আমার অন্তরালে তুমি - পর্ব ০৮ - সিজন ২ - ফারহানা ছবি - ধারাবাহিক গল্প


আয়মানের মুখে এতো কথা শোনার পরও ছন্দের ঠোটে রহস্যময় হাসি যে হাসির মানে Md অনিল আয়মান বোঝার ক্ষমতা রাখে না ৷ আয়মান ডান হাত দিয়ে রিভারবার ধরে ছন্দকে শুট করতে যাবে তখনি ঘটে যায় সেই অনাকাক্ষিত ঘটনা ৷ রিভালবার দিয়ে ঠিকি গুলি বের হয় তবে তা আয়মানের হাতে থাকা রিভালবার দিয়ে নয় বর্ণের রিভালবার দিয়ে.......

ছন্দের ঠোটের কোনে এখনো হাসি ফুটে আছে ৷ এদিকে অনিল Md হতবাক হয়ে দারিয়ে আছে৷ এর মাঝে  রাহুল এসে হাজির হয়৷ বর্ণ  ছন্দ কে জরিয়ে ধরে থাকতে দেখে রাহুল রেগে যায় ৷ ছন্দের দিকে এগোতে অনিল বাধা দেয় রাহুল কে... 

"" এখানে দারিয়ে যাও রাহুল আর সামনে এগোনোর সাহস করো না তাহলে হয়তো তুমি ওই আয়মানের মতো প্রান হারাবে....""

রাহুল আর সামনে আগানোর সাহস করলো না৷ মাটিতে নিথর দেহ পরে আছে আয়মানের পুরো ফ্লোর রক্তে ভেষে যাচ্ছে ৷ বর্ণের হাত থেকে রিভালবার টা পড়ে যেতে বর্ণ ছন্দ কে জরিয়ে ধরে কাদঁতে লাগলো৷ ছন্দ স্থির হয়ে দারিয়ে আছে ৷ বর্ণ ছন্দ কে জরিয়ে ধরে থাকলেও ছন্দ ধরেনি বর্ণ কে... 

হঠাৎ করে ছন্দ সেন্সলেস হয়ে পরে ৷ ছন্দের শরীল ছেড়ে দিতে বর্ণ ছন্দ কে শক্ত করে ধরে ফেলে ৷ অনিল রাহুল এগিয়ে ছন্দ কে ধরতে চাইলে বর্ণ হাতের ইশারায় বারন করে দিয়ে বলে...

"" এই নিকৃষ্ট জানোয়ারটার ব্যাবস্থা কর অনিল আমি টিয়াপাখিকে দেখছি..."" 

বর্ণ রাহুল কে উপেক্ষা করে ছন্দ কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ৷ 

এদিকে রাহুল রাগে দেয়ালে লাথি মারে ৷ অনিল রাহুল কে নিয়ে ভাবছে না ভাবছে তাদের কুইন কে নিয়ে আয়মান কে যখন বর্ণ শুট করে দেয় তখন ও তাদের কুইনের ঠোটের কোনে এক রহস্যময় হাসি ছিলো৷ 

"" অনিল বর্ণ যেটা বললো সেটা করো  ৷ এক কাজ করো এই লাশ টা হিংস্র কুকুরদের সামনে ফেলে দেও ৷ ওদের পেটে যাক আর একটা কুকুরের লাশ..."" 

"" ওকে Md ..."" 

"" Md অনিল আমি যাচ্ছি বর্ণ কুইন কে কোথায় নিয়ে গেল দেখতে হবে আমাকে"

"" আই থিং হসপিটালে নিয়ে গেছে ৷ তুমি সিটি হসপিটালে যাও ওই হসপিটাল টা কাছে ..""

"" ওকে..."" রাহুল দ্রুত গতিতে বেরিয়ে পড়ে ৷ রাহুল কে যেতে দেখে Md বলতে লাগলো...

"" কুইনের নেক্সট প্লান কি অনিল? ""

"" এটাতো আমিও জানি না তবে কুইন যে বড় সর কোন প্লান করেছে এটা তার মুখের হাসি দেখে বুজতে পারছি তবে প্লান টা কি জানি না...""

"" তাহলে সবটা এখন কুইনের উপর ছেড়ে দেও ৷ পরের অর্ডার মতো কাজ করবো তবে গতকাল যে কাজ টা দিয়েছে কুইন ওই টা করতে হবে ""

"" হুম...""

_________________________________

কেভিনের বাইরে বর্ণ টেনশন নিয়ে পাইচারি করছে ৷ ডক্টর ছন্দ কে কেভিনের ভিতরে নিয়ে গেছে চেকয়াপ করার জন্য.... 

পনেরো মিনিট পর ডক্টর চেকয়াপ করে বের হয়ে বর্ণের সামনে দারায়... 

"" ডক্টর আমার টিয়াপাখি কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো?"" 

"" রিলেক্স মিস্টার চৌধুরী এই সময় এমন একটু আকটু হয় ৷""

"" এই সময় মানে ?""

"" আপনার ওয়াইফ প্রেগনেন্ট৷ আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন"" 

আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন কথাটা বার বার বর্ণের কানে বাজছে ৷ 

"" আ,,আমি বাবা হবো? ছোট্ট ছোট্ট হাত পা ছুড়ে আমাকে ছুবে ৷ আমাকে বাবা বলে ডাকবে ?""কাঁপা কাপাঁ গলায় বললো বর্ণ...

হসপিটালে ঢুকে রাহুল বর্ণের কথা গুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে দারিয়ে পড়লো ৷ এমন কিছু শুনবে তা কোন দিন রাহুল আশা করেনি৷ পা দুটো ওখানে স্থির হয়ে আছে৷ এদিকে বর্ণ খুশি তে ডক্টর জরিয়ে ধরে ৷ ডক্টর বর্ণের পাগলামো দেখে হাসতে থাকে...

"" ডক্টর আমি কি ......" বাকিটা বলার পূর্বে ডক্টর বলে ওঠে "" হ্যা আপনি এখন দেখা করতে পারবেন পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে৷""

বর্ণ এক মুহূর্ত দেরি না করে কেভিনের ভিতর ঢুকে পড়ে ৷ নার্স বর্ণ কে দেখে কেভিন থেকে বেরিয়ে যায় ৷ বর্ণ ছন্দের পাশে বসে ছন্দের কপালে ঠোটে মুখে চুমু দিয়ে দু হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু দিয়ে বলতে লাগলো"" টিয়াপাখি আমরা বাবা মা হবো  ৷ আজ আমি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মানুষ ৷ তুমি জানো না তুমি আমাকে কি উপহার দিয়েছো জান৷ আমি আজ বড্ড খুশি "" 

ছন্দ কোন কথা বলছে না চুপ করে বর্ণের করা পাগলামো দেখে যাচ্ছে ৷ ছন্দ অনেক আগে নিজের ভিতর যে একটা প্রান বেড়ে উঠছে তা বুজতে পেরেছিলো৷ শুধু মাত্র কাউকে জানায় নি৷ 

বর্ণ ছন্দ কে চুপ থাকতে দেখে বর্ণের টনক নরে ওঠে সে ঠিক কি কি করেছিলো তার টিয়াপাখির সাথে ... মুহূর্তে মুখ চুপসে গেল বর্ণের ৷ ছল ছল চোখে ছন্দের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো"" টিয়াপাখি আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার ও অযোগ্য তবুও আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি মাফ করে দেও আমাকে! আমাদের বেবির কথা ভেবে তার বাবা কে শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দেও ৷ বিশ্বাস করো আমি আর কখনো তোমায় হার্ট করবো না ৷ শেষ বার আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লিজ..."" 

ছন্দ বর্ণের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ৷ বন্ধ বুজতে পারে তার টিয়াপাখি এতো সহজে তাকে ক্ষমা করবে না ৷ তাকে অনেক কাট খর পুরাতে হবে তার টিয়াপাখির ক্ষমা পেতে হলে৷ 

বর্ণ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছন্দ কে বলতে লাগলো"" টিয়াপাখি আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারছো না তবে আমি বলবো আর একটা সুযোগ দেও আমাকে ? আমি নিজেকে প্রমান করে দেখাবো প্লিজ টিয়াপাখি?""

ছন্দ এখনো নির্ত্তর বর্ণের কথার কোন জবাব দিলো না৷ এর মাঝে কেভিনে হুরমুর করে কাব্য রুনা কায়রা রাহুল ঢুকে পড়ে...

কাব্য বর্ণ কে দেখেও না দেখার ভান করে ছন্দের কাছে যায় তারা...

"" বনু তুই ঠিক আছিস তো?"" (কাব্য)

ছন্দ কিছু বলতে যাবে তখনি বর্ণ দারিয়ে পকেটে হাত দিয়ে টেডি স্মাইলের সাথে কাব্য কে বলতে লাগলো"" সালাবাবু তোমার বোন ঠিক আছে তবে খুশির সংবাদ হলো যে তুমি মামা হবে ৷"" 

কাব্য বর্ণের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো ৷ 

"" কি সব বাজে কথা বলছিস তুই ৷ আমার বনুর এখনো বিয়ে হয়নি তাহলে?""

" কে বললো বিয়ে হয়নি?"(বর্ণ)

" মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?" (রুনা)

" রুনা ভাবি আপনার একমাত্র ননোদিনি কে আমি একবার নয় দু দুবার বিয়ে করেছি ৷ একবার রেজেস্ট্রি করে আর একবার ধর্ম মতে..."" 

কাব্য কিছুটা রেগে ছন্দের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলতে লাগলো"" বনু বর্ণ যা বলছে তা কি সত্যি ? হ্যা বা না  এ উওর দিবি""

"" হ্যা ভাইয়া আমাদের বিয়ে হয়েছিলো ঠিক কিন্তু....""

"" স্টপ বনু তোর থেকে আমি এটা আশা করেনি ৷ এভাবে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারলি তুই?"

"" কাব্য বিয়েটা যখন হয়েছিলো তখন তোমার বাবা মা বেঁচে ছিলো.."" কড়া গলায় বললো বর্ণ... 

বর্ণের কথা শুনে কাব্য চুপ হয়ে যায়৷ এবার বুজতে পারছে না জানার কারন৷ কিন্তু রুনা ছন্দের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ছন্দ কে দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে সে খুশি নাকি অখুশি ? মুখে কোন হাসি নেই দেখে মনে হচ্ছে কোন রোবট ৷ 

কাব্য আর কথা বারায় না কারন সে বর্ণ কে ভালো মতোই চিনে কিন্তু বর্ণের উপর একটা রাগ থেকে-ই গেছে ৷ সেটা প্রকাশ না করে কাব্য হাসি মুখে সবটা মেনে নেয় ৷ সবাই সবটা মেনে নিলেও একজন সবটা মেনে নেয়নি ৷ ভিতরে ভিতরে ফুসছে ৷

____________________________________

ছন্দ কে এক প্রকার জোর করে চৌধুরী ম্যানশনে নিয়ে বর্ণ ৷ বর্ণের মম   আর বন্যা ছন্দ কে ভিষন খুশি হয়৷ বর্ণ ছন্দ কে নিজের রুমে শুইয়ে দিয়ে সারবেন্ট জুস আর ফল আনতে বলে ৷ সারবেন্ট সেগুলো আনতে বর্ণ জোর করে ছন্দ কে সবটা খাইয়ে দিয়ে ছন্দ কে ঘুমাতে বলে ৷ 

ছন্দ হসপিটাল থেকে বর্ণের সাথে একটা কথাও বলেনি ৷ আর না বর্ণ জোর করেছে৷ সবটাই ছন্দের উপর ছেড়ে দিয়েছে৷ 

বর্ণ দরজা চাপিয়ে দিয়ে তার মায়ের রুমে যায় সেখানে বন্যাও উপস্থিত ছিলো৷ বর্ণ একে একে তার করা সব কান্ড তার মা বোন কে জানায় ছন্দ কে কিডন্যাপ করে টর্চার করা আর আয়মান চৌধুরী কে মেরে ফেলা সবটা...

মিসেস বর্ণালি কিছুক্ষন দম মেরে বসে বর্ণ কে বলতে লাগলো"" জানিস বর্ন বাগানে যখন ফুল গাছের সাথে আগাছা জন্মায় তখন আমরা সেই ফুল গাছটা বাচানোর জন্য আগাছা সাফ করে ফেলি ৷ আর তুই সেই কাজ টাই করেছিস ৷ একটা নোংড়া লোককে শেষ করে দিয়েছিস ৷ কিন্তু বউমার সাথে তুই যা করেছিস কোন নারী তোকে ক্ষমা করবে না আর বউমা যদি ক্ষমা না করে তাতে আমি মটেও বিচলিত হবো না৷.." 

মায়ের কথা শুনে বর্ণের বেশ খারাপ লাগলো ৷ তখন পাশ থেকে বন্যা বলে উঠলো "" জানিস ভাইয়া ছন্দ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন তাকে সবটা উজার করে ভালোবাসে আর যখন কাউকে ঘৃনা করে তখন সবটা দিয়ে ঘৃনা করে ৷ তুই যেটা করেছিস তাতে আমি একজন মেয়ে হয়ে বলবো তুই ভালোবাসার যোগ্য নস তুই ঘৃনার যোগ্য... "" 

বন্যার কথা শুনে বর্ণ আর ওখানে দারাতে পারলো না বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷ এতোক্ষন মিসেস বর্ণালি ছেলের সামনে নিজের কান্না টা দমিয়ে রেখেছিলো ৷ একজন পিতা তার সন্তানের হাতে প্রান হারালো কতোটা পাপী মানুষ হলে এমন টা হয় তা ভেবে কাদছে মিসেস বর্ণালি ৷ বন্যা তার মা কে একা ছেড়ে দিলো ৷ যাতে কান্নার সাথে সাথে কষ্ট টা বের হয়ে যাক৷ যতোই হক এতো বছর একসাথে  সংসার করেছিলো একটু তো মায়া থাকবে৷

___________________

একের পর এক মদের গ্লাস ফাঁকা করছে রাহুল ৷ রাগে পুরো শরীল জ্বলছে তার ৷ কিছুতেই বর্ণের সাথে তার কুইন কে মেনে নিতে পারছে না ৷ যাকে সে তার নিজের করতে চেয়েছিলো সে আজ অন্য কারোর ভাবতে মদের গ্লাস টা ছুড়ে মারলো ...

"" আমি আমার কুইন কে চাই হোক বেবি তবুও চাই আমার কুইন কে ৷ ওই বর্ণ কে তো আমি ছাড়বো না ৷ শেষ করে দিবো ওকে..."" 

রাহুলের শেষের কথা গুলো শুনতে পেয়ে ভিতরে ঢুকলো রুনা..

"" ভাইয়া কি বলছিস কি তুই এই সব?""

"" তুই এখানে কেন?"" 

"" আমি এখানে কেন এটা জানার বিষয় নয় ভাইয়া তুই কি করতে চাইছিস এটা জানার বিষয়..""

"" আ,, আমি আবার কি করতে চাইবো হাহ!""

"" আমি সবটাই শুনতে পেয়েছি ভাইয়া ৷ শুধু এতোটুকু বলবো আগুনে ঝাপ দিতে যেও না ৷ বর্ণের একচুল ক্ষতি হলে ছন্দ তোমাকে মাটিতে পুতে ফেলতে দু সেকেন্ড সময় নিবে না ৷"" 

"" দেখা যাক কি হয় ৷ কে জিতে বর্ণ না আমি ?""

"" এখনো সুযোগ আছে ভাই সুদরে যাও নাহলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবে..." 

কথাটা বলে রুম ত্যাগ করে রুনা৷ রাহুল রাগে গজ গজ করতে করতে আবার মদ খেতে লাগলো.....

________________________________

গার্ডেনে বসে আছে বর্ন ৷ তার মম আর বোনের কথা গুলো তাকে ভিষন রকমের ভাবাচ্ছে ৷ সে যে সত্যি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছে তা বুজতে পারছে ৷ কিন্তু তার টিয়াপাখির কাছ থেকে ক্ষমা কি কর পাবে এটাই বুজতে পারছে না ৷ 

অন্যদিকে বেলকনিতে দারিয়ে বর্ণ কে দেখছে ছন্দ ৷ তার মনে যে কি চলছে এটা কাউকে বুজতে দিতে চায় না সে৷ রুমে এসে নিজের ফোন টা ছোট টেবিলের উপর দেখে ফোন হাতে নিয়ে অনিল কে ফোন করে ..

"" হ্যালো কুইন আপনি ঠিক আছেন তো?""

"" হুম, ডেড বডি টা কি করেছো?""

"" ক্ষুদার্থ কুকুর কে দিয়ে ছিলাম তারা ছিড়ে খেয়েছে আয়মান কে...."" 

কথা শুনে যেন ছন্দ শান্তি পেল৷ 

"" বাচ্চা কেমন আছে?""


"" কুইন পাচঁ বছরের বাচ্চা তো ভিষন দুষ্টুমি করছে ৷ ""

"" সাবধানে রেখো ওকে আর রাহুল কে নজরে রাখবে আমি চাইনা আমার প্লানে কেউ বাধা হয়ে দারাক তাহলে তাকে  .... কিছু বলতে যাবে তখনি কারো পায়ের আওয়ার শুনতে পেয়ে কল কেটে দেয়... তখনি সামিরা রুমে প্রবেশ করে ছন্দের পা জরিয়ে ধরে বলে....."" ম্যাম প্লিজ একবার আমার মেয়ে কে দেখতে দিন ৷ কতোদিন হলো ওকে দেখি না ৷ প্লিজ ম্যাম৷""

"" পা ছেড়ে উঠো সামিরা..""

সামিরা পা ছেড়ে উঠে দারিয়ে কাদঁতে লাগলো৷ ছন্দ অনিল কে একটা মেসেজ করে ৷ মেসেজ করার পাচঁ মিনিট পর ছন্দের ফোনে একটা ভিডিও আসে ৷ ছন্দ ভিডিও টা সামিরা কে দেখাতে সামিরা ফোন টা ছো মেরে ছিনিয়ে নিয়ে তার ছোট্ট মেয়ে পরীর ছবিতে চুমু খেয়ে যাচ্ছে ৷ ছন্দ সামিরা কষ্ট দেখে ছন্দের খারাপ লাগছে তবুও তা চোখে মুখে প্রকাশ করলো না৷ 

পরী খেলনা নিয়ে খেলছে আর কিটকিটিয়ে হাসছে ৷ মেয়ের মুখে হাসি দেখে সামিরার চোখে পানি৷ কতোদিন মেয়েটাকে দেখেনি মুখের হাসি দেখেনি ৷ মা ডাকটা শুনেনি৷ ফোনটা বুকে জরিয়ে ধরে কাদছে সামিরা ৷ ছন্দ বিছানায় আরাম করে বসে সামিরাকে দেখছে ৷ ভিডিওটা দেখা শেষ হতে সামিরা ফোনটা ছন্দের হাতে দিয়ে বলতে লাগলো"" ম্যাম আপনি যেমন টা বলছেন আমি তেমনটাই করেছি প্লিজ আমার মেয়েটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন""

"" দিবো সময় আসলে দিবো ৷ কিন্তু তোমাকে যা যা করতে বলেছি তাই করবে তাহলে তোমার মেয়েকে তুমি ফিরে পাবে৷ এখন যেতে পারো আমি রেস্ট নিবো"" 

 সামিরা আর কিছু বলার সাহস পেলো না ৷ রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ সামিরা যেতে ছন্দ দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়৷ 

বর্ণ গার্ডেন থেকে ফিরে রুমে ঢুকতে যাবে তখনি দেখে দরজা লক করা বর্ণ দরজায় নক না করে পাশের গেস্ট রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে ৷ 

____________________

"" স্যার এতো গুলো টাকা আমাদের দিচ্ছেন কেন?""

"" কারন আমার হয়ে তোকে একটা কাজ করতে হবে তবে সেটা খুব গোপনে ..""

"" স্যার আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনি কোথায় আছেন? আপনি কুইনের বাড়িতে দারিয়ে আছেন আর আমি আপনার হয়ে কাজ করবো সেটা অনিল স্যার জানবে না এটা কোনদিন সম্ভব নয়" 

""বুজতে পেরেছি তোর দু-লাখে হবে না ৷ " এই বলে রাহুল আরো দু-লাখ টাকা লোকটাকে দিলো ৷ লোকটা দাঁত কেলিয়ে টাকা গুলো নিয়ে বলে"" ওকে স্যার কাজ হইয়া যাবে এখন বলেন কি কাজ?""

"" আয়ান চৌধুরীকে চিরতরে আমার পথ থেকে সরিয়ে দিতে হবে...""

রাহুলের কথা শুনে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো লোকটা ...

"" কি বললেন স্যার! অনিল স্যার যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে জানেন? আমাকে জানে শেষ করে দিবে ৷ না বাবা আমি আমার এই ছোট্ট জানটা শেষ করতে পারবো না৷ ""

"" আরো টাকা লাগলে আমি দিবো কিন্তু কাজটা তোকে করতে হবে৷""

"" সম্ভব না এই লন আপনার টাকা আমি চললাম ৷ আমার আবার নিজের প্রান খোয়ানোর কোন ইচ্ছা নাই"" 

রাহুল রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বলতে লাগলো " ঠিক আছে কাজ তুই না করলে আমি নিজের হাতে করবো ৷ ওই আয়ান চৌধুরী বর্ণ কে আমি শেষ করবো৷ কুইন কে আমার চাই মানে চাই বাই হুক ওর বাই ক্রুক ৷

রাহুল অনিলের রিভালবার টা চুরি করে নিয়ে বের হয় রাহুল উদ্দ্যশ্যে বর্ণকে শেষ করার৷ অর্ধেক পথ যেতে রাহুল তার প্লান চেন্জ করে ৷ ফিরে আসে বাড়িতে ৷ রিভালবারটা যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখে ৷  

_____________

রাতে ছন্দ নিচে ড্রইংরুমে নেমে আসতে বর্ণ পাগলে মতো ছন্দের কাছে ছুটে আসে৷ 

" তুমি উপর থেকে নামলে কেন? এই অবস্তায় এভাবে উঠা নামা করা উচিত নয় আমাদের বেবির জন্য...""

ছন্দ বর্ণ কে কিছু না বলে কিচেনে ঢুকে ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম খুজতে লাগলো আর পেয়েও গেল৷ ছন্দ আইসক্রিম টা নিয়ে ধিরে ধিরে উপরে উঠতে লাগলো তখনি বর্ণ পিছুন থেকে এসে ছন্দ কে কোলে তুলে নিলো.... " ছন্দ কোন রিয়েক্ট করলো না ৷ বর্ণ ছন্দ কে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানার বসিয়ে বলতে লাগলো"" টিয়াপাখি তোমার যা কিছু খেতে ইচ্ছে করবে আমাকে বলবে প্লিজ ৷ আর এখন তুমি ডিনার করবে তাহলে আইসক্রিম কেন খাচ্ছো?""

"" তার কৈফত আমি আপনাকে দিবো না মিস্টার চৌধুরী "" 

ছন্দ কথাটা বলে নিজের মতো আইসক্রিম খেতে লাগলো ৷ বর্ণ ছন্দের কথায় কষ্ট পেলেও ঠোটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ছন্দের গাল দুটো ধরে কপালে আলতো করে ঠোটের স্পর্শ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ বর্ণ রুম থেকে বেরিয়ে বন্যার কাছে যায় ৷ 

"" বনু আসবো?" 

বন্যা শুয়েছিলো ভাইয়ের গলা পেয়ে উঠে বসে বললো" আসো ভাইয়া..""

" তুই কি ব্যাস্ত?"
" নাহ তুমি কি বলবে বলো?"
"" বনু তুই টিয়াপাখির কাছা কাছি থাকবি সময় ওর কি খেতে ইচ্ছে করে   কি চায় তুই এগুলো যেনে আমাকে জানাবি৷""

" কেন তোর বউ বুঝি তোর সাথে কথা বলে না?""

"" না "" 

বন্যা এবার আর কিছু বললো না ৷ বুজতে পারছে তার ভাইয়ের কষ্ট টা ৷ 

"" ঠিক আছে তবে একটা কথা আমি না হয় ছন্দের আশে পাশে থাকবো ৷ ওর খেয়াল রাখবো কিন্তু আমার মনে হয় কি জানো ৷ তোমাদের এই বিয়েটা সামাজিক ভাবে হওয়া দরকার সবার জানা উচিত তোমাদের সম্পর্কের কথা ৷ আর তোমার হাল ছেড়ে দিলে চলবে না ৷ ছন্দের মনে আবার জায়গা করে নিতে হবে তোকে "

"" হ্যা ঠিক বলেছিস আমি আগামিকাল সব আয়োজন করছি""

"" এ্যা এতো আর্লি কেন ভাই?""

" সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলা দরকার বনু নাহলে পরে পস্তাতে হয় ৷ যেমন টা আমি করছি"" 

"" ঠিক আছে তুই যেটা ভালো মনে করিস কর ৷ আমি ছন্দ কে দেখে আসছি ৷ ""

"" ছন্দ নয় ভাবি বলে ডাকবি এখন থেকে ...""

"" ওকে ওকে ডাকবো নাহলে তো আবার তুই বকা দিবি না বাবা মি বকা খেতে চাই না ভাবি বলে ডাকবো ""

বলে হাসতে হাসতে চলে গেল৷ বন্যা ছন্দের রুমে এসে দেখে ছন্দ আইসক্রিম খাচ্ছে তা দেখে খোচা মেরে বন্যা বলতে লাগলো"" বাহ বাহ ছন্দরানী থুক্কু ভাবি তার এক মাত্র ননোদিনিকে ভুলে গেছে ৷ সে যে ফুফি হচ্ছে তা তাকে কেউ শুভেচ্ছা জনিয়েছে হু নাকি শুধু রাক্ষুসীর মতো খেয়ে যাবে...""

বন্যার কথা শেষ হতে কান মলা খেল বন্যা ..

"" এই এই কি করছিস ছাড় আমাকে আমি না তোর রায়বাঘিনী ননোদিনি আমার সাথে এই ব্যাবহার রিডার্সরা কিন্তু মানবে না হু""

"" বেবির ফুফিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি দেখছিস না"" কান ছেড়ে দিয়ে...

"" উফফ এভাবে কেউ শুভেচ্ছা জানায় আজ প্রথম দেখলাম..."" 

"" হ্যা ছন্দের সব কিছু ইউনিক তাই প্রথম দেখছিস""

"" হু ছন্দরানী থুক্কু ভাবি  যে ইউনিক এটাতো আমিও জানি""

"" নোটাংকি বাদ দিয়ে বল কি বলবি?""

"" ওহ হ্যা তুই শুধু আইসক্রিম খাচ্ছিস কেন বাবুর ঠান্ডা লাগবে তো?"

" ধুর কিচ্ছু হবে না ৷ তবে আমার এখন চাইনিজ খেতে ইচ্ছে করছে৷""

"" ওয়েট কর আমি মমকে বলছি মম দারুন চাইনিজ রান্না করে..""

বন্যা দৌড়ে নিচে নিয়ে মিসেস বর্ণালি কে জানায় তিনি হাসি মুখে কিচেনে চলে গেল চাইনিজ বানাতে৷ বর্ণ এতোক্ষন আড়ালে দারিয়ে সবটা দেখছে ৷ হঠাৎ চোখে পড়লো ছন্দ মুখ চেপে ধরে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ৷ বর্ণ এক মুহূর্ত দেরি না করে ওয়াশরুমে ঢুকে দেখে ছন্দ বমি করছে ৷ বর্ণ দ্রুত ছন্দের সামনের চুল গুলো পিছুনের দিকে সরিয়ে কপাল ধরে রাখে ৷ এতে কিছুটা কষ্ট কম হয় ছন্দের ৷ ছন্দ চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় বর্ণ কে দেখতে পেয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নিয়ে পা পিচলে পরে যেতে নিলে বর্ণ ছন্দর কোমর জরিয়ে ধরে ৷ 

বর্ণের চোখে মুখে আতঙ্ক ৷ এখুনি একটা দূরঘটনা ঘটে যেতে পারতো ৷ ছন্দ ও বেশ ভয়ে পেয়ে যায় ৷ বর্ণ ছন্দ কে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে বলে "" এখন থেকে ওয়াশরুম বলো বা অন্য কোথাও আমাকে সাথে নিয়ে যাবে সেটা তোমার ভালো লাগুক বা না লাগুক ৷ এই সময়ে তোমাকে আরো সাবধান থাকতে হবে টিয়াপাখি ৷ নয়তো যে আসছে তার কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে আর এটা আমি চাই না৷ ছন্দ কিছু বললো না ৷ বর্ণ কথা গুলো বলে পানির গ্লাস ছন্দের দিকে এগিয়ে দিলো ৷ ছন্দের পানি খাওয়াটা এখন জরুলি ছিলো তাই বাধ্য হয়ে বর্ণের হাতে তাকে পানি খেতে হলো৷ 

_________________________

মিসেস বর্ণালি আর বন্যা দুজনে ছন্দ কে ধরে সাবধানে নিচে নিয়ে যাচ্ছে ভরা পেট নিয়ে ছন্দের চলতে ভিষন কষ্ট হয় ৷ এতোগুলো মাস বর্ণ , বন্যা , আর তাদের মা ভিষন যত্ন করেছে ৷ মুখ ফুটে কিছু বলার পূর্বে সব কিছু সামনে হাজির হয়ে যেতো ৷ সেদিন বর্ণের ইচ্ছেতে বর্ণ আর ছন্দের ধুম ধাম করে বিয়ে হয় ৷ ছন্দ না করেনি মএ নিয়ে ছিলো৷ তবে সে বিয়েতে রাহুল উপস্তিত ছিলো না ৷ ছন্দের নির্দেশে রাহুল কে টর্চার সেলে আটকে রাখা হয়েছে কারন টা হলো রাহুল বর্ণের উপর এট্যাক করেছিলো ৷ বিষয় টা অনিল জানতে পেরে বর্ণের অজান্তে ওকে বাচিয়ে নেয়৷ তবে ছন্দের রোষের হাত থেকে বাচতে পারে না রাহুল ৷ ছন্দ রাহুল কে নিজের হাতে শাস্তি দিবে বলে রাহুল কে টর্চার সেলে আটকে রাখতে বলেছে৷ 

 প্রেগনেন্সির সময়টা ছন্দের রুপ যেন আরো বেড়ে গেছে৷ মিসেস বর্ণালি কাজলের টিকা সব সময় ছন্দের কানের পিঠে লাগিয়ে দিতেন যাতে কারো নজর না লাগে ৷ ছন্দ প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন আর বিরক্ত হয় না ৷ তবে এতোগুলো মাসে মায়ের অভাব টা পূরন করেছে ৷ 

আর বর্ণ সে অফিসের দ্বায়িত্ব মিহির আর মুরাদের উপর দিয়ে সারাক্ষন ছন্দের সাথে আঠার মতো লেগে থাকতো ৷ তবে এতোগুলো মাসে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া ছন্দ বর্ণের সাথে কথা বলেনি ৷ বর্ণ সবটা মেনে নিয়েছে নিজের ভাগ্য মনে করে ৷ অনেক সময় এমনটাও হয়েছে ছন্দ সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে সে সময়টা বর্ণ ছন্দের ফেভারিট মুভি গুলো ল্যাপটপে দেখতে দিতো ৷ আর নিজেও না ঘুমিয়ে ছন্দ কে সঙ্গ দিতো৷ প্রচুর খেয়াল রাখতো ছন্দের ৷ একগ্লাস জল গরিয়ে খেতে হতো না ছন্দের ৷ রাতে যখন ছন্দ ঘুমিয়ে থাকতো তখন বর্ণ খুব সাবধানে ছন্দের পেটে কান পেতে তার সন্তান কে অনুভব করতো ৷ ছন্দ টের পেতে তবে কিছু বলতো না ৷ 

____________

আজ বন্যার বিয়ে সে উপলক্ষে পুরো বাড়ি রঙ্গিন বাতি আর আর্টিফিসিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ ছন্দের জন্য বন্যা মুরাদের ভূল বুঝা বুঝি মিটিয়ে দিয়ে বিয়ের ব্যাবস্থা করেছে ৷  বন্যার বিয়ে উপলক্ষে  ছন্দকে রানীর মতো সাজিয়েছে বন্যা আর ছন্দ নিজ হাতে বন্যা কে বউ সাজিয়েছে ৷ ন-মাসে পড়ায় খুব সাবধানে বন্যা ছন্দ কে ধরে নিচে নিয়ে আসে ৷ বর্ণ আর মুরাদ দুজনে হ্যা করে তাকিয়ে আছে তাদের প্রিয়শিদের দিকে ৷ মেরুন রঙের বেনারসি ভারি গহনা মুখে মেকয়াপ মুখে মিষ্টি হাসি এটা দেখে বর্ণের যেন ঘোর লেগে গেল৷ হ্যা করে তাকিয়ে আছে ছন্দের দিকে৷ এদিকে মুরাদ তার জান কে দেখে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে লাল বেনারসিতে বউ সাজে বন্যা কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ৷ ফর্সা গায়ে লাল বেনারসি টা ফুটে উঠেছে বন্যার শরীলে ৷ যেন শাড়িটা তার জন্য তৈরি ৷ মুখে ভারি মেকয়াপ ভারি গহনা পড়ায় মনে হচ্ছে সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে ৷ তখন কাব্য এসে বর্ণ আর মুরাদের মাঝ খানে বসে বলতে লাগলো"" মুরাদ এভাবে হ্যা করে তাকিয়ে থেকো না মশা মাছি মুখে ঢুকে পড়বে তো..."" হাসতে হাসতে বললো কাব্য...

মুরাদ দাঁত কেলিয়ে কাব্য কে বলতে লাগলো কাব্য দশটা না পাঁচটা একটা মাত্র বউ আমার হ্যা করেই তো দেখবো তাইতো আর তুমি যে রুনা ভাবি কি ভাবে বিয়ের সময় দেখেছিলে তা তোমাদের বিয়ের এলবাম থেকে দেখেছি...""

কাব্যের মুখ বন্ধ হয়ে গেল তা দেখে বর্ণ মুরাদ দুজনে হাসতে লাগলো.... 

মুরাদ আর বন্যার বিয়েটা সুসম্পন্ন হতে দোয়া করে মিষ্টিমুখ করায় একে অন্যকে তখনি ছন্দের চিৎকারে থমকে যায় সবাই......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন