দরজায় খট খট শব্দ হচ্ছে সেই কখন থেকে।কুহু মাত্রই গোসল করে বের হয়েছে। আপাদত বাসায় কেউ নেই। আসবেনা এখন এটাই তার ধরণা।কারণ মা গেছে পল্টুকে স্কুলে নিয়ে, বাবা অফিসে, আর তিন্নি কলেজে। তাহলে কে আসলো?? ভাবতে ভাবতেই দরজার ছোট ছীদ্র দিয়ে তাকালো। নাহ কেউ নেই। ফিরে আসতে গিয়ে আবার শব্দ হলো।এবারোও কেউ নেই। ভয় লাগচ্ছে কুহুর মারাত্মক রকমের। ধীরে ধীরে দরজা খুলে চমকে উঠলো সে,
দরজার বাহিরে ইউসুফ দাড়িয়ে।কুহুকে দেখে মুচকি হাসলো। এই হাসি ঝড় তুলে দিল মনের মাঝে ভয়ের।ঘামতে লাগলো সে। তার তো পুলিশ স্টেশনে থাকার কথা সে এখানে কিভাবে??তুহিন স্যারতো বলেছিল ওর বের হওয়া ইম্পসিবল। তাহলে?কাঁপা কাঁপা কন্ঠ বলে উঠল,,
---আপনি এখানে?আপনি তো?
---পুলিশ স্টেশনে থাকার কথা?
কুহু চুপ।
ইউসুফ বলল,,
--আমিতো থাকতেই চেয়েছি। তারাই রাখলো না।
ভিতরে আসতে বলবে না?
--বাসায় কেউ নেই! আপনি আসুন!
বলে গেট লাগিয়ে দিত নিলো কুহু। ইউসুফ বাঁকা হেসে দরজা হাত দিয়ে আটকে ধরলো। কুহু বলল,,
---কি করছেন? দরজা ছাড়ুন।
---উম হুম। না। তুমি সরো আমি ভিতরে আসবো।
---আমি ঢুকতে দিব না।
--জোর দেখাচ্ছো?আমার সাথে পারবে?
কুহু কিছু না বলেই জোরে লাগিয়ে দিতে নেয় দরজা।সাথে সাথে ইউসুফ দরজা ঠেলে দিতেই কুহু ধাম করে নিচে পরে গেল।আর কোমড়ে ব্যথা পেয়ে "আহ" করে উঠলো।ইউসুফ কুহুর দিকে এগিয়ে গিয়ে এক পা গেড়ে নিচে বসে বলল,,
---কেন আটকাতে গেল? দেখ প্রতিবারের মতো তুমি পরে গেল।বাই দ্যা ওয়ে, মনে হচ্ছে গোসল করেছো? তোমাকে খুব সুন্দর লাগচ্ছে।বলে একটি ঝুঁকলো ইউসুফ।
কুুহ দু হাতে ভর দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে যেতে যেতে বলল,,
---কি চাই আপনার? কেন এমন করছেন? চলে যান প্লীজ।
ইউসুফ আরো কাছে গিয়ে বলল,,
---আমার তোমাকে চাই।তোমার জন্য করছি এমন।যাবো বাট তোমাকে নিয়ে বলেই কোলো তুলে নিলো ইউসুফ।
হটাৎ ইউসুফের এমন অাক্রমনে শার্টের কর্লারে মুঠ করে ধরে ভয়ে। চোখ বন্ধ করে নে সে।তা দেখে হেসে দেয় ইউসুফ।কুহু হাসির শব্দে ছুটা ছুটি শুরে করে ইউসুফের যেন সেদিকে খেয়াল নেই। সে হাঁটা ধরলো।কুহু চেঁচিয়ে বলল,,
---কই নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ছাড়ুন!
ইউসুফ কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
---হানিমুন করতে। বলে চোখ টিপ মেরে বাঁকা হাসলো।
ইউসুফের কথায় থম মেরে গেল কুহু। কি বলছে এই লোক।ইউসুফের কুহুর এই ফেইস দেখে মজা লাগচ্ছে। ইউসুফ কুহুর রুমে এসে খাটে বসিয়ে দিল কুহুকে।কুহু ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। লোকের মতলব কি বুঝতে পারছে না সে!ইউসুফ কুহুর মাথা থেকে তোয়াল খুলে নিল। ভিজে চুল থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।যা টানচ্ছে ইউসুফকে।কুহুর আধ ভিজে জামা শরীরের সাথে লেপ্টে যা কুহুকে আবেদনময়ী করে তুলেছে।ইউসুফ তোয়াল নিয়ে কুহুর চুল মুছতে লাগলো। ইউসুফের হাতের স্পর্শ ঘারে লাগতেই কেঁপে উঠলো কুহু আর বিছানার চাদরে মুঠ করে ধরলো।আবার যখন গলায় ছোঁয়া লাগতেই সারা শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগলো।শরীরের সাথে কাঁপচ্ছে ঠোঁট দুটো।চোখ বন্ধ করে আছে কুহু। এসব কিছু দেখে কন্ট্রোললেস হয়ে পরেছে ইউসুফ। সেই কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করছে খুব। এই কাঁপা ঠোঁটে স্বাদ নিতে ইচ্ছে করছে তার।সে নিতেই পারেম কে আটকাবে? ভেবেই কুহুর গলা ভেদ করে কানের পিছনে হাত দিয়ে মুখের কাছে টেনে এনে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।কিহু চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইল। ইউসুফ কুহুর ঠোঁটে স্বাদ নিতে ব্যস্ত।প্রথমে চুমি খেলেও এবার শুষে নিতে শুরু করলো ঠোঁট। কুহু এদিকে হাত দিয়ে ধাক্কানো শুরু করে দিছে। তার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। কুহু বার বার ঠেলে দূরে সরানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছে। ইউসুফ শান্তিতে কিস করতে পারছে না। তাই হাত দুটো পিছনে মুছড়ে ধরলো।কুহুর ব্যথা লাগচ্ছে। সহ্য করতে না পেরে কান্না করে দিল সে। ইউসুফ এতে বিরক্তি হয়ে ধাক্কা মেরে খাটে ফেলে দিল।তারপর গাল টিপে ধরে রাগে বলল,,
---এত ছুটাছুটি কেন করিস? আমার কাছে আসলেই ছুটাছুটি শুরু হুম? আর সবার সাথে ঢলাঢলি করতে খুব মজা তাই না...?
কুহু ব্যথায় কথা বলতে পারছে না।কুহু কান্না করতে লাগলো। ইউসুফের গায়ে রি রি করছে রাগে।এই মেয়েটা এমন কেন?? তাকে দেখলেই দূরে পালায়??
বাহির থেকে জবেদার আওয়াজে পিছনে ফিরে ইউসুফ। ইউসুফে হাত আলগা হতেই।কুহু ধাক্কা মেরে তার মার কাছে চলে যেতে নেয়।তখনি ইউসুফ হেচকা টান দিয়ে বুকের উপর ফেলে দেয়। দু বাহু শক্ত করে ধরে বলে উঠে,,
---ব্যাড ম্যানার্স বাবুইপাখি। আমাকে বাই না বলে চলে যাচ্ছো? এটার জন্য শাস্তি পেতে হবে যে তোমায়। কুহু চোখ বড় বড় করে বলতে লাগে,,
---প্লীজ আমায় ছাড়ুন। পায়ে পড়ি আপনার।
---এটা কি বললা! তুমি থাকবে সব সময় আমার বুকে। পায়ে কেন পরবে??
কুহু বুঝে গেছে এই সাইকোর সাথে পাড়া যাবে না। সে এবার জোরে চিল্লিয়ে জবেদাকে ডাকতে লাগলো। যা দেখে রাগ বেরে গেল ইউসুফে। রাগে গলার মাঝে কামড় মারলো জোরে। কুহু আর্তনাদ করে উঠলো।জবেদা ছেলেকে নিয়ে বাসায় এসে দেখে দরজা সটান করে খুলা। চোর, ডাকাত এসে সব নিয়ে গেলেও কেউ টের পাবে না। তাই বকতে লাগলেন মেয়েরকে।তখনি কুহুর চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে আসে কুহুর। এসেই যা দেখলো জবেদার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।কেউ কুহুকে ঝাঁপটে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে আছে।মাকে দেখে আরো জোরে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।জবেদা কাছে গিয়ে ছোটাতে ট্রাই করলো ব্যর্থ হলো। তিনি পিছন থেকে ইউসুফকে ধাকিয়ে যাচ্ছে। চুল পরিমাণ নড়ছে না সে। এদিকে কুহু ব্যথা সহ্য করতে পারছে না। মনে হচ্ছে কেউ মাংস তুলে নিচ্ছে। এক পর্যায় ছেড়ে দিল কুহুকে।কুহুর গলা থেকে রক্ত পরছে যা দেখে আত্মকে উঠে জবেদা! ছেলেটা রক্ত খেক পিশাচ মনে হচ্ছে।কুহু ছাড়া পেয়ে জবেদার পিছনে লুকালো। ইউসুফ তার ঠোঁট থেকে রক্ত মুছতে মুছতে জবেদাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
---সিল মোহর দিয়ে গেলাম শাশুড়ি আম্মা।বলে চলে গেল ইউসুফ।
জবেদা হতভম্ব হয়ে গেল। এমন সাইকো ছেলের সাথে কিভাবে বিয়ে দেয়ার কথা ভাবতে পারেন ফয়সাল ভাই। তার মেয়েকেই বা কিভাবে বাচ্চাবে।একটাই রাস্তা খোলা। তারেকের সাথে কথা বলতেই হবে।এ আজ ঘর পর্যন্ত এসে এসব করে গেছে। বড় কিছু করবে না তার গ্যারান্টি কি?
কুহুর কান্নার বেগ বেড়েছে মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না করছে সে।ভয়ের রেশ এখনো কাঁটেনি তার। জবেদা গলায় ব্যান্ডেজ করে দিল। দাঁতে দাগ বসে গেছে।জবেদাও কান্না করছে। মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। কি করবেন সে??তারেকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছেন তাড়াতাড়ি জবেদা। যা করার রাতের মাঝেই করতে চান তিনি। আর কোনো কথা শুনবেন না তিনি। মেয়ে বেঁচে থাকলে পড়াশুনা করতেই পারবে।হে বেঁচে থাকলে। যেভাবে ভয় নিয়ে কাঁটাতে হচ্ছে তাকে সেভবে মৃত্যু অনিবার্য!!
—————
লম্বা হয়ে শুয়ে আছে কুহু।গলায় এখনো ব্যথায় টিম টিম করছে। গায়ে জ্বড় পুরে যাচ্ছে। চোখ দুটো লাল সাথে জ্বলছে খুব।বার বার মনে পরছে দুপুরবেলার ঘটনাটা তার।ইউসুফ এমন কিছু করবে ধরণার বাহিরে সবটা ছিল কুুহুর।ইউসুফের পাগলামে দিন দিন বাড়ছে। যেমনটা সেই ছোট বেলায় করেছিল সে,,সেই পরিস্থিতি আবার তার গতিপথ দৌড়াচ্ছে।তখন কুহুর করার কিছু ছিল না আর আজও না।বার বার দোষারোপ করছে সেই কু দিনটিকে যেদিন কুহু আগ বাড়িয়ে গেছিল কথা বলতে এই সাইকোটার সাথে।ভাবতেই ভয়ে শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠছে কুহুর। হঠাৎ করেই চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসচ্ছে সব।কথা বলাতো দূর নড়বার শক্তিটুকু পাচ্ছে না কুহু।জবেদা মেয়ের পাশে বসে মাথায় পানি দিচ্ছে।হুট করেই কুহু খেঁচুনি দিয়ে উঠে। সারা শরীরে রগ যেন টান টান হয়ে উঠচ্ছে তার। খেঁচুনির ভাব বাড়তেই চোখ উল্টো যাচ্ছে । সাথে সাথে জবেদা চিৎকার শুরু করে। পাশের ঘরে পল্টু আর তিন্নি পড়তেছিল মায়ের চিৎকারে দৌড়ে কুহুর রুমে আসে। বোনের এ হাল দেখে তারাও কান্না করতে লাগে। ততখনে কুহুর মুখ থেকে সাদা ফেনার মতো বের হতে শুরে করে দিছে। মেয়ের এমন হালে দিশেহারা জবেদা।কি করবেন মাথা কাজ করছে না তার।এদিকে তিন্নি নাক চেঁপে ধরলো কুহুর লাভ হলো না। দাঁত দাত লেগে গেছে তার। জবেদা মাথায় পানি ঢালছে দোয়া দরুদ পরছে আর বার বার বলতেছে,,
---আল্লাহ আমার মেয়েকে সুস্থ্য করে দেও।
এদিকে তিন্নি তারেক হাসানকে কল করে সব জানায়। তারেক হাসান শহরের বাহিরে আসতে লাগবে ঘন্টা খানিক। মেয়ের এমন হালে কি করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না। তিন্নি তখন বুদ্ধি করে আরাধনকে ডেকে আনে।আরাধন কুহুর এমন হাল দেখে কুহুকে কোলে তুলে বলে উঠে,,
---মাসিমা কুহুকে এখনি হাসপাতালে নিতে হবে আপনি আসুন আমার সাথে।বলেই কুহুকে নিয়ে বের হয়ে যায় আরাধন।তিন্নি আর পল্টুকে বাসায় রেখে জবেদা ছুটলেন তার সাথে।
________________
হাসপাতালের করিডোরের দাড়িয়ে ফয়সাল আর রেহানা মাথা নত করে। পাশের চেয়ারে তারেক হাসানের কাঁধে মাথা চেঁপে মুখে কাপড় গুজে ফুঁপিয়ে কান্না করে চলেছেন।। এদিকে ছেলের কীর্তিকলাপ শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তাদের।ইউসুফ এমন কিছু করতে পারে বিশ্বাস করতে পারছে না। নিরবতা ভেঙ্গে ফয়সাল সাহেব তখন অসহায় ভঙ্গীতেই বলে উঠে,
---ভাই আমি খুব লজ্জিত। কি বলব বুঝতে পারছিনা। ছেলেকে কুছি বললেও শুনচ্ছে না। আপনি বলুন কি করি?
তারেক সাহেব তখন থমথমে কন্ঠে বলে উঠলেন,,
--- ভাই আপনার ছেলে যা করেছে তো করেছেই। ফলাফল আপনার সামনে। ভয়ে আমার মেয়েটা মরতে বসেছিল প্রায়। আমি আপনার কাছে কিছু চাই না। শুধু এতটুকু করবেন! দুদিন আপনার ছেলেকে ঢাকার বাহিরে পাঠিয়ে দিন। আমি আমার মেয়েকে ঢাকা থেকে দূরে পাঠিয়ে দিবো। ওর থাকা সত্ত্বে আমি এখান থেকে ওকে সরাতে পারবো না। যে কোনো ভাবে যেন যাবে। রিকোয়েস্ট আপনার কাছে।
ফয়সাল সাহবে ছোট শ্বাস ছেড়ে বললেন,,
---তাই হবে।
স্থির নিশ্বাস ফেললেন তারেক হাসান। এবার এই নরক থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিবেন তার কুহুকে।
________
ইউসুফদের বাসার হল রুমে সবাই বসে। ইউসুফ সোফায় বসে ফোন চাঁপচ্ছে। রেহানা ফয়সালকে ইশারা করলো কথা বলতে। ফয়শাল হালকা চোখের পলক ঝাপটে ইশারায় বললো বলতেছে। তারপর হালকা গলা ঝেড়ে বলে উঠে ফয়সাল,,
---সামনে ইলেকশন আসচ্ছে জানোতো?
ইউসুফ ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল,,
---হে জানি!আমাকে কেন বলছো?
---বলছি এ কারণে এদিকে আমার কাজ বেশী।তাই মাকে চেক আপের জন্য আমেরিকা যেতে পারবো না।তাই তুমি যাবে! তাও পরশু আমি ওলরেডি বুকিং করে দিয়েছি টিকেট।
ইউসুফ কিছুক্ষণ চুপ রইল। দাদুর যে কোনো কাজে সে মানা করতে পারে না।কিন্তু সে চলে গেলে কুহুকে দেখবে কি করে?? কুহুকে না দেখলে দু চোখের পাতায় যে ঘুম নামে না??ইউসুফকে চুপ থাকতে দেখে চিন্তায় পরে যান ফয়সাল।ছেলেটা একরোখা টাইপের যদি না করে দেয় কখনো তা করবে না।তাই ফয়সাল তার মার কথা বলেছে।কারণ ইউসুফ আর যাই করুক দাদুর জন্য তার জান হাজির।
---ঠিক আচ্ছে যাবো! বাট এক শর্ত আছে..!গম্ভীর গলায় বলল ইউসুফ।
হাসার চেষ্টা করে রেহেনা বলল,,
---কি শর্ত বাবা?
--আমি আসার পর আমার কুহুকে আমার কাছে আনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আই ওয়ান্ট হার এট এনি কষ্ট। শীতল কন্ঠে বলল ইউসুফ।যাতে জমে গেলেন তার বাবা মা দুজনেই। হালকা আচ করতে পারছে তারা এ যে কোনো ঝড়ের পূর্ববর্তী লক্ষণ।
_________
কুহুর জ্ঞান ফিরেছে ঘন্টা খানিক। হাসপাতালের বেডে শুয়ে, সেলাইন চলছে তার।শরীর এখনো অনেক দূর্বল।পাশেই জবেদা বসে। চোখ ফুলে আছে তার।তখনি খাবার নিয়ে ঢুকে আরাধন।আরাধনকে দেখে হালকা হেসে বলে উঠে জবেদা,,
--আজ তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি বাবা।
---কি যে বলেন মাসিমা। আমিরপর নাকি আপনাদের?
---আজ তুমি না থাকলে বাবা কি যে হতো? আবার ফুপিয়ে উঠে জবেদা।
---মাসিমা সব ঠিক হয়ে যাবে ঠাকুরের দোয়ায়, কান্না করবেন না।প্লীজ।জবেদাকে সামলাতে সামলাতে বলল আরাধন।
তখনি হুড়মুড় করে ঢুকে ইউসুফ।। কুহুর এমন হালের খবর কিছুক্ষণ আগেই পেয়েছে তার এক গার্ডের কাছ থেকে। শুনেই দৌড়ে চলে আসে সে।ইউসুফকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ইউসুফের সেদিকে খেয়াল নেই। সে হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে ঢুকে পরতে নেয় ভিতরে। জবেদা সাথে সাথে বাধা দেয়। ইউসুফ এবার বিনীত সুরে বলে উঠে,,
---আন্টি প্লীজ একবার কুহুকে দেখে চলে যাবো!
---নাহ! কঠোরতা শুনা গেল জবেদার কন্ঠে।
আরাধন বোকার মতো চেয়ে আছে।ইউসুফ আবার বলল,,
---আন্টি প্লীজ একবার দূর থেকে দেখবো পরে চলে যাবো প্লীজ।
জবেদা কোনো কথা শুনতেই রাজি না।আর এদিকে ইউসুফ যাবেই।জবেদা যখন ইউসুফের সাথে পেরে না উঠচ্ছে তখন আরাধনকে বলে উঠে,,
---আরাধন হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ড কে ডাকো। এর একে বের করো।
ইউসুফের আরাধনকে দেখে রেগে যায়।আর চিল্লিয়ে বলে,,
---এই ছেলেকে আন্টি? আপনি তাকে কুহুর রুমে কেন রেখেছেন??
জবেদা বিস্ময়ের সাথে বলে উঠে,,
---আমি কাকে রাখবো না রাখবো তা অবশ্যই তোমাকে বলব না! তুমি এখন আসতে পার নয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো তোমাকে এখান থেকে।
ইউসুফে এরূপ অপমানে রাগ উঠে গেল। তাও হালকা হেসে বলল,,
---আচ্ছা আমাকে বের করবেন? ওকে সাথে সাথে কাউকে ইশরা করে ইউসুফ। তখন কিছু কালো পোশাক পরিহিত লোক এসে হাজির।
---এদের আটকিয়ে রাখো। আমি বাবুইপাখিকে দেখে আসচ্ছি।।লোক গুলো তাই করলো। জবেদা চেঁচামেচি করতে লাগলো কাজ হচ্ছে না কোন।ইউসুফ কুহুর সামনে গিয়ে বসলো। কুহুর মুখটি দেখে বুকে মুচড় দিয়ে উঠলো কি হাল হয়েছে মেয়েটির।অবশ্যি তার জন্য। তাই খারাপ লাগচ্ছে তার। কি করবে সে?? কেউ বুঝতে চায় না..! বাবুইপাখি ছাড়া সে ভাল থাকতে পারবে না। বাবুইপাখি যে তার সব। এসব ভেবেই ফুঁপিয়ে উঠে ইউসুফ। ঘুমন্ত কুহুকে আলত ভাবে জড়িয়ে ধরে।তাতেই জবেদা চেঁচামেচি আবার শুরু করে।ইউসুফের রাগ লাগে। হালকা ঘাড় ঘুড়িয়ে হাতে চুপ থাকতে ইশারা করে বলে উঠে,,
---শিহহহহ! আন্টি কুহু গুমুচ্ছে চেঁচাবেন না প্লীজ। আমি চলে যাচ্ছি। বলে কুহু কঁপালে কিস করে চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে যায় ইউসুফ।
জবেদাদের ছেড়ে লোক গুলো চলে যায় ইউসুফের পিছন পিছন।লোক গুলো যেতেই আরাধন প্রশ্ন করে,,
---মাসিমা ছেলেটি কে? কুহুতে খুব ভালবাসে মনে হয়?
জবেদা ছোট শ্বাস ছেড়ে মেয়ের পাশে বসে বলে,,
---খুব ভালবাসে! কিন্তু ও কুহুর জন্য বরাবরই অভিশাপ।
এমন কথায় চমকে উঠে আরাধন।চকিতে বলে উঠে,,
---কি বলছেন এসব? ভালবাসার মানুষ অভিশাপ কিভাবে হয়?
--হয় বাবা হয়। অতিরিক্ত ভালবাসা মাঝে মাঝে পাগলামি করতে শুরু করে মানুষ।আর তাই অভিশাপ।ইউসুফও তাই। কুহুর জন্য অভিশাপ।
---কি হয়েছে মাসিমা বলা যাবে আমাকে? যদিও বাহিরের মানুষ আমি। না বলতে চাইলে থাক।
জবেদার দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে বলে উঠে,,
---তোমাকে বলতে অামার অসুবিধা নেই।তুমি যা করেছে আজ আমাদের জন্য। কোনো অাপন মানুষও তা করে না।আচ্ছা শুনো তাহলে,,
—————
🖤অতীত🖤
ময়মনসিংহের জয়নাল আবেদিন পার্ক ঘুরতে এসেছে ছোট্ট কুহু তার দাদুর সাথে। সেখানে বাচ্চাতের জন্য দোলনা সহ নানান রকমের রাইটস রয়েছে।দোলনা কুহুর খুব প্রিয়।যখন যেখানে দোলনার দেখা মিলে সেখানেই চড়তে যায় কুহু।আজও তাই।দোলনা দেখেই ছুটে এসে বসে পড়লো কুহু।দুলতে লাগলো সে। তার পাশের দোলনায় একটি ছোট ছেলে বসা।সে দুলছে না।মুখ নিচে করে বসে আছে।কুহু তা দেখে কিছু ভাবলো ছেলেটি এভাবে বসে কেন? সবাই কি সুন্দর খেলতেসে। আর ছেলেটির মুখ গুমরা করে বসে। হয়তো তার বন্ধু নেই?? তাই কুহু বলল,,
--কি হয়েছে তোমার? দুলছো না কেন?
ছেলেটি কুহুর কথায় কুহুর দিক তাকিয়ে আবার মাথা নত করে নেয়। কুহু আবার বলল,,
---মন খারাপ? আম্মু বকা দিসে? আমার আম্মু বকা দিলে আমি এভাবে বসে থাকি।
ছেলেটি আবার চুপ। কুহুর যেন শান্তি লাগতেসে না। সবাই খেলতেসে সে কেন খেলে না। নাকি তার বন্ধু নেই??এসব ভেবে আবার বলল,,
---তোমার বন্ধু নেই?
ছেলেটি এবার মাথা নাড়ালো। মানে নেই। কুহু হাত বাড়িয়ে মুচকে হেসে বলল,,
---আমার বন্ধু হবে?
ছেলেটি হালকা হেসে হাত বাড়ালো।তারপর কুহু বলল,,
---তুমি বসো আমি তোমায় ধাক্কা দেই। দোলনায় অনেক মজা।
ছেলেটি কিছু বলার আগেই ছোট কুহু তার ছোট ছোট পায় দৌড়ে দোলনা ধাক্কা দিতে লাগলো। ছেলেটি এবার তার ফোকলা দাঁত বের করে হাসতে লাগলো। কুহু ধাক্কা দিতে দিতে বলল,,
---তোমার নাম কি?
ছেলেটি বলল,,
---ইউসুফ। তোমার?
কুহু এবার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,,
---আমার নাম কায়নাত কুহু।সবাই কুহু ডাকে।
---আচ্ছা তাহলে তোমাকে আমি কায়নাত ডাকব।
---কেন?
---সবাই যে নামে ডাকবে সে নামে আমি কেন ডাকবো? তুমিতো আমার বন্ধু।
কুহু মুখে হাত দিয়ে হাসে দিয়ে বলল,,
---আচ্ছা ডেকো এবার আমাকে ধাক্কা দেও আমি চড়বো দোলনায়।
ইউসুফ তার দোলনা থেকে নেমে কুহুকে জায়গা দিল। কারণ কুহুর দোলনায় আরেক বাচ্চা বসে গেছে।এবার ইউসুফ কুহুকে ধাক্কা দিচ্ছে আর কুহু খিল খিল করে হেসে যাচ্ছে। সাথে ইউসুফও।
দূর থেকে দাড়িয়ে এসব দেখছে ইউসুফের দাদু আর চোখের জল ফেলছেন উনি। নাতিকে এত হাসি খুশি লাস্ট কবে দেখছিল মনে নেই তার।আজ এ বাচ্চাটির জন্য তার নাতি হাসচ্ছেন।
---নাহার তুই এখানে??
পিছন থেকে কারো কন্ঠ শুনে ভাবনায় ছেদ পরে ইউসুফের দাদুর।পিছনে ফিরে নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কুলসুমকে দেখে চোখ ভরে এলো তার। একে অপরের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগেন,,
---কুলসুম তুই এখানে??
---নাতনীকে নিয় আসচ্ছি।তুই এখানে কিভাবে??তুইতো রংপুর ছিলি!
---হুম কিছুদিন হলো এখানে শিফট হয়েছি।
---ওহো তা কই উঠছিস??
---কালীবাড়ি আবুল ভাই আছে না তাদের বাসায়।
---ওমা সেকিরে? আবুল ভাইয়ের সাথে যে বাগান বাড়ি ওটাতো আমাদের বাড়ি। এত কাছে থাকিস তাও এতদিন দেখা হলো না আমাদের।
---হুম। কিন্তু দেখ আমাদের এখন দেখা হয়ে গেল। তা তোর নাতনী কই??
কুহুর দাদু দোলানর দিক ইশারা করে বলে,,
--- ওই যে সে।দুলছে।তোর জন কই??
ইউসুফের দাদু হেসে বলল,,
---ওই যে দেখ দোলাচ্ছে যে।
কুহুর দাদু তা দেখে হেসে দিলেন।সাথে ইউসুফের দাদুও। তার পর ছোট শ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলেন ইউসুফের দাদু,,
---তোর নাতী আমার ইউসুফের জীবন আশীর্বাদ স্বরূপ এসেছেরে।
এটি শুনে কিছু বুঝলেন না। বলে উঠলেন,,
---কিছু বললি?? নাহার মাথা নাড়লেন মানে না।আর হাসলেন তা দেখে হাসলেন কুহুর দাদু।নাহারের এদিকে ইউসুফকে হাসতে দেখে হাজার ধন্যবাদ দিলেন ছোট কুহুকে! কিন্তু ইউসুফের হাসি থাকবেতো বেশী দিন??নাকি এই বন্ধুত্ব আনবে নতুন ঝড়?যা করে দেবে সব তছনছ?