০১!!
দরজার খটখট শব্দে তামান্না চমকে উঠলো। একে তো অচেনা এই জায়গাটায় ওর ঘুমই আসছিলো না অনেক রাত পর্যন্ত। এখন এতো কষ্টের পর যাও একটু ঘুম এলো এই দরজার খটখটানির শব্দে সেটাও গেল। কিন্তু এখন এই মাঝরাতে কে আসবে!! ওকে তো বলা হয়েছে এই বাড়িটায় শুধু দীপ্তির দাদিমা আর দীপ্তি থাকেন। সার্ভেন্টদের জন্য নিচ তলায় কোয়াটার টাইপের রুম করে দেয়া আছে!! তাহলে কি কোন কাজের লোক এসেছে এতো রাতে!! ও একা আছে জেনে!! ভাবতেই তামান্নার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। এই দেশে একটা মেয়ে কেন যে কোথাও গিয়ে শান্তি পায় না কে জানে!! আগের বার আশ্রমেও এমন একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। আর এখন এখানেও!! আজ তামান্নার জেদ চেপে গেল। আজকে যেই আসুক তাকে একেবারে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে ছাড়বে মেয়েমানুষ কি জিনিস।
রাগের চোটে দরজা খুলেই চমকে উঠলো তামান্না। সামনে দাঁড়ানো মানুষটা আর যেই হোক কোন সার্ভেন্ট তো নয়। কিন্তু এই লোকটা এতো রাতে এখানে কি চায়! তামান্নাকে দেখেই যেন লোকটার চোখ জোড়া জ্বলে উঠলো। তামান্না এতোটা চমকে উঠেছিলো যে কথা বলতেই ভুলে গেছে কয়েক মূহুর্তের জন্য। লোকটা রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে দেখে তামান্না দরজা শক্ত করে ঠেলে ধরলো। লোকটা এতে আরো রেগে গেলো।
-কি সমস্যা তোর??
-আপনি কে?? এতো রাতে এখানে কি চাই?
-আমি কে জানিস না তুই? আর আমি একশ বার আসবো। তোকে কৈফিয়ত দিবো কেন?
-দেখুন আপনি কে আমি সত্যিই জানি না। উনাদের সাথে আপনার কি সম্পর্ক তাও আমি জানি না--। আপনি দয়া করে সকালে আসবেন---।
-তুই আমাকে আমার---। তোর এতো বড় সাহস---!! তোকে তো আমি আজকে---।
লোকটা দরজাটা ধাক্কা দিয়ে তামান্নাকে জাপটে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। গলাটা এমনভাবে চেপে ধরেছে তামান্নার মনে হলো ও বুঝি এখনই মরে যাবে। দম বন্ধ হয়ে আসছে বেচারির। না পারছে লোকটাকে সরাতে। আর না পারছে নিজেকে তার হাত থেকে ছুটাতে।
-তোর সমস্যাটা কি!! চলে গেছিস একেবারে--। তবে আমার চোখের সামনে আসিস কোন সাহসে? লজ্জা করে না তোর??
-ছাড়ুন---। আপনি ভুল করছেন--।
- আমি ভুল করেছি!! হা হা হা।।আর আমি তোকে কি ছাড়বো?? তুই নিজেই তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলি!! তবু তোর আশ মিটে নি! আবার কেন ফিরে আসলি তুই!! কি চাই তোর! হ্যাঁ কি চাই! আমি মরলে খুশি হবি তুই!!
-আহহহহ------।।
তামান্না নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করালো। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে একেবারে কেঁপে উঠলো তামান্না। আরেকটু হলেই মনে হয় দমটা ফুরিয়ে মরে যেত। চাকরি করতে এসে এ কি বিপদ!! লোকটা আবার তেড়ে আসছে দেখে তামান্না কুংফু টেকনিক এ্যাপ্লাই করে লোকটার হাতটা পিঠের সাথে মচকে ধরলো। লোকটা আর ছুটতে পারছে না। তবুও কিসব আবোল তাবোল বকেই যাচ্ছে। তামান্না সেদিকে পাত্তা দিলো না। লোকটা হয় বদ্ধ উন্মাদ নয়তো তুখোড় মাতাল। আপাতত এই মূহুর্তে তাকে দেখে মাতালই মনে হচ্ছে তামান্নার। মাতলামি করছে রাত দুপুরে এখানে এসে। কিন্তু মেয়েটা এটা বুঝতে পারছে না যে এতো সিকিউরিটির পরও এই মাতাল বাড়িতে ঢুকলো কি করে!!
তামান্না আর লোকটার চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে ফালেহা চৌধুরী আর তার বাড়ির ৬-৭ জন কাজের লোক সবাই ছুটে এলো।
-কিশোর!!! এসব কি করছিস??
-মা!!! এই নর্দমার কিট আবার এই বাড়িতে কেন এসেছে!! আমার মেয়ের কাছে কেন! দরজা বন্ধ করে ও আমার ঘরে কি করছিলো জিজ্ঞেস করো ওকে!! কেন কেন কেন এসেছে আবার!!
-আব্বাস!! কিশোরকে আমার পাশের রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়। যা।
-জি মালকিন----।
আব্বাস নামের একজন বয়স্ক কাজের লোক কিশোরকে তামান্নার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিশোরের এক হাত নিজের কাঁধে রেখে হাঁটা ধরলো। ছেলেটা তখনো বিড়বিড় করেই চলেছে।
-কাকা---ও আমার মেয়ের কাছে কেন এসেছে! ও আমার দীপ্তিকে নিতে এসেছে। ওই কালনাগিনীকে আমি খুন করে দরকার হলে জেলে যাবো--। আমার মেয়ে---।
আব্বাস কিশোরকে নিয়ে যেতেই ফালেহা চৌধুরী তামান্নার দিকে তাকালেন।
-মিস তামান্না তুমি ঠিক আছো??
-ইয়েস ম্যাম---।। বাট উনি??
-ও দীপ্তির বাবা--। আমার ছেলে।
-উনার এই অবস্থা কি করে--??
-এই বিষয়ে আমি কোন আলোচনা করতে চাচ্ছি না তোমার সাথে। তোমাকে রাখা হয়েছে দীপ্তির জন্য।
-সরি ম্যাম।
-কিশোরের আজকের আচরণের জন্য আমিও সরি। ছেলেটা এভাবে হুট করে আসবে আমি জানতাম না। তোমার রুম কাল সকালের মধ্যেই রেডি হয়ে যাবে।------ আর হ্যাঁ শোনো--। সকাল ৮ টার মধ্যে দীপ্তি ব্রেকফাস্ট করে--।
-জি ম্যাম। আমি খেয়াল রাখবো।
-গুড। নাউ গুড নাইট। দরজা খুলবে না আর রাতে। ছেলেটা আবার আসবে না যদিও--। তবুও রিস্ক নিতে চাই না আমি--।
-ইয়েস ম্যাম। এন্ড সরি---।
-হুম।।
তামান্না দরজাটা ভালো করে লক করে এসে দীপ্তির পাশে এসে শুয়ে পড়লো। পাঁচ বছরের মিষ্টি একটা মেয়ে দীপ্তি। চেহারায় সারাক্ষণ খুশির একটা ঝিলিক লেগে থাকে যেন সবসময় মেয়েটার। ডাগর ডাগর টানা চোখ মেয়েটার, নাকটাও একটু খাড়া। আর দশটা পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ের থেকে একটু বেশি আত্মমর্যাদা বজায় রেখে চলে মেয়েটা। ছোট হলেও ঠিকই নিজের পজিশনটা যেন বুঝতে পারে বাচ্চা মেয়েটা। দীপ্তির চুলে আলতো করে হাত বুলাতে বুলাতে তামান্নার একটু আগের মাতাল লোকটার কথা মনে পড়লো। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা লোকটার গায়ের রঙ খানিক বাদামি রঙের। স্ট্রেইট কুচকুচে কালো মাথা ভর্তি চুল আর গভীর মায়াবী চোখ, খাড়া নাক, হালকা লাল ঠোঁটজোড়া -সবই যেন লোকটাকে পারফেক্ট রাজকুমারের মতো করে গড়ে তুলেছে। কি যেন নাম! কিশোর চৌধুরী! এতো বিশাল পজিশনে থাকা একটা রাজকুমারের মতো দেখতে মানুষ রাত বিরেতে এভাবে কি করে মাতলামি করে সেটাই মাথায় ঢুকছে না তামান্নার। কি এমন হয়েছে তার জীবনে! আর তামান্নাকে দেখে এভাবে রিএ্যাক্ট করার কারণটাও তামান্নার মাথায় ঢুকছে না।
দীপ্তির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে এসব ভাবছিল তামান্না। মেয়েটা এতোক্ষণ ধরে কাঁপছে সেটা খেয়াল করে নি তামান্না। হঠাৎ টের পেতেই উঠে বসে লাইট জ্বালালো তামান্না। আলতো করে দীপ্তির পিঠে হাত বুলালো।
-দীপ্তি?? মামনি? দীপ্তি?? কি হয়েছে? কি হয়েছে দীপ্তি??
-কিছু হয় নি। লাইট বন্ধ করো---।
-কাঁদছ কেন দীপ্তি---?? আমাকে বলো? শরীর খারাপ লাগছে?
-না----।
-তাহলে কি হয়েছে বলো??
-কিছু হয়নি বললাম তো মিস। ঘুমাও। সকালে না উঠলে দিম্মার বকা শুনতে হবে---।
-ওকে--। তুমিও ঘুমাও----।
তামান্না লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো। দীপ্তি নড়াচড়া করছে না। থ হয়ে শুরু আছে। তামান্নাও কিছু বুঝতে না পেরে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো৷ তবুও ঘুম আসছে না দেখে উঠে ওয়াশরুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আর ঠিক সেই সময়ই দীপ্তি ধুম করে উঠে বসে তামান্নার ওড়না টেনে ধরলো।
-প্লিজ মিস--। যেও না প্লিজ প্লিজ?
-দীপ্তি?? আমি যাচ্ছি না তো---।
-আমি জানি তুমিও চলে যাবে আমাকে ফেলে--। আব্বু এলেই আমার সব মিস পরের দিন আমাকে ফেলে চলে যায়---।।
-দীপ্তি? কাঁদে না বাবু--। আমি যাবো না তো--। আমি তো ওয়াশরুমে যাচ্ছি---।
-সত্যি যাবে না বলো?
-সত্যি বাবা--। যাবো না।
-আমাকে ছুঁয়ে বলো??
-এই তোমাকে ছুঁয়ে বললাম--। তুমি না বলা পর্যন্ত কোথাও যাবো না--।
তামান্না কথাটা শেষ করা মাত্রই দীপ্তি একলাফে তামান্নার বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো।
-আই লাভ ইউ মিস--।
-লাভ ইউ টু সোনা। এখন ঘুমাও। সকালে দেরি করে ঘুম ভাঙলে দিম্মা আমাদের দুজনকেই বকা দিবে--।
-হি হি। দিম্মা তো এংগ্রী কুইন। হি হি।
দীপ্তির খিলখিল হাসি শুনতে তামান্নার বেশ ভালোই লাগছে। দুজনে মিলে হাসাহাসি করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল টেরই পেল না।
০২!!
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই তামান্না টের পেল গায়ে গরম কিছু অনুভব হচ্ছে। তামান্না তাড়াহুড়ো করে উঠে দীপ্তির কপালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে দেখলো মেয়েটার প্রচন্ড জ্বর। তামান্না তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে একটা বাটিতে পানি নিয়ে এসে দীপ্তির কপালে জলপট্টি দিলো। মেয়েটার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। তামান্না কিছুই বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে দীপ্তির এতো জ্বর এলো কি করে।
সকাল আটটা বাজে।
ফালেহা চৌধুরী ডাইনিং টেবিলে বসে আছে দীপ্তি আর তামান্নার জন্য। কিন্তু আটটা বেজে দশ মিনিট পার হয়ে যেতেও তামান্নারা আসছে না দেখে ফালেহা চৌধুরী ভয়ংকর ভাবে রেগে গেলেন। গতকাল আসা একটা মেয়ে তার এতোদিনের নিয়ম ভেঙে ফেলবে, সেটা তো উনি কিছুতেই মেনে নিবেন না। ফালেহা চৌধুরী রেগে উঠে গিয়ে দীপ্তির রুমের দিকে পা বাড়ালেন। দরজাটা পর্যন্ত এখনো খোলা হয়নি দেখে আরো রেগে গেলেন। এই সময়জ্ঞানহীন মেয়েটার আর যাই হোক দীপ্তির গভর্নেস হয়ে থাকা হবে না। ফালেহা চৌধুরী ইশারা করতেই একজন মহিলা সার্ভেন্ট দরজার কড়া নাড়লো।
দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনে তামান্না তড়িঘড়ি করে উঠে এসে দরজা খুলে দিলো। ফালেহা চৌধুরী রেগে তামান্নার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো ফ্রেশ পর্যন্ত হয়নি দেখে রাগে ফালেহা চৌধুরীর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেল।
-মিস তামান্না? তোমাকে গতকাল বলে দেয়া হয়েছিল দীপ্তি ঠিক আটটার সময় ব্রেকফাস্ট করে।
-ইয়েস ম্যাম---।
-তাহলে এখনো তুমি দীপ্তিকে নিয়ে ডাইনিং রুমে আসলে না কেন? আলরেডি আটটা পনেরো বাজে। ছোট্ট ছেলেমেয়েদের যে সময় মতো খাওয়া দাওয়া করতে হয় এই নরমাল সেন্সটা তোমার নেই?
-আ-আস-আসলে ম্যাম??
-কি আসলে? দীপ্তি এখনো বেডে? তুমিও দেখছি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো! এভাবে চললে তোমার চাকরিটা আর করা লাগবে না মিস তামান্না---।
-সরি ম্যাম--।
তামান্না আর কিছু বলার আগেই রুমের ভিতর থেকে দীপ্তির কাঁতড়ানোর শব্দ ভেসে এলো। মেয়েটা হাঁসফাঁস করতে করতে গড়াগড়ি দিচ্ছে সারা বিছানায়।
-মিস?? মিস প্লিজ আমাকে ফেলে যেও না। তমা মিস??!
দীপ্তির গলা শুনেই সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তামান্না এক ছুটে রুমে এসে দীপ্তির মাথার কাছে বসে মাথাটা কোলে টেনে নিয়ে কপালের রুমালটা আবার ভিজিয়ে জলপট্টি করতে লাগলো।
-মিস কোথাও যাই নি দীপু। এই দেখো আমি তোমার পাশেই আছি--।
-মিস তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে আমাকে ফেলে!!
-কোথাও যাই নি বাবা! দিম্মার জন্য দরজা খুলতে গেছি--। তুমি শান্ত হয়ে শোও দীপ্তি--। মিস আছি তো।
তামান্না রুমে ছুটে আসার পর বাকিরাও রুমে ঢুকে দীপ্তির অবস্থা দেখে একজন ডাক্তারকে খবর দিতে ছুটলো, একজন গরম গরম স্যুপ বানাতে ছুটলো, একজন বরফপ্যাক বানাতে ছুটলো। আর ফালেহা চৌধুরী হা করে তামান্না আর দীপ্তির দিকে তাকিয়ে রইলেন। দীপ্তিকে কোলে করে যেভাবে তামান্না বসে আছে, মনে হচ্ছে মা তার জ্বরে কাতর মেয়েকে কোলে করে শান্তনা দিচ্ছেন।
-তামান্না? দীপ্তির জ্বর কখন থেকে?
-ম্যাডাম-আমি ঘুম থেকে জাগার পরই দেখলাম দীপ্তি ম্যাডামের জ্বর৷
-ওর এতো জ্বর!! তুমি আমাকে ডাকলে না কেন? জাস্ট আনসার মি! ওর কিছু একটা হয়ে গেলে তোমাকে আমি জেলে দিবো------।
-ম্যাডাম! দীপ্তি তো আমাকে নড়তেই দিচ্ছে না। একটু উঠতে নিলেই কান্নাকাটি করছে--। তাই--। সরি ম্যাডাম---।
-ও কি জেগেছিলো অনেক রাত পর্যন্ত??
-স্যার যখন চলে গেলেন----তখনও দীপ্তি ম্যাডাম----।
-হোয়াট!! দীপু জেগে ছিল তখনো! ও কি খুব কান্নাকাটি করেছে! আমাকে ডাকো নি কেন?
-দীপ্তি কান্না করেছিল---। এতো রাত হয়ে গেছে তাই আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি--।
-হাহহহহ।। এই হলো আমার কপাল! নতুন রাখা গভর্নেসও এই বাচ্চা মেয়েটার কষ্টটা দেখতে পায়। শুধু মেয়েটার বাবারই ওর জন্য একটুও মায়া হয় না।
-ম্যাডাম!!
-তুমি ওর খেয়াল রাখো। আমি গেলাম---। ডাক্তার একটু পরেই আসবে। কিছু লাগলে ডেকো।
-জি ম্যাডাম।
দুপুরবেলা তামান্না দীপ্তিকে একটু শুইয়ে দিয়ে খাবার নিতে এসেছিল নিচে। এসেই দেখলো গতকালের মাতাল লোকটা ডাইনিং টেবিলে বসে বসে এই ভর দুপুরে ব্রেকফাস্ট করছে। ব্যাপারটা দেখামাত্রই তামান্নার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এই লোকের মেয়ের জ্বরে কাহিল অবস্থা। বাড়ির কাজের লোকগুলো পর্যন্ত সবাই সেটা নিয়ে এতো চিন্তায় পড়ে গেছে। অথচ এই লোকের নিজের মেয়ের জন্য নূন্যতম চিন্তাটুকুও নেই। তামান্না এসে কিশোরের সামনে দাঁড়ালো। কিশোরও মুখ তুলে তামান্নাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-জি? আপনি কে! চিনলাম না তো?
-কাল রাতেই তো পরিচয় হলো? এতো তাড়াতাড়ি ভুলেও গেলেন?
-হোয়াট!? হু দা হেল আর ইউ মিস?
-আমি তামান্না। আপনার মেয়ের গভর্নেস৷ আপনি ভুল করে কাল যাকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করছিলেন---।
-হোয়াট রাবিশ!! কি সব বলছেন? আমি আপনাকে দেখলামই এইমাত্র---।
-ওহ--। তা আপনার হাতের ব্যথাটা সেরেছে স্যার?
-ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই টের পেলাম। হঠাৎ ব্যথা করছে কেন বুঝলাম না৷ বাই দা ওয়ে--। আপনি কি করে-----?
-সেসব নাহয় না জানলেন--। আপনাকে একটা কথা বলি স্যার। দয়া করে কিছু মনে করবেন না। আপনার ছোট্ট মেয়েটার কথা মনে করে হলেও দয়া করে ড্রিংকস করে মাতলামো করবেন না। এসবে বাচ্চাদের মনে খুব খারাপ----।
তামান্না কথাটা শেষ করার আগেই কিশোর হাতের কাছে একটা গ্লাস পেয়ে সেটাকেই আছাড় মারলো। আর সাথে সাথেই সারা মেঝেয় কাঁচের টুকরোগুলো ছিটিয়ে গেল। তামান্না চমকে উঠলেও নড়লো না এক পা ও। কিশোর তাতে আরো খেপে গেল।
-তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে লেকচার দেয়ার! কি ভাবো কি নিজেকে? সামান্য একজন গভর্নেস হয়ে----?
-জি আমি আপনার মেয়ের সামান্য একজন গভর্নেস। কিন্তু আমার কাজই হলো দীপ্তির ভালো মন্দের খেয়াল রাখা। আমি দীপ্তির কথা ভেবেই কথাগুলো বলতে এলাম আপনাকে---।
-আমার মেয়ের ব্যাপারে আমি তোমার থেকে এডভাইস নিবো? লাইক রিয়েলি! তোমাদের মতো ধোঁকাবাজদের আমার খুব ভালো করেই চেনা আছে------।
-কাকে চেনা আছে আমি সেটা জানিও না স্যার। আর জানতে আগ্রহীও নই। আমি দীপ্তির কথা জানি। ওর কথাই--------।
-আমার মেয়ের কথা, ওর কি সমস্যা, সেটা এখন আমাকে তোমার থেকে জানতে হবে?
-অবশ্যই জানতে হবে স্যার। গতকাল রাতে আপনাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখার পর মেয়েটার কি হাল হয়েছে সেটা কি আপনি জানেন? রাতে মেয়েটা কতোটা কান্নাকাটি করেছে সেটার খেয়াল রেখেছেন আপনি? সকাল থেকে ওর যে এতো জ্বর সেটার খবর আছে আপনার? ডাক্তার এসে ইনজেকশন পুশ করায় মেয়েটা এখন শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে--। সেটা আপনি জানেন?
-হোয়াট??
-ইয়েস স্যার। এন্ড এতোকিছুর পরেও আপনি বলবেন আপনার মেয়ের খবর আপনার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। তাই তো? শুধু আমার সন্তান আমার সন্তান করে চেঁচালেই হয় না স্যার। নিজের সন্তানের খেয়ালটাও রাখতে হয়। মেয়েটার মা নেই। আপনি বাবা হয়েও যদি---------।
-হাউ ডেয়ার ইউ----??
কিশোর রাগী চোখে তামান্নার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার আগেই দীপ্তির গলা শোনা গেল।
-আমি তমা মিসের কাছে যাবো। মিস আমাকে রেখে চলে যাবে। মিস?
তামান্না আর একবার কিশোরের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ছুটে রুমের দিকে ছুট লাগালো। কিশোর বোকার মতো তামান্নার ছুটে চলে যাওয়া দেখলো। আর ফালেহা চৌধুরী এতোক্ষণ ধরে কিশোরের আর তামান্নার তর্ক বিতর্ক শুনে উপর থেকেই মুচকি হাসলেন। কিশোরকে জব্দ করার যোগ্য মানুষ পেয়ে গেছেন তিনি।