১৩!!
রাহাতের হুঁশ ফিরতে নিজেও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। একান্তে কথা বলার জন্য মায়াকে নিজের ফার্ম হাউজে নিয়ে এসেছিল রাহাত। জায়গাটা শহর থেকে বেশ অনেকটাই দূরে। পথ ভুল করে কোন দিকে চলে যাবে এই মেয়েটা কে জানে! ভাবতে ভাবতেই মায়াকে ফার্ম হাউজের গেইটের সামনে দাঁড়ানো দেখতে পেল রাহাত। নিজে নিজেই হেসে ফেললো রাহাত। চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত মায়া। রাহাত গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে মায়ার কাছাকাছি এসে হর্ন বাজালো। মায়ার আঁতকে উঠে চোখ খোলা দেখে জোরেই হেসে ফেললো। মায়া রাগ করে হাঁটা শুরু করলো। ভাবটা এমন যে সে একাই চলে যাবে। তবু রাহাতের সাথে যাবে না। রাহাতও মায়ার পিছন পিছন ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর হর্ন বাজাচ্ছে। আর শব্দ করে হাসছে৷ মায়া বিরক্ত হয়ে রাহাতের গাড়ির জানালার কাছে আসলো।
-কি সমস্যা?
-একা একা কোথায় যাওয়া হচ্ছে মায়াবতী?
-আমি একাই চলে যাবো বাসায়--। হুহ।
-তাই? তো একা একা এতোদূর থেকে শহরে ফিরতে পারবেন ম্যাডাম?
-মানে!
-গাড়িতে উঠে এসো--। আমরা শহর থেকে বেশ অনেকটাই দূরে আছি মায়াবতী--। হারিয়ে গিয়ে আমাকে কষ্ট দিতে হবে না। এসো না?
আশেপাশে তাকিয়ে মায়াও ভয় পেয়ে ঢোক গিললো। আসলেই এই জায়গাটা ওর পরিচিত নয়। তাড়াতাড়ি তাই গাড়িতে উঠে বসলো। আর মায়ার তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে আসা দেখে রাহাত আবার হাসতে লাগলো। রাহাতের হাসি দেখে মায়া অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। এই লোকটা বেশি খারাপ। এত্তোগুলা খারাপ। একে তো ভয় পাইয়ে দেয় সারাক্ষণ। তারপর এভাবে হেসে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। খারাপ খারাপ। খুবই খারাপ লোক একটা! এসব ভাবতে ভাবতেই হাতে রাহাতের হাতের স্পর্শ পেল মায়া। মুখ ঘুরিয়েই রাহাতকে দেখতে পেল। রাহাত মায়ার একটা হাত ধরে রেখে সামনের দিকে তাকিয়েই ড্রাইভ করছে।
-এই খারাপ লোকটার সাথেই আজীবন থাকার জন্য রেডি হয়ে যাও মাই ডিয়ার মিসেস মায়াবতী--। তোমাকে আমার সুখে থাকার কারণ হয়ে এভাবেই পাশে থাকতে হবে সারাজীবন---।
মায়া মুগ্ধ হয়ে রাহাতকে দেখছে। লোকটা ওর প্রত্যেকটা মনের কথা পড়ে ফেলে কেমন করে? কখনো কি ওকে মুখ ফুটে কিছু বলতে দিবে না এই মানুষটা?
সাত দিন পর।
আজ রাহাত আর তার মায়াবতীর বিয়ে। গত সাতদিন আগেই বিয়ের কথা হয়েছে। বিয়ের সব এরেন্জমেন্ট, কেনাকাটা, অফিস-সব মিলিয়ে ভিষণ ব্যস্ত সময় কেটেছে রাহাতের। মায়াবতীকে একটা বারের জন্যও চোখের দেখাটাও দেখতে পায় নি। আলাদা বাড়িতে হলুদ আর মেহেদীর অনুষ্ঠান হয়েছে। তাই হলুদে পরী হয়ে মায়াবতীকে কেমন লেগেছে সেটা না দেখেও কল্পনা করে নিয়েছে রাহাত। বিয়ের স্টেজটাও দুজনের আলাদা। বিয়ের সব ফরমালিজি শেষ হবার আগে দেখা হবে না মায়াবতীকে ভাবতেই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রাহাতের। সে যে তার মায়াবতীকে একটা নজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে এটা কি মানুষগুলো বুঝতে পারে না?
বিয়ের কবুল আর রেজেস্ট্রির পর মায়াকে পাশে পেল রাহাত। লাল টুকটুকে পরী হয়ে বসে আছে মায়া। মাথায় পাতলা কনে ওড়নায় মুখ ঢাকা। মুখটা তুলে তাকাচ্ছেই না। মাথা এমন ভাবে নিচু করে রেখেছে মন হচ্ছে না আর মুখ তুলে চাইবে রাহাতের দিকে। রাহাতও তাই ভালো করে দেখতে পারছে না বলে একটু পর পর তাকাচ্ছে মায়ার দিকে। আর সবাই সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে দেখে নিজেও হালকা হেসে ফেললো রাহাত। মেয়েটা রাহাতকে কতোটা বদলে দিয়েছে সে কি জানে!
সন্ধ্যায় আত্মীয়রা মুখ দেখার অনুষ্ঠানে নিয়ে বসালো রাহাত আর মায়াকে। একে অন্যকে সরাসরি দেখতে পারবে না। আয়নায় দেখে বলতে হবে কে কি দেখছে। সেই মতো করেই মায়া আর রাহাতকে স্টেজে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এতোক্ষণে মায়ার ঘোমটা সরিয়ে সেই পাতলা ওড়না দিয়ে রাহাত আর মায়া দুজনকেই আবার ঢেকে দেয়া হল। সামনে ইয়া বিশাল এক আয়না।
আয়নার ভিতর দিয়েই রাহাত তার মায়াবতীকে দেখতে পাচ্ছে। টকটকে লাল গোলাপ ফুল আঁকা বেনারসি পড়নে মায়ার। গা ভর্তি গয়না, চোখে কালো মোটা করে আইলাইনারের টান, আর চোখের নিচে মোটা কালো কাজলের ছোঁয়া, কপালে-মুখে কুমকুম টিপের ফোঁটা, নাকে চেইন টানা নথ, আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। সব মিলিয়ে মায়াকে কোন অংশে রাজরাণী থেকে কম লাগছে না। রাহাতের হা করে তাকিয়ে মায়াকে দেখা দেখে সবাই দুষ্টুমিতে মেতেছে।
-ভাইয়া? বাকিটা সারা রাত ভরে দেখিয়েন---। এখন বলুন তো আয়নায় কাকে দেখা যায়?
-আয়নায় আমার মায়াবতীকে দেখা যায়----।
-ওহো-----। মায়াবতী!
এবার মায়ার পালা৷ মায়া দুরুদুরু বুকে চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকালো। আয়নার মধ্য দিয়েই দুজনের চোখাচোখি হতেই মায়া একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেল। একটা শীতল স্রোত যেন একেবারে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল মায়াকে। মানুষটাকে একেবারে সাদামাটাভাবে দেখলেই যে কোন মেয়ের একটা হার্টবিট মিস হয়ে যাবে। আর বিয়ের পাগড়ী শেরওয়ানিতে দেখে তাহলে মায়ার কি অবস্থা বোঝার কথা। গাঢ় খয়েরী রঙে সেজেছে রাহাত। শেরওয়ানীর খয়েরী রঙের সাথে সোনালী রঙের পাজামা আর পাগড়ী। পাগড়ি, শেরওয়ানী, বর ওড়না সব কিছুতেই সাদা পার্লের কাজ করা। সব মিলিয়ে কমপ্লিট রাজকুমার।
-এই যে নতুন বউ? আয়নায় কাকে দেখা যায়?
----------মায়াবতীর স্বপ্নের রাজ্যের রাজাকে দেখা যায়---।
রাত দশটায় খাওয়া দাওয়া শেষ করে মায়াকে নিয়ে রাহাতদের বেলী আর গোলাপ ফুলে সাজানো গাড়িটা রওনা দিলো। এর আগে মায়ার মা আর ভাই মিহান রাহাতকে ধরে কেঁদে ফেললেন। এই চুপচাপ মেয়েটা নিজের মনের কষ্টটা কাউকে দেখাতে চায় না, বুঝতে দিতে চায় না। ওকে যেন রাহাত আগলে রাখে সেটাই বারবার করে বললেন। রাহাতও তাদেরকে আশ্বস্ত করলো, সে তার মায়াবতীকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়িতে পাশে বসা মায়াকে দেখছে রাহাত। মেয়েটা অন্ধকার শহরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা থমথমে করে বসে আছে। রাহাত কিছু না বলে মায়ার ডান হাতটা নিজের বাম হাতে চেপে ধরতেই মায়া তাকালো রাহাতের দিকে। একটু হাতটা টেনে কাছে টেনে নিয়ে নিজের কাঁধে মায়ার মাথাটা রাখলো রাহাত।
-আমার মায়াবতীটার মন খারাপ?
-উঁহু -----------।
-বিয়ের পরে নাকি মেয়েগুলো কেঁদে কেটে একেবারে মিনি পেত্নী হয়ে যায়--। তা তুমি দেখছি গুম হয়ে বসে আছো---। কাহিনী কি?
-কিসের কাহিনী?
-মেকাপ নষ্ট হওয়ার ভয় পাচ্ছ? তেমন হলে পার্লার থেকে আবার সাজিয়ে আনবো--। তবু একটু কেঁদে হলেও ঠোঁটে আগের সেই হাসিটা ফিরিয়ে আনো--। প্লিজ?
মায়া রাহাতের কথায় হেসে ফেললো। এই লোকটার পাগলামি কথায় সবসময়ই ওর মনটা হালকা হয়ে যায়। মায়া কাঁধে মাথা রেখেই রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। রাহাত অপলকে মায়াকে দেখছে। মায়াবতীটার ঠোঁটের কোণের হাসিটা দেখতে ভালো লাগছে রাহাতের। মায়ার হাতটা আবার একবার আলতো করে চেপে ধরে ভাবছে রাহাত। আজ থেকে নতুন একটা জীবন শুরু করবে সে তার মায়াবতীকে নিয়ে। ফেলে আসা জীবনের সমস্ত ভুলগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন এক পথচলা শুরু হবে রাহাতের। শুধু তার মায়াবতীটাকে নিয়ে।
১৪!!
রাত ১২ টার দিকে রাহাত সব কাজ সেরে রুমে এসে একেবারে হা হয়ে গেল। রাহাতের রুমটা ফুলের গন্ধে মো মো করছে। সারা রুমটা কাঠবেলি আর গোলাপ দিয়ে সাজানো। আর রুমের মাঝামাঝিতে থাকা খাটটাও ফুলে ফুলে ভরা। কাঠ বেলী, বেলী আর গোলাপের ছড়াছড়ি। ফুলের লম্বা লম্বা শিকল করে সেটা দিয়ে ওদের বাসরের খাট সাজানো হয়েছে। খাটের মাঝামাঝিতে গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আঁকা। আর সেই ভালোবাসার চিহ্নের একটু সামনে মাথা নিচু করে ঘোমটা মাথায় জবুথবু হয়ে বসে আছে একটা লাল টুকটুকে পরী।
রাহাত ঘোরের মাঝেই দরজাটা বন্ধ করলো। দরজা বন্ধের শব্দে মায়ার কেঁপে ওঠাও দেখলো। কোনমতে খাটের সামনে এস দাঁড়ালো৷ মায়াও খাট থেকে গুটিগুটি পায়ে নেমে রাহাতের সামনে দাঁড়ালো। ঝুঁকে পায়ে হাত দেয়ার আগেই রাহাত মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে এক পাঁক নিজেও ঘুরলো৷ রাহাতের হুট করে এমন কাজে মায়া খেঁই হারিয়েই রাহাতের গলা জড়িয়ে ধরলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে মায়াকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসলো রাহাত। কোন কথা হচ্ছে না দুজনের। চুপ করে একে অপরের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ গুনছে যেন।
একটু পরে স্বাভাবিক হয়ে মায়ার মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরালো রাহাত। তার মায়াবতীকে এতোগুলো দিন পর দেখে বার বার অন্য একটা ঘোরে চলে যাচ্ছে রাহাত। তাও আবার এই বিয়ের সাজে যখন মায়াবতীকে লাল পরীর চেয়ে কোন অংশে কম লাগছে না। পরীটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে রাহাতের। বেশি কিছু না ভেবেই এগিয়ে এসে আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-মায়াবতী? সত্যিই কি তোমাকে আমি পেয়েছি? নাকি এখনো স্বপ্ন দেখছি?
মায়া মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। আবার রাহাতের দিকে চোখ পড়তেই চোখাচোখি হলো দুজনের।
-পরী? একটা কথা বলি?
-হুম------।
-কখনো ফেলে যাবে না বলো? যত ভুল করি অধিকারের শাসন দিয়ে শুধরে দিও--। রাগ করে দূরে ঠেলে দিও না কখনো---।
-হুম-----।
-আর ম্যাডাম? সারাদিন আপনি যেখানে ইচ্ছে যান, যা ইচ্ছে করেন, বেড়ান-- আমার সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতি রাতে আমার মায়াবতীটা আমার বুকে থাকা চাই----।
------------------------------
-লজ্জা পেয়ে লাভ নেই---। বিয়ের পরে কোলবালিশের দায়িত্ব শেষ--। বউকে চাই প্রতিদিন-----।
-বারে---। মায়ের কাছে যাব না আমি?
-যাবে না কেন! অবশ্যই যাবে--। তবে আমার ঘুমের সময়ের আগে তোমাকে বুকে চাই--। এখন সেটা কি করে করবে সেটা তুমি জানো---।
-আচ্ছা--------।
-মায়াবতী? বউ সেজে এত্তোগুলা আদুরে লাগছে পরীটাকে--। কিন্তু এতো ভারি মেকাপে আর বেশিক্ষণ থাকলে তো স্কিনের ক্ষতি হবে সোনা--। এখন যাও--। ফ্রেশ হয়ে নাও---।
-আচ্ছা--------।
মায়াকে লাগেজ থেকে শাড়ি বের করায় হেল্প করে নিজেও ওয়ারড্রপ থেকে একটা প্যাকেট নিলো রাহাত। মায়া ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।
-মায়াবতী?
-হুম?
-এটা তোমার জন্য---। যখন আমার কাছে পরীটা ধরা দিতে চাইবে তখন যেন এটা পড়ে।। বলতে হবে না কিছু আর। আমি বুঝে নিব বাকিটা-----।
-মানে!
-হুট করে পরীটাকে ধরে নিয়ে এলাম--। একটু সময় তো দেয়াই যায়---।
মায়া লাজুক হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। রাহাতের দেয়া প্যাকেটটা বুকে জাপটে ধরে নিজেকে আয়নায় দেখলো একবার। প্যাকেটটা খুলেই মায়ার হার্ট বিট ডাবল হয়ে গেল। হালকা গোলাপি রঙা একটা নাইটি। হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত পোঁছবে লম্বায়। তার উপরে টু পিসের নাইটিটা যথেষ্ট পাতলা ফিনফিনে রকমের। দেখামাত্রই মায়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এটা পড়ে কখনো রাহাতের সামনে দাঁড়াতে হবে! ভাবতেই বেচারি লজ্জায় পারছে না মাটির সাথে মিশে যেতে। প্যাকেটে নাইটিটা রেখে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো মায়া। গায়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে প্যাকেটটা আবার হাতে নিয়ে দেখলো মায়া। কি করবে বুঝতেই পারছে না। লজ্জায় পড়তে পারছে না। আবার না পড়লে মানুষটা কষ্ট পাবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না। এর মধ্যেই দরজায় নক করলো রাহাত।
-এই যে মায়াবতী? শাওয়ার নিতে নিতে ঘুমিয়ে গেলে নাকি?
-নাহ----। মানে------।
-আরে পাগলী? এখন ওটা পড়তে হবে না--। তুমি তোমার মতো করে সময় নাও----।
------------------------------
-তাড়াতাড়ি এসো না?
মায়া শাড়ি পড়ে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। হাতে রাহাতের দেয়া প্যাকেট আর গায়ের গয়নাগাটি। জিনিসগুলো রেখে টাওয়ালটা চুল থেকে খুলে চুল মোছায় মন দিলো মায়া। এদিকে রাহাত হা করে মায়াকে দেখছে। লাল বেনারসি বদলে একটা নতুন পাটভাঙা তাঁতের শাড়ি পড়েছে মায়া। লাল রঙা শাড়িটার সোনালি পাড়ে দেয়া। মুখে কোন সাজ নেই। নেই গায়ে কোন গয়না। তবুও মেয়েটার মুখটা দেখে এতো মায়াবী লাগছে!
রাহাত এগিয়ে এসে মায়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে হাতের টাওয়ালটা নিল। মায়া এবারও লজ্জা পেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আলতো করে মায়ার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো রাহাত।
-মায়াবতী? গিফ্ট পছন্দ হয়েছে?
মায়া লাজুক হেসে মাথা নাড়লো। রাহাতও মায়ার চুল মোছার ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টুমিতে মাতলো। চুল মোছা শেষ হলে টাওয়ালটা রেখে মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। বিছানায় মায়াকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়লো। মায়াবতীর সাথে দুষ্টুমি করতে করতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল রাহাত।
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই রাহাত টের পেল মায়া ওর হাতটা সরিয়ে উঠে যাচ্ছে। জাপটে ধরার আগেই মায়া বিছানা থেকে নেমে পড়লো। রাহাত চোখ না খুলেই মায়ার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। একটু একটু করে এক পা দু পা করে সরে যাচ্ছে মেয়েটা।
-এই মায়াবতী? কই যাও? কাছে এসো?
-উহু------।
-আমি উঠে ধরতে পারলে খবর আছে কিন্তু---।
-আচ্ছা? ধরে দেখাও----। আমি ধরা না দিলে কখনো ধরতে পারবে তুমি?
-তাই নাকি?
-বিশ্বাস না হলে ধরো? এসো?
চোখ দুটো কোনমতেই খুলতে পারছে না রাহাত। যেন একে অন্যকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে আবেশে। আর এদিকে মায়াটাও ধীরে ধীরে দূর থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে। কেন যেন রাহাতের মনে হচ্ছে মেয়েটা হারিয়ে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। ডাকতে গিয়েও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো না এবার রাহাতের। তবু শেষ একবার চেষ্টা করলো শক্তি দিয়ে।
-মায়া?