বাতাসির এমন কর্মকান্ড দেখে মাহাদের মনে সন্দেহ জাগলো। আচ্ছা, তিতিরের গতকালের সমস্যার পিছনে বাতাসি দায়ী নয় তো?
একে তো আজ...........
মাহাদের চোখের ভাষা পড়তে বাতাসির দেরী হয়না। মুখটা কাচুমাচু করে বলল," ঐ ওমন কইরা চাইয়া আছোস ক্যান? আই কি চোর! দরোগার মত চাইয়া রইছোস।"
মাহাদ যা বোঝার বুঝে গেছে। চোখটা বন্ধ করে মাহাদ মাথাটা দুলিয়ে বলল," তা বাতাসি, তুমি একা তিতিরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে না তোমার সাঙ্গ-পাঙ্গদের সঙ্গে নিয়ে গেছ। তোমার সাঙ্গপাঙ্গ বলতে এ বাসায় মা আছে শুধু। আর কেউ ছিল?"
" বেহুদা কতা কিয়ের লায় কস? আই কই যামু? আই কি বাড়ি থাইকা বের হই? "
" হুমহ্.... গেটের সিসি ক্যামেরা দেখলে এমনি বুঝতে পারবো তুমি গিয়েছিলে কি গিয়েছিলেনা। যদি দেখি মিথ্যা কথা বলছো তাহলে জুতা আর লাঠি দুটা দিয়েই তোমায় জবাই করবো। কথাটা মনে রেখ।"
মাহাদ চলে যেতেই বাতাসি মনে মনে বলল," লাডি আর জুতা দিয়া বাপজান আরে মাজে মধ্য ভয় দেহানার লায় জবি করতে চাইত । সেও সেই ছোড বেলার কথা। মাহাদ ক্যামনে কতাটা জানলো? এইডা তো ওর জানার কতা না। তারমানে বুদুন কইছে! ওরে বুদুন তোরে আর একবার চোখের সামনে দেকলে, অ্যাই কাঁচা চাবায় খামু তোরে। অ্যার মান-সম্মান লইয়া টানাহিচড়া করোস?"
মাহাদ ওদের বাসার কন্টোল রুমে গিয়ে আগের দিনের সিসি ফুটেজে যা দেখল তাতে মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল। বাতাসি আর ওর মা গাড়ী নিয়ে বের হয়েছে। গেটের বাহিরে রূপসা ছিল তাকেও রিসিভ করে নিয়ে গেছে।
মাহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল," আজ এদের এমন বিচার করবো যেন পরের বার এরক কাজ করার সাহস আর না পায়।"
মাহাদ ওর বাবার রুমে গিয়ে দেখে ওর বাবা মিষ্টি খাচ্ছে।
মাহাদকে দেখে কামরান সাহেব বলল," হ্যারে মাহাদ, তিতিরের নাকি রেজাল্টের মিষ্টি এটা? ওর সাথে কি তোর কথা হয়েছে? ও কি আমাদের বাসায় আর আসবেনা?"
"বাবা জরুরি কথা আছে, দাদীর রুমে চলেন।"
" কি হয়েছে বলবি তো?"
ওখানে গেলেই জানতে পারবেন। চলেন তো বলে মাহাদ ওর বাবাকে টেনে নিয়ে বাতাসির রুমে চলে গেল। বাতাসি তখন মাহাদের ফোনের লক খোলার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে থ্রের্ড দিত তিতিরকে। কিন্তু তার আগেই মাহাদ রুমে ওর বাবাকে নিয়ে চলে এসেছে। মাহাদ বাতাসির কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল," তোমার চোরট্টামি আর গেলনা। আমার ফোন ধরেছ কেন? আবার কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে নাকি?"
" আই কি করচি? দেখ কামু, তোর পোলা অ্যার সাথে কি রকম করে।"
" তুমি কিছুতো করোনি। যা করার তোমার ঐ কুবুদ্ধির জগৎ মাথাটা সব করেছে।"
মাহাদ ওর বাবার হাত ধরে বেডে বসিয়ে দিয়ে সাবিনাকে জোড়ে ডাক দিল।
সাবিনা দরজার আড়াল থেকে টুপ করে বের হয়ে বলল," ভাইজান, আম্মারে ডাকতে হব? আজ সগ্গলেরর বিচার করেন। আই জানতুম অ্যার ডাক পড়বো। হের লায় আগে-ভাগেই তৈয়ার হইয়া আছি।"
বাতাসির কাছে থেকে থেকে তুইও যে তার মত হইছিস সেটা তোর কথা শুনলেই বুঝা যায়। যখন সব কিছু জানিস তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন? যা ডেকে আন।
সাবিনা চলে যেতেই মাহাদ ওর বাবাকে বলল," বাবা আপনি কি জানেন, আপনার গুনধর মা আর স্ত্রী সন্ধ্যার সময় তিতিরকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে?"
মাহাদের কথা শুনে কামরান সাহেব তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল," তিতিরের কি অপরাধ ছিল আম্মাজান?"
" বাতাসি চুপ করে রইল। তার পুত্রের ভাবসাব দেখে বাতাসির আর সাহস হলনা কিছু বলার। এখন যদি বলি তিতির মাহাদের বিয়ে করা বৌ তাইলে কামু লাফাতে লাফাতে হেইরে বাড়িতে আনবো। আই বাঁইচা থাকতে হেইডা হইতে দিতাম না।"
আমি বলছি বাবা। আমার অনুপস্থিতিতে গোলাব তিতিরের রুমে গেছে তাই তাদের ধারনা তিতির আমার মাথা খেয়েছে। মানে আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। এতে মৌয়ের মাকেও এরা ডেকে এনে অপমান করেছে। কতটা নিকৃষ্ট মানুষ হলে এরা এই ধরনের কাজ করতে পারে। শুধু ঐ কাজ করেও ক্ষান্ত হয়নি। আমার যতদুর সম্ভব মনে হয় গতকাল তারা এবং সাথে তার যোগ্য নাতনী রূপসাকেও নিয়ে তিতিরের ভার্সিটিতে গিয়ে ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। যার ফলাফল তিতির প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে যায়। আপনি জানেন তো কিছু মাস আগে ওর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তার উপর এমন অমানুষিক টর্চার। তাহলে তার কি অবস্থা হয়েছে সেটা একবার ভেবে দেখুন। এরা কতটা জঘন্য, সেটা ভাষায় বলা যাবেনা।
মাহাদের কথা শুনে কামরান সাহেব প্রচন্ড শর্ক খেয়ে গেলেন। কিভাবে তারা এত জঘন্য কাজ করতে পারলো। আম্মাজান, কাজটা আপনি ভুল করেছেন। এটা করা আপনার উচিত হয়নি। আপনি এজন নারী হয়ে অতটুকু মেয়ের সাথে এমন কাজ করা কি উচিত আপনার হয়েছে!
" চুপ থাক। পোলারে সামনে পাইয়া দেহি তোর জবান খুলছে। পক্কির মত ফরফর কইরা উড়তে মন চাইতাছে? তুই কি জানোস ঐ মাইয়ার ব্যাপারে! ঐ মাইয়া গভীর জলের মাছ।"
" যেই জলের জন্য ভয় পাচ্ছো সেই জলেই আমি ডুব দিব। যারে নিয়ে অযথা এত টানাহিচড়া করেছ তাকেই আমি বিয়ে করবো। আজ হোক কি আজকের বারেই হোক। আমি তিতিরকে বিয়ে করছি। পারলে তুমি ঠেকিয়ে দেখাও।"
" কয়বার বিয়া করবু! মানুষ একবার বিয়া করার সুযোগ পায়না আর হেই বারে বারে খালি বিয়াই করবার চায়। মরন অ্যার...... বাতাসি আর মাহাদ তুমুলঝগড়া লেগে গেল।"
কামরান সাহেব মাহাদ আর বাতাসির কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। তারা এসব কি বলছে? কামরান সাহেব ফ্যালফ্যাল করে একবার মাহাদের দিকে একবার বাতাসির দিকে তাকায়। কারন ইতিমধ্য তার মা আর ছেলের মধ্য ৩য় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেছে। শেষে কামরান সাহেব মাহাদকে টেনে রুম থেকে বের করে আনল। তারপর নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলল, "তোর কি তিতিরকে পছন্দ!"
" বাবা, পছন্দের কথা বলে আমাকে পাপী করবেন না। তিতির আমার বিবাহিতা স্ত্রী। অনেক কাহিনী আছে। ও এখানে আসেনি, এমনকি ও আমাকে চিনতোইনা। আমি ওকে ওর অজান্তেই আমার কাছে নিয়ে এসেছি। মাহাদ প্রথম থেকে সব কিছু খুলে বললো ওর বাবাকে।"
" কামরান সাহেব চুপ করে সব কথা শুনলেন। সব শুনে চোখে জল এসেছে। কামরান সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, " তোর মত যদি ফুয়াদেরও সৎ সাহস থাকতো তাহলে রিয়াকে আর সুইসাইড করতে হতনা। আমি ফুয়াদকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। আর আম্মাজানতো কোনদিনই করবেনা।"
বাবা আমি নিজেও জানতামনা রিয়া এমন একটা ঘটনা ঘটে ফেলবে। আলীম আঙ্কেলকে পরে অনেক খুঁজেছি কিন্তু আর তাদের খোঁজ পাইনি।
আমি জানি, তিতিরের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হোক। আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে তোদের আবার বিয়ে দিয়ে ওকে এখানে নিয়ে আসবো। আমি চাইনা আলিমের মত আর কোন পিতা মাতার বুক খালি হোক। বাসার পরিস্থিতি যা হবে সব আমি সামলিয়ে নিব।
মেয়েটাকে অনেকদিন হল দেখিনি। ওর কাছে আমাকে নিয়ে যেতে পারবি?
" বাবা, আপনার কি তিতির খুবই পছন্দ ! না আবেগে এমন কথা বলছেন? আপনার আম্মাজানের সামনে গেলেতো আপনার আবার সব কথা বন্ধ হয়ে যায়।"
" আমি তোর দাদীকে ভয় পাই,,,, কথাটা কিন্তু ঠিক না। আমি ওনাকে অত্যান্ত শ্রদ্ধা করি। এটারও অনেক কারন আছে। আমার আব্বা আম্মাজানকে পছন্দ করতোনা। সারাজিবন খুব অত্যাচার করেছে। আমার দাদী, ফুফু, চাচারা সবাই আম্মাকে অনেক নির্যাতন করেছে। আম্মা লুকিয়ে কাঁদত। দাদাজান আম্মাকে পছন্দ করে এই বাসায় নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আব্বার পছন্দ ছিলনা আম্মাকে। অনেক কষ্ট পেয়েছেন আম্মা। তখন থেকে মনে মনে প্রতিঙ্গা করেছি আমি কোনদিনই আম্মাজানকে কষ্ট দিব না। তাই ওনার প্রতিটা কথা আমি উপদেশ হিসেবে নেই। তবে আম্মাজান যা করেছে তা খুব খারাপ কাজ করেছে। ওনার বদলে আমি তিতিরের কাছ হতে ক্ষমা চেয়ে নিব।"
মাহাদ ওর বাবার কাছ থেকে চলে যেতেই লাবীবা রুমে ঢুকলো। লাবীবা কল্পনাও করেনি কামরান তাকে আজ বাঁশ দিবে। কামরান তিতিরের কথা তুলে লাবীবাকে প্রচুর বকাবকি করতে লাগল। শেষে কামরান বলল," তোমাকে এখন আমার সহ্য হচ্ছেনা। তুমি এক্ষুনি রুম থেকে বের হয়ে যাও। তুমি যে কত বড় খারাপ কাজ করেছ তার কোন মাফ নাই আমার কাছে।"
" কামরান কোনদিনও লাবীবার সাথে জোড়ে পর্যন্ত কথা বলেনি আর সেই মানুষ কিনা আজ এভাবে বকাবকি করলো। লাবীবার সমস্ত রাগ তিতিরের উপর গিয়ে পড়লো। লাবীবা সরাসরি ওর শাশুড়ি বাতাসির রুমে চলে গেল। আম্মা, আপনি ঠিকি বলেন। পেটে শত্রু ধরেছি। আপনার ছেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেছে। তাও কার জন্য বকাবকি করেছে! পরের মেয়ের জন্য বকাবকি করেছেন। আমি আর আপনার ছেলের কাছে যাব না। আমি বাবার বাসায় চলে যাবো। আমার কি মান-সম্মান বলে কিছু নেই নাকি!
যে মেয়ে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম আর আমার ছেলে তার জন্য পাগল। আমি মা হয়ে এটা কিভাবে মেনে নিব?"
বাতাসি লাবীবাকে একটা জোড়ে ধমক দিয়ে বলল, " বুড়া হয়ে যাইতাছ আর মাথায় বুদ্ধি হয় নাই। যাওগা বাপের বাড়ি। তাহলে শত্রুর রাস্তা ফাঁকা। যাও যাও এহনি যাও। মাথা মোটা মহিলা কোনহানকার। সারা জিবনডা এরে চলাতে চলাতে অ্যার জিবন গেল।
বাতাসির ধমক খেয়ে লাবীবা চুপ করে রইল। তারপর কিছুক্ষন পর বলল," আম্মা ঐ মেয়েটা শেষে মাহাদরে তাবিজ করেনি তো! না হলে মাহাদের মত মানুষ ওর জন্য এত পাগল হতে যাবে কেন!"
চুপপপ থাকো! এইডা বয়সের দোষ। তুমি বুঝবানা। মাহাদের চিন্তা করবার লাগি অাই আছি। তুমি গিয়ে আমার পোলার আগে পিছে থাকো। পোলা অ্যার পেশারের রোগী। কিচু হইলে কিন্তু তোমারে জান্ত মাটির মধ্য পুঁতে রাখুম। যাও এহান থাইকা।
লাবীবা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে আসল। তার শাশুড়ি যখন দায়িত্ব নিয়েছে তার মানে আর কোন দুঃশ্চিন্তা নেই। কারন তার শাশুড়ী অত্যান্ত চালাক একজন মহিলা।
♦♦♦♦
কিছুদিন পর,
তিতিরের ফুল ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সকালে রান্না সেরে তারপর ভার্সিটিতে যেতে হয়। কারন মাহাদ দুপুরে বাসায় আসেন। তিনি আবার তার বৌয়ের রান্না ছাড়া খাবেন না। যতই কষ্ট হোক বৌকে তার জন্য রান্না করতেই হবে। ভার্সিটি থেকে ফিরে ঐ সময় রান্না করা সম্ভব নয়। তাই সকালে খুব পারাপারি হয়ে যায়। প্রতিদিনের মত আজও রান্না শেষ করে ভারর্সিটিতে চলে যায়। তিতির জানতোনা তার জন্য এত সারপ্রাইজ লুকিয়ে আছে।
সব ক্লাস শেষ করে যখন বাসায় ফিরার জন্য রিক্সার অপেক্ষা করছিল তখনই সামনে একটা কার এসে থামল। তিতির দু'পা পিছনে সরে এল। কার থেকে কামরান সাহেব নামল। তিতিরের কাছে এসে বলল," আমি তো তোমাকে চিনতেই পারছিলাম না। শেষে আমাদের ডাইভার সাহেব তোমাকে দেখিয়ে দিল। তা কেমন আছো মা?"
সব কিছু হজম করতে তিতিরের কিছুটা সময় লাগল। তারপর সালাম দিয়ে বলল," কেমন আছেন আঙ্কেল?"
কামরান সাহেব ডাইভারকে গাড়ী নিয়ে চলে যেতে বললেন। তারপর একটা রিক্সা কে ডেকে বলল," বহুদিন রিক্সাতে চড়া হয়নি। ভাবছি আজকে তোমাকে নিয়ে রিক্সাই ঘুরবো।"
তিতির আর কামরান সাহেব রিক্সাতে উঠতেই তিতির রিক্সা চালককে লোকেশন জানালো। তারপর কামরান সাহেবের দিকে চেয়ে বলল," আঙ্কেল আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি।"
কামরান সাহেব মুচকি হেঁসে বললেন," তিতির, আমার মনে হয় তোমার কাছ থেকে আমি আঙ্কেল ডাকটা আশা করিনা। এর থেকেও বেটার কিছু আশা করি।"
ওনার কথা শুনে তিতির কিছুক্ষন ভাবলো, তারপর চট করে বলে ফেললো," বাবা?"
তুমি অত্যান্ত বুদ্ধিমতি মেয়ে। একটু কিছু বললেই সব ধরে ফেল। যাই হোক, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমার বাসায়। যেখানে আমি থাকি, সেখানে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি যেমন আমাকে সারপ্রাইজ দিলেন তেমনি আপনার ছেলেকেও আমরা সারপ্রাইজ দিব।
বাহ্ দারু আইডিয়া। রিক্সা চলছে। কামরান সাহেব তিতিরের সাথে গল্পে মজে গেছেন। বুঝলে তিতির, আমিও প্রেমে পড়েছিলাম কলেজ জিবনে কিন্তু তোমার দাদীর ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। কারন ওনাকে বললেই উনি আমারে রুমের ভিতর তুলে ম্যার দিত। আর আম্মাজানের ম্যারতো তুমি দেখেছ।
আমি যাকে পছন্দ করতাম সেই মেয়েটার নাম ছিল লাবনী। এখন কোথায় আছে জানিনা বলে থামল কামরান সাহেব।
" তারপর.."
তারপর আর কি! তোমার দাদীর পছন্দে ফুয়াদের মাকে বিয়ে করতে হল। এসব কথা ছেলেদের তো আর বলা যাবেনাতো! আল্লাহ্ এতদিনে কথা শুনেছে। তাই তোমাকে বলার জন্য পেয়েছি। আমি তো তোমার মত একটা নিজের মেয়ে চাইতাম। কিন্তু দেখ, আল্লাহ্ ঠিকি আমার আশা পুরুন করে দিছে।
কথা বলতে বলতে বাসায় এসে পৌছালো তারা। কামরান সাহেব রিক্সা থেকে নেমে কচকচে দু'হাজার টাকা বের করে রিক্সা চালককে দিয়ে বলল," পুরোটাই নেন। টাকাটা দান করিনি, মনের ভিতর থেকে খুঁশি হয়ে দিয়েছি।"
বৃদ্ধ রিক্সা চালক বলল," বাবা সবই বুঝলাম, কিন্তু মেয়েটা তোমার কে হয়?"
বৃদ্ধ রিক্সা চালকের কথার জবাবে কামরান সাহেব বলল," সম্পর্কে আমি ওর শশুড় হই কিন্তু ও আমার মেয়ে হয়।"
এমন জবাব শুনে তিতিরের খুব ভালো লাগলো। বাবারা বুঝি এমনই হয়। কিন্তু আমার জন্মদাতা পিতা! সে কোন মাটি দিয়ে তৈরি সেটা আমার আজও অজানায় রয়ে গেল।
তিতির দরজার কলিংবেল চাপাতেই মাহাদ এসে দরজা খুলে দিয়েই তিতিরকে জড়িয়ে ধরে বলল," কি ব্যাপার, আজ এত লেট হল কেন! জানোনা বর বাসায় আসবে? তাই দ্রুত আসতে হবে?"
তিতির কিছু বলার আগেই কামরান সাহেব সিড়ি বেয়ে উপরে আসতেই ঐ অবস্থায় মাহাদকে দেখে স্থির হয়ে গেলেন। এমন পরিস্থিতির সামনে পড়বেন সেটা তিনি কল্পনাও করেননি।
মাহাদ ওর বাবাকে দেখেই চট করে ছেড়ে দিল তিতিরকে। নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলল,"বাবা আপনি?"
কামরান সাহেব গলা ঝেড়ে বলল, " তোকে কতদিন আগে বলেছি ওর সাথে দেখা করবো। কিন্তু তোর এতদিনেও সময় হলনা। তাই একা একা খুঁজতে বের হয়েছি। তা থাম্বার মত দাড়িয়ে থাকবি না ভিতরে ঢুকতে দিবি।"
মাহাদ দরজা থেকে সরে দাড়ালো। তিতির আর মাহাদের বাবা ডাইনিং রুমে এসে সোফাতে বসতেই তিতির চটজলদি করে লেবুর শরবত বানিয়ে এনে কামরান সাহেবকে দিল।
কামরান সাহেব প্রচন্ড খুঁশি হলেন। মেয়ে থাকলে যা হয়। না চাইতেই সব হাজির। খানিক পরে তিতিরকে দুপুরের খাবার রেডী করতে বলে মাহাদ ওর বাবাকে নিয়ে হিনুদের বাসায় চলে গেল।
হিনুদের বাসায় আসমাকে দেখে কামরান সাহেব অবাক হয়ে গেলেন। একি আসমা তুমিও এখানে?
" জ্বী সাহেব বলে সালাম দিল আসমা।"
ওদের সাথে কথাবার্তা বলে বাসায় এসে দেখে তিতির এর মধ্য একা হাতে সব রেডী করে ফেলছে। তিতির ভালো করেই জানতো কামরান সাহেবকে নিয়ম মেনেই খেতে হয়। কিন্তু এটা তিতিরের সংসার তাই সে ইচ্ছেমত সব করতে পারে।
বাবা, আপনি এখানে বসেন বলে তিতির কামরান সাহেবকে চিয়ার সরিয়ে বসতে দিলেন। কামরান সাহেব খুব খুশি। এত খাবার সে অনেকদিন ধরে খায়নি। সব সময় নিয়মের মধ্য তাকে খেতে হয়।
তিতির, বাবার তো এত রীচ খাবার খাওয়া চলবেনা। খামোকা এত আইটেম করলে।
মাহাদের এমন কথা শুনে কামরান সাহেব মুখ পাংশু করে চুপচাপ রইল। কোথায় আজ একটু ভালোমন্দ খাবার খাবে সেখানেও এসে ছেলের শাসন।
বাবা, ওনার কথা বাদ দেনতো! মাঝে মাঝে নিয়ম ভাঙ্গার মজাই আলাদা, আমি খাওয়ায় দিই আপনাকে বলে তিতির প্লেটটা নিয়ে ভাত মাখিয়ে কামরানের মুখে তুলে দিল।
মাহাদের বাবা খাচ্ছে আর মাহাদ বসে বসে দেখছে। এমন দৃশ্য যদি ওর মা আর দাদী দেখত তাহলে নির্ঘাত সুইসাইড করতো না হয় বাবাকে ঘাড় ধরে বাসা হতে বের করে দিত।
সবাই মিলে খাবার শেষ করে একটু রেষ্ট করেই মাহাদ ওর বাবাকে নিয়ে চলে গেলেন। কামরান সাহেব চলে যাওয়ার আগে তিতিরের হাতে একটা বক্স দিয়ে গেলেন।
♦♦♦♦
সন্ধ্যার কিছু সময় আগে মাহাদ আবার বাসায় আসলো। এসেই গোসল করতে ওয়াসরুমে ঢুকল। তিতির বিছানায় বসে উপহারের বক্সটি নাড়াচাড়া করছে। মাহাদ বের হয়ে আসতেই তিতির ওকে কাছে ডাকল।
মাহাদ কাছে এসে বসতেই তিতির বক্সটি এগিয়ে দিয়ে বলল," এটা একটু খুলবেন?"
" কে দিয়েছে এটা?"
" যাওয়ার সময় বাবা দিয়ে গেছে।"
মাহাদ বেড থেকে উঠে বলল," তোমার শশুড় তোমায় জিনিসটা দিয়েছে। আমাকে কেন খুলতে বলছো! নিজেই খুলে দেখো।"
তিতির চুপ করে খুলতে লাগলো। পুরো প্যাকেট গিফট পেপারে মোড়ানো ছিল। পুরো প্যাকেট খুলেই দেখল, খুব সুন্দর দুটি স্বর্নের বালা। বালার উপর ডায়মন্ড পাথরের কাজ করা। রুমের লাইটের আলোয় ডায়মন্ডের চিকচিক আলোগুলো উপচে পড়ছে। এমন সুন্দর বালা জোড়া তিতির কখনো দেখেনি।
মাহাদ দেখেন, বাবা কি দিয়েছে?
মাহাদ বালার উপর চোখ বুলিয়ে বলল, " বাবার চয়েসই এমন। যেখানে হাত দিবেন সেটাই বেষ্ট হবে। তিতির আমাদের বাসায় যেদিন যাবা সেদিন এটা পড়ো। আজ তোমাকে নিয়ে অন্য জায়গায় যাবো। নামায পড়েই রেডী হও।
তিতির বালাগুলো আলমারিতে তুলে রেখে মাহাদের সাথে সালাত আদায় করল। তারপর রেডী হয়ে বাসা হতে বের হল। মাহাদ শুধু আসমাকে আজ হিনুদের বাসায় থাকতে বলল।
তিতির আর গোলাব আগেই গাড়ীতে বসে আছে। একটু পড়েই মাহাদ চলে আসলো। তারপর গাড়ী স্টার্ট দিল।
আধা ঘন্টার মধ্য একটা জুয়েলারির সপে গেল। মাহাদ তিতিরের হাত ধরে সপে ঢুকল। সাথে সাথে গোলাবও চলল।
" দাদা, কিছু সিম্পল বালা দেখান তো? সবসময় পড়ে থাকার জন্য।"
তিতিরের সামনে প্রায় ডরজেন খানেক বিভিন্ন জিজাইনের বালা। মাহাদ একটা একটা করে বালা তিতিরের হাতে পড়িয়ে দিয়ে দেখছে কোনটাতে ভালো দেখাচ্ছে। শেষে একজোড়া বালা পছন্দ করে সেটা পাকিং করতে বললো। মাহাদ আরো একটা চেইন চুজ করে সেটাও প্যাক করতে বলল। তারপর সপিং মল থেকে বের হতেই তিতির বলল," আমার একটা ইচ্ছা পুরুন করবেন?"
" তিতির কখনো কিছু চায়নি মাহাদের কাছ থেকে। এই প্রথম মাহাদের কাছ থেকে কিছু চাইলো।"
" হুম বলো।"
" আমার একটা নোজ পেইন চাই। যেটা আপনার নামে পড়বো।"
" আমার নামে ব্যাথা পাইতে খুব শখ!"
" হুম... প্রচুর শখ।"
মাহাদ আর কোন কথা না বলে তিতিরকে পার্লারে নিয়ে গেল। ছেলেদের যেহেতু ভিতরে এ্যালাউ নেই তাই মাহাদ ওয়েটিং রুমে বসে রইল।
আর তিতির ভিতরে চলে গেল। ভিতরে এসে দেখল, আরও ৯টা মেয়ে নাক ফুটো করার জন্য ওয়েট করছে। তিতিরকেও সিরিয়ালে থাকতে হল। একটা মেয়েকে নাক ফুটো করতে ব্লার্ড বের হতে লাগল। মেয়েটা চিল্লাই সব শেষ করে দিল। যত শখ করে নাক ফুড়োতে এসেছিল সব সাহস যেন ঠুস করে পালিয়ে গেল। এর মধ্য নড়াচড়া করার জন্য আরো দু'জনের নাক দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। তিতির শেষ, ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো ব্লার্ড দেখে। তিতিরের এমন অবস্থা দেখে একটা মহিলা বলল," বাবা, তোমার সাথে কে এসেছেস?"
" তিতির কথা বলতে পারছেনা।"
" অন্য একটা মেয়ে এসে বলল," ম্যাম, মনে হয় ওনার হাসব্যান্ড এসেছে। আমি বাহির থেকে আসার সময় দেখেছি। আমি ওনাকে ডেকে আনছি।"
ছেলেদের এ্যালাউ না হওয়া সত্ত্বেও মাহাদকে ডেকে আনা হল। মাহাদ তিতিরের অবস্থা দেখে বলল," তোমার এসব করতে হবেনা। চল এখান থেকে।"
পার্লারের হেড ম্যাম এসে বলল, " সমস্যা কি?"
মাহাদকে দেখে অনেকটা চমকে গেল। স্যার আপনি? এই সামিরা স্যার কে বসতে দাও আর কফি দাও ওনাকে। ম্যাগাজিনে আপনার সম্পর্কে অনেক পড়েছি। স্যার, প্লিজ একটা সেলফি নেই?
না না ঠিক আছে, কফির দরকার নাই। আর স্যরি ম্যাম, আমাদের সেলফি তোলার অনুমতি নেই।
তার পর তিতিরকে উদ্দেশ্য করে বলল, " ওর দ্বারা এটা আর সম্ভব নয়। তিতির চল.......।"
এই সুযোগে একটা মেয়ে চট করে তিতিরের নাক ফুটো করে দিল। কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে মাহাদ টাকা পেমেন্ট করে এক মুহুত্ত্বও দেরি না তিতিরকে নিয়ে বের হয়ে এল। সব জায়গায় থাকা উচিত নয়।
গাড়ীতে উঠে মাহাদ তিতিরকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল," যেটা পারবেনা সেটা নিয়ে কেন জেদ করো?"
হঠাৎই মাহাদ লক্ষ্য করলো তিতিরের নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।
এই একদম চোখ বন্ধ করে চুপ করে থাকো। নড়বানা বলে টিসু বের করে খুব সাবধানে রক্ত মুছে দিল।
" মাহাদ, রক্ত বের হয়েছে!"
" কই না তো বলে তিতিরের মাথাটা মাহাদ ওর বুকের সাথে ধরে মাথায় কিস করে বলল," স্যরি, তোমার সাথে এমন রিয়াক্ট করা আমার ঠিক হয়নি।"
মাহাদ গাড়ী স্টার্ট! করল। তিতির মাহাদের বুকে নিঃশব্দে কেঁদেই চলছে। এতক্ষন ধরে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু মাহাদের ভালোবাসা পেয়ে তা চোখ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ঝড়েই পড়লো।
" মাহাদ, আপনার কিস তো আমার হিজাব পেয়েছে। আমিতো পেলাম না!"
মাহাদ ড্রাইভ করতে করতেই তিতিরকে আরো কাছে টেনে এনে কয়েকটা কিস করলো। তার বলল," যাই হয়ে যাকনা কেনো এভাবেই তোমাকে সারা জিবন আগলে রাখবো বুকের এই ছাউনি দিয়ে।"
তিতির দু'হাত দিয়ে মাহাদকে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরে চুপটি করে রইলো।
কিছুক্ষন পর একটা ১২ তলা এপার্টমেন্টের কাছে এসে গাড়ী থামল। মাহাদ গাড়ী থেকে নামল গোলাবকে নিয়ে। তিতির গাড়ী থেকে নেমে বলল," আমরা কোথায় যাচ্ছি মাহাদ।"
মাহাদ তিতিরকে নিয়ে লিফটে উঠেই বলল," আমরা নিধিদের বাসায় এসেছি তিতির।"
নিধির কথা শুনেই তিতির চুপ করে রইল। হসপিটালে নিসার বলা কথাগুলো তিতিরের বার বার মনে পড়তে লাগল। যেই কথাগুলো তিতির এখনো পর্যন্ত মাহাদকে বলেনি।
৭তলাতে এসে দরজার সামনে দাড়িয়ে মাহাদ বলল," তিতির, কারও যদি আমাদের নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের সবসময় উচিত তার সামনাসামনি দাড়ানো। আমাদের কোন ব্যবহারে তারা অসুন্তষ্ট।"
মাহাদ কলিংবেল চাপতেই কিছুক্ষন পর এসে ফুয়াদ দরজা খুলে দিয়েই মুচকি হাসি দিয়ে বলল," আরে তিতির তুমি? কি সৌভাগ্য আমাদের আজ তুমি নিজে এসেছ আমাদের বাসায়। এই নিসা দেখে যাও, আজ তিতির এসেছে আসাদের বাসায়।"
নিসা কিচেনে তখন পাকোড়া ভাজতেছিল। তিতিরের আসার কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় নিসা। নিসার এখন মন চাচ্ছে এই গরম উত্তপ্ত কড়াই ভর্তি তেল তিতিরের পুরো শরীরে ছুড়ে মারতে। তিতিরের যন্ত্রনা আর তার সুখ........