দুয়ারে দ্বিধার দেয়াল |
দুয়ারের ওপাশে আছো তুমি,
চোখ মেলে তাকালেই দেখি আমি।
ওপাশে যাওয়া যায় না,
ছুঁতে চেয়েও ছোঁয়া হয় না।
দুয়ারেই আছে এক অদৃশ্য দেয়াল,
এ দেয়াল ভাঙা যায় না রাখি যতই খেয়াল।
এ দেয়াল দ্বিধার দেয়াল...!!
—————
আরশির মাথা ঝিমঝিম করছে। শরীরটা তিরতির করে কাঁপছে। সন্ধ্যা থেকে বাতি নিভিয়ে শুয়ে আছে। সে এতদিন ভেবেছে শুধু তিরা নয় কাব্যও তিরার প্রতি আগ্রহী। কাব্যর প্রথমদিনের চায়ের দাওয়াত থেকে শুরু করে বুয়া খোঁজার ছুঁতোয় দোতলায় আসা, বাজার তুলে দেয়া সবকিছুই তিরার সাথে দেখা করার জন্য করেছে বলে ভেবেছে। কিন্তু আজ সে যে নাটক করলো তা ভাবাচ্ছে আরশিকে। তিরা সহজ সরল মেয়ে, ওকে বোকা বানানো কাব্যর মতো ছেলের কাছে মামুলি ব্যাপার। কিন্তু আরশিকে বোকা বানানো এতো সহজ না। আরশি স্পষ্টই বুঝতে পেরেছে কাব্য সব বানিয়ে বলেছে। তিরা ইদানীং খুব বেশি ডেস্পারেট হয়ে যাচ্ছিলো কাব্যর প্রতি। হয়তো সে কারণেই কাব্য আজ তাকে এসব আবোলতাবোল বুঝিয়ে দিলো। যাতে তিরা সরে যায়। তার মানে কাব্য তিরার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলো না। কিন্তু তাহলে এতদিন কাব্য কেন এসব করেছে? আরশির জন্য? কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? তিরাকে রেখে কেউ তাকে কেন পছন্দ হবে? তিরা তার চেয়ে সুন্দরী, স্মার্ট, প্রাণবন্ত। তিরার সঙ্গ যেকোনো মানুষকে আনন্দ দেয়। অপরদিকে আরশি নিজেকে গুটিয়ে রাখা শামুকের মতো, অনুভূতি প্রকাশ করতে জানেনা, মানুষের সাথে মিশতে জানেনা। দেখতে খারাপ না হলেও তিরার মতো সুন্দরী তো নয়ই বরং কাউকে আকৃষ্ট করার মতো কিছু তার মধ্যে নেই। সেই চেষ্টাও সে কখনো করেনি। আজ পর্যন্ত জোর করেও কেউ তাকে সাজাতে পারেনি। গাঢ় কোনো রঙের জামাও তাকে কেউ পরাতে পারেনি কখনো। সে কখনো পার্লারে যায় না। সে চুল কাটে না, ব্রু প্লাগ করে না। এসবে তার অস্বস্তি লাগে৷ কলেজ, কোচিং সবখানে বন্ধুরা তাকে আম্মা, দাদী এসব নামে ডাকে। ঠিক বন্ধু নয়, আরশির নিজের কোনো বন্ধু নেই। তিরার বন্ধুরাই আরশির বন্ধু। আরশি যাদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কখনো কথা বলে না। তারাও বলে না। আরশির সঙ্গ তেমন কেউই পছন্দ করে না। কারণ সে বোরিং।
আরশি নিজেও নিজেকে উপন্যাসের নায়িকার জায়গায় ভাবতে পারেনি কখনো। বড়জোর নায়িকার বান্ধবী, বোন বা ননদের যে চরিত্র থাকে তার সাথে সে নিজেকে মেলাতে পারে। সাহিল, রশ্নি আর তিরা বাদে এই দুনিয়াতে আর কারো সাথেই কোনো সম্পৃক্ততা নেই তার। ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে, আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে তাকে পছন্দ করেনি। ভালোবাসার কথা বলেনি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে বখাটেরাও তার দিকে তাকায় না। অথচ তিরা যেখানেই যায় ভুরি ভুরি প্রোপোজাল পায়। সব ছেলেরা যেমন মেয়েকে সঙ্গী হিসেবে চায় তিরা ঠিক তেমন। সবাই তিরাকে পছন্দ করে। সেই তিরাকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করে কাব্য তার সংস্পর্শে আসতে চেয়েছিলো এটা সে কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু যুক্তি তো এটাই বলছে। সবকিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে!