বকুল ফুলের মালা - পর্ব ০৭ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৩!! 

এদিকে আগের দিন রাতে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে এসে সবে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে এমন সময় আয়ানের মোবাইলটা ভাইব্রেট করে উঠলো। আয়ান ক্লান্ত শরীরে খানিক বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়েই থমকে গেল। একটা রিমাইন্ডার এসেছে মোবাইলে। 'হ্যাপি বাড্ডে পরী বউ'। প্রতিবছরই এই দিনটায় এই রিমাইন্ডারটা আসে আয়ানের মোবাইলে। ওর নিজেরই সেট করা। আর তার ঠিক মিনিট পনেরো পর অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা বাজলে আয়ান তার পরীটাকে বার্থডে উইশ করে। কিন্তু এবার রিমাইন্ডারটা পেয়ে পুরোই থমকে গেছে আয়ান। মোবাইলটা হাতে নিয়েই থ হয়ে বসে ছিল আয়ান। মায়রাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েও হাতটা থেমে গেছে আয়ানের। যার উপরে অধিকারই নেই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অন্তরের জ্বালা বাড়ানোর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না আয়ান। আবার কেন জানি নিজের মনের সাথে এই অদ্ভুত লজিকের সাথে টিকতেও পারছে না আয়ান। মোবাইল হাতে তাই স্তব্ধ হয়ে বসে একটা নির্ঘুম রাত কাটলো আয়ানের। না পারছে মায়রাকে নিজের স্মৃতি থেকে একেবারের জন্য সরাতে, আর না ওকে নিজের জীবনে বাঁধতে পেরেছে। সব মিলিয়ে আয়ানের শরীর মন দুটোই বিধ্বস্ত। 

এদিকে মায়রা শূন্যতা যে শুধু আয়ানকে পোড়াচ্ছে তাও নয়। আরো দুজন মানুষ মায়রার জন্য প্রতিটা মিনিট কষ্ট পাচ্ছে। মানুষ দুজন হলো আভা আর সামি। সামি বিকেলে অফিস থেকে এসে দেখলো আভা কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। সামির বুঝতে বাকি রইলো না ঠিক কি হয়েছে। পাশে বসে আভার মুখের দিকে তাকালো সামি।

-আভা? কাঁদছো কেন?

-আজকের দিনেও মেয়েটার উপরে রাগ করে থাকবে? একটা বার অন্তত কথা বলে----?

-যে চায় না আমাদেরকে তার জন্য কান্নাকাটি করে কি কোন লাভ আছে বলো তো আভা?

-মেয়েটা ভালো নেই সামি--। সীমান্ত ছেলেটা কি করছে মেয়েটার সাথে---।

-কি আর করবে! আর ওর মায়ের কথা শুনো নি? মায়রা নাকি নিজে সীমান্তকে বলে বুড়ো শ্বশুর শাশুড়িকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে গেছে। কেন? নিজেরা একসাথে থাকবে বলে---। 

-তোমার মনে হয় আমাদের মায়রা এটা করতে পারে?

-আমার কি মনে হয় সেটা ফ্যাক্ট না আভা। ওর মা বাবার কি মনে হয়, শ্বশুর শাশুড়ির কি মনে হয় সেটাই ফ্যাক্ট--। 

-সামি? আমি জানি মায়রা ভালো নেই-। গত কয়টা মাস ধরে আমি শুধু তোমার জন্য চুপ করে ছিলাম-। কিন্ত বিশ্বাস করো ও ভালো নেই। আমি প্লিজ? একটা বার ওকে দেখে আসবো--। প্লিজ?

-হুম? তার মানে আজ ওকে কল করেছিলে? তাই তো? 

-আজ ওর জন্মদিন সামি? আমি কি করে---!

-হুম---। তা যেতে যে চাইছো নিজের বাঁদরটাকে কি করে রেখে যাবে? ও তো বায়না ধরবে যাওয়ার জন্য---।

-ও মিষ্টির কাছে থাক না? আমরা তো একটা দিনের জন্যই যাবো--। একদিন না হোক-একটা বেলা-। মায়রাকে দেখেই ফিরে আসবো---।

-তুমি এতো জেদ ধরছো কেন আভা? ওরা ব্যাপারটা কেমন ভাবে নিবে? এতোগুলো মাস খবরই নিলাম না?

-সামি? আজ মায়রার সাথে কথা বলার সময় ওর কথা শুনে মনে হলো খুব কাঁদছে। হাত পুড়ে ফেলেছে রাঁধতে গিয়ে---।

-কি!! মায়রা রাঁধতে কেন গেছে! বাচ্চা একটা মেয়ে! আভা? ওকে আমরা কখনো চুলোর ধারে কাছে পর্যন্ত ঘেঁষতে দিই নি--। কতটা পুড়েছে কে জানে!

-সামি? সেটা তো গেলেই দেখতে পাবো না? হুম?

-আমার কাল ফার্স্ট ট্রিপেই ঢাকা যাচ্ছি--। ভোরে ভোরে রওনা হলে সময়টাও কম লাগবে--। আর--।

-সত্যি সামি? থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ---। 

-তুমি বাঁধনকে সামলাও--। ও গেলে আসতেই চাইবে না। আমরা নাহয় কয়দিনের জন্য মায়রাকে নিয়ে আসবো-। ওদের ব্যাচের রিইউনিয়নও নাকি আছে সামনে--।

-হুম। সেটাই ভালো হবে। অন্তত সপ্তাহ খানেক মেয়েটাকে তো কাছে পাবো আমরা---।

-আবার কান্নাকাটি শুরু করো না প্লিজ?

আর এদিকে সন্ধ্যার দিকে মায়রার ঘুমটা ভাঙলো গালে সীমান্তের আঙ্গুলের ছোঁয়ায়। চোখ খুলে তাকাতেই সীমান্তের হাসি মুখটা দেখলো মায়রা৷ সীমান্ত মায়রার গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে মায়রাকে দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।

-উঠো মায়রা? সন্ধ্যে হয়ে গেছে। উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হও--। বের হবো তো? দেরি হয়ে যাবে নইলে ফিরতে---।

-হুম----।

-একটা শাড়ি পড়ো--। তারপর একটু মেকাপ--। ওকে?

-হুম----।

মায়রা রেডি হয়ে নিলে সীমান্ত মায়রাকে নিয়ে বের হলো। বেশ কিছুক্ষণ গাড়িতে করে ঘুরে সীমান্ত মায়রাকে নিয়ে একটা শপিংমলে ঢুকলো। মায়রার জন্য কয়েকটা শাড়ি, জামা, ব্যাগ, কসমেটিক এসব কিনলো সীমান্ত। মায়রা শুধু মাথা নেড়ে সীমান্তের পছন্দের জিনিসে সায় মিলিয়েছে। কেনাকাটা শেষ হলে শপিংমলটা একটু ঘুরে দেখলো ওরা। একটা মাঝারি সাইজের সিনেমাহলের মতো করে থিয়েটার রুম আছে শপিংমলটায়। সেটা দেখে সীমান্ত বেশ উৎসাহের সাথে মায়রাকে নিয়ে ছবি দেখতে ঢুকলো। হলরুমটার বেশিরভাগটাই ফাঁকা। ওদের সিটের আশেপাশে কেউ নেই। মায়রা প্রথমবার এভাবে সিনেমাহলে বসে ছবি দেখছে। কেমন একটা ইতস্তত লাগছে মায়রার। তবু মন দিয়ে ছবিটার কাহিনী দেখায় মন দিলো মায়রা। নায়ক নায়িকার বিচ্ছেদ পর্ব চলছে এখন ছবিতে। দুজন দুদিকে কেঁদে বুক ভাসিয়ে গান ধরেছে। দৃশ্যটার সাথে নিজের জীবনের মিল করছে মায়রা ঠিক এমন সময় কোমড়ে হাতের স্পর্শে চমকে উঠলো মায়রা৷ কেঁপে উঠে সীমান্তের দিকে তাকালো।

-কি করছ? কেউ দেখলে কি ভাববে?

-কি আর ভাববে! আর দেখবেই বা কে? এখানে কেউ কাউকে দেখছে না, না ছবির এই বোরিং কাহিনী নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে---। সবাই নিজেদের মতো করে ব্যস্ত---।

-তবুও---। 

-আরে বাবা! এখন তোমাকে টেনে নিয়ে চুমো খেলেও কেউ কিছু মনে করবে না। বিশ্বাস হচ্ছে না? আই ক্যান প্রুভ দ্যাট---।

-কি সব বলো?

-হা হা। তোমার কি মনে হয় এই সব বস্তা পচা প্রেমকাহিনী দেখতে কেউ এসেছে এখানে? এখানে যে যার মতো করে নিজেদের টিকিটের দামটা উশুল করে নেয়--। আমরাও উশুল করি কি বলো?

-আম---। ছবিটা সুন্দর---। দেখো না? কথা বলো না তো---।

-এটা সুন্দর হলো! প্রেম করলো দুজনে। কিন্তু তাদের বাবা মা মেনে নেয় নি--। আলাদা হয়ে গেছে। কেঁদে কেটে গান গেয়ে মনের দুঃখ দেখাবে কিছুক্ষণ। তারপর? তারপর দেখবে শেষে সব ঠিকঠাক। সবাই মিলে গেছে। আর হ্যাপি এন্ডিং। সো ফানি---।

-আসলেই ফানি--। জীবনটা যদি এতোটা সহজ হতো----।

-জীবনটা সহজই মায়রা। শুধু সেটাকে ইনজয় করতে জানতে হয়। লাইফে হয়তো এতো সহজে সব ঠিক হয়ে যায় না। তাই মানিয়ে নিতে হয়। যেটা পেয়েছ তা নিয়ে খুশী থাকতে শিখতে হয়--। নইলে আজীবন কাঁদো--। হু কেয়ারস তুমি সুখি কি না? তাহলে কেন সুখী হবে না বলো তো?

-হুম?

-কেমন লাগলো আমার ফিলোসোফি?

-ভালোই---। শুধু একটাই কথা থেকে যায়। মনে সুখ না থাকলে সুখী হওয়ার এ্যাকটিং করলেই কি তাকে সুখী থাকা বলে? নাকি শুধু মানিয়ে নেয়াকেই সুখী হওয়া বলে?

-তোমার তো দেখি জটিল ফিলোসোফি! আপাতত ফিলোসোফি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে জাস্ট ইনজয় দা মোমেন্ট বেবি---। 

কথাটা বলেই সীমান্ত মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে মায়রার ঘাড়ে নাক ঘষলো। মায়রার সমস্ত শরীরটা ধীরে ধীরে বরফের মতো জমে যাচ্ছে যেন। সীমান্ত মায়রার সেই শীতল শরীরে নিজের উষ্ণ স্পর্শ ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে৷ আলতো করে মায়রার ঘাড়ে মুখ গুঁজে মায়রার মিষ্টি ঘ্রাণটা নিতে ব্যস্ত না হলে আধো আলোয় মায়রার চোখের পানির ছলছলানিটা হয়তো সীমান্তেরও চোখে পড়তো আজ। কিন্তু আফসোস সেটা হলো না। সীমান্ত নিজের মতোই ব্যস্ত হয়ে রইলো মায়রার কোমল শরীরটা নিয়ে। আর মায়রা দম আটকে বসে রইলো মূর্তি হয়ে।

১৪!! 

সারাটা দিন বাসায় দরজা বন্ধ করেই কাটিয়েছে আয়ান। অফিসেও যায় নি। এমনকি দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও কুটোটি পর্যন্ত দাঁতে কাটে নি ছেলেটা৷ আয়ানের মা বাবা দুজনেই কয়েকবার ডেকে গেলেও আয়ান খাবে না। ভালো লাগছে না। এসব বলে আবার গুম হয়ে বসে রইলো। আজকের দিনটা সে স্মৃতি হাতড়াতে ব্যস্ত। গত তিনটা বছরের এই দিনটার এতো স্মৃতি জমা হয়ে আছে যে চাইলেও সেগুলো কখনো ভুলতে পারবে না আয়ান। চারদিকে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসলে আয়ান আয়ান বারান্দায় রাখা রকিং চেয়ারটায় গিয়ে গা এলিয়ে দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো। চোখের সামনে ওদের ডিপার্টমেন্টের লাইব্রেরির ছবিটা ফুটে উঠেছে আয়ানের৷ আয়ানের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা সামনেই। তাই লাইব্রেরিতে বসে নিজের নোট রেডি করছিল। হঠাৎ পাশের একটা সিটে কারো বিরক্ত ভাবে বই রাখার শব্দ শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে থমকে গেল আয়ান৷ একটা মেয়ে ভিষণ বিরক্ত হয়ে হাতের বইটা টেবিলের উপরে ধপ করে রেখে দিলো। মেয়েটার দিক থেকে চেয়েও চোখ ফেরাতে পারলো না আয়ান৷ প্রায় সব ক'জন জুনিয়ারকে মুখ চেনা চিনলেও এই মেয়েটিকে চিনতে পারলো না আয়ান। তবুও কেন জানি মেয়েটা বাচ্চাদের মতো বিরক্ত হয়ে কুঁচকে থাকা ভুরু জোড়া আকর্ষণ করছিল আয়ান। সাথে মেয়েটার মায়াবী চোখ। আয়ান ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকালো। কেমন অস্থির অস্থির হয়ে নিজের হাতের আঙুল নাড়াচাড়া করছে৷ কখনো বা টেবিলে আঙুল দিয়ে ঠুংঠাং শব্দ করছে আনমনে৷ আবার হুঁশ হতেই নিজেই জিভ কেটে চুপ করে বসে থাকার চেষ্টা করছে। মেয়েটার এতো উত্তেজনা দেখে আয়ান নিজেই হেসে ফেললো। 

-ঘোড়ার ডিমের ম্যাথ আমার৷ আর ঘোড়ার ডিমের বান্ধবী। সে নাকি আমাকে এসে অঙ্ক বুঝাচ্ছে! এক ঘন্টা হয়ে গেল আসার নামই নেই। এবার পরীক্ষায় আমি নির্ঘাত ফেইল করবো! ওহ! মামনি! আমার কি হবে!

আয়ান হেসে ফেললো মেয়েটার অবস্থা দেখে। নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে মেয়েটার সামনে দাঁড়াতেই মেয়েটা বিরক্ত হয়ে চোখ তুললো।

-হ্যালো? আমি আয়ান--। এনি প্রবলেম?

-প্রবলেম কি প্রবলেম না সেটা আপনাকে বলতে যাবো কেন? আজিব?

-না--আপনাকে দেখে বেশ টেন্সড মনে হচ্ছে--। আমাকে বলতে পারেন। যদি কোনো হেল্প করতে পারি---।

-এসেছে হেল্প করতে? এই যে বইটা দেখছেন? ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস? এই ম্যাথগুলো আমি কিছুতেই সলভ করতে পারছি না। আপনি করতে পারবেন? আসছে বলতে----? হুহ----।

-কোনটায় প্রবলেম বলুন? বুঝিয়ে দিচ্ছি---।

মেয়েটা চোখ বড় বড় করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ আয়ান ততক্ষণে একটা চেয়ার টেনে মেয়েটর পাশে বসে একটা ম্যাথ করা শুরু করে দিয়েছে। আর মেয়েটা ভূত দেখার মতো হা করে আয়ানকে দেখছে। আয়ান নিজের খাতাটা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে একটু হাসলো।

-ম্যাডাম? ম্যাথটা বুঝেছেন কিনা দেখুন। আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই। আমি এলিয়েন না৷ মানুষ--।

-জি? সরি---।

মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে আয়ানের বাড়িয়ে দেয়া খাতাটা নিয়ে ম্যাথটা বুঝার চেষ্টা করলো। আর আয়ান একমনে মেয়েটার লাজুক লাল মুখটা দেখছে। কমলা সাদা রঙের থ্রি পিস জামাটা মেয়েটার ফর্সা রঙটাকে আরো বেশিই উজ্জ্বল করে দিয়েছে যেন। আর লজ্জায় লাল আভা ছড়ানোয় মেয়েটাকে আরো বেশি মোহনীয় লাগছে আয়ানের৷ মেয়েটা মুখ তুলতেই আয়ানের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। মেয়েটার চোখে মুখে লাজুক একটা হাসি খেলা করে গেল আবার৷ আর তাতেই আয়ান একেবারেই ঘায়েল হয়ে গেল। একটু পরেই আয়ান তার লাজুক পরীটার কাঁপা কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেল।

-এই লাইনটা-লাইনটা বুঝি-বুঝি নি--।

-দেখি?

আয়ান হাত বাড়িয়ে খাতাটা নিয়ে নিয়মটা বুঝিয়ে দিলো। আরো কয়েকটা ম্যাথ করে মেয়েটাকে নিয়মগুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো আয়ান। মেয়েটার চোখমুখের চাঞ্চল্য দেখে আয়ান বুঝতে পারলো ম্যাথগুলো মাথায় ঢুকেছে তার। মেয়েটার লাজুক মুখে হাসি খেলা করে গেল।

-থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ। 

-অপরিচিত কেউ হেল্প করলে সম্ভবত তাকে নিজের নামটা বলতে হয় ম্যাডাম----।

-জি? আমি মায়রা---।

সেদিনের মায়রার একরাশ হাসি মুখে 'আমি মায়রা' কথাটা আজো যেন কানে বাজে আয়ানের৷ পাগলিটাকে আর কখনো এতোটা বিরক্ত হতে দেখে নি। এর পরে প্রত্যেকটা দিন মায়রার লাজুক লজ্জারাঙা মুখই দেখেছে আয়ান। আর সেই মুখটাই হুট করে আয়ানের জীবনে এসে আয়ানের সবচেয়ে বড় নেশা হয়ে গেছে। মেয়েটাকে নিজের করে না পেলেও নেশাটা তার কিছুতেই কাটছে না। যার নেশা হয় সেই জানে এই নেশা কাটানো কতোটা কষ্টের আর অসম্ভব। আয়ান রকিং চেয়ার ছেড়ে উঠে একটা শার্ট পড়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। পিছন থেকে মা বেশ কয়েকবার ডাকলো। আয়ানের কান পর্যন্ত সে ডাক পোঁছালো কি না কে জানে। সে নিজের মতো করে বেরিয়ে পড়লো গাড়ি নিয়ে। 

এদিকে শপিংমল থেকে ডিনার সেরে বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারোটা বাজলো সীমান্ত আর মায়রার৷ সীমান্ত হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেই আয়নার সামনে দাঁড়ানো মায়রাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। মায়রা মুখের মেকাপ তুলে কিছু ভাবতে ভাবতে কানের দুল খুলছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। সীমান্ত কখন এসে মায়রার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়েছে সেটা একদমই টের পায়নি মায়রা৷ ঘাড়ের কাছের চুলগুলো সরে গিয়ে কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে হুঁশ হয় মায়রার। চমকে আয়নার দিকে তাকাতেই সীমান্তকে দেখতে পায়। আর চোখে পড়ে লোকটার ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসিটা। নিজের অজান্তেই একবার ঢোক গিললো মায়রা। 

সীমান্ত মায়রার দিকে একবার তাকিয়ে মায়রার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজেই মায়রার কান থেকে দুলটা খুলে নিলো। তারপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো মায়রার কানে। মায়রা কেঁপে উঠতেই সীমান্ত অন্য পাশে এসে কানের দুল খুলে নিয়ে আরেকটা চুমো খেল। মায়রা একটু সরে আসার চেষ্টা করতেই সীমান্ত মায়রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গলার নেকলেসটাও খুলে নিলো। তারপর মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।

-কি করছো?

-উমম! কি করছি সেটা কি আলাদা করে বলে দিতে হবে? বুঝতে পারছ না কি চাইছি?

সীমান্তের কথা শুনে মায়রা চুপ করে আছে দেখে সীমান্ত মায়রার চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরলো। 

-ভাবছি কেউ একজন এলে মন্দ হয় না। বাসায় একা একা থেকে তাহলে আর বোর হবে না তুমিও---। কি বলো?------।

সীমান্তের পরের কথাগুলো আর মায়রার কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। তার চোখের সামনে সবকিছুই কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসতে চাইছে৷ মায়রার ইচ্ছে করছে লোকটার সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে সরিয়ে দিতে৷ ইচ্ছে করছে চিৎকার করে লোকটাকে বলতে, "ডোন্ট টাচ মি--। ছেড়ে দাও আমাকে"। কিন্তু মায়রার গলা দিয়ে একটা টু শব্দ পর্যন্ত বের হলো না। ধাক্কা দেয়া তো দূরে থাক হাত পা সবই যেন পাথর হয়ে গেছে মায়রার৷ মায়রা শুধু একবার শিউরে উঠে সীমান্তের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই লোকটার এই নতুন রূপটার সাথে পরিচিত নয় মায়রা। এটা কি আসলেই তার আসল রূপ? নাকি মুখোশ! নাকি মায়রাকে নিজের ইশারায় নাচানোর অস্ত্র?

এর বেশি ভাবার সময় পেল না মায়রা। সীমান্ত কিছুক্ষণ মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে রওনা হয়েছে। মায়রার নিরবতাকে সে সম্মতি হিসেবেই ধরে নিয়েছে। মায়রাকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই মায়রার ডান হাতটায় চোখ পড়লো সীমান্তের। সেখানে আলতো করে চুমো খেল সীমান্ত। তারপর একসময় ধীরে ধীরে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে মায়রাকে কাছে টেনে নেয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সীমান্ত। মায়রার নরম শরীরের নেশায় ডুব দিয়ে মাতাল হয়ে উঠলো সীমান্ত। আর মায়রা চুপচাপ পড়ে রইলো রাতটা 
শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন