সবুজ কাজলের কৌটো - পর্ব ০৯ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৭!! 

নিয়ম করে অফিসে যাচ্ছে আয়ান। মধ্যে তিনটা দিন কেটে গেছে। প্রতিদিন বাসায় এসে খালি চেয়ারটা দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না। ইদানিং বেশ তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরছে। কাজের চাপও ততটা নেই। আর অফিসে বসে থাকতে ভালো লাগে না। কিছু একটা ছুটে যাচ্ছে-হারিয়ে যাচ্ছে-এমন একটা অনুভূতি কাজ করছে মনের ভেতর। না কিছু করে শান্তি পাচ্ছে- না ঘুমটা হচ্ছে আয়ানের। কিন্তু এতো কিসের শূন্যতা অনুভব করছে সেটাই বুঝতে পারছে না আয়ান। কিছু একটা নেই জীবনে।। কিন্তু কি সেটা!!!

রাত ১১ টার দিকে ফিরেছে বাসায়। দরজায় দাঁড়িয়ে বেশ অনেকক্ষণ কলিংবেল বাজিয়েছে। খেয়ালই ছিল না যে বাসায় কেউ নেই।। মায়রা তো বাবার বাসায়। করিম চাচা আর নিয়াজ স্টাফ কোয়ার্টারে থাকে।। মিনুও সপ্তাহ দুয়েক হলো বাড়িতে গেছে। ওর মা অসুস্থ।। মায়রাও ওকে মাস খানেক থেকে আসতে বলেছে। পুরো বাড়িটা খালি। ব্যাপারটা মনেই ছিল না আয়ানের। করিম চাচা কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেটাও টের পায়নি আয়ান।।

-স্যার-??? বাসায় তো কেউ নেই---।।

-হুম??? ও হ্যাঁ--।। তাই তো------।

-রাগ করবেন না স্যার। ছোট মুখে বড় একটা কথা বলি--।। ম্যাডামকে নিয়ে আসেন গিয়ে--।। স্বামী স্ত্রীতে এতো রাগ অভিমান জমিয়ে রাখা ভালো ব্যাপার না। হয়তো পরে এতোটা দেরি হয়ে যাবে নিজের ভুলটা শুধরে নেয়ার সময়টাও পাবেন না-----।।

আয়ান করিম চাচার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।।

-আমি গরীব হলেও বয়সে আপনার বাবার বয়সী।। তাই বলে ফেললাম কথাটা। মেয়েটাকে অনেকদিন মনমরা হয়ে থাকতে দেখেছি তো।। তাই বলে ফেললাম।। ভুল কিছু বললে ক্ষমা করে দিবেন স্যার।। 

করিম চাচা আবার গেইটে গিয়ে দাঁড়ালো নিজের জায়গায়। আয়ানও কি করবে ভেবে না পেয়ে লকটা খুলে বাসায় ঢুকলো। শূন্য বাসাটাও যেন হাহাকার করছে। কারো ফেরার অপেক্ষা করছে। ফ্রেশ হয়ে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফ্রিজে ঝুলানো নোটটা ছুঁয়ে দেখলো আয়ান। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। পাশ ফিরে কোলবালিশটা দেখলো।। আবার সিলিং এর দিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো আয়ান। কি করছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না। কেন করছে এসব!!?? হঠাৎ মোবাইলে রিং হতেই তাড়াতাড়ি উঠে মোবাইলটা হাতে নিলো আয়ান। হতাশ হলো।। নাম্বারটা পরিচিত না। তবু কলটা রিসিভ করলো।। 

-হ্যালো-। কে বলছেন??

-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমি মায়রার ফ্রেন্ড নেহা বলছিলাম। আপনি তো আয়ান ভাইয়া তাই না??

-জি--। বলুন---।।

-মায়রাকে ফোনটা একটু দিবেন প্লিজ?? আসলে ওর মোবাইলটা আনরিচএ্যাবল বলছে কাল থেকে।। আর এই ৭-৮ দিন ধরেও কলেজে আসছে না---।।।তাই--। 

-মায়রা একটু বাবার বাসায় গেছে। ফোনে হয়তো চার্জ নেই------।

-ও আচ্ছা--।। না আসলে ওর ফোন তো কখনো ওফ থাকে না--। তাই---।। আচ্ছা ভাইয়া--। আপনি গেলে বলিয়েন আমাকে যেন কল করে--।।

-আচ্ছা--।। বলবো---।।

-আচ্ছা ভাইয়া।। সরি এতো রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য।। শুভ রাত্রি।।

-জি।। বায়।।

নেহার কলটা কেটে যেতেই আয়ান মায়রার নাম্বারে কল দিলো।। মোবাইলটা আসলেই বন্ধ।। আয়ানও একটু চিন্তায় পড়লো। মেয়েটার মোবাইলটা কখনোই বন্ধ থাকতে দেখে নি।। কি হলো আজ হঠাৎ!!?? এখন হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। সকালে তাথৈ বা বাসার নাম্বারে কল দিয়ে জেনে নিবে। চিন্তা করলো আয়ান। ব্যাপারটা চিন্তা করে আবার শুয়ে পড়লো। সিলিং ফ্যানটা গোল গোল ঘুরছে। সেটা দেখতে দেখতে একসময় বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো আয়ান। ঘুম কি আজও আসবে না!?? ঘুম না এলে জেগে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে কি হবে!! এর চাইতে কিছু পড়া যাক!! 

ব্যাপারটা চিন্তা করে বুক সেল্ফ থেকে বই নিতে গেল আয়ান। মায়রা বই পড়তে খুব পছন্দ করে।। তাই রুমের এই অংশটা আয়ান মায়রার পছন্দ মতো করে সাজিয়েছে। সারা দেয়াল জুড়ে কয়েকটা ওয়াল বুক সেল্ফ। আর তাতে কয়েক শ বই। রূপকথার থেকে শুরু করে বিদেশি থ্রিলার সব আছে। মেয়েটার বাচ্চামির কথাটা খেয়াল হতেই হেসে ফেললো আয়ান। দু-তিনদিন মায়রাকে বই পড়ে শুনিয়েছিল।। রূপকথার গল্পের বই। আয়ানের বুকে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা। কথাটা মনে পড়তে হেসে ফেললো আয়ান। বইগুলো ছুঁয়ে দেখতে ভালো লাগছে আয়ানের। মনে হচ্ছে আলতো করে মায়রার হাতে হাত ছোঁয়াচ্ছে।। ব্যাপারটা চিন্তা করতে আবার হেসে ফেললো আয়ান। কি সব ভাবছে!! 

কি বই পড়বে চিন্তা করেও ঠিক করতে না পেরে বইগুলোর নামই পড়ছে আয়ান। এতো এতো বই!  নাম পড়তে পড়তেই তো ঘুম চলে আসার কথা। একটা নীল মলাটে নাম না দেখে সেটাই হাতে নিলো আয়ান। ডায়েরি!! বুকসেল্ফে ডায়েরিটা কোত্থেকে এলো!!! প্রথম পেইজটা উল্টে মায়রার হাসিমুখের একটা ছবি গাম দিয়ে আটকানো আছে দেখতে পেল। বেশ আগের ছবি। সেটা আলতো করে হাতে ছুঁয়ে দেখলো আয়ান। ডায়েরিটা নিয়ে খাটে এসে বসলো আরাম করে। কি আছে ডায়েরিটাতে দেখার কৌতূহল হচ্ছে খুব।। পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই হা হয়ে গেল আয়ান। আয়ানের একটা ছবি লাগানো।। এই ছবিটা পেল কোথায় মায়রা!! নীল টিশার্ট  পড়া একটা ছবি।। ছবিটা কবেকার তোলা মনেই পড়ছে না। ছবির নিচে কিছু লেখা।

'মানুষটাকে প্রথম দেখলাম।। এতো মিষ্টি একটা ঘ্রাণ গায়ে কেন!!?? নেশা ধরে যাচ্ছে তো।।'

আয়ান হাসলো।। মায়রার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল!! ছবিটা কিভাবে আর কখন তুললো মেয়েটা? এরপরে একে একে প্রথম দেখার কথা, কখন কি কথা হতো, ভালোলাগার কথা, ভালোবাসার কথা। পড়ছে আয়ান।। আর হাসছে।। 

"মানুষটা স্বপ্নে এসে এসে এতো কেন জ্বালায়!! ইচ্ছে হয়----।। আহহহ--। সারাদিন স্বপ্নে না এসে সত্যি সত্যি এলেই তো হয়!!"

"নেহা একটা কথা বলেছে আজকে।। এতো বেশি ছেলেমানুষ হলেও নাকি হয়না।। ছেলেমানুষি এক দিন ভালো লাগবে-দুদিন সহ্য হবে।। তিন দিনের সময় ঠিকই বিরক্তি চলে আসবে।। আর ছেলেদের মন তো--------।
ওকে বকে দিয়েছি একদম আচ্ছা করে।। তোমাকে নিয়ে পচা কথা বলবে কেন!!?"

"আজ প্রথম সবুজ কাজলের কৌটো থেকে কাজলটা পড়েছি। মানুষটা এতো অবাক হয়ে তাকিয়েছিল!! আজ থেকে এটা আমার সবববববববচেয়ে ফেভারিট। আমার রাগ হলে এক কোটো সবুজ কাজল গিফ্ট করলেই হবে--। হি হি।"

এতোটুকু পড়ে আয়ান আবার হেসে ফেললো।। মায়রাটা সত্যি একটা পাগলী!
পড়তে পড়তে একটা পৃষ্ঠায় এসে থমকে গেলো আয়ান।।

" মায়রা?? তুমি কি আমার সত্যিকারের পিচ্চি বউ হবে?? সকাল সকাল আমার দুষ্টুমিতে তোমার ঘুমটা ভাঙানোর অনুমতি দিবে?? অথবা কাজের শেষে বাসায় ফিরলে ছুটে এসে বুকে মুখ লুকাবে?? অথবা আসতে দেরি হয়ে গেলে- বকা দিবে বা তাথৈয়ের মতো দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে কানে ধরে ওঠবস করাবে --।। ছুটির দিনগুলোতে দুজনে ছাদে শুয়ে শুয়ে রাত জেগে তারা গুনবো আমরা।। কখনো সন্ধ্যায় দুজনে বারান্দায় বসে এক মগে করে কফি খাবো।। বা দুপুরে তুমি রান্না করবে-আর আমি তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখবো।। অথবা কখনো সকাল সকাল বলবো-চলো আজ কোন কাজ নয়-ছুটি। সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে রাত করে বাসায় ফিরে ক্লান্ত আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বো--।। কি গো?? সারাজীবনের জন্য আমার ছোট্ট নীল পরী বউটা হবে???!!

এই কথাগুলো যখন বলেছিল মানুষটা কান্না চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। এতো কেন ভালোবাসে লোকটা আমাকে!"

আয়ান ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে নিলো। নিজের দেয়া কথা কতোটুকু রাখতে পেরেছে সে??!! যে মেয়েটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে প্রতিদানে কতটুকু ভালোবাসা দিয়েছে!!??

"জানো বাবুদের নাম ঠিক করেছি।। বকতে পারবে না কিন্তু নাম শুনে।। বড় পিচ্চির নাম 'আমায়া', এর পর 'আয়রা' আর আমাদের দুষ্টু ছেলেটার নাম 'আমান'--। পছন্দ হয়েছে নাম??"

ডায়রিটা পড়তে পড়তে পার্টির দিনের লেখাটাতে এলো আয়ান।।

"সরি গো।। আমি আসলে জানি না তো কিভাবে পার্টিতে ড্রেসআপ করে যায়। আ'ম সরি। কান ধরছি। আর হবে না।"

আয়ান ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে আছে। এতো কেন পাগলের মতো ভালোবাসে মেয়েটা ওকে!! মেয়েটার ভালোবাসার কোন মূল্যই তো দিতে পারছে না। তবু কেন!!???

আয়ান অফিসের একটা রুমে বসে আছে। আরিশা তার সামনে দাঁড়ানো।।  একটা হাত টেনে আরিশাকে একদম টেনে বুকে মিশিয়ে নিলো আয়ান। মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাবে এমন সময় ঝনঝন করে কিছু একটা ফ্লোরে পড়ে জোরে শব্দ হলো।। আয়ান মুখ তুলে পিছনে ফিরতেই মায়রার মুখটা দেখলো।। মায়রা কাঁদতে কাঁদতেই ছুটে বেরিয়ে গেল।। আয়ান আর আরিশা দুজনেই থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ একে অন্যের দিকে তাকালো। সারা ফ্লোরে টিফিন বাটিতে করে আনা খাবার ছড়িয়ে বিশ্রি অবস্থা হয়ে আছে।।  কিছু একটা মনে হতেই আয়ানও ছুটে বেরিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে বাসায় ফিরলো যতো দ্রুত সম্ভব।। মেইন ডোরটা খোলা। বেডরুমে গিয়ে মায়রাকে বুকসেল্ফের সামনে পড়ার চেয়ারটাতে বসা দেখে যেন আয়ানের প্রাণ ফিরে এলো ধড়ে। মেয়েটাকে বুঝানোর জন্য একটু সময় দরকার।। সামনে গিয়ে মায়রার সামনেই বসলো আয়ান।। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেই পিছনের দিকে ঢলে পড়লো আয়ান। মায়রার বাম হাতটা লুটিয়ে পড়েছে নিচে।। আর ফ্লোরটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।। ডান হাতে এখনো মায়রার প্রাকটিক্যাল বক্সের ধারালো 'সার্জিক্যাল নাইফ'টা ধরা শক্ত করে। 

কয়েকবার চেষ্টা করেও গলা দিয়ে মায়রার নামটা বের হলো না আয়ানের। শেষে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে ডাকলো আয়ান।।

-মায়রররররররররাআআআআ।।

ধড়মড় করেই শোয়া থেকে উঠে বসলো আয়ান। ওর সারা শরীর কাঁপছে এখনো। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো খাটে শুয়ে আছে। ডায়েরিটা পড়ে আছে পাশেই। মায়রার ডায়েরিটা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে সেটা বুঝতেই পারে নি আয়ান। এতো বাজে একটা স্বপ্ন দেখে কলিজাটাই কেঁপে উঠেছে ওর।। এমন কিছু ঘটলে মায়রাটা যে সত্যিই এমন উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে সেটা আয়ান খুব ভালো করেই জানে।তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো এটা স্বপ্ন ছিল-বাস্তব না।। তবুও মায়রার মুখটা কল্পনা করে আয়ানের বুকের ভেতরটা মোচড় দিচ্ছে বারবার।। মেয়েটা এতো কেন ভালোবাসে ওকে!!?? ও আসলেই কি এতোটা ভালোবাসার যোগ্য???!!!

নিজের মনেই মায়রার কথা ভাবছে আয়ান।। আর মায়রার জন্য ওর বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে উঠছে বার বার।বহু অবহেলা করেছে পিচ্চিটাকে।আর না।।। 

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো-সবে ৪টা বাজে। মায়রার পছন্দের নীল রঙা টিশার্টটা পড়েই গাড়ি ছুটালো আয়ান। বেশ অনেকটা সময় লাগবে যেতে। অবশ্য এই ভোর রাতের দিকে রাস্তা ফাঁকাই থাকবে। তাই হয়তো ততো বেশিও সময় লাগবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই ড্রাইভিং করছে আয়ান। 

বেশ সকালে মায়রার ঘুম ভাঙলো মিষ্টি একটা ঘ্রাণে।। ঘ্রাণটা বরাবরই নেশায় মাতিয়ে তোলে মায়রাকে। নরম বালিশের বদলে শক্ত কিছু একটার উপরে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে মায়রা। আর সেখান থেকেই ঘ্রাণটা আসছে। চোখ ডলে ঘুম কাটানোর চেষ্টা করতে করতে দেখার চেষ্টা করলো। বেশ রাত পর্যন্ত জেগেছিল। ঘুম হচ্ছে না দেখে রাত তিনটার সময় লম্বা একটা এক ঘন্টার শাওয়ার নিয়ে এসে শুয়েছে।। তারপর বোধ হয় ক্লান্তি আর দুর্বলতায় ঘুমিয়ে গেছে। এখন তাই আর ঘুমটা কাটছেই না।। ঠান্ডাও লাগছে একটু একটু। চোখ খুলে মানুষটাকে দেখে মায়রার ভিষণ কান্না পেল।। মানুষটা না এসেও কেন এতো কষ্ট দেয় ওকে!!এতো না জ্বালিয়ে আসলেই তো পারে সত্যি সত্যি!!?? কেন আসে না!!??

 মায়রা আর সহ্য করতে না পেরে আয়ানের বুক থেকে সরে এসে একটু ধাক্কা দিয়ে নিজেই একটু জোরে কেঁদে ফেললো।।

-কেন এতো জ্বালাও!! আসবে না তো সত্যি সত্যি নিতে?!? তো এখন কেন এসেছো??! জ্বালাতে এসেছো এখন??? যাও--যাও--যাও।।যাও তুমি---।। আর আসবে না---।। একদম না--।

মায়রার কান্না শব্দে আয়ানের ঘুমটা ছুটে গেলো।। তাড়াতাড়ি উঠে বসে মায়রার মুখটা দুহাতে তুলে ধরলো।

-মায়রা সোনা কাঁদছো কেন?? কাঁদে না পরী----।। রাগ করে আছো এখনো!!?? সরি সরি সরি মনি--। এই দেখো কান ধরছি।। কেঁদো না প্লিজ-----এভাবে----।।

মায়রা ঠোঁট উল্টে কেঁদেই যাচ্ছে।।

-কেন এসেছো!!! আসলে সত্যি সত্যি আসো না!!?? প্লিজ?? এসে নিয়ে যাও না?? তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না তো----।। এর চাইতে ভালো মেরেই ফেলো তুমি আমাকে---।। সরি বলার সময়টাও দিবে না একটু---।। সরি তো???

মায়রার কান্না দেখে থতমত খেয়ে গেলো আয়ান। পাগলীটাকে বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা এখনো ভাবছে আয়ান আসলে আসে নি। হ্যালুসিনেশন হচ্ছে ওর। আয়ান আলতো করে মায়রার মুখটা তুলে ধরে চোখদুটো মুছে মুখ মুছে দিলো।

-পরী?? তোমার পচা বরটা সামনেই আছে তোমার--।দেখো??? এসেছি তো পাগলী।।এভাবে কেঁদো না প্লিজ----???!!

-আপনি??!! আপনি কখন এলেন!!

আয়ান সত্যি সত্যিই এসেছে-মায়রার বিশ্বাসই হচ্ছে না।। চোখ মুখের সামনে বারবার সবকিছু ঘোটালে হয়ে যাচ্ছে  ওর। আশপাশের জিনিস গুলো দুলে দুলে উঠছে বার বার। এই দুলুনির মাঝে আয়ান কি বলছে ভালো করে শুনতেও পারছে না।তবুও আয়ানের দিকেই তাকিয়ে আছে মায়রা।৷ আর বোঝার চেষ্টা করছে মানুষটা সত্যি সত্যিই এসেছে!! নাকি প্রতিদিনকার মতো আজও স্বপ্নই দেখছ!?? 

আয়ানও খেয়াল করছে ব্যাপারটা। মায়রা দপদপ করে ঘামছে ৷ চুল-মুখ-ঘাড় ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার।।

-কি গো?? পরী?? বেশি খারাপ লাগছে?? একটু পানি খাবে---??

পানি নেয়ার জন্য একটা হাত বাড়িয়েছে কেবল আয়ান।অন্য হাতে মায়রার একটা হাত ধরা ছিল৷ এরমধ্যেই মায়রা ঢলে পড়লো আয়ানের গায়ে।। আয়ান তাড়াতাড়ি মায়রাকে ধরে ফেললো৷ 

-মায়রা সোনা?? প্লিজ তাকাও?? প্লিজ প্লিজ???

১৮!! 

চারদিকে আলো ফুটতেই ওদের ফ্যামেলি ডাক্তারকে কল করেছে রিহান।একটু আগেই তিনি এসেছেন। মায়রার পার্লস চেক করে দেখেছে। নাড়ির গতি একেবারে ধীর গতিতে চলছে মেয়েটার। ব্লাডপেশার ফল করেছে সাঙ্ঘাতিকভাবে। চিন্তিত মুখে স্যালাইন পুশ করতে ব্যস্ত ডাক্তার।।

-হঠাৎ এমন কেন হলো ডক্টর!??

-আসলে উনি হয়তো বেশ অনেকদিন থেকেই খাবারের অনিয়ম করছেন। আর লাস্ট তিন চার দিন মে বি একেবারেই খাওয়া দাওয়া করেন নি---।তার উপর তো দেখছি বোধ হয় কাল বেশ ভিজে ঠান্ডাও লাগিয়েছেন। এখন তো চিন্তাই হচ্ছে  আমার--।।

-কিসের??!!কিসের চিন্তা!!??

-স্যালাইন তো পুশ করলাম এতো  লো বিপি সেই জন্য।। কিন্তু জ্বরের মধ্যে স্যালাইনও তো বেশিক্ষণ দেয়া যাবে না।। বুকে ঠান্ডা লেগে না নিউমোনিয়া হয়ে যায়----!!।।

ডাক্তার আর আয়ানের কথা শুনছিল তাথৈ, রিহান আর বাবা।। ডাক্তার চলে যেতেই তাথৈ রেগে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।। এই লোকটার হাতে সারা জীবনের জন্য বোনটাকে তুলে দিয়েছিল সে!!?? এসব ভাবতে ভাবতেই কিছু না বলে চলে গেলো তাথৈ।।নিজের রুমে গিয়ে ধুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।। মায়রার অবস্থা দেখে নিজেকে কিছুতেই ঠিক রাখতে পারছে না তাথৈ।। এ কয়দিন যে একেবারেই খায় নি চোখের সামনে মায়রাকে দেখেও সেটা কেন বুঝতে পারলো না-ভাবতেই তাথৈয়ের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।। মেয়েটা তো বরাবরই এমন চাপা স্বভাবের।।ব্যাপারগুলো কেন সে দেখেও বুঝতে পারে নি!!??

 বাবাও চলে গেলেন৷। রিহান আয়ানের পাশে এসে দাঁড়ালো।।আয়ানেরও যেন কোন দিকে হুঁশ নেই। পাথর হয়ে মায়রার খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে যে কতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে এখন টের পাচ্ছে আয়ান। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই পিছন ফিরে রিহানকে দেখলো আয়ান।।

-কি ভুলটা যে করেছিস সেটা বুঝতে পারছিস?? যদি বুঝতে পারিস তবে সেটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।। এবার অন্তত মেয়েটাকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর--।। কাজটা কাজের জায়গায়। কিন্তু  প্রিয় মানুষটারও তো একটা জায়গা থাকা চাই জীবনে!? ব্যালেন্স করে কবে চলতে শিখবি রে তুই??

রিহানের কথা শুনে আয়ান আর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।। রিহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।।

-আমি সত্যি বুঝতে পারিনি রে--। বাচ্চা মেয়েটা এতোটা পাগলের মতো কেন ভালোবাসে আমাকে???!! ওর কিছু হয়ে গেলে----আমি বাঁচতে পারবো না----।।সত্যি পাগল হয়ে যাবো---।। প্লিজ ওকে বল না চোখ খুলতে??!!! প্লিজ???!!

-আয়ান--।শক্ত হ একটু।। পিচ্চিটার খেয়াল রাখ এখন।। যা হয়েছে ভুলে যা---।। তাথৈ যেভাবে খেপেছে--। ও আবার কি করে বসে আল্লাহ মালুম--।আমি ওকে সামলাই---।।আর আমার পিচ্চি বোনটার কিচ্ছু হবে না।। টেনশন করিস না।। বস তুই।। আমি গেলাম।।

আয়ান মায়রার পাশে একটা চেয়ারে বসে হাতটা আলতো করে ধরে আছে। নিজের চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে আয়ানের। মেয়েটা আয়ানকে ছাড়া খায় না-কথাটা কি করে ভুলে গেলো!! যে কয়দিন কল করে খেতে বলেছে হয়তো সে কয়টা দিনই খেয়েছে দুপুরে৷। দিন দিন যে মেয়েটা খাওয়া দাওয়া একেবারে ছেড়ে দিয়েছে সেটা কেন বুঝতে পারলো না!! মায়রার চুলে আলতো আলতো হাত বুলাচ্ছে আয়ান। আর মায়রার মুখটা দেখছে। কতটা বদলে গেছে তার মায়াপরীটা!! চোখ মুখ বসে গেছে এ ক'টা দিনে।।আর ব্যাপারটা আয়ানের চোখেই পড়ে নি-কথাটা ভাবতেই আয়ান চোখ ভিজে এলো। 

বেশ অনেক্ষণ পরেই মায়রা চোখ খুলেছে।। চোখ খুলেই প্রথমে এক রাশ অন্ধকার দেখলো। ধীরে ধীরে চোখের সামনের আঁধারটা কেটে মৃদু আলো ফুটলো।। তারপর চারপাশটা দেখলো। মাথা-ঘাড়-হাড়-পাঁজর সব এতো ভারি ভারি লাগছে। এর মাঝেও মায়রার মাথায় অন্য চিন্তা চলছে।। ভোরে আয়ানকে দেখেছিল। ব্যাপারটা স্বপ্ন ছিল?? নাকি সত্যি!! আয়ান কি সত্যি সত্যিই ওকে নিতে এসেছে! নাকি প্রতিদিনের মতো আজও কল্পনাই করেছে ব্যাপারটা!! তবে আসলেও তো তার কোথাও একটা থাকার কথা!! কোথায় সে!!?? খাটে হেলান দিয়ে বসে পাশে ফিরতেই আয়ানকে দেখলো মায়রা।। মায়রার পাশেই গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে আয়ান। আয়ানের ঘুমন্ত মুখটা দেখেই মায়রার ঠোঁটের কোণে স্বস্তির হাসি ফুটলো।।

-মায়রা?? উঠেছিস বাবুই???

-সসসসসসসস।। আপুই এতো জোরে কথা বলো না---।।

-কি হয়েছে???!! এমন করছিস কেন??!

-আপ্পি??!! উনি ঘুমাচ্ছে---।। এতো জোরে বলো না প্লিজ!!??

-ও---।।। আচ্ছা আয়ান ঘুমিয়ে গেছে?? ঘুমাক।। তুই বস তো...। হা কর।। খাইয়ে দিচ্ছি----।।

মায়রা উঠে বসেছে ঠিক করে।।আর তাথৈ মায়রার পাশে বসে বসে খাবার মাখাচ্ছে।। মায়রা বারবার ঢোক গিলছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে।। একবার তাথৈয়ের দিকে-একবার ঘুমন্ত আয়ানের মুখের দিকে-একবার তাথৈয়ের হাতে থাকা প্লেটের দিকে।। কথাটা বলবে কিনা ভাবতে ভাবতে মাথা ধরে যাচ্ছে মায়রার।। কিন্তু তাথৈয়ের চোখ মুখের অবস্থা দেখে বলতেও সাহস পাচ্ছে না বেচারি।। শেষমেশ আর থাকতে না পেরে তাথৈকেই ডাকলো।।

-আপ্পি----???!!

-হুম---।।বল-----??

-আপু---।। খাবো না তো---!??

-কি বললি???!!!

-আপু---।। উনি উঠুক না??!

-ওর ওঠা দিয়ে তুই কি করবি!?!? হা কর বলছি---।।।

-উনি না খেলে আমিও খাবো না--।

-মায়রা??? মারবো এক থাপ্পড়।।  হা কর বলছি---।।

-সে তুমি ধমকাও- মারো-কাটো-যাই করো---।। আমি খাবো না, খাবো না, খাবো না---।। উনি না খাওয়া পর্যন্ত আমি মরে গেলেও খাবো না----।।।

আয়ান ঘুমাচ্ছে আর তাই মায়রা কিছু খাবে না শুনে তাথৈ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠার মতো রেগে গিয়ে রুম থেকেই চলে এলো। মায়রা একটু ঘাবড়ে গেল।। কি করবে ভেবে পেল না।। তাথৈয়ের রাগ যে কতো সাঙ্ঘাতিক সেটা মায়রা খুব ভালো করেই জানে।।চিন্তা করতে করতে মায়রার মনে ভয় ঢুকে গেলো।। তাথৈ যদি মায়রাকে আয়ানের সাথে যেতেই না দেয় রাগ করে!!! তখন কি হবে!!! বাড়ি যাওয়ার কথাটা মনে পড়তেই মায়রা ঘুমন্ত আয়ানের মুখের দিকে তাকালো।।এবার মনটা একটু শান্ত হলে আয়ানকেই দেখতে লাগলো। মানুষটার ঘুমন্ত মুখটা এতো কেন ভালো লাগে ওর!! ইচ্ছে করছে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু হাতে একদম জোর পাচ্ছে না। মানুষটা এতো কাছে তবু একটু ছুঁয়েও দেখতে পারছে না-ব্যাপারটা চিন্তা করতেই মায়রার কান্না পেল। নিঃশব্দে বসে বসে কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে আয়ানকেই দেখছে মায়রা। শেষমেশ আয়ান যে ওকে নিতে এসেছে সেই বা কম কিসের!!??

আয়ানের ঘুম ছুটলো তিনটার দিকে। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো মায়রা মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়েছে৷ আয়ান ভাবলো মায়রা রেগে আছে তার উপরে। হাতের স্যালাইনের নল খোলা হয়েছে। সেখানে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করা। আয়ান উঠে বসে মায়রাকে বুকে টেনে নিলো আলতো করে। 

-পরী?? এখন কেমন লাগছে??

আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে হার্টবিট শোনায় ব্যস্ত মায়রা। বহুদিন পরে মানুষটার বুকের প্রতিটা লাব-ডাব শব্দে মায়রার যেন নেশা ধরছে।৷ আয়ানের বলা কথা কিছুই কানে ঢুকছে না।। আয়ান আলতো করে মায়রার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো৷ কেঁদে কেটে চোখদুটো লাল করে ফেলেছে মেয়েটা- সেটা টের পেল আয়ান।।

-আমার পিচ্চি বউটা এতো কেঁদেছে কেন?? হুম??? এখনো রাগ করে আছো?? এই দেখো কান ধরছি----?? সরি তো পরীটা।। মাফ করে দাও না প্লিজ???!!!

মায়রা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ঠিক এই সময়ে রুমে এলো তাথৈ।। হাতে দুটো খাবারের প্লেট।। প্লেটগুলো বেড সাইড টেবিলে রাখলো তাথৈ।।

-তোমাদের কাহিনী শেষ হলে খেয়ে নাও দুজনে---।। তারপরে বাকি কাহিনী কন্টিনিউ করো---।।

মায়রা ছাড়া পাওয়ার জন্য হুটোপুটি করছে দেখে আয়ান মায়রাকে ছেড়ে দিলো। তাথৈকেও দেখলো খাবারের প্লেটগুলো রেখে চলে যাচ্ছে।।

-তাথৈ?? আই এম সো সরি---।।

-তোর অফিস নেই?? কালই তো চলে যাবি তাই না?? মায়রাকে নিয়ে চিন্তা করিস না--।। এবার খেতে না চাইলে থাপড়ে থাপড়ে খাওয়াবো আমি ওকে-----।।মেয়ে!? আমার সাথে ফাইজলামি করা!!?? খাবার না খেয়ে ফেলে দেয়া বের করছি না আমি ওর------।।

-তাথৈ প্লিজ---?? এসব বলিস না। পিচ্চিটা একটু সুস্থ হলেই ওকে নিয়ে একেবারেই বাসায় যাবো--।। আর আমি সত্যিই সরি রে----।।

-তোর সরি তোর কাছে রাখ।। আর মায়রাও তোর সাথে যাচ্ছে না কথাটা মাথায় রাখিস----।। মেয়েটার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ।। এর পরে আবারও তুই সেইম কাহিনী করবি-পরে মেয়েটাকে আর বাঁচানো যাবে!?? মেয়েটা যে মুখ ফুটে একটা কথাও বলে না দেখিস নি তুই এতোদিন!!?? এতোদিনেও যখন বুঝিস নি--।। আর জীবনেও বুঝবি না তুই---।। আমি রিহানকে -বাবাকে সবাইকেই বলে দিয়েছি-- মায়রা আর যাচ্ছে না তোর সাথে---।।

-আপ্পি---।। আমি তো---??!!

-আর একটা কথাও বলবি তো ধরে দুইগালে দুইটা কষিয়ে থাপ্পড় দিবো।। কি হাল করেছিস দেখেছিস নিজের?? আবার যাবো না?! আর একটাও টু শব্দ করবি না। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে---।। 

তাথৈ রাগ করে বেরিয়ে গেলো। আর মায়রাও আবার ডুকরে ডুকরে কান্না শুরু করেছে। আয়ান এদিকে কিছুক্ষণ শকড হয়ে বসেছিল।তাথৈয়ের রাগটা কি যৌক্তিক নয়??!! তবে মায়রাকে ছাড়া ওর চলবে কি করে!!?? মায়রার কান্না দেখে দুহাতে মুখটা তুলে ধরলো আয়ান।।

-আমার পাগলীটা কাঁদছে কেন আবার?? আর কেঁদো না মনি প্লিজ?

-আপ্পি কি বলেছে শুনো নি-?? আমি যাবো তো ওই বাড়িতে প্লিজ? 

-হ্যাঁ রে পাগলী!! যাবো তো।। বউটা একটু সুস্থ হলেই যাবো।। কেমন?? 

-আপ্পি তো বললো----??!!

-আপ্পি এখন রাগ করেছে পরীটা।। রাগ পড়ে গেলে কিচ্ছু বলবে না।। কেমন?? এখন চুপ করে বসো তো??  আমি খাইয়ে দেই পরীটাকে-ওকে?? আর কাঁদে না মিষ্টি মেয়ে--।।

আয়ান হাত মুখ ধুয়ে মায়রার মুখ ধুয়ে মুছে দিয়ে খাইয়ে দিলো।তারপর নিজেও খেল৷ খেয়ে মায়রাকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো আয়ান।। 

-ঘুমাও সোনামনি--। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও পাগলী-।। আমাদের দুষ্টু পিচ্চিগুলোকে জলদি চাই আমার।। কি যেন নাম রেখেছো?? আমায়া-আয়রা আর আমান না?? জলদিই চাই কিন্তু---। তা আপনি নিজে অসুস্থ থাকলে  কেমনে হবে বলেন???

মায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলছে আয়ান। মায়রার কানে আয়ানের নিঃশ্বাসের আর ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ এসে লাগছে। ব্যাপারটা মায়রার বুকের ভিতরটা তোলপাড় তুলছে।৷ আর কথা শুনে লজ্জা পেয়ে আয়ানের বুকের মধ্যে একেবারে মিশে যাচ্ছে বেচারি।। মানুষটা এতো খারাপ কেন!!?? আয়ানের স্পর্শগুলো আরো গভীর হচ্ছে।। কখনো আলতো করে মায়রার গলায় নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। কখনো চুলের মুখ ডুবাচ্ছে। আর কখনো মায়রার ঘাড়ে নাক ঘসছে।। আর আয়ানের এমন স্পর্শে মায়রার নিজেকে পালকের মতো ফুরফুরে লাগছে।। বহুদিন পর আজকে মায়রার মনে হচ্ছে খোলা আকাশে উড়ছে সে। বুকের কোন এক কোণে আয়ানের উপর চাপা অভিমানটা ঠিকই জমা হয়ে আছে মায়রার।৷ কিন্তু এমন মাতাল করা স্পর্শে সেটা মন-মস্তিষ্ক থেকে একেবারের জন্য মুছে ফেলার চেষ্টা করছে মেয়েটা।

 মানুষটাকে যে বড্ড ভালোবাসে ও!! তার উপর অভিমান করে আর কতক্ষণই বা থাকা যাবে!!?? আয়ানের নেশা ধরানো ভালোবাসায় গা এলিয়ে এসবই ভাবছে মায়রা।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন