অচেনা অতিথি - পর্ব ১৪ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


তিতিরের ফোনে মাহাদ কল দিয়েই চলেছে কিন্তু তিতির কল আর রিসিভ করছেনা। তিতির কেন, বাসার কেউই কল রিসিভ করছেনা মাহাদের। বাসায় কি হলো সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। অপেক্ষা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু তিতিরের এত সাহস হয় কিভাবে আমার কল রিসিভ না করার! কথাগুলো একমনে ভেবেই চললো মাহাদ।
.
পুরো বাসার কোলাহল থেমে গেছে। কেউ বিশ্বাস করলোনা মাহাদ এত নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে। তিতির ছলছল চোখে সাবিনার দু'টি হাত ধরে বলল-

~" দেখ সাবিনা, আসমা আর তোমাকে কখনো আমি আলাদা চোখে দেখিনা। তোমাকে সর্বদা বোন বলেই ডাকি। তুমি কেন মিথ্যা কথা বলছো! কেন তুমি আমার স্বামীকে সবার সামনে নিকৃষ্ট বানাচ্ছো! তোমায় সে কত স্নেহ করে আর তার প্রতিদান তুমি এভাবে দিচ্ছো!"

তিতিরের কথা শুনে সাবিনা তিতিরের পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল-

~" আপা অ্যাই সত্যি কতা কইছি, মাহাদ ভাইজানই অ্যার  সাথে ছিল। হয় অ্যারে হের লগে কথা কইতে দেন না হয় তারে জিঙ্গাসা করে দেখুন না!"

চুপপপ  বলে নিসা তেড়ে এলো সাবিনার দিকে। বিয়াদপ, যার খাবি তারই ক্ষতি করা চেষ্টা করছিস! এক্ষুনি বাসা থেকে বের হ বলছি বলেই সাবিনার হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই সাবিনা ওখানেই বসে পড়লো। না আই কোথাও যাইবোনা। আগে মাহাদ ভাইজানের সাথে কথা বলেন। হের পর অ্যারে যা কইবেন তাই করবো।

বাতাসি বিবি রেগে গিয়ে বলল-

~" ঐ ছেড়ি, তোর থোপনা ভাঙ্গুন লাগবো? তোর সাহস হয় কি করে অ্যার সোয়ামীর নামে বদনাম করনের! এই দিন দেখার জন্য অ্যার সোয়ামী তোরে এত আদর যত্ন করতো?"

~" দাদী, ভাইজানের সাথে একবার কতা কইতে দেন। একবার....."

~" ঐ নিসা, তোরে এখনো শিখোন লাগবো, ওরে কি করতে হইবো?"

বাতাসির কথা শুনে নিসা ওকে টেনে নিয়ে বাহিরে চলে গেল। তিতির দ্রুত ওর রুমে আসলো। মাহাদ বার  বার কল দিচ্ছে তাই ওকে রুম আসতে হল। তিতির কল রিসিভ করতেই মাহাদ অস্থির গলায় বলে উঠলো-

~" তিতির, সাবিনা ঠিক আছে?"

তিতির কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। মাহাদের কথার কোন জবাবই দিতে পারলোনা তিতির। তিতিরের চুপ থাকা দেখে মাহাদ প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলল-

~" এই তোমার সমস্যা কি! তুমি কথা বলছোনা কেন? আমি কি বলছি, তোমার কানে যাচ্ছেনা?"

মাহাদের ধমক খেয়ে তিতির কেঁপে উঠলো। কাঁপা কন্ঠেই বলে উঠলো-

~" সাবিনা চরম বেয়াদপী করেছে। তাই ওকে হয়ত এতক্ষনে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। ও যা করেছে তা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয়।"

~" হোয়াট! পাগলো হয়ে গেছ তুমি! এক্ষুনি ওকে গিয়ে থামাও। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি!"

আমি পারবোনা বলে তিতির ওর চোয়াল শক্ত করে মাহাদের কথার জবাব দিল। আপনি জানেন ও প্রেগন্যান্ট......।

এই বলে এত জোরে মাহাদ একটা চিৎকার দিল যে গোলাব অবদি ভয় পেয়ে মাহাদের কাছে থেকে দুরে সরে গিয়ে নির্বাক চোখে মাহাদের দিকে চেয়ে রইলো। আর তিতিরের অবস্থার কথা নাই বলি। ঐ অবস্থায় মাহাদ বললো-

~" তুমি তোমার অতীত ভুলে গেছ! সেটা মনে করে দিতে হবে? তুমি জানোনা, এই অবস্থায় একটা মেয়েকে বাসা থেকে বের করে দিলে সে কোথায় গিয়ে দাড়াবে! তুমি কি এমন পরিস্থিতির স্বীকার হওনি! তোমার ভিতরের মনুষত্ব্য কি এতটুকুও বাধা দিলোনা! কাজটা অন্যায় হয়ে যাচ্ছে!"

এবার তিতির হাউমাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আপনি কিছু না জেনে কখনো অভিযোগ করবেননা। আপনি জানেন ও কি করেছে! আজ ও যা করেছে তার কথা চিন্তা করলেই আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। ও বলে কিনা, ওর গর্ভে আপনার সন্তান রয়েছে। এত বড় মিথ্যা কথা ও কিভাবে বলতে পারলো! তাই যা হয়েছে বেশ হয়েছে।

~" তিতির........!"

~" আপনি আমার উপর রাগ করেন আর যাই করেননা কেন আজ আমার কিছু যায় আসেনা। ভাবী যা করেছে একদম ঠিক করেছে।"

~" নিসা তোমার এত প্রিয় কবে থেকে হলো তিতির! আজ যদি সত্যিই সাবিনাকে না পাওয়া যায় তাহলে আগে তোমার ব্যবস্থা নিব। এই মুহুত্বে ওর সাথে আমার কথা বলার ব্যবস্থা করে দাও। এখুনি......।"

কথাগুলো বলে মাহাদ কল কেটে দিল। এদিকে তিতির আর কোন উপায় না পেয়ে আধা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো। এসেই দেখলো নিসা চিন্তিত মনে দাড়িয়ে আছে। তিতির উৎকন্ঠে বলে উঠলো-

~" ভাবী সাবিনা কোথায়?"

~" ঐ তুই আবার সাবিনা সাবিনা কইরা মরছোস ক্যান?"

~" দাদী, সাবিনার সাথে মাহাদ কথা বলতে চায়।"

~" তিতির ভুলে যেওনা মাহাদ এখনো অসুস্থ। তাই এসব ব্যাপারে ওকে না জানালেই কি নয়! তুমি কেন ওকে বলতে গিয়েছ এসব কথা!"

~" ভাইয়া আমি কিছুই বলিনি। সাবিনাই মাহাদরে কল দিয়েছিল অনেক আগে। সেটার জন্যই তো আমি বাসায় চলে আসলাম। এখন মাহাদ বলছে সাবিনার সাথে কথা বলে দিতে। আমি এখন কি করবো!"

আচ্ছা আমাকে ফোনটা দাও আমি ওর সাথে কথা বলছি। কথাগুলো বলে ফুয়াদ ফোনটা নিয়ে উপরে চলে গেল।

মাহাদের ফোনে তিতিরের কল আসতেই মাহাদ রিসিভ করে বললো-

~" সাবিনা, কি হয়েছে বলতো!"

~" মাহাদ, আমি ফুয়াদ।"

অহ্ স্যরি বলে মাহাদ চিন্তিত মুখে বলে উঠলো-

~" ভাইয়া, বলতো কি হয়েছে! আর সাবিনাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছ কেন? বাহিরের জগৎ কত খারাপ সেটা জানোনা! তোমাদের মস্তিষ্ক কি বিলোপ হয়ে গেছে!"

~" তুই জানিস, সাবিনা ঠিক কি কি বলেছে!"

মাহাদ মুখটা গম্ভীর করে বলল-

~" হুম জানিতো!"

~" তুই সব কিছু জেনেও এসব কথা বলিস কিভাবে! আমিতো অবাক হয়ে গেছি সাবিনার এমন নোংরামি চিন্তা ভাবনা দেখে। তারপরও বলছিস আমাদের মস্তিষ্ক বিলোপ পেয়েছে!"

মাহাদ কিছুক্ষন চুপ থাকলো। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। শেষে নিরবতা ভেঙ্গে মাহাদ নিচু গলায় বলল-

~" ভাইয়া সাবিনা যা বলছে সব ঠিক বলেছে। তুমি ওকে খুঁজে বাসায় নিয়ে এসো। আর তিতিরকে এসব বলোনা। ও কষ্ট পাবে।"

~" পাগল হয়ে গেছিস! কি সব বকছিস? তোর এই কথার ভিত্তিতে কি হবে বুঝতে পারছিস! কেন এসব বলছিস ভাই?"

~" যা বলছি তা ভেবে চিন্তেই বলছি। ওকে আপাতত নিয়ে আসো। কারো সমস্যা হলে ওকে নিয়ে আমি আলাদা থাকবো। কিন্তু এখন আপাতত ওকে নিয়ে আসো।"

মাহাদ ফ্যান করার একটা লিমেট আছে কিন্তু! নিজের জিবন বাজী রেখে যেই তিতির তোকে নিরাপদে রেখেছে তার সাথে তুই এটা কিভাবে করতে পারিস! এখন তো মনে হচ্ছে তুই বাঁচলি কেন! মারা যাওয়ায় তোর জন্য ভালো ছিলো। কথাগুলো বলে ফুয়াদ একটু থামলো। তারপর আবার বলল-

~" দেখ, এমন খারাপ কিছু যদি করেও থাকিস প্লিজ তিতিরকে এসব জানাস না। ও মরে যাবে ভিতরে ভিতরে।"

ভাইয়া আমার যা বলার তা বলে দিয়েছি। সাবিনাকে বাসায় আনো। না হয় আমি অন্য ব্যবস্থা করছি বলে মাহাদ কল কেটে দিল।

ফুয়াদকে কখনো রাগান্বিত অবস্থায় দেখা যায়না। কিন্তু আজ সে প্রচন্ড রেগে গেছে। চিৎকার দিতে দিতে নিচে আসলো। এত অন্যর প্রতি মহানুভবতা করা ভালো নয়। মা শুনছেন, আপনার ছেলে কি বলছে?
সাবিনা যা বলেছে তাই নাকি সঠিক। ওটা নাকি মাহাদের সন্তান। মগের মুল্লুক পেয়ে গেছে নাকি! যা খুঁশি তাই মুখ দিয়ে বের করবে? একটা সম্মান আছে না! বউ বাচ্চা রেখে কেউ এসব কথা বলে? আপনার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। বুঝান আপনার ছেলেকে। সে কি করতে চাচ্ছে! আমাদের সম্মান নিয়ে সে কেন খেলা করছে!

ফুয়াদের কথা এসে তিতিরের বুকে আঘাত করলো। না এটা হতে পারেনা। মাহাদ কখনো এসব করতে পারেনা। কি হচ্ছে এসব। কোন শয়তান আমাদের জিবন নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। এসব ভাবতেই লাবীবা নিজে মাহাদকে কল দিল। মাহাদ রিসিভ করতেই লাবীবা কাঁদতে লাগলো। তারপর নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল-

~" বাবা কেন এসব বলছিস! কি হয়েছে সেটা খুলে বললেই তো হয়। নিজের উপর দোষ কেন নিচ্ছিস?"

~" মা আমার কথা আমি বলে দিছি। সাবিনা কই!"

~" ঐ মুখপুরীকে বাসা হতে বের করে দিয়েছি।"

~" বাহ্ তোমার দেখছি সেই পুরনো অভ্যাসটা  তুমি একদমই ভুলতে পারোনি। ও যখন বলছিল আমার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়ে তাকে কিভাবে বের করে দাও বাসা হতে! তোমারা মানুষ না অমানুষ! একটা মানুষ এত দিন হলো আমাদের বাসায় থাকলো আর সামান্য একটা ভুলে তাই বলে বাসা থেকে বের করে দিবে ঐ ছোট মেয়েটাকে? তোমাদের এতটুকু দয়া জাগলোনা মনে! আমি কাদের সাথে এতদিন ধরে বসবাস করে আসছি!"

লাবীবা আর কোন কথা না বলে কল কেটে দিয়ে নিজেই বাহিরে গেল সাবিনাকে খুঁজতে। সাথে ফুয়াদও চলে গেল। বাতাসি বিবিও মনে মনে সাবিনার জন্য কাঁদছে। কিন্তু মাইয়া এমন কথা ক্যান কইলো সেটাই বুঝতে পারছেনা বাতাসি। দুনিয়া উল্টাইয়া গেলেও বাতাসি বিশ্বাস করবেনা মাহাদ এমন কাজ করতে পারে। 

তিতিরের মাথা ঝিম ধরে গেছে। কি হচ্ছে এসব ভাবতে ভাবতে উপরে উঠে এসে রুমে ঢুকতেই নিসা পিছন থেকে ডাকলো ওকে। নিসার ডাক শুনে তিতির থেমে গিয়ে পিছন ফিরে চাইলো।

নিসা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-

~" লায়লা মজনুর প্রেমের ভিতর শেষ পর্যন্ত কাজের মেয়ে ভিলেন হিসেবে ঢুকলো! তা তিতির, খুব দম্ভ তোমার স্বামীকে নিয়ে তাইনা! তা এত বিশ্বাস মলিন হয়ে গেল কিভাবে! আমারতো মনে হয় এবার মাহাদ সুযোগ্য মেয়ের সাথেই সম্পর্ক করেছে।"

~" আমার স্বামীকে নিয়ে কোন কথা শুনতে চাইনা। তার চরিত্রের সার্টিফিকেট আপনার কাছ থেকে আমাকে নিতে হবেনা। আর ভাবী, আপনি নিজেই তো বিশ্বাস করেননা যে, মাহাদ এমন কাজ করতে পারে। তাহলে আমি স্ত্রী হয়ে কিভাবে সামান্য কথাতে তাকে অবিশ্বাস করবো। আমাকে চেতাইয়া কোন লাভ নেই। নিজের চরকায় তেল দেন। আমি ঠিক আছি।"

~" দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু দেমাক দেখছি এতটুকুও কমবেনা। মাহাদ যেখানে নিজে দায় স্বীকার করেছে সেখানে তোমার, কোথা হতে এত বড় বড় কথা আসে।"

~" আপনিতো নিজেও বিশ্বাস করেননা। বিশ্বাস যদি করতেন তাহলে ওমন করে সাবিনাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন না। এত কিছু করার পরও আমাকে বিশ্বাস করাইতে আসছেন!"

~" বাসার মান সম্মানের কথা ভেবে এমন কাজ করছি বুঝেছ?"

ভাবী আপনার সাথে ঝগড়া করতে আমি মোটেও চাইনা। আর আপনার এসব ফালতু কথা শোনার মত আমার টাইমও নেই। কথাগুলো বলে তিতির ওর রুমের ভিতর চলে গেল। এসে দেখলো সাদ ওর বাবার সাথে কথা বলছে ভিডিও কলে। সাদের কোলে অতিথী  রয়েছে। দুই ছেলেমেয়েকে দেখে মাহাদ শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যার ঘরে এমন দুই রত্ন থাকে তার ঘরে শান্তির অভাব থাকেনা। তিতির দুর থেকে দেখছে এদের। মাহাদ হেসে হেসে ছেলের সাথে কথা বলছে। কে বলবে একটু আগে যার একটা ধমকে তিতির সহ গোলাব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাদের সাথে কথা বলে মাহাদ বলল-

~" সাদ,, তোমার মা কই?"

~" মা, বাবা আপনাকে ডাকছেন।"

তিতির কাছে এসে ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই মাহাদ চোখ গরম করে বলল-

~" তোমার বাবার সাহস কি করে হয় আমার সন্তানদের গায়ে হাত দেওয়া! আর ঐ সব জিনিস কেন নিয়েছ? যে বাবার কারনে তোমার পিঠে এতগুলো দাগ সেই বাবাকে আমি মাহাদ কতটা অপছন্দ করি সেটা তুমি জানোনা?"

~" ভুল হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছা করে তার সাথে দেখা করি নাই।"

~" সাবিনাকে পেয়েছ?"

~" নাহ্, সে কোথায় যেন চলে গেছে।"

~" তিতির, তোমাকে বিয়ের বাসা থেকে নিয়ে আসলাম শুধু মাত্র সাবিনার জন্য। আর তুমি কি করেছ! মা যেদিন তোমায় বের করে দিয়েছিল সেই সময় তোমার কি অবস্থা হয়েছিল। সব কথা ভুলে গেছ! অকৃতজ্ঞ মেয়ে কোথাকার! আরে সেই কথা মনে পড়লেও তো তুমি তাকে থামাতে। তুমি জানোনা, তার কেউ নেই আমরা ছাড়া! তোমার তো তাও বাবা আছে কিন্তু ওর তো সেটাও নেই। ও কোথায় যাবে! ওর যদি কিছু হয় তাহলে তোমাকে যে আমি কি করবো সেটা বুঝতে পারছিনা। তোমার প্রতি সময় আমি হারাম করে তুলবো।"

~" সে যা বলেছে তা কি সঠিক মাহাদ!"

হ্যাঁ বলেই মাহাদ কল কেটে দিল। তারপর সাথে সাথে মাসেজ আসলো, আমি ৬ দিনপর দেশে ফিরছি। তিতির আর কিছু না বলে ওয়শরুমে গিয়ে পানির কল ছেড়ে দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।


৬ দিনপর,

সাবিনাকে পাওয়া যায়নি আর। বাসায় থমথমে ভাব একটা।  আজ মাহাদ আসছে। ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বললেও তিতিরের সাথে একটা কথাও বলেনি মাহাদ। যেটা তিতিরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সে ভাবছিল মাহাদকে আনতে যাবেনা এয়ারপোর্টে। কিন্তু না গেলে সবাই সন্দেহ করবে তাদের ভিতরে কোন সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে নিসা এর ফায়দা নিবে। ছেলে মেয়েকে রেডী করে দিয়ে নিজে রেডী হয়ে ফুয়াদের সাথে চলে গেল। সাথে লাবীবাও  গেল।

দীর্ঘ সময় মাহাদ সিংগাপুরে কাটিয়ে আজ দেশে ফিরছে। মোটামুটি সে সুস্থ। তবে পা এখনো ঠিক হয়নি। সেটা ঠিক হতে বেশ সময় লাগবে। ইয়ারপোর্টে মেয়েকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তিতির। আর তিতিরের অন্য হাত ধরে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে সাদ। মিল্টন যখন হুইল চেয়ারে করে মাহাদকে তিতিরের সামনে নিয়ে আসলো তখন তিতির আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। কতদিন পর সে মাহাদকে ছুতে পারছে। মাহাদের কাছে হাটু ভাজ করে বসে পড়লো তিতির। সাদ এসেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে সালাম দিয়ে বলল-

~" আপনি কেমন আছেন বাবা।"

মাহাদ চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলো না। বুকের সাথে ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি তোমাদের ছাড়া কেমনে ভালো থাকি বাবা!
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ বান্দাদের, প্রভু কোনদিনও খালি হাতে ফেরত দেননা। যেটা মাহাদের অবস্থায় প্রমানিত করে দিল।

ইয়ারপোর্টের বাহিরে এসে মাহাদকে নিয়ে ফুয়াদ এগুতেই কোথা হতে একটা বোরখা পড়া মেয়ে এসে মাহাদের পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সবাই অবাক হলেও মাহাদ মোটেও অবাক হলোনা। মাহাদ অাদুরে স্বরে বল উঠলো-

~" আহ্ সাবিনা লাগছে তো! তুই জানিসনা আমার পায়ে ব্যাথা।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন