আমার একটাই যে তুই - পর্ব ০৩ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


গাড়ি চলছে দ্রুত গতিতে।গাড়ির খোলা জালানা দিয়ে প্রবশে করছে মৃদুল বাতাস।যার ফলে আমার খোলা চুল গুলো দোল খাচ্ছে বার বার। আমার পাশেই বসে ইউসুফ ভাই ড্রাইভ করছেন। যার গভীর দৃষ্টি আপাদত সুরু রাস্তার দিক।আর আমার পছন্দের মানুষটির সাথে আমি পাশে বসে! সবাই কিছু মিলিয়ে একটি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। 

আমাদের গাড়িতে ঠিক আমার পিছনের সিটে বসে আছে লিয়া আপু। যে এ-ই মুহুর্তে  মুখ চুপসে বসে। কারণ একটাই সে আমার সিটে ইউসুফ ভাইয়ার পাশাপাশি বসতে চেয়েছিলেন। তখনি ইউসুফ এক  ধমক দিয়ে পিছনে পাঠিয়ে আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন।তখন থেকেই তার মুড ওফ।

কিন্তু আমার মনে গভীর প্রশ্ন সাথে গভীর চিন্তা! আচ্ছা লিয়াপুকে কেন দিল না বসতে? সে কি কোনো বিষয়ের উপর রেগে তার উপর?নাকি অন্য কারণ? বিয়ের দিন থেকে দেখছি তিনি লিয়াকে এরিয়ে চলছেন? কিন্তু কেন? তিনি চাইলে তো তিথি, বুশরা, নুশরাকে তার পাশে বসাতে পারতেন! তাহলে আমি কেন? তাহলে কি সে আমায় পছন্দ করে?

গাড়িতে চলছে পিনপতন নিরবতা। বিরক্তি লাগছে খুব।তখনি তিথি বলে উঠে,,

--" ভাইয়া আমরা কি শোক পালন করতে যাচ্ছি? সবাই এতে চুপ কেন? অতন্ত্য গানটাতো ছাড়তেই পারো?"

তিথির কথার সাথে তাল দিয়ে বলল নুশরা,,

--" আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। আমার সাজের বারটা থেকে তেরোটা বেজে যাচ্ছে!"

নুশরার এমন কথা ফিক করে হেসে দিল সবাই। তখনি ইউসুফ ভাইয়া সামনের দিক দৃষ্টি রেখেই বললেন,,

--" এতে যে গান গান করিস তোরা মরলে কানে শিষা ভরবে আল্লাহ। তখন কি করবি?"

সাথে সাথে সবাই চুপ হয়ে গেল। সবাই মুখ গুমরে বসে। তখন আমার বলতে ইচ্ছে করলো,, 

--" তাই নাকি ইউসুফ ভাইয়া? তাহলে আপনার সাথে মেয়েরা যখন ঢলাঢলি করে তখন কি গুনাহ হয়ে না? সোওয়াব হয়ে নাকি? জানেন না? এটা যে ঘোর পাপ। মহাপাপ? "

কিন্তু মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারলাম না আমি। জানি বললেই আশি মনের বস্তার মতো ধমক দিবেন তিনি।

কিছু সময় পরে পৌঁছে গেলাম মিশুপির বাড়ি। বৌভাত উপলক্ষে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়িকে বউ-জামাইয়ের মতো।বাড়ির পাশটায় খোলা মেলা। নানান গাছগাছালীতে ভরা। পাশেই মস্ত বড়ো পাক্কা ঘাট ওয়ালা পুকুর। কি সুন্দর তাতে শাপলা ফুল ফুঁটেছে । সুযোগ পেলে ঘুরে আসবো সেখান থেকে।

ভিতরে যেতেই মিশুপিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু আমার। কষ্ট যে বহুত হচ্ছে একদিনেই বুঝে গেছি তাকে ছাড়া জীবন অনেক কষ্টের হবে আমার অভস্ত্য তাতে আমি।মিশুপিও কান্না করছে। আরও আমাকে থামাতে ট্রাই করছে।  কিন্তু ব্যর্থ সে। তখনি হুট করে এসে কোথা থেকে হাজির হলো ইউসুফ ভাই। আরও আমাকে ধমকে বলে উঠলো,,

--" ও-ই ছিচ্চকাদুনীদের মতো শুরু করে দিলি? তুই কাঁদা ছাড়া বুঝিস না কিছু বেদ্দপ।কান্না থামা! একদম চুপ!"

বরাবরের মতোই! তার ধমকে কান্না থেমে গেছে আমার এ-ই লোকটি এমন কেন? কেন এমন করেন আমার সাথে? খালি ধমকায়? হুহ্।তখনি মিশুপি বলল,,

--" ভাই এটা কি!  সবাই সময় ওরে এতো বক কেন? এটা মোটেও ঠিক না! একদম না। আরও বকবে না।  তাহলে তোমার সাথে কথা বন্ধ! "

তখনি রসিকতার সাথে বললে ইউসুফ ভাই,,

--" তাই না কিরে? ভাল হয়েছে বলিস না কথা। খরচ কমবে আমার!"

মিশুপি তখনি কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,,

--"ভাইয়া..!"

তখন ইউসুফ ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল,,

--" এ-ই তুই না কথা বলবি না আমার সাথে? তাহলে ডাকাচ্ছিস কেন? তুই দেখি দুই কথার মানুষরে!"

তখনি মিশুপি ভ্রূ কুঁচকে বলে,, 

--" দুই কথার মানুষ মানে?"

--" দুই কথার মানুষ মানে এখন একটা বলছে পর মুহুর্তে অন্য কথা বলছে। আমার তো আয়ানের জন্য্ কষ্ট হচ্ছেরে ও-ই সংসার কেম্নে করবে তোর সাথে?

বলতেই চটে গেল মিশুপি। সঙ্গে সঙ্গে দিল দৌড়ানী।ইউসুফ ভাইয়াও দৌড়। তার পিছনে মিশুপিও।তাদের ভাই বোনদের কান্ডে হেসে দিল উপস্থিত সবাই।আর আমি দেখে যাচ্ছি ইউসুফ ভাইয়াকে। যে এই মুহূর্ত দাঁত বের করে মন খোলা হাসি হাসচ্ছে। তার এই হাসির প্রেমে পরে যাচ্ছি আমি।তার হাসিটা মাতার করা সুরের মতো গুঞ্জন হচ্ছে! আচ্ছা তার হাসি দিয়ে কি গানের সুর বানানো যেত? বানালে হয়তো আমার মতো সকলেই সেই হাসির গানের সুরে পরে যেত!

অনুষ্ঠান প্রায় শেষ। বিকেল সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়টা যাকে বলে থাকি আমারা গোধূলি বেলা। দাড়িয়ে আছি সেই পাক্কা ঘাটের পুকুরে, যেখানে ফুটে আছে হাজারো শাপলা ফুল। দেখতেই ধরতে ইচ্ছে করছে ফুল গুলো। কি সুন্দর গোলাপি তার পাপড়ি। সাথে করে সবুজ আবরণ ঢাকা। মনে হচ্ছে সবুজ আবরণটা না থাকলে কি হতো? নিশ্চয় ফিকে লাগতো?এসব ভাবতে ভাবতে ঘাটের শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে।  সাথেই বাঁধা ডিঙ্গে নৌকা। তখনি মনের মাঝে আশা জাগ্রত হলো নৌকা চালিয়ে শাপলা ফুল গুলোর আশপাশটা ঘুরতে।যা ভািা তাই কাজ উঠে বসে পড়লাম নৌকায়। বিপত্তি ঘটলো তখন যখন মনে হলো আমিতো সাতারই জানি না। মুখ কালো করে বসে রইলাম নৌকার মাঝে। 

--" চালাতে পারিস? নাকি ঢং করতে উঠেছিস?"

যখন আমি আমার ভাবনান্তরে হারিয়ে তখনি উপর থেকে কথা গুলো বললেন তিনি। তার দিক তাকিয়ে মাথাটা আবার নিচু করো বসে রইল আমি।তখনি আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাঁজ করে বলে উঠলেন তিনি,,

--" কি হলো কথা বলছিস না কেন?"

আমি মাথা নাড়িয়ে মিন মিন করে বললাম,

--"জানি না"

তখনি ঘটলো একটি তাজ্জব ঘটনা। যা ছিল আমার ধারণার বাহিরে। ইউসুফ ভাইয়া হুট করে চরে বসলেন নৌকাতে। আর বৈঠা হাত চালাতে লাগলেন তিনি। তার এমন কাজের অবাক হয়ে গেলাম আমি। রীতিমত মুখ আমার হা হয়ে।তখনি বলল,,

--"হা করে আমায় না দেখে শাপলা দেখ। আর হে মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে! আর এমনিতেও দু চারটা মশা ঢুকলে ঢুকবে চট করে গিলে ফেলবি!"

তার কথায় বলি পেল বহুত লোকটা বড়ই বজ্জাত। তার দিক খেয়েল বাদ দিলাম আপাদত।ইঞ্জয় করতে লাগি শাপলা বিলাস। তখনি ইউসুফ ভাই জিগ্যেস করলেন,,

--"শাপলা কি তোর প্রিয় ফুল?"

আমি মিষ্টি হেসে বললাম,,

--"হে"

তখন তিনি চেয়েছিলেন আমার দিক পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে। তার সেই গভীর বিলাই চোখের চাহনিতে শীতল হয়ে গেল আমার দেহ! আচ্ছা সে এমন ভাবে তাকাচ্ছে কেন? তার এই চাহনিতে না আমার প্রাণ হারায়।

ইউসুফ ভাই আমাকে পুরো চারটা রাউন্ড ঘুড়ালেন।তার সাথে কাঁটানো মুহূর্ত গুলো যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। ঘাটে নৌকা ভিড়াইলেন তিনি আর নামতেই ধরিয়ে দিলেন এক গুচ্ছো শাপলা ফুল।আমি আবারও অবাকের শেষ চুড়ায়।তখন তিনি বলে উঠেন,,

--" তোর ভাল লাগে তাই তুলে নিলাম।"

বলে তিনি এগিয়ে যেতে লাগলেন। তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে আমি এখনো শক্ড। সাথে মনের মাঝে ভাল লাগার কিছু অনুভতি প্রজাপতির মতো ডানা মেলচ্ছে আর বলছে,,

--"হি লাইক'স ইউ কুহু! হি লাইক'স ইউ! নয়তো কি তোর জন্য পছন্দের ফুল তুলতো বল? নিশ্চয় তোর জন্য তার মনেও কিছু আচ্ছে!"

এসব ভাবতে ভাবতে শুনতে পেলাম লিয়ার কথা।সে ইউসুফ ভাইয়ার ডান হাত জড়িয়ে ধরে বলছে,,

--" আমিও চড়বো নৌকা। তুমি বৈঠা বায়বে।  আর আমি মুগ্ধ নয়নে তোমায় দেখবো কতটা রোমান্টিক তাই না চল, চল আরে বাবা চলো না..!

লিয়া নেকা ভাবে এবস বলতে লাগলো। ইউসুফ ভাইয়ার হাত ধরে টানতে লাগলো। তাদের এই কাহিনী দেখে জ্বলে যাচ্ছে আমার মন, প্রান।কষ্ট লাগচ্ছে খুব।কিন্তু কেন লাগচ্ছে? আমি ও কি ভালবাসি? পছন্দ তো ১০০ বার করি! বাট উনি কি শুধু আমার ভাললাগা,আমার আবেগ? নাকি সত্যি আমর ভালবাসা! ভালবাসায় নাকি মানুষের অন্তর পুরে,  আর এখন আমার পুরছে! তাহলে কি সত্যি!!!

--" হাত ছাড়ো!"

হঠাৎ বাজখাঁই ধমকে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলাম। সমানে তাকাতেই দেখি কাঁদ কাঁদ মুখে দাঁড়িয়ে লিয়া।রাঙ্গানিত চোখে তাকিয়ে তার দিক ইউসুফ! কি হলো ঠিক বুঝতে অক্ষম আমি! তখনি চেঁচিয়ে বলে উঠলো ইউসুফ ভাই,,

--"তোমার মন চাইলে তুমি চড় গিয়ে।  আমাকে টানবে না খবরদার।"

লিয়া কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল,,

--" কেন করছো ইউসুফ আমার সাথে এমন! তুমিতো এমন ছিলা না তাহলে? এখন আমার সাথে এমন করছো কেন? "

তখনি ইউসুফ লিয়ার দু বাহুতে হাত রেখে ঝাকিয় দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,

--" নেকা কান্না করবা না আমার সামনে খবরদার। জানো কেন করছি? হুম! বোঝোনা না ফিডার খাও তুমি! যত সব আজাইরা মানুষ।  আর আসবানা আমার সামনে! দেখলিই গা জ্বলে..!"

বলে ধপাধপ পায়ে চলে গেলেন তিনি। তখনি লিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমার দিক। তারপর চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেল সে।আমি সেখানে হামলার মতো এখনো দাঁড়িয়ে। কি হলো কিছুই মাথায় ঢুকলো না আমার? আচ্ছা তারা কি রিলেশনে আছে? কোনো কিছু নিয়ে কি ঝগড়া বেঁধে? যদি সত্যি এমন হয়? তাহলে কিছুক্ষণ আগের কাটানো সময়গুলো ইউসুফ ভাইয়ের সাথে সব কিছু মিথ্যে ছিল? সেকি লিয়াকে জেলাস ফিল করার জন্যে আমাকে নৌকা চড়ালো? এসব ভেবেই বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করতে লাগে আমার। সাথে যোগ হয় চোখের কোনে নোনা জল! সত্যি লাইফে সব কিছু নিয়ে বেশী স্বপ্ন দেখতে নেই! পরে তা যখন ভাঙ্গে তখন শব্দ হয় না ঠিকি!  ভিতরে ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে যায় সব!

—————

ইউসুফ ভাইয়াদের বিড়াট বাড়ি। এই বাড়ির নাম বৃষ্টি বিলাস। বৃষ্টি নাম ছিল নানুমার শাশুড়ির।  তিনি মারাত্মক ভাবে বৃষ্টি পছন্দ করতেন!রাত-বিরাতে যখনি ঝুম ঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়তো! তিনি সব কাজ ছেড়ে ছুড়ে নেমে পড়তেন বৃষ্টিতে ভিজতে। আর নানুমার শ্বশুর তিনি তার অর্ধাঙ্গিনীর এই ভয়ানক অভ্যাসে খুব ইঞ্জয় করতেন তিনি আর মুগ্ধ নয়নে দেখতেন তার কাক ভেজে রমণীকে।মাঝে নিজেও তার সাথে যোগ দিতেন।

তাদের মাঝে মহাব্বত ছিল অনেক। তখন তারা থাকতেন কিশোরগঞ্জ। ময়মনসিংহ এসে তারা এই বৃষ্টি বিলাস বিড়াট রকমের বাড়িটি তৈরি করেন। এই বাড়িটির একটি বিশেষত্ব হচ্ছে আর তা হচ্ছে তিনতলার বাড়িটির প্রকন্ঠ ছাঁদ।এই ছাঁদটি দিনে এক রকম রাতে আরেক রকম।

সবচেয়ে বেশি ছাদটি আকর্ষিত হয়,  বৃষ্টি, আর চন্দ্রিমা রাতে। আজ চন্দ্রিমা রাত। চারিদিক লাল-নীল আলো জ্বলে। ছাদের মাঝ বরাবর কার্পেট বিছানো।  কার্পেট এনেছিলে কাদের মামা হজ্জ্ব করতে গিয়ে। বড় বড় ফুল আঁকা কার্পেট। লাল-নীল আলোর জন্য মনে হচ্ছে তারা হাসচ্ছে।

 কার্পেটে, সাদা গদী বিছানো হয়েছে তার সাথে আছে ছোট ছোট বালিশ।আজ সারারাত আড্ডা হবে।  সেই প্লানিংয়ে চলছে কাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে আছে মিশুপি আর আয়ান জিজু। ফেরা নায়রে এসেছেন তারা।মূলত তাদের জন্যই এই সব আয়োজন। সব কিছু সেট করে কাজের লোক গুলো চলে গেলেন। আমি আমের আচার খাচ্ছি আর তাদের কর্মকাণ্ড দেখচ্ছি।

তখনি সাউন্ড বক্স নিয়ে উপরে উঠলেন ইউসুফ ভাই।তাকে দেখচ্ছি আর মুখের মাঝে "চ" শব্দ করে চেটে পুটে খাচ্ছি আচার আর তার দিক তাকিয়ে আছি। আমার মুখের করা শব্দের জন্য হয়তো ভাইয়া এদিক সেদিক তাকালেন।আমি কিছুটা আন্ধকারে বসে তাই দেখতে পেলেন না। তা বুঝতে পেরে দৌড়ে চলে গেলাম চিলেকোঠার ঘরের পিছনের দিক। সাথে আরো জোরে শব্দ করতে লাগলাম। 

তিনি এদিক সেদিক খুঁজে দেখচ্ছেন। তা দেখে মুখ চেপে হাসচ্ছি আমি আর ঘরটির আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে তার কাজ দেচ্ছি।যখন লাষ্টবার উঁকি দিলাম "ও মা ইউসুফ ভাই নেই" কই গেল? এখানেই তো ছিল!

তখনি পিছন থেকে কেউ "ভাউ" বলতেই ভয়ে এক চিৎকার দেই। সাথে সাথে বুকে থুতু দিতে দিতে পিছনে তাকাতেই শক্ড আমি। সামনে ইউসুভ ভাই দাড়িয়ে। আমাকে ভয় পেতে দেখে হো হো করে হেসে দিলেন। যে আমার এতখন ভয়ে জান পাখি উড়ে যাচ্ছিল সব ভস্ম হয়ে গেল।আর আমি চেয়ে রইলাম মুগদ্ধ নয়নে তার হাসি মুখখানার দিক। হাসার  সাথে সাথে তার গালের টোল আর খাঁচ টা নাড়া-চাড়া করছে বার বার।তার মুখের এই হাসির জন্য হাজারবার ভয় পেতে রাজি আমি।১০০ বার রাজি। তার হাসি দেখে সাথে সাথে হেসে যাচ্ছি আমি।উনার কান্ড দেখে এখন মনে হচ্ছে তিনি এই মাত্র চার্লি চ্যাপলিনের কোনো পর্ব দেখছেন তাই হাসতে হাসতে লুটপুট খাচ্ছেন।তখন তিনি হাসতে হাসতেই বললেন,,

--" তোর কলিজা যে এত ছোট জানা ছিল না আমার।  তুই এত ভিতু!  ভিতুর রানী!বলে আবার হাসতে লাগলেন তিনি।

আমি তখন গাল ফুলিয়ে ভেংচি কেটে দিলাম। আর বললাম,,

--"কচু জানেন? যতসব হুহ!

 বলে চলে আসলাম সাথে সাথে সেখান থেকে। এখনো হেসেই যাচ্ছেন তিনি। এবার রাগ লাগচ্ছে। আরে বাবা হঠাৎ এমন করলে আমি কেন প্রধান মন্ত্রী ও ভয় পাবেন। আমিতো জনগন।

বাড়ির ছোট,বড় সবাই বসে কার্পেটের গদীতে।আয়ান জিজু আর মিশুপিকে ঘিরে বসে সবাই!তখন চলছিল ছোট খাট কথা। বড়রা কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন। আর আমি, তিথি, নুশরা, বুশরা, রাহুল ভাইয়া, ভাবী অার ইউসুফ ভাই আর পাশে লিয়া আপু।।গোল হয়ে বসে পড়লাম সবাই। আর শুরু হলো টোকাটুকি।মানে সব থেকে কমন বালিশ খেলা।বাড়ির কাজের মেয়ে বসে আছে সাউন্ড বক্সের সামনে। একটু পর পর গান বন্ধ করা তার দায়িত্ব।  এতে সে মহাখুশী। মনে হচ্ছে যে পৃথিবীর সব থেকে মজার কাজটা সে পেয়েছে।

শুরু হলো গান। "বড় লোকের বেটি"..

গানের তালে তালে চলছে বালিশ ছুড়াছুঁড়ি। রাহুল ভাইয়ার কাছে আসতেই গান ওফ হয়ে গেল। সাথে সাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম সবাই,,

--" ভাইয়া আপুকে প্রপোজ করতে হবে।  সেই প্রথম দিনের মতো! যেভাবে তাকে ভালবাসি বলেছিলে সেভাবে!"

সবাই তাই চাইলো।কিন্তু ভাইয়ার এক কথা,,

--" পাগল হয়েছিস তোরা? মাথা খারাপ তোদের আমার না! ছোটেদের সামনে এসব নাউজুবিল্লাহ! "

তার কথায় পাত্তা দিলো না।তখন ইউসুফ ভাইয়া বলল,,

--"ধেই ধেই করে প্রেম করতে পেরেছো।  এখন আমরা বলছি বলে ঢং করছো? তা হচ্ছে না। 

সবাই ঠেলে ঠুলে দাঁড় করিয়ে দিল।ভাবী লজ্জায় লাল-নীল। রাহুল ভাইয়া দৌড়ে তখন নিচে চলে গেলেন। তার কাজে সবাই স্তব্ধ চলে কেন গেছে?তিনি কি রাগ করেছেন? আমাদের সাথে আবাক ভাবীও।সবার এই অবাকতার মাঝে হাজির হলেন রাহুল ভাই। হাতে তার টকটকে লাল গোলাপ। তা দেখে চিৎকার করে হাত তালি দিতে লাগে সবাই।

রাহুল ভাইয়া নিচে বসে হাটু গেড়ে। ভাবী মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে দেখেই মনে হচ্ছে লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে। সুযোগ পেলেই ছুটে পালাবে।

রাহুল ভাইয়া লাল গোলাপটি এগিয়ে দিয়ে বলল,,

--" তুমি কি আমার বাচ্চার মা হবে?"

--"ভাবী মিষ্টি হাসলো!আর মাথা নাড়ালো।"

রাহুল ভাইয়ার এমন প্রপোজ করা দেখে বিষম খেলো সবাই। কিছুক্ষণ পর হো হো করে হেসে দিল সবাই। তখন ইউসুফ ভাই বলল,,

--" এটা তোর ধারাই সম্ভব।বাহ্ কি প্রপোজ।"

তার কথা আবার হেসে দিল সবাই।রাহুল ভাই মুখ বাকিয়ে বলল,,

--"হে হে দেখ নিবো তুই কি করিস..!"

খেলা আবার স্টার্ট হলো। একে একে সবার পাল্লা এলো। লাষ্ট রইলাম আমি আর ইউসুফ ভাই।লিয়া আমাদের দেখে তেলে বেগুনে জ্বলছে।লাষ্ট পর্যন্ত সে চলেই গেল।। ইউসুফ ভাই মিটমিটিয়ে হাসচ্ছেন। তার হাসির কারণ কি? ধরতে পারলাম না আমি। আমি তার দিক তাকিয়েই। তখনি হুট করে চোখ মেরে দিলেন তিনি। আর আমার সব কিছু আউলা ঝাউলা হয়ে গেল। হাত থেমে গেল সাথে সাথে। তখনি বেদ্দপ কাজের মেয়ে রূপালী দিল গান বন্ধ করে। আর উইন হয়ে গেল ইউসুফ ভাই। আর আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,,

--" চিটিং করেছেন আপনি! চিটার ১ নাম্বার!"

তখনি দাঁত কেলিয়ে বললেন তিনি,,

--" হারলে সবাই তাই বলে বেবী"

তার কথায় রাগ উঠে গেল আমার।তখনি আবার বললেন তিনি,

--" এবার আমার কথা শুন্তে হবে তোর! আমি চাই তুই  সেই বাগানে যাবি! আর একটি জিনিয়া ফুল তুলে নিয়ে আসবি!"

--" এটা তো খুব সোজা।  এই যাবো আর নিয়ে চলে আসবো।  হুহ!"

--" হে,  হে জলদি যা"

আমি নাচতে নাচতে চলে আসলাম নিচে বাগানে।জিনিয়া গাছে থেকে ফুল ছিড়তেই হুট করে কিছু একটা পড়লো শরীরে আমার। সাথে সাথে হাত দিয়ে দেখি " ওরে বাবা গো এতো সাপ" দিলাম এক চিৎকার আর উল্টা পাল্টা দৌড়। তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম তাকিয়ে দেখি ইউসুফ ভাই আর তিনি হাসচ্ছেন।  তার হাসির কারন বুঝতে পেরে তার বুকে কিল, গুতার বর্ষণ করে বসলাম।তখনি তিনি আমার হাত জোড়া শক্ত করে ধরে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,,

--"তুই আসলেই ভিতু রানী। "

ফিসফিসানিতে তার শ্বাস শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে আমার কানে ঘারে।আর শরীরে বয়ে যাচ্ছে হীম শীতল বাতাস।মনে হচ্ছে আমি চলে যাচ্ছি এক অন্য জগতে।যেখানে কেউ নেই। আমি আর উনি ছাড়া। 

বোরিং লাগতে লাগলো সবার।  নতুন কি গেইম খেলা যায়? তাই ভাবচ্ছে বসে সবাই! তখনি চট করে মনে পড়লো ধাঁধাঁ ধরার কথা। চট করে মনে আসতেই বলেও দিলাম চট করে তাদের!সব ধাঁধাঁ ধরা হবে ছেলে দের বুদ্ধি পরীক্ষা নিবো আমরা! তারাও রাজি! তখনি বললাম প্রথম ধাঁধা,,

--" আচ্ছা বলুন তো, একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু চলছে না কেন? তেল আছে ফুল, যান্ত্রিক ত্রুটিও নেই! তাহলে কেন?"

সাথে সাথে আয়ান জিজু নড়েচড়ে বসে বলল,,

--" ড্রাইভার নেই! "

সাথে হাত তালি দিয়ে উঠলেন সবাই। তখন ধাঁধাঁ ছুড়লো ইউসুফ ভাই,,

--"আচ্ছা এবার তোরা বল। তিন আক্ষরে নাম যার আকাশেতে উড়ে!  প্রথম অক্ষর ছেড়ে দিলে মেয়েদের মাথায় বাস করে!তখনি সাথে সাথে তিথি বলল,,

--"ভাই এত সহজ ধাঁধাঁ। এটা শালিক। প্রথম অক্ষর মানে 'শা' ছেড়ে দিলে লিক! সিম্পল।

সাথে আমাদের দলের জয়ের কলরব পড়ে গেল। আর সবাই মনোযোগী হতে লাগলো ধাঁধাঁ খেলার দিক।খেলা এখন লাষ্টের দিক। প্রশ্ন করবো আমরা। টান টান সময় চলছে। ছেলেদের কঁপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।তখনি প্রশ্ন করলা আমি! 

--" আপনারা তো জানেন মাকড়শা জাল বানায়! কি বানায় তো!"

--"হে বানায়! তো?"

--সেই জালে অন্য হাজার পোকা আটকায়। সেগুলো মাকড়শা খায় তা জানেন?

--"জানি"

--"মাকড়শা কেন আটকায় না? সেও তো একটা পোকা। সে কেন তার জালে আটকায় না?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন