদ দিলেন।

পরেদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে কুহুর মাথাটা এখনো চিনচিন ব্যথা।তখনি জবেদা আসলেন হলুদ মিশানো দুধ নিয়ে।তা দেখে নাক মুখ কুচকে বলল,,

---মা আমি এসব খাবো না। ইয়াক..!

জবেদা চোখ গরম করে বললেন,,

---খা নয়তো কাঁচা ডিম খাওয়াবো।

মার কথায় অসহায় মুখ করে চেয়ে রইলো। ছোট বেলায় যখন ঔষধ বা দুধ খেতে না চাইতো জবেদা এই গুলো খাইয়ে দিতেন মুখ চেপে।তাই আর কিছু না ভেবে খেতে লাগলো।

তখনি জবেদা প্রশ্ন করলো,

----এই তোরে কে বেঁচে দিতে চায়রে?

"বেঁচে দিতে চায়" কথাটা শুনে নাকে মুখে উঠে গেল দুধ।সাথে সাথে কাশতে লাগলো। তখনি জবেদা বেগম পিঠে চাপর দিতে দিতে বলল,

----আস্তে খাবি না। দেখ নাকে মুখে উঠে গেছে। সব সময় তাড়াহুড়া।

জবেদা বক বক করতে করতে গ্লাস নিয়ে চলে গেলেন..।তখনি ফোন করলো তানিয়া।ফোন তুলতেই বলতে লাগে,,

--দোস্ত কই তুই আসবি কখন?

---আমার জ্বড়। আসবো না আজ। 

---আচ্ছা তুই না গেলে আমিও যাব না। তুই রেস্ট কর!

তানিয়ে ফোন কাঁটতে নিল তখনি কুহু বলে উঠে,

--আচ্ছা শুন! দোস্ত আর ভাসর্টির নাম শুনলেই ভয় করছে যদি সেই তার ছিড়া, লম্বু খাসি কিছু করে?

তানিয়া চিন্তত সুরে বলল,,

---আমিও তাই ভাবচ্ছি এক কাজ কর কাল আমরা ক্ষমা চেয়ে নিব নে।

কুহু ভয়ে ভয়ে বলে,
--- মাফ কি করবে?যদি সত্যিই বেঁচে দেয়? দোস্ত তখন আমার কি হবে রে? আমি তোদের ছাড়া কেমনে থাকবো? তোরা আমাকে ভুলে যাবি না তো??

ফোনের ওপাশ থেকে অবাকের উপর অবাক হলো তানিয়ে তারপর রাগে বলল,,

---আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ কর। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল!  হে।  কাঁঠালের খবর নেই। তিনি তেল নিয়ে রেডি। তার কাছে মাফতো চা আগে?এমনও হতে পারে মাফ করে দিবে তোকে।তুই সব সময় বেমী বুঝিস তাই এই অবস্থা তোর।রাখ ফোন।তানিয়া ফোন কেঁটে দিল।

কুহু গম্ভীর মুখে বসে রইলো।

পরেদিন আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে ভার্সিটিতে ডুকলো তানিয়া আর কুহু।আশেপাশের পরিবেশ ঠান্ডা বুঝতে পেরে ক্লাসে চলে গেল তার। তানিয়ে শান্ত ভাবে ক্লাস করলেও অস্থির ছিল কুহু।ভয়ে ভয়ে প্রতিটি ক্লাস করে কেঁটেছে তার। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। তেমনি ঘটে গেল কুহুর সাথে। টিফিন ঘন্টা বাঁজতেই বের হয় কুহু আর তানিয়ে। ঠিক তাদের নাক বরাবর পার্কিন সাইডে গাড়ির উপর এক পা তুলে বসে গল্প গুজোগে মেতে আছে সাজিদ ইউসুফ। ইউসুফকে দেখে হার্ট দ্রুত গতিতে ছুটছে এই বুঝে বের হয়ে দৌড়ে দিব।তানিয়ে তখনি কুনি দিয়ে গুতো দিতেই ভাবনার দেশ থেকে ছিকটে পরে কুহু।সাথে সাথে বলে উঠে,,

---ওই গুতা গুতি করিস কেন?

তানিয়া অবাক হয়ে চেয়ে রইলো কতখন। তারপর কোমরে দু হাত দিয়ে বিরক্তি সুরে বলল,,

---আমি যে এতখন ধরে এত কিছু বললাম! কিছুই শুনিস নি তুই...?

কুহু ডানে-বামে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে কিছুই শুনেনি।তানিয়া আরো অবাক। এবার অবাকের সাথে দেখে দিচ্ছে রাগের ভাব। তানিয়ার যেন কুহুকে এখন টাস করে একটা বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন সঠিক সময় নয়। সে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ হজম করে বলল,,

---" আমার ট্রাভেল মেকার! ওই যে দেখ তোর যম বসে।এখন ওখাে যাবি সরি বলে চলে আসবি চল"।
বলেই দিল কুহুর হাতে টান।
কুহু হাত ছাড়িয়ে কিছুটা পিছু হেটে কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল,,

---" আমি যামু না রে দোস্ত! এই ব্যক্তিরে দেখেই দেখ আমার হাত কাঁপতাসে সাথে ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমারে মাফ কর। তুই বরং যা। মাফ চেয়ে চলে আয়।

--" এবার মারবো কষে এক চর। দোষ তোর তুই যাবি। আমার কিছু না। ভয়ে ভয়ে ক্লাস তুই করেছিস আমি না।এক কাজ কর তুই ভয়ে ভয়েই ক্লাস কর আমি বরং যাই।"

তখনি কুহু তানিয়াকে টেনে মনে মনে সাহজ যুগিয়ে বলে,,

--"যাইস না দোস্ত। আয় আমার সাথে। বলে সামলে এগিয়ে গেল তারা।"

_______♦

---কি চাই?

 ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো আদিব।

তানিয়া আমতা আমতা করে বলল,
---ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চাই আমরা।

তখনি পিছন থেকে আজিম বলে উঠে,

---" এই তোমরা সেদিন সাজিদ ইউসুফের ভাইকে আঘাত করেছিলে না! তো আজ কি চাই?"

কুহু এমনিতে ভয়ে জমে আছে, বার বার শুকনো ঢোক গিলছে সে। এদের কথা শুনে মনের মাঝে যতটুকু সাহস ছিল সব যেন ফুস হয়ে যাচ্ছে। গলায় যেন কথা আটকে গেছে।

অদের কথা বলতে না দেখে আদিব এবার ধমকে উঠলো।ধমকের সুরে কেঁপে উঠে দুজনেই। উঠবেই না কেন? ভার্সিটির সবচেয়ে ফেমাস আর ডেঞ্জারাস  গ্রুপের সামনে দাড়িয়ে আছে।মনে মনে দুয়া পরে বলল কুহু,

---মমমাফ চাইতে এসেছি আাামরা।

কথাটি বলতে দেড়ি। এদের গ্রুপে হাসির রোল পড়তে দেড়ি লাগলো না যেন।কুহুর এখন যেন কান্না করতে মন চাইছে।কোন দুঃখে যে বদের হাড্ডিদের কাছে আসলো।তখনি শুনা গেল পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠ,

---আদিব এদের আসতে দে।

পেপসি ক্যান খুলে মুখে নিয়ে এক ঢুক খেয়ে বলল  ইউসুফ,,

--২ মিনিট সময় দিচ্ছি যা বলার বলে বিদেয় হও..!

ইউসুফের কথায় মেজাজ চটে গেল তার।কিভাবে অপমানটা করছে তাদের। কঁপাল মন্দ থাকলে নাকি কুকুরো লাথি মারে।এই মুহুর্তে ইউসুফ অতি জঘন্যতম গালি দবতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু নাহ্ নিজেকে সামলাতে হবে এক বিপদের মাঝে আরেক বিপদ আসে যাবে তাই সে মুখে মিছে হাসির রেখে ফুটিয়ে বলে উঠলো,

---আম সরি ভাইয়া। ভেরি ভেরি সরি। আমি যদি আগে জানতাম আপনার গাড়ি কখনো ইট ছুড়তাম না। আসলে আমার ১ মাসের পকেট মানি দিয়ে জমাটা কিনেছিলাম তাই রাগ উঠে গেছে। আম সরি।

ইউসুফ এবার পূর্ণ নজড় মেলে তাকিয়ে বলল,,

---"তোমাকে আমার মাফ করতে বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। আব এর জন্য তোমায কিছু করতে হবে যেন আমি তোমায় মাফ দেই"!

কুহুর আরো রাগ লাগচ্ছে কিভাব বাবা গো। অন্যকেউ হলে হাব ছুটিয়ে দিতোম কিন্তু এই ব্যটার সাথে কে লাগতে যাবে।তাই বলল,

---"আমি এমন কি করতে পারি যাতে আপনার আমাকে মাফ করতে ইচ্ছে করবে?"

ইউসুফ কিছু ভাবলো তারপর বাঁকা হেসে বললো,

---"এক কাজ আছে আমার কাছে তোমার জন্য।"

---কি?

---"তোমাকে আমার বেবীকে সামলাতে হবে।"

বেবী শুনে চমকে উঠলো তানিয়া আর কুহু। একে অপরের দিক তাকিয়ে দুজন। এই ছেলে বিয়েও করে নিয়েছে আবার বাচ্চাও আছে। মুখ ফসকে বের হয়ে এলো কুহুর,

---আর ইউ মেরিড?

ইউসুফ চোখ বড় বড় করে বলল,

----হুয়াট?

---না মানে বেবীর কথা বললেন যে?

ইউসুফ এবার ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফেলল। তারপর নিজেকে সামলে বললো,

---আদিব বেবী কে নিয়ে আয়।

আদিব কিছুক্ষণ পর একটি লোমশ কুকুর নিয়ে হাজির।কুহু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে। কুকুরটি ইউসুফ কে দেখে লাফ মেরে তার কোলে উঠে গেল। কুকুরটিকে আদর করতে করতে বলল ইউসুফ,

---ওলে লে মাই বেবী।  ইউ মিসড মি?

কুহু আর তানিয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে জোরে বলল,,

---বেবী।

ইউসুফ হেসে বলল,,

---হে আমার বেবী। একেই সামলাতে হবে আজ ভার্সিটি ছুটির আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।

 কুহু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,,

---ইম্পসিবল!

--মাফ চাইতো? 

কুহু উপর নিচ মাথা নাড়ায়। ইউসুফ হেসে বলে,,

---গুড। কাজে লেগে পর। বলে কুহুর হাতে ধরিয়ে দিল।

কুহু ভয়ে ভয়ে কুকুর টির কাছে যেতেই।কুকুরটি ভো ভো শুরু করে দিল জোরে। যা দেখে কুহু দৌড় দিল ভয়ে। ছোট থেকে ভয়ানক রকমের ফোবিয়া আছে তার কুকুর নিয়ে।তার পিছন পিছন ইউসুফের বেবীও।  পুরো ভার্সিটির ধাওয়া করেছে তাকে। এই বেবী। এই বেবীর এতো ঝাঁজ আগে জানতো না কুহুর।

এদিকে তানিয়া চেচিয়ে বলতে লাগে,,

---প্লীজ আপনার বেবীকে থামন। কুহু কুকুর ভয় পায় অনেক।

সেদিকে যেন কারো খেয়াল নেই।
এদিকে ভার্সিটির সবাই হেসে কুট কুট। এক পর্যায়। কুহু দুম করে ইটে বেজে পরে গেল। হাত পায় ব্যথা পেল। কুহু কুকুরের দিক চেয়ে কেঁদে দিল।কুকুর টা কুকুর কাছে এসেই আরো জোরে ভো ভো করতে লাগলো।  কুহুর ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেল। গলায় শুকে গেছে। ভয়ে তার হাত পা জমে কাঁপচ্ছে। আর সেইতে না পেরে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন