সাইকো ইজ ব্যাক - পর্ব ০৩ - সিজন ২ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


ইউসুফ ভাইয়া ঠুস করে ঘরে ঢুকলেন।।ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলেন।।তার এই ঠাস করে দরজা লাগানোতে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।।
ইউসুফ ভাইয়া ধীরে ধীরে আমার কাছে আসতে লাগলেন।।

তার দিক আমি তাকিয়ে বুঝতে ট্রাই করলাম তিনি কি করতে চাইছেন।।বাট আমার ছোট মস্তিষ্কে কিছুই ডুকছে না।।তিনি কি রেগে আছেন?? আমাকে কি বকা দিতে এসে ছেন?? আমাকি কষে চারপাশটা থাপ্পড় দিতে এসেছি??? আই ডোন্ট নো??

তার চেহারা দেখে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা!! খুব স্বাভাবিক না আবার অস্বাভাবিক না?? তাহলে কি চলছে?? আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম!! তিনি আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন আর বললেন,,

-----কিরে টাকলী আমি টাকলু হয়েছি বলে এতে খুশি তুই! আগে জানলে তো আরো আগেই টাক করে ফেলতাম।।

ইউসুফ ভাইয়ার কথা আমি অবাকের শেষ চুড়ায়!!
কি বলে বেটা আমার খুশির জন্য সে টাকলা হতেও রাজি...??

তাহলে আমার চুল গুলো ফেলে টাকলী কেন বানালো...!!! বলি এতই যদি আমার খুশির চিন্তা তার হতো, তাহলে কি আর আমার চুল ফেলে দিত??
চুলের কথা মনে হতেই আমার অবাক করা ফেইস মুহূর্তের বিষন্নতায় ছেয়ে গেল।।

আমিও বলে ফেললাম,,
----চাপা মারছেন কেন?? চাপা মারার জায়গা এটা না বুঝলেন?? ভাগেন এখন..!!

এবার যেন অবাকের পালা ইউসুফের সে বলল,,
----তোর সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক যে আমি মজা করবো?? আর ইউ ক্রেজি??

আমি বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বললাম,,
----তো কিসের সম্পর্ক??

তিনি কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপ মেরে গেলেন।।তারপর বললেন,,
----সময় হলে বলব আমার বাবুইপাখি।।

তারপর তিনি এমন এক কাজ করলেন যাতে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।। আমি তার থেকে দুকদম দূরে ছিলাম।। তিনি আচানক ভাবে তার ডান হাত দিয়ে কোমরে রেখে টান দিয়ে তার কাছে নিয়ে আসলেন এবং বাম হাত দিয়ে আমার গালে ধরে কপালে শব্দ করে শব্দ করে চুমু খেলেন।।

তারপর ছেড়ে দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে চলে গেলাম।। আমি তার এহেন কাজে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।। মনে হচ্ছে কারেন্টের শক খাইছি।। তার সাথে মনের মধ্যে আলাদা নতুন লজ্জা মাখা অনুভূতিটা জাগরন দিচ্ছিল।। সেই অনুভূতির নামটা আমি কি দিব বুঝতে পারতেছি না।।সেই অনুভুতির কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের বাড়ি চলে গেলাম।।

পরেরদিন বিকেলে মাঠে খেলতে গেলাম।।আমি, ইনা,মিনা,টিনা, আর ছেলেদের মাঝেও অনেকে আছে যারা আমাদের সাথে খেলতে আসে তাদের নাম, আশিক, রিজন, শুভ, নিলয়,আনন্দ।।শুভ ভাইয়া ৮ম শ্রেণীতে পড়েন।।আর সবাই আমার ক্লাসমেট।।

কিছুক্ষণ পর মুনতানিশা আপিও যোগ দিলেন তিনি নিউ টেনে পরেন।।তাই কোচিংয়ে গিয়েছিলেন কোচিং করতে।। আমার আজ টিউশন ক্লাস বন্ধ তাই খেলার সুযোগ পাচ্ছি।।সপ্তাহে তিন দিন সুযোগ পাই আমরা খেলার।।

সবাই এসে হাজির যখন তখন কি খেলো তা নিয়ে কথা হচ্ছিল সবার।।লাস্ট ঠিক হলো আমরা কানামাছি খেলব।। তাই আমি বাটাবাটি শুরু করলাম।।আর আমার সবাই গোল হয়ে ধারিয়ে গেলাম।।

" অবু,, আকাশ থেকে নেমে এলো ছোট একটি প্লেন!
সে প্লেনে বসে ছিল লাল টুকটুকে মেম।।মেমকে আমি জিগেস করলাম,, হোয়াট ইজ ইওর নেম?? মেম আমাকে উত্তর দিল,,মাই নেম ইজ সুচিত্রা সেন....!! সুচিত্রা সেন, সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার কই...?? উত্তম কুমার খাইতে গেছে শ্বশুরবাড়ি দই।।

সেই ঘুড়ে ফিরে চোর হলাম আমি।।
তাই আমি বললাম,,,
-----আমি খেলমু না আবার বাটাবাটি হবে...??

টিনা বলল,,
-----কুহু তুই সব সময় এমন করিস....!! যেহেতু তোর দিক লাষ্ট আঙ্গুল গেছে তুই চোর হবি।।

আমি কাঁদ কাঁদ ভাবে মুনতানিশা আপুর দিকে তাকালাম,,তখন মুনতানিশা আপু বলল,,
------আচ্ছা আরেক বার করি বাটাবাটি...!! এবার চোর হলে তোকে মানতেই হবে।।

আমি খুশিতে লাফাতে লাফাতে বললাম,,,
----ওকে।।

আপু আবার বলল,,
----এবার আমি বাটবো।।

সবাই সায় দিল।।
আপু বলতে লাগেন,,,
""দশ,কুড়ি, নাড়িভুঁড়ি, চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি,
কে নেবে কথা না বলে দাও না ভাই শুনি??
বলে আপি আশিকের চোখ ধরলেন,, 
আশিক বলল,,
----৮ আনা।।আর সে উঠে গেল।।
এভাবে সবাই উঠে গেল আমি আবার চোর হলাম।।
----এবার আর কিন্তু শুনবো না।। বলে চোখ বেঁধে দিলেন শক্ত করে।। তার পরে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে ছেড়ে দিলেন।।চারপাশ থেকে সবাই আমার কান, নাক হাত চুল টেনে যাচ্ছে।।আমি ধরতে পারছি না।।তার সাথে সাথে সবাই বলছে,,
""কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাকে পাবি তাকে ছোঁ ""

অনেকক্ষণ যাওয়ার পরও আমি কাউকে ধরতে পারলাম না। তখন ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষন।। তখন মনে হলে কেউ দাড়িয়ে আছে আমার সামনে।।আমি দেড়ি না করে তাকে জাপটে ধরি।।আর জোড়ে জোড়ে বলতে লাগি,,
------ধরে ফেলেছি ধরে ফেলেছি।।
কিন্তু ততখনে সবাই চুপ।।আর কারো কথা শুনতে পাচ্ছি না।।তাই ভাল কনে ঝাপটে ধরা ব্যাক্তিটির মুখে হাত দিলাম।।কিন্তু একি এত লম্বা এটা কে।। সাথে সাথে এক চোখে থেকে রুমালটা সরিয়ে দেখি,,
ইউসুফ ভাইয়া...!! আমার দিকে কেমন লাল লাল চোখ করে দাড়িয়ে আছেন।।আমার পাশেই মুনতানিশা আপি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছেন।।

আমি শুকনো ডুক গিলে বললাম,, 
----ভাইয়া আপননি???

ইউসুফ ভাইয়া কথা শেষ করার আগেই আমাদের দু বোনের দু কানে টেনে বলতে লাগলেন,,
-----দিন দিন ছোট হচ্ছিস?? দামড়ি মাইয়াগুলা?? এখন বিয়ে দিয়ে দিলে তোদের কোলে বাচ্চা থাকবে আর এখন আসচ্ছিস এখানে খেলতে আর এসব কি পড়ে থাকিস??? বড় হয়েছিস না...!! দাড়া আজ তোদের পা কেঁটে হাত ধরিয়ে দিব বলে আরো জোরে টান দিল।।

তখন আপি বলল,,
-----ছোট ভাইয়া প্লিজ ছাড়োনা আর হবেনা।।

কিন্তু কে শুনে কার কথা তিনি রাস্তার সবার সামনে দিতে আমাদের দু বোনকে কানে ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসলো।।

এদিকে তার এভাবে নিয়ে আসাতে রাস্তার মানুষ গুলো হাসচ্ছে।।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।।আপু তো কেঁদেই দিচ্ছে।।তিনি এভাবে করেই বাসায় নিয়ে আসে।।

নানুমা এসব দেখে বলে,,
-----কিরে দাদু ভাই...!! ওদের এভাবে কানে ধরছিস কেন ছাড়...!!

ইউসুফ বলল,,
-----তোমরা এদের কিছু বলো না দেখেই বাঁদর হচ্ছে দিন দিন..!! সাড়া এলাকা টই টই করে ঘুরে এটা কেমন কথা...!! তার উপর এসব এখনও কি পরে বাচ্চা নাকি এখনো?? তার উপর একটারো ওড়না নাই গায়ে।।এদের কি এখনও খেলার বয়স আছে নাকি?? আর তুই...!! আপুর কান জোড়ে টেনে,,
----তুইতো বড় তুই তো বুঝিস ও না হয় ছোট কই মানা করবি?? না নিজেও তাদের সাথে ধেই ধেই করে নাচবে।।।নাচনীবুড়ি হয়েছে তারা।।
আপু বলল,,
----ছাড় ভাইয়া আর খেলবো না।।তুমি আমার মান সম্মান পামচার করে দিছো।। 
----- এহে আসচ্ছে মান সম্মান উলি।।
এদিকে আমি ভয়ে একদম চুপ মেরে গেছি।।না জানি আমারে কি করে ভাগ্যবশত ছোট বলে বেঁচে গেছি...!!
নানু মা বলল,,
-----কি যে বলিস..!! ওরা এখনো বাচ্চা ছাড় ামার নাতনীদের।। ছাড় বলছি।।

ভাই তখন বলল,,
---নেক্সট টাইম যেন মাঠে খেলতে যেতে না দেখি!! 
আর আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগে পড়ে দেখতেছি তোরে।।বলে রুমে চলে গেল।।

আর আমি কাঁপতে লাগলাম না জানি কি হাল আমার করেন...!!

দেখতে দেখতে আমার বার্ষিক পরীক্ষা এসে গেল।। এখন পড়ার চাপ ও বেশী।।তাই প্রাইভেট নিতে হলো।।ব দুইটা।। দুপুরে বের হয়ে গেলাম পড়তে...!! প্রাইভেট শেষ হয়ে গেল সন্ধ্যার আগে।।তখন আমি আর ইনা কথা বলতে বলতে আসছিলাম।।মধু বাবুর গলি আসার আগেই ইনার বাসা সে চলে গেল।।আমি যখন মধু বাবুর গলি ক্রস করছিলাম,, তখনি হুট করে আমার পথ আটকে ধরলো আহাদ ভাই আর তার বন্ধুরা।।

তাদের দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেছে।।কারণ তারা মোটেও ভাল না দিন দুপুরে মানুষ মেরে ফেলে কেউ কিছু বলতে পারে না।।কয়েকদিন আগেও একটি মেয়েকে এনে রেপ করে আগুন জালিয়ে মেরে ফেলছে।।সে জন্য জেলও খাটসেন তিনি।।তার বাবা নেতার সাথে থাকে বলে পাওয়ার খাটায়।।

আমাকে অনেক আগে থেকেই জালায়,,কিন্তু দূর থেকে আমাকে দেখে বলত,, সুন্দরী,, ফুলটুসি,, মাঝে মাঝে আমাকে পিচ্চিদের দিয়ে চিঠি পাঠাতো,, চকলেট দিতো।।তার দিতে তাকালে বিশ্রী করে হাসতো আর ঠোঁট দিয়ে কিস দেয়ার ইশারা করতো।।তার এসব দেখে গা গুলিয়ে যেত ঘৃণায়।।আমি সব সময় তাদের ইগনোর করতাম।। আমি তাদের দেখে না দেখার ভাল করে চলে যেতে নেই।।তখনি আহাদ ভাই আমার হাত ধরে ফেলে।।আমি পিছনে না ফিরে হাত ছাড়ার ট্রাই করতে থাকি।।তখনি আহাদ আমাকে তার কাছে টেনে আনে।।আর বলতে লাগে,,
-----ভয় পাও কেন পিচ্চি তোমাকে আমি ভালবাসি।। আই লাভ ইু..!! বলে হাসতে থাকে।।

আর এদিকে আমি কান্না করে বলতে লাগি,,
-----প্লিজ আমায় ছেড়ে দেন।।

-----তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছা করতেসে না ফুলটুসি,, কত সুন্দর মাখনের মতো শরীর হচ্ছে তোর একদম নরম নরম।।খালি ধরতে ইচ্ছা করে বলে আপত্তিকর ভাবে টাচ করতে লাগে।। আমি ভয়ে কান্না করে যাচ্ছি সাথে চিৎকার করে যাচ্ছি।।কিন্তু এই সন্ধ্যায় কেউ নেই।।তখন মনে পড়ে বড় মামীর কথা তিনি একবার বলছিলেন,,
----কেউ যদি তোমাদের গায় আপত্তির ভাবে টাচ করতে নেয় তখন সাথে সাথে তার নাকে দু আগুল ঢুকে টান দিবা,,নয় তো দু পায়ের মাঝ বরাবর লাথি মারবা,, আর না হয় চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিবা।।
আমি সাথে সাথে তাই করলাম।।যেহেতু আমার হাত তার হাতে আবদ্ধ তাই তার দুই পায়ের মাঝ বরাবর লাথি মারলাম।।সাথে সাথে তিনি ছিকে নিচে পড়ে চিৎকার করতে রাগলেন।।আর তার চেলা পেলারা কি হইছে ভাই বলে চিৎকার করতে লাগলো।।সেই সুযোগে আমি দৌড়ে পালা লাম তখনি আহাদ বলতে লাগে,,,
-----শালীরে ধর...?? ওর শরীরে কত বিগার ছুটামু আজ।।
তখস কিছু চেলা পেলা আমার পিছু আসতে লাগে।।কিন্তু আমি আর ডানে বামে না তাকিয়ে দৌড়ে বাসায় ডুকে গেলাম।।আর তখনি....!!

—————

তখনি বাসার মূল ফটক ইউসুফ ভাইয়াকে দেখতে পাই।।দৌড়ে তাকে ঝাপটে ধড়ি।।সারা শরীর তখন কাঁপছিল আমার।।এক সময় ইউসুফ ভাইয়ার উপর নিজের ভার ছেড়ে দেই।।আর জ্ঞান হারাই।।

কুহুকে এমন হালে দেখে ইউসুফের বুকে ধক করে উঠে,,কুহুকে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।।কিহু যখন জ্ঞান হারায় তখন কয়েক দফা গালে হাত দিয়ে ডাকে ইউসুফ।।কিন্তু  কোন সাড়াশব্দ পায় না।। দেড়ি না করে কুহুকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যা সে।।আর হল রুমে নিয়ে সোফায় শুইয়ে দেয়।।আর সাথে সাথে বাসার সবাই ডাকতে শুরু করে দেয়।।

----মা,  বাবা,  বড় মা,  দাদু কই তোমরা।।দেখ কুহুর জানি কি হয়েছে...!!!
সবাই ইউসুফের ডাকে দৌড়ে আসে।।কুহুকে এভাবে দেখে বিলাপ করতে থাকে তার নানু।।

বড় মা কুহুর মুখে পানির ছিটা দিল।।কুহুর জ্ঞান ফিরছেই না।।সাথে সাথে কল করলেন তাদের ফ্যামিলি ডাক্তার কে।।তখনি ইউসুফের মা কুহুর বলল,,
-----ইউসুফ কুহুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসচ্ছে।।
-----কি বলছো এসব মা!!
-----ঠিক বলছি।।মুনতানিশা যা তাড়াতাড়ি তেল গরম করে নিয়ে আয়।।
মুনতানিশা দৌড়ে চলে গেল রান্না ঘরে।।
ইউসুফ পাশে বসে হাত ঘসতে লাগে কুহুর।।কিছুক্ষণ পর মুন্তানিশা তেল নিয়ে হাজির হয়।।
-----ছোট মা তেল।।
ইউসুফ, মুন্তানিশা আর তার মা হাত, পায়েতেল মালিশ করে দিচ্ছেন।।
তখনি ডা. নজরুল এসে হাজির।।
-----আঙ্কেল প্লিজ দেখেন আর কি হইছে।।
ডা. নজরুল কুহুকে দেখার পর ঘুমের একটা ইনজেকশন দেয়।।আর বলতে লাগে,,
----ও কিছু দেখে ভয় পেয়েছে যার জন্য জ্ঞান হারিয়েছি।। আমি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছি কিছুক্ষণ ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।।


১২ টা ছুই ছুই!! ঘুম ভাঙ্গে যায় আমার।। হাতে উপর ভারি কিছু ফিল করছি উঠে বসে দেখি কেউ একজন আমার হাতের উপর শুয়ে আছে পরক্ষণেই সে ভয়ানক অনুভুতির কথা মনে পরে যায়।।ভয়ে শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগলো।। আমি এক ঝাকটায় হাত সরিয়ে নেই।।সাথে সাথে সামনের ব্যাক্তিটির ঘুম ভেঙ্গে যায়।।আর আমি বিড়বিড় করতে লাগি,,
-----আমাকে ছেড়ে দিন, আমার কাছে আসবেন না।।আমাকে ছুবেনা।।বার বার এ বলি অাওরাতে লাগি।। বার বার সেই ভয়ানক মুহূর্ত গুলোর আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।। প্লিজ চলে যান কাছে আসবেন। বার বার একি বুলি আওড়াচ্ছি।।

কুহুর এক ঝাকটায় হাত শরীর নেওয়াতে ঘুম ভেঙে যায় ইউসুফের।।কুহুর এহেন কাজে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।।তার মাঝে কুহুর এভাবে কথা বলছে কেন?? বুঝতে পারছে না।।তার বাবুইপাখি তাকে ভয় পাচ্ছে কিন্তু কেন?? ইউসুফ উঠে কুহুর কাছে যায়।।কুহুর গাল হাত রাখতেই চেচিয়ে উঠে সে আর বলতে লাগে,,
------ছুবেন না আমায়!! আমাকে যেতে দিন..!! 
ইউসুফ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষন।। তারপর আবার বলল,,
------কুহু লুক অ্যাট মি??  আমি তোমার ইউসুফ ভাইয়া।।
কুহুর যেন কান পর্যন্ত কোনো কথাই পৌঁছলো না।। সে তার বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছে।।
ইউসুফ এবার সহ্য করতে না পেরে কাঁধ ঝাকিয়ে বলতে লাগে,,,
-----কুহু,,  কুহু লিসেন টু মি,,  আমি তুমার ইউসুফ ভাইয়া,, তোমার সাইকো,, তোমার টাকলু বাবুইপাখি আমার দেখে আমার দিকে...!!

আমি চুপ হয়ে গেলাম।।ভালভাবে তাকিয়ে ইউসুফ ভাইয়াকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই।।আর ইউসুফ ভাইয়া আমার মাথা তার বুকের সাথে চেপে ধরে পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।। আর বলতে লাগে,,
-----শান্ত হও বাবুইপাখি!!  আমি আছিতো তোমার পাশে দেখ তোমার সাইকো তোমার পাশেই পাছে।।কাঁদে না বাবুইপাখি..!!আমাকে বল কেউ কিছু বলছে তোকে??  বল তুই..!!

আমি কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছিলাম না।।
তখন ইউসুফ ভাই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।।আমিও তার কোমর পেচিয়ে ধরে শক্ত করে কেঁদেই চলেছি।।

কিছুক্ষণ কুহুর হাত টা আলগা হয়ে গেল।। ইউসুফ বুঝতে পারলো কুহু ঘুমিয়ে গিয়েছে।।ইউসুফ কুহুকে শুয়ে দিয়ে তার পাশেই বসে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।।আর ভাবতে লাগলো,,তার বাবুইপাখির কি হলো?? কেনই বা এমন করছে?? কেউ কি কিছু বলেছে এমন হলে তাকে চিড়ে ফেলবে সে।।

গভীর রাতে ঘুম ভাঙ্গে ইউসুফের।। চোখে কুহুকে দেখে ধক করে উঠে তার মনে।।কুহু কাঁপছে ঘুমের মাঝে।। সাথে সাথে কপাঁলে হাত দেয়।। জ্বর উঠেছে প্রচুর।। ইউসুফ ওয়াশরুম থেকে এক মগ ভর্তি পানি নিয়ে আসলো আর তার পকেট থেকে রুমাল নিয়ে তা ভিজিয়ে কপাঁলে দিলো।।আবার দৌড়ে গিয়ে দুটো ব্ল্যাঙ্কেট এনে কুহুর গায়ে দিলো তাতে কিছুটা কাপুনি কমলো।।জ্বরের ঘরে কুহু কিছু বুলি আওড়াচ্ছিল যা ইউসুফের কান পর্যন্ত পৌঁছালনা।।তাই ইউসুফ কিছুটা ঝুকে শুনতে চেষ্ট করে।। আর শুন্তে পায় শুধু একটি নাম....আহাদ ভাই....!!!তাই আরেক ঝুকে তখন অস্পষ্ট ভাবে শুন্তে পায়,, আমাকে ছেড়ে দিন আহাদ ভাই...!! ইউসুফ এখন কিছুটা বুঝলো এই আহাদ নামের কেউ আজকে কুহুর এই অবস্থার জন্য দায়ী।। কিন্তু কি হয়েছিল বুঝতে পারলো না।।মনে মনে ঠিক করে ফললো এই আহাদ যদি সত্যই কিছু করে থাকে ওকে তো কখনোই ছাড়বেনা সে...!! 
কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে ইউসুফ।।মায়া মায়া মুখটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে।।ঠোঁট দুটো শুকিয়ে আছে।।এক দিনেই তার বাবুইপাখি নেতিয়ে পড়েছে।।এসব দেখে ইউসুফের মনে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।।
আর মনে মনে বলছে,
------বাবুইপাখি  তোর এই হালের পিছনে যারা আছে তাদের একজনকেউ আমি আস্ত রাখবো না।।তারা যানে না তারা ইউসুফের কলিজায় হাত দিয়েছে...!!!
ভোর রাতে কুহুর জ্বড় কমে যায়।।সারা শরীর ঘেমে একাকার।।এর মাঝে দুবার বমি করেছে সে..!!ইউসুফের সবটা পরিস্কার করতে হয়েছে।।কি আশ্চর্য যেখানে ১ গ্লাস পানির জন্য সে কাজের লোককে বলে সেখানে সে এসব করছে।।হাসলো ইউসুফ।।সে প্রমে রোমিও হয়ে যাচ্ছে।।
ইউসুফ হালকা এসির পাউরটা বাড়িয়ে দেয়।।কুহুর এখন জ্বড় নেমে যাওয়াতে সে তার ঘরে চলে আসে।।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে মাথা কারো স্পর্শ পেয়ে।।তাকিয়ে দেখি ছোট মামী বসে।।তিনি পরম মমতা দিয়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন মাথায়।।আজ যদি আমার মা থাকতো তাহলে ও হয়তো ভাবেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিত।। 
ছোট মামী বলল,,
-----বাচ্চা কি হয়েছে তোর?? তোর মাকে বলবি না??
আমার কালকের সেই ভয়ানক কথা মনে পড়ে গেল।।সাথে সাথে মামীকে ধরে কাঁদতে লাগি।। আর সব বলে দেই।।মামী সব শুনে হতভম্ব।।
তারপর তিনি চোখ মুছে দিয়ে বলতে লাগেন,,
-----বাচ্চা কাঁদিস না।।।  আহাদ তার উপযুক্ত শাস্তি পাবে।।
-----কিন্তু মামী পড়ে যদি আবার এমন করে...!! থাক কিছু করো না আমার ভয় হয় ওদের।।
-----বাচ্চা ভয় পেয়ে যদি অপরাধকারী কে ক্ষমা করে দেই,, সে কিন্তু তার কাজ পুনরায় করবে।। আর সে অন্য করেছে তোর সাথে,,  আমার মেয়ের সাথে।।ওকে তো ছাড়বো না তুই নিজ হাতে শাস্তি দিবি।। মনে রাখবি অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে, দুজনেই সমান অপরাধী।।
 আমি মাথা নরলাম।।মামী খাবার নিয়ে এসে ছিলেন।।খাবার খাইয়ে চলে গেলেন।।বাহিরে ইউসুফ দেখে বলল,,
------শুনেছিস তো?  সব কটাকে যেন্ত পুতে ফেলবি।।আমার মতে যারা মেয়েদের সাথে এমন করে তাদের মোরে দাড় করিয়ে কংকর নিক্ষেপ করা উচিত।। কুহুর এত ছোট বয়সে এমন হওয়াতে দাগ কেটে গেছে মনে।।ওকে এসব থেকে বের করতে হবে।।

-----মা চিন্তা করো না যারা এসবের জন্য দায়ী তাদের মাংস কুুকুর কে দিয়ে খাওয়াবো আমি।।
ইউসুফ বাহিরে দাড়িয়ে সবটা শুনে ছিল।।রাগে তার মাথার রগ দুটো লাফাচ্ছে চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে তার।  মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে তাদের জালিয়ে দিতে।।

বিকেলের দিক বাহিরে অনেক চিল্লাপাল্লার আওয়াজে দৌড়ে বাহিরে গেলাম।। বাহিরে গিয়ে পা দুটো থেমে গেল।।প্রথমে ভয় পেলেও এখন আমার ঠোঁটে মৃদু হাসি।। আমার সামনেই পরে আছে আহাদ আর তার চেলাপেলা।।আর ইউসুফ ভাইয়া তাদেরকে ধরে মারছে।।। অকথ্য গালিগালাজ করছে।। আর মেরেই চলেছে।।এক সময় তাদেরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেয়া হয় বট গাছের সাথে।। তার পর ইউসুফ ভাইয়া আমার হাত একটা ডান্ডা দিয়ে বলে,,
------নে অদের নিজ হাতে শাস্তি দে।।
আমি ইউসুফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম বরাবর আমার মারপিট দেখলে ভয় লাগে।।যে মার খায় তার জন্যও ভয় লাগে।। কিন্তু ঘৃণা হচ্ছে প্রচুর ঘৃণা।।সেই সাথে মাথায় চেপে বসেছে মামীর কথা,,
"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী "
আমি গিয়ে  ইচ্ছা মত মারলাম।। 
আহাদ চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগে,,
----কুহু মাফ করে দে আমায়।।
আমার যেন সেদিকে খেয়াল নেই।।মারতে মারতে নিজেই কেঁদে দিলাম।।ইউসুফ ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো।।আর বলল,,
-----তুই কেন কাঁদছিস ওই কাঁদবে আজকের পর থেকে দেখে যা।।
বলেই কাউকে ইশারা দেয়।।সাথে কেউ একজন করাত নিয়ে আসলো।।
ইউসুফ বলল,,
-----ওর হাত কেঁটে দে...!!
আহাদ তখন আবার চেচিয় বলল,,
-----ভাই মাফ করে দেন আর করবোনা।।ভাই এমন করবেন না।।
কাজ হলো না।।লোকটি গাছ থেকে নামিয়ে  হাত কেটে দিল।।
আর আহাদ কাতরাতে লাগলো।।তখনি আহাদ আবার বলল,,
-----তোদের কাউকে ছারবো না আমি কাউকে না।।
ইউসুফ বাঁকা হাসলো,, আর বলল,,
-----সে সুযোগ দিলে তো?? বলে বন্দুক দিয়ে তিন তিনটা গুলি করে দিলো।।আর আমার পায়ের কাছে এসে পড়ে গেল আহাদ।।তার নিথর দেহ পড়ে আছে আমার সামনে।।

আমি এসব কিছু চোখে সামনে দেখে আঁতকে উঠি।। ইউসুফ ভাই এক পলকে একটা খুন করে ফেললো।।কি ভয়ানক লাগছে তাকে।।তিনি এতটা হিংস্র কিভাবে?? তার সুন্দর চোখ দুটো কোন হিংস্র প্রাণীর ন্যায় ।আহাদের রক্ততে বাহিরে উঠানে মাখামাখি।। মাথাটা কেমন ভন ভন করছে।।ভাবতে পারি নি ভাইয়া আহাদকে খুন করে ফেলবে।।এসব আর সইতে না পেরে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলি।।জ্ঞান হারাবার আগে শুধু একটা কথা কানে আসে।। আর সেই কন্ঠ ধারী লোক আর কেউ না ইউসুফ ভাইয়া।।যে বলে যাচ্ছে,,
----বাবুইপাখি????

আমার জ্ঞান ফিরে পরের দিন।।পাশেই মুন্তানিছা আপি।।তিনি বলতে লাগেন,,
-----এখন কেমন লাগছে তোর??
আমি বললাম,,
-----ভাল।।আপু আহাদ কি মরে গেছে?? 
-----হুম মরে গেছে।।শয়তানরা এভরাবেই ধংস হয়ে যায়।।কিন্তু জানিস,,ওর ফ্যামিলি রাও চলে গেছে  এক রাতে সব গায়েব।।এখন আর চিন্তা করিস না।।
আমি মাথা নাড়াই তখনি ঘরে ঢুকে ইউসুফ ভাইয়া যাকে দেখে ভয় লাগতে  লাগলো কালকে তার যেই রূপ দেখেছি,, এই রূপ তার বিপরীত কতটা হিংস্র।। তার মাঝে মন বলতে কিছু নাই।।ইউসুফ ঢুকতেই আপি বের হয়ে গেল।।আর ামি বয় কাঁপছি।।আমাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে ইউসুফ হাসলো।।।তারপর বলল,,
------ভয় পাচ্ছিস কেন?? আমি এমনিরে আমার জিনিসে কেউ হাত দিলে তাকে আমি ছাড়ি না।।তারপর কাছে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বের হয়ে গেলেন তিনি।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন