বাহিরে ইলশে গুড়ি পরছে সেই কখন থেকে। তার সাথে মাঝে মাঝে আসা হালকা বাতাসের ঝাপটায় টং টং করে শব্দ ছড়াচ্ছে বেলকনির উপরের টানানো ঝাড়টায়।ইউসুফ বেলকনির ডিভান পায়ের উপর পা তুলে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে, তার তাকিয়েে আছে সেই ঝাড়টির দিক। যা বাতাসের ঝাপটা পেয়ে শব্দ করে তুলছে,যা কোনো ছন্দের চেয়ে কম মনে হচ্ছে না তার কাছে।আর সেই ছন্দটাই মনের মাঝে গেঁথে যাচ্ছে বার বার।আর লাগবেই বা না কেন? ভাললাগার মানুষের কাছ থেকে যে কোনো কিছু পাওয়া খুব আনন্দের।হোক কোনো গিফট, কোনো জিনিষ বা সম্মাননা। হাসলো ইউসুফ। কুহু তখন ভাল করে জানতো ইউসুফ তার কাছ থেকে টাকার ভাগ কখনো নিতে চাইবে না।তাই সবার অগোচরে সব থেকে সুন্দর ঝাড় টা খুলে আলাদা করে ফেলেছিল তখন।যা ইউসুফে নজরে এড়ায় না।এই ঝাড়টি ছিল সব থেকে চমৎকার, যা দূর থেকে অনেক মানুষের নজর কারেছে। যেমনটি কুহু কেড়ে ছিল সেই প্রথম দিন ইউসুফের নজর।সেদিন মনে হয়েছিল কুহুর কাছে কোনো চুম্বক আছে।অদৃশ্য চুম্বক..! যা দূর থেকে আকর্ষণ করেছিল ইউসুফকে।তাইতো সে ভার্সিটিতে ড্রাইভ করে আসার সময় চোখ পরে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা কুহুর দিকে। যে চোখ নাড়িয়ে, ঠোঁট নাড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছিল।ইউসুফের নজর সেদিকেই আটকে যায়। যার ফলে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে। আর কুহুদের গায় কাঁদা মাখা মাখি হয়ে যায়। সেদিন সে সরি বলার জন্য গাগি থামিয়ে ছিল। তার আগেই কুহু তার গাড়িতে ইট মেরে ১২ টা বাজিয়ে দেয়।ইউসুফের তখন ক্ষণিকের জন্য মাথায় রাগ চড়ে বসে উল্টা পাল্টা কথা বললেও কুহু ভয় মিশ্রিত মুখ দেখে উবে গেল সব।তার মাঝে তার বন্ধুরা হেসে যায়। আর কুহু গায়েব। সেই কথা মনে হতেই হেসে উঠে আবার ইউসুফ। কি আশ্চর্য..! কুহুর সাথে দেখার পর থেকে ইউসুফের মুখ হাসি রেখা যেন লেগেই থাকে। ছোট থেকে গম্ভীর করে থাকা ছেলেটাও আজ হাসতে শিখে গেছে।আড়াল থেকে দাড়িয়ে ইউসুফের দাদু চোখে পানি মুছলেন আঁচল দিয়ে তার।বিগত বছর গুলোতে ইউসুফ কতবার হেসেছে বা আদ হেসেছে কিনা মনে পড়ছে না তার।কিন্তু নিজের নাতিকে আজ হাসতে দেখে মন, প্রাণ জুরে যাচ্ছে তার।
____________
সন্ধ্যা.... ৭ঃ৩০।
বাহিরের বৃষ্টির বেগ বাড়চ্ছে।কখনো কমচ্ছে। কেমন শীত শীত ভাব।কুহু পড়ার টেবিলে বসে অ্যাসাইনমেন্ট করছিল।সারা বিছানা জুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাদা খচখচ অফসেট পেপার। তখনি তিন্নি এসে হাজির।কুহু খাটের উপর বসে বালিশের মাঝে হার্ডবোর্ডের উপর রেখে লিখছিল। পায়ের শব্দে মাথা তুলে দেখে তিন্নি পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে। কুহু ভ্রু কুচকে বললো,
---"কি সমস্যা? পেট ব্যথা?"
তিন্নি কান্নার ভাব করে ধপ করে খাটে সটান করে শুয়ে বলল,,
---"আপুরে খুব খুদা পাইচ্ছে! এতটা যে আমি এবার খুদার জালা পরলোক গমন করবো।"
তিন্নির কথা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল কুহু,,
---"তুইতো ভাল নাটক করতে পারিস?আচ্ছা তোর এই সব নাটকে টাকা দেয়তো?"
তিন্নি এবার উঠে বসে অসহায় ভাবে বলে উঠে,,
---"আপু সত্যি বলচ্ছি কিছুক্ষণের মাঝে পেটে কিছু না পরলে আমার পেটের ইঁদুরগুলো আমাকেই খেয়ে ফেলবে।"
কুহুর মায়া হলো। দু বছরের ছোট তার বোনটি তার থেকে।সুন্দর পরিপাটি সে। অনেকটা কুহুর মতোই দেখতে। হঠাৎ কেউ তাকালে কুহু ভেবে ভুল ভাবতে পারে। কিন্তু তাদের মাঝে অনেক পার্থক্য। সে সাদা ফর্শা, তিন্নি হলুদ, কুহুর হালকা কুঁকড়ানো চুল, তো তিন্নির সিল্কি চুল। তাদের মাঝে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে তীল নিয়ে। কুহুর গাল কালো আর থুতনিতে লাল তিল।আর তিন্নির মুখে তিল নেই।কুহুর ভাবনায় ছেদ পরে তিন্নির ঝাকুনিতে।কুহু তখন বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,,
---"কি খাবি বল?"
---"যা ইচ্ছা।"
কুহু ভাবলো বৃষ্টির দিন তার উপর ঠান্ডা। ভুনাখিচুড়ি আর মুরগী মাংস সাথে বেগুনী আর জলপাই আচার হলে মন্দ হয় না।কুহু বোনকে বসিয়ে চুল গুলো হাত খোপা করে নিচে নেমে এলো।যা ভেবে ছিল তা একে একে করতে লাগলো। তার সাথে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো সে,,
--"এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?"
রান্নার মাঝে হুট করে চোখ যায় জালনা ভেদ করে বাহিরের জামরুল গাছের দিকে। চমকে উঠে কুহু। ভাল করে তাকিয়ে দেখে গলা শুকিয়ে যায় তার।একটি হুডি লোক দাঁড়িয়ে আছে। বাহিরের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। উপর থেকে নিজ পর্যন্ত কালো পোশাকে পরা।লোকটি যে তার দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে সময় লাগেনি তার সাথে সাথে পিছয়ে যায় সে। লোকটি আগের মতোই গাছের সাথে হেলে বুকে দু হাত গুজে তাকিয়ে তার দিকে।সাড়া শরীর ভিজে। লাইটের আলোয় পানি চক চক করছে।কুহু ঢোক গিলে সাথে সাথে কাঁপা কাঁপা হাতে জানালা লাগিয়ে দিল।এ যে নতুন নয়। লোকটিকে ইদানীং প্রায় দেখে কুহু তার বাসার আশেপাশে।নিজের কেমন জানি নজর বন্দি মনে হয়।প্রথমে কারো স্পর্শ পেয়ে মনের ভুল ভাবলেও সেদিনের রাতের মেসেজে শিউরে উঠে সে,
মেসেজটি ছিল এমন,,
"তোমাকে আমি খুন করতে চাই।
হে খুন! ধারালো অস্ত্রবিহীন খুন করতে চাই।
আমার ভালবাসার কামনা,বাসনায় খুন করতে চাই তোমাকে..! গেট রেডি ফর ইট..!"
মেসেজটি পরে দম আটকে গেছিল তার।চোখ বড় বড় করে মুখে হাত দিয়ে বসে ছিল সে।কারো দুষ্টামি ভেবে ভাবনা দূর করে দিতেই দেখা মিলতে লাগলো এই কালো পোশাক পরিহিত হুডি পড়া লোক।প্রথমে পাত্তা না দিলেও কলেজ ব্যতীত সব সময় অনুভব করতে লাগে এই লোকটিকে।
কুহুর ভাবনায় ফোড়ন কাটে তিন্নির কথায়,,
---আপু আর কতক্ষন? তুই এতো ঘেমেছিস কেন?
কুহু ঘাম মুছে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,,
---কিছু না তুই টেবিলে বস আমি খাবার দিচ্ছি তোকে।
তিন্নি মাথা নেরে চলে গেল বাহিরে।কুহু এখনো ভয় করছে কাকে বলবে এসব কথা?তার মাও তো নেই।আর এ ব্যক্তি কেন পিছে পরেছে তার?তখনি সেল্ফ উপর থাকা ফোনটা টুং করে বেজে উঠলো। কুহু চকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন তুলে দেখলে সেই আননোন নাম্বার থেকে একটি মেসেজ এসেছে।যেখানে লিখা,,
"আমাকে মাতাল করে যদি তুমি ভেবে থাকো পার পাবে তাহলে সেটা তোমার সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা।প্রতি মুহুর্ত যেমন আমি জ্বলে পুরে ছাই হচ্ছি তেমনি পুরবে তুমি আমার ভালবাসাময় যন্ত্রনায়"
কুহুর হাত থেকে ঠাস করে ফোন পরে গেল...।ভয়ে চোখ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরলো তার।
—————
সকাল...৯ঃ২০।
আজ কুহু জম্মদিন।সেই জন্য কুহু আজ শাড়ি পরেছে কলা পাতা রংয়ের শাড়ি। তার সাথে পরেছে লাল চুরি আর তার বাবার দেয়া নুপুর জোড়া।নুপুর জোড়া হাতে নিতেই আবেগী হয়ে যায় কুহু।মনে পরে যায় সেদিনের কথা।দিনটি ছিল সোমবার মাসের এক তারিখ। অাগের দিন রাতে তারেক হাসান কাজের জন্য বাহিরে যেতে হয়।পরেদিন ফিরে তারেক হাসান দুই মেয়ে ডাকতে ডাকতে হলে এসে বসলেন।ছিমছাম একটি লোক তারেক হাসান।একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করেন তিনি। মাঝে মাঝে অফিসের কাজে বাহিরে থাকেন তিনি।সেটি জবেদার মোটেও পছন্দ না।তার এক কথা, "সারাদিন যা কাজ করার করে নিবে, রাতটা আমাদের সাথে থাকতেই হবে" এই নিয়ে হুমকি দামিকি দিয়ে ছিলেন তিনি যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন।কিন্তু যত বলুক করা আর হয়নি জবেদার। কারণটাও তার জানা তারেক তার কাজ ঠিক মতো করতে না পারলে রাস্তায় নামতে হবে তাদের।কুহুু আর তিন্নি রেডি হচ্ছে কুহু ভার্সিটি আর তিন্নি কলেজ যাবে। বাবার ডাকে দু বোন নিচে এসে বাবার পাশে বসলো।রান্না ঘর থেকে আঁচল হাত মুচ্ছতে মুচ্ছে বের হয়ে এলেন জবেদা।আর বললেন,
---কি ব্যাপার? আসতে না আসতেই মেয়েদের ডাক?
তারেক সাহেব ছোট শ্বাস ছেড়ে হাসলেন, আর তার পকেট থেকে তিনটা মখমল কাপড় পেচানো দুটি ছোট ছোট ব্যাগ একটি খুলে জবেদার পায়ের কাছে বসে পরেন এক হাটু গেরে। উঁচু করা হাটুতে জবেদার পা দুটো তুলে এক জোড়া নুপুর পরিয়ে দিলেন। জবেদা খুশিতে কান্না করে দিলেন।পাশে বসা তিন্নি আর কুুহুর চোখেও পানি।তারেক বিয়ের সময় বলেছিল জবেদাকে নুপুর কিনে দিবেন। কিন্তু নানান ঝামেলার কারণে হয়ে উঠে নি।জবেদা কেঁদেই যাচ্ছেন তারেক হাসান জবেদার চোখে পানি মুছে দিতে দিতে বললেন,,
---পাগলী আমার কান্না করে কেন?
জবেদা কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন,
---এ যে খুশির কান্না।
তারেক হাসান হাসলেন। মেয়েদের বড়ই আজব স্বভাব। এরা দুঃখেও কান্না করে আবার খুশি হলেও কান্না করে। বিচিত্র নারী। এদের বুঝা বড় দায়।
তারেক হাসান এক এক করে নুপুর তার বড় মেয়ে, ছোট মেয়েকেও পড়িয়ে দিলেন। দুজন খুব খুশি।তারেক হাসান প্রশান্তি পেলেন যেন আজ। ছোট থেকেই মার সাথে মেয়েরাও চাইত নুপুর। বাবা হয়ে তেমন আবদার পূরণ করতে সক্ষম হন নি তিনি।তাই ছোট ছোট আবদার গুলো পূরন করতে পিছ পা হয় না কখনো।
_________
নুপুরের ঝুনঝুন শব্দে পিছনে ফিরে ইউসুফ। সাথে সাথে হার্ট বিট করতে লাগে জোরে জোরে তার বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চেপে ধরে চেয়ে থাকে সামনে থেকে আসা কুহুর দিক।আজ কুহুকে সবুজ পরি মনে হচ্ছে। আজ যে নিশ্চিত কুহু পাগল করে দিব ইউসুফে। দাদুকে জানানো দরকার! সে পাগলা গারদে ভর্তি হবে, খুব শীগ্রই ! ডাক্তার থাকবে কুহু। কুহুর সেদিকে ভাবান্তর নেই। সে সবার সামনে দিয়ে হেটে উপরে চলে গেল। পিছনে বা আশে পাশেও তাকালো না সে।তাকালে হয়তো দেখতে পেত ইউসুফের সেই গভীর চাহনী..!কুহুকে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে পাগল হয়ে গেল ইউসুফ। দৌড়ে কুহুর পিছনে উপরে চলে আসলো সে।এসেই এক ঝাটকা খেলও সে।যা দেখে মাথা রক্ত চরে গেল তার।হুংকার ছেড়ে এগিয়ে গেল সামনে।যেখানে কুহুকে আর আশিকে পিছন থেকে খুব ঘনিষ্ঠ মনে হচ্ছিল।।তখন কুহু উপরে উঠতেই আশিকের সাথে দেখা হয়ে যায়। আশিক শাড়ি পড়ার রিজন জানতে চাইলে বলতে কুুহুর বার্থ ডের কথা বলে। কুহুকে এত সৃন্দর লাগচ্ছে দেখে আশিক ওর সাথে একটি সেলফি নিতে চায় তখনি হাজির হয় ইউসুফ আর ভাবে আশিক কুহুকে চুমু খাচ্ছে। ইউসুফের এমন হুংকার শুনে কেঁপে উঠে কুহু। ইউসুফকে ভয়ানক লাগচ্ছে তার কাছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। ঘার ও হাতে রগ ফুলে উঠে আছে।সে দ্রুতে পায়ে কুহুর কাছে চলে আসে আর কুহু চুলে মুঠ করে ধরে তার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দাঁত দাঁত চেপে হিসহিস করে বলতে লাগে,,
---হাউ ডেয়্যার ইউ??
কুহু কিছু বুঝতে পারছে না। এভাবে ধরতে কুকিয়ে উঠে সে।পাশে তাকা আশিক বিস্ময়ের সাথে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,,
---ভাইয়া কি করছে....!
বাকিটুকু বলার আগেই গলা চেপে ধরলো ইউসুফ আশিকের।আশিক নিজেকে ছাড়ানো ট্রাই করতে লাগলো। কিন্তু ব্যর্থ। কুহু ধাক্কাচ্ছে বার বার ছাড়ার কথা বলছে কান নেই যেন কোন সেদিকে ইউসুফের। শুধু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,,
---তোর সাহস হলো কি করে ওরে টাচ্ করার ওরে কবস করার??
কুহু আর আশিক এই কথা শুনার পর অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। কথা বলতে ভুলে গেছে যেন তারা। তাও অনেক কষ্ট কুহু বলে উঠলো,,
---আপনি ভুল ভাবচ্ছেন তেমন কিছু হয় নি। ছাড়ানে আমাদের।
ইউসুফ যেন শুনতে নারায। এরি মাঝে চিল্লা চিল্লির আওয়াজ পেয়ে হাজির সকল স্টুডেন্টরা।এদের মাঝে একজন ইউসুফে বন্ধুদের ডেকে আনলো।সবাই এসে ইউসুফকে ছাড়ানোর ট্রাই করতে লাগলো। কিন্তু সে নাছড় বান্দা।লাস্ট পর্যন্ত ইউসুফের হাত থেকে আশিক রেহাই পেলেও কুহু পেল না। চুল মুঠ করেই সকলে সামনে গাল চেঁপে ধরলো। কুহুর মনে হচ্ছে গাল ভিতর থেকে দাঁতে সাথে লেগে কেঁটে যাবে।ইউসুফ তার লাল লাল চোখ গুলো বড় বড় করে বলল,,
---নেক্সট টাইম ওর থেকে দূরে থাকবি। নয়তো শরীরে হাড্ডি একটা আস্তো থাকবে না। কুহু ইউসুফের এমন আচরনে ভয়, অবাক, বিস্ময় এক সাথে ফুঁটে উঠলো। তার সাথে রাগ। সে ইউসুফের হাত হালকা হতেই ধাক্কা মারে জোরে। আর ভার্সিটির সকলের সামনে থাপর মেরে দেয়। ভার্সিটির সবাই এতখন চুপ থাকলেও এবার হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। কারণ একটাই ভার্সিটির ক্রাশকে চড় মেরেছে কিহু।চড় খেয়ে হাত মুঠ করে নেয় ইউসুফ। কুহুর দিক এমন ভাবে তাকায় যেন গিলে ফেলবে সেই চোখ ধারাই। কুহু এমন চাহনীতে ভয় পেলেও নিজেকে সামলে চিৎকার করে বলে উঠে,,
---আপনার সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেয়ার? এমন ব্যবহার করার? আমি যার সাথে ইচ্ছা যা ইচ্ছা করবো আপনি বলার কে?? আপনি জানেন এর জন্য আমি আপনার নামে কেশ করতে পারি। হ্যারাসমেন্ট এন্ড এটেম টু মার্ডারের জন্য???
সবাই যেন চমকে গেল। তানিয়ে এসে কুহুকে সামলাতে লাগলো। কুহুকে চুপ করাতে লাগলো। কিন্তু কুহু তো কুহুই।
ইউসুফ এ কথা শুনে হাসলো। সবাই অবাক হয়ে গেল। কেউ কেউ বলছে অপমানে পাগল হয়ে গেল নাকি?? ইউসুফ এবার শীতল চাহনী নিক্ষেপ করে কুহুকে। আর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় আবার চুলের মুঠি ধরে সবার সামনে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।কুহুর চোখ সাথে সাথে বড় হয়ে যায়।ইউসুফকে ধাক্কাতে লাগে কিন্তু ইউসুফ ওকে ছাড়ে না। উল্টো ঠোঁটে কামড়ে ধরে।কুহুর ছুটা ছুটি করতেই থাকে। ইউসুফকে হাত দিয়ে ধাক্কাতে থাকে। ইউসুফ কুহুর হাত দুটো কুহুর পিঠের সাথে চেপে ধরে।যেন আর ধাক্কা দিতে না পারে।কুহু চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে লাগে।কেউ ইউসুফকে বাঁধাও দিচ্ছেনা। অসহায় কুহু নিজের বার্থডে তে এমন কিছু আসাই করেনি।কিছুক্ষণ পর ইউসুফ কুহুকে ছেড়ে দেয়ে।মুচকি হেসে বলল,,
---এখন পুলিশের কাছে কমপ্লেন করতে পারো? আই ডোন্ট মাইন্ড।
তারপর আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলে উঠে,,
---ছেলেদের থেকে দূরে থাকো নয়তো এর থেকে ভয়ানক কিছু ওয়েট করছে তোমার জন্য। বলে চলে গেল ইউসুফ। কুহু সেখানেই ধপ করে বসে পড়লো। আর হাউ মাউ করে কেঁদে দিল। তানিয়াতে জড়িয়ে। উপস্থিত সবাই হতভম্ব।