অস্পষ্ট প্রেমাবেগ - পর্ব ০২ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৩!! 

তামান্না এক ছুটে এসে রুমে ঢুকতেই দীপ্তি ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মেয়েটা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

-আসলে ম্যাডাম? আমি এসে দেখলাম আপনি রুমে নেই দেখে দীপ্তি ম্যাডাম হাইপার হয়ে গেছে। তাই উনাকে জোর করে বসাতে গেছি বলে উনি আরো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন----।

-আচ্ছা নয়না। বুঝতে পেরেছি। তুমি এখন যাও---।

-ম্যাডাম? দীপ্তির জন্য স্যুপ এনেছিলাম------।

-ইয়াক!! আমি এই স্যুপ খাবো না মিস। বাজে স্মেল----।

-ওকে বাবা! খেও না। নয়না তুমি স্যুপটা নিয়ে যাও।

-কিন্তু ম্যাডাম??

-ওর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারগুলো আমাকে দেখতে দাও---। যাও এখন।

-ওকে ম্যাম---।

নয়না রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই তামান্না দীপ্তির মুখটা তুলে ধরে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে খাটে এনে বসিয়ে দিলো। গায়ে, কপালে হাত দিয়ে দেখলো দীপ্তির জ্বর প্রায় সেরেই গেছে।

-মিস? তুমি আমাকে ফেলে কোথায় চলে গেছিলে? আমি কত ভয় পেয়ে গেছি জানো?

-দীপু? মিস তো তোমার বাবাইরের সাথে নিচে একটু কথা বলছিলো। আমি তো তোমাকে ফেলে কোথাও যাব না মা। বলেছি না মিস এ কথা? 

-হুম---।

-তাহলে?

-আব্বু তোমাকে অনেক বকা দিয়েছে না মিস? তুমি প্লিজ-----।

-দীপু? উনি আমাকে কিছু বলে নি। তুমি বাবার সাথে দেখা করবে না?

-না না না---।

-কেন??

-আমার ভয় করে---। আব্বু যদি আমাকে মারে----।

-না রে বাবা! মারবে কেন?

-না না।। আমার ভয় করে---। আব্বু বাসায় থাকলেই সবসময় কেমন যেন হয়ে থাকে। আমার অনেক ভয় লাগে---।

-আচ্ছা বাবা! কাঁদে না। এখন কি খাবে বলো? 

-না মিস। কিছু খাবো না। 

-সেটা তো হবে না। তোমার না জ্বর। সময় মতো খেতে হবে তো? বলো কি খাবে?

-মিস??

-মিস কিন্তু রাগ করব না খেলে---।

-উমমমম। মিস--। তাহলে আমাকে একটু আইসক্রিম এনে দিবে??

-মাইর চিনো?

-হি হি। তাহলে চিপস?

-নো ওয়ে--।

-তাহলে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই??

-এখন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হবে না।

-তাহলে নুডুলস?

-আচ্ছা। ঠিক আছে---। তুমি লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে থাকো। আমি নুডুলস করে আনছি---।

-মিস?? 

-তাড়াতাড়ি চলে আসবো তো বাবা!

-আচ্ছা। তুমি আসতে আসতে আমি কার্টুন দেখি? 

-আচ্ছা। দেখো---।। আমি আসলেই কিন্তু আর দেখা যাবে না। ওকে?

-ওক্কে মিস--। 

দীপ্তি তামান্নার গলা জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমো খেল। তামান্নাও হেসে দীপ্তিকে খাটে শুইয়ে দিয়ে টিভি অন করে কার্টুন চ্যানেল দিয়ে দীপ্তিকে ছোট্ট করে একটা আদর করে বাইরে বেরিয়ে এলো। রান্নাঘরে গিয়ে কাজের লোকদেরকে বলতেই ওরা জিনিসপত্র, তেল মসলা সব দেখিয়ে দিলে তামান্না নিজেই দীপ্তির জন্য নুডুলস রান্না কর নিলো। তারপর একটু ঠান্ডা করে একটা বাটিতে সার্ভ করে কাঁটা চামচ দিয়ে ট্রেতে নিয়ে দীপ্তির রুমে গেল। তামান্না রুমে এসে টিভি অফ করে দীপ্তিকে উঠে বসিয়ে দিয়ে একটু একটু করে সবটুকু নুডুলস খাইয়ে দিলো। খাওয়া হলে মুখটা মুছিয়ে দিয়ে আবার দীপ্তিকে শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিলো।

-দীপু? মিস বাটি রেখে আসছি। তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো কেমন?

-মিস? যেও না। আমার একা ভয় করে---।

-এই জাস্ট ২ মিনিট বাবু--। তুমি ১০০ পর্যন্ত শিপ কাউন্ট করো। মিস এর মধ্যেই চলে আসবে--। ওকে?

-ওকে মিস---।

তামান্না রান্নাঘরে গিয়ে বাটিটা ধুয়ে বের হবে এমন সময়ই কেউ ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। তামান্না রেগে গিয়ে তাকাতেই কিশোরকে দেখে চমকে গিয়ে চুপ করে গেল। লোকটাকে এখন অনেকটাই ফ্রেশ দেখাচ্ছে। রাতের সেই মাতলামির ছিটেফোঁটাও চেহারায় নেই। চোখ জোড়ায় রাগ ভর করেছে শুধু। লোকটার রাগের কারণ তামান্নার মাথায় ঢুকছে না। কিন্তু আপাতত সেটাও ভাবছে না তামান্না। মানুষটা এতোটা কাছে আসায় তামান্নার বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ শব্দগুলো প্রচন্ডভাবে বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে লোকটাও শুনতে পাচ্ছে শব্দগুলো। তামান্নার থতমত খাওয়া মুখ দেখে কিশোর আরেকটু রেগে গিয়ে হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলো। এতোক্ষণে ব্যথা পেয়ে তামান্নার হুঁশ হলো। তাই ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো।

-কি করছেন কি? ছাড়ুন।

-তোমাকে কে পাঠিয়েছে এখানে! 

-কে পাঠিয়েছে মানে! আমি নিউজপেপারে বিজ্ঞাপন দেখে---।

-জাস্ট টেল মি দা ট্রুথ---। সুপ্তি পাঠিয়েছে না তোমাকে? আমার কাছ থেকে আমার মেয়েটাকে দূর করানোর জন্য---।। শোনো মিস গর্ভনেস---। সেরকম কিছু হলে তোমাকে খুন করে ফেলতেও হাত কাঁপবে না আমার বলে দিলাম---।

কিশোর কথাগুলো বলতে বলতেই তামান্নার গলা চেপে ধরেছিল। তামান্না সমস্ত শক্তি দিয়ে কিশোরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। কিশোর টাল সামলাতে না পেরে একটু দূরে ছিটকে সরে এলো।

-শুনুন মিস্টার কিশোর--। আপনি কার কথা বলছেন আমি জানি না। আর আমাকেও কেউ পাঠায় নি। ম্যাডামকে আমার অনাথআশ্রমের সব কাগজপত্রই জমা দিয়েছি-। সেখানে গিয়ে যে কারো কাছে জিজ্ঞেস করবেন তামান্না কে ছিল। তারাই আপনাকে বলে দিবে---। আর আপনার মেয়ের কাছ থেকে আপনাকে দূরে করার কথা বললেন না? আপনি একটা কথা বলুন তো? আপনি আপনার মেয়ের কাছেই ছিলেন কবে?

-ইউ-----??

-এই বয়সের বাচ্চা একটা মেয়ের তার বাবার চোখের মণি হয়ে থাকার কথা ছিল। আর দীপ্তি? সে আপনার সামনে পর্যন্ত এসে দাঁড়াতে ভয় পায়! আপনার উপস্থিতি, আপনার আচরণে ভয় পায় মেয়েটা-। আজ নাহয় বললেন আমি আপনার মেয়ের সাথে আপনার দূরত্ব তৈরি করছি--। কিন্তু ভয়টা? সেটাও কি ওর মনে আমার কারণেই তৈরি হয়েছে? ভেবে দেখবেন কথাগুলো একবার--। আর হ্যাঁ? কাউকে দোষারোপ করার আগে আঙুলটা নিজের দিকেও একবার তুলতে ভুলবেন না---।।

কিশোর চুপ করে আছে দেখে তামান্না সিঁড়ি বেয়ে দীপ্তির রুমে চলে এলো। এসে দেখলো দীপ্তি শুয়ে শুয়ে ফালেহা চৌধুরীর সাথে কথা বলছে। 

-মিস? আমার কিন্তু কাউন্ট করা হয়ে গেছে হান্ড্রেড পর্যন্ত। তুমি লেইট করে ফেলেছো--। হি হি। 

-সরি ম্যাডাম---। ম্যাডাম আপনি? 

-তোমার সাথে তো জামা কাপড় কিছু দেখলাম না। তাই কয়েকটা শাড়ি তোমাকে দিতে এলাম----।

-এগুলো কার ম্যাডাম??

-দীপ্তির মায়ের----। আশা করি তোমার ফিট হবে--। তবু না হলে কিশোরকে বলবো তোমাকে নিয়ে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করে দিতে--।

-না না ম্যাডাম--। ঠিক আছে---।

-আমি এখন আসছি---। দীপু? কিছুক্ষণ ঘুমাও--। মিস শাওয়ার নিক। তারপর তোমাকে ডাকবে খাওয়ার জন্য--। কেমন?

-জি দিম্মা---।

ফালেহা চৌধুরী চলে গেলে দীপ্তি আড়মোড়া দিয়ে চোখ বুজলো। তামান্না হেসে দীপ্তির চুলে কিছুক্ষণ বিলি কেটে দিয়ে দেখলো মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। তামান্না দীপ্তির গায়ে ভালো করে চাদর জড়িয়ে দিয়ে শাওয়ার নিতে ঢুকলো। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বুজতেই একটা মুখ ভেসে উঠলো। তামান্না চমকে উঠে চোখ খুলতেই নাকে মুখে পানি ঢুকে কাশি উঠে গেল বেচারির। আবার চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই রাগী মুখটা ভেসে উঠছে। আবার চমকে শাওয়ার থেকে সরে এসে দেয়ালে হেলান দিলো তামান্না। এসব কি হচ্ছে ওর সাথে? কিছুই বুঝতে পারছে না বেচারি।

০৪!! 

তামান্না শাওয়ার সেরে শাড়িটা কোনমতে পেঁচিয়ে রুমে এলো। আগে কয়েকবার অনাথ আশ্রমের আপাদেরকে শাড়ি পড়তে দেখেছে তামান্না। কিন্তু নিজের কোন শাড়ি ছিল না বলে পড়াও হয়নি। আজ এই কমলা রঙা তাতেঁর শাড়িটা কি করে পড়বে সেটা নিয়েই চিন্তায় আছে তামান্না। শাড়ির সব প্যাঁচঘোঁচই মাথার উপরে দিয়ে যাচ্ছে বেচারির। এতো বিরক্ত লাগছে যে ইচ্ছে করছে শাড়িটা কুচিকুচি করে ছিঁড়তে। অসহ্য! তামান্না এতো বিভোর হয়ে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছিল যে আশেপাশের কোন হুঁশই নেই। একটা খিলখিল হাসির শব্দে চমকে উঠে খাটের দিকে তাকালো তামান্না। দীপ্তি উঠে বসেছে বিছানায়। কিন্তু বেচারি ছোট্ট মেয়েটা তামান্না অবস্থা দেখে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা হয়েছে। তামান্নাও হেসে ফেললো দীপ্তির হাসি দেখে। 

-দীপু? হাসছো কেন এভাবে? ম্যাডাম শাড়ি পড়তে পারি না বলে মজা নিচ্ছ তুমি? এটা কিন্তু ঠিক না। 

-মিস শাড়ি পড়তে পারে না। হি হি। আমি তো পারি। কি মজা!

-তুমি শাড়ি পড়তে পারো? 

-হুম--। দিম্মা শাড়ি পড়ার সময় দেখে দেখে শিখে ফেলেছি--। হি হি--।

-ওরে দুষ্টুটা! দেখে শিখলেই কি শাড়ি পড়া যায়?

-যায় তো--। মিস আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিই?

-তুমি সত্যি পারবে?

-হুম। ৩ সত্যি--। পারবো তো মিস। 

-আচ্ছা------।

দীপ্তি তামান্নাকে শাড়ি পড়ায় হেল্প করতে লাগলো। ঠিক হেল্পও বলা যায় না। শাড়ি কোথায় গুঁজতে হবে, কোথায় পেঁচাতে হবে, কিভাবে কুঁচি করতে হবে সেসব হাত ঘুরিয়ে আর তামান্নার চারপাশে ঘুরে ঘুরে বলে দিচ্ছে দীপ্তি। তামান্না কুঁচিগুলো গুঁজে দিয়ে আঁচলটা ঠিক করে গায়ের উপরে টেনে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ ভালো করেই শাড়িটা পড়া হয়েছে। অন্তত দীপ্তির হেল্পের কারণে এবারের মতো শাড়ির ধাঁধায় উতরে গেছে বেচারি। তামান্না হেসে দীপ্তির দিকে তাকাতেই দীপ্তি এক ছুটে এসে তামান্নাকে জাপটে ধরলো। 

-মিস? তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।  একেবারে পরীর মতো--।

-পরীরা কি শাড়ি পড়ে দীপু?

-আমার তমা মিস পরীটা শাড়ি পড়ে--। হি হি। 

-থ্যাংকু বাবুই---।

-মিস? চলো না? নিচে যাই। দিম্মা বকবে আজকে তোমাকেও---।

-কেন?

-২ টার সময় খাবার খেতে হবে সবাইকে----। একসাথে বসে--।

-ইশ রে!! আমি তো ভুলেই গেছি--। চলো চলো??

-মিস??

-হুম??

-এখনও নয়না স্যুপ দিলে কিন্তু আমি খাবো না বলে দিলাম---। 

-আচ্ছা চলো। দেখি কি করা যায়। চলো চলো?

-হুম----।

তামান্না দীপ্তিকে হাত মুখ ধুইয়ে দিয়ে তারপর নিচে এলো। দুইটা বেজে গেছে। কিন্তু কেউ এখনো খেতে আসে নি। তাই তামান্না দীপ্তিকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। তামান্নাকে দেখে নয়না মেয়েটা একটু ইতস্তত করলো।

-ম্যাডাম? আপনি?

-দীপ্তির খাবার রেডি হয় নি?

-আসলে ম্যাডাম---। দীপ্তি ম্যামের জন্য স্যুপ-----।

-ও মিস!! আবার স্যুপ!! আমি এই পচা স্যুপটা খাবো না---। খাবো না খাবো না---।

-নয়না--। স্যুপ বানাতে হবে না--। তুমি যাও--।

-কিন্তু বড়ম্যাম তো রাগ করবে-?

-সেটা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ম্যাডামকে বলে দিব--। তুমি বাড়ির সবাইকে খাবার সার্ভ করো যাও---।

-----কিন্তু ম্যাম!!

তামান্না আর কথা না বাড়িয়ে দীপ্তির দিকে তাকালো।

-এখন স্যুপ খেতে হবে না। ওকে? আমি দেখছি কি আছে--।

-লাভ ইউ মিস---।

তামান্না ফ্রিজে ডিম আর কয়েক রকমের সবজি পেয়ে গেল। কিছু একটা চিন্তা করে হাত চালিয়ে কাজ করতে লাগলো। দীপ্তিও তামান্নার পিছে পিছে ঘুরে এটা ওটা নিয়ে টানাটানি করছে কাজ করবে বলে। তামান্না চোখ গরম করে তাকাতেই মিষ্টি করে হাসছে মেয়েটা। তাই তামান্নারও আর দীপ্তিকে বকা দিয়ে চুপ করে বসিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

-মিস? কি করছো?

-তোমার জন্য সবজি আর ভাত মিক্স করে খাবারের ব্যবস্থা করছি।

-মিস? এর চেয়ে বার্গার বা পিজ্জা অর্ডার করলে ভালো হতো না?

-জি না--।

-মজা না লাগলে কিন্তু আমি খাবো না। 

-আচ্ছা খেয়ে তারপর বলো--। এখন চুপ করে লক্ষী মেয়ের মতো ডাইনিং রুমে গিয়ে বসো---।

-না না না--। আমি তোমার সাথে কাজ করবো---।

-আচ্ছা বাবা! ঠিক আছে---।

তামান্না সবজি ভালো করে কুচো করে নিয়ে সেটাকে হালকা তেলে ভেজে নিলো সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত। তারপর একটু গোলমরিচ গুঁড়া আর লবণ দিয়ে দিল। তারপর রান্না করে রাখা ঝকঝকে কাপ খানেক ভাত দিয়ে উল্টে পাল্টে নিয়ে তাতে সয়াসস, টমেটো সস আর কেওড়া জল মিক্স করে নেড়ে চেড়ে মিক্স করে নামিয়ে নিলো। তারপর একটা ডিম পোঁচ করে নিয়ে দীপ্তির জন্য প্লেটে খাবার সার্ভ করে নিলো। দীপ্তিও লাফাতে লাফাতে গিয়ে তামান্নার সাথে ডাইনিং রুমে এসে চেয়ার টেনে বসলো। তামান্না এসে দেখলো ফালেহা চৌধুরী আর কিশোর ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।  তামান্নার দিকে তাকিয়েই কিশোরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। তবু কিছু বললো না। 

-মা? এবার খাওয়া শুরু করা যাক?

-হুম। মিস তামান্না তুমি নাকি নয়নাকে স্যুপ বানাতে নিষেধ করেছ? 

-জি ম্যাম। দীপ্তি স্যুপ খেতে চায় না। জোর করে খাওয়ানোর চেয়ে ও নিজের ইচ্ছেয় যা খায় তা খেলেই তো শরীরের জন্যও ভালো। তাই ম্যাডাম।

-ও। কিন্তু এই দুষ্টু বুড়িটা তো বার্গার  পিজ্জা স্যান্ডুইস এসব ছাড়া কিছু খেতেই চায় না----। আজকে কি খাবে??

-একটু সবজি ভাত দিয়ে ফ্রাইড রাইস করে দিয়েছি ম্যাডাম। দেখা যাক ম্যাডামের পছন্দ হয় কিনা--।

-দীপ্তি? খাওয়া শুরু করো দাদুভাই। 

দীপ্তি কিছু না বলে তামান্নার দিকে তাকালো। তামান্না দীপ্তির পাশে বসে ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে। দীপ্তি করুণ মুখ করে একবার প্লেটের দিকে আরেকবার তামান্নার দিকে তাকাতে লাগলো।

-একটু খেয়ে দেখো। ভালো না লাগলে খেতে হবে না বাবু--।

-মিস? খাইয়ে দাও না? আমি তো হাত দিয়ে খেতে পারি না---।

-ওহ আচ্ছা। হা করো তো দেখি??

তামান্না দীপ্তিকে খাইয়ে দিতে শুরু করলো। দীপ্তিও আস্তে আস্তে দুনিয়ার কথা বলতে বলতে খাচ্ছে। ফালেহা চৌধুরী তামান্না আর দীপ্তিকে দেখছেন আর একটু পর পর কিশোরের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। কিশোর গম্ভীর মুখে খাচ্ছে আর একটু পর পর তামান্নাকে খেয়াল করছে। কিশোর একমনে চিন্তা করার চেষ্টা করছে এই নতুন গর্ভনেসের সাথে দু দিনে দীপ্তির এতো ভালো সম্পর্কের কারণটা কি! কি জাদু করেছে মেয়েটা দীপ্তিকে! শুধু দীপ্তিকে না মাকেও। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো নিয়ম ভেঙে ফেলেছে মেয়েটা। তবুও ফালেহা চৌধুরী তামান্নাকে কিছুই বলছেন না। অথচ এর আগে অনেকেরই এই একই অভিযোগে চাকরি গেছে। এই মেয়ের সব দোষ মাফ করার কাহিনীটা কি!! তামান্নার মুখের মিষ্টি হাসির দিকে তাকিয়ে কিশোর চোয়াল শক্ত করলো। এই মেয়ের রহস্য যে করেই হোক বের করবেই কিশোর। সেটার জন্য যা কিছু করতে হোক করবে সে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন