মাহাদকে এবার পায় কে! প্রচন্ড রেগে গিয়ে মাথার বালিশটা ছুড়ে মারলো তিতিরের দিকে........
তিতির সাথে সাথে দরজা থেকে সরে পড়লো। বালিশটা একদম রুমে বাহিরে গিয়ে গড়াগড়ি খেল। তিতির বালিশটা কুড়িয়ে নিয়ে লাবীবার আড়ালে দাড়িয়ে বলল," খালাম্মা থাক তাহলে। মনে হচ্ছে ভাইজান খুব রেগে আছে। "
♥
তিতিরের মুখে ভাইজান ডাক শুনে মাহাদ আরো ক্ষেপে গেল। দাতে দাঁত চেঁপে বলল," এই মেয়ে, আমি তোমার কোন জন্মের ভাইজান হই যে, ভাইজান ভাইজান করে ডাকছো? ফার্দার যেন ভাইজান ডাক না শুনি।"
♥
এবার লাবীবা তিতিরের ভাইজান ডাকায় বেশ খুঁশি হয়ে গেল। যাহোক, যে সন্দেহ করেছিল সেটা মোটেও নয়। সাবিনার মত সেও ভাইজান বলে ডাকে। লাবীবা এবার মাহাদকে বেশ জোড়েই ধমক দিয়ে বলল," সারারাত নিশ্চয় মোজ্জেমেল চাচার গাছের আম পেড়ে সাবাড় করেছিস! আর এখন এসে ঘুমাস!"
কিচেনে আমের ব্যাগ দেখেই বুঝেছি তুই ছাড়া এটা কেউ করবেনা। টাকার কি অভাব তোর! যে অন্যর আম চুরি করতে হবে?
♥
এবার তিতির নিজেই ভয় পেয়ে যায়। মাহাদের দিকে আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকাতেই মাহাদের লাল টকটকে চোখ দেখে আরও ভয় পেয়ে গেল। খালাম্মা আমি গেলাম বলে তিতির পা বাড়াতেই লাবীবা তিতিরের হাত ধরে বলল," তুমি এখানে বসে বই বের করো। আমি দেখছি ও কি করে তোমায় না করে। সারাদিন কুকাজ করে বেরাবে আর একটা ভাল কাজ করতে বলেছে সেখানেও রাগ দেখায়!"
লাবীবা তিতিরকে নিয়ে খাটে বসে বলল," আমিও দেখি ও তোমাকে কেমন করে অংক করে না দেয়। মাহাদ ভালো চাসতো এখুনি বিছানা থেকে ওঠ।"
♥
মাহাদ কোন কথা না বলে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেল। এই সুযোগে লাবীবা রুম থেকে চলে গেল। বারান্দায় এসে সাবিনাকে ডাকলো আর ৩ কাপ কফি দিয়ে যেতে বললো।
♥
মাহাদ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে টাওয়ালটা গলায় ঝুলিয়ে তিতিরের কাছে এসে নিচু গলায় বলল," তোর এত বুদ্ধি সেটা জানতামনা। শেষে শাশুড়ীকে নিয়ে মাঠে নেমেছিস! শাশুড়ীকে নিয়ে আমার সাথে রাজনিতি শুরু করেছিস!
তুই জানিসনা, আমার ঘুমের প্রয়োজন! তারপরও কোন সাহসে এসেছিস এই সাত সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে?"
♥
মাহাদের তুই তোকারি শুনে তিতির খুব কষ্ট পেল। মাহাদ মনে হচ্ছে তিতিরকে রাস্তার মেয়েদের মত ট্রিট করছে। অজান্তেই চোখের কোনে জল চিকচিক করতে লাগল।
♥
এর মধ্য লাবিবা রুমে এসে বলল," তুই এখনো দাড়িয়ে আছিস! তোর বজ্জাতগিরী থামাবি! মেয়েটা ভার্সিটিতে যাবে। কখন থেকে বসে আছে সেটা তোর চোখে পড়ছেনা?
♥
মাহাদ এবার চুপ করে গেল। তিতিরের কিছুটা দুরে বসে ওর খাতাগুলো চেক করতে লাগলো। অন্য ম্যাথ গুলোর সলেশন দেখতে লাগলো। তারপর বলল," কোনগুলো করে দিতে হবে।"
"তিতির বইটা এগিয়ে দিয়ে বলল," যে তিনটাতে মার্ক করা আছে সেগুলো।"
"মাহাদ অংকগুলো দেখে বলল," পেন্সিল দিয়ে আঁকানো! আপনি কি পড়াশোনা করেন, না করেন না! আপনার বইয়ে কোন কলমের আঁক পর্যন্ত নেই। পুরো বই নতুনের মতই আছে। ভার্সিটিতে কি আমার মান-সম্মান রাখবেন!"
"আমি বইয়ে আঁকানো একদম পছন্দ করিনা। কোন কিছু মার্ক করার প্রয়োজন হলে খাতায় লিখে রাখি।"
" মাহাদ অংক করতে মনযোগ দিল। একটা অংক সম্পূর্ন তিন নিয়মে করে দিয়ে তিতিরের দিকে খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলল," পরের অংকটা আপনি নিজে করে আমাকে দেখান।"
" নতুন নিয়মের অংক গুলো তিতিরের মাথায় ঢুকলোনা। একটা নিয়ম বুঝেছে কিন্তু বাঁকি দু'টো নিয়ম বুঝতে পারেনি। তবুও করতে মনযোগ দিল।"
♥
এমন সময় সাবিনা কফি নিয়ে এসে বলল," আরে আফা আপনি এইহানে!"
কফি সবাইকে দিয়ে তিতিরের পাশে চোখ লেগে দাড়িয়ে রইলো। তারপর বোঝার চেষ্টা করলো তিতির এত মনযোগ দিয়ে কি করছে।
♥
তিতির খাতাটা এগিয়ে দিল মাহাদের দিকে। তারপর বলল," আমার হাতে একদম সময় নেই। আমায় ভার্সিটিতে যাইতে হবে।"
" তিতিরের কথা শেষ হতেই মাহাদ রাগী চোখে তিতিরের দিকে তাকালো। তিতির ভয় পেয়ে চুপ করে রইলো। মাহাদ অংকগুলো দেখতেই এক জায়গায় কলম আটকে গেল। এমনি তে দুইটা নিয়মের অংক করতে পারেনি তার ভিতর আর একটা ভুল! সেটা রিতিমত মাহাদকে আরো ক্ষেপিয়ে তুলল। এত লো ব্রেনে এ কতদুর এগিয়ে যাবে। মায়ের সামনে আচ্ছা মত ধোলায় দিতে লাগলো তিতিরকে। শেষে লাবীবার প্রচন্ড খারাপ লাগলো। কেন যে এই পাগলের কাছে মেয়েটাকে নিয়ে আসলাম। এমন সময় সাবিনা করুন মুখে বলে উঠলো," ভাইজান আফাকে এমন করে বকেন না। আফা কষ্ট পায় তো!"
" তোকে এর ভিতর নাক গলাতে কে বলছে! নিজের কাজ নিজে কর। নিচে গিয়ে আসমাকে পাঠিয়ে দে।"
মাহাদের ধমক খেয়ে সাবিনা মুখ কাচুমাচু করে চলে গেল। কিন্তু কিছুক্ষন পর এসে বলল," খালাম্মা আপনারে সাহেব ডাকছে।"
" সাবিনার কথা শুনে লাবীবা তবুও বসে আছে। তারপর আসমা রুমে আসলে সে চলে গেল রুম থেকে।"
আসমা এসেও রিতিমত চমকে উঠলো মাহাদের এমন ব্যবহারে। এটা কোন মাহাদ যে তিতিরের সাথে এত খারাপ ব্যবহার করছে। আসমা ভয়ে ভয়ে বলল," ভাইজান কিছু বলবেন?"
" তিতিরকে অংক বুঝিয়ে দিতে দিতেই মাহাদ বলল, " আসমা, তোমার আপার জন্য টিফিন বক্সে নাস্তা সাজিয়ে দাও তো! হাতে খুব একটা সময় নাই।"
" মাহাদের কথা শোনার সাথে সাথে আসমা চলে গেল। আর তিতির মাহাদের দিকে তাকালো। তিতিরে চোখে পানি টলমল করছে। তিতির নিচে তাকাতেই মাহাদ ওর বাম হাত এবং কফির কাপটা তিতিরের সামনে ধরলো। আর তিতিরের চোখ থেকে কয়েকট ফোটা পানি টপটপ করে হাতে এবং কফির কাপে পড়ল। মাহাদ বাম হাতে পড়া চোখের জল ওর বুকের লোমে মুছলো এবং কফি পান করে বলল," তিতির তোমার চোখের জলে এক্সট্রা স্বাধ আর সুখ লুকিয়ে আছে সেটা আমি আগে জানতাম না।"
" মাহাদের কথার কোন জবাব আসেনা। শরীরের মাঝে মাঝে কাঁপুনি বুঝিয়ে দিল তিতির কাঁদছে।"
" মাহাদ বই খাতা বন্ধ করে বলল," তোমাকে দিয়ে পড়ালেখা হবেনা। যাও রেডী হও।"
" তিতির বসা থেকে হাটুর উপর দাড়িয়ে বই খাতা সরিয়েই অচমকায় মাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল," ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই।"
" কফির মগটা বিছানায় পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেদিকে মাহাদের খেয়াল নেই। দু'হাতে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে তিতিরের চুলগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে কিস♥ করে বলল, " তুমি ভাবছো তোমার শাশুড়ী সহজ সরল! বাতাসী তোমার শাশুড়ী কে কি বলেছে জানিনা কিন্তু মা আমাদের পিছে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিছে। একবার যদি ভুলেও টের পায় তাহলে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা তিনি কি ব্যবহার করবে তোমার সাথে। তখন আর এই রকম ভালো ব্যবহারে থাকবেনা। তুমি তখন তার চোখের বিষ হয়ে যাবে। আমি তখন চাইলেও কিছু করতে পারবোনা। ভাইয়ার কাহিনী তো তুমি জানো! তার থেকেও ভয়াভয় কিছু আমাদের সাথে ঘটবে।"
" কথাগুলো শোনার পর মাহাদকে তিতির ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মাহাদ শুধু ওর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ঝট করে বিছানা থেকে উঠে গায়ে একটা শার্ট জড়িয়ে গাড়ীর চাবি, ওয়ালেট আর মোবাইলটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।"
" তিতির এসে কান্না করতে করতে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে দ্রুত রেডী হয়ে ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বের হল।
নিচে আসতেই আসমা ওকে টিফিন বক্স আর পানির পটটা দিল।
আসমা, তোমার ভাইজানের বেডশীটটা পাল্টে দিও। ওখানে কফি পড়েছে। একটু জলদি করো। মা দেখলে পরে সমস্যা হতে পারে। কথাগুলো বলে তিতির বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
♥
তিতির বাসার গেট থেকে বাহিরে বের হয়ে একটু হাটতেই সামনে গাড়ী নিয়ে এসে দাড়ালো মাহাদ। গাড়ীর ডোর খুলে দিতেই তিতির বাধ্য মেয়ের মত গাড়ীতে উঠে পড়লো। মাহাদ তিতিরের দিতে ঝুঁকে গাড়ীর ডোর বন্ধ করলো। তারপর তিতিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো তিতির আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে।
মাহাদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল," তিতির নেকাবের মুখটা খোল।"
" তিতির নাক টেনে বলল," আমি আর পড়ালেখা করবোনা। আমি সংসার করতে চাই।"
" কিহ্ বলে কপাল টেনে তুলল মাহাদ। কি বললি?"
" তিতির ওর নেকাব খুলে নিচে ছুড়ে মেরে বলল," আপনি বুঝতে পারছেননা আমি কি বলছি! আমি পড়ালেখা করবোনা। আমি সংসার করবো। আমার একটা বাচ্চা চাই।"
" একে নিয়ে আমি কি করবো! দ্বিতীয় বার যদি এধরনের কথা তোমার মুখ থেকে শুনি তাহলে তোমার পিঠের চামড়া তুলে লবন লাগিয়ে দিব। দিনে দিনে কি তোমার জেদ বেড়ে চলছে? আমি কিন্তু সব জেদ সহ্য করবোনা। শেষে সম্পর্কটা ওখানেই সমাপ্ত হয়ে যাবে।"
" তাহলে আমি কি করবো! একটা বাচ্চা হলে না হয় বাসার সবাই মেনে নিত। আমাকে মেনে নেওয়ার মত কোন রাস্তায় আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। আমার তো এত যোগ্যতা নাই আপনার সমক্ষ হওয়া। আমার কোন গুনও নেই যে তারা আমাকে আপনার পাশে দেখতে চাইবে। আপনি বলতে পারেন! আমি কি করবো?"
" মাহাদ তিতিরকে নিয়ে ভার্সিটিতে না গিয়ে অন্য রাস্তার দিকে চলতে লাগলো। মাহাদ গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করছে আর তিতির মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। গাড়ী চলছে তার আপন গতিতে। মাহাদ সামনের রাস্তার দিকে মনযোগ দেওয়া অবস্থায় তিতিরের ডান হাতটা নিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। তারপর আস্তে আস্তে নাড়তে লাগল। তিতির তুমি আমার লাইফের অর্ধেক অংশ আর বাঁকিটা আমার অস্তিত্ব। আল্লাহ্কে মানতো! আল্লাহ্ চাইলে সবই পারে। তিনি নিশ্চয় উত্তম কোন পথ আমাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। ওগুলো চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। বর্তমানকে কঠোর হাতে সামলাও তাহলে ভবিষ্যত সুন্দর হবে। মা তো হাত ছাড়া হয়ে গেছে। তুমি বাবা আর ফুফিকে একটু বেশি সময় দাও পড়াশুনার ফাঁকে। এখনো যথেষ্ঠ সময় আছে আমাদের হাতে। নিশ্চয় কিছু একটা রাস্তা পাবই আমরা।
" তিতির টিফিন বক্স বের করে সেটা খুলে দেখলো পরেটা আর মাংস। পরেটা ছিড়ে মাংস নিয়ে মাহাদের মুখের সামনে ধরে বললো, " আমি ঐ দুটো অংক বুঝতে পারিনি, আমাকে একটু বুঝিয়ে দিবেন! এবার কিন্তু ওভাবে বকা দিবেননা।"
" পরেটা মুখে নিয়ে মাহাদ খেতে খেতে বলল," আমার রুম আর আমার আশেপাশে না আসলে আমি কখনই এমন ব্যবহার করতামনা। আর মাকে নিয়ে এত মাতামাতি করোনা। কারন আমিতো জানি আমার মা কোন জায়গায় দুর্ধর্ষ।"
মাহাদ তিতিরকে এক নির্জন নদীর পাড়ে নিয়ে গেল। ততক্ষনে তাদের খাবার কমপ্লিট। মাহাদ আগে নেমে গেল। তিতির নিজেকে পরিপাটি করে গাড়ী থেকে নামতেই দেখল মাহাদ খানিকটা দুরে বাধের উপর বসে আছে। তিতির ওর খাতাটা নিয়ে মাস্টার মসাইয়ের কাছে চলে গেল।
" মাহাদ ইশারা করলো ওর পাশে বসতে। তিতির মাহাদের পাশে গিয়ে বসতেই মাহাদ বলল,"জনাব সামসুদ্দীন রহমান পাভেল স্যার খুব ভালো একজন ম্যাথ টিচার। উনি এই তিনটা অংকের নিয়মই জানে। কিন্তু মজার বিষয় হল তিনি কখনো সব নিয়ম কাউকে শিখাননা। উনি নিজেই একটি নিয়ম তৈরি করেছেন। এটা নিয়ে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে খুব ঝামেলা হয়েছিল। পুরো ক্লাসে ফ্রেন্ডটিকে এই অংকের নিয়ম নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিল। আর সেদিন খুব অপমানিতও করা হয় ওকে। ও রাগে ওর শিক্ষা জিবন ত্যাগ করে বাবার বিজনেসে যোগ দেয়। এই ব্যাপারটা আমাকে এক ফ্রেন্ড জানিয়েছিল। তখন আমি এই অংকের সমাধান করেছিলাম দুই দিন পর। তাই কেউ অকারনে তার শিক্ষা জিবন ছেড়ে দিতে চাইলে রেগে যাই।
যাইহোক, স্যার যদি এই অংকগুলো আজ করতে দেয় তাহলে তুমি তিনটা নিয়মই করে দেখাবে। আমি চাই আমার ঐ ফ্রেন্ডের অপমান পরিশোধ হোক আমার স্ত্রীর হাত দ্বারা। শিক্ষক বা স্টুডেন্ট বা অন্য যে কেউ কোন কিছুতে দম্ভ করলে যে তাকে সব জায়গাতে অপদস্ত হতে হয় সেটা ওনাকে বুঝিয়ে দিও। আজ সেই সুযোগও পাবে তুমি। মাহাদ খুব সুন্দর করে তিতিরকে অংকগুলো বুঝে দিয়ে সেখান থেকে উঠে এসে তিতিরকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। যথারীতি তিতিরের একটা ক্লাস মিস গেছে।
♦♦♦♦
সকালের নাস্তায় বাতাসির প্লেটে আম দেখে বাতাসি সবার প্লেটের দিকে চেয়ে দেখলো তার মত সবার প্লেটে আম দেওয়া হয়েছে। আমটা তার বড্ড চেনা। সিঁদুরের রঙ্গের মত টকটকে আম। বাতাসির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অত্যন্ত খুঁশির ঠেলায় বলে উঠলো হায়....লে আ....ম।
মায়ের এমন অস্পষ্ট কথা শুনে কামরান সাহেব বুঝতে পারলো তার আম্মাজান আজ খুব খুঁশি।
বাতাসি মুখে আম পুরে দিতেই চোখ বন্ধ করে আমের স্বাধ নিতে লাগল। মোজ্জেমেল তাহলে এমনি এমনি আহে নাই। বাতাসি চোখ মেলে বলল," সাবিনা, আমগুলা কই পাইলি?
" দাদী আন্নেতো জানেন না, কাল নাকি মোজ্জেমেল বুইড়া ভুত... না না ভুত না লাল পেত্নী দেখে ফিট হয়ে পড়ে গেছে আম গাছ তলায়। পেত্নীটা নাকি মগডালে বসে আম পেড়ে পেড়ে খাইতাছিল। পেত্নীর দৌলতে আসেপাশের হগ্গলের বাড়িতে একব্যাগ করে আম দেখা গেছে। শুধু মোজ্জেমেল বুড়োর বাড়ী ছাড়া। এতদিন পর একখান কাম সারছে পেত্নী আম্মা। কিন্তু সবার আম দরজায় পাওয়া গেলেও আমাগো ব্যাগ রান্না ঘরে পাওয়া গেছে।"
বাতাসির এবার আর বুঝতে বাঁকি রইলোনা এটা কার কাজ ছিল। কিন্তু পেত্নীটা যে তিতির ছিল সেটাও ধরে ফেলল বাতাসি। কারন মাহাদ কখনো গাছে চড়তে জানেনা। এই মাইয়ার একটা ব্যবস্থা করতে হবে বলে খাওয়াতে মনযোগ দিল বাতাসি।
" রুপালি প্লেট থেকে আমগুলো সরিয়ে বলল , "কোনো ভুত জ্বীনের আম আমি ছুতেও রাজি না। রুমকির পাত থেকেও আমগুলো তুলে নিলো। এগুলো খাওয়ার দরকার নাই।"
এবার বাতাসি জোড়ে রুপালিকে ধমক দিয়ে বলল," ওটা কোন ভুতে আম পারেনি। ওটা তোর ভাতিজা মাহাদের কাম। আই আম খাইতে চাইছিলাম তার দৌলতে তোরাও খাইতে পারছোস। আহ্ সোয়ামী♥ আরে কত্ত ভালোবাসে। এত্ত ভালোবাসা আই কই রাখতাম।
" কামরান সাহেবের গলায় আম বেঁধে যাওয়ার মত অবস্থা। জিবনে যেই কাজ সে করে দেখাইতে পারে নাই আজ সেই কাজ তার ছেলে অনায়াসেই করে দেখালো তাও কোন প্রমান ছাড়াই। কামরান সাহেব এই প্রথম নিজেকে বাঘ বাঘ মনে হচ্ছে। আর মাহাদ বাঘের বাচ্চা।"
♦♦♦♦
ম্যাথ ক্লাসে বসে আছে তিতির। আগের ক্লাসের পড়াগুলো একটা মেয়ের কাছ থেকে দেখিয়ে নিচ্ছিলো তিতির, যেটা স্যারের নজরে চলে যায়। জনাব সামসুদ্দীন রহমান পাভেল একদমই পছন্দ করেন না তার স্টুডেন্ট ক্লাসে তাকে ছাড়া অন্যদিকে মনযোগ দেয়। এই মেয়ে দাড়াও। তিতিরকে উদ্দেশ্য করে বলা হল কথাটি।
তিতির চমকে উঠে স্যারের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তাকেই দাড়াতে বলা হয়েছে।তিতির দাড়িয়ে গেল।
এই মেয়ে তোমার মন কোন দিকে ছিল বলে পুরো ক্লাসে আচ্ছা মত তিতিরকে মুখের ধোলায় দিল ম্যাথ টিচার।
তিতির মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তিতিরের কোন রেসপন্স না পেয়ে স্যার আরও ক্ষেপে গেল। এই মেয়ে এখানে এসো, নিজেকে খুব বড় মনে করো! টিচার তোমাকে কিছু বলছে তার জবাব না দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছো! এই বোরখা পড়া মেয়েরা আরও বেশি খারাপ। বোরখা পড়বে আর মুখ ঢেকে প্রেম লীলা চালাবে। আমি মনে করি যারা বোরখা না পড়ে ওপেন প্লেসে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘোরাফিরা করে তাদের বুকের পাটা আছে বলতে হয়। এই বোরখা পড়া মেয়েদের দেখলে আমার অসহ্য লাগে।
তিতির সোজা স্যারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। ক্লাসে আরো পর্দা করা মেয়েগুলা মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইল। কারন তিতিরের উপর দিয়ে সব পর্দা করা মেয়েদের শাসন করা হচ্ছিল।
তিতির কে লক্ষ্য করে বলল," আমি যে নতুন অধ্যায় থেকে ম্যাথ করে দিলাম সেটা কি তুমি জানো!"
" জ্বী স্যার, গতকাল আপনি ক্লাসে বলে দিয়েছিলেন এই চ্যাপ্টার থেকে ম্যাথ করানো হবে।"
" তোমার মনযোগ কোন দিকে ছিল! তুমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলে বলে ধমক দিল তিতিরকে।"
" স্যার আমার ম্যাথ গুলো আগেই করা হয়েছিল তাই আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ওর থেকে বুঝিয়ে নিতে চাইছিলাম।"
" নিজেকে খুব পন্ডিত মনে করো! তুমি কেমন পন্ডিত আজ তা দেখে ছাড়বো। তোমার নাম কি!"
" জান্নাতুন তাজরীম তিতির।"
" তুমি সেই মেয়ে তাইনা! যার জন্য রিপাকে বহিষ্কার করা হয়েছে!"
" উনি অপরাধ করেছেন তাই ওনার শাস্তি পেয়েছেন। এখানে আমার কোনো দায়বদ্ধতা নাই।"
" তিতিরের এমন স্পষ্ট জবাবে স্যার আরো রাগান্বিত হয়ে গেলেন। তিতিরকে পুরো ক্লাসে আরো অপদস্ত করার জন্য স্যার চ্যাপ্টার থেকে একটা কঠিন ম্যাথ বের করে বলল," এই ম্যাথটা করে সব স্টুডেন্টদের বুঝিয়ে দাও। যদি না পারো তাহলে তোমাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।"
" তিতির অংকে চোখ বুলাতেই মনটা খুঁশিতে ভরে উঠলো। কারন সকালে এই অংকটাই মাহাদ খুব সুন্দর করে একটু বুঝিয়েছে। পেন আর ডাস্টার নিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল," প্রিয় বন্ধুগন, আমি যে নিয়মগুলোতে অংক করে দিব আশা করি সবাই উপকৃত হবেন। তারপর তিতির ব্লাকবোর্ডে অংক করতে মনযোগ দিল।"
তিতির একটা একটা নিয়মে অংক করে দিচ্ছিলো আর সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো। পরপর দু'টো ক্লাস থাকায় অন্য টিচারও পরবর্তী ক্লাস নেওয়ার জন্য ক্লাসের বাহিরে এসে দাড়ালো। ঐ টিচারও দাড়িয়ে তিতিরের কারিশমা দেখতে লাগলো।
একটানা তিনটা নিয়ম সহকারে অংকটি বুঝিয়ে দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল," অংকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিগত সালগুলো পর্যালোচনা করলে এটাই বোঝা যায় যে,আমাদের বোর্ড পরীক্ষায় এই অংকটা পরার চান্স অনেকটাই এগিয়ে। যার যেই নিয়মে সহজ লাগবে সে সেই নিয়মে এই অধ্যায়ের অংকগুলো সলেশন করতে পারবেন। "
তিতিরের কথা শেষ হতেই বাহিরের টিচার সামসুদ্দীন স্যারকে বলল," স্যার আমার ক্লাস আছে। আপনার ক্লাস শেষ হয়ে গেলে আমি ক্লাসটা নিতাম।"
সামসুদ্দীন স্যার আর কোন কিছু না বলে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল। এই প্রথম তিতির ওর ট্যালেন্ট ক্লাসে উপস্থাপন করতে সক্ষম হল। ট্যালেন্ট স্টুডেন্টদের কদর একটু আলাদাই হয় সবার কাছে। সেটা তিতিরের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলনা। পরবর্তী ক্লাস শেষ করে ক্লাস থেকে বের হতেই পিয়ন মামা এসে বলল," তিতির তোমাকে সামসুদ্দীন স্যার একবার ডেকেছেন।"
তিতির আগেই জানতো এমনই কিছু একটা ঘটনা ঘটবে তার সাথে। দুরে সামসুদ্দীন স্যার অন্য স্যারের সাথে কথা বলছিল। তিতির কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। স্যাররা তাদের আলোচনা শেষ করে চলে যেতেই তিতির এবার স্যার কে সালাম দিয়ে বলল," স্যার আমাকে কি ডেকেছিলেন?"
স্যার সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বলল," আমি মেধাবী স্টুডেন্টদের সঠিক মূল্যায়ন করি। তিতির, অংকগুলোর নিয়ম কার কাছ থেকে শিখেছ!"
" স্যার, আমার হ্যাসব্যান্ডের কাছ থেকে ঐ অংকগুলোর সলেশন আপনার জন্য মাসেজ ছিল। আমি সঠিক কোনো কারন জানিনা উনি কি বলতে চেয়েছেন এই অংকের মাধ্যমে। তবে উনি বলেছেন এই অংকের জন্য এক স্টুডেন্ট কে আপনি অমূল্যায়ন করেছিলেন তার ফলাফল তিনি তার শিক্ষাজিবনের ইতি টেনেছিলেন।
তিতির স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে নিচে এসে গেটের সামনে যেতেই দেখতে পেল মাহাদ একটি মেয়েকে নিয়ে গেটের সামনে দাড়িয়ে রয়েছে। মেয়েটের পোশাক আধুনিকতার একটু বেশিই ছোয়া পেয়েছে। একটা ট্রী শার্ট, স্কার্ফ আর জিন্স পড়ে মাহাদের পাশে দাড়িয়ে হাসি ঠাট্টা করতে ব্যস্ত ছিল।
তিতিরের সকালের পুষে রাখা রাগটা ঐ দৃশ্য দেখে চরম পর্যায়ে গেল। আমি পর্দা না করলে সাপের মত কুন্ডলী পেকে বসে বসে ফোঁস ফোঁস করবে আর আমার দিকে বিষ ছিটাবে। আর এখন! ঠিকি এমন ধরনের মেয়ের সাথে সে মজা করতে ব্যস্ত আছেন। আপনি যদি বিষাক্ত সাপ হন তাহলে এই তিতিরও আপনার জন্য বিখ্যাত উঝা। আপনার ঐ বিষ ছোড়া কিভাবে বন্ধ করতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।
স্যারের সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে স্যারকে সালাম জানিয়ে বিদায় দিয়ে রাটাল স্নেকের মত লেজ ঝনঝনিয়ে বাজ তুলে মাহাদের দিকে অগ্রসর হল তিতির। ইহাকে এখন সবরকম পদবী দেওয়া যায়। রাট্যাল স্নেক, সাপের উঝা, সিংহী, বাঘিনী, নীল এবং কালোর সম্মন্বয়ে কাল কেউটে বা ব্লাক মামবা.....
কোনো দিক থেকেই এখন তার কমতি নেই। এখন সে তার সর্বোশক্তি দিয়ে মাহাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চলছে।