অস্পষ্ট প্রেমাবেগ - পর্ব ১৭ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


৩৩!! 

কিশোর বেশ কিছুক্ষণ তামান্নার কোলে শুয়ে থেকেই তামান্নার ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মুখটা দেখলো। মেয়েটা নিজের মনের সাথেই যে প্রচন্ড লড়াই করছে সেটা ওর মুখটা দেখলেই বোঝা যায়। তাই কিশোরও আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে তামান্নার উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করছে। বেশ অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও তামান্না কিছু বলছে না দেখে কিশোর তামান্নার একটা হাত নিজের বুকের উপরে টেনে নিলো।

-ভালোবাসা ব্যাপারটা হুট করে কিভাবে হয়ে যায় সেটা আমি জানি না তমা। প্রথম যেদিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে অতো লেকচার দিলে ভিষণ বিরক্ত হয়েছিলাম। তারপর দীপুর আর মায়ের তোমাকে সাপোর্ট করা দেখে মেজাজটা আরো বিগড়ে গিয়েছিল৷ তোমাকে তাড়ানোর জন্য তাই একেবারে দীপশিখায় গিয়েও হাজির হলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে তোমার ব্যাপারে সবটা জানার পর, সবার তোমার জন্য এতো ব্যাকুলতা দেখে কেন যেন নিজের কাছেই ভিষণ খারাপ লাগছিল আমার৷ কখন মনটায় তুমি জায়গা করে নিয়েছ টেরই পাই নি তমা। ঘটনাচক্রে বিয়েটাও হয়ে গেল। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে নিয়ে কোন দোটানায় ই ছিলাম৷ দোটানায় ছিলাম নিজেকে নিয়ে৷ আরেকজনকেও তো পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম একটা সময়। তাই মনে হয়েছিল হয়তো তোমাকে সেই জায়গাটা দিতে পারবো কি না। আর যোগ্য সম্মান, ভালোবাসা না দিতে পারলে তোমাকেও তো ঠকানো হতো বলো??

তামান্না চুপ করে কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু বলার মতো খুঁজে পেল না। কিশোর একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলা শুরু করলো।

-তমা? সেদিন নতুন বউয়ের বেশে তোমাকে বসা দেখে আমার মধ্যে কি চলছিল সেটা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম তবু। এই জন্য নয় যে বাধ্য হয়ে আমাদের বিয়েটা হয়েছিল বলে-। আসলে একটা কৃতজ্ঞতা যেমন ছিল তোমার প্রতি, তেমনি একটু দ্বিধা। আসলে তুমিও তো শুধু দীপ্তির জন্যই বিয়েটায় রাজি হয়েছিল---। জানো? সেদিন তুমি যখন বললে আজীবন না হয় দীপ্তির গভর্নেস হয়েই থাকবে, তখন বুকের ভেতরে একটা তোলপাড় শুরু হয়েছিল৷ হাত বাড়িয়ে তোমাকে নিজের বুকে টেনে নেয়ার মতো অধিকারটা আসলেই দেখাতে পারি নি--। তাই তোমার চোখের পানিটা মুছিয়ে দিতে চেয়েও পারি নি--। কিন্তু এখন সত্যিই অধিকার নিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে দিতে চাই। নিজের অতীতের সমস্ত অন্ধকারটা দূরে ঠেলে দিয়ে তোমার হাত ধরে আলোময় ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে চাই তমা--। 

তামান্না এবার নিশ্চুপ। কিশোর হাত বাড়িয়ে তামান্নার গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে তামান্নার চোখের পানিটুকু মুছে দিলো।

-তুমি তো বলেছিলে আমার সিদ্ধান্ত যাই হোক সেটায় তোমার সম্মতি থাকবে সবসময়। এখন বলো? তোমার সাথে নিজের ভবিষ্যতটা শুরু করতে চাইলেও কি সম্মতি দিবে? 

তামান্না এবারও কিছু বললো না। বললো না কথাটা ঠিক না। বলতে পারলো না৷ কান্না এসে গলাটা প্রায় বুজে যাচ্ছে যেন ওর। সবটাই স্বপ্নের মতো লাগছে৷ আর কান্নাটা সুখের নাকি এতোদিনের চাপা কষ্টের সেটাও বুঝতে পারছে না মেয়েটা। কিশোর আরো কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে উঠে বসলো। দুহাতে তামান্নার মুখটা তুলে ধরে আলতো করে তামান্নার চোখের পানি মুছিয়ে দিলো কিশোর। তারপর আলতো করে কপালে চুমো খেল।

-তোমার কান্না আর সহ্য হচ্ছে না আমার তমা। জানি না অজান্তেই তোমার উপরে নিজের মতামত চাপিয়ে দিয়ে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি কিনা। প্লিজ তমা? আর কেঁদো না এভাবে। কষ্ট হয় তোমার কান্না ভেজা মুখটা দেখলে। মনে হয় বুকের ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে--। তোমার মতামতের সম্মান অবশ্যই করবো আমি। আর হয়তো আমার সামনে এখনো কমফোর্টেবল না তুমি---। তাই আর জ্বালাতন করবো না ভেবো না। গতকাল সারাটা দিনের জ্বালাতনগুলোর জন্য সরি----।

----------------------

-শুধু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যেতে চাই তমা। কি করে জানি না, তবে তোমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি--। এই ভালোবাসাটুকু না হয় আমার কাছেই থাক।

কিশোর বেডিংটা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই হাতে টান অনুভব করলো। আর কিশোরের ঠোঁটের কোণে একটা হাসিও ফুটে উঠলো সাথে সাথেই। তামান্না মাথা নিচু করে থাকায় সেটা দেখতে পেল না। তামান্না এবার নিজেকে একটু শান্ত করে কিশোরের মুখের দিকে তাকালো। ততক্ষণে কিশোর উঠে দাঁড়িয়েছে দেখে তামান্নাও উঠে দাঁড়ালো।

-কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আমাকে বারবার কষ্ট দিতে আপনার খুব ভালো লাগে তাই না?

-তোমার যাতে কষ্ট না হয় তাই তো চলে যাচ্ছিলাম--। আমিও তোমার চোখের সামনে থাকবো না। তোমারও কষ্ট হবে না তাহলে---।

-আপনাকে আমি বলেছি আপনি আমার সামনে থাকলে কষ্ট হয়? বলেছি একবারও?

-কষ্ট হয় দেখেই তো কাঁদছ---। নইলে কি এতো কাঁদতে---।

-আপনাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা কেন বুঝেন না আপনি? আপনাকে দেখতে না পেলে কতোটা কষ্ট হয় সেটা কি করে বোঝাবো আপনাকে? আপনি এতোগুলো দিন ছিলেন না সেই দিনগুলো কি করে কেটেছে আমার কেন বুঝেন না আপনি?

কিশোর তামান্নার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে একটা হাত দিয়ে তামান্নার মুখটা তুলে ধরলো। হুট করে কিশোরের এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরায় তামান্না থতমত খেয়ে কিশোরের মুখের দিকে তাকালো। কিশোরের ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি ভরা হাসি দেখে একটু লজ্জা পেল এবার বেচারি।

-তাই নাকি ম্যাডাম? তাহলে আমি কি বুঝে নিবো নতুন একটা শুরু করতে আপনি রাজি আছেন? 

তামান্না লজ্জায় লাল হয়ে কিশোরের বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো। কিশোর তামান্নাকে নিজের সাথে আরো নিবিড় করে জড়িয়ে নিলো।

-এভাবে মুখ লুকালে হবে না কিন্তু৷ বলতে হবে কিন্তু তমা। আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই---।

-জানি না---।

-এক্ষেত্রে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরা যায়। কি বলো?

তামান্না একটু লাজুক হাসলো। কিছু বললো না৷ কিশোরও তামান্নাকে একটু ছেড়ে দিয়ে আবার পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। তামান্না আবার লজ্জায় লাল হয়ে কিশোরের গলা আলতো করে পেঁচিয়ে ধরে মুখ নিচু করে নিলো।

-চলো? নতুন করে একটা ভালোবাসার জগৎ সাজাই আজ। যেখানে তুমি থাকবে, আমি থাকবো, আর থাকবে অফুরন্ত ভালোবাসা। কি বলো? আর ইউ রেডি ম্যাডাম?

তামান্না চোখ বুজে নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো৷ আর কিশোরও তামান্নাকে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। বেশ কিছুক্ষণ পর কিশোর তামান্নাকে খাটের উপরে বসিয়ে দিলে তামান্না চোখ খুলে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো। এটা ওদের বেডরুম না। তবে এই রুমটা আগের রুমের চেয়ে অনেকটাই বড়। আর সুন্দর করে ফুলে ফুলে সাজানো পুরো রুমটা৷ কিশোর তামান্নার পাশে বসে আলতো করে তামান্নার কান থেকে একটা দুল খুলে নিয়ে তামান্নার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তামান্না চমকে উঠে কিশোরের হাতটা চেপে ধরলো।

-এটা কার রুম?

-এখন থেকে এটা আমাদের নতুন রুম। নতুন করে সব শুরু করছি কিনা। এবার নতুন কারো আসার অপেক্ষা শুধু----।

তামান্না লজ্জায় লাল হয়ে চুপ করে আছে দেখে কিশোর ধীট হাতে তামান্নার অন্য কানের দুলটাও খুলে চুমো দিলো কানে। তারপর গলা থেকে নেকলেসটা খুলে গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আলতো করে। তামান্না একবার কেঁপে উঠতেই কিশোর দু হাতে আবার তামান্নার মুখটা তুলে ধরলো।

-তমা? আমার রঙে নিজেকে রাঙাতে রাজি তো তুমি? 

তামান্নার লজ্জা রাঙা মুখটায় আরো এক ছোপ লজ্জার আভা ছড়িয়ে গেল। তবু চোখ বুজে মাথা নেড়ে সায় দিলো তামান্না। তারপর দুহাতে মুখ ঢাকলো লজ্জায়। কিশোর হেসে তামান্নাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তামান্নার দিকে ঝুঁকে কপালে চুমো খেল। তারপর তামান্নার হাতে চুমো খেয়ে চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে তামান্নার টুকটুকে লাল লজ্জা রাঙা মুখটা দেখলো।

-বিয়ের দিনটা আমার টুকটুকে রাঙা বউটাকে মন ভরে দেখতে পাই নি। আজ কিন্তু কোনো ফাঁকিবাজি চলবে না তমা--। 

তামান্নার ঠোঁটের কোণে আবার লাজুক হাসি ফুটে উঠেছে দেখে কিশোর তামান্নার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তারপর তামান্নাকে নিয়ে হারিয়ে গেল ভালোবাসার নতুন এক রাজ্যে। যেখানে ধীরে ধীরে ভাষা পেতে শুরু করেছে ওদের অস্পষ্ট প্রেমাবেগেরা। 

৩৪!! 

সকালে তামান্নার ঘুম ভাঙলো কিশোরের স্পর্শে। তামান্না চোখ বুজে থেকেই কিশোরের ছোঁয়াগুলো টের পাচ্ছে। কিশোর আলতো হাতে তামান্নার মুখের উপরে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে। তামান্না এবার চোখ মেলে তাকাতেই কিশোরের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। আর বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই কিশোর তামান্নার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের বুকের উপরে টেনে নিলো।

-এই যে ম্যাডাম? এতো পালাই পালাই করো সব সময়? হুম?

-কই না তো?

-তাই?

কিশোর হালকা করে নিজের নাক দিয়ে তামান্নার নাকে ঘষে দিলো। তারপর আলতো করে কপালে চুমো খেয়ে তামান্নার মুখটা তুলে ধরলো।

-তোমার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসিটা দারুণ মানায় তমা। সব সময় যেন হাসিটা ঠোঁটের কোণে এভাবে ঝুলে থাকে। মনে থাকবে?

-হুম---।

-ইশ! এই মাতাল করা হাসিটা দেখলে----।

-আপনি থামবেন? সবসময় কিসব বলেন-----।

-যাব্বাবা! আমি কি করলাম আবার!

-সরুন তো! দীপু স্কুলে যাবে। ওর জন্য নাস্তা রেডি করতে হবে----।

-হুম---। কিন্তু তোমাকে এভাবে বুকের ভিতরে জাপটে ধরে রাখতে ভালো লাগছে তো ভিষণ--। আরেকটু থাকো না প্লিজ?

-দেরি হচ্ছে----। 

-উমমম--। উফফ! তমা! তুমি না? খালি ঘুমের ডিস্টার্ব করো--।

-আপনি ঘুমান--। আমি রুমে যাই--।

-রুমে যাবে মানে! এটাই তো আমাদের রুম--। এর মধ্যেই ভুলে গেলে?

-ভুলি নি---। আমার শাড়ি আনতে হবে তো--। সব তো ওইরুমে---।

-উহুঁ--। কিচ্ছু আনতে হবে না। ওই রুমের কিছু এরুমে আসবে না---।

-তাহলে আমি পড়বো কি!

-ম্যাডাম আপনার হাসবেন্ডটাকে কি এতোই অকর্মা মনে হয় নাকি? সব ব্যবস্থা আগেই করে ফেলেছি--। দেখুন গিয়ে আলমারিতে---।

-ওহ!! আপনি জানতেন-----!

-কি জানতাম?

-না মানে------।

-আমি তো জানতাম আমার পাগলিটা আমার কাছে ধরা দিবেই। তাই সব ব্যবস্থা করাই ছিলো। আমার থেকে দূরে থাকা কি এতোই সহজ ম্যাডাম?

-কি!

-হা হা। দুষ্টুমি করছি পাগলিটা। যাও। কাবার্ডে তোমার শাড়ি রাখা আছে---।

-হুম। 

-আমি আসবো? শাড়িটা তো পড়িয়ে দিতে হবে নাকি?

-নাহ---। আমি পারবো---।

-আরে! তমা?

তামান্না কোনমতে শাড়িটা পেঁচিয়ে নিয়ে কাবার্ড থেকে শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিটা দেখে আরেকবার লাজুক হাসলো তামান্না। লজ্জায় যেন নিজের প্রতিবিম্বটার দিকেও তাকাতে পারছে না বেচারি। শাওয়ার নিতে নিতেই কিশোরের মোবাইলে কলের শব্দ কানে এলো তামান্নার। তাই একটু তাড়াতাড়ি শাওয়ার শেষ করে শাড়িটা ভালো করে পড়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো তামান্না। রুমে এসে আরেকবার অবাক হলো তামান্না। কিশোরও শাওয়ার নিয়ে এসেছে। এখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মোছায় ব্যস্ত সে। তামান্নাকে দেখে টাওয়ালটা ফেলে এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো কিশোর। তামান্না অবাক হয়ে কিশোরের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিশোর তামান্নার একেবারে সামনে এসে তামান্নার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নিতে তামান্নার হুঁশ হলো। আর সাথে সাথে সব ভুলে আবার লাল হয়ে গেল মেয়েটা।

-তমা? এভাবে হা করে কি দেখছো?

-কো-কোথায়!

-আমি তো দেখলাম তুমি----।

-আপনি উঠে গেলেন যে?

-একটা আর্জেন্ট কাজ পড়ে গেছে গো। ঢাকায় ফিরতে হবে----।

-ওহ!

-মন খারাপ করো না পাগলি। আমি শীগ্রি চলে আসবো-। এই লক্ষী বউটা থেকে কি আর দূরে থাকা যায় বলো?

-হুম---।

-মন খারাপ করো না প্লিজ?

-নাহ---। আমি দীপুকে ডেকে দিই---।

-আচ্ছা যাও--।

তামান্না দীপ্তিকে ডাকতে গেলে কিশোর চিন্তা করতে করতে রেডি হওয়ায় মন দিলো। ও এভাবে হুট করে চলে যাবে শুনে তামান্নার মনটা যে খারাপ হয়ে গেছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে কিশোর। কিন্তু কাজটাও জরুরি। যেতে তো হবেই। কিশোর রেডি হতে হতে তামান্না দীপ্তিকে নিয়ে ফিরে এলো। কিশোর একবার তামান্নার দিকে তাকিয়ে দীপ্তিকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে বাইরের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তামান্নাও ওদের পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করেছে। 

-বাবাই? তুমি কোথায় যাচ্ছো?

-বাবাই একটু কাজে যাচ্ছি মামনি। তুমি লক্ষী মেয়ের মতো স্কুলে যাবে, মামনির কথা শুনবে। কেমন?

-আচ্ছা বাবাই। তুমি কবে আসবে আবার?

-জলদিই আসবো মা---।

-হুম--। বাবাই আমার স্কুল আছে। আমি রেডি হই---।

-যাও মামনি।

কিশোর দীপ্তিকে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই দীপ্তি রুমের দিকে ছুটলো। কিশোর আর তামান্না দুজনেই আর কিছু না বলে চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটে নিচে নামছে। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দরজাটা সামনে আসতেই কিশোর হুট করে তামান্নার কোমড় পেঁচিয়ে বুকে টেনে নিলো। তামান্না চমকে উঠলেও কিছু বললো না। ওর মনটাই খারাপ হয়ে গেছে কিশোর চলে যাবে শুনে। কিশোর এক হাতে তামান্নার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে তামান্নার মুখটা তুলে ধরলো। 

-তমা? রাগ করো না প্লিজ? কাজটা খুব জরুরি--। নয়তো সত্যি---।

-উঁহু রাগ করি নি--। আপনি সাবধানে যাবেন--।

-হুম----।

-না খেয়েই চলে যাচ্ছেন কেন? খেয়ে---।

-কে বলেছে যে না খেয়ে যাবো? আমি তো নিজের ভাগেরটা আদায় করে তারপর যাবো---।

-হুম??

কিশোর কিছু না বলে তামান্নাকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে তামান্নার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। একটু পরে কিশোর আবার তামান্নার মুখটা তুলে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

-আসছি তমা? কেমন?

-হুম--। সাবধানে যাবেন--।

-হুম।

-তাড়াতাড়ি আসবেন--।

-ওকে বউ--। বায়--। তুমিও সাবধানে থেকো---। 

কিশোর তামান্নাকে আরেক বার নিজের সাথে হালকা করে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করে তামান্নার দিকে হাত নাড়িয়ে স্পিড বাড়ালো। তামান্নাও দাঁড়িয়ে থেকে কিশোরের চলে যাওয়া দেখলো ভেজা চোখে। মানুষটা যেন চলে যাচ্ছে না ওর কলিজাটা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ হঠাৎ এমনটা কেন লাগছে তামান্নার কে জানে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন