বন্ধন - পর্ব ০৭ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৩!! 

এদিকে মায়রা আর আয়ান উঠোনের কোণে জ্বলতে থাকা কাঠ কুটোর আগুনের সামনে বসে আছে পাশাপাশি। কিছুটা দূরত্ব আছে দুজনের মাঝে। দুজনেই আনমনে ভাবছে কি বলা যায়! এভাবে আর কতক্ষণই বা চুপ করে বসে থাকা যায়। আয়ান কি ভেবে আলতো করে মায়রার হাতে হাত রাখলো। মায়রা চমকে আয়ানের মুখের দিকে তাকালো। আয়ান ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে আগুনের নাচানাচি দেখায় ব্যস্ত। আর মায়রা অবাক হয়ে এই মানুষটাকে দেখছে। মানুষটা সত্যিই কি এভাবে আজীবন ওর পাশে থাকবে!

আয়ানও পাশ ফিরে মায়রাকে একবার দেখে নিয়ে হাতটা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মায়রা এবার আগের চেয়েও বেশি অবাক হলো। লোকটা হাতটা ছেড়ে দিলো কেন? মায়রার অবাক হওয়া দেখেও আয়ান হাসলো।

-ম্যাডাম? আসুন? আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো---।

-এখন? কোথায়-------?

-ভরসা আছে আমার উপর?

-হুম---। 

-তাহলে যাই চলো?

-আচ্ছা----।

মায়রার বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ করলেও উঠে আয়ানের পাশে এসে দাঁড়ালো। আয়ান একবার মায়রার ফ্যাকাশে মুখটা দেখে নিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। মায়রা থতমত খেয়ে আয়ানের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে রইলো। এভাবে কোলে তোলার কি হলো! লোকটা কি করতে চাইছে! কিন্তু এতোটা কাছ থেকে মানুষটাকে দেখে মায়রা ভয় পাবে নাকি চমকে উঠবে, নাকি লজ্জা পাবে কিছুই ঠিক করতে না পেরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। আয়ান মায়রার মুখের দিকে না তাকিয়ে বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে হাঁটা ধরলো উপরের দিকে। মায়রাও ভাবতে লাগলো এতো রাতে উপরে কোথায় যাচ্ছে!

-ম্যাডাম কি ভয় পাচ্ছেন?

-না মানে--! কোথায়-কোথায় যাচ্ছি আমরা?

-হুশ---। গেলেই দেখবা--। তবে জাস্ট এতোটুকু মনে রেখো আর যাই হোক তোমাকে কখনো অপমানিত হতে হয় বা কষ্ট পেতে হয় এমন কিছু এই জীবনে করবো না। আমার সাথে নিজেকে এতোটুকু সেইফ ফিল করতে পারো। আর বিশ্বাস রাখতে পারো। 

-আমি তো আপনাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করি----।

-তাই? তাহলে ভয় পাচ্ছে কেন লাজুক পরীটা? 

-সেটা কি স্বাভাবিক না?

-হুম---। স্বাভাবিক হতো যদি আমি তোমার অচেনা কেউ হতাম। আমি কি সত্যি তোমার এখনো চেনা মানুষ হয়ে উঠতে পারি নি মায়রু?

- না মানে----। তা নয়---।

- হা হা---। ইটস ওকে পাগলীটা। এবার নামুন ম্যাডাম। চলে এসেছি--।

আয়ান মায়রাকে ছাদে নিয়ে নামিয়ে দিলে মায়রা অবাক হয়ে ছাদের ডেকোরেশন দেখতে লাগলো। ছাদের মাঝামাঝিতে ছোট্ট একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার দেয়া। টেবিলের উপর বড় দুটো ক্যান্ডেল জ্বালানো। আর কিছু একটা রাখা পাশেই। টেবিলটার চারপাশে গোল করে বেশ কিছু ফুলের পাপড়ি ছড়ানো আছে। কি ফুল সেটা অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না। তবু মায়রার ভিষণ ভালো লাগছে কেন জানি৷ অবাক চোখে মায়রা আয়ানের দিকে তাকালো। এসব কখন করেছে উনি?

আয়ান হালকা হেসে মায়রার হাত ধরে টেবিলের কাছে আনলো। মায়রা জাস্ট থ হয়ে গেল। টেবিলের উপরে একটা বাটি আর একটা পানির বোতল রাখা। আয়ান মায়রার চেয়ারটা টেনে দিয়ে বসতে ইশারা করলো। মায়রা ঘোরের মধ্যেই চেয়ারে বসে পড়লো। আয়ানও মায়ের মুখোমুখি চেয়ারটায় বসে বাটির ঢাকনা খুলে মায়রার দিকে চামচটা এগিয়ে দিলে। মায়রার সেদিকে হুঁশ নেই। একমনে আয়ানকে দেখায় ব্যস্ত মায়রা। এই মিটমিটে মোমের আলোয় মানুষটার মুখটা কতই না মায়াবী লাগছে। কি এমন আছে এই মানুষটার মধ্যে?

-এই যে ম্যাডাম? কি এতো ভাবছেন? একটু হা করুন না?

-জি?

-হা করুন-। একটু নুডুলস ট্রাই করুন--। এতো রাতে আর কিছু করার টাইম পাই নি---।

-কখন করলেন? আর এসব ই বা কখন করলেন?

-আগে খাও। তারপর বলছি--। ওকে?

-হুম----।

আয়ান একটু এগিয়ে এসে চামচ দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নুডুলস তুলে মায়রার মুখে তুলে দিচ্ছে। মায়রাও ভিষণ খুশি হয়ে খাচ্ছে। সিম্পল সাদা ২ মিনিটের ম্যাগি নুডুলস৷ অথচ মায়রার মনে হচ্ছে অমৃত জিনিসটাও হয়তো এতো স্বাদ হবে না। সম্ভবত এই মানুষটার কেয়ারের কাছে অমৃতও কিছু না মায়রার জন্য। আয়ানও হাসি মুখে মায়রাকে খাইয়ে দিয়ে শান্তি পাচ্ছে। মেয়েটার পাশাপাশি কাছাকাছি থাকতে বুকের ভেতরে অন্য রকম একটা ভালোলাগা খেলা করে যায়। কেন হয় এমনটা কে জানে?

-জানো তোমার নুডুলস এতো পছন্দ সেটা তো আমি জানতামই না। তিয়াশ ভাইয়ার কাছে শুনলাম আজকেই। তাই করে ফেললাম। এই যে হালকা ডেকোরেশন দেখছো সেটাতেও তিয়াশ ভাইয়া হেল্প করেছে। 

-ক-কখন-! কখন করলেন?

-আসলে ঘুম আসছিলো না তো। তাই তখন আর কি----।

-ওহ----।

-তোমার পছন্দ হয় নি পরী?

-ভিষণ পছন্দ হয়েছে----।

-তো খাচ্ছো না কেন? খাও? মজা হয় নি জানি। সবজি টব্জি কিচ্ছু নেই। তাও কি আর করা!

-এর চাইতে মজার নুডুলস আমি আগে কখনো খাই নি----।

-হা হা--। আচ্ছা খাও---।

-আপনিও খান না?

-হুম? আরে নাহ---। তুমিই খাও।

-না না-। আমি একলা এতো খেতে পারবো না। আপনি হা করুন?

আয়ান হেসে হা করতেই মায়রা চামচ নিয়ে আয়ানকে খাইয়ে দিতে লাগলো। দুজন মানুষ এই সাদামাটা খাবারটাও এতোটা তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে যেন এর চাইতে সুখাদ্য পৃথিবীতে আর একটাও নেই।

এদিকে তিয়াশ তিথিকে বুকে জড়িয়ে ধরেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলো এতোক্ষণ। বাড়ির সামনে এসে তিথির দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ঘুমে একেবারো কাদা হয়ে গেছে। তিয়াশ আলতো করে তিথির গালে হাত ছুঁইয়ে দিলো।

-তিথি? এই তিথি? উঠো না? বাড়ি চলে এসেছি তো?

-------------------------------

-এই পিচ্চি? উঠো না প্লিজ? রুমে গিয়ে ঘুমাও।

-উহু---। আম্মি ঘুমাবো--। বিরক্ত করো না তো যাও---।

-তিথি? এই পাগলিটা? শোনো না?

তিথির চোখ খোলার নামই নেই। এতো গভীর কেউ ঘুমাতে পারে তিয়াশের জানাই ছিল না। একেবারে বাচ্চাদের মতো তিয়াশের বুকে লেপ্টে ঘুমাচ্ছে তিথি। সেটা দেখে হেসে তিথির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তিয়াশ। মেয়েটা আসলেই একটা পিচ্চি। আলতো করে তিথিকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে একটু নিচু হয়ে গাড়িটা লক করে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। উঠোনে আগুনের কুন্ডটা এখনো জ্বলছে মিটিমিটি৷ আয়ান মায়রাকে দেখা গেল না। তিয়াশ হেসে তিথিকে মায়রার রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো। মেয়েটার ঘুমন্ত মুখটা দেখে অসম্ভব ভালো লাগছে তিয়াশের। এই পিচ্চিটাকে ইগনোর করে কতক্ষণ আর থাকা সম্ভব! কথাটা ভেবে একটু ঝুঁকে তিথির কপালে একটা চুমো খেয়ে নিজের রুমটায় এসে শুয়ে পড়লো তিয়াশ। আর তিথির মুখটা ভাবতে ভাবতে স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গেল একসময়।

১৪!! 

আরিশা সকাল থেকে আয়ানের নাম্বারের প্রায় ২০-৩০ টা কল করে ফেলেছে। এই ছেলেটাকে ধরে এখন আরিশার থাপড়াইতে মন চাচ্ছে। গত দুদিন ধরে কোন কোন খবর নেই ছেলেটার। মেজাজটাই খারাপ হচ্ছে আরিশার। ডজন খানেক ব্রেসলেটের ডিজাইন করে ফেলেছে ও এই কয়দিনে। সেগুলো থেকে আয়ান কোনটা সিলেক্ট করে কাজ শুরু করতে দিবে সেটা জানার জন্যই মেয়েটা কল করে যাচ্ছে আয়ানকে। আর এদিকে আয়ান কাউকে কিছু না বলেই বেপাত্তা হয়ে গেছে। প্রজেক্টের কাজটা শুরুই হয়নি এখনো। কি যে হবে কে জানে! আরিশা রাগে নিজের মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। হুট করে এভাবে গায়েব হয় কেউ? কমনসেন্সটুকু নেই ছেলেটার! আরিশার নিজের এতো টেনশন হচ্ছে তাহলে ওই মেয়েটার কি অবস্থা হচ্ছে! যাকে আয়ান এতো ঘটা করে পছন্দ করলো বউ করবে বলে! ওর সাথে যোগাযোগ করছে তো ছেলেটা! যেমন কাজ পাগল ছেলে! এই ব্যস্ততা, হুটহাট গায়েব হওয়াই কোন দিন কাল হয় এই ছেলের কে জানে!

মোবাইলে তাওহীদের গাওয়া "তুমি আমার প্রথম সকাল, একাকি বিকেল, ক্লান্ত দুপুর বেলা" গানটা বেজে উঠতেই মোবাইলটা তড়িঘড়ি করে হাতে নিলো আরিশা। কলটা দেখে আরেকবার হতাশ হলো। আয়ান কল করে নি। তাওহীদ কল করেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেল আরিশার। বাংলাদেশে এখন বাজে সকাল ১০ টা বেজে ১৫ মিনিট। তার মানে এমস্টার্ডামে ভোর ৬ টা ১৫ বাজে এখন। এতো সকালে কল করলো কেন ছেলেটা! এসব ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গিয়ে আবার বাজতে শুরু করলো।

-হ্যালো? আরু?

-তুমি আজ এতো সকালে! কি ব্যাপার?

-আম---। কোন ব্যাপার না। ঘুম ছুটে গেল--। গরম লাগছিলো-।

-ঘুম ছুটে গেল? তোমাদের ওখানে না অনেক ঠান্ডা! গরম লাগে কি করে! মাথাটা কি গেছে?

-না মানে--------।

-কি হয়েছে বলো----।

-আম---। কিছু হয়নি। ঘুমটা ভেঙে গেছে--। সাথে স্বপ্নটাও---।

-কিসের স্বপ্নের কথা বলছ?

-কিছু না--। তোমার পার্সেলটা পেয়েছি রাতেই-।

-ও আচ্ছা।

-তুমি কি কিছু নিয়ে টেনশনে আছো আরু?

-আর বলো না-। এই আয়ানটা যে কোথায় গিয়ে ঘাপটি মেরেছে! উফফ। খবরই নেই---।

-বলে যায় নি?

-তোমরা ছেলেরা মেয়েদেরকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করো কখনো? তুমি বলে গিয়েছিলে দেশ ছাড়ার সময়?

- না বলে এসে কি খুব খারাপ কিছু করেছি? তোমাকে সামনে দেখলে হয়তো নিজেকে কখনোই সামলাতে পারতাম না---।

-কেন?

-বাদ দাও---। বিয়েটা এতোদিনে হচ্ছে আয়ানের সাথে?

-হুম---। কত দিন আর বিয়ে না করে থাকবে?

-সেটাই-। আসলে সুখ কপালে থাকতে হয়---।

-তুমি আসবে কিন্তু অবশ্যই--। 

-বউটাকে দেখতে আসার ভিষণ ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আসলে আগামী মাস পুরোটাই সিডিউল বিজি-। আসতে পারবো না--।

-জাস্ট বিয়ের দিনটাতে না? আয়ান কিন্তু অনেক করে চাইছিলো যে তুমি আসো---।

-সরি আরু-। পসিবল না-। আর কাজের চাপও অনেক। হয়তো আর কথাও হবে না----।

-কেন?

-ওই যে বললাম----।

-আচ্ছা। ঠিক আছে। রাখি।

-হুম---। টেনশন করো না। আয়ানের কাজ শেষ হলেই ফিরবে। ও ভিষণ ভালো একটা ছেলে। ভালো থেকো আরু--। বায়----।

তাওহীদের শেষের দিকের কথাগুলো কেমন কাঁপা কাঁপা লাগছিলো আরিশার কাছে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই কলটা কেটে গেল। আরিশাও মোবাইল হাতে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। আমি কেন আয়ানের জন্য টেনশন করতে যাবো! আজব! এই তাওহীদেরও মাঝে মাঝে কি হয় কে জানে! ২০-২২ দিন আগে থেকেই নাকি তার বিজি সিডিউল! তাও আবার পুরো মাস জুড়েই নাকি ব্যস্ত! এতো ব্যস্ততা সে আমাকে দেখায়! হুহ।

এদিকে বাগান বাড়িতে সকালে মায়রার ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে। পাশে তিথি ঘুমিয়ে আছে এখনো। তিথির চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে ব্রাশ বের করে একটু পেস্ট লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতে বের হলো। বাড়ির বাইরেই বিশাল একটা পুকুর আছে। সেদিকেই পা বাড়ালো মায়রা। পুকুরের ঠান্ডা পানিতে খালি পা দিতেই গা বেয়ে যেন একটা কারেন্ট বেয়ে গেল। মায়রার ব্যাপারটা বেশ মজা লাগলো। কুলি করে আঁজলা ভরে পানি নিয়ে মুখ ধুতে লাগলো। বারবার মুখের পানি মারতে বেশ মজা লাগছে মায়রার। পুকুরের পানিতে ঘুমের রেশটুকু একেবারে কেটে গিয়ে রিফ্রেশ লাগছে একদম। তাই বারবার মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে। 

হঠাৎ কারো হাসির শব্দ শুনে থমকে গেল মায়রা৷ হাত দিয়ে মুখের পানিগুলো চোখ মুখ থেকে একটু ঝেড়ে ফেলে চোখ খুলে তাকাতেই আয়ানকে দেখতে পেল। আয়ান মায়রার ছেলেমানুষি দেখে হেসে ফেলেছিল। মায়রাও বেচারি আয়ানকে দেখে ভিষণ লজ্জায় পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি সিঁড়ির ধাপে রাখা ব্রাশটা নিয়ে ধুয়ে উঠে এলো। আয়ানও হেসে মায়রার দিকে গামছা এগিয়ে দিলো মুখ মোছার জন্য। মায়রা লাজুক হেসে মুখ মুছে নিলো। 

-এই যে ম্যাডাম? খালি পায়ে কেন? 

-মাটিতে খালি পায়ে হাঁটতে বেশ মজা লাগছে-।

-আহারে! বাচ্চাটা! যাও--। ফ্রেশ হয়ে ড্রেসটা চেইঞ্জ করে নাও--।

-আম--। আমি তো জানতাম না এখানে আরো দুদিন থাকতে হবে৷ তাই এক্সট্রা ড্রেস আনা হয়নি।

-পাগলিটা---। রুমে গিয়ে দেখো--।

-হুম?

-তিথিকেও ডেকে দিও----।

-আচ্ছা-----।

মায়রা রুমে এসে পেল না তিথিকে। তার বদলে একটা প্যাকেট রাখা। অবাক হয়ে প্যাকেটটা হাতে নিল মায়রা। এটা কার? তিথির? এসব ভেবে কি মনে হতেই মায়রা প্যাকেটটা খুলে দেখলো। ফুল পিংক কালারের একটা থ্রি পিচ ব্যাগে। সাথে এক পাতা রঙিন টিপ আর কালো কাজল। টিপের ছোট্ট প্যাকেটের সাথে ছোট্ট একটা কাগজ ভাঁজ করা। খুলবে, কি খুলবে না ভাবতে ভাবতে কাগজটার ভাঁজ খুললো মায়রা। কয়েকটা লাইন লেখা কাগজটায়।

"মায়রুমনি, ড্রেসটা চেইঞ্জ করে এটা পড়ো। আর কাজল দিতে ইচ্ছে না হলে দিও না। কিন্তু কপালে অবশ্যই একটা টিপ দেয়া চাই কিন্তু।"

মায়রা অবাক হয়ে একবার চিরকুটটা আর একবার জামাটার দিতে তাকাতে লাগলো। অকারণেই চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো মেয়েটার। সম্ভবত বহু অবহেলার পর ভালোবাসার পরশ পেলে এমনটাই হয় সবার।

তিথি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কেউ ওর হাত ধরে টান দিয়ে ধরে একপাশে নিয়ে এলো। তিথি চমকে উঠে মানুষটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। ঘুমের আমেজটা কাটে নি মানুষটার চোখে মুখে। চুলগুলো বেশ এলোমেলো হয়ে আছে। দেখতে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগছে তাকে। ছেলেদের কি এতো মায়া ভরা মুখ হয়? নাকি হওয়া উচিত?

তিয়াশও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিথিকে দেখছে। মুখটা ধুয়ে সবে বের হয়েছে। বিন্দু বিন্দু পানি লেগে আছে তিথির চোখে, মুখে, ঠোঁটে। সেটা দেখে কেমন ঘোর ঘোর লাগছে তিয়াশের। এই মুক্তার বিন্দুগুলো যেন হাত বাড়িয়ে তিথির দিকে টানছে তিয়াশকে। এই টানটা কিছুতেই কাটাতে পারছে না তিয়াশ। তিয়াশ আলতো করে এক হাতে তিথির কোমড় পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে তিথির মুখটা তুলে ধরলো। মেয়েটার চোখেও অন্যরকম ঘোর লেগে আছে। মেয়েটা কেন এতো পাগল করছে ওকে? নিজেকে যে সামলানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তিয়াশের।

-তিথি?

-হুম?

-কেউ বুঝি এভাবে কারো বুকে ঘুমিয়ে পড়ে পিচ্চিটা? আর কত ডাকলাম-উঠলেও না---।

-কেউ এতো সফটলি চুমো খেলে তো আবেশেই ঘুম পেয়ে যায়---। 

-কেন? আগে কারো চুমো বুঝি এতো সফট ছিল না?

-অসভ্য ছেলে-। আগের চুমো মানে কি? ছাড়ো।

-আরে পিচ্চি? রাগো কেন?

-আমাকে কি মনে হয় আপনার? আমি খালি সবাইকে চুমো খেয়ে বেড়াই? বেশরম লোক একটা! ছাড়ো বলছি ছাড়ো?

-আরে? পিচ্চি? এমন করো কেন?

-ছাড়ো বললাম না। তুমি চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ ছেলে-। তোমার সাথে আর জীবনে একটা কথাও বলব না আমি। আমাকে ক্যারেক্টারলেস বানানো?

-আরে?

-ছাড়ো ছাড়ো ছাড়ো? ছাড়ো বলছি---।

তিয়াশ মেয়েটার রাগ দেখে হেসে ফেললো। দুষ্টুমি করে একটা কথা বলায় কি রাগ তার! রাগে নাক, মুখ লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। তিয়াশ আর কিছু না ভেবে তিথির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। তিথিও তিয়াশের স্পর্শ পেয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে তিয়াশের টিশার্টটা আঁকড়ে ধরলো। এই লোকটা এতোটা অসভ্য কেন কে জানে! বারবার খালি ওকে জব্দ করেই যাচ্ছে! ওকে জব্দ করে কি এতো মজা পায় বাজে লোকটা!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন