অপরাধী ম্যাডাম by মুন্নি আক্তার প্রিয়া |
এক্সাম শেষ তেমন কোনো কাজ না থাকায় একটা কেজি স্কুলে জব নিয়েছি সময় কাটানোর জন্য। স্কুলে আমার প্রথম ক্লাশ ছিল নার্সারির ক্লাশে। ক্লাশে যাওয়ার পর সব বাচ্চারাই আমাকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল। একেকজনের একেক প্রশ্ন। পাগল হতে খুব একটা সময় বোধ করি লাগবে না।
কিন্তু সামনের বেঞ্চের একটা ছাত্রের দেখলাম মন খারাপ। আমি তাকে দাঁড় করিয়ে বললাম,
- বাবু নাম কি তোমার?
- আয়ান।
- বাহ্! খুব সুন্দর নাম। তোমার কি মন খারাপ নাকি?
- হুম।
- সে কি? কেন? নিশ্চয়ই আম্মু বকেছে তাই না? ও কিছুনা। আম্মুরা একটু আধটু বকেই এতে মন খারাপ করে না বুঝেছো বাবু।
- ধুর ম্যাদাম, আপনি কিস্সু জানেন না।
- কি জানিনা আমি?
- আমাল আম্মু আমাতে বকেনি।
- তাহলে?
- সিমিল সাতে আমাল ঝগলা হয়েছে।
- সিমিটা কে? বড় বোন?
- না। আমাল গালফেন্দ।
আয়ানের কথা শুনে আমার মনে হলো ৪৪০ ভোল্টেজের একটা শক খেলাম। এই ছেলে বলে কি! ঠিকমত এখনো কথাই বলতে পারেনা যে ছেলে সে নাকি রিলেশন করে, গার্লফ্রেন্ড আছে। আবার ঝগরাও হয়েছে। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। ঘন্টার আওয়াজে আমার হুস আসলো। আমি ক্লাশ থেকে সোজা শিক্ষক কক্ষে চলে গেলাম।
আমার ক্লাশগুলো শুধু সকালের শিফ্টেই ছিল। স্কুল ছুটি হলো ১২টায়। বাড়ি যাওয়ার জন্য রিক্সা খুঁজছি। কিন্তু কোনো রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করেছি। সামনেই দেখলাম আমাদের স্কুলের দুইটা পিচ্চি একসাথে যাচ্ছে। মনে হয় বাড়ি ফিরছে। ওদের থেকে ততটা দূরে না থাকায় ওদের কথোপকথন কিছুটা আমার কানে আসলো।
- আরিশ, তুমি রাগ করো না প্লিজ। (মেয়েটা)
- কেন রাগ করবো না শুনি? তুমি আমার চিঠির উত্তর দিলে না কেন? জানো কত কষ্ট করে রাত জেগে লুকিয়ে লুকিয়ে আমি তোমার জন্য চিঠিটা লিখেছি (ছেলেটা)
- সরি জান, আমি অনেকবার লিখতে গেছিলাম কিন্তু পারিনি আম্মু এসে পড়েছিল।
ব্যাস ওদের এতটুকু কথোপকথন শোনার পর আর কথা শোনার ইচ্ছে হয়নি। হাঁটু কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। এই বয়সে আমি পুতুল খেলতাম। সন্ধ্যার আগেই ঘুমিয়ে যেতাম আর এখন কি না এই বাচ্চারা রাত জেগে চিঠি লিখে! জীবনের এতটা বছর পার করে ফেললাম অথচ এখনো একটা প্রেম ধরা দিলো না কপাল!
পরেরদিন:
স্কুলে যাওয়ার পর নার্সারির প্রথম ক্লাশটা আমার থাকায় সেই ক্লাশেই গেলাম। আজ আয়ানের মনটা বেশ ফুরফুরা।
- কি ব্যাপার আয়ান বাবু? আজ যে এত খুশি?
- হুম ম্যাদাম। আমি সিমিল সাতে বেকাপ কলে দিছি।
ওর কথা শুনে আমার ছোটখাটো হার্টএটাক হতে সময় লাগে না। ব্রেকাপও নাকি করে ফেলছে খোদা! তবে বাচ্চাটা প্রচুর কিউট।
নার্সারির ক্লাশ শেষ করে ক্লাশ ওয়ানে গেলাম ইংলিশ ক্লাশ নেওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখলাম কালকে রাস্তায় যে কাপল দেখলাম তারা এই ক্লাশ মানে ওয়ানের স্টুডেন্টস। যাকগে, ওদের সাথে পরিচিত হয়ে জানতে পারলাম আরিশ আর আয়ান আপন ভাই। এতক্ষণে বুঝতে পারলাম আয়ানের এই পরিণতির কারণ। এই বয়সে আরিশই প্রেম করে আয়ান ব্যাচারার কি দোষ তাহলে!
দেখতে দেখতে আমার চাকরীর বয়স ৬ মাস হয়ে গেল। এর মধ্যে হঠাৎ করে আমার বিয়ে ঠিক হওয়ায় আমি চাকরীটা ছেড়ে দেই। স্কুলের অনেককেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আরিশ আর আয়ানকেও দেখলাম ওর বাবা-মায়ের সাথে এসেছে। কিন্তু আজও আয়ানের মনটা খারাপ। কে জানে আবার কোন গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগরা হয়েছে!
বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পর যখন শ্বশুরবাড়ি যাবো তখন দেখি আয়ান কি যেন তুর্যের(আমার হাজবেন্ডের) পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। এত লোকজনের আনাগোনায় তুর্যও আর দেখেনি কি দিয়েছে।
পরেরদিন সকালে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছিলাম। তখন তুর্য রান্নাঘরে গিয়ে বলে,
- আয়ান কি তোমার স্টুডেন্ট?
- হ্যাঁ কেন?
- কিসে পড়ে?
- নার্সারিতে।
- ওহ। তোমার জন্য চিঠি লিখে কালকে আমার পকেটে দিয়ে গেছে।
- আমার জন্য চিঠি? আমার হাতে আটা লেগে আছে আপনি পড়ে শুনান তো।
তুর্য পড়া শুরু করলো,
- পিয় পিয়া মেদাম,
আমি আপনাতে অনেক বালোবাছি। কিন্তু আপনিও সিমিল মত কলে আমালে ছেলে চলে গেলেন। আপনি যখন আমাতে বাবু দাকছিলেন পতম ছেদিনই আমি আপনাতে বালোবেছে ফেলেছি। কিন্তু আপনি অন্ন একজনকে বিয়ে কলে ফেললেন। বালো তাকবেন আপনি।
আপনার জন্ন একতা গান কুব বলতে ইচ্চা করছে,
মেদাম ও মেদাম আপনি অপলাদি লে আমাল যত্নে গলা বালোবাছা দেন ফিলাইয়া দেন!
চিঠিটা পড়ছিল তুর্য কিন্তু মনে হচ্ছিলো আমার দাঁতগুলো ভেঙ্গে পড়ছিল। কিন্তু এবার আর ছোটখাটো নয় বরং বড়সড় একটা হার্টএটাক হয়েছে। চোখ ঝাপসা হয়ে ধপাস করে পড়ে গেছি।
জ্ঞান ফিরে দেখি, তুর্য আমার পাশে বসে আমাকে বাতাস করছে!
***(সমাপ্ত)***