প্রিয়তা (পর্ব ০৩)


"আমার মনের ঘরে 
প্রবেশ তোমার শ্যামলতা
হৃদয়ে উচ্চারিত শব্দ তুমি প্রিয়তা।"

কবিতাটা পড়ে অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইল আরশি।মনে মনেই বলে উঠল-"মিষ্টার নায়ক আবার কবিও।আর কে এই প্রিয়তা?তখন আনহার কানে ও প্রিয়তা শুনলাম।আর এখন এই চিরকুটে ও কবিতাটা প্রিয়তা কে নিয়ে লিখা।মিষ্টার নায়কের ভালোবাসার মানুষ নয়ত?কিন্তু সবাই জানে ওনার কোনো জিএফ নেই। নিশ্চয়ই প্রিয়তা ওনার জিএফ কিন্তু ওনি সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছেন।এতো লুকোচুরি কেনো খেলেন আপনি নায়ক সাহেব?"(কথাটা মনে মনে বলতেই নিজেরই হাসি পেল আরশির।)

হঠাৎই আরশির মাথায় এলো-"মিষ্টার নায়ক যে আমাদের বিয়ের কাবিননামা দেখালো এবং ওনার কাছে থাকতে ও বাধ্য করছেন।প্রিয়তা নামের মেয়েটি যদি ওনার ভালোবাসাই হয় তবে আমায় কেনো বিয়ে করল?কিছুই মাথায় ঢুকছে না।এ কেমন জালে ফেসে গেলাম আমি?প্রথমে মধ্য রাতে চাচা -চাচীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া।তারপর এক্সিডেন্ট।ওনার সাথে দেখা হওয়া। আর ওনি আমাকে নিজের বউ বলে দাবি করা।কি হচ্ছে? কেনো কিছুই বুঝতে পারছি না আমি?আমার কেনো মনো হচ্ছে সবকিছুর উত্তর এই নায়ক সাহেবের কাছেই আছে।"
- যাবো না আমি নায়ক সাহেব যাবো না।আমাকে সব রহস্য জানতে হবে।আর তা জানার একমাত্র উপায় আপনি

কিছুক্ষণ আগেই ------

রুমে একা একা বসে ভালো লাগছিল না।আনহা চলে গেছে প্রায় আধাঘন্টা হবে।বোরিং লাগছিল তাই রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আরশি।খুব সুন্দর আর বড় রুমটা।তার চেয়ে ও বেশি সুন্দর বারান্দাটা।বারান্দাটা খোলামেলা।শুধু অর্ধেক অংশে কাচ দেওয়া। বারান্দার দেয়ালে খুব সুন্দর সুন্দর ফ্রেমে বাধানো প্রকৃতির ছবি টানানো ।ছবি গুলো খুব নিখুত ভাবে তোলা হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।যেই ব্যক্তিই ছবিগুলো তুলেছে নিশ্চই অসাধারণ ফটোগ্রাফার সে।অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ আছে বারান্দায়। কালো,সাদা,লাল কালারের গোলাপে ভরপুর। সবুজ কার্পেট বিছানো।একপাশে বেতের দুটো মোড়া  আর তার মাঝে কাচের ছোট টেবিল।আরশি আনমনেই বলল--" বাহ্!!!নায়ক সাহেব তো বড্ড ফুল প্রেমিক।""হঠাৎই আরশির নজর পড়ল বারান্দার পাশে থাকা বড় কাঠ গোলাপের গাছটার দিকে।এতো বড় কাঠ গোলাপ গাছ সে আগে কখনোই দেখে নি।গাছে এতো কাঠগোলাপ দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল সে।কারণ কাঠ গোলাপ তার পছন্দের ফুল।বারান্দায় থেকেই হাত বাড়িয়ে অনেক গুলো কাঠ গোলাপ পেরে নিলো সে।রুমে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার।কারণ সে ভেবেছিল বেনি করে চুলে কাঠগোলাপ লাগাবে।কিন্তু তার ডান হাতে ব্যাথা।তাই মন খারাপ নিয়েই এগিয়ে গেলো বুক সেলফের দিকে।গিয়ে  প্রথমে একটা বই হাতে নিয়ে দেখল ইংরেজি একটা উপন্যাসের বই।এইসব আরশির মাথায় ঢুকে না তাই সেটা সেখানেই রেখে দিল। আরেকটা বই হাতে নিয়ে দেখল রোমান্টিক উপন্যাস।

এইভাবে দেখতে দেখতেই তার নজর কাড়ল এক কর্ণারে রাখা কাচের পাত্রের দিকে এবং তার মধ্যে থাকা অসংখ্য লাল নীল সবুজ বিভিন্ন রঙের চিরকুট গুলো।ভ্রু কুচকে এলো তার।এই মুহুর্তে এতো সুন্দর করে এক কর্ণারে লুকিয়ে রাখা চিরকুট গুলোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে।তার মন প্রথমই চিরকুট গুলো পড়তে চাইল।অনুমতি ছাড়া অন্যের জিনিস ধরা ঠিক না তাই সে দমে গেলো।কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে একটা চিরকুটের ভাজ খুলে পড়েই ফেলল।যাতে খুব সুন্দর করে ওই কবিতাটা লিখা ছিলো। 

-------------------

ঠিক একঘন্টা পরে ব্যাক করল আয়াজ।তার পিছু পিছু রুমে হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে একজন সার্ভেন্ট প্রবেশ করল।রুমে ঢুকে চারপাশে চোখ ভুলিয়ে আরশির দেখা পেলো না আয়াজ।ইশারায় সার্ভেন্ট কে ব্যাগ রেখে যেতে বলল।আয়াজ তার পা বাড়াল বারান্দার দিকে।সে ভালো করেই জানে আরশিকে সেখানেই পাবে।এই রুম থেকে বের হওয়া আরশির সম্ভব না।কারণ রুমের বাহিরেই দুজন গার্ড কে পাহারায় রেখে গিয়েছিল সে।

কারো গরম নিশ্বাসের উত্তাপ আরশির ঘাড় ছুয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো সে।তার বুঝা হয়ে গেছে পিছনে আয়াজই দাড়িয়ে আছে।কারণ আনহার কাছে শুনেছে আয়াজের অনুমতি  ব্যাতীত কারও  সাহস নেই এই রুমে আসার।
আয়াজ আরশির আরেকটু কাছে গিয়ে কানে ফুঁ দিলো।নেশাময় কন্ঠে ডাকল---" মিস আরশি!"
শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে গেলো সামান্য এই ডাকে।ভালো লাগা ছেয়ে গেলো মনের প্রতিটি কোণায়। মনে মনে ভাবল আরশি--"কী অদ্ভুত ওনার কন্ঠতা এতো নেশাময় কেনো?সামান্য নাম ধরে ডাকায়  এতো ভালো লাগা ছেয়ে গেলো কেনো?

ঘুরে দাড়ালো আরশি।আয়াজ একদম কাছে দাড়িয়ে থাকায় ওষ্ঠদ্বয় গিয়ে ঠেকল আয়াজের বুকে।সাথে সাথেই এক কদম পিছিয়ে গেলো আয়াজ।মুখে তৃপ্ততার হাসি ফুটিয়ে চেয়ে রইল আরশির পানে।আর আরশি বেচারি তো জমে একদম বরফ হয়ে গেলো।"একি করল সে?সে তো ইচ্ছে করে করে নি   ভেবেছিল নায়ক সাহেব চলে গিয়েছে। ছিঃ আরশি!!! কি ভাবছেন ওনি?ওনি কি বুঝতে পারছেন আমি এইটা ইচ্ছে করে করি নি!!!

আরশি কোনোমতে তুঁতলিয়ে বলল-"আআআমি ইচ্ছেছ কককরে কককরি নি নায়ক সাহেব।আমি তো...

আর কিছু বলার আগেই আয়াজ কোমর জরিয়ে নিজের কাছে টেনে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল--"ইটস ওকে মিস আরশি।যেইভাবেই করেছ তোমার  ওষ্ঠদ্বয়ের প্রথম ছোঁয়ায় হৃদয় আমার পরিতৃপ্ত। "কথাটা বলেই কানে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে রুমে চলে গেলো। 
কান গরম হয়ে গেলো আরশির। দেহ মন সব ঐখানেই থমকে গেলো।কিছুক্ষণ পর হুঁশ আসতেই মনে মনে ফুঁসে উঠল
---" নিশ্চয় চরিত্রে দোষ আছে।নইলে কি এই খচ্চর নায়ক সাহেব   চিরকুট লিখে তার প্রিয়তার নামে আর আমাকে বউ দাবি করে লুতুপুতু করতে আসে।ভাগ্যিস আমায় বাঁচিয়ে ছিলেন মিষ্টার নায়ক নয়তো নয়তো খুব খারাপ হতো।"

আর ফুস ফুস করতে হবে না রুমে আসুন মিস আরশি।মাথা নিচু করে রুমে আসল আরশি।যতই মনে মনে ফুঁস ফুস করুক না কেনো এই লোক কে ভয় ও লাগছে তার।এতো রহস্যময় মানুষ আগে দেখে নি সে। টিভির স্ক্রিনে তো অলওয়েজ একটা হাসি খুশি মানুষ দেখতে পেতো যার অভিনয় ও খুব নিখুঁত।ভাগ্যবসত আজ এই লোকের কাছে না আসলে কখনও জানতেই পারতো না লোকটা কতো লুকোচুরি খেলছে। 

-"তো কি ডিসিশন নিলেন? "
- আমি থাকবো নায়ক সাহেব। কিন্তু তার বিনিময়ে আপনাকে  সবকিছু খুলে বলতে হবে।
গম্ভীর স্বরে আয়াজ বলে উঠল-" সবুরে মেও ফলে জানেন তো মিস আরশি?তো সবুর করুন। যদি পারো তো বিশ্বাস রাখো। আর কোনো কথা নেই ঔষধ খাওয়ার সময়  হয়েছে। জলদি সুস্থ হতে হবে তোমায়।তোমার সুস্থতা অনেক জরুরী।"

কথাটা কেমন যেনো লাগল আরশির। 
-মানে?
- মানে কিছু নেই এখানে তোমার কাপড় আছে গোসল সেরে নাও।আর হে মাথায় পানি দিও না কপালের ব্যান্ডেজ ভিজে যাবে।
-আচ্ছা। 
আরশি যেতে নিলে..
- শুনো,,,
-জ্বী।
-তোমার ডান হাতে তো ব্যান্ডেজ তুমি একা তো পারবে না।আমি না হয় আনহা মানে আমার ছোট বোনকে ঢেকে দেয়। 
- এতো ভাবতে হবে না নায়ক সাহেব।হাতের অবস্থাটা এতোটাও জটিল না।আমি নিজেই পারবো।
-ঠিক আছে।সাবধানে। 
-হুম।
আরশি যেতেই আয়াজ ও অন্য রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে জানালো ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে।রুমে এসে দেখল আরশি খাটে বসে আছে।পড়নে তার লাল কালো মিশেলে একটা থ্রি পিছ।এতো সাধারণ মেয়েটাকে অসাধারণ লাগছে আয়াজের কাছে।মনে পরে গেলো সেই লাল পরীর হাসির মুহূর্ত। চোখ দুটো বন্ধ করে আবারও মেলে আরশির দিকে এগিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল--"চলুন ম্যাম"।

আয়াজের হাতটা ধরেই নিচে নেমে আসল আরশি।টেবিলের কাছে আসতেই চেয়ার টেনে দিলো আয়াজ।আয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে পড়ল সে। আয়াজও পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। চেয়ারে বসার পরে মাথা উঁচু করে চারপাশে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলল আরশি।

—————

আরশির দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে সবাই। আরশি বেচারি তো পারছে না লজ্জায়  টেবিলের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। আরশির এতো লজ্জার কারণ হলো তার নায়ক সাহেব।যিনি নিজের হাতে আরশিকে খাবার খাওয়াচ্ছে খুব যত্ন করে একদম বাচ্চাদের মতো। আরশির ডান হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় বারবার না করা সত্ত্বেও তাকে আয়াজের হাতেই খেতে হচ্ছে। আরশি লজ্জায় মাথা নিচু করে খাবার গিলছে আর ভাবছে---"একদিনের পরিচয়ে লোকটা কে এতো কাছের মনে হচ্ছে। লোকটার কেয়ারগুলোও মনটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছে। অদ্ভুত আপনি নায়ক সাহেব।কখনো রাগ করছেন কখনো কেয়ার করছেন আবার কখনও রহস্যময় হয়ে উঠছেন।মন বলছে আপনার সব কথা বিশ্বাস করে নিতে।মন বলছে সত্যি হোক মিথ্যে হোক আপনার আমাকে বউ দাবি করাটা মেনে নিতে।""

আরশির ভাবনার ছেদ ঘটল আয়াজের ঢাকে।মাথা তুলে আয়াজের দিকে তাকালো।
-ঔষধটা খেয়ে নাও।
ঔষধ খেয়ে আরশি ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসল ।আনহাও তার পাশে বসল।হেসে বলে উঠল- "কি ভাইয়ার হাতে খেতে কেমন লাগল?
আরশি দুষ্ট  হেসে বলল-" ভালোই তো লাগল।"
আরশির কথায় হেসে উঠল আনহা।তাদের সাথে যোগ দিল আনহার মামাতো ভাই বোন।তখন তাদেরকে দেখেই আরশির চোখ বড় বড় হয়ে গেছিল লজ্জায়। সে আয়াজের সাথে মাথা নিচু করে আসায় কাউকে দেখতে পায় নি।কিন্তু সবাই তো তাকে দেখেছে আয়াজের হাত ধরে আসতে।সেটা ভেবেই লজ্জায় চোখ দুটি বড় বড় হয়ে গেলো।আয়াজ তার মামা মামী সবার কাছেই আরশি কে নিজের বউ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

সন্ধ্যার দিকে আয়াজের ডাকে রুমে এলো আরশি।এতোক্ষণ আনহার সাথে তার রুমেই ছিলো সে।আরশি আয়াজের রুমে নক করল।
-কামিং
রুমে এসে দেখল আয়াজ ল্যাপটপে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু করছে।আরশি আরেকটু কাছে এসে দাঁড়াতেই আয়াজ উঠে দাঁড়াল। 
-বসো।
-জ্বী?
-ফ্লোরে বসো। 
-কেনো?
আয়াজ একটু রাগী স্বরে বলল-"বসতে বলেছি"
আয়াজের রাগী স্বর কানে যেতেই সে ফ্লোরে বসে পড়ল।আয়াজ একটা চিরুনি হাতে নিয়ে বিছানায় বসল।আয়াজ কি করছে কিছুই বুঝতে পারছে না আরশি।চুলে হাত দিতেই আরশি হকচকিয়ে উঠল---
-কি করছেন?
-সামনের দিকে তাকাও বেশি কথা বলো না।
-কিন্তু.. 
সামনে তাকাতে বলেছি।
সোজা হয়ে বসে পড়ল আরশি।আয়াজ খুব সুন্দর করে চুল গুলো বেনী করে দিলো।অবাক হলো আরশি।আয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল-
-আপনি চুলে বেনীও করতে পারেন?
-পারি তো।মাঝে মাঝে আনহার চুলে করে দেয়।
- নায়করা কি এইসব ও পারে?
-কেনো নায়করা কি মানুষ হয় না?
-হয়।কিন্তু আমি ভাবতাম নায়করা সারাক্ষণ বাজে অভ্যাস নিয়ে বিজি থাকে।এই ধরেন সারাক্ষণ এই নায়িকা ওই নায়িকা,, জিএফ,, মুভি এইসব নিয়ে। 

আরশির কথায় হেসে দিলো আয়াজ।হাসিটা চোখ এড়াল না আরশির।
--"দেখেছেন আমার কারণে আপনার মুখে হাসি।অথচ মানুষ বলে আপনি নাকি হাসেন -ই না।(ভ্রু নাচিয়ে বলল আরশি)
--আমার হাসির কারণ তো সেই তুমিই বছর খানেক আগেই হয়েছিলে আবার তুমিই কেড়ে নিলে।

আয়াজের কথাটা  ঠিক বুঝতে পারল না আরশি।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল--কি বললেন? 

-কিছু না। কথাটা বলেই আরশিকে বসা থেকে টেনে উঠাল আয়াজ।আয়নার সামনে এনে দাঁড় করালো তাকে।আরশির পিছনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল---আরশি মানে কি জানো?

আয়াজের প্রশ্নে আয়নার দিকে তাকাল।আয়াজ ঠিক তার পিছনে দাড়িয়ে আছে। একদম স্পষ্ট ভেসে উঠল আয়াজের চেহারাটা।আরশির মনে হলো আয়াজের মতো এতো সুদর্শন ছেলের সাথে তাকে একদম বেমানান লাগছে।কোথায় আরশি আর কোথায় এই নায়ক সাহেব।এতো ভেবে লাভ নেই আরশি তোর অপেক্ষা শুধু রহস্য উম্মোচনের।হালকা করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আয়নায় দৃশ্যমান আয়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল--"জানি।আরশি অর্থ আয়না।"

আয়াজ হেসে বলল-"আর তুমি এই আরশির মতোই স্বচ্ছ। "

হঠাৎ আরশি অনুভব করল আয়াজ তার বেনী তে কিছু গেঁথে দিচ্ছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখল আয়াজের হাতে কাঠগোলাপ। খুব বেশি অবাক হলো আরশি।তার চেয়েও অনেক বেশি মুগ্ধ হলো।
কাঠগোলাপ গুলো গাঁথা শেষ হলেই আরশি খুশিতে আয়াজের কাছে গেলো।তার খেয়ালই নেই সে আয়াজের কতোটা কাছে চলে গিয়েছে। বিন্দু পরিমাণ ও ফাঁক নেই দুজনের মাঝে।আয়াজ আরশির এতো কাছে আসায় যেনো ঘোরে চলে গেলো।ওইদিকে আরশি খুশিতে আত্মহারা হয়ে বার বার বলেই যাচ্ছে -"-আপনি কিভাবে বুঝলেন নায়ক সাহেব আমার বেনী করে কাঠগোলাপ দিতে ইচ্ছে করছিল?"আয়াজ সব শুনছে কিন্তু তার মন মন বারবার তাকে আরশির দিকে টানছে। আরশির দিকে ঝুঁকে গালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো সে। এক পলকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো আরশি।  দৌড়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

------------------------------------

সকালে,,,,,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের হাওয়া নিজের গায়ে মাখিয়ে নিচ্ছে আরশি।রাতে মাথা ব্যাথাটা একটু বেড়েছিল।এমনিতেও রাতে আনহার ফোন আলাপে ভালো ঘুম হয়নি তার। তার ঘুম খুব পাতলা।ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আনহার বিশেষ কেউ রয়েছে।

বিশেষ কেউ শব্দটা ভেবেই হাসি পেলো তার।তার কখনও বিশেষ কেউ হয়নি।একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হলো কিন্তু উল্টো তার বাবা মা-ই আবার তাড়িয়ে দিল।মানুষ টা খোঁজ ও নিলো না।আরেকজন বউ বলে দাবি করছে। কেউ নেই তোর আরশি কেউ নেই। (কথাটা বিড়বিড়  করে বলল আরশি)।একটা দীর্ঘশাস ছাড়ল। স্পষ্ট কন্ঠে উচ্চারিত করল--"চা খেতে পারলে একটু শান্তি অনুভব হতো।"
বড্ড চা প্রেমী সে।আগে সকাল বিকাল নিয়ম করেই চা খেতো।
দরজায় কেউ কড়া নাড়ার শব্দে রুমের দিকে গিয়ে গেলো সে।দরজা খুলতেই মেয়েটা বলে উঠল-
- ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছে।
-আচ্ছা আসছি।

রুমে গিয়ে দেখল আয়াজ নেই। বারান্দায় গিয়ে দেখল আয়াজ রেলিং -এ ভর দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আরশির উপস্থিতি টের পেয়ে আয়াজ ঘুরে দাঁড়াল। ছোট টেবিলের উপর থেকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলল

--আসুন মিস আরশি চা খেতে খেতে ভোর বিলাস করি।

বিস্ময় নিয়ে বলল আরশি-- জোস্না বিলাস শুনেছি।ভোর বিলাস আবার হয় নাকি?

আয়াজ চায়ের কাপটা আরশির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল--"চাইলে সবই হয়।"
হাতের ব্যাথাটা সেরে গেছে।কাপটা ধরতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

আয়াজের পাশে এসে ধারালো আরশি।চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবল--"এই লোকটা কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে যায়?কেনো একদিনের পরিচয়ে মনের মধ্যে অজানা অনুভূতি গ্রাস করছে এই লোকটার প্রতি?মায়ায় ফেলতে চাইছেন নায়ক সাহেব?তবে আপনার যে প্রিয়তা আছে।

আয়াজ আরশির সামনে একটা পার্স এগিয়ে দিল।পার্সটা পেয়ে আরশি সাথে সাথেই কেড়ে নিলো।যেনো নিজের মূল্যবান কিছু ফিরে পেয়েছে।পার্স খুলে দেখে নিলো আরশি সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।সারারাত সে ভেবে কষ্ট পাচ্ছিল বাবার দেয়া শেষ জিনিসটাও সে রক্ষা করতে পারল না।এখন তার মনে হচ্ছে আয়াজ কে যতই ধন্যবাদ দিবে সেইটাও কম হবে। ঐদিন যখন আয়াজ যখন আরশিকে কোলে নিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন নিশাদের চোখ যায় পার্সটার দিকে।আরশির মনে করেই সে এইটা নিয়ে আসে।সে নিজেও হয়তো জানে না কতবড় উপকার করেছে সে।

"গেট রেডি মিস আরশি।" (চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে কথাটা বলল আয়াজ) 
--কীসের জন্য? (অবাক হয়ে) 
-সিলেট যাচ্ছি আমরা।
--আমরা মানে?
--তুমি আর আমি।
--কিন্তু কেনো?
---নো মোর কুয়েশ্চন।

----------------------------------

আয়াজ কাঁচের  দেয়ালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে।দরজা ঠেলে নিশাদ প্রবেশ করল কেবিনে।বাহিরের দিকে দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন ছুড়ল---
"আপডেট কি নিশাদ?"
-স্যার ইফাজ দেশে ফিরেছে।
-ভালো নিউজ।আর বাকিটা?
-মাছ আামাদের জালে খুব শীগ্রই ফাঁসছে স্যার।( বাঁকা হেসে বলল নিশাদ)
-ওকে ইউ মে গো নাও।
নিশাদ যেতেই নিজের হাতে থাকা ছোট নাইফটা চেপে ধরল আয়াজ। গড়গড়িয়ে রক্ত পড়তে লাগল।রক্তিম হয়ে উঠল সারা মুখ।বাঁকা হেসে বলল- " আর কতো লুকোচুরি ইফাজ? ওয়েলকাম ব্যাক।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন