বকুল ফুলের মালা - পর্ব ০৮ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৫!! 

সকালবেলা মায়রার ঘুম ভাঙলো কপালে আলতো ঠোঁটের স্পর্শে। চোখ খুলেই সীমান্তকে মুখের একদম কাছে থেকে থতমত খেয়ে গেল মায়রা। সীমান্ত ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ঝুলিয়ে আরেকবার আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। 

-গুড মর্নিং বউটা। 

-মর্নিং।

-মায়রা? ইউ নো ইউ আর সো বিউটিফুল--। রাতটা অসাধারণ ছিলো---।

সীমান্তের কথাটা শুনেই মায়রা চোখ নামিয়ে নিলো সাথেসাথেই। লোকটার মুখে এমন কথা শুনে মায়রার মুখটা অন্য সময়ের মতো লজ্জায় লাল হয়ে গেল না। অবশ্য আয়ান আর সীমান্ত দুজনই আলাদা মানুষ। আর দুজনের অস্তিত্বই মায়রার জীবনে আলাদা। তাই হয়তো দুটো মানুষের কথায়, কাজে মায়রার অনুভূতিগুলোও ভিন্ন হয়। আয়ানের সামান্য একটা কথা মায়রার মনের মধ্যে যে লজ্জার ঝড় তুলতে পারে, সেটা সীমান্তের গভীর স্পর্শগুলোতেও কখনো হবে কিনা কে জানে। একজনকে হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবেসে অন্য একজন অপরিচিত, অজানা মানুষকে শরীর বিলিয়ে দিলে সম্ভবত এমনই হয়। না মেনে নেওয়া যায়, না মানিয়ে নেয়া যায়। কি একটা অস্বস্তি মনের মধ্যে কাঁটার মতো বিঁধে সবসময়। সেটাই এই মূহুর্তে ফিল হচ্ছে মায়রার৷ একটা চাপা অস্তিত্ব। না এই উদ্ভট মেজাজের মানুষকে মানতে পারছে, না আয়ানের কাছে ফিরে যাওয়ার আর কোন উপায় আছে মায়রার। জীবন ওকে নিয়ে যে কি খেলায় মেতেছে সেটাই মায়রার কাছে পরিষ্কার না। 

সীমান্ত মায়রার নিচু হয়ে যাওয়া মুখটা কিছুক্ষণ দেখে মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো।

-ম্যাডাম? কি এতো ভাবো সবসময়?

-আমমম-----।

-শশশশ৷ দেখি হাতটা? ইশ! কতোটা পুড়েছে দেখেছ? 

-কিছু হবে না---।

-জি ম্যাডাম--। একটু কেয়ারফুল হয়ে কাজ করবেন কেমন? 

-হুম----। তুমি অফিসে যাবে না?

-হুম---। এইতো শাওয়ার নিয়েই বের হবো---।

-আচ্ছা আমি উঠছি---। 

-জি না ম্যাডাম--। 

-তোমার জন্য নাস্তা রেডি করতে হবে তো?

-এই পোড়া হাত নিয়ে আপাতত কিছু করার দরকার নেই--। চুপ করে শুয়ে থাকো--। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। উমমম। কথা না কোনো--। 

-হুম---।

মায়রাকে নিজের বুকের উপর থেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মুখের উপরে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো সীমান্ত। তারপর আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। আর মায়রাও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুজলো। ক্লান্তিতে আবার চোখ বুজে আসছে মায়রার। কিন্তু মনটা পড়ে আছে অন্য জায়গায়। গতকাল একবারও আয়ান একটাও কল দেয় নি। এমনকি একটা মেসেজ পর্যন্ত করে নি। অবশ্য আয়ান যে মায়রার জন্মদিনটা ভুলে যায় নি সেটা মায়রা বেশ ভালো করেই জানে। মানুষটার কল বা মেসেজ না করাটাও হয়তো যুক্তিযুক্ত। কিন্তু তবু মায়রার মনটা মানতে চাইছে না। ইচ্ছে করছে একটা বারের জন্য মানুষটার কণ্ঠটা শুনতে। 

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মায়রার চোখের কোণ বেয়ে পানি ঝড়ছিলো। হঠাৎ গালে কারো হাতের স্পর্শে চমকে চোখ মেলে তাকালো মায়রা৷ সীমান্ত মায়রার চোখের পানিটা মুছে দিচ্ছে দেখে মায়রা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে বসলো বিছানায়। গায়ে চাদরটা একটা ঠিক করে নিলো মায়রা। সীমান্ত মায়রার গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো।

-কি হয়েছে মায়রা? কাঁদছো কেন?

-উঁহু--নাহ---।

-তোমার এই এক দোষ মায়রা৷ কিছু ক্লিয়ার করে বলোই না আমাকে--। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছ তবু বলছ কিছু হয়নি--। ধ্যাত--।

-------------------------------

-বেশি জ্বালা করছে? ব্যথা পেয়েছিলে রাতে? আমি খেয়াল করি নি রাতে--। আম সরি---। আচ্ছা এখন শাওয়ার নাও---। ওষুধ লাগিয়ে দিবো--। কই ওঠো? জলদি?

-হুম--। 

-এই মায়রা? শোনো?

-হুম? কি?

-উঁহু--। কিছু না। যাও---।

সীমান্ত ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে মায়রার মুখটা উঁচিয়ে ধরে আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়রা থমকে সীমান্তের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর সীমান্ত ঠোঁটের কোণে একটা বিচিত্র হাসি ফুটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মায়রা অবাক হয়ে সীমান্তের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই লোকটাকেই মায়রা বুঝতে পারে না। তার উপরে এই লোকের এই হাসির রহস্য ভেদ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেই মায়রার নেই। লোকটার মনে যাই চলুক সেটা সে নিজের মতো করে মায়রার উপরেই যে খাটাবে সেটা নিয়ে মায়রার মনে কোন সন্দেহ নেই। তাই আপাতত সীমান্তের এই হুট করে বদলে যাওয়া নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে একটা শাড়ি নিয়ে শাওয়ার নিতেই চলে গেল মায়রা৷ জীবন ওকে এমনিতেই অনেক সারপ্রাইজ দিচ্ছে। এবার নাহয় আরেকটা সারপ্রাইজ এ্যাড হবে জীবনের পাতায়। এ আর এমন কি?

শাওয়ার নিয়ে শাড়িটা পড়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো মায়রা৷ ভেজা চুলে টাওয়ালটা পেঁচিয়ে নিতেই সীমান্ত হুট করে মায়রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মায়রা একবার কেঁপে উঠে ঘুরে সীমান্তের দিকে তাকালো। সীমান্ত মায়রার কোমড় টেনে নিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

-হ্যালো বিউটিফুল? শাওয়ার নিয়ে তো আরো মোহময়ী লাগছে--। কি প্ল্যান করছো বলো তো? আজকে অফিসে যেতে হবে তো ম্যাডাম--।

-আমমম---।

-শশশশশ৷ নাস্তা করবে এসো? 

-আমি নাস্তা রেডি করছি---।

-আরে পাগলি--। বসো তো এখানে চুপ করে--।

-হুম---। 

সীমান্ত মায়রাকে বিছানার উপরে বসিয়ে দিয়ে একটা প্লেট সামনে ধরলো। মায়রা প্লেটের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সীমান্তের মুখের দিকে তাকালো। প্লেটে ব্রেড টোস্ট আর ডিম পোচ করা আছে। সাথে টুকরো করে কাটা কিছু ফল। সীমান্ত ভ্রু নাচিয়ে আবার একটু হাসলো। তারপর মায়রাকে খাইয়ে দিয়ে শুরু করলো। মায়রা এবারেও একটু অবাক হলো। তবু ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ঝুলিয়ে সীমান্তের হাত থেকেই খেয়ে নিলো চুপচাপ। এই লোকটাকে বাধা দেওয়া আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা সমান। তাই যা হচ্ছে সেটাই হতে দিচ্ছে মায়রা৷ মায়রাকে খাইয়ে দিতে দিতে সীমান্ত নিজেও খেয়ে নিয়েছে। তারপর প্লেটটা রান্নাঘরে রেখে এসে মায়রার হাতের লাল হয়ে যাওয়া জায়গাটায় ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিলো। তারপর মায়রার চুল থেকে ভেজা টাওয়ালটা খুলে ভালো করে চুলটা মুছিয়ে টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিলো। তারপর এসে মায়রার চুলগুলো ঠিক করে দিলো।

-মায়রা? আমি তাহলে অফিসে যাচ্ছি। তুমি সাবধানে থেকো কেমন?

-হুম---।

-আর শোনো? খাবার পাঠিয়ে দিবো দুপুরে--। পোড়া হাত নিয়ে আগুনের কাছে যেতে হবে না। কেমন?

-লাগবে না---।

-মায়রা! লাগবে কি লাগবে না সেটা আমাকেই ভাবতে দাও প্লিজ? আমি লাঞ্চ পাঠিয়ে দিবো। লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নিবে--। নইলে কিন্তু ভালো হবে না----। 

-আচ্ছা---। ঠিক আছে।

-এইতো গুড গার্ল। আসি কেমন?

-হুম---।

সীমান্ত আরকবার মায়রার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেছে৷ আর মায়রা বারান্দার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে বাইরের ব্যস্ত শহরটা দেখায় মন দিলো। আজ মায়রার কোন ব্যস্ততা নেই। তাই একমনে ব্যস্ত শহরের ছুটোছুটি দেখছে। সবাই ব্যস্ত, শুধু মায়রারই এখন কোন কাজ নেই। আর কোন ব্যস্ততাই নেই। একটা গা ছাড়া ভাব তৈরি হয়েছে মায়রার মধ্যে। এতোটাই গা ছাড়া যে এতোক্ষণ ধরে যে ওদের বাসার দরজায় কেউ ঘনঘন কলিংবেল বাজাচ্ছে সেটা মায়রার কান পর্যন্তই পৌঁছালো না। বাইরের অপেক্ষারত মানুষটা যে কতোটা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আছে, সেটা মায়রা জানতেও পারলো না। 

১৬!! 

আরো পর পর দুবার কলিংবেলের শব্দ ভেসে আসার পর মায়রার হুঁশ হলো। সাধারণত এই সময়ে বাসায় কেউ আসে না৷ তাই কলিংবেলের শব্দটাকে এতোক্ষণ খুব একটা পাত্তা দেয়নি মায়রা। কিন্তু এবার কলিংবেলের শব্দের সাথে কারো জোরে জোরে দরজাটা ধাক্কানোর শব্দটাও যখন যোগ হলো সাথে তখন মায়রার একটু কৌতূহলী হয়েই বারান্দা থেকে আস্তে-ধীরে উঠে এসে দরজাটা খুললো। আর দরজাটা খোলার সাথে সাথেই কেউ একজন ঝড়ো বাতাসের মতো ওকে জড়িয়ে ধরলো৷ মায়রা চমকে উঠলো। কি বা কে কিছুই বুঝতে না পারলেও এই স্পর্শটা মায়রার ভিষণ পরিচিত। তাই চুপ করে একটু হালকা করে জড়িয়ে ধরলো মানুষটাকে।

-মায়ু? দরজা খুলছিলি না কেন? কতোক্ষণ ধরে বেল বাজাচ্ছি জানিস? আমি কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম---!

-মামনি? তোমরা?

আভা এতোক্ষণে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে মায়রাকে ছেড়ে দিয়ে মায়রার গালে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিলো।

-মায়ু? এ কি অবস্থা তোর? কি হাল করেছিস নিজের? চোখ বসে গেছে কেমন? চোখে মুখে আগের সেই উজ্জ্বলতা নেই! কি থেকে এ কি হয়েছিস বল তো? তোকে তো চিনতেই পারছি না----।

-মামনি? নিজের মেয়েকে চিনতে পারছ না? আর কি এমন হয়েছে? একটুও রোগা হইনি দেখছ না? অনেক দিন পরে দেখলে তো তাই হয়তো----।

-তুই আমাকে বুঝাচ্ছিস এসব? নাকি নিজেকে?

-বাদ দাও না মামনি এসব--। মামা কোথায় গো? 

-আছে---৷ নিচে গেছে---। 

-বাসায় এসো---। এসো? 

-হুম----।

মায়া আভাকে নিয়ে বাসায় ঢুকবে এমন সময় দরজার সামনে থেকে সামির গলা শোনা গেল। আর সেটা শুনেই মায়রা ছুটে এলো সামির কাছে।

-আভা? তুমি থাকো৷ আমি আমার এক বন্ধুর বাসা থেকে ঘুরে আসছি। কল করলে বিল্ডিংয়ের নিচে নেমে এসো--। যাই এখন---।

-মামা? তোমার মায়রার উপরে এতো রাগ? কথা না বলেই, তাকে না দেখেই চলে যাচ্ছো?

-সরি মা। আপনি হয়তো জানেন না। মায়রা বলে কারো সাথে আমার কোনো সম্পর্কও নেই, পরিচয়ও নেই। আর আমি এখানে আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। তার কাজ শেষ হলেই তাকে নিয়ে আবার ফিরে যাবো চট্টগ্রাম---। আর কারো সাথেই আমার কোন কাজ বা কথা নেই এখানে---।

-মামা? এতো পাষাণ হতে পারছো তুমি? তুমি তোমার মায়রাকে এভাবে করে-----।

-দেখো মেয়ে--। তোমার হয়তো চিনতে কোথাও ভুল হচ্ছে--। আর দয়া করে আমাকে মামা বলে ডেকো না। আমার একটাই ভাগনি। সে তার স্বামীর সাথে চট্টগ্রামে আছে। আর ভালোই আছে-----।

-ঠিক আছে--। ডাকবো না। আর ডাকবো না--। কক্খনো না----।

কথাটা বলেই মায়রা এক ছুটে রুমে চলে গেল কাঁদতে কাঁদতে। সামিও অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে কথা বলছিলো। শেষের দিকে মেয়েটার কান্নাভেজা গলাটা শুনে সামির নিজের কাছেই খারাপ লাগলো। আভা এগিয়ে এসে সামির পাশে দাঁড়ালো। 

-মেয়েটাকে এভাবে কেন কাঁদাচ্ছো সামি? ওর দিকে একটা বার তাকিয়ে দেখলে টের পেতে মেয়েটার উপর দিয়ে কি ঝড় যাচ্ছে---। 

-ও তো চাইলেই নিজের এই পরিণতিটা আটকাতে পারতো আভা। ও নিজেই চায় নি--৷ 

-ও কাজটা কেন করেছে সেটা তুমিও জানো আমিও জানি--। আর তাছাড়া এখন এসব বলেও তো কোন লাভ নেই তাই না? যা হয়ে গেছে সেটা আমরা বদলাতে পারবো না। তাহলে মেয়েটার কষ্টটাকে আরো না বাড়িয়ে অন্তত কিছুক্ষণ ভালো করে কথা তো বলতে পারি? তাতে অন্তত মেয়েটার কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারবো--। তুমি তো খেয়ালই করলে না মেয়েটার হাতটা কতোখানি পুড়েছে--। কেমন দগদগে হয়ে গেছে-----৷ 

-----------------------

-তোমার ইচ্ছে হলে ভিতরে আসো। না হলে এসো না। আমি আমার মেয়ের কাছেই যাই---। আবার কাঁদছে মেয়েটা---।

আভা বাসার ভিতরে মায়রাকে সামলাতে চলে গেল৷ আর সামি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বাসায় ঢুকলো। দরজাটা বন্ধ করে ভিতরের রুমের দিকে পা বাড়ালো৷ মায়রার ফোঁপানোর শব্দটা তার কানেও এসে পৌঁচ্ছাছে। আর সেই কান্নার শব্দে সামির দুনিয়াটাই যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে আগের দিন বিকেলে যে আয়ান বেরিয়েছে আর বাসায় ফিরে নি রাতে। সকালেও আয়ানের বাবা মা অনেকবার কল করেও আয়ানের সাথে কোন যোগাযোগ করতে না পেরে শেষে আরিশাকে কল করলো। আয়ানের মায়ের নাম্বারটা আরিশার কাছে ছিল। আরিশা কলটা রিসিভ করতেই কান্নার শব্দ শুনে ঘাবড়ে গেল।

-আন্টি? কি হয়েছে? কাঁদছেন কেন?

-আরিশা মা? তুমি কি জানো আমার ছেলেটা কোথায় আছে? কাল বিকেলে কেমন হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়েছে ছেলেটা। এখনো ফিরে নি বাসায়---।

-আন্টি আপনি কাঁদবেন না প্লিজ। বলে যায় নি যাওয়ার সময়?

-না মা--। কাল সকাল থেকে যতক্ষণ বাসায় ছিল দরজা বন্ধ করেই বসে ছিল--। শুধু বলেছে অফিসে যাবে না৷ তাই ভেবেছিলাম হয়তো ঘুমাচ্ছে--। কিন্তু ছেলেটা সারাদিন কিচ্ছু খায় নি পর্যন্ত--। যাওয়ার সময়ও কতোবার ডেকেছি। ফিরে তাকায় নি পর্যন্ত ছেলেটা৷ 

-আয়ান ওর গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছে?

-হ্যাঁ মা---। কি হয়েছে বলো তো ওর? গত কয়েকটা মাস ধরেই দেখছি ছেলেটা কেমন একটা হয়ে গেছে৷ হয় কাজে ডুবে থাকে। হয়তো কোথায় একটা চলে যায়--। আগের মতো একটু হেসে কথাও বলে না। হেসে কি ও তো এখন কথাই বলে না। কখন আসে কখন যায়, কি খায় না খায় কিছুই জানতেও পারি না। কি হয়েছে মা তুমি কি জানো?

-হয়তো কিছু নিয়ে টেনশনে আছে। আচ্ছা আন্টি আমি দেখছি কি হয়েছে। আপনি প্লিজ টেনশন করবেন না। 

-ওকে একটু বলো না ফিরে আসতে? যাই হোক আমরা সবাই মিলে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করবো--।

-জি আন্টি--। বলবো----।

আরিশা কলটা কেটে দিয়ে ঘুমন্ত তাওহীদের মাথার কাছে গিয়ে বসলো। লোকটা সারা রাত একটু ঘুমাতে পারে নি। সেটাও অবশ্য আরিশার কারণে। রাতে খিদের কারণে ঘুমই আসছিলো না আরিশার। তাই ভদ্রলোক মাঝরাতে ওকে নুডলস রান্না করে খাইয়েছে, তারপর আরিশার চুলে বিলি কেটে দিয়েছে অনেক রাত পর্যন্ত। আরিশা অবশ্য তাওহীদের পায়ের উপরে শুয়েই ঘুমিয়ে গেছে। সকালে উঠে দেখলো তাওহীদও সেইভাবেই বিছানায় হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে গেছে। আরিশা নিজের জিভ কেটে সরে আসতেই ঘুমের ঘোরেই মানুষটা বিছানায় ঠিক করে গা এলিয়ে দিয়েছে। এখন তাই মানুষটাকে জাগাতে কেমন একটা ইতস্তত করছে আরিশা। কিন্তু আয়ান রাত থেকে বাসায় ফিরে নি খেয়াল হতেই আরিশা তাওহীদের গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকলো।

-তাওহীদ? ওঠো না?

-হুম?

-তাওহীইইইইইইদদদ?

-হুম? কি? কি হলো? আরু? কি হয়েছে? ঠিক আছো তুমি?

তাওহীদ তড়িঘড়ি করে উঠে আরিশার গালে হাত ছুঁইয়ে কথাগুলো বলছে দেখে আরিশার একটু খারাপ লাগলো। লোকটা ওকে নিয়ে কতোটা টেনশন করে!

-সরি--। আমি ঠিক আছি-। এভাবে ডাকার জন্য সরি---।

-আরে নাহ--। পাগলি--। কি হয়েছে? খিদে পেয়েছে? ইশ! অনেক বেলা হয়ে গেল না? দাঁড়াও--। তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

-উফ--। খাবার লাগবে না। তুমি আমার কথা শোনো--। আয়ান কাল বিকেল থেকে বাসায় ফিরে নি-। গাড়ি নিয়েই বের হয়েছে--। এখন কলও ধরছে না--। একটু দেখো না ও কোথায়?

-আচ্ছা-। দাঁড়াও--। আমি লোকেশন ট্রেস করতে বলছি--। কাল কি হয়েছিল?!

-সেটাই তো জানি না--। একটু তাড়াতাড়ি করো না প্লিজ?

-হ্যাঁ গো কল করছি--। তুমি টেনশন করো না--। পেয়ে যাবো আয়ানকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। 

-হুম----।

তাওহীদ নিজের পরিচিত কয়েকজনকে আয়ানের মোবাইল নাম্বার আর গাড়ির নাম্বার পাঠিয়ে ট্রেস করতে বললো। পরিচিত বেশ কয়েকজনের সাথেই কথা বলে আয়ানকে খোঁজায় লেগে গেল তাওহীদ। আর আরিশা বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি এমন হলো যে ছেলেটা এভাবে গুম হয়ে গেল! তবু আরিশা মনে মনে শুধু একটাই প্রার্থনা করছে। আয়ান যেন উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন