৪১!!
আয়ানের কথাটা শুনে সায়না চমকে দরজার দিকে তাকিয়ে একটু ঘাবড়েই গেল। আয়ানকে এই মূহুর্তে রুমে একদমই আশা করে নি বেচারি। এবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে কয়েক মিনিটের জন্য ভয়ে চুপ করে রইলো। আয়ানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর পর্যন্ত সাহস হচ্ছে না ওর। সায়না খুব ভালো করেই জানে এবারে বেফাঁস কিছু বলে দেখলে মায়রার সামনেও চড় বসাতে একবার ভাববে না ছেলেটা। তাতে আয়ানের সম্মান না গেলেও সায়নার সম্মান যে ধূলোয় মিশে যাবে সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিটুকু অন্তত ওর আছে। মাথা নিচু করে থেকেই আয়ানের এক পা এক পা করে এগিয়ে আসা টের পেয়ে ঢোক গিললো সায়না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালানোর জন্য রাস্তা ভাবার চেষ্টা করলো সায়না।
-তা কি বলছিলি সায়না? আমি কি করেছি? আর মা তোর সাথে আমার বিয়ে দেয়ার জন্য কি করেছে? আবার বল তো?
-হা হা হা। আয়ান? আম--। আমি তো মায়রার সাথে আমম মমম-মশ- মশকরা করছিলাম। ও তো নতুন বউ। আমি ছাড়া এমন দুষ্টুমি কে করবে বল ওর সাথে? তাই- তাই আর কি---।
-ফার্স্ট অফ অল। তোকে কয়েক শ বার বলেছি। আমি তোর বয়সে বড়। সো নাম ধরে আমাকে ডাকবি না। আর এই যে মায়রা? ও সম্পর্কে তোর ভাবি হয়। ওকেও এরপর থেকে ভুলেও নাম ধরে ডাকার সাহস দেখাবি না। বোঝা গেল?
-হ্যাঁ? হ্যাঁ--। বুঝেছি। সরি ভাবি।
-আর সেকেন্ড পয়েন্ট হলো ও তোর বেয়াইন লাগে না যে ওর সাথে তোর মশকরা করতে হবে৷ নিজের জায়গাটা নিজে বজায় রাখতে শিখ।
-হ্যাঁ। হ্যাঁ। তাইতো---।
-এসব তো গেল আজকের কথা। তুই আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দে তো? তুই আমার রুমে কি করছিস? সরি সরি। তার আগে বল তুই এই বাড়িতে কি করছিস? তোকে এই বাড়ির ত্রি সীমানায় আসতে বারণ করেছিলাম না আমি?
-হি হি। আ-আস-আসলে--। তোর বিয়ে শুনে---। শুনে ভাবিকে দেখতে এলাম---।
-মায়রাকে দেখতে এসেছিস? নাকি ওর মনে আমার নামে বিষ ঢোকাতে এসেছিলি তুই?
-আরে না না। কি বলছিস? আমি তো সত্যি মজা করে বলেছি কথাটা। ভাবি সত্যি---। প্রমিস---।
-তোকে যেন মায়রার আশেপাশেও না দেখি আর--। আর এই ঘরে কি তোর? কি করছিলি তুই আমাদের রুমে?
-আসলে খালামনি বলেছে তোদের--।
-গেট আউট সায়না--। তুই এবাড়ির যেখানে ইচ্ছে গিয়ে মর। কিন্তু ভুলেও যেন তোকে আর আমি এই রুমের বা মায়রার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে না দেখি--।
-তুই আমাকে নতুন বউটার সামনে এভাবে অপমান করছিস আয়ান?
-আউট? যে যতটুকু সম্মানের যোগ্য তাকে ততটুকুই সম্মান দিতে হয়। নাউ গেট লস্ট।
-সরি----।
সায়না পড়িমড়ি করে ছুটে রুম থেকে পালালো। আয়ান বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগটা সামলানোর চেষ্টা করলো৷ মায়রার চুপ করে বিছানায় বসে থাকাটা আয়ানের রাগটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবু নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে ছেলেটা। আয়ান মায়রার দিকে পা বাড়াতেই দরজায় একটা শব্দ হলো খুট করে। আয়ান মায়রা দুজনেই সেদিকে ফিরতেই আরিশাকে দেখতে পেল। আরিশার হাতে মায়রার লাগেজটা দেখে আয়ান এগিয়ে এসে লাগেজটা নিয়ে রুমের ভিতরে রাখলো। আরিশা মুখ পান্ডুর করে আয়ানের দিকে তাকালো।
-সায়না এমন ছুটে পালালো কেন রে আয়ান? তুই কিছু বলেছিস ওকে?
-ওই মেয়ের সাহস হয় কি করে আমাদের রুমে ঢোকার?
-আমি মায়রাকে নিয়ে এসে দেখলাম ও বিছানা ফুল দিয়ে---।
-বাদ দে৷ এই মেয়ে যেন আর আমার সামনে না পড়ে আরু। প্লিজ।
-আবার কি করেছে?
-সবসময় যা করে আর কি। সে মায়রার কানে আমার নামে বিষ ঢালছিল। অসহ্য। বাদ দে।
-তুই যখন এসে গেছিস তাহলে তো আর কোন সমস্যাই নেই। তুই তোর বউকে আগলে রাখ। আজকের মতো আমার দায়িত্ব শেষ।
-জি ম্যাডাম। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এতো কিছু করে আমার বউটাকে আমার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। এখন নিজের বরকে সামলান। ওই মেয়ে আবার না আপনার বরের দিয়ে নজর দেয়---।
-ওহ! নো নো নো। আমার একটা মাত্র বর। আমি গেলাম। আর এই যে মায়রা? লাগেজ দিয়ে গেলাম। আর কিছু লাগলে আমাকে বলতে হবে না। নিজের বরকে বলো। আমি গেলাম। বায় বায়। অল দা বেস্ট আয়ু মায়ু। হি হি।
-আরিশা?
আরিশার ছুটে পালানো দেখে আয়ান মায়রা দুজনেই হেসে ফেললো। আয়ান দরজা বন্ধ করে এসে মায়রার সামনে এসে ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে বসে মায়রার গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে মুখটা তুলে ধরলো।
-আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি বউসোনা। উঁহু। এসব কিন্তু ঠিক না বুঝসো? একদমই ঠিক না।
-কেন? কি করেছি?
-জানো না কি করেছ?
-উঁহু---।
-ওই বদমাইশ মেয়েটা তোমার সামনে আমার নামে এতো পচা পচা কথা বলছিলো। আর তুমি চুপচাপ শুনছিলে। এটা কোন কথা? তোমার এই নিরবতা আমাকে কতো কষ্ট দিয়েছে তুমি জানো? তুমি একটা বারও প্রতিবাদ করলে না?
-প্রতিবাদ করবো কেন?
-কেন জানো না? আমি যে শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি, তোমাকেই চেয়েছি আজীবন। এটা বিশ্বাস করো না?
-জানি তো। কিন্তু ওকে কি সেটা বলা যেত? ও তো জানে না যার ধোঁকার কারণে তোমার মতো সবসময় হাসিখুশি একটা ছেলে ------।
-শশশ।৷ এসব বলবা না একদম। তুমি ধোঁকা দাও নি মায়রা। তুমি তোমার দায়িত্বটা পালন করেছিলে। দেরিতে হলেও সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু যাদের বোঝার দরকার ছিল তারা সেটা বুঝার চেষ্টাও করে নি। তবু তুমি আমার ভাগ্যে আছো বলে আজ এতো বাঁধা পেরিয়ে আমরা এক হতে পেরেছি। সেটাই বা কম কিসের বলো? কিন্তু বিশ্বাস করো মায়রা? ওই বেয়াদপ মেয়েটার কথায় রাগ করো না প্লিজ?
-তুমি পাগল? ওকে আমি চিনি পর্যন্ত না। আর তোমাকে? আমি নিজের চেয়েও বেশি জানি। তাহলে রাগ, অবিশ্বাস এসবের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে জনাব?
-লাভ ইউ মায়রা। লাভ ইউ সোওও মাচ।
মায়রা মুখ নামিয়ে হাসলো। আয়ান মায়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে একবার বিছানার দিকে তাকালো। আয়ানের চোখেমুখে ফুটে ওঠা বিরক্তিটা কিছুতেই মায়রার চোখ এড়ালো না। মায়রা কিছু বলার আগে আয়ান আলতো করে মায়রার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-মায়রা? ফ্রেশ হয়ে নাও বউটা৷ সেই দুপুর থেকে এই ভারি বেনারসিটা পড়ে আছো৷ কষ্ট হচ্ছে না পরীটার? চেইঞ্জ করে নাও যাও।
-হুম---। লাগেজ থেকে শাড়ি বের করতে হবে---।
-জি না ম্যাডাম। লাগেজ থেকে কিছু বের করতে হবে না এখন। আমি কাবার্ডে দেখুন।
-হুম---।
মায়রা ধীর পায়ে আয়ানের সামনে থেকে সরে এসে কাবার্ডটা খুলে রীতিমতো হা হয়ে গেল। কাবার্ডের একপাশে শাড়ি ছাড়া সব ধরনের পোশাকই চোখে পড়ছে মায়রার৷ আর অন্য পাশে আয়ানের শার্ট, টিশার্ট, পাঞ্জাবি এসব রাখা। মায়রা আয়ানের দিকে ঘুরে তাকানোর আগেই আয়ান মায়রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়রা একবার কেঁপে উঠে চোখ বুজে আয়ানের স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। আয়ান এবারে মায়রার ঘাড়ে মুখ গুঁজলো।
-কি পড়বো? শাড়ি তো নেই এখানে?
-সারাদিনই তো শাড়ি পড়লা। এখন হালকা কিছু পড়ো৷ থ্রিপিস জামা পড়ো, বা টপস স্কার্ট। চাইলেও আমার গুলোও পড়তে পারো। আমার কিন্তু কোন আপত্তি নেই।
-বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আয়ান?
-আরে বাবা! কিছু বেশি বেশি হচ্ছে না। যা আমার তাই তোমার।
মায়রা আলতো করে আয়ানের হাতে কিল বসালো।
-ছাড়ো? শাওয়ার নিবো। টাওয়াল তো বের করতে হবে লাগেজ থেকে?
-উঁহু। আমার টাওয়াল, ব্রাশ, পেস্ট সববববব কিছুর অধিকার তোমাকে দিয়ে দিয়েছি৷ নো মোর আলাদা আলাদা।
-ছি! কি বলো এসব? পাগল হয়ে গেছো?
-সে তো আমি আপনার প্রেমে বহুদিন আগেই পাগল হয়ে গেছি ম্যাডাম--। এখন ম্যাডাম যান তো। শাওয়ার নিন।
মায়রা একটা জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। গয়না, শাড়ি চেইঞ্জ করে মেকাপটা তুলে লম্বা একটা শাওয়ার নিতেই একদম ফ্রেশ আর হালকা লাগছে মায়রার৷ হালকা গোলাপি রঙা জামাটা পড়ে আর চুলে আয়ানের টাওয়াল পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মায়রার চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হলো। আয়ান একবার মুখ তুলে আবার নিচু হয়ে বিছানা থেকে ফুলগুলো ঝেড়ে ফেলছে। আর ফুলের শিকলগুলোও টেনে টেনে স্ট্যান্ড থেকে খুলে ফেলে দিচ্ছে। আয়ানের চোখেমুখে আবার আগের সেই বিরক্তিটা দেখতে পাচ্ছে মায়রা। কিন্তু মানুষটার এতো বিরক্ত হওয়ার কারণটা বোধগম্য হচ্ছে না মায়রার৷ জিজ্ঞেস করবে কি করবে না সেটাই ঠিক করতে না পেরে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মায়রা। আয়ানের এই রূপটায় মায়রা একদমই অভ্যস্থ নয়। তাই কি করবে না করবে কিছুই মাথায় আসছে না বেচারির।
৪২!!
মায়রা থতমত খেয়ে আয়ানের কাজ দেখছে আর ভাবছে। আয়ানকে এর আগে কখনো এতোটা বিরক্ত হতে দেখে নি মায়রা৷ মানুষটার এতো রাগ বা বিরক্তির কারণ ভাবতে ভাবতে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল মায়রা। হুঁশ হলো আয়ানের হুট করে এসে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ানোয়। মায়রা চমকে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে আয়ানের মুখের দিকে তাকালো। আয়ান যে মুখ থেকে বিরক্তির ছাপটা মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেটাও মায়রার চোখ এড়াতে পারছে না। আয়ান মায়রার দিকে একবার তাকিয়ে মায়রাকে নিয়েই বারান্দায় থাকা দোলনায় বসে পড়লো। মায়রার কোমড় জড়িয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে দোলনাটা একটু দোলাতেই মায়রা চোখ বুজে আয়ানের পাঞ্জাবিটা খামচে ধরলো ভয় পেয়ে। আয়ান মায়রাকে নিজের সাথে আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়ে দোলনাটা আবার দোলানোয় মন দিলো। বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর মায়রা মুখ তুলে আয়ানের দিকে তাকালো। লোকটা কোন দুনিয়ায় আছে কে জানে! কি এতো ভাবছে গভীর মনোযোগ দিয়ে?
-আয়ান?
-হুম? কি গো বউ সোনা?
-কি ভাবছো? আর এতো রাতে এভাবে আমাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে আছো কেন?
-আজকে আমরা বারান্দা বিলাস করবো তাই।
-হুম? কি?
-আজ আমি আকাশের চাঁদটাকে আমার চাঁদপরীটা দেখাবো। দেখবে আজকের পর এই চাঁদের বুড়ি আর রূপের অহংকার করবে না একদম। আমার চাঁদটাকে দেখেই লজ্জায় মেঘের আড়ালে লুকাবে এরপর থেকে।
-চাঁদপরীটা আবার কে?
-এই যে আমার কোলে বসে থাকা ছোট্ট দুষ্টু পরীটা। আচ্ছা বলো তো পরী? এতো লজ্জা পাও কোথায় তুমি? কথায় কথায় লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাও? হুম হুম?
-যাও! কিসব বলো?
-মায়রা? তোমাকে পেয়ে নিজেকে সত্যিই ভিষণ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না জানো? আমাদের বিয়ের পুরো ঘটনাটা আমার কাছে এখনও স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে।
-ছুঁয়ে দেখো? স্বপ্ন না বাস্তব?
-ছুঁয়ে? ওক্কে---। ছুঁয়েই দেখি তাহলে---।
-আরে? আয়ান?
মায়রাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না আয়ান। একহাতে মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে রেখে অন্য হাতটা মায়রার চুল থেকে টাওয়ালটা একটানে খুলে ফেলে ভিজে চুলের মধ্যে দিয়ে হাত ডুবিয়ে হালকা করে মায়রার মুখটা তুলে ধরে মায়রার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের বাঁধনে বেঁধে নিলো আয়ান। আচমকা আয়ানের এমন কাজে মায়রা চোখ বুজে নিয়ে আয়ানের স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। একটু পরে আয়ান মুখ তুলে মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। মেয়েটার লাজুক মুখে, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে চেহারা আরো বেশি আবেদনময়ী করে তুলেছে৷ আয়ান আলতো হাতে মায়রার মুখের উপরে এসে পড়া চুলগুলো আঙুল দিয়ে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিলো। গালে আয়ানের আঙুলের ছোঁয়া পেয়ে চোখ মেলে তাকালো মায়রা। আয়ানের চোখের ঘোর লাগা চাহনি দেখে লজ্জায় আবার লাল হয়ে গেল মেয়েটা।
-আ-আয়ান? কতক্ষণ এভাবে বারান্দায় বসে থাকবে আমাকে নিয়ে?
-আজীবন তোমাকে এমন করে কোলে নিয়ে বসে থাকতে পারি। আমার কোনো আপত্তি নেই ম্যাডাম।
-অনেক রাত হয়েছে তো?
-কিছু হবে না। আজ রাতটা এখানেই থাকবো। কোন কথা শুনছি না।
-কেন? রুমে কি হয়েছে?
-কি হবে? কিছুই হয়নি।
-তাহলে তুমি ওমন করলে কেন তখন? রুমটার কি করেছ জানো? কত সুন্দর করে আমাদের বাসর সাজানো হয়েছিল! আর তুমি কিনা সেটার চৌদ্দটা বাজিয়ে দিয়েছ?
-সরি পরী। আমি আরো সুন্দর করে সাজাবো আমাদের বাসর। যেদিন তুমি স্বেচ্ছায় আমার কাছে এসে ধরা দিবে--। যেদিন তোমার মনে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকবে না। যেদিন তুমি নিজে থেকে আমার বুকে থেকে আমার আদর পেতে চাইবে--। জোর করে তো বউ করে এনেছি। কিন্তু জোর করে অধিকার খাটাবো না।
-আমি কি বলেছি তুমি জোর করেছ?
-তুমি বলো নি। কিন্তু আমি জানি-। এই যে তোমাকে স্পর্শ করায় তুমি কেঁপে উঠেছ? এই ভয় পেয়ে কেঁপে না উঠে যেদিন নিজে থেকে এসে আমার হতে চাইবে? সেদিন হবে আমাদের বাসর। ততদিন নাহয় অপেক্ষা করবো আমি----।
-------------------------------
-জানি এখনো তুমি আমার স্পর্শেও ওই লোকটার ছোঁয়া ভেবে কেঁপে ওঠো। কিন্তু বিশ্বাস করো? শুধু তোমার এই লজ্জারাঙা মুখটা দেখে আর শক্ত করে তোমাকে বুকে আগলে রাখতে পারলে আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার জীবনের কাছে---।
-আয়ান? আসলে------।
-শশশশ। কিচ্ছু বলো না। তুমি আমার বুকে আছো সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
-রুমে চলো?
-উঁহু---।
-কেন? এভাবে দোলনায় আধশোয়া হয়ে বসে থাকলে কোমড়ে পিঠে ব্যথা হয়ে যাবে না? ওঠো?
-------------------------------
-বলো না কি হয়েছে? তখন এতো রেগে গিয়ে ফুলগুলো ছিঁড়ছিলে কেন? আর ওমন করছিলে কেন? বলো না?
-সব বলবো--। কিন্তু প্রমিস করো আমার উপরে রাগ করবা না তুমি?
-আচ্ছা করবো না। বলো?
-চলো রুমে যাই--। বেকায়দায় শুয়ে আসলেই ব্যথা পাওয়ায় সম্ভবনা আছে।
-হুম---?
মায়রাকে আবার তুলে নিয়ে রুমের দিকে এগোলো আয়ান। মায়রাকে ফ্লোরে নামিয়ে দিতেই মায়রা ফ্লোরে পড়ে থাকা ফুলগুলো একসাথে জড়ো করে প্লাস্টিকের ডাস্টবিনটায় ফেলতে লাগলো। আয়ানও বিছানাটা ঝেড়ে চাদরটা ঠিক করে বিছিয়ে মায়রাকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। মায়রা আয়ানের বুকের উপরে মাথা রেখে আয়ানের মুখের দিকে তাকালো। আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে মায়রার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-তোমার মনে আছে মায়রা? কথা ছিল আমাদের পছন্দের ফুলটা দিয়ে বাসর সাজানো হবে। বিছানা ভর্তি থাকবে ছোট্ট তারার মতো বকুল ফুলগুলো। সেই ফুলের ঘ্রাণ গায়ে জড়িয়ে তোমাকে ভালোবাসায় মাতাল করে তুলবো আমি। তোমার শরীরে শুধু আমার আর বকুল ফুলের নেশা জাগানো ঘ্রাণ থাকবে। তোমার এই নরম শরীরটার প্রত্যেক ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে শুধু আমার বিচরণ থাকবে----।
-ধ্যাত। থামো তো তুমি---।
-আমি যাওয়ার আগেই আরিশাকে বলে গিয়েছি--। আজ অনেক অনেক বকুল ফুল চাই আমার। অন্তত বিছানাটায় ভর্তি করে থাকবে সাদা ফুলগুলো। তুমি ঘরে ঢুকেই হা হয়ে যেতে এতো এতো বকুল দেখে। অথচ কি করলো মেয়েটা?
-আমমম। হয়তো---। হয়তো পায় নি। এতো বকুল একসাথে কি করে পাবে বলো? তাই বলে এভাবে রাগ করবে?
-পায় নি সেটা আমার সমস্যা না। আমার প্রশ্ন হলো ওই মেয়েটা আমার রুমে এসে কেন আমার বাসর সাজাবে? তাও আবার নিজের মতো করে? ওকে কি আমি বলেছি? ও কেন আসবে?
-আবার রাগ করছো কেন আয়ান? তোমার কাজিনই তো? আসতেই পারে।
-না আসবে না। ওই মেয়ে জীবনেও কখনো আমাদের রুমে আসবে না। কখনো না। ওকে আর কখনো রুমে দেখলে আমি কি করে বসবো জানি না---।
-আয়ান? কি করেছে? ছোট মানুষ। দুষ্টুমি করে হয়তো এমন করেছে। তুমি এভাবে রাগ করছ কেন?
-ছোট মানুষ না ঘোড়ার ডিম--। ওর চেয়ে---। উফফ।
-কি হয়েছে! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
-কিছু না। কাল তো বৌভাত। আরেকটা টায়ার্ড দিন কাটবে বউটার। এখন আমার বুকে চুপটি করে ঘুমাবে। এসো?
-আয়ান? তুমি কি জানো তুমি যে আমার কাছ থেকে কিছু লুকাতে পারো না? তাহলে কেন বৃথা চেষ্টা করছো? বলো না কি হয়েছে?
আয়ান কয়েক মিনিট চুপ করে মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আলতো করে মায়রার মাথাটা নিজের বুকের উপরে রেখে বুকে জড়িয়ে নিলো। আয়ান লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু সামলে নিলো।
-জানো? আরিশার পরে সায়নার সাথেই আমার খুব ভালো বন্ডিং ছিল আগে। ও প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো। আমিও যেতাম ওদের বাসায়। কয়েক বছর আগের একটা ঘটনায় ওর প্রতি রীতিমতো ঘৃণা জন্মে গেছে আমার। ওকে দেখলেই আমার ঘটনাটা মনে পড়ে---।
-কি? কি হয়েছিল!?
-ও সেদিনও আমাদের বাসায় এসেছিলো। আড্ডা দিতে দিতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। এতো ঘুম পেয়েছিল যে রুমে এসে কোনমতো বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয় চোখে। দরজাটা বন্ধ করবো সেই সময়টুকুও পাই নি। ঘুমের ঘোরেই কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পাচ্ছিলাম। আমি হকচকিয়ে চোখ মেলে দেখে ওই মেয়ে আমার পাশে, একদম মুখের উপরে ঝুঁকে চুমো খাচ্ছে আমাকে--। আর মোবাইলে সেটার পিক তুলে রাখছে---।
-হোয়াট?
-এখানেই শেষ না। আমার ঘুম ভাঙতেই রাগে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দিয়েছিলাম। এরপরে আমার সামনে আসার সাহস পেত না ঠিকই। কিন্তু কি করেছে জানো? আরিশাকে একদিন কয়েকটা ছবি দেখিয়ে কি বলেছে ভাবতেও পারবে না। বলেছে আমি নাকি---। আমি নাকি ওর সাথে রাত কাটিয়েছি। এখন আরিশার জন্য ওকে ইগনোর করছি। আরিশা যেন আমার লাইফ থেকে সরে যায়।
-হোয়াট! এই মেয়ে----?
-এবার বুঝতে পারছো কেন ওকে এতোটা ঘৃণা হয় আমার? ওকে আশেপাশে দেখলেই মনে হয় খুন করে ফেলি।
-শশশ। রিল্যাক্স--। ও না কখনো আমাদের মাঝে আসতে পারবে। আর না কখনো আমাদের রুমে--। সো চিল---। এখন ঘুমাও তো? কাল সারাটা রাত ঘুমাও নি---।
-হুম---। তুমিও ঘুমাও লক্ষীটা। কেমন?
-হুম---। গুড নাইট।
-গুড নাইট বউ। আই লাভ ইউ।
আয়ান হাত বাড়িয়ে বেড সাইড লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে মায়রাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো। মায়রাও আয়ানের বুকের ঢিপঢিপ শুনতে শুনতে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল। সম্ভবত আজকের আগে এতোটা শান্তির ঘুম কখনো হয়নি মায়রার। আর হয়তো এতোটা নিরাপদও মনে হয়নি নিজেকে অন্য কোথাও। সত্যিই হয়তো ভালোবাসার মানুষটার বুকের মতো শান্তি আর কোন জায়গাই নেই এই পৃথিবীতে।