আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আমার অন্তরালে তুমি - পর্ব ০৭ - সিজন ২ - ফারহানা ছবি - ধারাবাহিক গল্প


ছন্দের দম বন্ধ হয়ে আসছে ৷ চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে ৷ বর্নের হিংস্রতা বিন্দু মাত্র কমেনি ৷ হঠাৎ ছন্দের চোখ জোরা বন্ধ হয়ে আসতে বর্ন ছন্দের গলা ছেড়ে দিয়ে ছন্দ কে আকড়ে ধরলো ৷ বর্ণ দ্রুত ছন্দ কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পানি নিয়ে ছন্দের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করে৷ ছন্দের জ্ঞান ফিরতে কাশতে থাকে ৷ বর্ণ দ্রুত ছন্দ কে পানি খাইয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ পর ছন্দ একটু নরমাল হতে বর্ণের দিকে ঘৃনা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়৷ বর্ণ ছন্দের চোখে নিজের জন্য ঘৃনা দেখতে পেয়ে বুকে চিন চিন করে ব্যাথা অনুভব করছে৷ বর্ণ ছন্দের এক হাত শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো" আই এম স্যরি টিয়াপাখি ৷ আসলে রাহুলের নাম তোমার মুখে শুনে নিজের রাগ টা আর কন্ট্রোল করতে পারি নি তোমায় আঘাত করে ফেললাম ৷ আই এম রেইলি স্যরি ৷ দেখো আমি আর কখনো এমনটা করবো না ৷ "

ছন্দ বর্ণের কথার কোন জবাব দিলো না চোখ বন্ধ করে রইল৷ বর্ণ বুজতে পারছে ছন্দ এখন তার সাথে কথা বলতে চাইছে না ৷ বর্ণ  আর ছন্দ ঘাটালো না ৷ চুপ করে পাশে বসে রইল ৷ বর্ণ ছন্দের গলার দিকে নজর পরতে দেখে গলায় কাটসিটে দাগ পড়ে গেছে৷ বর্ণের এখন নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে ৷ যে মানুষ টা কে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে তাকে কি করে এতো কষ্ট দিচ্ছে৷ এদিকে বর্ণের মস্তিষ্ক বলছে এখানে ছন্দের ভুল সে কেন সব সত্যিটা তাকে বলছে না ৷ কেন এতো লুকোচুড়ি কিসের জন্য এটাই ভেবে পাচ্ছে না ৷ 

বর্ণ ছন্দের কপালে ঠোটের আলতো স্পর্শ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ওয়েন্টমেন্ট নিতে ৷ বর্ণ নিজের রুমে ওয়েন্টমেন্ট খুজতে লাগলো তখনি বর্ণের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে মুরাদ নাম টা ভেষে উঠছে ৷ বর্ণ কল রিসিব করে ৷ 

"" বর্ণ হয়ার আর ইউ,""

"" কেন! কি হয়েছে? "

" আমি খুব ভালো করে জানি SJ তোর কাছে আছে ৷ তুই ওকে কিডন্যাপ করেছিস৷ উপর মহল থেকে চাপ আসছে তোকে এরেস্ট করার জন্য সবার সন্ধেহ তুই ওকে কিডন্যাপ করেছিস""

"" সবার ধারনা ঠিক আমি আমার বউ কে কিডন্যাপ করেছি..""

বর্ণের মুখে বউ শব্দ টা শুনে মুরাদ একটু শব্দ করে হেসে ফেলে৷ 

"" হাসছিস কেন?"

"" স্যরি স্যরি আচ্ছা শোন ভাবি কে নিয়ে যতো তারাতারি সম্ভব ফিরে আয়৷""

"" সম্ভব নয় যতোক্ষন না টিয়াপাখি আমাকে সবটা বলছে ততোক্ষন আমি ফিরবো না ওকে নিয়ে৷""

"" বর্ণ দোস্ত তুই হয়তো ভাবির ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুই জানিস না৷ ভাবি চাইলে যেখানে আছে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷"" 

"" বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার বন্দি থেকে বেরিয়ে দেখাবে৷""

"" তাহলে তো হয়েই গেলো  তোকে আমাকে কিছু করতে হবে না ৷ ভাবি সবটা করবে দেখিস""

"" পারবে না কড়া সিকিউরিটির ব্যাবস্থা আছে৷""

"" আমি বলছি বর্ণ তুই ভাবি কে আটকে রাখতে পারবি না ৷ ভাবির ক্ষমতা শক্তি সম্পর্কে তোর কোন ধারনা নেই ""

"" তুই কি করে এতো কিছু জানলি যেগুলো আমি জানি না?""

বর্ণের কথায় হচকিয়ে  যায় মুরাদ৷ 

"" সাবধানে থাকিস বর্ণ রাখছি.."" 

মুরাদ বর্ণ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত কল ডিসকানেক্ট করে দেয়৷ এদিকে বর্ণ মুরাদের কথা গুলো ভাবতে থাকে ৷ 

____________________________________________

"" Md কুইন কে ট্রেস করতে পেরেছি ৷ আমাদের এখুনি বের হতে হবে ৷ আখি অনলাইনে টিকিট বুক করো হ্যারিয়াপ ..""

"" ওকে স্যার"" 

"" অনিল এখন সন্ধা ৭ টা বাজে তোমরা রাত আট টার ফ্লাইট ধরতে পারো ..."" 

"" Md , অনিল স্যার টিকিট বুক করা শেষ ৷ ফ্লাইট সারে আট টায় ৷"

"" গুড তাহলে সবাই রেডি হয়ে নেও আমরা এখুনি বের হবো৷"" 

"" অনিল স্যার বিডি তো সুইডেন সময় সীমা চার ঘন্টা এগিয়ে তার মানে এখানে দুপুর রাইট?""

"" একদম . "" 

"" ওকে আমরা রেডি হয়ে নিচ্ছি ৷ আর অনিল স্যার আমাদের কিছু লোক সুইডেনে আছে ৷ আমরা চাইলে ওদের হেল্প নিতে পারি৷""

"" গ্রেট তাহলে তাদের ফোন করে একজেক্ট লোকেশন টা কোথায় জানার চেষ্টা করো ৷ মে বি আয়ান স্যার কুইন কে কোন দ্বীপে নিয়ে গেছে ৷ আর যদি তাই হয় তাহলে ওদের হেল্প আমাদের প্রয়োজন হবে৷""

"" ওকে আমি ওদের সাথে কথা বলে নিচ্ছি..."" 

কিছুক্ষনের মধ্যে অনিল আখি Md কাব্য বেরিয়ে পড়ে এয়ারপোর্টের উদ্দ্যশ্যে ৷ এদিকে রুনা কায়রা সায়মা কে সামলাতে পারছে না আজ আবার সায়মা ছন্দের কাছে যাবে বলে ভাঙচুর শুরু করে দেয়৷ রুনা বাধ্য হয়ে সারবেন্ট কে দিয়ে সায়মাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়৷ তার কিছুক্ষন পরে সায়মা ঘুমিয়ে পরে ৷ এদিকে সায়মাকে ঘুমিয়ে পরতে দেখে  রুনা কায়রা দুজনে সস্থির শ্বাস ফেলে ৷ এখন শুধু তাদের ছন্দের ফিরে আসার অপেক্ষা ৷ 

"" খালামনি আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটা কোথায় কি রকম আছে আল্লাহ জানে ৷ ""

"" রুনা মা তোমার শরীল এমনিতে খারাপ করে আছো ছন্দের কথা ভেবে ভেবে এখন শান্ত হও কাব্য বাবা গিয়েছে তো  ইনশাআল্লাহ আমাদের মেয়েকে সাথে নিয়ে ফিরবে ৷ "" 

"" তাই যেন হয় খালামনি তাই যেন হয় ৷ ছন্দ কে কখনো আমি ননদ মনে করেনি সব সময় নিজের ছোট বোন ভেবেছি৷ আর আজ আমার কোন বিপদে আর আমি কি করে শান্ত থাকবো খালামনি তুমি বলো?"" 

"" বুঝিরে মা বুঝি তোর কষ্ট গুলো আমি বুঝি ৷ এখন আয় রাত হলো কিছু খেয়ে নিবি ৷ সারাদিন কিচ্ছুটি দাঁতে কাটো নি ৷ এখন খেতে হবে বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে...."" 

কায়রা জোর করে নিজের হাতে রুনাকে খাইয়ে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয় রেস্ট করার জন্য ৷ 

____________________________________________

'' ধ্যাত এই প্লান টাও মাঠে মারা গেল..": রেগে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বাড়ি মেরে বললো আয়মান৷ বিকেল থেকে ছন্দের লোকজনের উপর কড়া নজর রাখছিলো আয়মান আর মইনাল নিজে ৷ যখন ওরা সবাই গাড়ি নিয়ে বের হয় তখন আয়মান ওদের পিছু নেয় ৷ অর্ধেক পথ যেতে কাব্য ব্যাক মিররে আয়মানের গাড়ি দেখে খানিক টা ঘাবড়ে যায় ৷ অনিল কে জানাতে অনিল সতর্কতার সাথে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে অন্য রোড দিয়ে এগিয়ে যায় ৷ হঠাৎ স্পিড বাড়িয়ে চলে যেতে আয়মান অনেকটা পিছুনে পরে যায়৷ যখন সে তার গাড়ির স্পিড বাড়ি সামনে এগোয় তখন আর অনিলদের গাড়ি দেখতে পায় না ৷ রাস্তার সাইডে গাড়ি থামায় আয়মান৷ 

"" মাথা ঠান্ডা কর আয়মান প্লান আমাদের নষ্ট হয়নি বরং আমাদের কাজ টা এরা আরো এগিয়ে দিলো এটা কেন ভাবছিস না?"" 

"" মানে! ওরা কি করে আমাদের কাজটা এগিয়ে দিলো?"" 

"" আচ্ছা তাহলে শোন , আমরা ওদের পিছু নিয়ে কি SJ মানে তোর কথা অনুযায়ি ওই ছন্দ কে আমরা মারতে পারতাম?""

"" নাহ ! কারন ওদের লোক বেশি আর আমরা দুজন মাত্র"

"" তাহলে! বোকা ওরাই পারবে মেয়েটি আর তোর ছেলে কে খুজে বের করতে ৷ ওরা যখন ওদের পেয়ে নিয়ে আসবে তখন আমরা আমাদের লোক দিয়ে ওদের শেষ করে দিবো""

"" নাহ মইনাল লোক দিয়ে নয় আমি ওকে নিজের হাতে শেষ করবো ৷ আমার পথের কাটা শুধু মাত্র এই মেয়েটি ৷ এর জন্য আমার বাধ্য ছেলে আমার অবাধ্য হয়েছে ৷ বন্যা বর্নালি আমার থেকে দুরে কারন টা হলো এই মেয়ে ৷ ভুল করেছিলাম সে দিন ওর মা বাবার সাথে ওকেও পুড়িয়ে মারা উচিত ছিলো ৷ তখন ওকে শেষ করে দিলে আজ এমন পরিস্তিতিতে পড়তে হতো না আমায়...""

"" চিন্তা কেন করছিস আমি আছি তো ! আমি তোর অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ন করে দিবো...": 

"" এই না হলে আমার দোস্ত হা হা হা..."" 

মইনাল আয়নাফের মুখে হাসি দেখে রহস্যময় হাসি দিলো৷  

____________________________________________

কয়েক ঘন্টা ধরে ছন্দ চোখ বন্ধ করে আছে ৷ চোখ খুলছে না ৷ এই না যে সে ঘুমিয়ে আছে ৷ ছন্দ জেগে আছে কিন্তু চোখ খুলছে না কারন হলো বর্ণ ৷ বর্ণ কে এখন ছন্দের দু চোখে সহ্য হচ্ছে না ৷ ছন্দ চেয়েছিলো বর্ণ নিজের করে অন্য ভাবে শাস্তি দিতে ৷ কিন্তু যেখানে সে মানুষটাকে চোখে দেখতে চাইছে না সেখানে তার কাছে থেকে শাস্তি দেওয়ার থেকে নিজে শাস্তি পাওয়ার মতো৷ বর্ণ ছন্দের গলায় ওয়েন্টমেন্ট লাগানোর সময় ছন্দ রোবটের মতো স্থির ছিলো৷ এমন ভাবে ছিলো পুরো অনুভূতিহীন কোন বস্তু যার ভিতর কোন প্রান নেই ৷ 

বর্ণের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ছন্দের এমন চুপ করে থাকাটা ৷ বুকের ভিতর ভেঙেচুরে যাচ্ছে ৷ কিছুক্ষন পর বর্ণ জোর করে ছন্দ কে সুপ খাওয়াতে গেলে ছন্দ সব ফেলে দেয়৷ বর্ন রেগে গিয়ে ও নিজেকে শান্ত করে নেয়৷ এভাবে দুবার বর্ণ ছন্দের জন্য খাবার নিয়ে আসলে ছন্দ ফেলে দেয় ৷ বর্ণ এবার তার রাগ টা কন্ট্রোলে রাখতে পারে না ৷ ছন্দের ঠোট জোড়া দখল করে নেয়৷ ছন্দ বর্ণকে নিজের থেকে দুরে সরাতে চেয়েও পারে না বর্ণের পুরুষালি শক্তির জন্য ৷ বর্ণ ছন্দকে একান্ত নিজের করে নেয়৷ এতো টা যে কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না ৷ ছন্দ তার দূর্বল শরীল নিয়ে পেরে ওঠে না বর্নের সাথে তাই বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিতে হলো ৷ 

চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ ছন্দ চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলতে লাগলো"" আজ তুমি যেটা করলে মিস্টার চৌধুরী তার জন্য সারাজীবন তোমাকে পস্তাতে হবে ৷ "" 

বর্ণ ছন্দ কে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে ৷ ছন্দের কোমর একহাত দিয়ে জরিয়ে আছে বর্ণ ৷ ছন্দ বর্ণের হাত টা ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে নিজের পোশাক টা পড়ে নিয়ে বের হয় ৷ ছন্দ হাতের থাকা ব্রেজলেট টার দিকে তাকাতে দেখে দুটো ছোট  লাল বাতি জ্বলছে নিভছে ৷ ছন্দ খুব সাবধানে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখে মিহির পাশের একটা রুমে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলছে ৷ আর বাকি গার্ডরা ড্রিং করছে ৷ ছন্দ খুব সাবধানে রুমে এসে ফাস্টএইড বক্স খুজে তার ভিতর একপাতা ঘুমের টেবলেট খুজে পায়৷  ছন্দ ঔষধের পাতা নিয়ে কতো গুলো ঔষধ নিয়ে গার্ডদের খাবারে মিশিয়ে দেয়৷ 

গার্ডরা নিজেদের খাবার খেয়ে নিজেরা গল্প করতে থাকে ৷ ছন্দ চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়৷ 

____________________________________________

অনিল, Md, আখি ,কাব্য সুইডেনে পৌছে ৷ তারা হোটেলে রুম বুক করে ৷ ওখানে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে বের হবে তাদের কুইন করে উদ্ধার করতে ৷ 

অনিলে ট্যাবে কুইনের হাতের ব্রেজলেটের ভিতরে রাখা ছোট্ট চিপ টার সাহায্যে অনিল ছন্দের লোকেশন   পেয়ে যায় ৷ ওখানকার স্থানীয় একজন লোক কে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরে ৷ 

ভোরের নরম সিগ্ধ আলো পর্দা কোন ভেদ করে বর্ণের চোখে পড়তে বর্ণ কপাল কুচকে ডান  হাত দিয়ে পাশে ছন্দ কে খুজতে লাগলো ৷ ছন্দ কে পাশে না পেয়ে বর্ণ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ছন্দ বিছানায় কেন রুমের কোথাও নেই ৷ ছন্দ কে দেখতে না পেয়ে বর্ণ ওয়াশরুম চেক করে সেখানে না বর্ণের বুক টা কেপেঁ ওঠে ৷  বর্ণ বাইরে বেরিয়ে গার্ডদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বর্ণের সন্ধেহ হয় ৷ বর্ণ প্রত্যেক কে উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোন গার্ড কে ঘুম থেকে তুলতে পারে না ৷ বর্ণ রেগে পানির বোতলে থাকা পানি গার্ডদের মুখে দিতে তারা ধিরে ধিরে চোখ মেলে থাকায় ৷ আবার কয়েক মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়ে.... 


বর্ণ ওদের ওঠানোর চেষ্টা আর না করে রুমে ফিরে আসে৷ হঠাৎ বর্ণের দেয়ালের দিকে চোখ পড়তে দেখে কালো কালি অর্থাৎ মার্কার দিয়ে ফকফকে সাদা দেওয়ালে লেখা ..

** বলেছিলাম মিস্টার চৌধুরী আমাকে বন্দি করে রাখার ক্ষমতা আপনার নেই৷ তবে আমার সাথে যা যা করেছেন এর জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি পাওয়ার জন্য তৈরি থাকুন মিস্টার চৌধুরী ৷ তৈরি হন রক্তের হলি খেলার জন্য.... খুব তারাতারি দেখা হচ্ছে আপনার সাথে নিজেকে তৈরি করুন সে দিন সে মুহূর্তের জন্য .... **

                                **ছন্দ** 

লেখা টা পড়ে বর্নের শরীলের লোম গুলো দারিয়ে গেল৷ কথা গুলোর মাঝে যে তাকে থ্রেট করেছে এটা বুজতে বর্ণের বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি৷ তবে  ছন্দ যে তাকে বোকা বানিয়ে পালিয়েছে কিন্তু দ্বিপ থেকে কি করে একা চলে যেতে পারে? এটা ভেবে বর্ণ  দৌরে বাইরে চলে আসে ৷ কিন্তু বাইরে এসে ছন্দ কে খুজতে থাকে পাগলের মতো ৷ তখনি মিহির এসে বলে"" বস ব্লান্ডার হয়ে গেছে ম্যাম কে মাত্র এয়ারপোর্টে দেখতে পেয়েছে আমাদের লোক...""

"" ওয়াট! এয়ারপোর্টে ছন্দ এতো তারাতারি কি করে সম্ভব?""

বর্ণের কথা শুনে মিহির বলতে লাগলো"" বস ম্যাম একা নন ওনার সাথে পনেরো থেকে বিশ জন গার্ড আছে ৷ সেখানে ওনার পিএ অনিল আখি কে দেখতে পেয়েছে৷ ""

বর্ণ বুজতে পারলো ছন্দ এদের সাহায্য নিয়ে  পালিয়ে যেতে পেরেছে৷ বর্ণ রুমে এসে গায়ে শার্ট জরিয়ে মিহির কে বলে"" এর পরের ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যাবস্থা কর মিহির""

"" বস একঘন্টা পর আর একটা ফ্লাইট আছে ৷ আমরা যদি এখুনি বের হই তাহলে পৌছাতে ফোরটি ফাইভ মিনিট'স লেগে যাবে""

"" লেট'স গো..""

_____________________________________________

ফ্লাইটে উঠে সিটে আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে ফেলে ছন্দ ৷ আখি আড় চোখে কুইনকে দেখছে আর বোঝার চেষ্টা করছে কুইনের মাথায় কি চলছে৷ 

"" আল্লাহ কুইনকে খুজে পাওয়ার পর থেকে এতো শান্ত হয়ে আছে কি করে?  নিশ্চয় কুইনের মাথায় কিছু একটা চলছে যেটা আমাদের চিন্তা ভাবনার  উপরে....."" 

ছন্দ চোখ বন্দ করে বর্ণের করা অসন্মান, অবিশ্বাস, আঘাত করা গুলো চোখের সামনে ভাষছে৷ কলিজা যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ৷ যন্ত্রনা হচ্ছে ৷ দু-হাত দিয়ে কাপড় খামছে ধরে আছে৷ নখ গুলো গেথে যাওয়ার মতো অবস্তা ৷ প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ছন্দের যে কষ্ট গুলো না কাউকে বোঝানো যায় আর না নিজে সহ্য করতে পারে.........

তিন দিন ধরে বর্ণ ছন্দ কে পাগলের মতো খুজে যাচ্ছে শুধু ছন্দ কে নয় আয়মান চৌধুরীকে ও খুজছে ৷ ছন্দ যেদিন দেশে ফিরে আসে সেদিন থেকে আয়মান চৌধুরী নিখোজ আর মইনাল কে মৃত অবস্তায় চৌধুরী ম্যানশনের সামনে কেউ বা কারা ফেলে রেখে যায়৷ সামিরা  নিজের বাবার মৃত দেহ দেখে এক বিন্দু চোখের পানি ফেলেনি ৷ এমন ভাব করছে যেন কিছু-ই হয়নি৷ বন্যা আর মা দুজনে সামিরার কান্ড দেখে হতবাক৷ কোন মেয়ে যে তার বাবার মৃত্যুতে  কষ্ট পাওয়া তো দুরে থাক চোখের এক ফোটা জল ফেলেনি ৷ এমন মেয়ে দেখেনি কখনো৷ 

এদিকে আয়মান কে নিয়ে মা মেয়ের কারোর-ই মাথা ব্যাথা নেই ৷ কারন তারা খুব ভালো করে জনে এই কাজ কার হতে পারে তবে বর্ণ কে কিছুই বলেনি বরং নরমাল থেকেছে ৷ 

সামিরা চৌধুরী ম্যানশনে নিজের রাজত্ব চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ৷ মিসেস বর্ণালি সামিরার এই কাজে ভিষন ভাবে রেগে আছে ৷ বর্ণ কে জানাতে বর্ণ কিছুই বলে না ৷ সামিরা নিজেকে বর্ণের বউ ভাবতে শুরু করে এঙ্গেজমেন্ট যখন হয়ে গেছে বিয়ে তো হবে-ই কিন্তু সে গুড়ে বালি দিয়ে বর্ণ স্ট্রিটলি সামিরা কে জানিয়ে দেয় তাকে সে বিয়ে করতে পারবে না সে অলরেডি বিবাহিত৷ সামিরা সব শুনে হেসে বলে "" নো প্রব্লেম মিস্টার চৌধুরী কিন্তু আমি এই চৌধুরী ম্যানশনে থাকতে চাই ৷ আপনার স্ত্রীর পরিচয়ে দরকার নেই বিয়ে করার কিন্তু সমাজের কাছে আমি চৌধুরী পরিবারের বউ পরিচয়ে থাকবো৷"" 

সামিরার কথা শুনে বর্ণ প্রচন্ড রেগে গিয়ে সামিরার গলা চেপে ধরে কিন্তু ঠিক সময়ে বন্যা এসে পড়ায় সামিরা প্রানে বেঁচে যায়৷ বর্ণ সামিরার থেকে একটু দুরে দারিয়ে আঙ্গুল উচিয়ে বলতে লাগলো

"" বন্যা এই মেয়েটাকে বলে দিস ওর মতো থার্ড ক্লাস মেয়ে কখনো আয়ান চৌধুরী বর্ণের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না৷ আর একটা কথা এই আয়ান চৌধুরী বর্ণের বউ একজন সে হলো আমার টিয়াপাখি ৷ আর যদি কখনো ওর জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করিস তো তোকে জানে শেষ করে দিতে আমি দ্বিতীয়বার ভাববো না মাইন্ড ইট"" 

কথাটা বলে বর্ণ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে কিছু দুর যেতে বর্ণের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ বর্ণ গাড়ি চালাতে চালাতে ফোন কল রিসিব করে "" হ্যালো..!""

"" বস শাকিল কেমন যেন করছে ৷ আপনাকে খুজছে শুধু..."" 

এতো কিছুর মাঝে শাকিলের কথা বর্ণের মাথা থেকে বেরিয়ে যায় ৷ বর্ণ শাকিলের কথা শুনতে বলে ওঠে 

"" আমি এখুনি আসছি ৷ ওর খেয়াল রাখ৷""

"" ওকে বস ৷ আপনি একটু তারাতারি আসুন"" 

বর্ণ কল ডিসকানেক্ট করে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পনেরো মিনিটে পৌছে যায়৷ বর্ণ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে শাকিল বর্ণকে দেখে বর্ণের পা জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো"" বস আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি ৷ আপনার বাবার কথায়...""

আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে বর্ণ অবাক হয়ে শাকিলের থেকে পা ছাড়িয়ে বললো"" ড্যাডের জন্য মানে?"" 

"" স্যার বলতে গেলে শুরু থেকে বলতে হবে আমাকে ...""

বর্ণ সোফায় পায়ের উপর পা রেখে শাকিল কে ইশারা করে বলতে ....

"" বস আপনি তো আগে থেকে জানতেন আমি শুরুতে আপনার বাবা মানে বড় স্যারের হয়ে কাজ করতাম ৷   আমি স্যারের বিশ্বস্ত লোক থাকায় আমাকে স্যার বেছে নেন আপনার উপর নজর রাখার জন্য যবে থেকে আপনি ছন্দ ম্যাডাম কে খুজে পান৷ আপনার প্রত্যেকটা ইনফরমেশন আমি বড় স্যার কে দিতাম৷ 

বড় স্যারের সাথে কাজ করার সময় জানতে পারি বড় স্যার তার বন্ধু আফাজ আহাম্মেদ আর তার স্ত্রী কে প্লান করে গ্যাস সিলিল্ডার ব্লাস্ট করিয়ে পুড়িয়ে মারে ৷ এই প্লানে সাব্বির আহাম্মেদ তার স্ত্রী ননদ আর আপনার বন্ধু জরিত ছিলো৷ 
শাকিল একটু দম নিয়ে পুরো কাহিনিটা বলে এটাও বলে যেদিন ছন্দ তার বাবাকে মারতে চেয়েছিলো ৷ আয়মান চৌধুরী বর্ণ কে ম্যানোপুলেট করে ছন্দ কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো আর বর্ণ ঠিক তাই করে এটাও বলে শাকিল ৷

শাকিলের সব কথা শুনে বর্ণের চোখে কখন যে পানি এসে জমা হলো এটা বর্ণ নিজেও জানে না৷ 

"" আ,,আমার টিয়াপাখি এতো কিছু সহ্য করেছে? আর আমি কি করলাম আমার টিয়াপাখির সাথে জানোয়ারের মতো বিহেব করেছি ৷ অবিশ্বাস করেছি ওর ভালোবাসার উপর ভরশা করেনি আর না সবটা জানার চেষ্টা করেছি? ""

বর্ণ এখন ছন্দের করা খারাপ ব্যাবহার গুলোর মানে বুজতে পারছে৷   প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে বর্ণের মনে হচ্ছে তার হৃদয়ে কেউ ছুড়ি চালাচ্ছে ৷ ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার হৃদয় টা ৷ বর্ণের বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে তার টিয়াপাখির সাথে  জানোয়ারের মতো আচরন গুলো ৷ নিজেকে এখন প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে বর্ণের ৷ বর্ণ মাটিতে হাটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কাঁদছে কিন্তু আফসোস বর্ণের এই কান্না শোনার জন্য কেউ নেই৷  গার্ড গুলোর চোখের কোনে পানি তারা আগেই রুম ত্যাগ করে বর্ণ কে একা করে দিয়ে যায়৷ বর্ণ চোখের পানি মুছে এলোমেলো পা ফেলে বেরিয়ে যায় ৷ 

ছন্দ দেশে আশার দু- মাস ধরে ছন্দের কোন খোজ নেই ৷ কাব্য রুনা কায়রা Md রাহুল কেউ জানে না ছন্দ কোথায়? শুধু মাত্র আখি অনিল ছাড়া ৷ 

এই দুমাসে প্রতি মিনিটে প্রতি ঘন্টায় ছন্দ আয়মান কে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারছে৷ কখনো ফুটন্তু গরম তৈল ছিটিয়ে দেয় আয়মানের শরীলে  ৷ কখনো আবার বিচ্ছু বিশাক্ত পোকা মাকড়  শরীলে ছেড়ে দেয়৷ আবার কখনো ধাড়ালো ছুড়ি দিয়ে শরীলের বিভিন্ন স্থান কেটে সেখানে মরিচের গুড়ো লবন ছড়িয়ে দেয়৷ এমন হয়েছে ছন্দ আয়মান কে বরফ পানিতে চুবিয়ে ধরতো আবার কখনো গরম পানিতে ৷ গরম সুচ আয়মানের শরীলে গেথে দিচ্ছে ৷ আয়মান চৌধুরী গলা ফাটানি চিৎকার করে যাচ্ছে তা দেখে ছন্দ হাসতে হাসতে বলতে লাগলো"" চিৎকার কর জানোয়ার আরো জোড়ে চিৎকার কর ৷ তোর চিৎকার শুনতে আমার সত্যি ভিষন ভালো লাগছে৷ উমম আমার না আরো চিৎকার শুনতে ইচ্ছে করছে কি করি ? আইডিয়া আজ না হয় নতুন কিছু ট্রাই করি কি বলিস?""

"" আমাকে ছেড়ে দে ছন্দ বর্ণ যদি জানতে পারে তোকে ছাড়বে না শেষ করে দিবে তোকে তাই ভালোই ভালোই বলছি আমাকে ছেড়ে দে নাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে৷""

আয়মানের কথা শুনে ছন্দ পাগলের মতো হাসতে লাগলো ৷ ছন্দের এমন হাসি দেখে আয়মানের সারা শরীল হীম হয়ে আসছে ৷ ছন্দের এমন হাসি মানে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলেছে৷ 

"" আয়মান প্রথম বারের মতো ছন্দ যে ভুল করবে এটা আশা করা সত্যি বোকামির ভিতর পড়ে না? আমি বাপ ছেলের জন্য স্পেশাল কিছু ভেবে রেখেছি ৷ যাস্ট সঠিক সময়ের অপেক্ষা ....""

"" মা,, মানে?""

"" খুব তারাতারি জানতে পারি "" রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো ছন্দ....

ছন্দ সুচ গুলো রেখে একটা বোয়াম বের করলো ৷ বোয়াম টা দেখে আয়মানের চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো ৷ বোয়ামের ভিতর বড় বড় লাল পিপড়ে ৷ ছন্দ আয়মানের শরীলে মধু ঢেলে দিয়ে পিপড়ে গুলো আয়মানের শরীলে ঢেলে দিলো ৷ শুরু হয়ে গেল আয়মানে আর্ত চিৎকার ৷ দুজন গার্ড কানে হাত চেপে বসে আছে ৷ ছন্দ আরামছে আয়মানের চিৎকার শুনে যাচ্ছে মনে হচ্ছে কোন সুমধুর সুর শুনছে৷ 

ছন্দ ধির পায়ে রুম থেকে বের হয়ে হাত ধুয়ে নেয়৷ পাশে আখি হাতে তোয়ালে নিয়ে দারিয়ে আছে ৷ ছন্দ হাত মুছে আখি কে বলে.."" অনিল কে গাড়ি বের করতে বলো আমি আজ বাড়ি ফিরবো""

"" ওকে কুইন..."" 

_____________________________________________________________________________

ছন্দ বাড়িতে ঢুকতে রুনা ছন্দ কে দেখে দৌড়ে ছুটে এসে ছন্দ জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলে ৷ ছন্দের মুখে কোন হাসি নেই ৷ দু-হাত দিয়ে রুনাকে আগলে বলে"" ভাবি কাঁদছো কেন? আমি মরেনি বেচেঁ আছি তাহলে এমন মরা কান্না কেন জুরে দিলে?""

রুনা ছন্দ কে ছেড়ে আলতো করে ছন্দের গালে থাপ্পোর মারে...

"" কি বলছো ছন্দরানী ৷ তোমার মাথা ঠিক আছে? জানো এতো গুলো দিন তোমার জন্য বাড়ির প্রত্যেকটা লোকে খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে গেছে ?""

"" বেশ তো এখন এসে পরলাম এখন থেকে খাওয়া ঘুম ঠিক মতো হবে ৷ এখন ছাড়ো ফ্রেস হয়ে আসি তারপর তোমার হাতের রান্না খাবো ভিষন খিদে পেয়েছে""

"" ঠিক আছে দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসো আমি খাবার বাড়ছি৷""

"" হুম.." 

ছন্দ ধিরে ধিরে হেটে উপরে নিজের রুমে চলে গেল৷ এদিকে রুনা কাব্য কে ফোন করে ছন্দের ফিরে আসার কথা জানাতে কাব্য অফিস থেকে তারা হুরো করে বের হয়৷ 
রুনা খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে উপরে তাকাতে দেখে ছন্দ কে ... 

রুনা ছন্দের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আগের থেকে ছন্দ যেন আরো কিউট দেখতে হয়েছে৷ উজ্জ্বলতা যেন দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ ছন্দ চেয়ার টেনে বসে আশে পাশে তাকাতে দেখে রাহুল এক কোনে দারিয়ে ওকে দেখছে৷ কায়রা বেগম মুখে আচল চাপা দিয়ে কাঁদছে ৷ ছন্দের কেন যেন এই সব ভিষন বিরক্ত লাগছে ৷ রুনা ছন্দের খাবারের প্লেটে ডিমের কোরমা দিতে ছন্দ নাক মুখ চেপে ধরে বেসিংয়ে গিয়ে বমি করে দেয়৷ হঠাৎ ছন্দকে বমি করতে দেখে রুনা কায়রা রাহুল ঘাবড়ে যায়৷ কায়রা বেগম গিয়ে দ্রুত ছন্দের কপাল চেপে ধরে৷ ছন্দ বমি করে সোফায় গা এলিয়ে দেয় ৷ ভিষন ক্লান্ত লাগছে ছন্দের৷ রুনা আগে চিকেন স্টু বানিয়ে রেখেছিলো ওটা এনে জোর করে ছন্দ কে খাইয়ে দেয়৷ ছন্দ স্টু টা খেয়ে রুমে চলে যায়৷ 

অন্যদিকে ছন্দের বাড়ির গার্ড থেকে বর্ণ ছন্দের ফিরে আসার কথা শুনে পাগলের মতো ড্রাইব ছন্দের বাড়িতে আসার সময় বাইকের সাথে এক্সিডেন্ট করে ৷ 

দুদিনের ভিতর বর্ণ হসপিটাল থেকে বের হতে পারে না তার মা বোনের জন্য , ছন্দ আজ সাদা রঙের শাড়ি পড়েছে ভিষন সিগ্ধ লাগছে শাড়িতে ৷ লম্বা ঘন চুল মায়াবী সিগ্ধ মুখ কারো মনে শান্তি এনে দিবার জন্য যথেষ্ট ৷ 

ড্রইংরুমে Md অনিল বসে ছিলো তারা ছন্দ কে দেখে শক্টড ...

""এটা কি রুপ কুইনের! শাড়ি পড়েছে মেয়ে মেয়ে সাজ! নিশ্চয় কোন ঘাপলা আছে Md""

"" হতে পারে কুইনকে এতোটা শান্ত আমি কখনো দেখি নি ৷ এটা হয়তো ঝড় আসার পূর্ব লক্ষন৷""

"" তৈরি থাকো অনিল ৷ যে কোন সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে৷""

Md কথা শেষ হতে আয়মান কে যে রুমে রাখা হয়েছে সে রুমের দিকে ছন্দ কে যেতে দেখে দুজনে ঘাবড়ে যায় অনিল Md ৷ কারন ছন্দের হাতে  রিভারবার ৷ পিছু পিছু অনিল Md গিয়ে হাজির হয় সেখানে ৷ অনিল কে দেখে ছন্দ বলে "" আয়মান কে সেখানে নিয়ে যা যেখানে সব টা শুরু হয়েছিলো ৷ আজ আমি সেখানে সবটা শেষ করবো...""

"" ওকে কুইন..." 

হাতে গ্লাভ'স পড়ে আয়মান কে ধরে গাড়ির ডিকিতে শুইয়ে দেয় হাত পা মুখ বেধে৷ 

কিছুক্ষনের মধ্যে পৌছে যায় সেই কাক্ষিত জায়গায় যেখানে সবটা শুরু হয়েছিলো ৷ অনিল Md মিলে আয়মান কে টেনে হিচরে সেই পোড়া বাড়িতে নিয়ে যায়৷ সেখানে গিয়ে আয়মান দেখে পাচঁ মাস আগে ছন্দ যেভাবে সবটা সাজিয়ে রেখেছিলো ঠিক সেরকম ভাবে সবটা আছে ৷ অনিল কে ছন্দ আয়মানের হাত পায়ের বাধন খুলে দিতে বলে ৷ অনিল ঠিক তাই করে ৷ ছন্দ তার শিংহাসনে বসে রিভলবার মাথায় ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে৷ আয়মান বার বার শুকনো ঢোক গিলছে ৷ আয়মান বুজতে পারছে তার জীবনের আজ শেষ দিন৷ আয়মান চোখ ঘুড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি গাড়ির আওয়াজ পায় আয়মান ছন্দ অনিল Md... 

গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেয়ে ছন্দের ঠোটের কোনে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো ৷ চোখ মেলে আয়মানের ডান পায়ে শুট করে দিয়ে তার পর বা হাতে শুট করে দেয়৷ আচমকা ছন্দের এরুপ আক্রমনে প্রত্যেকে শক্টড ৷ ঠিক সে সময় সেখানে হাতে রিভারবার নিয়ে প্রবেশ করে বর্ণ৷ ভিতরে ঢুকে আয়মান কে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্তায় পরে থাকে দেখে বর্ণ   ড্যাড বলে চিৎকার করে ওঠে ৷ বর্ণের চিৎকার শুনে অনিল Md পিছুনে তাকিয়ে দেখে বর্ণ কে ৷ আয়মান বর্ণ কে দেখতে পেয়ে ঠোটের কোনে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে.... 

"" বর্ণ বাবা তুই এসেছিস? দেখ ওই মেয়ে আমাকে মেরে ফেলবে তুই ওকে শেষ করে বর্ণ তুই ওকে শেষ করে দে৷ " 

বর্ণ রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে ছন্দের দিকে সাদা শাড়িটায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ৷ বর্ণ এগিয়ে গেলো ছন্দের দিকে হাতের রিভালবার টা ছন্দের দিকে তাক করতে আয়মান চৌধুরী হাসতে লাগে ৷ ছন্দ বর্ণের দিকে রিভালবার তাক করে আছে আর বর্ণ ছন্দের দিকে ৷ যাস্টার রিভালবার ফিগারে টিপে দিবে সাথে সাথে দুজনের খেল খতম এটা ভাবতে আয়মান চৌধুরীর মন নেচে উঠছে বার বার কিন্তু হাতে পায়ে গুলি লাগার কারনে তা প্রকাশ করতে পারছে না ৷ 

ছন্দ বর্ণের দিকে  আগুন চোখে তাকিয়ে  বলতে লাগলো ..."" শুট মি বর্ণ শুট মি ৷ আজ যদি তুমি আমাকে বাচিয়ে রাখো তাহলে কিয়ামত ঘটে যাবে ৷ রক্তের হলি খেলা হবে এখানে তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো ৷  ""

ছন্দের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে বর্ণ ছন্দের দিকে এক পা দু পা করে আগাতে থাকে ৷ ছন্দ বুজতে পারছে বর্ণ কিছু একটা করার চেষ্টা করছে ৷ ছন্দ কিছু করে ওঠার পূর্বে বর্ণ ছন্দের  হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে পিছুন থেকে জরিয়ে ধরে রিভালবার টা গলায় ধরে ৷ 

"" রিভালবার টা ফেলে দেও টিয়াপাখি..তুমি কি ভেবে ছিলে আমি তোমাকে শুট করবো? একবার যে ভুল করেছি দ্বিতীয়বার সে ভুল আমি করবো না ৷ ড্যাড উঠে দারাও ""

অনিল Md কিছু করতে যাবে কিন্তু তার আগে ছন্দ চোখের ইশারায় বারন করে ৷ তাই তারা চুপ করে দারিয়ে আছে৷ 

আয়মান উঠে দারাতে না পেরে ছন্দের হাত থেকে রিভালবারটা ছিনিয়ে নিয়ে ছন্দের দিকে তাক করে বলে .. "" হাহ! অনেক সহ্য করেছি  আর না আজ তোকে মেরে আমি সব শেষ করে দিবো ৷ শত্রুর কখনো শেষ রাখতে হয়না এটা জানিস তো? আজ তোকে এখানে শেষ করবো কারন কি জানিস এখানের তোর পুরো পরিবার কে আমি শেষ করেছি ৷ তুই বেচে গিয়েছিলি আর আজ তোকেও শেষ করে দিবো তারপর তোর বিজনেস সম্পত্তি সব আমার হবে সব আমার ৷ মরার জন্য প্রস্তত হ এবার ৷ " 

আয়মানের মুখে এতো কথা শোনার পরও ছন্দের ঠোটে রহস্যময় হাসি যে হাসির মানে Md অনিল আয়মান বোঝার ক্ষমতা রাখে না ৷ আয়মান ডান হাত দিয়ে রিভারবার ধরে ছন্দকে শুট করতে যাবে তখনি ঘটে যায় সেই অকাক্ষিত ঘটনা ৷ রিভালবার দিয়ে ঠিকি গুলি বের হয় তবে তা আয়মানের হাতে থাকা রিভালবার দিয়ে নয় বর্ণের রিভালবার দিয়ে........
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।