১৫!!
নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে মায়ার নামটা ডাকার পর রাহাতের ঘুমটা ভেঙে গেছে। চোখ খুলতেই রাহাত দেখলো সে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। হাতে মায়ার লেখা চিঠিটা। আর পাশেই পড়ে আছে ডিভোর্স লেটারটা। রাহাত কোনমতে বেড সাইড টেবিল থেকে নিজের মোবাইলটা নিয়ে সময় দেখলো। ৭ টা বাজে। মোবাইলের কন্ট্রাক্ট লিস্ট থেকে মায়ার নাম্বারটা সার্চ করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো রাহাত। মায়া, মায়াবতী, বউ-বহু নাম দিয়ে সার্চ করেও যখন নাম্বারটা খুঁজে পেল না ততক্ষণে রাহাতের মাথায় হাত। বিয়ের আগে যে ছয় মাস মায়া রাহাতের পি.এ ছিল তখন মায়ার নাম্বারটা নিবে নিবে করেও নেয়া হয়নি। দরকারও পড়ে নি। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেয়েটা তো রাহাতের সামনেই ছিল। আর বিয়ের পর এই দু বছরে মায়া বাসার ল্যান্ডলাইন থেকেই রাহাতকে কল করেছে৷ কখনো কথা হয়েছে। ভালোবাসা-বাসি হয়েছে। আর কখনো ব্যস্ত থাকায় কথা হয়নি। নাম্বারটাও তাই দরকার পড়ে নি রাহাতের।
নাম্বারটা জোগাড় না করতে পেরে রাহাত ভাবতে বসলো কি করবে। সবচেয়ে প্রথমে যে কথাটা খেয়াল হলো সেটা হলো-বাবার সাথে গিয়ে মায়ার ব্যাপারে কথা বলা। বুদ্ধিটা পছন্দ হলো না রাহাতের। কারণ রাহাত জানে মায়া রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে কথাটা ওর বাবা জানলে এক গাট্টি বকা দিবে আর কথা শোনাবে৷ তবুও মায়াকে খুঁজে পেতে সব করতে রাজি এখন রাহাত। কোনমতে এক পা দু পা করে বাবার রুমে এসে ঢুকলো রাহাত। ঢুকেই আঁতকে উঠলো। বাবা রুমের রকিং চেয়ারে চোখ বুজে বসে আছে। ঘুমাচ্ছে কি জেগে বুঝতে পারছে না রাহাত। তবু সাহস করে এগিয়ে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো রাহাত।
-ড্যাড?
-বাহ! বাসায় এসেছ? তা হঠাৎ আমার কাছে কি মনে করে? তোমার প্রজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য আরো ক্যাশ লাগবে?
-ড্যাড? মায়া------।
-ওহ আচ্ছা! মায়া চলে গেছে জেনে গেছো! কি? এতো অবাক হচ্ছো কেন তুমি? এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। গতকাল সকালে মায়া গেছে। আমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই গেছে---। আমিই বলেছি ও যেন চলে যায়---। একটা অকৃতজ্ঞ- চরিত্রহীন লোকের সাথে নিজের জীবনটা জড়িয়ে কেন পড়ে থাকবে মেয়েটা! যার কাছে ভালোবাসার কোন মূল্যই নেই!
-স-স-সকালে! সকালে চলে গেছে মানে!
-হ্যাঁ সকালে। গত তিনদিন তো বাসায় আসার দরকার হয় নি তোমার। গেল পরশু তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিল। মেয়েটা সারাটা দিন সারাটা রাত তোমার অপেক্ষায় ছিল। তুমি তো তোমার মতো ব্যস্ত। কত কাজ তোমার--। ঘরের বউয়ের জন্য কি আর সময় আছে তোমার! ------এখন খুশি তো তুমি? মেয়েটা চলে গেছে---। চলে গেছে আমার মা টা---।
-বাবা? আমার মায়া?
-খবরদার এই ন্যাকা কান্না আমার সামনে করবে না রাহাত--। তোমার এই কান্না দেখে অন্তত আমার মন গলবে না।-বিদেশ থেকে গ্রাজুয়েশন করে ফিরার পর তোমার ক্লাব, মেয়ে, আড্ডা এসব দেখে আমি ভেবেছিলাম হয়তো লক্ষী একটা মেয়ে বউ হয়ে জীবনে আসলে তুমি বদলে যাবে৷ তাকে সম্মান করতে শিখবে। তার সাথে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিবে--। কিন্তু কি করলে তুমি? একটা বছর বহু কষ্ট করে নাটক করে ভালো সেজেছিলে না তুমি?
-বাবা!
-জুলির সাথে তোমার বাড়াবাড়ি দেখে কি করবো ভাবতে পারছিলাম না। নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি--। সেই সময় আমি মায়াকে দেখি। মেয়েটা কোথাও একটা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিল--। আমাকে নিয়ে হসপিটালে ছুটোছুটি করতে করতে ইন্টারভিউটাই মিস হয়ে গেল পাগলীটার। জানা নেই চেনা নেই একটা মানুষের জন্য কতটা পাগলের মতো টেনশন থেকে কাজটা করেছে সেটা আমি দেখেছি।। তখন বুঝতেও পেরেছি যে তোমাকে শুধরাতে পারলে পৃথিবীতে একমাত্র মায়াই পারবে--। মায়াকে আমিই বলেছিলাম জুলিকে তোমার রুম থেকে বের করতে পারলে তবেই ওর চাকরিটা কনফার্ম হবে।
-তারমানে!
-হ্যাঁ--আমিই মায়াকে তোমার পি.এ করে এনেছি---। তোমার পি. এ হওয়ার পর ওর বাসায় গিয়ে ওর মা আর ওর ভাইয়ের সাথে কথা বলে এসেছি তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে--। তোমার কি মনে হয় ও তোমার সব কাজকর্ম এমনি এমনি হজম করত! মায়া জানত তোমার সাথে ওর বিয়েটা হবে। তাই যখন তখন তুমি যেখানে নিতে মেয়েটা যেত--। তোমার বাজে অভ্যাগগুলো ওর সংস্পর্শে বদলে গেল। ক্লাব, মেয়ে, আড্ডা সব ছেড়ে দিয়েছিলে--। আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটা আসলেই তোমাকে ভালো একটা মানুষ করে দিতে পেরেছে--। কিন্তু তুমি কি করলে রাহাত! নিজের রূপটা দেখিয়েই দিলে! মেয়েটাকে বিয়ে করেই রূপ বদলে গেল তোমার!
-বাবা! আমি আসলে---।
-কি আসলে! একটা বছর তো ঠিকই ছিলে রাহাত---। তোমার ড্রিম প্রজেক্টও শুরু হল--আর তুমিও আগের রূপে ফিরে এলে--। বাহ! কিন্তু তুমি কি জানো এই প্রজেক্টে আমি ইনভেস্ট করেছি মায়ার কথাতেই! আর তুমি সেই মেয়েটাকেই----।
-বাবা! আমি কিচ্ছু চাই না আর--। আমি আমার মায়াকে চাই--। প্লিজ? ওকে এনে দাও না? প্লিজ? প্লিজ ড্যাড!
-আগেরবার সহজেই পেয়ে গেছিলে তো-তাই ওর কদর করতে পারো নি-। এবার নিজে ওকে খুঁজে নিয়ে এসো--। ভালোবাসার মানুষের অবহেলাগুলো কতটা গভীর হয়ে বুকে গিয়ে লাগে সেটা আমার থেকে বেশি কেউ জানে না--। তাই তোমার যদি মনে হয় তুমি সত্যিই মেয়েটা ভালোবেসে সব ছাড়তে পারবে তবেই ফিরিয়ে এনো মায়াকে--। নয়তো আবার দুদিনের জন্য মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি?
-মায়া কোথায় বাবা!
-সেটা তুমি খুঁজে বের করবে--। আমি বলবো কেন?
-বাবা? প্লিজ?
-সহজে পেলে তার মূল্য দিতে কেউ পারে না রাহাত---। আমিও পারি নি--। তোমার মাও আমাকে অনেক ভালোবাসতেন---। পাগলের মতো ভালবাসতো সে আমাকে। তাকে ধরে রাখতে পারি নি--। নিজের কাজ নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিলাম যে-----। তোমার মা যেখানে গেছে-সেখান থেকে আমি চাইলেও তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না--। কিন্তু তুমি মায়াকে ফিরিয়ে আনো-চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আগে----।
-বাবা?
-যাও এখন---।
-বাবা? মায়ার নাম্বারটা----।
-বাহ! ফ্যানটাস্টিক--! মায়াকে তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে তুমি রাহাত! দুই বছর মেয়েটার সাথে সংসারও করলে! অথচ নাম্বারটাও জানো না! ------হা হা হা---।
-ড্যাড?
-জাস্ট গেট আউট রাহাত। নিজে পারলে খুঁজে বের কর---। আউট-। তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে---। বেরিয়ে যাও। দূর হও আমার রুম থেকে----।
রাহাত বের হয়ে নিজের রুমে চলে এলো। বাবার কথায় কিছুই মনে করে নি ও। কারণ ওর বোকামির জন্য কথা তো শুনতেই হবে ওকে। কি করবে, বা মায়াকে কোথায় খুঁজবে কিছুই বুঝতে পারছে না রাহাত। সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। রাতে দু ঘন্টাও ঘুম হয় নি। সেই ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে রাহাতের। তবু মাথার মধ্যে দপদপ করছে রাহাতের। বিছানায় কোন মতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো রাহাত। মায়াবতীটাকে তো তার চাই ই চাই। কোথায় খুঁজবে বা খুঁজে পেলে কি করে মায়ার রাগ- অভিমান ভাঙাবে বা মায়াকে খুঁজে না পেলে কি করবে সেটা নিয়ে আগে ভাগে প্ল্যানিং করার চেষ্টা করলো রাহাত। নিজের মনকে গুছিয়ে রাখলে নয়তো সামনের সমস্যাগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে সুবিধা হবে। তাই আপাতত রাহাত সব ছেড়ে এটা নিয়েই পড়লো।
১৬!!
কানে মায়ার চুলের সুড়সুড়িতে ঘুমটা ভেঙে গেছে রাহাতের। চোখ না খুলে, আর মায়াকে না দেখেও রাহাত মায়ার দুষ্ট হাসিমাখা মুখটা অনুভব করছে। কল্পনা করতে পারছে রাহাত ব্যাপারটা। সকাল সকাল গোসল সেরে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে এসে প্রতিদিন এই কাজটা যেন মায়ার করা চাই ই চাই। ভেজা চুলের টাওয়াল ফেলে সেই ভেজা চুলের ডগা রাহাতের কানের কাছে নিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে কি মজাটা পায় মেয়েটা কে জানে! রাহাতও মায়ার এই দুষ্টুমিগুলো হাসি মুখে মেনে নেয়। মায়া না হয়ে অন্য কেউ এতো সকালে ঘুম ভাঙাতে আসলেই হয়তো দু-চার ডজন ঝাড়ি খেয়ে ফেলতো এতোক্ষণে। কিন্তু মায়াকে রাহাত কিছুই বলে না। মেয়েটার পাগলামিগুলো উপভোগ করে।
চোখ না খুলেই মায়ার হাত ধরে টেনে একেবারে বুকে জাপটে ধরলো রাহাত। মায়া ছোটার জন্য যত ছটফট করছে রাহাতও তত নিবিড় করে আঁকড়ে ধরছে।
-মায়াবতী?
-হুম?
-এভাবে পালানোর জন্য ছটফট করছ কেন? আমি কি অন্যায় কিছু করছি?
-উহু-----।
-তাহলে আমার মায়াবতীটা আমার থেকে এতো পালাতে চায় কেন?
-না তো-------।
-না? সত্যি?
-না মানে---। নাস্তা বানাতে হবে--। ছাড়ো।
-প্রতিদিন এই সেই ভাজি-ভুজি তেলে পোড়া খেতে ভালো লাগে না--। আজ অন্য কিছু খাবো-----।
-কি খাবে বলো? বানিয়ে দিব এক্ষুনি---। বলো না?
-বানাতে হবে না----।
-না না---। আমি পারব--। বলো না?
-মিষ্টি খাবো পরী---।
-কি মিষ্টি খাবে? নাম বলো--। আমি এক্ষুনি--।
-তোমার মিষ্টি ঠোঁটের মিষ্টি------।
-কি!
মায়াকে ঘুরিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে মায়ার মুখের দিকে তাকালো রাহাত।
-বুঝো নি? বুঝিয়ে দেই দাঁড়াও---।
রাহাতের মুখের দিকে তাকিয়েই মায়া কেঁপে উঠে চোখ বুজে নেয়। রাহাতও মায়ার মুখের রঙ বদলানো দেখছে অপলকে। লজ্জায় লাল টুকটুকে মুখটা দেখতে রাহাতের বেশ লাগছে। আজও শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পড়েছে মায়া। কালো পাড়ের কমলা রঙের শাড়িটায় কালো সুতোর কাজ করা। দেখতে কমলা পরী লাগছে মায়াকে। রাহাত সব ভুলে মায়ার লাজুক মুখটা দেখায় ব্যস্ত। বেশ অনেকটা সময় পর মায়া একটু একটু করে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো রাহাত এক মনে ওকেই দেখছে। মায়া রাহাতকে কিছু বলার আগেই রাহাত মায়ার হাত দুটো চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর মুখটা তুলে আবার মায়াকে দেখায় ব্যস্ত হলো রাহাত। লাল মুখটায় গোলাপী আভা খেলা করছে মায়ার। শুয়ে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মায়ার চুলে মুখ গুঁজল রাহাত।
-মায়াবতী?
-হুম?
-মিষ্টি তো খাওয়া হলো--। আজকে আরেকটা জিনিস খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
-কি?
-খিচুড়ি-------।
-মানে!
-হা হা---। খিচুড়ি বুঝো নি? বৃষ্টি পড়ছে না রাত থেকে? দুপুরে খিচুড়ি খেতে মন্দ লাগবে না---।
-আচ্ছা---। এখনই করছি-----।
-এখনই না গো মায়াবতী--। এখন তুমি চুপ করে আমার বুকে শুয়ে থাকো----।
-নাস্তা বানাতে হবে------।
-লাগবে না--। কাজের লোকেরা করে নিবে--। আর আমার মিষ্টি খাওয়া তো হয়েই গেল----।
-ধ্যাত----। ছাড়ো---। আর চুলের পানিতে পুরো বিছানা ভিজছে------।
-ভিজুক--। আমার সমস্ত চুলের পানিতে আমাকে একেবারে ভিজিয়ে দাও---। ভালো লাগছে----।
-সরো-----। কি করছো?
-তোমার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছি--। এতো মাদকতা ভরা কেন এই গন্ধটা? কি মাখো হ্যাঁ?
-শ্যাম্পু---। সরো----।
-বাহ! শ্যাম্পুর গন্ধ এতো -----। আরে তুমি এতো লাফালাফি করো কেন বাবা সারাদিন? আমি না ছাড়লে ছুটতে পারবে? নাকি তোমাকে কোথাও পালাতে দিব আমি?
-আমি পালাতে চাইলে ধরে রাখতে পারবে?
-মিসেস রাহাত মাহবুব চৌধুরী--। আপনি জানেন না যে, আপনার স্বামী হয়তো আপনার পালানো আটকাতে পারবে না--। তবে যতবার যেখানেই পালান না কেন ঠিক ততবারই নিজের বুকে এনে জাপটে ধরতে পারবে---। সো পালান আর যাই করুন--। দিন শেষে আমার বুকেই ফিরতে হবে-আর ফিরেও আসবেন। সেটা যেন মাথায় থাকে---।
-বারে!! এতোই সোজা! কেউ যদি নিজে থেকে হারিয়ে যেতে চায়--তুমি তাকে কি করে খুঁজে পাবে!
রাহাত হুট করে মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। বেশ অনেকক্ষণ পর মায়ার মুখটা দু হাতে তুলে ধরলো রাহাত। একেবারে মায়ার চোখে চোখ রাখলো।
-মায়া! এতো পালানোর কথা বলো কেন? তুমি হারিয়ে যাবে- চলে যাবে--এসব শুনে বুকটা কেঁপে ওঠে আমার--। প্লিজ এসব বলো না কখনো---। তোমাকে এক মিনিটের জন্য হারাতে হলেও আমি পাগল হয়ে যাব--। বুঝো না কেন তুমি সেটা?
-রাহাত! আমি আসলে-----।
-চুপ---। কথা না কোন---। চুপ করে আমার বুকে শুয়ে থাকো--। বাজে কথা বললে সত্যি সত্যি হাত পা ভেঙে বাসায় বসিয়ে রাখবো--। হুহ।
-আরে?
-কথা বললেই শাস্তি এখন ----।
মায়াকে শক্ত করে এক হাতে বুকে জড়িয়ে আরেক হাত দিয়ে আলতো করে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে রাহাত। যেন ছাড়লেই কোথাও হারিয়ে যাবে ওর মায়াবতীটা।
মোবাইলটা খুব জোরেই শব্দ করে বেজে চলেছে। কোনমতে চোখ খুলে কলটার সাউন্ড ওফ করে দিলো রাহাত। মায়াবতীটা সবে একটু চোখ বুজেছে। কলের সাউন্ডে ঘুমটা ছুটে গেলেই মেয়েটা পড়ি মরি করে ছুটবে। ভাবতেই ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটতে ফুটতেই আবার মিলিয়ে গেল রাহাতের। মায়া নেই রুমে। কয়েকবার মায়ার নাম ধরে ডাকলো রাহাত। কেউ এলো না। অন্য সময় হলে মায়া ছুটে রুমে আসতো। সে রান্নাঘরে যত কাজই পড়ে থাকুক না কেন। রাহাতের ডাকে মায়া ছুটে আসে নি-এমন কখনো হয় নি আগে। মায়াকে ডাকতে রান্নাঘরে যাবে এমন সময় মায়ার লেখা চিঠিটায় নজর পড়লো রাহাতের। বিছানার পাশেই রাখা। রাহাতও বুঝতে পারলো। মায়া প্রতিদিনের মতো দুষ্টুমি করে ওর ঘুম ভাঙায় নি। সে স্বপ্ন দেখেছে।
নিজের মাথা চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো রাহাত। মেয়েটার স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি করে চেপে ধরছে রাহাতকে। ভালো থাকতে হলে মায়াকে তার চাই। কিন্তু পাবে কোথায়! রাহাত ঠিক করলো মায়ার ফ্ল্যাটে গিয়েই মায়ার কাছে সরি বলবে। প্রয়োজনে হাতে পায়ে ধরবে। তবু মেয়েটা ওর বুকে একবার ফিরে আসুক। আর জ্বালাবে না একদম। একটুও কষ্ট পেতে দিবে না তার মায়াবতীকে। আর কোন ভুল করবে না। একেবারে বুকের ভিতরে জাপটে আগলে রাখবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আবার মোবাইলটা সশব্দে বেজে উঠলো রাহাতের। মোবাইলটা হাতে নিয়েই ভ্রু কুঁচকে গেল রাহাতের। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে লিজার নাম। এই মেয়েটা এখন আবার কেন কল করছে!