অনাকাঙ্ক্ষিত সে - পর্ব ০৪ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


আলভী যখন ২০১ নম্বর রুমের সামনে আসে তখন একজন নার্স আলভীকে ওভারটেক করে মিশ্মির কাছে আসে। আলভী, নুয়াজ দুজনই কাছাকাছি এসে থেমে যায়। নার্স বলে,
"এখানে কি হচ্ছে?"
সকলে এবার চুপ মেরে যায়। নার্স মিশ্মির উদ্দেশ্যে বলে,
"আপনি ৩০৬ নম্বর পেশেন্টের মেয়ে না?"
মিশ্মি চোখের পানি মুছে বলে,
"হ্যাঁ।"
"এই ইনজেকশন টা ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসুন।"
"জ্বী আচ্ছা।"
নার্স চলে যাওয়ার সময় মিশ্মি আলভীকে দেখতে পায়। তার চাহনীতে রয়েছে অনেক অজানা প্রশ্ন। মিশ্মি প্রেসক্রিপশন নিয়ে যাওয়ার সময় বড়খালা হাত মুচড়িয়ে বলেন,
"ভাবিস না এভাবে পার পেয়ে যাবি। আমার তো সব প্রশ্নের উত্তর চাই'ই চাই।"
"খালা আমার হাতে লাগছে।"
মিশ্মির হাতটা এক ঝটকায় ছেড়ে দেয়।

নুয়াজ ততক্ষণে নিচে অপেক্ষা করছে। মিশ্মি নিচে যেতেই হাত টেনে নিজের সামনে আনে। নুয়াজকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় মিশ্মি।
"তোমার সমস্যা কি মিশ্মি? তুমি কি কোনোভাবে আমাকে ইগনোর করছো?"
"ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমি ইচ্ছে করে এমন করিনি।"
"কতবার ফোন দিয়েছি? ফোন তুলোনি কেন?"
মিশ্মি নিশ্চুপ।
"কথা বলছো না কেন? আর ঐ লোকগুলো কারা? কি বলছিল তোমায়?"
"কিছুনা তো।"
"মিথ্যা বলবে না। বলো কি বলছিলো তারা? আর তুমি কাঁদছিলে কেন?"
"কিছু হয়নি বললাম তো।"
"মেজাজ খারাপ করবেনা বলে দিলাম।"
মিশ্মি এবার ঝাড়ি দিয়ে বলে,
"কি শুনতে চাচ্ছেন আপনি? ওরা আমার খালা আর মামা। তারা জানতে চাচ্ছে আমি এতগুলো টাকা কোথায় পেলাম। কি বলতাম তাদের? আমার শরীর বিক্রি করে টাকা এনেছি এটা বলতাম?"
মিশ্মির কথা শুনে নুয়াজও চুপ হয়ে যায়। এ কথার পৃষ্ঠে উত্তর দেওয়ার মত ভাষা নেই নুয়াজের। নুয়াজকে চুপ থাকতে দেখে মিশ্মি বলে,
"আমি আপনার সাথে পরে দেখা করবো। এখন আব্বুর জন্য ইনজেকশন আনতে হবে।"
"তুমি এখন আমার সাথে যাবে। আমার লোক হাসপাতালে ইনজেকশন পৌঁছে দিয়ে যাবে।"
"না। আমি যদি ইনজেকশন নিয়ে না আসি তাহলে খালারা সন্দেহ করবে।"
"আমি কোনো এক্সিউজ শুনতে চাইনা।"
"প্লিজ বোঝার চেষ্টা করেন।"
"আমাকে রাগিও না।"
নুয়াজকে রাগানো ঠিক হবেনা। কখন কি করে বসে তার কোনো ঠিক নেই। তাছাড়া নুয়াজকেও কিছু প্রশ্ন করার আছে। মিশ্মি রাজি হয়ে যায়। 
নুয়াজ গাড়ির দরজা খুলে দেয়। মিশ্মি গাড়িতে বসে সীটে মাথা হেলান দিয়ে বসে। নুয়াজ অন্যপাশ দিয়ে গাড়িতে বসে ফোন দেয়। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভড করার পর নুয়াজ বলে,
"আমি একটা ইনজেকশনের নাম ম্যাসেজ করে দিচ্ছি তোকে। দশ মিনিটের মধ্যে 'আয়েশা হাসপাতালে" ৩০৬ নম্বর পেশেন্টের জন্য দিয়ে আসবি।"
"ওকে ভাই।"
নুয়াজ ফোন কেটে দিয়ে মিশ্মির দিকে তাকায়। বড্ড ক্লান্ত লাগছে মিশ্মিকে। নুয়াজ একহাতে মিশ্মিকে টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলে। মিশ্মি কিছুই বলেনা। বাম হাত দিয়ে মিশ্মির কোমড় জড়িয়ে ধরে। ডান হাত গালে স্পর্শ করে বলে,
"টায়ার্ড লাগছে?"
"হু।"
"ডক্টরের কাছে যাবো?"
"সামান্য টায়ার্ডের জন্য ডক্টরের কাছে যাওয়ার কি হলো?"
"সামান্য কিছুকেও অবজ্ঞা করতে নেই।"
"আমি ঠিক আছি।"

বাংলো বাড়ির সামনে আসতেই মিশ্মির হাতে চাবি দিয়ে বলে,
"তুমি ভেতরে যাও আমি আসছি।"
"আচ্ছা।"
মিশ্মি ভেতরে গিয়ে বিছানায় চুপ করে বসে।


মিশ্মির বদলে অন্য এক ছেলে এসে ইনজেকশন দিয়ে গেছে এটা যেন কিছুতেই হজম করতে পারছেনা রেহেনুমা বেগমের বড় বোন। তার ভেতর হাজারও প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। বড় খালা, ছোট খালা আর মামা তিনজনেই রেহেনুমা বেগমের বাড়ি গেলেন। এতদিন পর সবাইকে একসাথে দেখে রেহেনুমা বেগম খুশি হয়ে যান।
"আরে এতদিন পর তোমরা এলে!"
"আগে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তোকে পাইনি।"
"রাতে ঘুম হয়নি তো। তাই মিশ্মি আমাকে আর মোহনাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।"
"আর তুইও নাচতে নাচতে চলে এলি? আজকাল দেখি মেয়েকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছিস।"
"এভাবে বলছো কেন আপা? মেয়েটাই তো সব টাকা জোগার করলো। ওর জন্যই তো মানুষটা বেঁচে ওঠলো।"
"তা এতগুলো টাকা কোথায় পেলো সেটা জিজ্ঞেস করিসনি?"
"করেছি। বললো ওর কোন বন্ধু নাকি দিয়েছে।"
"ওর কোন বন্ধু টাকা দিলো সেটা জানতে চাসনি?"
"এগুলা জেনে আমি কি করবো আপা? মানুষটা বেঁচেছে এতেই আমার শান্তি।"
"বোকার মত কথা বলিস না তো রেহু। ওর যদি বড়লোক কোনো বন্ধু থেকেও থাকে তাতে তো আমাদেরই লাভ। লক্ষীকে এভাবে পায়ে ঠেলে দিচ্ছিস কেন?"
"তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না আপা।"
এবার মামা গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,
"তোর বোধবুদ্ধি সব গেলো নাকি? ওর ঐ বন্ধু কে, সেই খোঁজ নে। টাকার গোডাউন হাতের মুঠোয় পাওয়ার ভাগ্য সবার হয়না। মিশ্মিকে হাতিয়ার বানিয়ে অনেক টাকা হাতাতে পারবো আমরা।"
ছোট খালা বলেন,
"আমরা বললেই মনে হয় মিশ্মি আমাদের কথা শুনবে। যে তেজ ঐ মেয়ের!"
বড় খালা বলেন,
"ও শুনবে ওর ঘাড়ও শুনবে। ও তো আমায় চিনেনা। তাছাড়া একটা জিনিস তোরা ভেবে দেখেছিস?"
সকলেই সমস্বরে বলল,
"কি?"
"শুধু বন্ধু কি কখনো এতগুলো টাকা দিবে? নির্ঘাত কোনো নাগর আছে। এমনি এমনি তো আর টাকা দেয়নি। বিছানায়ও হয়তো গিয়েছে। নইলে দেখ, ওকে ইনজেকশন আনতে পাঠানো হয়েছে। ওর বদলে অন্য ছেলে এসে দিয়ে গেল। খটকা লাগেনা?"
রেহেনুমা বেগম বলেন,
"তাহলে কি করবো আপা?"
"আগে পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ বুঝতে দে আমাকে। তারপর যেভাবে যেভাবে বলবো সেভাবেই সব করবি। ততদিন আমরা তোর বাসাতেই থাকবো।"
"যেভাবে ভালো মনে হয় তোমার।"


বেশ কিছুক্ষণ পর নুয়াজ ফিরে আসে। দরজায় নক করতেই মিশ্মি দরজা খুলে দেয়। নুয়াজ সরাসরি মিশ্মিকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু একে দেয়।
"স্যরি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম।"
"সমস্যা নেই।"
মিশ্মিকে ছেড়ে দিয়ে কয়েকটা প্যাকেট এগিয়ে দেয় মিশ্মির দিকে। প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে মিশ্মি বলে,
"কি এটা?"
" একটায় তোমার জন্য শাড়ি, রেডিমেড ব্লাউজ আর পেটিকোট। আর বাকিগুলোতে থ্রি-পিছ। ফ্রেশ হয়ে পড়ার মত তো কিছু নেই। তাই নিয়ে আসলাম। আর এখন এই শাড়িটা পড়বে।"
"কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা। কখনো পড়িওনি।"
"আরে ইউটিউব তো আছে। ইউটিউব দেখে শিখে নিবে।"
"আচ্ছা।"
মিশ্মি গোসল সেরে পেটিকোট আর ব্লাউজের ওপর ওড়না পেঁচিয়ে বের হয়। নুয়াজ তখন ব্যালকোনিতে বসে কফি খাচ্ছিল। মিশ্মি ইউটিউবে গিয়ে শাড়ি পড়ার অনেকগুলো ভিডিও দেখলো। যখন নিজে ট্রাই করতে যাবে তখন উপরে, আশেপাশে ভালো করে তাকালো। তারপর নুয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"শুনছেন?"
নুয়াজ ভেতরে এসে বলে,
"কি?"
"আপনি কোনো ক্যামেরা লাগাননি তো আবার?"
নুয়াজ শব্দ করে হেসে দেয়।
"না। আমি এতটাও খারাপ না।"
"আপনি ভালোও নন। একটা মেয়ের বিপদকে যে দূর্বলতা করে সে আর যাই হোক ভালো লোক হতে পারে না।"
"সেটাও ঠিক।"
"আপনাকে রিজেক্ট করার প্রতিশোধ নিচ্ছেন তাই না?"
"এইটা কোনো প্রতিশোধের পর্যায়ে পড়েনা। সময় হলেই আসল রিভেঞ্জ দেখতে পারবে।"
"মানে?"
"কিছুনা। তুমি শাড়ি পড়ো। আমি কফি বানিয়ে আনি।"
মিশ্মিও আর কথা বাড়ালো না। শাড়ি পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অনেকবার ট্রাই করার পর মোটামুটি পড়তে পেরেছে। তবে কুঁচিগুলো একদম হয়নি বললেই চলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছিল তখন নুয়াজ দুই মগে কফি আনে। একটা মগ মিশ্মির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
"পড়তে পেরেছো?"
"না। তবে মোটামুটি একটা আয়ত্তে এসেছে।"
"আস্তে আস্তে শিখে যাবে। এখন কফি খাও। নাহলে পরে ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
"আমার কফি ভালো লাগেনা।"
"তাও খেতে হবে। ভালো লাগবে।"
মিশ্মি চুপচাপ কফি খেয়ে নিলো। 
নুয়াজ মিশ্মিকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল। মিশ্মির প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। এই সময়ে ঘুম আসার কোনো মানে হয়! মিশ্মির তো এত তাড়াতাড়ি কখনোই ঘুম আসেনা। একদিকে নুয়াজের অবাধ্য স্পর্শ আর অন্যদিকে ঘুম কোনোটাকেই ঠেকাতে পারছেনা মিশ্মি। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে মিশ্মি বলে,
"আমার না খুব ঘুম পেয়েছে। প্লিজ এখনকার মত ছেড়ে দিন।"
"ঘুম আসছে বললে তো চলবে না। আমাকে তো তোমার সময় দিতে হবে, আদর করতে হবে। এটাই তো আমাদের কমিটমেন্ট ছিল। তাছাড়া তুমি দিনেও আমায় সময় দিতে পারো না। রাতেই তোমাকে কাছে পাই। আর রাতে এসে ঘুমের বাহানা করছো!"
"বিশ্বাস করুন সত্যিই আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। কাল দিনে যেভাবে হোক আমি আপনাকে সময় দিবো। তবুও প্লিজ এখন ছেড়ে দিন।"
"কিভাবে বিশ্বাস করবো তোমার কথা?"
"আপনি বলেন কি করলে বিশ্বাস করবেন?"
নুয়াজ উঠে গিয়ে একটা কাগজ এনে বলে,
"এখানে সিগনেচার করে দাও তাহলে।"
ঘুমের ঘোরেই মিশ্মি সিগনেচার করে দেয়।আর তাকিয়ে থাকতে না পেরে ঘুমে তলিয়ে পড়ে। নুয়াজ রহস্যের হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
"তুমি নিজেও জানো না তুমি কি করে ফেললে। তোমার অজান্তেই বিয়ের রেজিস্ট্রিতে সিগনেচার করে দিলে। যাক কফিতে ঘুমের ওষুধটা কাজে লেগেছে।

সকালঃ৮:৪০ মিনিট

পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মিশ্মির ঘুম ভাঙ্গে। আড়মোড়া ভাঙ্গতে যাবে তখন দেখে মিশ্মি নড়তে পারছেনা। ভালো করে তাকিয়ে দেখে নুয়াজ মিশ্মির বুকের ওপর মাথা রেখে মিশ্মিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। মিশ্মির খুব বিরক্ত লাগছিল। কোনোরকমে নুয়াজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তখন খেয়াল হলো মিশ্মির গায়ে শাড়ি নেই। শাড়িটা ফ্লোরে পড়ে আছে। মিশ্মি আফসোসের স্বরে বলে,
"হায়রে মানুষ! ঘুমের ঘোরেও সুযোগ নিতে ছাড়েনা।"
মিশ্মি ওঠে এক সিট থ্রি-পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। শাওয়ারের পানি পড়তেই গলায়, পেটে জ্বলে ওঠে। পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে নোখের আঁচর। আয়নায় গলার দিকে তাকিয়ে দেখে বাইট। এগুলো নুয়াজেরই কাজ। মিশ্মি বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কবে মুক্তি পাবে এসব থেকে কে জানে!

মিশ্মি রেডি হয়ে হাসপাতালে চলে যায়। বাবার কেবিনে গিয়ে দেখে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। তখন আলভীর সাথে দেখা হয়। মিশ্মি মিষ্টি হেসে বলে,
"ভালো আছেন?"
মিশ্মির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আলভী বলে,
"তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"
"হ্যাঁ বলুন।"
"এখানে নয়। ক্যান্টিনে বলবো।"
"আপনার কোনো প্যাশেন্ট যদি আসে?"
"আমার রোগী দেখার টাইম দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এত আগে এসেছি তোমার জন্য।"
"আমার জন্য?"
"হুম। চলো।"
ক্যান্টিনে দুজন চুপচাপ বসে আছে। আলভীর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই তার মধ্যে ঠিক কি চলছে। মিশ্মি নিজেই বলে,
"আপনি এই হাসপাতালেই জব করেন?"
"জব করি বলতে শুধু রবি আর সোম বার রোগি দেখে যাই।"
"ওহ। কোথায় থাকেন এখন?"
"মিরপুরেই। তুমি আর ওখানে যাও না কেন?"
"ছোট খালামনির শ্বশুরবাড়ি থেকে কথা শোনায় খালামনিকে। তাই যাই না আর।"
"তোমাকে অনেকবার খুঁজেছিলাম। তোমার খালামনিকে জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি। কি'না কি ভাবে তাই।"
"খুঁজেছিলেন কেন?"
"তোমাকে বাড়ির সবাই দেখতে চেয়েছিল।"
"কেন?"
"এমন দুষ্টু মেয়েকে কার না দেখতে ইচ্ছে করে?"
মিশ্মি হাসলো।
"আপনার বউ কেমন আছে?"
"হয়তো ভালোই আছে।"
"হয়তো বলছেন কেন?"
"যে আমাকে ছেড়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছে তার খবর কি করে নিই বলো?"
"ঠিক বুঝলাম না।"
"নিপার কথা বলছি।"
"নিপা কে?"
"আমার খালাতো বোন। ওর সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। খুব ভালোবাসতো আমায়। ব্রেন ক্যান্সারে মারা গিয়েছে দুই বছর আগে।"
"ওহ। স্যরি।"
"বাদ দাও সেসব কথা। কি করো তুমি এখন?"
"কলেজে পড়ি।"
"ওহ। আচ্ছা কাল তোমাকে কারা এভাবে কথা শোনাচ্ছিল?"
"আমার খালারা আর মামা। এমনিই কথা বলছিল।"
"দেখে সেটা মনে হয়নি। কিন্তু তারা কোন খালা আর মামা?"
"আমার সৎ মায়ের ভাই-বোন।"
"তোমার সৎ মা?"
"হুম।"
আলভী স্তব্ধ হয়ে যায়। এমন কথা যারা শোনে তারা হয়তো ভেতরে হাহাকার উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু অপর মানুষটাকে ঠিক কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারেনা। বিষয়টা মিশ্মি বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টালো।
"সকালে নাস্তা করেছেন আপনি?"
"হ্যাঁ। তুমি?"
মিশ্মির ফোন আসায় উত্তর না দিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। মোহনা ফোন করেছে।
"হ্যালো আপু।"
"হ্যাঁ মোহু বল।"
মোহনা অস্থির হয়ে বলে,
"তুই কোথায় রে আপু?"
"আমি তো হাসপাতালে। তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?"
"তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। তুই কার থেকে টাকা নিছিলি আব্বুর অপারেশনের জন্য? সে আমাদের বাসায় এসেছে।এটা নিয়ে নিয়ে খালা বাড়িতে হাঙ্গামা শুরু করে দিয়েছে। তোকে নিয়ে অনেক বাজে বাজে কথা বলতেছে ঐ ছেলেটার কাছে।"
মিশ্মি আর কিছু না শুনেই কল কেটে দেয়। আলভীকে কিছু না বলেই দৌঁড়ে বেড়িয়ে যায়। কি হয়েছে জানার জন্য বারবার আলভী প্রশ্ন করছে। ততক্ষণে মিশ্মি বেরিয়ে গিয়েছে। পেছন পেছন আলভীও যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন